গল্প: আমার গল্পে শুধু তুমি
লেখক:হাচনাইন হোসেন সাব্বির
পর্ব:৬
দেখতে দেখতে কেটে গেছে পনেরোটি বসন্ত।অন্তীর বয়স তখন সবে পনেরো পেরিয়েছে ।
সময়টা ছিলো ভালোবাসার।দুজনের মধ্যে ভালোবাসাবাসিও ছিলো বেশ।তূর্য তখন অন্তীতে মগ্ন।অন্তীকে ঘিরেই ছিলো তার সকল জলপনা কল্পনা।অন্তীরও তখন বারন্ত বয়স।তূর্য ভাইয়া মানেই এক রাশ মন খারাপের মাঝেও বিশাল ভালোলাগা,,
তূর্য অন্তীর সম্পর্কের ব্যাপ্যারে দুই পরিবারেরই সবাই জানতো।তাদের সম্পর্ক নিয়ে কারোরই কোনো সমস্যা ছিলো না।
এমন কি তমসা বেগমের ও নয়।
তখন তো তমসা বেগম অন্তীকে আদুরে বলে ডাকতো।তূর্য সাথে অন্তীর বিয়ে নিয়ে সর্বোপ্রথম আগ্রহ প্রকাশ করেছিলোই এই তমশা বেগম।
একেই তো ভাইয়ের প্রথম মেয়ে তার উপর অন্তীর প্রতি তূর্য বিশেষ দূর্বলতা সব মিলিয়ে অন্তীকে ছেলের বউ বানানোর জন্য এক পায়ে দাড়িয়ে আছেন তিনি।
এরই মধ্যে তূর্যও বিশ্ববিদ্যালয় চান্স পায়।সব মিলিয়ে আনন্দের শেষ নেই।তূর্যর নতুন জীবন নতুন বন্ধুবান্ধব এবং দিন শেষে অন্তীর সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা ফোনে কথা বলা।কখনো কখনো অন্তীর বোকা বোকা আবদার।যদি কোনো একদিন ফোন দিতে দেরী হয়ে যেতো সেদিন তো আর তূর্যর রক্ষা নেই।
অন্তী গাল ফুলিয়ে ভিডিও কল দিয়ে বসে থাকে।তখন অন্তী তূর্যর সামনেই ইয়া লম্বা ঘোমটা টেনে বসে পড়ে মূর্তির মতো।কিন্তু একটা কথাও বলে না।তূর্যর কথারও কোনো উওর দেয় না।তূর্যকেও একই ভাবে অপেক্ষা করতে হয় সেই সময়ের জন্য….
যখন অন্তী ঘোমটা তুলে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে তূর্যকে বলবে,, তূর্য ভাইয়া তুমি সত্যিই আমাকে ভুলে গেছো আর আমাকে ভালোবাসো না…আমিও আর তোমাকে ভালোবাসবো না হু এইতো দেখো আমি চলে গেলাম
কথাটা শেষ করেই একবার নাক টেনে ফোনের লাইন কেটে দিতো অন্তী। একটু রাগ হলেই অন্তীর এমন বোকা বোকা আচরন ছিলো তূর্যর কাছে এক মহা বিনোদন।
এভাবেই কেঁটে যায় তূর্যর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বছর।এরই মধ্যে তূর্য বেশ কিছু বন্ধুও বানিয়ে ফেলেছে।
একবার এক ভকেশানে গোটা বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি হয়ে যায়।মোটামোটি হোস্টেলগুলো খালি হয়ে গেলেও তূর্য আর তূর্য কিছু বন্ধুরা হোস্টেলেই থেকে যায় উদ্দেশ্য কাল পরশু যে যার বাড়ির দিকে রওনা দেবে।আজ মন খুলে আড্ডা দিবে।
তো সেদিন রাতে প্রায় ৮ টা নাগাত তূর্যরা গ্রুপ ধরে ক্যাম্পাসে বসে ছিলো।মোটামোটি বেশ রাত করেই তূর্যরা ক্যাম্পাসে আড্ডা দেয়।পর দিনই যে যার বাড়ি চলে যায়।
