আমার তুমি ২ পর্ব -৪৮

#আমার তুমি ২
#পর্বঃ৪৮
#তানিশা সুলতানা

সায়ান দরজা খুলে খানিকক্ষণ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। কারণ সায়ানের সামনে তুলতুল দাঁড়িয়ে আছে আর তুলতুলের পাশে হাসিব। সায়ানের আর বুঝতে বাকি নেই হাসিবই তুলতুলকে নিয়ে এসেছে। কেঁদে কেটে মেয়েটার চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে।

“তুই ওকে এখানে কেনো এনেছিস?

সায়ান হাসিবের দিকে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে বলে। হাসিব শুকনো ঢোক গিলে তুলতুলের দিকে তাকায়।

” ওনার দোষ নেই। আমিই ওনাকে এখানে আনার জন্য জোর করেছি। উনি আনতে চায় নি।

তুলতুল ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলে।

“কেনো জোর করেছিস?

সায়ান তুলতুলকে ধমক দিয়ে বলে।

” আমার ইচ্ছে হইছে তাই।

বলেই তুলতুল সায়ানের হাতের ফাঁক দিয়ে রুমে ঢুকে যায়। সায়ান রাগী চোখে তাকায় হাসিবের দিকে।

“এভাবে তাকাস কেনো ভাই? ভীষণ বিপদে পড়ে এনেছি। আবার বলতেছি আমার কাছে চাবি আছে কিন্তু সে শুনবেই না। দরজা ধাক্কাচ্ছেই তো ধাক্কাচ্ছেই। ভাব একবার?

” তোকে পেলো কই?

“পাবে না আমায়? আমি তো সকাল সকাল পড়ার মোরের দোকানে চা খাচ্ছিলাম আর তখনই খপ করে ধরে ফেললো আমায়। আর বললো যদি না নিয়ে আসি তাহলে আমার নামে কেচ্ছা লটাবে। কি ডেঞ্জারাস মেয়ে বল তো?

হাসিব আমতা আমতা করে বলে।

” কেচ্ছা এবার দেখাবো।

বলেই সায়ান ভেতরে চলে যায়। হাসিব এবার ভাবছে সে কি করবে? ভেতরে ঢুকবে না কি চলে যাবে? কোনটা ভালো হবে?
ভাবতে ভাবতে চলেই যায়। সাইকোন টনের্ডো এসব আসার আগেই ভেগে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

তুলতুল সোজা গিয়ে সায়ানের বেডে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ে। চোখের পানি মুছে নিয়েছে। এবার নাকের পানি সমানে টেনে যাচ্ছে।
সায়ান বিরক্ত হয়। সে খাটের এক কোণায় বসে।

“সমস্যা কি তোর? এখানে কেনো এসেছিস? কি চাই?

চোয়াল শক্ত করে বলে সায়ান।

” এভাবে দাঁতের ওপর দাঁত রেখে কথা বলবেন না। বাই এনি চান্স যদি আপনার দাঁত ভেঙে যায় তাহলে আমার বাচ্চাকাচ্চারা আপনাকে বাবা না ডেকে দাদা ডাকবে। সেটা আমার ভালো লাগবে বলেন?

তুলতুল জোরে করে নাক টেনে বলে। সায়ান নাক সিঁটকায়।

“সেসব তোর ভাবতে হবে না। তুই যা এখান থেকে। আগে নাক ঝেড়ে আয়।

” আপনার টিশার্ট এ নাক মুছতে চাওয়া আমার নিষ্পাপ মন।

“এক থা*প্প*ড়ে তোর দাঁত গুলো ফেলে দিতে চাওয়া আমার নিষ্পাপ মন।

” মা*রতে চাইলে আমিও আর চুপ থাকবো না। আমিও মে*রে দিবো। চেনেন আপনি আমায়?

চোখ পাকিয়ে বলে তুলতুল। সায়ান ভ্রু কুচকে তাকায় তুলতুলের দিকে। তুলতুল মুখ বাঁকায়।

‘একদম চোখ রাঙাবেন না বলে দিলাম। জানেন সারা রাত কেঁদেছি আমি। কেনো কাঁদালেন আমায়? ইসস ঢং করে বাড়ি থেকে চলে এসেছে। কেনো আসলেন? সবাই টেনশন করছে। আর তার জের এসে পড়ছে আমার ওপর। এতো ঢং কি করে করেন আপনি? দিন দিন ঢংগিলা হয়ে যাচ্ছেন। আমি এসব সয্য করি বলে আর কেউ সয্য করবে না। বলে দিলাম আমি

তুলতুল গাল ফুলিয়ে এক দমে বলে। সায়ান ফোঁস করে শ্বাস টেনে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়।

“ইহহহ আমাকে ঢং দেখাচ্ছে। জানি না আমি? রাতে ইচ্ছে করে আমাকে ইমোশনাল কথা বলেছে। যাতে গলে গিয়ে চলে আসি আমি। নেহাত একটু বেশিই ইমোশনাল আমি। মনটা নরম আমার নাহলে কখনোই আসতাম না।

