#আমায়_রেখো_প্রিয়_প্রহরে
#পর্ব_২৮
Writer #পুষ্পিতা_প্রিমা
অভিককে ঘরে খুঁজে এসে আনিকা দেখলো সে কপালের উপর হাতের উল্টো পিঠ রেখে সোফায় হেলান দিয়ে বসে আছে। অনা আবিদ তার পাশে চুপচাপ বসে আছে। আনিকা এসে বলল
তোকে খুঁজছিলাম অভি । ছোটমা উঠে বসেছে। চাচ্চু বলছে ছোটমার কাছ থেকে জেনে নে কি হয়েছিল। তোকে বলতে পারে। কাউকে কিছু বলছে না।
যাচ্ছি। তুমি যাও।
অনা বলল
আম্মু সুজান নাই?
আনিকা সাথে সাথে অভিকের দিকে তাকালো। বলল
হ্যা সুজানা কোথায়? ছোটমার ঘরে? তোর ঘরে তো দেখলাম না।
উনি চলে গিয়েছেন।
কেন? ডিনার করার কথা ছিল না আমাদের সাথে। একা একা ছাড়লি কেন? আজব ব্যাপার অভি। ও মেয়ে মানুষ।
বলেই আনিকা ফোন লাগালো সুজানার ফোনে।
অভি দেখ ফোনও যাচ্ছেনা। তুই কি করিস না। তোর ফোন থেকে কল দে।
অভিকের ফোন নিতে গিয়ে আনিকা দেখলো ইতোমধ্যে কল যাচ্ছে সুজানার নাম্বারে। কিন্তু কেটে যাচ্ছে।
আনিকা চিন্তিত বদনে তাকালো। বলল
কিছু কি হয়েছে?
হুম।
কি হয়েছে?
সুজানাকে আমি প্রশ্ন করেছি উনি মায়ের সাথে তর্ক করেছেন কিনা। ব্যস। তারপর একা একা বেরিয়ে গেল।
আনিকা গালে হাত দিল।
তুই এভাবে জিজ্ঞেস করলি?
হ্যা।
আনিকা স্তব্ধ চোখে চেয়ে রইলো।
উনি এজন্যই ফোন ধরছেনা?
হ্যা।
তুই একদম ভালো করিসনি এটা। কার দোষ কার ঘাড়ে চাপাচ্ছিস আমি জানিনা। কিন্তু সুজানার সাথে তুই এটা ভালো করিসনি।
অভিক কনুই উরুতে রেখে দু’হাত মুখ ঢেকে ঝু্কে
বসলো। আনজুমা বেগম ডেকে বললেন
অভি তোর বাবা ডাকছে। দেখে যা তো বাবা।
অভিক মুখ তুললো। নীচু স্বরে বলল
যাচ্ছি।
_________________
রাশেদা বেগমের সাথে বসে গল্পগুজব করছিল সাজিয়া বেগম। সুজানার ফোন আসেনি এখনো অব্দি। ওই বাড়িতে যেহেতু গিয়েছে সেহেতু চিন্তার তেমন কারণ নেই। সবাই যথেষ্ট স্নেহ করে সুজানাকে। কিন্তু মায়ের মন তারপরও শান্তি পাচ্ছেনা। উনি ফোন হাতে নেবে তখনি কলিং বেজে উঠলো। রাশেদা বেগম বললেন,
দেখো বলতে বলতে তোমার মেয়ে চলে এসেছে।
সাজিয়া বেগম দরজা খুলে বললেন
বেরোনোর সময় ফোন দিতে বলেছিলাম না?
পরক্ষণে মেয়ের চোখমুখ দেখে হতভম্ব হয়ে গেলেন। মুখে হাত বুলিয়ে বললেন
ওমা তোর কি হলো? কেঁদেছিস কেন? কি হয়েছে? কে কি করেছে?
সুজানা বলল
কিছু হয়নি আম্মা।
না তোর চোখমুখ তো ফুলেছে। কিছু তো হয়েছে। কি হয়েছে আমাকে বল না।
রাশেদা বেগম বলল
হ্যা রে মিছা কথাও বলতে পারিস না ভালো করে। কেন কেঁদেছিস?
সাজিয়া বেগম রুক্ষ গলায় বললেন
ওই বাড়িতে কেউ কিছু বলেছে তোকে?
সুজানা মায়ের দিকে তাকালো গোলগোল চোখে। বলল
আমার তেষ্টা পেয়েছে আম্মা। ঘরে যাই?
ঘরে চলে গেল সুজানা। রাশেদা বেগম বলল
ওর কিছু তো হয়েছে। ধীরেসুস্থে জিজ্ঞেস করো। বকাঝকা করো না। আমি দেখি বাবু এল কিনা।
সুজানা ঘর থেকে আওয়াজ করলো
আম্মা জগে পানি নাই।
হ্যা দিচ্ছি এক্ষুণি।
সাজিয়া বেগম রান্নাঘরে যেতেই সায়েম এসে বলল
আম্মা আপার কি হয়েছে?
