আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️ পর্ব ৩২

#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা_মালিহা_খান❤️
#পর্ব-৩২

শাওয়ার থেকে বেরিয়ে এসেছে আরিয়ান।মায়া উপুর হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে।মাথাটা কাত করে বালিশে রাখা।আরিয়ান কাছে যেয়ে তার মুখের উপরের চুলগুলো সরিয়ে দেয়।মায়া অলস ভঙ্গিতে একটু তাকিয়ে আবারো চোখ বন্ধ করে।
মায়ার এমন দূর্বলতা দেখে আরিয়ান ভ্রু কুঁচকে সন্ধিহান কন্ঠে বলে,
—“তুমি রাতে ডিনার করেছিলে?”

—“নাহ্”।

আরিয়ান সঙ্গে সঙ্গে তেড়ে উঠে।এজন্যইতো এই মেয়ের এত দূর্বল লাগছে।রাতে খায়নি।তাকে একবার বলেওনি পর্যন্ত।সে মৃদু ধমকের স্বরে বলে,
—“এই উঠোতো তুমি।রাতে খাওনি আর এখন বলছো?জলদি উঠো।”

বলে মায়াকে দুহাতে জড়িয়ে উঠিয়ে বসালো আরিয়ান।খাটের সাথে হেলান দিয়ে বসিয়ে দিতেই মায়া পিটপিট করে তাকিয়ে ঠোঁট উল্টিয়ে বলে,
—“বকছেন কেন?”

আরিয়ান উওর দেয়না।চোখমুখ শক্ত করে মায়ার কপালে গালে হাত দিয়ে দেখে জ্বর আসছে কিনা।
তাপমাত্রা স্বাভাবিক দেখে উঠে দাড়ায় আরিয়ান।হনহন করে বাইরে বেরিয়ে যায়।মায়া চোখ মুখ কুঁচকে
চেয়ে থাকে।কালরাতে তো আরিয়ানের জন্য অপেক্ষা করতে করতেই সে ঘুমিয়ে পরেছিলো।তারপর আর খাওয়ার কথা মনে ছিলনা।

হাতে দুই-প্লেট খাবার নিয়ে ভেতরে ঢুকে আরিয়ান।একহাতে ব্রেকফাস্টে আরেক প্লেট ভর্তি ফল।তার পিছে পিছে ঢুকে ইতি।তার হাতে ফলের জুস।পাশের টেবিলে সবকিছু রেখে ইতি বলে,
—“আমি খাইয়ে দিব স্যার?”

আরিয়ান মায়ার পাশে বসে।প্লেটটা নিজের হাতে নিয়ে নরম কন্ঠে বলে,
—“না তুমি যাও ইতি।আমি খাইয়ে দিচ্ছি।সমস্যা নেই”।

ইতি মায়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।অত:পর মাথা নাড়িয়ে বেরিয়ে যায়।আরিয়ান আবারো চোখ-মুখ শক্ত করে ফেলে।মায়ার মুখের সামনে খাবার ধরতেই মায়া সেটা মুখে তুলে বলে,
—“আপনি রাগ করছেন কেন?আমিতো আপনার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।তারপর কখন যেন ঘুমিয়ে গেছি।”

আরিয়ান মায়ার দিকে একবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায়।মুখে কিছু বলেনা।একটু পরপর শুধু খাবার তুলে দেয় মুখে।মায়া বিনাবাক্য খেয়ে নেয় সব।আরিয়ান প্লেট রেখে জুসের গ্লাস হাতে নেয়।এক চুমুক খেতেই মুখ বিকৃতি করে ফেলে মায়া।
—“এটা কি?চিনি দেয়নি নাকি?এতো তেঁতো কেনো?”

আরিয়ান কোন অভিব্যক্তি প্রকাশ করেনা।আবারো মুখে সামনে গ্লাস ধরতেই মায়া আপত্তি করে বলে,
—“আমি খাবোনা।…আপনি খেয়ে দেখেন,এটা সত্যিই খুব টক।”

আরিয়ান চুপচাপ এক চুমুক মুখে নেয়।স্বাভাবিকভাবেই গিলে ফেলে শান্ত কন্ঠে বলে,
—“টক হলেও এটায় পুষ্টি বেশি।খেতে হবেই।মুখ খুলো”।

মায়া ঠোঁট উল্টিয়ে একবার তাকিয়ে হা করে।এক নি:শ্বাসে তাকে পুরোটা খাইয়ে দেয় আরিয়ান।
খাওয়া শেষে সার্ভেন্ট এসে সব কিছু নিয়ে যায়।
অফিস থেকে ফোন আসায় দ্রুত তৈরি হয় আরিয়ান।এমনিতেই অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছে।
পকেটে ফোন ঢুকিয়ে ড্রয়ার থেকে ওয়ালেট বের করছে তখনই মায়া বিষন্ন কন্ঠে বলে,
—“আপনি আমার উপর রাগ করেছেন?”

