আমার তুমি ২ পর্ব -০৩

#আমার তুমি ২
#পর্বঃ৩
#তানিশা সুলতানা

“আপি তোকে রীতিমতো ঠকানো হচ্ছে। রাজপুত্রের নাম করে হাবলাকান্ত এনে দিচ্ছে? তুই এটা কিছুতেই মেনে নিবি না। যতোই কিউট হোক। তবুও মানবি না।

তুলতুল তনুর কানে কানে বলে। সায়ান আর ছেলেটা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে। তুলতুল মনে মনে আল্লাহ আল্লাহ করছে যাতে বিয়েটা ভেঙে যায়। ওই হনুমানের ভাইয়ের সাথে যদি বিয়ে হয় তাহলে তো সারা দিন রাত তুলতুলকে থা*প্প*ড় খেতে হবে। বিয়েতে এতো আনন্দ করার কথা ভাবলো সব বৃধা যাবে। বাকি জীবনটা থা*প্প*ড়ময় হয়ে যাবে।

তুলতুল ফাঁকা গলায় ঢোক গিলে অসহায় চোখে তাকায় তনুর দিকে। তনু আপাতত মনোযোগ দিয়ে ওই ছেলেটাকে দেখছে।

” আপি আমার কথা বুঝতে পারছিস? দেখ নিলয় ভাই তোর পাঁচ দিন আগে ব্রেকআপ হওয়া ছেলেটা। কি কিউট। কতো স্মার্ট। তারপর তোর ক্রাশ কার্তিক আরিয়ান। আহা সুন্দরের নানা। এখন যদি তুই এই সুন্দরের চাচাতো কাকার মামাতো ভাইয়ের হবু শশুড়কে বিয়ে করিস। মানসম্মান থাকবে তোর?
এই যে আমি এই শহরের প্রায়,অর্ধেকের বেশি ছেলেকে ভাইয়া ডেকে আসলাম কারণ তারা তোর ক্রাশ ছিলো। তাদের সামনে দিয়ে এই চাচাকে নিয়ে যাবি কিভাবে?
জাস্ট ভাব একবার।

তুলতুল তনুর মাথায় গাট্টা মেরে বলে৷ তনু নরে চরে দাঁড়ায়। বড়বড় চোখ করে তাকায় ছেলেটার দিকে। ছেলেটা কিউট। শুধু একটু হাবলা হাবলা। ছেলেটা কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নার্ভাস ফিল করছে হয়ত।

“ওই তুলা চল আমার সাথে।
ওদের স্পেস দরকার।

সায়ান বেলকনির দিকে পা বাড়িয়ে বলে৷ তুলতুল চমকে ওঠে। এতোখন তো এই লোকটার কথা খেয়ালই ছিলো না।

” নাহহহহহহ

আতঙ্কে ওঠে খানিকটা চিৎকার দিয়ে বলে তুলতুল। চমকে ওঠে ওই ছেলেটা আর তনু। সায়ান চোখ পাকিয়ে তাকায় তুলতুলের দিকে। তুলতুল সায়ানের দৃষ্টি খেয়াল করে আরও কাচুমাচু হয়ে যায়। চিৎকার করে বড্ড ভুল করে ফেলেছে বেশ বুঝতে পারছে।

“আর ইউ ওকে?

ছেলেটা জিজ্ঞেস করে তুলতুলকে।

” ও একদম ঠিক আছে। আর এখন আরও ঠিক হয়ে যাবে।

সায়ান দাঁতে দাঁত চেপে বলে।

“যযযযযাচ্ছি তো
সসসস্পেস দরকার ওদের। ভভভুলেই গেছিলাম। আসলে হয়েছে খালি ভুলে যাই। কি যে একটা রোগ হয়েছে। এই ভুলে যাওয়ার রোগটা ছোঁয়াছে রোগ। আমার আশেপাশে যারা হালুম হালুম করে ঘুরে বেড়ায় আমাকে ধমক আর থা*প্প*ড় দেওয়ার জন্য অতি শীঘ্রই তাদেরও এই রোগে এ্যাটার্ক করবে। ভাইয়া আপনি না কিছু মানুষ কে বলে দিলেন। এই রোগটা কিন্তু খুব অসাংঘাতিক।

তুলতুল একদমে বলে৷ ছেলেটা হা করে তাকিয়ে থাকে তুলতুলের দিকে৷ মানে এতে গুলো কথা এতো দ্রুত বলা সম্ভব আদোও?

