গল্প: আমার গল্পে শুধু তুমি
লেখক: হাচনাইন হোসেন সাব্বির
পর্ব: ৪
-ও ফুপি গো তোমার ছেলে আমাকে মেরে ফেল্লো!তূর্য ভাইয়া ছাড়ো আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে….!!
তখন অন্তী কথাগুলো শেষ করার আগেই তূর্য হুট করেই অন্তীর গলা চেপে ধরে। যদি সে পারতো তো এখনই অন্তীকে মেরে ফেলতো পরক্ষনে অবশ্য আবার বাঁচিয়ে তুলতো!তবুও তাতে কষ্টটা হয়তো একটু কমতো!
তূর্য অন্তীর গলা ছেড়ে দিয়ে সজোড়ে ধাক্কা মারে অন্তীকে।অন্তী দেয়ালে গিয়ে ঠোকর খায়।
-যদি পারতাম এক্ষুনি তোকে…
-মেরে ফেলতে তাই তো??তাতে তো আমারই ভালো হতো আমাকে আর এই বন্দিনী দশায় থাকতে হবে না।ছোট বেলা থেকেই তো তাই করছো অন্তু এটা করিস না,অন্তু এর সাথে কথা বলিস না,ওর সাথে মিশিস না…উফ সারা জীবন তোমার এই না না শুনতে শুনতে আমি ক্লান্ত।তুমি বোধয় তোমার মেমসাহেব কে ও এতো না না করতে না যতোটা আমাকে করো!
কথাগুলো বলে অন্তী তূর্যর দিকে তাকায়। তূর্য মাথা নিচু করে রেখেছে।
হটাৎ করেই তূর্যর মুখে বাঁকা হাসির রেখা ফুটে উঠে…. এবার অন্তী ভয় পাচ্ছে তূর্যর এই হাসিকে সে খুব ভয় পাচ্ছে…
-তোর খুব মুক্তির সাধ তাই না???
-না মানে…
-মুক্তি মানে কি জানিস একা থাকা।একা থাকলে যা ইচ্ছে করা যায় কেউ কিছু বলতে পারে না।আজকের জন্য তুই ও মুক্ত….
কথাটা বলেই তূর্য অন্তীকে কোলে তুলে নেয়….
-এবাবা এটা কি করছে….
-তোকে মুক্তি দিচ্ছি।কাল ভোর পর্যন্ত তুই মুক্ত কথাটা বলেই তূর্য অন্তীকে বারান্দায় দাড় করিয়ে দেয়।
-এখানে?
-তুই এখানেই থাকবি।একা একা স্বাধীনভাবে।
-মানে কি??
তূর্য আর কথা বারায় না অন্তীকে বারান্দায় রেখে ধাম করে দরজাটা বন্ধ করে দেয়।এদিকে বেচাঁরি অন্তী তো চিৎকার করেই যাচ্ছে….
-তূর্য ভাইয়া আমার মুক্তি চাই না আমি তোমার সাথেই থাকবো।প্লিজ আমাকে ভেতরে নিয়ে যাও।
-(….)[ভেতর থেকে তূর্যর কোনো সাড়া নেই]
-এই যে শুনুন না প্লিজ দরজাটা খুলুন!!
তূর্য দুম করে বারান্দার লাইটটা অফ করে দেয়।এদিকে বারান্দাটা সম্পূর্ন অন্ধকারে ছেয়ে গেছে অন্তী আরো জোড়ে কেঁদে উঠে।
-তূর্য ভাইয়া আমি অন্ধকার খুব ভয় পাই তুমি তো জানো।প্লিজ দরজাটা খোলো!
-চুপ করবি?আর একবার যদি তোর মুখ থেকে কোনো শব্দ বের হয় তাহলে কিন্তু…..আশা করি সেদিনের কথা তুই ভুলিসনি!!