তুলতুল মুখ বাঁকিয়ে বিরবির করতে করতে কিচেনে চলে যায়।
কিচেনে বাজার রেখে গেছে কেউ। আর দরজাটাও লক করা। তুলতুল বুঝে ফেলে এটা হাসিবের কাজ। সে বাজার করে রেখে গেছে আর দরজা বন্ধ করেও দিয়ে গেছে। মনে মনে খুশি হয় তুলতুল। ছেলেটার মাথায় বুদ্ধি আছে।

🥀
হাসিব তন্ময়কে কল করে জানিয়ে দেয় তুলতুল সায়ানের কাছে চলে এসেছে। তন্ময় কোনো রিয়েক্ট করে না। মনে মনে গিল্টি ফিল করতে থাকে সুমুর জন্য। মেয়েটাকে শুধু শুধু কথা শোনালো। এভাবে না বললেও পারতো।
তন্ময় অফিসে টিকতে পারে না। দ্রুত ফিরে আসে হাতে এক গুচ্ছ গোলাপ নিয়ে। সুমু শাশুড়ীর সাথে মিলে রান্না করছে। নাজমা বেগমের মন খারাপ। মেয়েটাকে নিয়ে এতো ঝামেলা হচ্ছে। অল্প বয়স মেয়ের। তারওপর বয়সের তুলনায় বুদ্ধি আরও কম। ছেলে মানুষী যায় নি এখনো।
মেয়েটা সংসারের কিছুই বোঝে না।

” মা মন খারাপ করে থাকবেন না। সব ঠিক হয়ে যাবে।

তরকারি কাটতে কাটতে বলে সুমু।

“হুমমম ইনশাআল্লাহ

তন্ময় রান্না ঘরের পাশ দিয়ে ঘুরঘুর করছে। মায়ের সামনে বউকে ডাকতে পারছে না। সুমুও এদিকে তাকাচ্ছে না যে ইশারা করবে।

অবশেষে তন্ময় রান্না ঘরে ঢুকেই পড়ে।

” এতো তাড়াতাড়ি চলে আসলি যে?

নাজমা জিজ্ঞেস করে। সুমু চোখ তুলে তাকায়ও না তন্ময়ের দিকে।

“শরীর খারাপ লাগছিলো।

” কি হয়েছে? জ্বর এসেছে না কি?

নাজমা বেগম বিচলিত হয়ে তন্ময়ের কপালে হাত দিয়ে বলে।

“নাহহ মা এমনিতেই। মাথা ব্যাথা করছে।
সুমু এক কাপ কফি করে নিয়ে এসো তো।

বলেই তন্ময় চলে যায়। সুমু ফোঁস করে শ্বাস টানে। নাজমা বেগম কফির বানিয়ে বসিয়ে দেয়।
কফি হয়ে গেলে সেটা মগে ঢেলে সুমুর হাতে ধরিয়ে দেয় নাজমা।

” দিয়ে এসো এটা।

সুমু মুচকি হেসে চলে যায়।

🥀
তুলতুল আজকে নুডলস রান্না করেছে। রান্নার হাত ভালো না তুলতুলের। ছোট থেকে কখনোই রান্না করা হয় নি।
আজকে নুডলস রান্না করেছে। নুডলস গলে সেমাই হয়ে গেছে। তুলতুল তাতে কিছুটা গোল মরিচ গুড়ো দিয়ে নিয়ে যায় রুমে।
সায়ান ফ্রেশ হয়ে সবেই খাটে বসেছে সাথে সাথে তুলতুল তার স্পেশাল নুডলস নিয়ে হাজির হয়।

“দেখুন নুডলস রান্না করে এনেছি। একদম একা একা। ইউটিউব ও দেখি নি।

ভাব দেখিয়ে বলে তুলতুল।
সায়ান এক পলক নুডলসের দিকে তাকায় আর আরেক পলক তুলতুলের মুখের দিকে তাকায়।

” এটা দেখতেই জঘন্য হয়েছে। খেতে যে আরও বেশি জঘন্য হবে সেটা আন্দাজ করতে পারছি আমি। সবে সুস্থ হয়েছি। এখন আর অসুস্থ হতে চাই না।

তুলতুল গাল ফুলিয়ে তাকায় সায়ানের দিকে।

“এভাবে তাকানোর কিছু নেই। রান্নাটা ভালো করিস না তুই। শিখতে হবে তোকে। আমি ওই রকম পুরুষ মানুষ না যে বউয়ের মন রাখার জন্য জঘন্য রান্না খেয়েও প্রসংশা করবো।

” খেতে হবেও না আপনাকে। আমার রান্না আমিই খাবো। আপনার জন্য আমি রান্না করিও নি। নিজের জন্য করেছি। আসছে ঢং দেখাতে।

তুলতুল সায়ানের পাশে বসে চামচে মুড়িয়ে নুডলস মুখে পুরে। সায়ান অধিক আগ্রহে তাকিয়ে আছে।

তুলতুল মুখে নুডলস পুরে বড়বড় চোখ করে তাকায়। না পারছে গিলতে আর না পারছে ফেলতে।
সায়ান ফিক করে হেসে ফেলে।

“গিলতে হবে না। ফেলে দিয়ে কুলি করে আয়। আমি রান্না করছি। জলদি এসে আমাকে হেল্প করবি।

বলতে বলতে চলে যায় সায়ান। তুলতুল দৌড়ে বেসিন এ চলে যায়।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here