অ্যাটলাস শৃঙ্গে লেখনীতে : নাফিসা তাবাসসুম খান ২৮.

0
211

অ্যাটলাস শৃঙ্গে
লেখনীতে : নাফিসা তাবাসসুম খান
২৮.

শাহাজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভি আই পি লাউঞ্জে বসে আছে ল্যায়লা। শূন্য দৃষ্টি তার ফ্লোরের দিকে নিবদ্ধ। গত রাতে হসপিটাল থেকে বাসায় গিয়ে নিজের ব্যাগ নিয়ে এয়ারপোর্টে এসে পৌঁছায় সে। ইয়াসিরও তার সাথে আসে। কিন্তু দূর্ভাগ্যবসত গত রাতে কোনো ফ্লাইট এভেইলেবেল ছিলো না। মরক্কোর উদ্দেশ্যে সবথেকে দ্রুত যে ফ্লাইটের টিকেট ম্যানেজ করতে পেরেছে তা আর দুই ঘন্টা পর এয়ারপোর্টে এসে পৌঁছাবে। এই অপেক্ষা ল্যায়লার কাছে মৃত্যু সমতুল্য মনে হচ্ছে। কিন্তু তার কাছে আর কোনো উপায় নেই।

ইয়াসির ল্যায়লার সামনের সোফায় বসে তার দিকে একটি কফির মগ এগিয়ে দেয়। ল্যায়লার সেদিকে ধ্যান নেই। সে আপন চিন্তায় বিভর। ইয়াসির সামান্য গলা ঝাড়ি দিয়ে বলে উঠে,

” সারারাত ধরে এয়ারপোর্টে বসে আছো। এতো বার বললাম বাসায় গিয়ে রেস্ট করো সেই কথাও শুনো নি। আপাতত কফিটা এখন খেয়ে নাও। নাহয় নির্ঘুম থাকার ফলস্বরূপ মাথা ব্যাথা করবে। ”

ল্যায়লা চোখ তুলে ইয়াসিরের দিকে তাকায়। তারপর ভাঙা গলায় বলে,

” আপনি শুধু শুধু ঝামেলা পোহাচ্ছেন। টিকেট ম্যানেজ করে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। আমি একাই হ্যান্ডেল করতে পারতাম। ”

ইয়াসির সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে বসে বলে,

” তুমি একা ট্রাভেল করতে পারবে তা নিয়ে আমার সন্দেহ নেই। কিন্তু নিজের পায়ের উপর কাল যেই জুলুম চালিয়েছো তুমি, তারপর আর তোমাকে একা যেতে দেই কিভাবে? ”

ল্যায়লা আর কোনো কথা বলে না। সে চুপচাপ ধোঁয়া উঠা গরম কফির মগটা হাতে নিয়ে তাতে একটা চুমুক বসায়। আসলেই এই মুহুর্তে তার এটার প্রয়োজন ছিলো। নাহয় মাথা ব্যাথায় আর স্থির থাকতে পারতো না সে।

ফোনে কলের শব্দ পেতেই ল্যায়লা তড়িঘড়ি করে ফোন হাতে নেয়। ইয়াসির সেখান থেকে উঠে চলে যায়। ফোনের স্ক্রিনে ইসামের নাম দেখতেই ল্যায়লা রিসিভ করে তাড়াতাড়ি। গত কাল সারারাত সে একটু পর পর ইসামকে কল করে। কিন্তু তাকে আউট অফ রিচ দেখাচ্ছিলো। ল্যায়লা ফোন রিসিভ করে সবার আগে প্রশ্ন করে,

” তোমরা ঠিক আছো? ”

ইসাম ক্লান্ত গলায় জবাব দেয়,

” আমি, নাহাল মাত্র মরক্কোতে পৌঁছেছি। ”

ল্যায়লা উৎকণ্ঠা নিয়ে ফের প্রশ্ন করে,

” ফাতিহ? ও কোথায়? ঠিক আছে? ”