তূর্যও বাড়ি চলে আসে।এরই মধ্যে তূর্য সাথে অন্তীর একদফা মান অভিমানের পালা শুরু হয়ে গেছে।গত তিন দিন কেউ কারো সাথে কোনো।কথা বলে নি।অভিমানের কারন হলো সাগর।সাগর সাতদিন হলো অন্তীদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছে।এরই মধ্যে খালামুনির চোখ এড়িয়ে বার দুয়েক অন্তীকে প্রপোজও করে ফেলেছে কিন্তু অন্তী সরাসরি না করে দিয়েছে তাতে কি সে হাল ছাড়তে নারাজ।
তবে তূর্য অন্তীর মাঝে সমস্যা বাধার কারণ সাগরের এই ঘটনার কিছুই অন্তী তূর্যকে জানায়নি। সম্পূর্নটা গোপন করে গেছে।কিন্তু অন্তী মেজো বোন অার্থি সুযোগ বুঝে তূর্যর কানে গোটা ঘটনাটায় তুলে দেয়।ব্যাস মান অভিমানের পালা শুরু,, আগে হলে তূর্য বাড়ি না এসে সরাসরি অন্তীদের বাড়ি চলে যেতো তবে,,, এবার অন্তী তূর্য এমন কিছু করে নি।তূর্য সোজা বাড়ি এসে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়।
টানা দুদিন একরকম শুয়ে বসে সময় কাটে তূর্যর।তবে এ দুদিনে অন্তীর সাথে কোনো কথা হয় নি তূর্যর। তিন দিনের বেলায় এক বিকেলে তূর্য দের বাড়িতে হানা দেয় এক গাদা পুলিশ।
পুলিশগুলো সোজা এসে তূর্যর কলার চেপে ধরে,, তূর্য কথা বলতে গেলে তাদের মধ্যে একজন তূর্য গায়ে হাতও তোলে…
-কে তো মেয়েলী কেস তার উপর বড় বড় কথা!থানায় নিয়ে গিয়ে ঠিক মতে পিটানি দিলে তোরা মুখ খুলবি।
-মানে??(তূর্য অবাক হয়ে)
-এমন মাছুম চেহারা করে থাকলেই আমরা ভুলবো ভাবিস না একবার চল থানায় তারপর দেখাচ্ছি মজা।
কথাগুলো বলেই পুলিশরা তূর্যকে টানতে টানতে থানায় নিয়ে যায়,,
পুলিশের ভাষ্যমতে গত তিন দিন আগে তূর্যদের ব্যাচের একটি মেয়ে নিখোঁজ।নিখোঁজ হওয়ার আগে মেয়েটিকে না কি শেষবারের মতো একদল ছেলের সাথে দেখা গিয়েছিলো।সেই ছেলেদের দলটাই ছিলো তূর্যদের দল।মেয়েটার পরিবারের অভিযোগ তূর্যরাই মেয়েটাকে লুকিয়ে রেখেছে খারাপ কিছুর উদ্দেশ্যে। যেহেতু তূর্যই ছিলো ঐ ছেলেদের গ্রুপের সবচেয়ে পরিচিত মুখ তাই সন্দেহের তীর সবার আগে গেথেছে তূর্যর দিকে।
তূর্য সহ বাকিঁ সবাইকে পুলিশ থানায় নিয়ে গেছে। এদিকে তমসা বেগমের আহাজারি দেখে কে…
টানা চারদিন পর অন্তীর বাবার প্রচেষ্টায় তূর্যকে জামিনে ছাড়িয়ে আনা হয়,
অন্তীর বাবার এক বন্ধু ছিলো পুলিশের এক উচ্চ পদস্থ কর্মচারী সেই সূত্রে কোনো মতে তূর্যকে জামিনে বার করা হয়।এই চারদিনে প্রায় সবাইকেই পালা করে টর্চার করা হয়েছে সত্যি কথা বার করার উদ্দেশ্যে।
