আমার গল্পে শুধু তুমি পর্ব ১৫

গল্প: আমার গল্পে শুধু তুমি
লেখক হাচনাইন হোসেন সাব্বির
পর্ব:১৫

অন্তী তূর্যর দিকে সই করা ডিভোর্স পেপারটা এগিয়ে দেয়।তূর্য কাজটাতে একবার চোখ বুলিয়প নেয় এবার তূর্যর সমস্ত চিন্তাভাবনা গুলো যেন এলোমেলো হয়ে যায়।

তূর্য বেশ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে অন্তীর দিকে… -এসব কি??

-কেন আমার মুক্তির চাবি কাঠি…. (অন্তী কথাটা বলেই মুখ ফিরিয়ে নেয়)
-কি??
-হু

-আমি ভেবেছিলাম তুমি হয়তো আমাকে…..।কাল রাতে আমার ব্যবহারে তুমি যদি অসম্মানিত হয়ে থাকো তাহলে আমাকে ক্ষমা করে দিও।আমি সত্যিই এমন কিছু করতে চাই নি!আই মিন আমি ইচ্ছে করে কিছুই করি নাই….

-অসন্মানের কি আছে!আমাকে আপনি সন্মানই বা কবে দিলেন যে আমি সন্মান আশা করবো?

-তুমি কি সাগরের জন্য আমার সাথে এমন করছো??

-কি করলাম??

-জানো না কি করলে??সব কিছু কি ঐ সাগরের জন্য?ঐ দুদিনের ছেলেটার জন্য এতোভালোবাসা যে এতো বছরের আমাকে….

-হয়তো হ্যা নয়তো না….ঐ সব আপনার না ভাবলেও চলবে আপনি আপনার সুন্দর ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবুন আর ভালো থাকুন……

[সকালে তূর্য চোখ খুলতেই দেখে অন্তী তার পাশে নেই।তবে তার বিছানার পাশে টাওয়াল আর জামা কাপড় বেশ যত্ন করে রাখা আছে।তূর্য মুচকি হেসে সব কিছু নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়।তূর্য ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখে বেড সাইডের পাশে রাখা ছোট্ট টি টেবিলটার উপর কফি রাখা আছে ঠিক তার পাশেই তূর্যর পছন্দের ব্র্যন্ডের এক প্যাকেট সিগারেট।

তূর্য সিগারেট টা দেখে বেশ অবাক হয়।অন্তী তো সিগারেট একদম পছন্দ করে না তাহলে হটাৎ এমন গিফট।তূর্য অন্তীকে ডাকতে যাবে তখনই অন্তী নিজেই সেখানে এসে হাজির।

তূর্য অন্তীর দিকে তাকায়।কালকের মতো অন্তী শাড়ি পড়ে নেই। স্যালোয়ার কামিজ পড়ে আছে। তূর্য অন্তীর দিকে ভুরু কুচকে তাকায়।. -শাড়িতেই তোকে বেশ ভালো লাগে…

-স্বাভাবিক।যেকোনো মেয়েকেই শাড়িতে ভালো লাগে,,, -আমার কাছে সব মেয়ে আর তুই এক হলি নাকি?

-না তো আমি অনেক আলাদা আমি আর মেমসাহেব কি কখনো এক হতে পাড়ি,,, -এর মধ্যে আবার মেমসাহে…আই মিন জেনি আসলো কোই থেকে?

-নতুন করে আবার কি আসবে। বাদ দিন ঐ সব চলুন খেতে চলুন,,,, অন্তী চলে যেতে নিলে তূর্য অন্তীকে থামিয়ে দেয়।সিগারেটের প্যাকেটটা দেখিয়ে অন্তীকে প্রশ্ন করে,,,

-হটাৎ এমন গিফট

-ইচ্ছে হলো তাই?

-তাই নাকি….সিগারেট খেলে তো আমার ঠোট পুড়ে কালো হয়ে যাবে।তোর ভালো লাগবে… -আমার ভালো লাগা খারাপ লাগাতে কিছুই যায় আসবে না! -মানে?

-আপনার জন্য আরো একটা উপহার আছে…..

-কি???

