আমার তুমি ২ পর্ব -০৯

#আমার তুমি ২
#পর্বঃ৯
#তানিশা সুলতানা

“আব্বা দরজা খোল।

সালমা বেগম দরজায় কড়া নারে। তুলতুল চোখ বড়বড় করে তাকায়। কি হবে এখন? কান্না থেকে যায়।

” যা দরজা খুলে দিয়ে আয়।

সায়ান কোলের ওপর বালিশ নিয়ে সোজা হয়ে বসে বলে। তুলতুল শুকনো ঢোক গিলে।

“মনে হচ্ছে আপনার মা এসেছে। এক সাথে দেখলে বাজে কথা বলবে।

তুলতুল ফিসফিসিয়ে বলে।

” তোকে যেতে বললাম না? যাহহহহ

সায়ানের ধমক খেয়ে তুলতুল একটু পিছিয়ে যায়। ওড়নার কোণা দিয়ে ভালো করে চোখ মুখে মাথায় ওড়না চাপিয়ে নেয়।
মনে মনে সায়ানকে হাজারটা বকা দিতে দিতে দরজা খুলে।

খাবারের থালা হাতে দাঁড়িয়ে আছে সালমা বেগম। তুলতুল মাথা নিচু করে দাঁড়ায়।

“আমার কোনো দোষ নেই আন্টি। আমি কিচ্ছু করি নি। আপনার ছেলে আমাকে জোর করে আটকে রেখেছে। এই যে মাথা ছুঁয়ে বললাম (মাথায় হাত দেয়)
কতোবার বললাম আমাকে যেতে দিন। সবাই দেখলে খারাপ ভাববে। কিন্তু কিছুতেই ছাড়লো না। এই যে দেখুন দুইটা থাপ্পড় মেরেছে। একদম লাল টকটকে হয়ে গেছে। আমার সুন্দর গালটাও নষ্ট করে দিয়েছে।
পা দুটোও প্রায় ভে*ঙে দিচ্ছিলো। অল্পের জন্য বেঁচে গেছি।

সালমা বেগম বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে। তুলতুলের চোখ ওনার চোখে পড়তেই থেমে যায় তুলতুল। বুক কাঁপছে। ছেলের দোষ দিয়েছে বলে হয়ত রেগে গেছে। ভেবে শুকনো ঢোক গিলে। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজায়।

” না মানে আপনার ছেলে ভালো। আমিও ভালো।
না মানে বোঝাতে চাইছি এখানে আমার কোনো দোষ নেই৷ একদম ইনোসেন্ট আমি।
আপনার ছেলে আমাকে খুব জ্বালায়। যখন তখন হুটহাট করে আমার কাছে চলে আসে৷ একটু আগে জানেন কি করছিলো?
আমার গলায় চু

বাকিটা বলার আগেই ঝড়ের গতিতে এসে সায়ান তুলতুলের মুখ চেপে ধরে। সালমা বেগম শব্দ করে হেসে ওঠে। এতো কথা বলতে পারে এই মেয়ে?

তুলতুল গোল গোল চোখে তাকিয়ে আছে। সায়ান হাত সরিয়ে নেয় তুলতুলের মুখ থেকে।

“আমার ছেলে একদম বদমাইশ। জানি আমি। এতোদিন আমি সয্য করেছি। এবার তুমি করবে।

তুলতুলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেন উনি। মনটা বিষন্ন হয়ে যায় তুলতুলের। ভেবেছিলো উনি বকে দেবে
সায়ানকে। তা না আরও উৎসাহ দিয়ে গেলেন। এটা কি ঠিক হলো? একদম ঠিক হলো না।

” আম্মু ভেতরে এসো। এই বলদ সামনে থেকে সর।

তুলতুলকে চোখ রাঙিয়ে ধমক দিয়ে বলে সায়ান। তুলতুলের ভীষণ খারাপ লাগছে। এই লোকটা সব সময় এমন করে কেন? এর সমস্যা কি?

সালমা বেগম ভেতরে ঢোকে। সায়ান ভদ্র ছেলের মতো বিছানায় বসে পড়ে। সালমা বেগমও সায়ানের পাশে বসে। প্লেটের ঢাকনা সরিয়ে ভাত মেখে ছেলের গালে তুলে দেয়।

“সকাল থেকে সিগারেট ছাড়া কিচ্ছু খায় নি। নিজে হাতে তো খেয়েই পারে না। হাত দিয়ে খেতে বললে দুই বার খেয়েই বলবে আমার পেট ভরে গেছে। বিয়ের বয়স হয়ে গেলো এখনো এর জ্বা*লা*নি কমলো না। সুমুও এতো জ্বা*লা*য় না আমায়।

একমায়ের মধুর নালিশ শুনছে তুলতুল। ভালোই লাগছে। এই বুইড়া ছেলে হাত দিয়ে খেতে পারে না। ভাবা যায়?

