#আমার_ভাঙা_ক্যানভাসে (১১)
#তানজিলা_খাতুন_তানু
রুহি তিথিকে শাড়ি পড়িয়ে দিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে দিলো।
– ‘ওয়াও রুহুপু তুমি কি সুন্দর সাজাতে পারো। আমাকেও সাজিয়ে দাও না একটু।’ (প্রিয়া আবদারের সুরে বলল)
রুহি হেসে বলল,
– ‘তুই কি বউ নাকি এত সাজবি!! তোর বিয়ের সময়ে এইভাবেই সাজিয়ে দেব।’
– ‘তাহলে আর কি হবে।’
– ‘কেন?’
– ‘এখন শাড়ি পড়লে তো তোমার বন্ধুকে ইমপ্রেস করতে পারতাম।’
রুহি কটমট করে প্রিয়ার দিকে তাকায়। চারবছর আগে ওহ নিজেও এই কাজটা করতে গিয়েছিল কিন্তু ফলাফল শূন্য।
– ‘সোহান সেইদিন কি বলল শুনলি না, জয়ের বিয়ে ঠিক করা আছে। অন্যের জিনিসের উপর এত নজর কেন!!’
– ‘দূর ভালো লাগে না। রুহুপু বিশ্বাস করো, আমি সত্যি জয়দাকে খুব ভালোবাসি।’
– ‘ভালো তো আমিও বাসতাম কিন্তু কি হলো।’ (মনে মনে)
রুহির মনের কথা মনেই থেকে গেল, কাউকে আর বলতে পারল না।
– ‘কি হলো রুহুপু চুপ করে গেলে কেন?’
– ‘শাড়িটা নিয়ে আয় আমি পড়িয়ে দিচ্ছি।’
রুহি প্রিয়াকে সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে দিলো। রুহির ছোট কাকিয়া ভেতরে এসে রুহিকে শাড়ি পড়াতে দেখে চমকে উঠলেন,
– ‘রুহু তুই শাড়ি পড়াতে পারিস!!’ (বিস্ময়ে)
রুহি মলিন হেসে বলল,
– ‘এই চারটে বছরে আমি অনেককিছুই শিখে গেছি কাকিয়া। আর শাড়ি পড়াটা তো সামান্য বিষয়।’
– ‘মানে?’
– ‘ওহ কিছু না। তুমি রেডি হয়ে নাও, একটু পরেই অনুষ্ঠান শুরু হবে।’
– ‘তুই ওহ রেডি হয়ে যা।’
রুহি নিজের জন্য কেনা শাড়িটা নিজের গায়ে ফেলে আয়নার সামনে দাঁড়াল। কাঁচা হলুদ রঙের শাড়িটাই ওর সৌন্দর্য বহুগুন বাড়িয়ে তুলছে। সেই চারবছর আগে বাড়ি থেকে বের হয়ে যাবার পর থেকে যতটুকু সম্ভব সবকিছুই শিখে নেবার চেষ্টা করেছে, চেষ্টা করেছে নিজের কাজ টুকু নিজে করার।
রুহি সিম্পল সাজে হলুদের অনুষ্ঠানে যোগদান করল। এমনিতেই গরম তারপর মেকআপ মানে অসহ্য একটা ব্যাপার। তিথিকে সবাই হলুদ মাখাতে লাগল, জয় তিথিকে হলুদ মাখানোর সময় রুহির নাকে একটু হলুদ লাগিয়ে দেয়। রুহি কটমট করে তাকালেও জয় ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে চলে যায়।
– ‘শয়তান ছেলে একটা।’
**
সকাল থেকেই নানা আয়োজনে সকলে ব্যস্ত। রুহির দায়িত্ব পরেছে সবাইকে সুন্দর করে সাজিয়ে দেবার, আর সেইটা করতে করতেই ওর জীবন শেষ।
সবাইকে মোটামুটি রেডি করিয়ে দিয়ে রুহি বিছানায় আধশোয়া হয়ে ফোন টিপতে লাগল। নিজে রেডি হবার একটুও এর্নাজি নেই, আর ভালোও লাগছে না সাজুগুজু করতে। একটা অজানা ভয় মনের মাঝে জাগছে, মনে হচ্ছে কিছু একটা হতে চলেছে কিন্তু কি!!
দরজার টোকা পড়ার শব্দে রুহি তাড়াতাড়ি উঠে বসল। দরজার সামনে জয়কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই মুডটা আরো বিগড়ে গেছে,
– ‘আপনি এইখানে কি করছেন?’
– ‘কি করছি সেটা বড়ো কথা নয়। তুই এইভাবে শুয়ে পড়ে আছিস কেন? রেডি হবি না!’
– ‘আমি কি করব আর কি করব না সেটা নিশ্চয় আপনার থেকে জানব না। তাই আমাকে বিরক্ত না করে নিজের কাজে যান।’
– ‘আচ্ছা রুহি আমি কি করেছি বল তো তার জন্য তুই আমার সাথে এইরকম ব্যবহার করিস?’
– ‘জানেন না কি করেছেন? দুইদিনের ভালোবাসার জন্য এতদিনের বন্ধুত্বকে শেষ করে দিয়েছিলেন। ভুলে গেছেন!’