ফোনের অপর পাশ থেকে খানিকটা সময় নিয়ে উত্তর আসে,

” ওকে সবাই কল করছি। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে না ওকে। ”

ল্যায়লার মনে হচ্ছে তার নিঃশ্বাস আটকে আসার উপক্রম। সে কোনোমতে প্রশ্ন করে,

” গতরাতে ও কোথায় ছিলো? ”

” অ্যাটলাস শৃঙ্গে। ”

ল্যায়লা আর কোনো কথা বলতে পারে না। সে কাঁপা হাতে কল কেটে কিছু একটা সার্চ করে। সাথে সাথে ফোনের স্ক্রিনে একটা আর্টিকেল ভেসে উঠে। যেখানে গোটা অক্ষরে লেখা,

” গতকাল ১২ ফেব্রুয়ারী স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬.৪৬ মিনিটে ৭.৩ মাত্রার বিধ্বংসী ভূমিকম্প আঘাত হানে মরক্কোতে। ভূমিকম্পটি এক শতাব্দীরও বেশি সময়ের মধ্যে দেশের কেন্দ্রে আঘাত হানা সবথেকে শক্তিশালী ভূমিকম্প হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল জনপ্রিয় পর্যটন ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র মারাকেচ থেকে খুব বেশি দূরে ছিলো না। প্রায় ৮৪০০০০ লোকের শহর মারাকেচ থেকে প্রায় ৭২ কি.মি দক্ষিণ পশ্চিমে উচ্চ অ্যাটলাস পর্বতমালায় এর কেন্দ্রস্থল ছিলো। এর প্রভাব দূর দূরান্তে অনুভূত হয়েছিলো। তবে এই ভূমিকম্প অ্যাটলাস পর্বতমালার তলদেশের কাছাকাছি শহর এবং গ্রামগুলোকে সবচেয়ে মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। ”

ল্যায়লার মস্তিষ্ক শূন্য হয়ে আছে। নিজেকে অনুভূতি শূন্য মনে হচ্ছে তার। ডিরেক্ট ফ্লাইটে পৌঁছাতেও তাদের ১৯ ঘন্টার বেশি সময় লাগবে। এতক্ষণ ল্যায়লা কিভাবে স্থির থাকবে? এর থেকে দ্রুতগামী আর কোনো পথ কেন নেই পৌঁছানোর? মানুষটা কেমন আছে? ল্যায়লা অস্ফুটে বলে উঠে,

” আল্লাহ ওকে ঠিক রাখো। আর কিছু চাইবো না। ”

__________

ফ্লাইটে কাটানো ১৯ টা ঘন্টা ল্যায়লা কেবল গলা কাঁটা মুরগির মতো ছটফট করেছে। ইয়াসির তার পাশে বসে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে কেবল। মরক্কোর ভূমিকম্পের নিউজ তারও অজানা নয়। কিন্তু সেই নিউজে ল্যায়লার এমন প্রতিক্রিয়ার কারণ অজানা। আপাতত সেই সম্পর্কে ল্যায়লাকে প্রশ্ন করারও সাহস হয় না তার। কার জন্য ল্যায়লা এভাবে তড়পাচ্ছে? ল্যায়লার নানুরবাসা মরক্কোতে। তাদের জন্য? কিন্তু ইয়াসিরের জানামতে তো তাদের সাথে ল্যায়লা কিংবা আমালের কোনো যোগাযোগ নেই। তবে কি অন্য কেউ আছে?