তুলতুল মুচকি হেসে এই ফাঁকেই বেরিয়ে যায় এই রুম থেকে। পরে দেখা যাবে আর বেরতেই পারবে না।

মায়ের কাছে যেতেই এতোগুলো বকা দেয় মা। তুলতুল চুপচাপ বকা হজম করে। তনু গাল ফুলিয়ে বসে আছে। তুলতুলও তনুর পাশে বসে।

বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হয়ে যায়। নির্বাচনের আগেই বিয়ে হবে। হাতে বেশি সময় নেই।

🥀🥀
দিন গুলো খুব ভালো যাচ্ছে তুলতুলের। কোনো প্যারা নাই। সায়ানের জ্বালাতনও নাই৷ প্রতিদিন অবশ্য কল করে নিয়ম করে। তুলতুল কখনোই রিসিভ করে না। প্রোফাইল কভার সব খানে নেইমারের পিক বসিয়ে দিয়েছে। আর ক্যাপশন জামাই, উনি, জান, মশান, কলিজা। এবার তুলতুল একদম ভয় পাবে না ওই লোকটাকে। কেনো ভয় পাবে? কে উনি? আবার থা*প্প*ড় দিতে আসলে একদম দাঁত ভে*ঙে হাতে ধরিয়ে দেবে। চেনে না তো তুলতুলকে।

আজকে কলেজে যায় নি তুলতুল। সুমু আসবে এখানে। এই খুশিতেই কলেজ মিস দিলো।

” আম্মাজান সুমু তো বিকেলে আসবে। তুমি তো কলেজ শেষ করে আসতেই পারতা।

তুলতুল টিভি দেখছিলো আর চিপস খাচ্ছিলো পাপন মেয়ের পাশে এসে বসে বলে।

“আব্বু আজকেই লাস্ট। আর কখনোই ক্লাস মিস দিবো না। পাক্কা প্রমিজ

তুলতুল মুখে চিপস পুরে তা চিবতে চিবতে বলে।

” তোর এই আজকেই শেষ শুনতে শুনতে চুল পেকে গেলো আমার৷ শেষ আর হইলো না। ফাঁকিবাজ কোথাকার। পরিহ্মায় ফেল করলে ঝাঁড়ু পে*টা করবো আমি তোকে। বলে দিলাম।

পালন শাক কাটতে কাটতে দাঁতে দাঁত চেপে বলে আছিয়া বেগম।

“ফেল করলে বিয়ে দিয়ে দিও। ঝামেলা চুকে গেলো। এতো পে*টাপে*টি করার কি আছে?

তুলতুলের কথায় ফিক করে হেসে ওঠে পাপন।

“পারফেক্ট জবাব।

তেঁতে ওঠে আছিয়া বেগম। ঠাস করে ছু*ড়ি রাখে টেবিলে। কোমড়ের হাত দিয়ে এগিয়ে আসে ওদের দিকে।

” এই লোকটার জন্য মেয়েটা উচ্ছনে চলে গেছে। আশকারা দিয়ে মাথায় উঠিয়েছে। নাক চিপলে দুধ বের হয় সেই মেয়ে বাবার সামনে বসে বিয়ের কথা বলছে। আর বাপ হেসে উড়িয়ে দিচ্ছে। বাঁধিয়ে রাখার মতো ঘটনা।
আমার মেয়ে এসএসসিতে A+ পেতো। এই লোকটার জন্য পেলো না। এখনও এই লোকটার জন্য এই অবস্থা।

পাপন শুকনো ঢোক গিলে। তুলতুল ভলিউম বাড়িয়ে দেয় টিভির। আপাতত সাকি গান শোনায়,মনোযোগ দেয়। পাপন আস্তে আস্তে কেটে পড়ে। আছিয়া বেগম খানিকখন নিজে নিজে বকবক করে থেমে যায়।

সুমু আসে তিনটের দিকে। এই মেয়েটা আস্ত একটা কিউটের বস্তা। আজকে সাদা একটা গাউন পড়েছে। ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক। লম্বা চুল গুলো ঝুঁটি করে বেঁধেছো সাদা হেয়ার ক্লিপ দিয়ে। কপাল সমান করে কা*টা চুল গুলো কপালে পড়ে আছে। চোখে মোটা করে কাজল দিয়েছে। গায়ের রং একদম ধবধবে ফর্সা।

