গল্প: আমার গল্পে শুধু তুমি
লেখক:হাচনাইন হোসেন সাব্বির
পর্ব:৩
প্রিয়সির রূপের বর্ননা দেওয়ার জন্য তার এলোমেলো অগোছালো চুল,চোখের নিচে লেপ্টে যাওয়া কাজল আর হালকা গোলাপী ঠোটের বাঁকা হাসিই যথেষ্ট।প্রত্যেক প্রেমিক পুরুষের কাছে প্রিয়সির প্রতি অনুভূতি গুলো কেবল লোক চোক্ষের আড়ালে মাথা চাড়া দিয়ে উঠে।প্রিয়সির কাছে সেই অনুভূতি গুলোকে ব্যক্ত করার জন্য কোনো সূচনা বা উপসংহারের প্রয়োজন হয় না।কিন্ত যখন প্রিয়সি সামনে থাকে তখন অনূভুতি গুলো ব্যক্ত করার জন্য ভাষা থাকে না শুধু এক জোড়া তৃষ্ঞ্চার্ত চোখ সর্বদা একটা উওর ই খুজে বেরায়,
যেই ভালোবাসার ঝড় আমার হৃদয়ে বইছে সেই একই ঝড় কি প্রিয়সির হৃদয়কেও উতলা করে তুলেছে…….??
এইটুকু পড়তেই কেউ একজন পেছন থেকে এসে ছোঁ মেরে অন্তীর হাত থেকে ডায়েরিটা নিয়ে নেয়।
[অন্তী রান্না ঘর থেকে ছুটে ঘরে আসার সময় ধাক্কা খায় তূর্যর টেবিলের সাথে।উপর থেকে একটা নীল রং-এর ডায়েরি এসে পড়ে অন্তীর পায়ের কাছে।অন্তী ডায়েরিটা হাতে তুলে নেয়।কয়েটটা পৃষ্ঠা পরেই লিখাগুলো চোখে পড়ে]
অন্তী রাগে ফসফস করতে করতে পেছন ফিরে তাকায় তূর্যকে দেখে মূহুর্তেই সব রাগ যেন ভ্যানিস হয়ে যায়।তূর্য সেই নীল রং এর ময়লাট ওয়ালা ডায়েরি নিয়ে দাড়িয়ে আছে।
-তোর স্বভাব কখনো বদলাবে না।
-মানে??
-অন্যের গোপন জিনিসে হাত দিতে লজ্জা করে না।জানিস না ডায়েরি মানুষের ব্যক্তিগত সম্পদ।সকালের কথা ভুলে গেলি?
-এটা তোমার???না মানে আপনার??
-ঘর আমার বিছানা আমার আর এই ঘরে যা যা থাকবে সবই আমার!!
-হু
-কিছু বুঝলি???
-হুহ
-কি?
-এই ডায়েরিটা তো….মানে আপনার!!
-এর চেয়ে বেশি বোঝার ক্ষমতা তোর নেই আর চেষ্টাও করিস না নাহলে দেখবি তোর বোঝার ঠ্যালায় পাগলা গারত ওপদি পৌছে গেছিস…..
-আচ্ছা।
-আর শোন আমি তোর সাগর ভাইয়া না যে আমার সব গোপন জিনিস তোর জন্য উন্মুক্ত থাকবে।এখন চল…
-কোথায় যাবো??
-বা রে রান্না ঘরে
-কেন??
-কেন মানে কি!!আমাকে কি তোর কাজের লোক মনে হয় না কি আমি রাধূনে?
-আমি তো পারি না।
-আমি শুধু তোকে হেল্প করবো।আর তুই সব কিছু নিজের হাতে করবি!
-ওওও কেন তুমি কি আমার হেল্পার??
-কিহ্??
-না না কিছু না চলুন যাচ্ছি!