আমি জানিনা। কিছু বলছেনা। সর, ও পানি চেয়েছে।
সায়েম সরে পড়তেই সাজিয়া বেগম পানি নিয়ে ছুটলেন মেয়ের ঘরে। সুজানা ওড়না খুলে বিছানায় ছড়িয়ে রাখলো। সাজিয়া বেগম পানি বাড়িয়ে দিতে সুজানা পানি খেল। উনি মেয়ের পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন
আমাকে বলবি না কি হয়েছে? আমি তো মা। বলে দিলে হালকা লাগবে। কি হয়েছে?
সুজানা পানি খেয়ে চেয়ে রইলো মায়ের মুখের দিকে।
বলবি না আমায়?
ঝাপটে মায়ের গলা জড়িয়ে মুখ লুকোলো সে । ফুঁপিয়ে উঠে বলল
তুমি আমাকে বিশ্বাস করো আম্মা?
মা হেসে উঠে চুলে হাত বুলিয়ে বললেন
পাগল মেয়ে ! আমি তোকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করি। কি হয়েছে বলবি তো। তুই আমার ঘরের প্রদীপ। তুই এভাবে কাঁদলে আমার তো ভালো লাগেনা মা।
সুজানা নাক টেনে বলল
প্রদীপ তো ছেলেরা হয়।
মেয়েরাও হয়। ছেলেরা তো এক বাড়ির প্রদীপ হয়। আর মেয়েরা দুই বাড়ির প্রদীপ । বাপের বাড়ি আর শ্বশুর বাড়ি দু বাড়িকেই মেয়েরা আলোকিত করে। এবার তো বল কি হয়েছে?
সুজানা চোখ মুছলো মায়ের কাঁধে শাড়িতে। বলল
নীলা ম্যাডামের ফোন নাম্বার চাচ্ছিলো স্যারের আম্মা । আমি নাম্বারটা দিয়ে চলে যাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই দেখি আন্টি রান্নাঘরে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে।
একি কান্ড! কি করে? নীলাকে তোদের স্যারের জন্য দেখছিল নাকি?
আমি কি জানি? ওসবের খোঁজ আমি কেন রাখব?
আচ্ছা, তারপর কি হলো? অজ্ঞান হলো কিভাবে?
আমি জানিনা। ডাক্তার বলছেন যে উনি বেশি অতিরিক্ত উত্তেজনায় অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে। স্যার আমাকে ডেকে বলল যে উনি নাকি অজ্ঞান হওয়ার আগে বলছিল আমি উনার সাথে তর্ক করেছি, অপমান করেছি। আমি সত্যি এরকম করিনি আম্মা। তুমি বিশ্বাস করো।
বলেই সুজানা আবারও কান্নায় ভেঙে পড়লো। সাজিয়া বেগম মাথায় ধীরেধীরে হাত বুলাতে বুলাতে বললেন
এরজন্য কাঁদতে হয় না সুজানা। তুই যখন কিছু বলিসনি তখন কাঁদছিস কেন?
সুজানা আরও চেপে ধরলো চোখদুটো মায়ের কাঁধে। বলল
স্যার আমার সাথে কখনো এভাবে কথা বলেনি।
আমি একটা কথা বলি তোকে?
বলো।
তোর স্যারের মায়ের সাথে নীলা মনে হয় রেগে কথা বলেছে।
সুজানা চট করে মাথা তুললো। নাক টেনে বলল,
কি বলছ আম্মা?
তুই ভেবে দেখিসনি ওটা? দেখ তুই নাম্বারটা দেয়ার পর উনি মনেহয় কল করেছিল।
হ্যা হতে পারে। কিন্তু ম্যাম অনেক মিষ্টভাষী আম্মা। কেন রেগে কথা বলবে?
সেটা তো আমি জানিনা। হয়ত সেখানে কিছু হয়েছে যেটা আমরা জানিনা।
সুজানা চোখের পানি মুছে বলল
হ্যা এরকম হতে পারে। কিন্তু না জেনে তো এসব বলা যায় না আম্মা।
আমি আমারটা বললাম। তুই কেন ওটার জন্য কষ্ট পাচ্ছিস? তোর স্যারও হয়ত জানেনা তাই তোকে বলেছে।
না জেনে কেন আমাকে দোষারোপ করলো আম্মা? আমি আন্টিকে রীতিমতো ভয় পাই। কোন সাহসে তর্ক করতে যাব? এটা তো স্যারও জানতেন।
আচ্ছা ঠিক আছে। তোর স্যার সত্যিটা জানলে তো বলতো না।
না জেনে বললো কেন? পরের উপর দোষ চাপানো খুব সহজ তাই না?
সাজিয়া বেগম হেসে উঠলেন। বললেন
আহা মাস্টারমশাই ভারী অন্যায় করেছে।
সুজানা ফুঁপিয়ে উঠলো
তুমি হাসছ কেন?
হঠাৎ আমার মাস্টারমশাইকে মনে পড়ে গেল।
তোমার মাস্টারমশাই আমার স্যার এক হলো?
না এক না। এমনিই বললাম।
তোমার মাস্টারমশাই তোমাকে কখনও অবিশ্বাস করেছে?