রাবাত ছালে ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়েই ল্যায়লা আর ইয়াসির সবার আগে একটা ক্যাব বুক করার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। কিন্তু আগাদির শহরের নাম শুনেই কেউ সেদিকে যেতে রাজি হচ্ছে না। অবশেষে ল্যায়লা সাধারণের তুলনায় তিনগুন বেশি ভাড়া অফার করার পর একজন ড্রাইভার রাজি হয়।

__________

আগাদির শহরে পৌঁছাতে পৌঁছাতে ১৪ ফেব্রুয়ারী দুপুর প্রায় ১২ টা বেজে যায় ল্যায়লাদের। শহরের চারিদিক যেন এক ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন নিউজ চ্যানেলের তথ্য অনুযায়ী এই পর্যন্ত আনুমানিক পাঁচ হাজারের অধিক মানুষ নিহত এবং দশ হাজারের কাছাকাছি মানুষের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। তার বাস্তব চিত্র যেন এই মুহুর্তে ল্যায়লার চোখের সামনে ভেসে উঠেছে। চারিদিকে বিভিন্ন বাড়িঘর ধ্বসে পড়ে আছে। সাংবাদিক এবং এম্বুল্যান্সের ভীড় উপচে পড়েছে চারিদিকে।

অ্যাটলাস পর্বতের কাছাকাছি যেতেই ড্রাইভার জানায় গাড়ি আর সামনে যেতে পারবে না। ইয়াসির কারণ জানতে চাইলে উনি জানায় সামনে ভূমিকম্পের তীব্রতায় পর্বত ধ্বসে পড়েছে। সেই কারণে রাস্তা বন্ধ। ল্যায়লা আর কোনো তর্ক করে না। সে চুপচাপ গাড়ি থেকে নেমে পড়ে।

এয়ারপোর্টে নেমেই সে তার মরক্কোর সিম ফোনে ইনসার্ট করে নিয়েছিলো। সে কল লিস্ট থেকে ইসামের নাম্বার খুঁজে বের করে কল দেওয়ার কিছুক্ষণ পরই কল রিসিভ হয়। ইসাম বিস্মিত সুরে বলে,

” ল্যায়লা তুমি? তুমি মরক্কো এসেছো? ”

” কোথায় আছো তুমি? আমি আগাদির আলি মসজিদের কাছাকাছি অপেক্ষা করছি। এর সামনে রাস্তা বন্ধ বলছে। ”

” অপেক্ষা করো। আসছি আমি। ”

ফোন রেখে ল্যায়লা ইয়াসিরের দিকে তাকিয়ে বলে,

” আমার সাথে আসার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। কিন্তু আপনি চাইলে এখন হোটেল চলে যেতে পারেন। ”

ইয়াসির অবাক হয়। সারা রাস্তায় অস্থির থাকা মেয়েটা হঠাৎ এতো শীতল গলায় কথা বলছে কেন? ইয়াসির নিজের বিস্ময় নিজের ভিতরে চেপে গিয়ে বলে উঠে,

” আশেপাশে অবস্থা দেখেছো? এখানে তোমাকে একা ছেড়ে দেই কি করে? আর তুমি এখানে কার জন্য এসেছো? ”

ল্যায়লা জবাব দেয় না। কিছুক্ষণের মধ্যেই ইসাম সেখানে এসে পৌঁছায়। ল্যায়লাকে দেখে অবিশ্বাস্য সুরে বলে,

” তুমি সত্যিই এসেছো! ”

ল্যায়লা ইসামের দিকে তাকিয়ে দেখে সবসময় পরিপাটি থাকা ছেলেটার বিধ্বস্ত অবস্থা। যেন গত দু’দিন ধরে ঘুম চোখে নেই। ল্যায়লা অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠে,

” ফাতিহ? ”

ইয়াসির যেন তাজ্জব বনে গিয়েছে। তার সামনে মরক্কান ফুটবলার ইসাম শাহমীর দাঁড়িয়ে! যদিও ল্যায়লা আর ইসাম কি বলছে তা তার বোধগম্য হচ্ছে না। কিন্তু ল্যায়লার মুখে ফাতিহ নামটা শুনে সে আরো অবাক হয়। এখানে কি চলছে সব যেন তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।

ল্যায়লার বুক ধুকপুক করছে কোনো ভালো খবর শোনার আশায়। কিন্তু তাকে আশাহত করে ইসাম বলে উঠে,