আরিয়ান আয়না দিয়ে মায়ার দিকে তাকায়।ওয়ালেটটা পকেটে ঢুকিয়ে বিছানার কাছে এসে দাড়িয়ে ঝুঁকে যেয়ে মায়ার কপালে উষ্ণতার ছোয়াঁ দিয়ে কাঠকাঠ কন্ঠে বলে,
—“অফিস থেকে এসেও যাতে তোমাকে এখানেই দেখি।ঠিক এখানেই।সারা বাড়িতে টইটই করে ঘুরবা না।শরীর এমনেই অসুস্থ তাই রুমেই থাকবা।আমি ইতিকে বলে যাচ্ছি।ও তোমার সাথে থাকবে এখানে।আজ তারাতারিই ফিরবো আমি”

মায়া মনে মনে হাসে।লোকটা তাকে বকাও দিচ্ছে আবার চিল্লাচ্ছেওনা।কি অদ্ভুত শাসনপদ্ধতি!!
হাহ্!এমন শাসন শুনলেও শান্তি পাওয়া যায়।
___________
বিকেলবেলা…
রান্নাঘরে কিচেন এপ্রোন পরে দাড়িয়ে আছে মায়া।তার পাশে চিন্তিত মুখে দাড়িয়ে আছে ইতি।শত মানা সত্তেও তার কথা শুনেনি মায়া।সে নাকি এখন গাজরের হালুয়া বানাবে।এমন না যে সে রান্না পারেনা।সে রান্না পারে।কিন্তু রাশেদ চৌধুরি তাকে রান্নাঘরে যেতে দিতোনা।রাশেদ চৌধুরি যখন বাসায় থাকতোনা তখন মাঝে মাঝে রান্না করতো সে।
ইতির চিন্তা সেখানে নয়।ইতি ভাবছে আরিয়ান যদি শুনে মায়া রান্না ঘরে এসেছিলো তবে কি হবে?
মায়া চুপ করে দাড়িয়ে চুলায় দুধ জাল দিয়ে নাড়ছে।অন্য সার্ভেন্টরা সবাই বাইরে।তা অবশ্য মায়ার নির্দেশেই ।মায়া ঘাড় ঘুরিয়ে বলে,
—“গাজর বের করো ইতি।ধুয়ে দাও।তারপর আমি গ্রেট করে নিচ্ছি।”

—“ম্যাম,স্যার কিন্তু রাগ করবে।আপনাকে তো বকবেনা।বকবে আমাকে।”

—“করবেনা রাগ।তুমি বের করতো জলদি।”

অগত্যা কোন উপায় পায়না ইতি।মায়ার সাথে চুপচাপ কাজ করতে থাকে।কিন্তু বিপত্তি বাঁধে গাজর গ্রেট করতে যেয়ে।আরিয়ান জলদি ফিরবে ভেবে তাড়াহুড়ো করতে যেয়ে হাত কেটে ফেলে মায়া।বেরিয়ে আসে রক্ত।
“আহ্”বলে আর্তনাদ করতেই তার হাত চেপে ধরে ইতি।কলের নিচে দেয়ায় রক্ত অনেকটা বন্ধ হয়ে যায়।
চুলার আঁচ কমিয়ে দিয়ে মায়ার হাতে ব্যান্ডেজ করে দেয় ইতি।মায়ার ব্লাডফোবিয়া এতো বেশি যে অতটুকু রক্ত দেখেই ঘাম ছুটে গেছে।

—“আপনার আর কিছু করা লাগবেনা।আপনি ঘরে যান।আমি বানিয়ে আনছি।”

—“এই একদম না।আমিই করছি।বেশিক্ষন লাগবেনা।”

মায়ার জেদের কাছে হেরে যায় ইতি।হালুয়া বানিয়ে বাটিতে ঢালতেই আরিয়ানের জুতার শব্দ শোনা যায়।আজকে একটু বেশিই তারাতারি এসেছে আরিয়ান।মায়া বাটিতে চামচ নিতেই আরিয়ানের গলার শব্দ শোনা যায়।মায়াকে ডাকছে সে।

বাটি হাতে রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে যায় মায়া।দ্রুত উপরে উঠতেই আরিয়ানের মুখোমুখি হয় সে।আরিয়ান হন্তদন্ত কন্ঠে বলে,
—“কই ছিলা?তোমাকে না রুমে থাকতে বলেছিলাম।”

মায়া আরিয়ানের হাত ধরে রুমে আসে।আরিয়ানকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে এক চামচ হালুয়া মুখে সামনে ধরে উৎসুক কন্ঠে বলে,
—“এটা খেয়ে বলেন কেমন হয়েছে।”

আরিয়ান মায়ার হাতের বাটিটা খেয়াল করেছে আগেই।ভেবেছিলো,মায়া হয়তো খাচ্ছে ওটা।তাই কিছু বলেনি।

—“কি এটা?তুমি খাচ্ছিলে খাও।আমি খাবোনা।,,,,তার আগে বলো তুমি রুমের বাইরে কেনো গিয়েছিলে?”

মায়া আরিয়ানের প্রশ্ন এড়িয়ে যায়।বলে,
—“এটা গাজরের হালুয়া।আমি বানিয়েছি আপনার জন্য।”

“আপনার জন্য”কথাটা শুনতেই সমস্ত রাগ নেমে যায় আরিয়ানের।প্রচন্ড ভালোলাগে।এই ছোট্ট দু’টা শব্দ যে কাওকে এতটা প্রশান্তি দিতে পারে মায়া না থাকলে বুঝতোনা আরিয়ান।মায়া তার মুখের সামনে এখনো খাবার ধরে রেখেছে।আরিয়ান খাবারটা মুখে নেয়।তার পরপরই মায়াকে টেনে কোলের উপর বসায়।
মায়া মুচকি হেসে বলে,
—“ভালো হয়েছে?”

আরিয়ান মৃদু হেসে তার কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলে,
—“তুমি এমন কেন মায়াবতী?তোমার উপর রাগ করে থাকা যায়না কেন?কারণটা বলতো?কি আছে তোমার মধ্য?”

মায়া মুদিত নয়নে চেয়ে চোখ নামিয়ে ফেলে।আরিয়ানের হঠাৎ মায়ার হাতের দিকে নজর পরতেই চোখ বড় বড় করে সে অস্থিরভাবে বলে,

—“মায়া,তোমার হাত কেটেছে?”

~চলবে~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here