মা আবারও হাসলেন। বললেন,
অবিশ্বাসের প্রশ্নেই আসেনা। বিশ্বাস আছে বলেই তো তোদের আমার হাতে ছেড়ে গেল।
______________
অভিক মায়ের ঘরের দরজার কাছাকাছি গিয়ে মায়ের ফোঁপানির শব্দ শুনলো। উনি ফোঁপাতে স্বামীর কাছে নালিশ করছেন
তোমার ছেলের বউকে দ্রুত নিয়ে এসো। আমাকে এসবে একদম জড়াবে না। আমি কত কি ভেবে রেখেছি । আমার তো একটামাত্র ছেলে। একটা মনের মত ছেলের বউ কি আমি পেতে পারিনা?
সংসার সে করবে সালমা। আমাদের কি করার থাকতে পারে?
তাহলে তাই করো। কিন্তু আমি তোমাকে বলে দিচ্ছি নীলা মেয়েটাকে মোটেও সংসারী গোছের মনে হয়নি। ও আমার অভিকে ডুবিয়ে মারবে বলে দিলাম। কথাবার্তার কি ছিঁড়ি। মা আর আমার মধ্যে কি ঝগড়া হয় না? আমরা কি কখনো কাউকে পাগল বলেছি? মেয়েটা আমাকে কি করে ওভাবে বলতে পারলো?
বলেই তিনি আবারও কান্নায় ভেঙে পড়লেন। আজীম সাহেব গ্লুকোজ ঢেলে গ্লাসে চামচ নাড়তে নাড়তে বললেন,
এভাবে কাঁদতে থাকলে তো অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে সালমা। অভিকে আসতে দাও। আমি এ বিষয়ে কথা বলব।
সালমা বেগম শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখের পানি মুছলেন। বললেন
সুজানা মেয়েটা কি চলে গিয়েছে?
হ্যা বোধহয়। আর তো দেখা গেল না ওকে। বলছি যে মেয়েটার সাথে খ্যাঁক খ্যাঁক করা বন্ধ করো। দেখলে তো আজ হাত পা মালিশ করেছে আনিকার সাথে সাথে। ওর মতে মেয়ে হয় না বুঝলে। আমার যদি এরকম একটা পুতুল থাকতো সাজিয়ে রাখতাম।
বালিশে হেলান দিয়ে চোখ বুঁজলেন সালমা বেগম। আবারও ফুঁপিয়ে উঠলেন।
আজীম সাহেব চশমা খুলে রাখতেই অভিককে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললেন
বাইরে দাঁড়িয়ে কেন অভি? ভেতরে এসো।
সালমা বেগম শাড়ির আঁচলে গাল মুছলেন। অভিক ধীরপায়ে ঘরে প্রবেশ করলো।
আজীম সাহেব বলল
তোমার মাকে শান্ত করানো যাচ্ছেনা অভি। প্লিজ ডু সামথিং।
অভিক চুপ করে বসে থাকলো।
আজীম সাহেব বললেন
তাহলে আমি বেরিয়ে যাচ্ছি তোমরা মা ছেলে বসে থাকো।
ঘরে অনা আবিদ ঢুকে এল। হুড়োহুড়ি করে খাটে উঠে সালমা বেগমের পাশে গিয়ে বসলো।
দাদু অচুখ?
সালমা বেগম চোখ মুখে হাসার চেষ্টা করলেন। ওদের পেছন পেছন আনিকা ঘরে ঢুকে অভিকে দেখে সালমা বেগমের দিকে তাকালো । বললো,
ছোটমা তোমার ছেলে একটা মহান কাজ করেছে।
সালমা বেগম নাক টেনে বলল
সে আজকাল মহান মহান কাজ করছে।
আনিকা বলল
আগে আমারটা শোনো। তুমি কার কথা বলেছ আমি জানিনা তোমার ছেলে ভেবেছে তোমার সাথে সুজানার কিছু হয়েছে তাই সে সুজানাকে কি না কি বলেছে। সুজানা অন্ধকারে বেরিয়ে গেছে। ফোন টোন সব বন্ধ। উনার মা কি বলবেন এখন? সুজানা নিশ্চয়ই কষ্ট পেয়েছে।
আজীম সাহেব আর সালমা বেগম স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো। আনিকা বাচ্চাদেরকে বলল
চলেন। ভাত খাবেন।
নাহ। অভির সাথি খাবো।
অভিক বলল
আমি এখন খাব না। যাও।
ওরা মায়ের সাথে যেতে যেতে বলল
অভি পোঁচা।
আনিকা ওদের নিয়ে চলে গেল। সালমা বেগম এখনও বিস্ময়ের রেশ কাটিয়ে উঠতে পারছেনা। বললেন
বাহ ওই মেয়ের দোষ ঢাকতে সুজানার ঘাড়ে দোষটা তুলে দিলি অভি?
অভিক মায়ের দিকে সরাসরি তাকালো। চেহারা পুরোপুরি থমথমে, মেঘাচ্ছন্ন।
নীলা মজুমদার সুজানার বস মা। কাজের প্রেক্ষিতে আমি কথা বলেছি তাই তুমি ভেবে নিয়েছ ওর বাবার কাছে তুমি প্রস্তাব পাঠাবে। আমি একবারও বলেছি মা? কেন তুমি আগ বাড়িয়ে এটা করতে গেলে?