সুমু হিমুর বাইক থেকে নামতেই তুলতুল এক দৌ*ড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে সুমুকে। সুমুও তুলতুলকে জড়িয়ে ধরে।

“সুমু তোমার আজকে পুরোই মাখন লাগছে। এতো কিউট কেনো তুমি বলো তো? ইচ্ছে করে খেয়ে ফেলি।

তুলতুল খুশিতে গদগদ হয়ে বলে। সুমুও হাসে।

” এতো পাম দিও না ফেঁটে যাবো।

সুমু চুল ঠিক করতে করতে বলে।

“তুলা এর আবার প্রসংশা স*য্য হয় না। পেত্নী বলো। দেখবে খুশিতে তাল গাছে চলে যাবে।

হিমু হেলমেট খুলে বাইকের আয়নায় নিজের চেহারা দেখে চুল ঠিক করতে করতে বলে।

” তুই ছাগল। আমাকে পেত্নী বললে মে*রেই দেবো তোকে।

সুমু হিমুর দিকে এগোতে যায় আর তখনই চোখ পড়ে হিমুর বাইকের ঠিক একটু পেছনে তন্ময় দাঁড়িয়ে আছে। থেমে যায় সুমু। দু পা পিছিয়ে যায়।
তুলতুল খিলখিল করে হাসছে।

“মারলি না কেনো? তাহলে বুঝে গেছিস তুই পেত্নী?

হিমু হাসতে হাসতে বলে। সুমু মাথা নিচু করে ফেলে।

” তুলতুল ভেতরে নেবে না?

তুলতুলের হাত ধরে বলে সুমু।

“নেবোই তো একদম পারমানেন্টলি।
হিমু ভাইয়া বাইক সাইড করে চলে এসো।

” আমি অন্য সময় আসবো।

হিমু হেলমেট পড়তে পড়তে বলে।

“এটা বললে হয় না কি?

পেছন থেকে তন্ময় বলে। তন্ময় এতোখন সুমুকেই দেখছিলো।

” দাভাই ওনাকে কোলে তুলে নিয়ে এসো।
তুলতুল সুমুর হাত ধরে ভেতরে চলে যায়। তন্ময়ের জোরাজুরিতে হিমুকেও আসতে হয়।

গল্পের আড্ডা বসে গেছে। মেহেন্দীতে কোন কালার শাড়ি পড়বে কিভাবে সাজবে এসবই আলোচনা করছে তুলতুল আর সুমু। তনু এক পাশে বসে ওদের প্লানিং শুনছে। ওকে কেউ কিছু বলছেই না।

হিমু আর তন্ময় কথা বলছে। হিমু আড়চোখে তাকাচ্ছে তনুর দিকে। প্রেমে পড়লে না কি প্রেমিকার সব কিছুই প্রেমিকের ভালো লাগে?
ঠিক তেমনই এই যে তনু একটু পরপর হাই তুলছে, পরনের টিশার্ট কুঁচকে গেছে, ওড়নাটা গ*লায় পেঁ*চিয়ে রেখেছে, এলোমেলো চুলগুলো হাত খোঁপা করে রেখেছে, নাকের ওপর বড় একটা লাল ব্রণ উঠেছে, চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল সব কিছুই মারাক্তক লাগছে।
মনে হচ্ছে পৃথিবীর সব চেয়ে সুন্দরী রমনী তনু।

মুচকি হাসে হিমু। এখানে এসেছে আর তনুকে একটু জ্বা*লাবে না এটা কি হতে পারে?

“তন্ময় এবার যেতে হবে আমায়। গার্লফ্রেন্ড ওয়েট করছে।

হিমু দাঁড়িয়ে বেশ জোরে বলে। চমকে ওঠে তনু। গোল গোল চোখে তাকায় হিমুর দিকে।
এতো খারাপ কেনো লোকটা?
দুদিন পরে বিয়ে আর এখনই গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে যাচ্ছে?
ভীষণ রাগ হয় তনুর।
তন্ময় কিছু বলার আগেই তনু বলে ওঠে।

” দাভাই আমি এই গার্লফ্রেন্ড ওয়ালা বুইড়া বেডারে বিয়ে করবো না।

তনুর কথা শুনে বিষম খায় হিমু। তন্ময় আর তুলতুল হেসে ওঠে। সুমু মুচকি হাসে।
তনু হনহনিয়ে রুমে চলে যায়।

“হিমু বাবু বিয়েটা তো কেন্সেল হয়ে গেলো?

তন্ময় হাসতে হাসতে হিমুর পিঠ চা*পকে বলে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here