এরই মাঝে ঘটনাটা না না রকম যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে গেছে।সবা জায়গায় কালপ্রিটদের শীর্ষে তূর্যর নাম লিখা।
এদিকে তূর্যকে নিয়ে আত্মীয় সজনদের মধ্যেও শুরু হয়ে গেছে নানা রকম জল্পনা-কল্পনা প্রায় দুদিন হলো তূর্য ঘর বন্ধি।থানা থেকে আশার পরপরই তূর্য গা কেঁপে জ্বর আসে।এই দুদিন তূর্য ঘর থেকেও বের হয় নি।
এদিকে অন্তীও একবারও তূর্যর খবর পর্যন্ত নেয় নি।
অবশেষে এক সন্ধ্যেতে ধুম জ্বর মাথায় করে তূর্য রওনা হয় মামার বাড়ির উদ্দেশ্যে। প্রিয়সিকে যে তার বড্ড প্রয়োজন।আর পারছে না সে প্রিয়সিকে না দেখে থাকতে। চারদিক থেকে না না অপমানে যখন কোনঠাসা তূর্য তখন তার এই দম বন্ধকর পরিবেশের মধ্যে এক ফোটা অক্সিজেন হলো প্রিয়সির মুখের একটু মুচকি হাসি।
তূর্য মা বাবার হাজার বারন সত্তেও ঐ জ্বর গায়ে নিয়েই অন্তীদের বাড়ি চলে আসে।
তূর্য বাড়ির বেল বাজাতেই অর্না দরজা খুলে দেয়।তূর্য মুচকি হেসে পিচ্চি অর্নার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়।
কিন্তু অর্না তূর্যকে দেখে।লাফিয়ে দূরে সরে আসে।তূর্য একটু অবাক হয়।তারপর পকেট থেকে একটা ইয়া বড় চকলেট বার করে দেয় অর্নাকে।কিন্তু অর্না তা না নিয়ে ছুট লাগায় ভেতর দিকে।
তূর্য এবার বেশ অবাক হয়।যে অর্না তূর্যকে দেখলেই দু হাত বাড়িয়ে দেয় সে অর্না কিনা আজ….এমনকি পিচ্চিটা চকলেটটাও নিলো না।
তূর্য এবার আবার মুচকি হাসে।হয়তো অন্তীর মতো সে ও অভিমান করে বসে আছে।
তূর্য পা টিপে টিপে হাটা ধরে অন্তীর ঘরে।অন্তী তখন বারান্দায় দাড়িয়ে গুন গুন করে গান গাইছিলো।তূর্য গুটি গুটি পায়ে অন্তীর কাছে এসে অন্তীকে জড়িয়ে ধরে।তারপর অন্তীর কাঁধের উপর থেকে চুল সরিয়ে নাক ডুবায় অন্তীর ঘারে।
এবার অন্তী জ্বলন্ত অগ্নীকুন্ডের মতো দপ করে জ্বলে উঠে।শরীরের সর্ব শক্তি দিয়ে ধাক্কা মারে তূর্যকে।হটাৎ ধাক্কাটা সমলাতে না পেরে তূর্য দূরে সরে যায়।অন্তীর চোখ দুটো জ্বলজ্বল করে জ্বলছে রাগে…..
তূর্য এবার আবার হাত বারায় অন্তীর দিকে,, -অন্তু বেবি আই আম সো সরি….আমার আরো আগে তোমার কাছে আসা উচিৎ ছিলো কিন্তু,, -আসবে কি করে পুলিশ তো তোমাকে জেলে ভরে দিয়েছিলো তাই না!
-অন্তু…..
কথাটা বলেই তূর্য অন্তীর হাত ধরে জোড়ে হ্যাচকা টান দিয়ে অন্তীকে বুকের সাথে জড়িয়ে নেয়।
এবার অন্তী রেগে গিয়ে তূর্য গালে ঠাটিয়ে একটা চড় মারে…
-লম্পট কোথাকার একটা মেয়ের সর্বনাশ করে সাধ মেটেনি এখন এসেছো আমার সর্বনাশ করতে……???