তুই কাল হেসেখেলে কথা বলছিলি না?
বলছিলাম কিন্তু সেটা সুজানার সাথে। নীলা পরেই ফোনটা নিয়েছিল তখন তুমি ফোনটা কেড়ে নিলে।
তাহলে তুই যে আমাকে কোন একটা মেয়ের কথা বলেছিলি যাকে কিনা সুজানা চেনে।
আবারও এই মেয়ে ওই মেয়ে করছ তুমি? এই মেয়ে ওই মেয়ে কিচ্ছু হয়না মা । এই মেয়েটাও সুজানা। ওই মেয়েটাও সুজানা। আমি সুজানার কথাই বলেছিলাম মা। তুমি উল্টোটা বুঝেছ। এখন আমি সুজানার কাছেই ষ্টুপিড হয়ে গেলাম।
সালমা বেগম আর আজীম সাহেব স্তব্ধ হয়ে চেয়ে রইলেন।
বেডসাইড টেবিল থেকে ফোনটা নিয়ে সালমা বেগমের হাতে ধরিয়ে দিল অভিক। বলল, পারলে আমার হয়ে সুজানাকে সরি বলে দেবে।
সালমা বেগম কি বলবে খুঁজে পেল না। অভিক বেরিয়ে গেল ঘর থেকে।
আজীম সাহেব বসে পড়লেন স্ত্রীর পাশে। কপাল হাত দিয়ে বললেন
সালমা তোমার ছেলের মনের কথা জানতে পেরেছ এবার?
সালমা বেগম হা করেই চেয়ে রইলেন।
_______________________
ফোন কলের আওয়াজে ঘুম ছুটে গেল সুজানার। আজ সে ক্যাম্পাসে যায়নি। খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল তাড়াতাড়ি চাকরিতে ছুটবে বলে। কাঁচাঘুম ভেঙে যাওয়ায় বিরক্ত হলো। ফোনটা তুলে দেখলো শান্তা আর মেহুল একনাগাড়ে অনেকগুলো ফোন দিয়েছে। সুজানা ব্যাক করতে যাবে তখনি আবারও শান্তার ফোন এল। সুজানা রিসিভ করে কানে দিয়ে বলল
হ্যা, বল।
ভালো আছিস?
হ্যা।
গলাটা কেমন যেন লাগছে।
ঘুম থেকে উঠেছি তাই।
শোন না বলছিলাম যে, অভিক স্যারের সাথে লাইব্রেরিতে দেখা হয়েছে আজ। উনি তোর কথা জানতে চাইলো।
হুম।
হুম মানে? আমি কি বলেছি শুনেছিস?
হ্যা।
স্যার তোর কথা জানতে চাইলো। তোর সাথে সকালে কথা হয়েছিল কিনা জানতে চাইলো।
হুম।
কিছু কি হয়েছে সুজু?
কি হবে? কিছু হয়নি। আচ্ছা রাখ। কাল দেখা হবে।
স্যারের ব্যাপারে কিছু বলবিনা?
আমার কিছু বলার নেই।
আচ্ছা। স্যার আরও একটা কথা বলেছে।
বল।
বলেছে ফ্রি হলে স্যারের মায়ের ফোনে একটা কল দিতে।
হুম।
এখনও হুম? তুই স্যারের ব্যাপারটা সিরিয়াসলি নিচ্ছিস না?
আচ্ছা এখন রাখ। তোকে রাতে এসে ফোন দেব।
ওকে। বাই।
শান্তা ফোন রাখার পর সুজানা স্প্যাম কল লিস্ট চেক করে দেখলো। অনেকগুলো ফোন আনিকা আর আরও দু-তিনটা অপরিচিত নাম্বারের। সুজানা জানে সেই নাম্বারগুলো কার।
সে চায়নি ওই বাড়ির কারো সাথে কথা বলতে।
________________
অফিসে যাওয়ার কিছুপরেই নীলাকে দেখলো সুজানা। ভারী ব্যস্ত পায়ে নিজের কামরায় প্রবেশ করতে দেখা গেছে নীলাকে। চেহারায় এতটুকু ক্লান্তির ছাপ নেই। সুজানার ডাক পড়লো কিছুপরেই।
সুজানা যেতেই জানতে চাইলো
কালকের মিটিং কেমন হলো?
সরি ম্যাম। কালকে ওই বাড়িতে একটা দূর্ঘটনা ঘটেছে। তাই মিটিংটা হয়ে উঠেনি। আমি রাজন ভাইয়াকে বলো দিয়েছি সেটা।
নীলা ফোন তুলে কাকে যেন ডেকে বলল
ভেতরে এসো তো।
কিছুপরেই রাজন এল। বলল
জ্বি ম্যাম।
উনাদের সাথে আর কথা হয়েছে?
হয়েছে। কিন্তু।
কিন্তু কি?