“আর একটা কথা মুখ থেকে বের হলে

সায়ানের কথা শেষ হওয়ার আগেই তুলতুল এক দৌড়ে বেলকনিতে চলে যায়।

” জীবনটা তামা তামা হয়ে গেছে। প্রাণ খুলে একটু কথা বলাও যাবে না। ও মোর খোদা আপনি দেখছেন তো? এই অবিচার সয্য করার হ্মমতা দিয়েন না আমায়। আরও রাগ বাড়িয়ে দিন আর শক্তি দিন আমায়। যাতে ওই গোমড়ামুখো হনুমাটার নাকটা এক ঘু*ষিতে ফাঁ*টিতে ফেলতে পাড়ি।

তুলতুল বেলকনির রেলিং ঘেসে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে।

“নাক ফাটাবি আমার?

সায়ানের কন্ঠ শুনে কেঁপে ওঠে তুলতুল চাইলাম শক্তি আর পাইলাম বাঁশ🥺
এখন কি হবে? কয়টা থাপ্পড় পড়বে আল্লাহ জানে।

🥀
” নাম কি আপনার?

তনু কোমরে হাত দিয়ে ছেলেটার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলে।

“হিমালয়

হিমালয় হাতা গোটাতে গোটাতে উওর দেয়।

” হিমালয়
উমমমমমমমম খারাপ না ভালোই। পছন্দ হয়েছে আপনাকে আমার। কিন্তু ভালো লাগে নি। কারণ দাঁড়ি নেই আপনার। বিয়ের আগে দাঁড়ি চাই আমার।

তনু নিজের থুতনিতে হাত দিয়ে বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলে।
হিমু এক পাশে সিঁথি কাটা চুল গুলো বা হাতে পেছনে ঠেলে দেয়। ইংক খুলে শার্টকে মুক্ত করে দেয়।

“ইটস নট পসিবল।
ইউ নো হোয়াট
মেয়েদের দাঁড়ি কখনোই হয় না। তো আমি কি করে আমার দাঁড়ি আপনাকে দিবো? কোনো ওয়ে আছে না কি?

তনুর কপালে তিনটে ভাজ পড়ে। একটু আগে না কাচুমাচু হচ্ছিলো। এখনই মুখে খই ছুটলো কিভাবে? এতো দেখি গিরগিটির থেকে দ্রুত রং পাল্টায়।

” এই যে মিস্টার হিমু না কি ফিমু একদম স্মার্ট হতে চাইবেন না।

আঙুল তুলে বলে তনু। হিমু মুচকি হেসে তনুর আঙুলে আঙুল ঠেকায়। তনু চোখ বড়বড় করে তাকায় হিমুর দিকে।

“স্মার্ট সাজার কিছু নেই। এমনিতেই আমি স্মার্ট।

আঙুল নিচে নামিয়ে দিয়ে বলে হিমু। থমথমে খেয়ে যায় তনু। একে হালকা ভাবে একদম নেওয়া ঠিক না। এতো দেখি তনুর থেকেও এক কাঠি এগিয়ে।

” আআমি বিয়ে করবো না। আমার বয়ফ্রেন্ড আছে।

তনু দু পা পিছিয়ে গিয়ে ভাব নিয়ে বলে।

“আমারও গার্লফ্রেন্ড আছে। একটা দুইটা না পাঁচটা। তোমার কোন দিক থেকে মনে হলো আমি হিমালয় চৌধুরী তোমার মতো বোঁচা একটা মেয়েকে বিয়ে করবে?