অন্তী গুটি গুটি পায়ে হাটা ধরে রান্না ঘরের দিকে।অন্তী তূর্যর বলা সব ইন্স্ট্রাকশন অনুযায়ী বেশ দ্রুতই খিচুড়িটা বানিয়ে ফেলে।
এদিকে তূর্যকে রান্না ঘরে যেতে দেখে তমসা বেগমের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে।কথায় আছে আগুন আর ঘি পাশাপাশি রাখতে নাই তাতে নাকি একসম দুজন মিলেমিশে এক হয়ে যায়।
অথচ কাল পর্যন্ত তমসা বেগমের কাছে তূর্য আর অন্তী ছিলো তেল আর জল।যা কখনো মিশে না।
তমসা বেগম এখন নিজেই নিজের হাত কামরাচ্ছে।
কাল রাতেই দুজনকে আলাদা করে দেওয়া উচিত ছিলো।তহলে আজ সকালে ছেলেকে এভাবে বউয়ের আচল ধরে ঘুরতে দেখতো না।
এতো হিন্দি সিরিয়াল দেখে লাভ কি হলো।সিরিয়ালের একটা ট্রিক্সও তো খাটাতে পারলো না।
এতো বড় একটা বিষয় কাল রাতে যে কেন মাথায় আসলো না।ধূর!!
এসব হাজার হাজার চিন্তা মাথায় ভীর করতেই অন্তী হাজির গরম গরম খিচুড়ি নিয়ে
-ফুপ্পি এই নাও তোমার জন্য আমি…
-হয়েছে হয়েছে বানিয়েছিস তো ঐ খিচুরি তার আবার এতো ন্যাক্যামো!তাও হতো যদি নিজের হাতে করতিস সেটাও করিয়েছিস আমার ছেলেকে দিয়ে।
-না না ওনি তো শুধু…
-চুপ।নিয়ে যা এগুলো এখান থেকে আমার খিচুড়ি খাওয়ার শখ মিটে গেছে।।
অন্তী মাথা নিচু করে সেখান থেকে চলে আসে।অন্তী একরকম ছুটে ছুটেই ঘরে আসে।ঘরে এসে এদিক ওদিক উকিঝুকি দেয়।তূর্য নেই আসে পাশে কোথাও নেই।হটাৎ করেই অন্তীর মনে পড়ে আজ যে তার কলেজে একটা টেস্ট এক্সাম আছে।অথচ এতো বড় কথা সে ভুলেই গিয়েছিলো।
অন্তী কোনো রকমে রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়ে।প্রথমে যাবে নিজের বাড়ি তারপর বই পত্র গুছিয়ে কলেজ।
কিন্তু সময়ের অভাবে আর বাড়ি যাওয়া হয় না। অন্তী একরকম ছুটে ছুটেই কলেজে পৌছে যায়। সারাদিন ক্লাস করে বাড়ি ফিরতে প্রায় পাঁচটা বেজে গেছে। অন্তী বাড়ির দরজার সামনে দাড়িয়ে তখন থেকে বেল বাজিয়েই চলেছে অথচ কেউই খুলছে না।
অন্তীর বেশ কয়েকবার বেল বাজিয়ে সেখানেই বসে পড়ে। এভাবে দাড়িয়ে থাকতে অন্তীর একদমি ভালো লাগে না! অন্তী আরেকবার কলিংবেল বাজাতে যাবে এমন সময় কেউ একজন এসে দরজাটা খুলে দেয়। অন্তী মাথা তুলে তাকায়।
তূর্য দাড়িয়ে আছে।
অন্তী তূর্যকে পাশ কাটিয়ে ভেতরে যেতে নিলে তূর্য অন্তীর হাত চেপে ধরে।
-কি হ….
অন্তী মুখ দিয়ে শব্দটা বের করার আগেই তূর্য অন্তীর গালে সজোড়ে একটা থাপ্পড় মেরে দেয়। অন্তী ছিটকে গিয়ে মেঝেতে পড়ে।
– তোর সাগর ভাইয়ার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলি মনে হয়?? তোর তো সাগর ভাইয়াকে একদিন না দেখলে মন কেমন করে!তা কোন হটেলে উঠেছিলি তোরা আমাকে আগে বললেই তো আমি নিজে গিয়ে পৌছে দিয়ে আসতাম!!!