কিন্তু সুজানা ডিল করতে চাইছেনা। ও বলছে ও অন্য কোম্পানি ব্রান্ড ডিজাইন নিয়ে কাজ করবে। এই কোম্পানির সাথে কাজ করবে না।
নীলা প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকাতেই সুজানা মাথা নামিয়ে নিল। নীলা বলল
উনারা তোমার সাথে পরিচিত সেহেতু কাজ করতে আরও সুবিধা।
আমি চাচ্ছিনা। যদি খুব অসুবিধা না হয় তাহলে আমাকে অন্য কাজ দিন।
কিন্তু আমি উনাদের এখন কি বলব?
সুজানা চুপ করে থাকলো। নীলা বলল
ওকে তুমি যাও। আমি তোমাকে আপডেট জানাচ্ছি।
নীলা পরপর কয়েকজনের সাথে কথা বলার পর সুজানাকে ডেকে নিল। বলল
তোমাকে মিটিং করার জন্য বাড়িতে যেতে হচ্ছে না। গুগল মিটে করতে পারো । আমি তোমার মেইলে লিংকটা পাঠিয়ে দিচ্ছি। আধঘন্টার মধ্যে জয়ন হয়ে যাও। আমি আসছি।
সুজানা না বলার সুযোগ পেল না। আজ কার সাথে মিটিংটা হবে?
সন্ধ্যা সাতটা হতে হতে সুজানা মিটিংয়ে জয়ন করলো। যিনি জয়ন করলেন উনার মেইলের নামটা ” Sorry “.
সুজানা হেডফোন চেপে মনোযোগী হয়ে শুধালো।
আসসালামু আলাইকুম সুজানা আফরিদা ফ্রম এনএমটি। ক্যান ইউ হেয়ার মি?
টুংটুং শব্দ করে স্ক্রীনটা আলোকিত হয়ে উঠলো। ব্ল্যাক হেডফোন পড়া সৌম্যদর্শন লোকটাকে স্ক্রীনে দেখে আর চোখ তুললো না সুজানা। প্রশ্নের পর প্রশ্ন করেই গেল। ওপাশের ব্যাক্তিটি প্রশ্নের পর প্রশ্ন শুনেই গেল।
সুজানা কোনোরূপ উত্তর না পেয়ে বলল
কোনোরূপ উত্তর না পেলে মিটিংটা এখনি ক্লোজ করে দেয়া হবে।
অনেক্ষণ পর উত্তর এল।
মিটিংটা ক্লোজ হলে ফেস টু ফেস মিটিং করতে হবে। আপনি রাজী থাকলে আমি আরও কিছুক্ষণ চুপ করে থাকতে পারি। আপনিও মিটিংটা ক্লোজ করে নেক্সট মিটিংয়ের টাইমটা জানাতে পারেন।
সুজানা এবার তাকালো না। কিবোর্ডের কাছে চোখ রেখে স্পষ্ট গলায় বলল
আপনাদের ব্র্যান্ড ডিজাইনের জন্য আপনাদের রিকোয়ারমেন্টগুলো বলুন। এবং যাবতীয় ইনফোগুলো ডকস ফাইল আকারে প্রদান করুন। আপনি উত্তর না দিলে আমি এখানেই মিটিংটা ক্লোজ করছি। ধন্যবাদ।
অভিক বলে উঠলো
সুজানা প্লিজ। মিটিং ক্লোজ করতেই পারেন কিন্তু আমার ফোন নাম্বারটা ব্ল্যাকলিস্ট থেকে তুলুন। আই রিকুয়েস্ট ইউ সুজানা। আপনাকে এত রেগে থাকা মানায় না।
দুঃখীত। এটা আমার কাজের জায়গা। আমি আপনার কোনো অনুরোধ রাখতে পারছিনা।
ঠুস করে স্ক্রীন থেকে অভিমানী মুখটা চলে যেতেই অভিক হেডফোন খুলে রকিং চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলো। বন্ধ চোখ খুলে দেয়াল ঘড়িতে চোখ দিতেই সময় দেখলো সাড়ে সাতটা হয়নি এখনো। দ্রুত বেরিয়ে গেল সে বাড়ি থেকে। সুজানাকে আজ এমন মার দেবে না।
সুজানা অফিস থেকে বের হতে না হতেই কুকুরের পাল্লায় পড়লো। সেদিনের কুকুরটা। আচ্ছা জ্বালা তো। কুকুরটা তাকে দেখে লাফাতে লাফাতে ঘেউঘেউ শুরু করলো। সুজানা দৌড় দিলে সেটাও দৌড় দেবে। সুজানা ভাবলো দোকান থেকে কিছু কিনে খাইয়ে তারপর সে গাড়িতে উঠে যাবে। যেই ভাবা সেই কাজ। সুজানা দোকানের দিকে ছুটতেই কুকুরটাও লেজ নেড়ে নেড়ে দোকানের কাছে ছুটলো। দোকান থেকে বন কিনে কুকুরটাকে খেতে দিল সুজানা।
কুকুরটা গপাগপ খেয়ে লুটিয়ে পড়লো মাটিতে। সুজানা রাস্তা পার হওয়ার জন্য সুযোগ খুঁজলো। কুকুরটা আর পেছনে ছুটবে বলে মনে হয় না।
সুজানা রাস্তা পার হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে বিকট শব্দে মাথা ভনভনিয়ে উঠলো তার। লোকজন একসাথে চেঁচিয়ে উঠলো। সুজানা পেছনে ফিরে কিছু দেখার আগেই মাথা ঝিমঝিম করে উঠলো। কুকুরটাকে মালবাহী ট্রাক পিষে দিয়েছে একেবারে। সুজানাকে আশেপাশের মানুষ বলছে
আপা এটা আপনার কুকুর নাকি? আপনার পেছন পেছন ছুটছিল। দেখে রাখবেন না। আজব মহিলা তো?