তখন অন্তী সই করা ডিভোর্স পেপারটা তূর্য দিকে এগিয়ে দেয়]

তূর্য আর এক মুহূর্তও সেখানে দাড়ায় নি দ্রুত পায়ে সেখান থেকে বেরিয়ে যায়।তূর্য যাওয়ার আগে শুধু অন্তীকে একটা কথায় বলে যায়

তোমার সম্পূর্ন মুক্তি দিয়েই আমার ছুটি!হয়তো একদিন আসবে যেদিন তুমি নিজেকে বাঁধতে চাইবে কিন্তু সেদিন তোমাকে বেধে রাখার জন্য হয়তো আমি থাকবো না

তূর্য যাওয়ার পর অন্তী সেখানেই পাথরের মতো বসে পড়ে….সে যেন নড়া চড়া করার মতো ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে,হারিয়ে ফেলেছে সামান্যতম চিন্তা শক্তি!

বুকের ভেতরটা সম্পূর্ন ফাঁকা হয়ে গেছে। খানিকক্ষন পর অন্তীর মনে হয়,,,

সে যা করেছে ঠিক করেছে….তূর্য যা চায় তাকে তাই দিয়েছে।তার যোগ্য জীবন সঙ্গী উপহার দিয়েছে তাকে….তার মেমসাহেবকে।তূর্য বাকিটা জীবন বেশ ভালো থাকবে সুখে থাকবে

মাঝে কেটে গেছে অনেকগুলো দিন।না অন্তী জানে তূর্য কেমন আছে না তূর্য জানে অন্তী কেমন আছে। দুজনের মাঝে এখন আকাশের মতো বিশাল দূরত্ব।

দেখতে দেখতে তূর্যর যাওয়ার দিন এগিয়ে এসেছে।নেক্সট সানডে তে তূর্য আবার ইউকেতে ফিরে যাবে….জিনিয়াও যাবে। এদিকে তমশা বেগম কেঁদে কেটে এক সাঁ হয়ে গেছে।

(তূর্য তমশা বেগমে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে যে সে সারা জীবনের মতো এদেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে।চলে যাচ্ছে এ শহর থেকে।আর কখনো ফিরবে না।আবার অন্তী আর তূর্যর ছাড়াছাড়ির কথাও দুই পরিবারের সবাই জেনে গেছে)এবার তমশা বেগমের শোক দেখে কে!সে ঠিকই ধারণা করেছিলো এই বিদেশীনি মেম তার ছেলেকে সারা জীবনের মতো কেড়ে নিতে এসেছে।

আর এই সব কিছুর জন্য দায়ী ঐ মেয়ে…মানে অন্তী। সে যদি নিজের স্বামীকে একটু আগলে রাখতো তাহলে এমন কিছুই হতো না।অবশ্য ঐ মেয়ের যা চরিত্রের দোষ তাতে তো!!!

যাই হোক শেষ মেষ ছেলেটা আমার চলেই যাচ্ছে চেয়েও আটকাতে পারবো না। এসব হাজার চিন্তা ভাবনা নিয়ে তমশা বেগম বসে বসে চোখের পানি ফেলছে।একদিকে তূর্যর ফিরে যাওয়ার দিন এগিয়ে আসছে আর ঐ দিকে অন্তীর প্রতি মা আর দাদীর মানসিক অত্যাচার বেড়েই চলেছে।

তাদের এক কথা ছেলেদের চরিত্রে এমন ছোট খাটো সমস্যা থাকেই তাই বলে কি এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়।বোঝা পড়া করেও তো তা মানিয়ে নেওয়া যায়।কোনো সমঝোতা ছাড়াই তালাক??

এমন শত কথার সম্মুখীন হতে হচ্ছে অন্তীকে।বিয়ের ছ মাস না গড়াতেই ছাড়াছড়ি এমন মেয়েকে কি সমাজ মেনে নিবে কখনোই না। কিন্তু সে চাইলেও জিনিয়া আর তূর্যর ব্যপারে খোলসা করে কাউকে কিছুই বলতে পারছে না।

এদিকে তূর্য অন্তীর ছাড়া ছাড়িটা তন্ময় কিছুতেই মানতে পারছে না।ভাইয়ের জীবনে এতো বড় ঝড়টা যে তার জন্যই এসেছে তা তো সে খুব ভালো করেই জানে।

তূর্য জীবনে সুখী হওয়ার চাবি কাঠিটা যে অন্তীর হাতে তা তো তন্ময় খুব ভালো করেই জানে।জিনিয়ার সাথে তো সে কখনোই ভালো থাকবে না।

এমন হাজার প্রশ্নের সাথে যুদ্ধ করে তন্ময়ের মনে একটাই উওর আসে…

অন্তী।অন্তীকে সব জানাতে হবে…. অন্তী ফিরলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। সব কিছুর সমাধান একটাই,,,

দুজন ভালোবাসার মানুষের মাঝে কোনো তৃতীয় ব্যক্তি রাখা যাবে না

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here