#আমার তুমি ২
#পর্ব:৫৫
#তানিশা সুলতানা
তুলতুল নিজের মতো খেয়ে যাচ্ছে। সায়ান খাচ্ছে কম তুলতুলকে দেখছে বেশি। বাইরে থেকে খেয়ে এসেছে সায়ান। এখন এটা বললে তুলতুল বেশি ক্ষেপে যাবে, অভিমান করবে। তাই না বলে তুলতুলের সাথে খাচ্ছে। মাঝেমধ্যে বউয়ের মন রাখতে একটু আতটু বেশি খেলে কিচ্ছু হবে না।
“হঠাৎ এতো খাচ্ছিস যে? পেটে কিছু ঢুকেছে না কি?
সায়ান মুখ ফুঁসকে বলেই ফেলে।
তুলতুল ভ্রু কুচকে তাকায় সায়ানের দিকে।
” সেই কখন থেকে আপনার জন্য অপেক্ষা করছি এক সাথে খাবো বলে। আর আপনি বেলা গড়িয়ে বাড়িতে ফিরে জিজ্ঞেস করছেন পেটে কিছু ঢুকেছে না কি? আসলেও আপনি মানুষ না কি অন্য কিছু?
সায়ান শুকনো ঢোক গিলে।
“আগেই আসতে চেয়েছিলাম কিন্তু তোর জন্য কিছু কেনাকাটা করতে গিয়ে দেরি হয়ে গেলো।
তুলতুল দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
” কেনাকাটা করতেও যে বউ নিয়ে যেতে হয় সেটা জানা নেই আপনার।
সায়ান ভীষণ অবাক হয়।
“হঠাৎ বড়দের মতো কথা বলছিস যে? হঠাৎ করে বড় হলি কিভাবে?
সায়ান অবাক হয়ে বলে।
” হঠাৎ স্বামী সংসার হলো। তাই বড় হয়ে গেলাম। এবার চুপ কমুন। আর আমাকে খেতে দিন। খালি বিরক্ত করে।
সায়ানের দিকে পেছন ফিরে বসে খেতে শুরু করে তুলতুল। সায়ান মুখ চেপে হাসে। মেয়েটা যে ভীষণ ভালোবেসে ফেলেছে ওকে এটা বেশ বুঝতে পারছে। এইরকম পাগলের মতোই ভালোবাসা চেয়েছে সায়ান। অপেক্ষায় থেকেছে এই দিনটার। যেদিন তুলতুল সায়ানকে পাগলের মতো ভালোবাসবে।
আজ দিনটা চলে এসেছে।
দেখতে দেখতে চলে আসে গায়ে হলুদের দিন। তুলতুল সায়ানের কিনে দেওয়া লাল পাড়ের হলুদ শাড়িটা পড়েছে সাথে ফুলের গহনা। নিজের বিয়েতে তো সাজা হয় নি। তাই আজকে ভাসুর আর বোনের বিয়েতে সেজে উসুল করে দিচ্ছে।
সায়ানও হলুদ পানজাবি পড়েছে। ছেলের বাড়ি থেকে মেয়ের বাড়িতে হলুদ নিয়ে যাওয়া হবে।
তুলতুল যাবে। সায়ান যেতে দিতে চাইছে না তবুও তুলতুল যাবে। কতোদিন বাবা মাকে দেখে না। ভীষণ দেখতে ইচ্ছে করছে।
সায়ান যেতে পারবে না। তার প্রচুর কাজ। তাই তুলতুল মেয়েদের সাথে চলে যায়।
তনুর সাজ এখনো শেষ হয় নি। তনুই এক মাত্র মেয়ে যে কি না সাজ পছন্দ হয় নি বলে আবার মুখ ধুয়ে এসে বসে পড়েছে সাজতে। পার্লারে মেয়েদের স্বাশিয়ে বলছে।
“যতখন না আমার মনের মতো সাজ না হচ্ছে ততখন সাজাতেই হবে আপনাদের। তার থেকে ভালো মন দিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে দিন।
সুমু হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। পার্লারের মেয়েরা শুকনো ঢোক গিলে।
” তনু তোর এখনো সাজ হয় নি? ওদিকে ওই বাড়ি থেকে মেহমান চলে আসলো যে।
দ্রুত পায়ে শরবত হাতে রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে নাজমা।
“সাজ হবে কি করে? ওনারা তো ভালো করে সাজাচ্ছেই না। আরে ভাই আমার বিয়ে আমাকে ভালো করে সাজাবি। তা না বকের মতো সাজাচ্ছে।
তনুর চোখে আয়লেনার দিতে যাচ্ছিলো মেয়েটি। তাদের থামিয়ে বলপ তনু।
” তুই দেখতে বকের মতো। তো তোকে রং চং মাখিয়ে কি করে মানুষ করবে ওনারা?
ধমক দিয়ে বলে নাজমা।
“আমি মোটেও বকের মতো না। তোমার জামাই বলেছপ আমাকে ডিপিকার মতো দেখতে।
ভাব নিয়ে বলে তনু।
” না বললে তো আর তার রক্ষা থাকতো না। তাই বলেছে।
তনু মায়ের দিকে কটমট চাহনিতে তাকায়। নাজমা সেদিকে মন দেয় না।
“সুমু এটা খেয়ে নে। আর এখানে কেনো তুই? ফ্যান বন্ধ গরম লাগছে না তোর?