সুজানা কিছু বলার ভাষা খুঁজে পেল না। তার পেট গুলাচ্ছে। মাথা ভনভন করছে রক্তাক্ত রাস্তা আর আশেপাশের মানুষ দেখে। মানুষের কথা থেকে বাঁচতে কোনোমতে আড়াল হতে চাচ্ছিলো। অনেক মানুষ হায়হায় করছে। আজব কুকুরটাকে নাকি তারা অনেকগুলো মাস ধরে দেখছে।
এত ক্ষুদার্ত থাকতো কুকুরটা কেউ বাসি খাবার পর্যন্ত দিত না আজ দরদ উতলে পড়ছে। সুজানার বমি পেল। সে গলগল করে বমি করে দিল রাস্তার পাশে এসে। আশপাশের মানুষ নাকমুখ কুঁচকে এড়িয়ে গেল। কান দিয়ে ভোঁ ভোঁ ধোঁয়া বেরোচ্ছে সুজানার। রাস্তায় বসে পড়বে তখনি ভীড় ঠেলে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিল কেউ। হয়ত ভালোবেসে বাড়িয়ে দেয়া থাকে সবসময়। সুজানা ধরেনা। আজ ধরলো তবে ভুলে, অসাড়ে।
অভিক তার ব্যাগটা তুলে নিল। গাড়িতে রেখে এল সেটি। পানির বোতল এনে বলল
এখান থেকে সরে যাই। বমি করে ভাসিয়ে দিয়েছে আবার পাশে বসে আছে। পঁচা মেয়ে। উঠুন।
সুজানা তার গলার স্বর চিনতে পেরে চোখ তুলে চাইলো। হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল
আমার ব্যাগ।
চুপ। কুকুরটার কি করে এই অবস্থা হয়েছে? সবাই আপনাকে দেখিয়ে দিচ্ছে কেন?
সুজানা কান্না আটকে বলল
সারাক্ষণ আমার পেছনে লেগে থাকে কুকুরটা। আমি বলেছি ওকে আমার পেছন পেছন রাস্তা পার হতে? আমার ব্যাগ কোথায়? এনে দিন। বাড়ি যাব। ওমা আবার বমি পাচ্ছে।
অভিক ওর হাতটা ধরলো। বলল
আমার সাথে আসুন। তারপর পানি খান। রিল্যাক্স লাগবে।
নাহ।
অভিক বলল
আমি কখনো এই হাত শক্ত করে ধরতে চাই না। তাই বাধ্য করবেন না। উঠুন।
সুজানা দাঁড়ালো। অভিক হাত ছেড়ে দিল। সুজানা বলল
আমি যেতে পারি।
অভিক বলল
আসুন।
সুজানা পিছু যেতে যেতে বলল
আমি কোথায় যাচ্ছি আপনার সাথে? আমার ব্যাগ দিন। বাড়ি যাব। ভালো লাগছেনা আমার কিছু।
অভিক গাড়ির কাছাকাছি গিয়ে থামলো। গাড়িতে বসার জন্য সুজানাকে সিট দেখিয়ে দিল। সুজানা সিটে গিয়ে বসলো চুপচাপ। মাথা এলিয়ে দিয়ে বলল
আপনার গাড়ি নষ্ট করলে আবার নোংরা বলবেন না। আমার এখনো বমি পাচ্ছে।
অভিক গাড়িতে উঠে বসে সিটবেল্ট পড়তে পড়তে বলল
আমি আপনাকে নোংরা বলব?
বলার ক্ষমতা রাখেন বলেই বলছি।
অভিক কাতর চোখে তাকালো। সুজানা মাথা এলিয়ে রেখেছে সিটে। অভিক বলল
আমার দশাও কুকুরটার মতো হবে আপনি এরকম করতে থাকলে।
সুজানা সাথেসাথে তাকালো কপাল কুঁচকে।
অভিক মাথা দুলিয়ে বলল
হুম।
সুজানা কপাল চেপে ধরে বলল
আপনি আপনার স্টুডেন্টকে এত জ্বালাচ্ছেন কেন?