অন্তী এবার চুপ হয়ে যায়।
[সেবার অন্তী তার বড় খালামুনির বাড়িতে বেড়াতে যায়।অন্তী তখন মোটামুটি ছোট।সবে মাত্র ক্লাস সেভেনে উঠেছে।আর তূর্য কলেজে পড়ছে।অন্তীর খালার বাসায় তূর্য আর তিয়াশ দুজকেই নিয়ে যায় অন্তীর বাবা।তিয়াশ আর অন্তী প্রায় সমবয়সী।
তূর্য মোটামুটি ছেলেবেলা থেকেই মামা মামীর কাছেই বড় হয়েছে।অন্তীর বাবার খুব ইচ্ছে ছিলো একটা ছেলের বাবা হবে।সেই সখ মেটাতেই তূর্যকে নিজের কাছে রেখেছিলো।এদিকে তূর্যর বাবার ও তখন ব্যবসার খুব খারাপ অবস্থা তিন ছেলের দায়িত্ব সামলাতে পারছিলেন না।সে সুবাধে তূর্যকে নিজের ছেলের চেয়ে কম কখনো ভাবে নি অন্তীর বাবা।
অন্তীর বড় খালার বাসার পাশেই একটা বিশাল নদী আছে।অন্তীর বরাবরই পানির প্রতি একটা বিশেষ টান।
তার উপর সাগর ভাইয়া অন্তীকে বলেছে সে তাকে নদীতে নিয়ে যাবে গোসল করাতে।অন্তীকে আর আটকায়কে!!
সাগর অন্তীর বড় খালার ছেলে। সাগরও অবশ্য তূর্যের চেয়ে বয়সে ছোট তবুও।
অন্তী ভর দুপুর বেলা সাবার চোখ ফাঁকি দিয়ে সাগরের হাত ধরে বেরিয়ে যায় নদীর উদ্দেশ্যে।অবশ্য তাদের সাথে তিয়াশ ও ছিলো।ছিলো না শুধু তূর্য।কারন তূর্য তখন তার মামার সাথে গ্রাম ঘুরতে ব্যস্ত।
পানিতে তিনজন বেশ মাতামাতি করছিলো হটাৎ করেই কারো একজনের হুংকারে অন্তী কেপে উঠে পাড়ে তূর্য এসে দাড়িয়ে আছে।
অন্তী মাথা নিচু করে পানি থেকে উঠে আসে। তখন অন্তীকে টেনে হিচঁরে বাড়িতে নিয়ে যায়।বেশি কিছু বলে না! তবে সেদিন মাঝরাতে অন্তীর ঘুম ভাঙ্গে ঠান্ডা পানির ঝাপটা।অন্তী চোখ খুলে তাকায়। দেখে তূর্য হাটু গেড়ে অন্তীর সামনে বসে আছে..
-তূর্য ভাইয়া তুমি এখন?
-বারন করেছিলাম আমি?
-কি?
-সাগরের সাথে….
-সরি!
-সরি??
-হুহ…
-আমার কথা শুনতে তোর খুব খারাপ লাগে তাই না??
-হ্যা মানে না!!
-ওকে !!
সেবারও তূর্য অন্তীকে অন্ধকার বারান্দায় রেখে এসেছিলো।অন্তী ভয়ে চিৎকার করলে তূর্য অন্তীর হাত মুখ বেধে রেখে দিয়েছিলো।অবশ্য তূর্যও সেদিন অন্তীর সাথে ছিলো)
কিন্তু আজ অন্তী একা, এতো অন্ধকারের মাঝে একা সে।অন্তীর সাথে কেউ নেই।তূর্যও নেই।
সকাল বেলা অন্তীর ঘুম ভাঙ্গতেই দেখে দরজাটা খোলা।অন্তী সারা রাত ভয়ে কাঁদতে কাঁদতে সেখানেই ঘুমিয়ে যায়।
অন্তী ঘরে এসে দেখে তূর্য বিছানায় উবু হয়ে ঘুমোচ্ছে।
কাল রাতের কথা মনে পড়তেই অন্তীর রাগে গা জ্বলতে থাকে।অন্তী অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিচে চলে আসে।
ফুপ্পির কাছে যাবে সে।ফুপ্পিকে বলবে তূর্য ভাইয়া কাল রাতে আবার ঐ রকমটা করেছে।আগের বারের বেলায় সকালে অন্তী কেঁদে কেটে বাড়ি মাথায় করেছিলো।
তমসা বেগম এসব শুনে তূর্যকে যা তা বলে বকে দিয়েছিলো।সবাই তো অবাক এতো বড় ছেলেকে মা এভাবে বকে!!
অন্তী মুখ গোমড়া করে ফুপ্পির ঘরে চলে যায়
-ফুপ্পি শুনো
তমসা বেগম রাগে কটমট করতে করতে অন্তীর দিকে তাকায়
-ঐ যে ঐ যে এলো বড় লোকের বেটি,তার তো দেখি ১০ টার আগে ঘুম ভাঙ্গে না।
এবার অন্তী চুপ হয়ে যায়।সে তো ভুলেই গিয়েছিলো ফুপ্পি আর আগের মতো নেই অনেকটা বদলে গেছে।
অন্তী মাথা নিচু করে জবাব দেয়
-ফুপ্পি এখন তো আট টা বাজে ১০ টা কোই বাজলো?