সুমু শরবত দেখে নাক সিঁটকায়।
” ইয়াক এই শরবত মানুষ খায়?
“তুই খাবি। জলদি খা। কতো উপকারি এই শরবত জানিস তুই? তোর শাশুড়ী দুধ জাল দিচ্ছে। এটা খেয়ে দুধ খাবি।
সুমুর হাতে শরবতের গ্লাস ধরিয়ে দিয়ে বলে নাজমা। সুমু বলতে চায় খাবো না। কিন্তু এটা শোনার সময় নেই নাজমার।
তুলতুলরা সবাই চলে আসে। তুলতুল প্রথমে বাবাকে এতোগুলো নালিশ দেয় তাকে দেখতে না যাওয়ার জন্য। পাপন মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে তাকে শান্ত করে। তারপর মায়ের কোলে খানিকক্ষণ বসে থেকে তনুর কাছে যায়।
ভীষণ মজা করে ওরা। হলুদ খেলে নাচ গান তো আছেই। তনুই নেচেছে সবার থেকে বেশি। তনুকে দেখে মনে হচ্ছে সে অন্য কারো বিয়ে খেতে এসেছে।
পরের দিন বিয়ে। অনেক রাতে ঘুমানোর ফলে ঘুম ভাঙছে না তুলতুলের। সায়ান উঠে গেছে অনেক আগে। এবার সে তুলতুলকে দেখছে। দিন দিন মেয়েটা চরম লেভেলের সুন্দর হয়ে যাচ্ছে। এই কদিনে খানিকটা মোটা হয়েছে। চেহারায় এসেছে গলুমলু একটা ভাব। আগের চেয়েও অনেকটা ফর্সা হয়ে গেছে। বিয়ের পর মেয়েরা সুন্দরী হয়ে যায়। কথাটা মিলে গেলো।
” জান উঠ না।
সায়ান তুলতুলের গালে ঠোঁট ছুঁয়িয়ে বলে।
তুলতুল নরেচরে ওঠে।
“আর একটু প্লিজ৷ এমনিতেই দেরি করে ঘুমতে এসেছিলাম তারওপর আপনি জ্বালালেন। এখন আবার জ্বালাচ্ছেন। আমি কিন্তু চলে যাবো বলে দিলাম।
ঘুমের ঘোরে সায়ানের মুখটা সরানোর চেষ্টা করে বলে তুলতুল। সায়ান হেসে ফেলে।
” একটু না জ্বালাতে দিলে তো জ্বালানোর জন্য আরেকজন আনতে হবে।
ধপ করে চোখ খুলে তুলতুল। এক লাফে উঠে বসে। সায়ান চমকে ওঠে। শুকনো ঢোক গিলে কাচুমাচু হয়ে বসে।
“এতো সখ ? এতো সখ না আরেকজনকে আনার? আজকে সখ একেবারে ছোটাবো। চল এখুনি। চল তোকে আরেকটা বিয়ে করাবো আমি।
তুলতুল সায়ানের কলার ধরে বলে। সায়ান শুকনো ঢোক গিলে।
” না মানে আমি এভাবে বলতে চাই নি।
“আমাকে বোঝাতে হবে না। আমি সব বুঝি। আজকে ঘরে সতিন এনেই ছাড়বো।
সায়ান বুঝে যায় বাঘিনী ক্ষেপেছে। আজকে আর রক্ষে থাকবে না।
” আমার ভূল হয়ে গেছে। আর কখনো বলবো না।
তুলতুল ভ্রু কুচকে তাকায় সায়ানের দিকে। কলার ছেড়ে দেয়। সায়ান স্টেট তুলতুলের সামনে দাঁড়িয়ে কান ধরে উঠবস করতে শুরু করে।
“আজকে থেকে আমি সায়ান নামের কাউকে চিনি না। কোনো সম্পর্ক নাই কারো সাথে।
তুলতুল মুখ বাঁকিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়।
সায়ান তুলতুলের জন্য একটা কালো লেহেঙ্গার এনেছে। দারুণ লেহেঙ্গারটা। তুলতুলের খুব পছন্দ হয়েছে। মানুষটার পছন্দ একদম সেই লেভেলের। সেই লেহেঙ্গারের সাথে মেচিং করে জুয়েলারিও এনেছে।
সেগুলো পড়ে রেডি হয়ে নেয় তুলতুল।
তনুর এক কথা। সে শাড়ি পড়া থেকে শুরু করে চুল বাঁধা প্রত্যেকটা মুহুর্তের ভিডিও করবে। একবার ভালো না হলে আরেকবার করবে।
সকাল নয়টা থেকে সাজাতে বসিয়েছে তনুকে। এখন সময় বিকেল চারটা। এখনো তার সাজ অর্ধেকটাও হয় নি। চরম বিরক্ত পার্লারের মেয়েরা।
এরকম বউ জীবনেও দেখেনি তারা।
চলবে