কারণ আমার স্টুডেন্ট আমাকে রাতে ঘুমাতে দিচ্ছে না।
চলবে………#আমায়_রেখো_প্রিয়_প্রহরে
#পর্ব_২৯
Writer #পুষ্পিতা_প্রিমা
কিছু আগের সেই মর্মান্তিক ঘটনা সুজানাকে দুর্বল করে দিয়েছে। ভেতরটা এখনো ধুকপুক করে কাঁপছে। কুকুরটা কাল থেকে আর তার পিছু লাগবেনা ভাবতে গেলেও কেমন অপরাধবোধ কাজ করছে। এখনো সে উষ্ণ রক্তের গন্ধ পাচ্ছে। কান দুটো দিয়ে বোলতার আওয়াজ বেরোচ্ছে। কমছে আবার বাড়ছে। চোখ বন্ধ করে চুপটি করে রইলো সে। পাশ দিয়ে চলে যাওয়া মোটর সাইকেল থেকে পেট্রোলের গন্ধ এসে নাকে ঠেকতেই গলগল করে বমি করে দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে এল সে। অভিক তার ছটপটানি দেখে গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে ঠান্ডা জাতীয় কিছু আনতে গিয়েছে। একটা জুস তার হাতে। সুজানাকে আবারও বমি করতে দেখে সে জুসের বোতল রেখে পানির বোতল নিয়ে এল। বলল
এদিকে আসুন। এখানে বমির কি হলো আমি বুঝে পাচ্ছি না। আপনার শরীর বেশি খারাপ লাগছে?
সুজানার বমি থামতেই সে দুর্বল, অবসন্ন চোখে চাইলো। গাড়ির দরজা শক্ত করে ধরে নিভে আসা গলায় বলল
আপনার সাথে আমি কথা বলিনা কাল থেকে।
অভিক চোখ পাকিয়ে চাইলো।
এই অবস্থায় ও এসব কথা বলার হুশ আছে?
সুজানা গাড়ির দরজা খুলে কোনোমতে বসে পড়লো।
অভিক গাড়িতে বসে জুসের বোতল বাড়িয়ে দিয়ে বলল
ঠান্ডা আছে। খান। ভালো লাগবে।
সুজানা নিল। বোতলের ছিপি খুলতে গিয়ে দেখলো হাতে নূন্যতম শক্তিটুকু সে পাচ্ছে না। অভিক সিটবেল্ট টেনে পড়ার সময় দেখলো সুজানার ছিপিটা চেপে ধরে মাথা এলিয়ে বসে আছে। সে বেল্ট পড়ে নিয়ে বোতল নিয়ে বলল
কুকুরটা মারা গিয়েছে। আপনি এত চিন্তা করে কি করবেন? বরঞ্চ অন্য প্রাণীদের দিকে নজর দিন সময় থাকতে।
সুজানা চোখ বন্ধ করে রইলো। অভিক ছিপি খুলতে খুলতে বলল
সিটবেল্ট পড়ুন। পড়ে যাবেন।
সুজানার নড়াচড়া নেই। অভিক বলল
সু–জা–না?
সুজানা চোখ মেলে তার দিকে চেয়ে আওয়াজ করলো।
হুহ?
অভিক ছিপি খুলে তাকে ধরিয়ে দিল। সিটবেল্ট টেনে পড়িয়ে সরে পড়ার সময় ভুরু উঁচিয়ে সুজানাকে বলল
মনে মনে ভাবছেন এই ষ্টুপিড স্যারটাকে বমি করে বরবাদ করে দিলে কেমন হয়? তাই তো?
সুজানা সুস্থসবল থাকলে হয়ত হেসে উঠতো। কিন্তু এখন সে ভুরু কুঁচকে চেয়ে আছে। অভিক হেসে বলল
ওসব চিন্তা করে লাভ নেই। আমি অলরেডি বরবাদ হয়ে গেছি। আপনি আমাকে জাস্ট বরবাদ করে দিয়েছেন। আর বরবাদ করার কোনো ওয়ে নেই।
সুজানার কপালের ভাঁজ আরও দ্বিগুণ হলো।
বলল
আমি কিছু করিনি। আপনি আমার সাথে এত বকবক কেন করছেন? আমি আপনার কথা বলিনা বলছিলাম না? যেচে কেন কথা বলছেন?
আপনার কারণে যেচেপড়ে আমাকে কথা বলতে হচ্ছে। আপনি যেচেপড়ে কথা বলুন আমি আপনার মতো শুধু ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে থাকব।
সুজানা বলল
উফ।
আচ্ছা ঠিক আছে গাড়ি ছাড়ছি। আমার মনে একটা প্রশ্ন আছে সেটা হচ্ছে আপনি সেদিন গিয়েছিলেন মেহুলের সাথে আমার বিয়ের সম্বন্ধ ভাঙতে। তাহলে অত সেজেগুজে গিয়েছিলেন কেন?
সুজানা জুস খেতে খেতে হা করে তাকালো। অভিক ভুরু নাচিয়ে বলল
কঠিন প্রশ্ন করলাম না?
ফকির সেজে গেলে কেউ পছন্দ করে নাকি?
অভিক গাড়ি ছাড়তে গিয়েও ছাড়লো না।
আঙুল দেখিয়ে বলল,
ওয়েট ওয়েট। আপনি সেজেগুজে গিয়েছিলেন মেহুলের বদৌলতে আপনাকে পছন্দ করার জন্য?