-ওই যে এলো লাট সাহেবে কন্যা। তুই বাবা কোন জমিদার যে তোকে আটটা পর্যন্ত ঘুমাইতে হবে??শ্বশুড় শ্বাশুড়ির সেবা যন্ত তো করবি না শুধু তোর গোটা পরিবার মিলে আমার ছেলেটাকে শুষে খাবি!!
-না না ফুপ্পি!!
-চুপ যা রান্না ঘরে চা টা করে সবার ঘরে ঘরে গিয়ে দিয়ে আয় আর হ্যা আমাকেও দিয়ে যাস….
অন্তী আর কথা বারায় না সোজা রান্না ঘরে চলে যায়। তমসা বেগমের ব্যবহার আর কারো কানে না গেলেও তিয়াসের কানে ঠিকিই যায়।
তিয়াসের তো রিতিমতো ইচ্ছে করছিলো মাকে গিয়ে কয়েকটা কথা শুনিয়ে দিতে।
মা হুট করে কেন যে এতো পাল্টে গেলো
এই টুকু পিচ্চি মেয়েকে রান্না করতে বলছে অথচ বাড়ির বড় বউ সে কি না কোনো দিনও ৯ টা ১০ টার আগে ঘুম থেকেই উঠে না
তিয়াশ একটা লম্বা দম নিয়ে রান্না ঘরের হাটা ধরে।উদ্দেশ্য অন্তীকে সাহায্য করা।তমসা বেগম তো আগেই কাজের লোকদের রান্না ঘর থেকে ভাগিয়ে দিয়ে এসেছে।
তার না কি ছেলের বউয়ের হাতের রান্না খেতে ইচ্ছে করছে।
অন্তী আর তিয়াশ মিলে কোনো রকমে চা আর সামান্য কিছু ব্রেক ফাস্ট বানিয়ে ফেলে।
অন্তীর শরীরটা কেমন যেন খারাপ করছিলো। সারা রাত বারান্দায় মেঝেতে শুয়ে এই অবস্থা। তিয়াস অন্তীর হাতে একটা কফির মগ ধরিয়ে দিয়ে ঘরে পাঠিয়ে দেয়।
কফিটা তূর্যকে দিয়ে সে যেন রেস্ট করে।আর মায়ের জন্য ব্রেক ফ্যাস্ট তিয়াস নিজেই নিয়ে যাবে….
অন্তী কফির মগটা নিয়ে ঘরে ঢুকবে তখনই তার কানে আসে তূর্যর গলা। তূর্য কাউকে খুব জোড়ে জেড়ে বকছে….
তোমারে লিভ ইন করতে কি আমি বলছিলাম?তুমি বিপদে পড়ছিলা বলেই তো আমার ফ্লাটে তোমারে আশ্রয় দিয়েছিলাম।আমাদের মধ্যে যা কিছু হইছে তাতে আমাদের দুইজনেরি সম্মতিতে হইছে।আমরা দুজনই লিভ ইন করছি সো তুমি সব দোষ আমারে একা দিতে পারো না..
গল্প: আমার গল্পে শুধু তুমি
লেখক:হাচনাইন হোসেন সাব্বির
পর্ব:৫
তূর্যর মুখে লিভ ইন কথাটা শুনে অন্তী আর সামনের দিকে এগোই না সেখানেই স্থীর হয়ে দাড়িয়ে যায়।
হটাৎ কি মনে হতেই অন্তী আবার সামনে এগিয়ে যায়।তূর্য তখন বিছানায় হেলান দিয়ে ঝগড়া করতে ব্যস্ত, অন্তী তূর্যর কাছে গিয়ে বেশ চিল্লানি দিয়ে ওঠে,
-ওগো শুনছো তোমার কফি!নাও নাও খেয়ে নাও!