কথাগুলো বলেই তূর্য বেরিয়ে যায় সেখান থেকে। অন্তী কিছুক্ষন গালেহাত দিয়ে বসে থাকে।তারপর কাঁদতে কাঁদতে ঘরে চলে যায়।
এদিকে তমশা বেগম আর প্রভা গোটা ঘটনাটা দেখে।তমসা বেগমের মাথায় সাগর নামটা একেবারে গেথে যায়।
তারমানে এই মেয়েটাকে কাবু করার উপায় হলো এই সাগর। এতোদিন হিন্দি সিরিয়াল দেখার ফয়দা বোধয় এখন পেতে চলেছি কথাটা বলেই তমশা বেগম মনে মনে একগাল হেসে হাটা ধরে নিজের ঘরের দিকে।
ভাবিকে ফোন করতে হবে।সাগরের ব্যাপ্যারে খোঁজ নিতে হবে। এদিকে সারা বিকাল পেড়িয়ে সন্ধ্যে সন্ধ্যে পেড়িয়ে রাত।অথচ তূর্যর কোনো খবরই নেই। অন্তী সারা রাত অপেক্ষা করেও তার অপেক্ষার প্রহর যেন শেষই হয় না।
হটাৎই অন্তীর কানে একটা ফোনের রিংটোনের শব্দ আসে। অন্তী শব্দের উৎস খোজ করকে চোখে পড়ে তূর্যর ফোনটা। তূর্য রেগে মেগে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ফোনটা রেখে চলে গেছে।
অন্তী ফোনটা তুলব না তুলবনা করেও ফোনটা রিসিভ করে আবার সেই মেয়ের গলা।সে আধা ভাঙ্গা বাংলায় বলতে শুরু করে
-জান আমি আসছি তোমাকে আমার সাথে ফিরে নিয়ে আসার জন্য।তোমার মেম সাহেব তোমাকে ছাড়া বাঁচবে না।হয় তুমি আমার সাথে ফিরবে,না হয় আমার যা করার তাই করবো।তুমি আর আমাকে আটকাতে পারবে না!আমি তোমার হাতের খেলার পুতুল নয় যে আমার সাথে যা ইচ্ছে করবে…..
এইটুকু বলেই মেয়েটা ফোনটা রেখে দেয়। অন্তী ফোনটা যথা স্থানে রেখে চুপচাপ বসে পড়ে।
তাহলে এই কি সেই মেমসাহেব যার জন্য তূর্য ভাইয়া…..যে কোনো দিনও আমার ছিলো না সে আমার হবে কি করে।নাম হীন সম্পর্কগুলো এমনই হয় যার কোনো পরিসীমা থাকে না।কখনো সেই সম্পর্কের সীমানা হয় অসীম কখনো বা শূন্য থেকে শুরু হয়ে শূন্যতেই মিলিয়ে যায়
হটাৎ করেই পেটের উপর একটা ঠান্ডা হাতের স্পর্শে অন্তীর ঘুম ভেঙ্গে যায়।অন্তী বেড সাইডে হেলান দিয়ে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েছে তার ঠিক নেই।অন্তী চোখ খুলেই তূর্যকে দেখতে পায়।ঘড়িতে এখন রাত একটা বেজে কুড়ি মিনিট।
তূর্য গত রাতের মতো আজো অন্তীকে কাছে টানছে।কিন্তু অন্তী কি মনে করে তূর্যকে ধাক্কা দিয়ে উঠে দাড়ায়।
-তূর্য ভাইয়া তুমি তোমার মেমসাহেব কে নিয়ে ভালো থাকো।তুমি না তাকে ভালোবাসো??প্লিজ আমাকে তোমার এই শিকল থেকে মুক্তি দাও!!কেন এভাবে আমাকে বন্দিনী করে রেখেছো??