সুজানা চোখ বড় বড় করে তাকালো। সামনাসামনি মানুষ মানুষকে এভাবে বলতে পারে? নাকি উনি সারাক্ষণ সুজানাকে চেতানোর তালে থাকে।
বলুন? চুপ করে গেলেন কেন? নিশ্চয়ই আমি সত্যি বলেছি। যদি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে এটাও সত্যি আপনার উদ্দেশ্য সফল হয়েছে।
সুজানা এবার ভান ধরলো। বলল
বাড়ি যাব।
হ্যা অবশ্যই বাড়ি যাব। আপনাকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান আপাতত করছিনা।
সুজানা জুসটা খেতেই থাকলো। এত ভালো লাগছে খেতে। বমি বমি ভাবটা চলে গিয়েছে। পেটে ঠান্ডা পড়েছে। এখন পাশে বসা লোকটার বকরবকর গুলোও ভালো লাগছে।
অভিক গাড়ি ছেড়ে দিল। বলল
আপনাকে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি।
হুম।
গাড়ি অন্য রাস্তায় ঢুকে পড়ায় সুজানা বলল
এই রাস্তা কেন? এই রাস্তা দিয়ে যাব না।
আমি তিন নম্বর গেইট যাচ্ছি।
কেন?
আপনি বাড়ি যাবেন বলেছেন তাই।
আমার বাড়ি বলেছি। আপনার বাড়ি না। দোহাই লাগে আমাকে নামিয়ে দিন স্যাররররর।
অভিক সাথে-সাথেই বলল
আমাকে স্যার ডেকে অপমান করবেন না।
সুজানা হা করে চাইলো।
স্যার ডাকা মানে অপমান?
আপনি স্যার ডাকা মানে অপমান।
সুজানা বলল
আমি যাব না ওই বাড়িতে। কার সাথে না কার সাথে আবার তর্ক করে বসি। যাব না মানে যাব না। কাল আমাকে মিথ্যে অপবাদ দিয়ে আবার কেন নিয়ে যাচ্ছেন। এখন নামিয়ে দিন।
অভিক বলল
মেহুলের বদৌলতে যে আপনি ওইদিন সেগুন বাগিচায় এসেছিলেন সেটা কিন্তু এখনো কেউ জানেনা।
সুজানা মুখ ছোট করে চাইলো।
অভিক ভয় দেখিয়ে বলল
আমি সবাইকে বলে দিতে পারি। হুমম।
সুজানা গাল ফুলিয়ে গাড়ির স্টিয়ারিং ধরে মোচড়ে ধরতেই অভিক বলল
আরেহ করছেনটা কি?
আমার বাড়ির দিক যান।
ননসেন্স এরকম করে কেউ?
সুজানা সিটবেল্ট খুলতে খুলতে বলল
আমি দরকার হলে লাফ দেব তারপরও আপনার বাড়িতে যাব না। অভিক বলল
এসেই পড়েছি। আর ঝাপটাঝাপটি করে লাভ নেই।
সুজানা স্টিয়ারিং ধরতে যেতেই অভিক ওর হাত চেপে ধরলো স্টিয়ারিং সহ। ফিসফিসিয়ে বলল
আপনি চাইলে আপনাকে আমি গাড়ি চালানোটাও শিখিয়ে দিতে পারি। কিন্তু আমাকে যদি কথা দেন আপনি আর কারো বিয়ের সম্বন্ধ ভাঙতে যাবেন না। কারণ শুনেছি সেগুন বাগিচায় গেলেই মানুষ বরবাদ হয়ে যায়।
সুজানা হাত টা নিয়ে নিতে চাইলো। তবে নিতে পারলো না। বলল
একমুহূর্তও থাকব না আমি ওই বাড়িতে। কথা শুনিয়েছেন বেশ মনে আছে আমার।
সরি বলেছি বেশ মনে আছে আমার।
মেইলের নাম পাল্টালে সরি বলা হয়না।
আচ্ছা বলব।
কখন?
সব কথা চুপিচুপি বলা যায় নাকি?
মানে?
মানে পুরো পৃথিবীকে শুনিয়ে আপনাকে সরি বলব।
দরকার নেই।
আমার দরকার আছে।
গাড়ি বাড়ির গেইট পেরিয়ে ঢুকে পড়লো। অভিক গাড়ি থেকে নেমে সুজানার দরজার পাশে এসে ঝুঁকে বলল
মাকে বলব বরণ ঢালা নিয়ে আসার জন্য?
সুজানা ফুলতে ফুলতে বলল,
আপনি খুব খারাপ।
অভিক জোরে জুসের বোতলটা দিয়ে সুজানার নাকে বাড়ি মারলো। বলল
আপনার রাগটাগ থাকতেই পারে। কিন্তু আমার সাথে না ঠিক আছে? নাকের ডগায় এত রাগ রাখা যাবে না। নাক পুরো কেটে ফেলে দেব।
সুজানা বলল
তো মানুষে তখন আপনাকে কি বলবে? বলবে নাক কাটার………..
বলেই লজ্জা পেয়ে হেসে গালে হাত চেপে অপরদিকে ফিরে গেল সুজানা। অভিকও হেসে উঠলো।
চলবে…
খুব ব্যস্ত তারপরও ছোট করে লিখেছি। রিচেক করা হয়নি।