তূর্য একবার অন্তীর দিকে রাগী লুক দিয়ে তাকায়।অন্তী যে ইচ্ছে করে ফোনের ওপাড়ের মানুষটাকে শুনিয়ে শুনিয়ে কথাগুলো বলছে তা তূর্য বেশ বুঝতে পারছে।
তারপর ফোন নিয়ে বারাদায় চলে যায়।প্রায় কুড়ি মিনিট হতে চললো তূর্য বারান্দায় গিয়েছে কথা বলতে তবুও কেন যেন তার কথা শেষই হচ্ছে না।কফিটা এতোক্ষনে ঠান্ডা পানি হয়ে গেছে।
অন্তীর কেন যেন বেশ অস্বস্তি লাগছে।। একটা ভুল সব উলোটপালোট করে দিয়ে গেছে
অন্তী আর সেখানে না দাড়িয়ে হাটা ধরে রান্না ঘরের দিকে শ্বাশুড়ি ফুপ্পির হুকুম আজ থেকে সব রান্না তাকেই করতে হবে।
অবশ্য আজ তিয়াশ ও নেই তার নাকি কলেজে কি সব কাজ আছে।তাই অন্তী হেল্প করার মতে ও কেউ নেই,
কাজের লোকদের টুকটাক সাহায্য নিয়ে অন্তী কোনো রকমে রান্না বান্না কমপ্লিট করে ফেলে।এদিকে রান্না শেষ করতে তার প্রায় আড়াইটা বেজে গেছে।
এনিয়ে শ্বাশুড়ি ফুপ্পির সে কি রাগ।অন্তী নাকি ইচ্ছে করে দেরী করেছে রান্না করতে।যেহেতু তার ডায়াবেটিস আছে নিয়মিত খেতেই হয় তাকে।কিন্তু দেরী করে রান্না করেছে কারন যাতে,, তার খাবার খেতে দেরী হয় আর সে যেন অসুস্থ হয়ে পড়ে।
অন্তী ফুপ্পির কথায় কোনো প্রতিবাদ করেনি।তিয়ায় একটু ফোঁস ফাঁস করলেও বড় ভাবির কথার সাথে পেড়ে উঠতে পারেনি।এদিকে অন্তীও তিয়াশকে চুপ করিয়ে দিয়েছে।
এদিকে সবার খাওয়া দাওয়া হয়ে গেলে অন্তী সব কিছু গুছিয়ে হাটা ধরে ঘরের দিকে।তূর্যরও বোধয় খাওয়া হয়ে গেছে।
আজ সারা দিন তূর্য ঘর থেকে বের হয় নি।দুপুরের খাবারও সে ঘরেই খেয়েছে।সেই সকাল থেকে একবার ও অন্তী তূর্যর কাছে যায়নি।ঘরে তূর্যর খাবারও পাঠিয়েছে তিয়াশের হাতে।
কিন্তু এবার অন্তীকে ঘরে যেতেই হবে।সারা দিন রান্না ঘরে থেকে ঘেমে গোসল হয়ে গেছে।একটু ফ্রেশ না হয়ে উপায় নেই।
অন্তী ঘরে যেতেই দেখে তূর্য সোফার উপর পা তুলে ল্যাপটপ নিয়ে কিছু একটা করছে।অন্তী বাঁকা চোখে একবার তূর্যর দিকে তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নেয়।
তারপর কাবার্ড থেকে কাপড় বার করে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে যায়।এইটুকু সময়ে তূর্য একবার ও অন্তীর দিকে তাকায় নি।
অন্তী ওয়াশরুম থেকে বের হতেই তূর্য ডাক দেয় অন্তীকে….
-অন্তু
-হু
-আজ বিকালে মামার কাছে যাবি?
-বাবার কাছে!!হ্যা কিন্তু কেন?
-মামাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে….
-ওওও তাহলে আপনি যান আমি একদিন গিয়ে বাবাকে দেখে আসবো!
-আমার সাথে যাবি না?
-না আমাকে আপনার সাথে দেখলে আপনার মেমসাহেব হয়তো আরো বেশি রাগ করবে।
-হু
-কবে ফিরছেন?
-কোথায়?
-আপনার মেমসাহেবের কাছে?
-খুব দ্রুত।
-ওওও
-হু
-অন্তু আমার এই বিয়েটা করা ঠিক হয়নি।আমি তোর সাথে বড্ড বেশি অন্যায় করে ফেল্লাম।তোকে তোর সাগর ভাইয়ের কাছেই ছেড়ে দেওয়া উচিৎ ছিলো।
-হিহি অন্যায়ের কি আছে আমি নিজের অজান্তে আপনাকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছিলাম আর আপনি জেনে বুঝে দিলেন।তবুও শোধ বোধ হয়ে গেলো তো!!