অপমানে গা রি রি করে ওঠে তনুর। এভাবে বলতে পারলো? নাহয় নাকটা একটু থেঁতানো। তাই বলে বোঁচা বলবে?
কথাই বলবে না এই ছেলের সাথে। বিয়ে তো দুরের কথা। এখন রুম থেকে বের হওয়া যাবে না। বাইরে সবাই বসে আছে। বেলকনিতে সায়ান আর তুলতুল। কোথায় যাবে।

” শয়তান বেডা

বলেই এক দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায় তনু। দরজাটাও ঠাস করে বন্ধ করে দেয়।
হিমু দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।

“দুনিয়ায় এতো মেয়ে থাকতে আমার চোখ দুটো এ-ই মেয়েট ওপরেই কেনো পড়লো? আস্ত একটা পাগলের লিডার।

🥀
” আআমি আআমার নাক ফাটানোর কককথা বলছি। এএই যে রেলিং ছুঁয়ে বললাম। মিথ্যে বললে রেলিং ভেঙে যেতো।

তুলতুল শুকনো ঢোল গিলে রিনরিনিয়ে বলে।
সায়ান ফোঁস করে শ্বাস টানে।

“থা*প্প*ড়ে গাল ফাটিয়ে দেবো তোর।

তুলতুল কেঁপে ওঠে। ঠোঁটে আঙুল ঠেকিয়ে মাথা নিচু করে ফেলে।

“লিপস্টিক কেনো নিয়েছিস? কাউকে দেখাতে চাইছিস তোর লিপস্টিক আছে? না কি আমাকে ইমপ্রেস করার চেষ্টা করছিস?

সায়ান তুলতুলের ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে বলে। সাথে সাথে তুলতুল ওড়না দিয়ে ঠোঁট ঢেকে ফেলে। বড়বড় চোখ করে তাকায় সায়ানের দিকে।

” সত্যি বলছি আপনাকে ইমপ্রেস করতে চাই নি। আপনাকে ইমপ্রেস করার কথা আমি ভাবিই না। আপনাকে তো আমার সয্যই হয় না। আপনি হলেন একটা গোমড়ামুখো হনু

বলতে বলতে থেমে যায় তুলতুল। কারণ সায়ান এক পা এক পা করল এগিয়ে আসছে তুলতুলের দিকে। তুলতুল গোল গোল চোখ দুটোতে ভয় নিয়ে তাকিয়ে আছে সায়ানের দিকে।
পিছাতে পিছাতে একদম রেলিং ঘেসে যায় তুলতুল। সায়ান তুলতুলের দুই পাশে হাত দিয়ে একটু ঝুঁকে তুলতুলের দিকে।

“কখনো লিপস্টিক দিবি না।

তুলতুলের হাত সহ ওড়না সরিয়ে ডান হাতের বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে মুছে দেয় তুলতুলের লিপস্টিক।
চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে তুলতুল। ভয়ে আতঙ্কে একদম সিঁটে গেছে।

লিপস্টিক মুছে দু পা পিছিয়ে আসে সায়ান। তুলতুল বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস টানে। হার্ট দ্রুত লাফাচ্ছে। চোখ খোলার সাহস নেই।

” তোর প্রতি আমার কোনো ইন্টারেস্টি নেই। বুঝলি?

চোখ বন্ধ করেই দ্রুত পাঁচ ছয় বার মাথা নারায় তুলতুল। মানে বুঝেছে।

“ইডিয়েট

বলেই চলে যায় সায়ান।
তুলতুল এক চোখ খুলে দেখে সায়ান গেছে না কি। চলে গেছে বলে দ্রুত চোখ খুলে।

” শা*লা হনুমান। তোরে আমি একদিন ঠান্ডা পানিতে চু*বিয়ে রাখবো। ইসসস ওনাকে ইমপ্রেস করতে যাবো
আমাকে কি পাগলা কুকুরে দৌ*ড়া*নি দিয়েছে যে তোকে ইমপ্রেস করবো?
দরকার পড়ে হিরো আলমকে বিয়ে করে নেবো তবুও তোকে ইমপ্রেস করবো না। বলে দিলাম।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here