” নিখোঁজ। ”

ল্যায়লার শরীর জুড়ে বেদনার বাতাস বইতে থাকে তিরতির করে। এতো দূর যেই মানুষটার জন্য এসেছে সে নিখোঁজ! ল্যায়লা দূর্বল স্বরে বলে,

” আমি যাবো ওর কাছে। ”

__________

দূর কোনো মসজিদ হতে মাগরিবের আজান ভেসে আসছে। ডো নট ক্রোস দ্যা লাইনের অপর পাশে অসংখ্য মানুষ চাতক পাখির ন্যায় তাকিয়ে আছে বিধ্বস্ত পর্বত উপত্যকার দিকে। সকলের মনেই একটা দোয়া যেন নিখোঁজ মানুষ গুলোর খোঁজ পাওয়া যায়। পাহাড় ধ্বসে চাপা পড়া মানুষদের উদ্ধার কার্যক্রম খুব কষ্টসাধ্য কাজ হলেও উদ্ধারকর্মীরা নিজেদের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে গণমাধ্যমে জানাজানি হয়ে গিয়েছে জাতীয় দলের অধিনায়ক ফাতিহ আরাব ভূমিকম্পের সময় অ্যাটলাস পর্বতে অবস্থানরত ছিলো। তার বর্তমান অবস্থা এখনো সকলের অজানা। সোশ্যাল মিডিয়াতে এ নিয়ে বেশ তোলপাড়ও চলছে।

ফাতিহর বাবা ছেলের এক ঝলক দেখার আশায় পাথরের ন্যায় বসে আছে। ইসামসহ আরো কয়েকজন প্লেয়ারও এপাশটায় উপস্থিত আছে। ল্যায়লা তাদের থেকে কয়েক হাত দূরে একটি পাথরের উপর বসে তৃষ্ণার্ত চোখে অদূরে তাকিয়ে আছে। মনে মনে ক্রমাগতভাবে সে আয়াতুল কুরসি পড়ে চলেছে। যেই মানুষটা তার জীবন বাঁচিয়েছিলো আল্লাহ কি সেই মানুষটাকে প্রতিদান দিবে না? তার জীবনের হেফাজতকারীর জীবন হেফাজত কি আল্লাহ করবে না?

নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে সাধারণ মানুষের থেকে ইসামদের আলাদা অবস্থান করার সুযোগ দিয়েছেন। আচমকা সাধারণ মানুষের ভীড় থেকে একটি কণ্ঠ বলে উঠে,

” দু দিন হয়ে গিয়েছে। যারা এখনো নিখোঁজ ওরা এখনো বেঁচে আছে বলে মনে হয় না। ”

ব্যস এইটুকু কথা শুনেই ফাতিহর বাবাসহ আরো বেশ কিছুজন রেগে সেই ব্যক্তির দিকে তেড়ে যায়৷ পুলিশ অনেক কষ্টে পরিস্থিতি সামাল দেয়। চারিদিকে এতো কিছু ঘটছে কিন্তু ল্যায়লার সেদিকে ধ্যান নেই। সে অনুভব করে তার পা প্রচন্ড জ্বলছে। কাঁটা পা নিয়ে বিশ্রাম না করে দৌড়াদৌড়ি করার ফলস্বরূপ কাঁচা আঘাতের স্থান হতে আবার রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছে।

ল্যায়লা শূন্য দৃষ্টিতে নিজের পায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। তখনই একটি পুরুষ অবয়ব তার সামনে এসে হাঁটু গেড়ে বসে। ল্যায়লা ছলছল দৃষ্টি মেলে সেই পুরুষটির দিকে তাকায়। সাথে সাথে তার বুকের পাজরে কাঁপন ধরে। অস্ফুটে বলে,

” তুমি? ”