-অন্তু
-প্লিজ আমাকে অন্তু বলে ডাকবেন না।বহু বছর আগে একজন ছিলো যে আমাকে অন্তু বলে ডাকতো সেই শুধু আমাকে অন্তু ডাকতো আর কেউ না।আপনিও আর ডাকবেন না।
-তুই তাকে হারিয়ে ফেলেছিস।সে তো হারিয়ে গেছে।
-তা তো গেছেই।কোনো এক বিদেশী মেমসাহেব তাকে কেড়ে নিয়েছে….
-খেয়েছিস??
-না তবে এখন খাবো!
-ওওও
-আমি ও….
অন্তী তূর্যকে সম্পূর্ন কথা শেষ করতে না দিয়ে দ্রুত পায়ে হাটা ধরে নিচের দিকে।আর এক মুহূর্ত দাড়ায় না সে তূর্যর সামনে।তূর্য হাতে সিগারেট নিয়ে হাটা ধরে বারান্দার দিকে, যদিও দিনের এই সময়টাতে তূর্য কখনো স্মোক করে না তবুও আজ সিগারেটের নেশা যেন মাথায় চড়ে যাচ্ছে।
সব কিছু কেমন তাল গোল পাকিয়ে যাচ্ছে।একপাশে তার দায়িত্ব কর্তব্য আর এক পাশে সহায় সম্বলহীন কয়েকজন মানুষ যাদেরকে সে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে।
[খুব ছোট বেলায় তূর্যর বাবা হটাৎ করে ব্যবসায় একটা খুব বড় লস করে বসে।তখন তূর্য সবে ক্লাস সিভেনে পড়তো।তূর্যর ছোট ভাইয়ের তখন সবে ছয় মাস বয়স।তূর্য পড়তো শহরের একটা নাম করা স্কুলে।তূর্যর তিশান(তূর্যর বড় ভাই) তিয়াশের খরচ চালাতে হিমসিম খাচ্ছিলেন তিনি।তখন তূর্যকে বুকে জড়িয়ে নেন অন্তীর বাবা।তূর্যর দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন ভদ্রলোকটি।
কেন যেন অন্তীর বাবা তূর্যকে বরাবরই খুবই ভালোবাস তো।তখন থেকেই তূর্য চলে যায় মামার কাছে।
তূর্য সেবার যখন জিএসসি পরিক্ষায় বিভাগের মধ্যে ফার্স্ট হয় সেদিনই মামা মামী তাকে একটি বিশেষ উপহার দেয়।
একটা সাদা তোয়ালেতে মোড়ানো একটা ছোট্ট পুতুল মানুষ। তূর্য সেদিনই সবাইকে বলে দেয় ওর এই পরীটাকেই চাই সারা জীবনের জন্য চাই।
এভাবেই কাটতে থাকে দিন মাস বছর।তূর্য কাছে অন্তীই ছিলো তার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু।অন্তীর আরো বোনেরা হয়, এদিকে তূর্য বাবাও নিজের লোকসান কাটিয়ে উঠে।যদিও তাতে অন্তীর বাবার ভূমিকা অনেক বেশি ছিলো।
এসএসসি পরীক্ষার পর তূর্যকে ভর্তি করা হয় ঢাকার এক নামি-দামি কলেজে। তূর্য মামার বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার সময় অন্তীকে জড়িয়ে সে কি কান্না…..
তূর্যর সেই যাওয়াই তূর্য অন্তীর সম্পর্কের মাঝে ধীরে ধীরে একটা বিশাল দেওয়াল গেথে দেয়। একটা সময় দেওয়ালটা এতোটাই বিশাল হয়ে যায় যে সে দেওয়াল চাইলেও ভাঙ্গার সাধ্য নেই কারো]
মায়ের খুব চেঁচামেচি শুনে তূর্য সিগারেট টা ফেলে দিয়ে নিচের দিকে হাটা ধরে। মা হটাৎ এভাবে কেন চেচামেচি করছে দেখার জন্য। তূর্য একটু এগিয়ে যেতেই দেখে অন্তী হাত চেপে ধরে রান্না ঘরের মেঝেতে বসে আছে আর তার পাশেই তমসা বেগম দাড়িয়ে দাড়িয়ে বকেই চলেছে,,
-তোর মা তোকে কি শিখিয়ে আমাদের ঘারে গছিয়েছে হ্যা?সামান্য গরম পানি করতে গিয়ে হাত পা পুড়ে এক সাঁ করে ফেলেছিস….
তোর বাবার কয়টা তালুক ছিলো শুনি?নিজেকে জমিদারের মেয়ে ভাবিস নাকি যে বাপের বাড়িতে কোনো কাজ কর্মই করিস নি!যত্তসব আমার ভালো সিধে সাধা মা কে ভুলিয়ে ভালিয়ে…..ফকিন্নির বাচ্চা!!
অন্তী তমসা বেগমকে কথার মাঝে থামিয়ে দিয়ে বলতে শুরু করে….
-ফুপ্পি আমি কখনো এক গ্লাস পানিও গড়িয়ে খাইনি সেটা তো তুমি জানো।শুধু আমি কেন তোমাকেও ঐ খানে কখনো কোনো কাজ করতে দেখিনি আমি।আসলে কি বলোতো তুমি আর আমার ফুপ্পি আম্মু নেই হটাৎ করেই আমার শ্বাশুড়ি হয়ে গেছো।
অন্তী কথাটা বলেই কাঁদতে শুরু করে,, অন্তীর বলা কথাটা কেন যেন তমসা বেগমের বুকে গিয়ে বিধে….
এবার তূর্য আর দাড়িয়ে থাকতে পারে না।অন্তীর কাছে এসে অন্তীর হাতটা চেপে ধরে।এরই মধ্যে অন্তীর হাতে ফোসকা পড়ে গেছে।
তূর্য অন্তীর কাছে যেতেই অন্তী আরো জোড়ে কেঁদে দেয়,
তূর্য মায়ের দিকে তাকায়,
-আম্মু ঐ ফকির লোকটায় জীবনের সর্বোশ্ব তোমাকে উজার করে দিয়ে আজ তোমাকে মানে আমাদেরকো জমিদার বানিয়ে নিজেই ফকির হয়ে রয়ে গেলো।জীবনে আর যাই হও অকৃতজ্ঞ হইও না!
তূর্য কথা গুলো বলেই অন্তীর হাত ধরে ঘরে টেনে নিয়ে যায়,, -তূর্য ভাইয়া আমাকে মায়ের কাছে রেখে এসো আর তুমি তোমার মেমসাহেবকে এখানে নিয়ে এসো।ফুপ্পি আম্মু ও খুশি আর তুমিও খুশি!!ফুপ্পিতো এমন মেয়েকেই চাই যে তোমার মানে আপনার যোগ্য
-অন্তু?
-হুহ
-আমি তোর করা অবিশ্বাস আর অবহেলা মেনে নিতে পারি নি সব ছেড়ে ছুড়ে পাড়ি জমিয়েছিলাম বিদেশে।আমার চেনা তুই, চেনা শহর,চেনা মানুষগুলোকে ছেড়ে বড্ড একা হয়ে গিয়েছিলাম।আমি যেই ইউনিভার্সিটিতে পড়তাম সেই ইউনিভার্সিটিতেই পড়তো জিনিয়া।জিনিয়ার বাবা বাঙ্গালী কিন্তু মা বিদেশি।জিনিয়ার সাথে আমার খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়।ওকে নিয়েই আমি তোকে ভুলতে চেয়েছিলাম।
-হুহ।ঐ জন্যই তো আমি যতোবারি তোমার সাথে যোগাযোগ করতাম ততোবারই তুমি আমাকে তোমার মেমসাহেবকে দেখিয়ে বুঝিয়ে দিতে তোমার জীবনে আমার কোনো জায়গা নেই।
-আমি চাইনি তোর সাথে যোগাযোগ রাখতে তুইও তো তোর সাগর ভাইকে নিয়ে বেশ সুখেই ছিলি…….
-একটা রোড অ্যাক্সিডেন্টে জিনিয়ার বাবা মা দুজনই মারা যায়।জিনিয়া তখন এ শহরে একা।মেয়েটা প্রচুন্ড ভেঙ্গে পড়ে।তখন আমি ওকে সাহায্য করতে চাই।ও আমার কাছে আশ্রয় চায়। ওকে আমার বাসায় নিয়ে আসি।আসলে ও একা থাকতে পারতো না প্রচুন্ড প্যানিক করতো।আর তারপরই….….
-তুমি আমাকে ডিভোর্স দিয়ে তোমার মেমসাহেবকে বিয়ে করে নাও।এভাবে একটা মেয়েকে….