শুভ্র রঙা শার্ট পরিহিত ফাতিহ ল্যায়লার কথার জবাব দেয় না। সে ল্যায়লার পা থেকে জুতা খুলে নিজের এক হাঁটুর উপর সেই পা নিয়ে রাখে। ল্যায়লার পায়ের ব্যান্ডেজ দেখে সে বলে উঠে,

” আমি ছাড়া তোমার কি হবে? ”

ল্যায়লা ঠোঁট উল্টে কান্না আটকানোর বৃথা চেষ্টা করে বলে,

” তুমি স্বপ্ন নাকি সত্যি? ”

ফাতিহ মৃদু হেসে বলে,

” তোমার কি মনে হয়? ”

” সত্যি। তুমি আমার সত্যি। ”

ল্যায়লার বুকের জ্বালাপোড়া বাড়তে থাকে ক্রমাগত। সে একহাত বাড়িয়ে ফাতিহর কপালের সামনে পড়ে থাকা চুলগুলোকে আলতো করে ছুঁয়ে দেয়। সাথে সাথে সে ডুকরে কেঁদে উঠে। ফাতিহ কোমল স্বরে বলে,

” খেয়াল রাখবে নিজের। ”

” তুমি আছো তো খেয়াল রাখার জন্য। ”

” কোথায় আমি? চারিদিকে তাকিয়ে দেখো একবার। আমি নেই। অ্যাটলাস শৃঙ্গে এসে হারিয়ে গিয়েছি। ”

” খুঁজে নিবো। ”

ফাতিহ মৃদু হেসে বলে উঠে,

” দস্যি মেয়ে! ”

ল্যায়লা ঝরঝর করে কাঁদতে কাঁদতে মাথা নত করে ফেলে। তার একপাশে দাঁড়িয়ে থাকা ইয়াসির এবং তার থেকে কয়েক হাত দূরে অপর পাশে অবস্থানরত ইসাম ও বাকি সকলে অবাক হয়ে তাকে দেখছে। মেয়েটা কি পাগল হয়ে গিয়েছে? একা প্রলাপ পারছে কেন? ফাতিহর বাবা ইসামকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করে,

” মেয়েটা কে ইসাম? দুপুর থেকে এই একই স্থানে বসে আছে। ”

ইসাম বিড়বিড়িয়ে বলে উঠে,

” আপনার ছেলের অপেক্ষায় থাকা চাতক পাখি। ”

তখনই কতগুলো উদ্ধারকর্মী একটি স্ট্রেচারে করে একটি দেহ নিয়ে ছুটে আসতে থাকে এম্বুল্যান্সের দিকে। মুহুর্তেই চারিদিকে হৈচৈ পড়ে যায়। ল্যায়লা চোখ তুলে এই দৃশ্য দেখে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। স্ট্রেচারে শুয়ে থাকা হালকা আকাশী রঙের শার্ট পরিহিত পুরুষটার মুখশ্রী দেখে চেনার উপায় নেই যে এই ব্যক্তিই গত মাসে কোপা আমেরিকার কাপ হাতে তুলে হাস্যজ্বল চেহারা নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছে। মুখে অক্সিজেন মাস্ক থাকার ফলে অর্ধেক চেহারাই স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে না। গায়ের শার্ট আর প্যান্টটাও কেমন ময়লা হয়ে আছে। সেই ময়লার মাঝে রক্তের লাল রঙ যেন জ্বলজ্বল করছে।

ফাতিহর বাবা ছেলেকে দেখেই আর্তনাদ করে উঠে। তিনি দ্রুতগতিতে পা চালিয়ে গিয়ে এম্বুল্যান্সে উঠে বসে। এম্বুল্যান্সের দরজা বন্ধ হওয়ার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত ল্যায়লা সেদিকে তাকিয়ে রয়। তার চোখের সামনে দিয়েই ফাতিহবাহী গাড়িটি শাঁই শাঁই শব্দ করে সেখান থেকে প্রস্থান করে।

চলবে…

[ কপি করা কঠিনভাবে নিষিদ্ধ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here