– ‘কিছু ভুলিনি কিন্তু তুই মনে হয় ভুলে গেছিস সবকিছু। সেইদিন আমি সম্পর্ক শেষ করিনি তুই রাগ দেখিয়ে আমাকে কিছু না বলে বাড়ি ছেড়েছিলিস তারপর তুই নিজেই আমার সাথে কোনোরকমের যোগাযোগ রাখিস নি। আমি কিন্তু বারবার তোর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলাম।’
রুহি কিছু বলল না দেখে জয় আবারো বলল,
– ‘রুহি ভুলে যাস না, সবসময়ে চোখের দেখাটা ঠিক হয়না।হয়তো তুই যেটা দেখেছিস সেটা ঠিক নয়, তার পেছনে অনেক বড়ো সত্যি লুকিয়ে আছে।’
– ‘মানে?’ (রুহি চমকে উঠল)
জয় তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,
– ‘এখন জানতে চাইছিস কেন? এতগুলো দিন ভুল বুঝে দূরে চলে গিয়েছিলিস। একবারো কি জানতে চেয়েছিলিস আমি কেমন আছি, জানতে চাসনি আর এখনো জানতে হবে না। সেইদিন আমাকে একটা কথা বলেছিলিস তুই মনে আছে, যে একদিন এই দিনটার জন্য আমাকে আফসোস করতে হবে। সেই কথাটা আজকে আমি তোকে বলছি, দেখিস এইসব কিছুর জন্য তোকে না আমার আফসোস করতে হয়।’
জয় কথাগুলো বলে চলে যায়। রুহি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। জয়ের কথাগুলোর অর্থ বোঝার চেষ্টা করছে কিন্তু সমস্ত হিসাব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। কার কাছে এই সবকিছুর উত্তর আছে, সোহান!! হ্যাঁ সোহানই বলতে পারবে আসল ঘটনা কি।
রুহি তাড়াতাড়ি করে রুম থেকে বের হতে যাবে তখনি ওর মা চলে আসে।
– ‘কিরে এত তাড়াতাড়ি করে কোথায় যাচ্ছিস?’
– ‘সোহান কোথায়। ওর সাথে একটু দরকার ছিল।’
– ‘সব দরকার পরে মেটাবি আগে এইখানে আয় তো’
– ‘কেন?’
– ‘আজকে আমি সুন্দর করে তোকে সাজিয়ে দেব।’
– ‘কেন মা এইসবের কি দরকার।’
– ‘দরকার আছে। বেশি কথা না বলে চুপচাপ দাঁড়া একটু।’
রুহির মা রুহিকে শাড়ি পড়িয়ে দিতে দিতে বললেন,
– ‘জানিস মা একটা সময় পড়ে মেয়েদের নিজের ঘর, পরিবার ছেড়ে অন্য একটা নতুন পরিবারে গিয়ে মানিয়ে নিতে হয়। হাজারো মানুষের মনের মতো হয়ে চলতে হয়, কখনো কড়া হাতে আবার কখনো মাথা নীচু করে সংসার সামলাতে হয়।’
– ‘মা এইসব বলছো কেন?’
– ‘না এমনি। তুই তো দেখতে দেখতে কত বড়ো হয়ে গেলি এইবার তোর একটা বিয়ে দিতে পারলেই আমাদের শান্তি।’
– ‘কেন মা আমি তোমাদের উপরে অনেক বোঝা হয়ে গেছি।’
– ‘নারে মা সন্তান কখনো তার মা বাবার কাছে বোঝা হয় না। মেয়েদের অন্য একটা সংসারে যেতে হয় এইটাই আমাদের সমাজের নিয়ম।’
– ‘মা এইরকম নিয়ম কেন? কেন একটা মেয়ে নিজের বাবা মায়ের কাছে থাকতে পারে না!’
– ‘জানি না রে। নে দ্যাখ তো কেমন সাজিয়েছি।’
রুহি নিজেকে আয়নায় দেখল, একদম বউ বউ লাগছে। মা এইভাবে সাজাল কেন?
বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু হলো। বরপক্ষ চলে এসেছে, এইবার বিয়ে পড়ানোর পালা।
– ‘কাজি সাহেব বিয়ে পড়াতে শুরু করুন।’ (পাত্রের বাবা)
– ‘আচ্ছা।’
কাজি সাহেব বিয়ে পড়াতে শুরু করবে তার আগে একজন বলল,
– ‘কাজি সাহেব এইখানে একটা নয় দুটো বিয়ে হবে।’
উপস্থিত সকলে চমকে উঠল। কার বিয়ে হবে আবার!!
#আমার_ভাঙা_ক্যানভাসে (১২)
#তানজিলা_খাতুন_তানু
– ‘কার বিয়ে!’
প্রিয়া একরাশ বিস্ময় নিয়ে কথাটা বলল। হামিদ চৌধুরী উপস্থিতি সকলের দিকে একনজর তাকিয়ে বললেন,
– ‘রুহির বিয়ে।’
রুহির মাথায় তো আকাশ ভেঙে পড়ার জোগাড়। ওর বিয়ে অথচ ওহ নিজেই জানে না!
– ‘বড়ো আব্বু এইসব কি বলছো? আমার বিয়ে মানে কি!!’
– ‘সব জানতে পারবে কিন্তু তার আগে বিয়েটা হয়ে যাক।’
– ‘না বড়ো আব্বু আগে আমাকে সবটা বলো এইসবের মানে কি!!’
– ‘আমি বলছি মানে কি।’ (রুহির বাবা)
রুহি ওর বাবার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
– ‘রুহি তোমার বিয়ে অনেক আগে থেকেই ঠিক করছিল। আমরা চেয়েছিলাম তোমাদের পড়াশোনা শেষ হবার পর বিয়ে দিতে। কিন্তু হঠাৎ করেই আমাদের বিয়ের সিদ্ধান্তটা নিতে হয়েছে। প্লিজ সিনক্রিয়েট না করে দাদার কথাটা মেনে নাও।’
– ‘এইখানে মানার কথা আসছে কোথা থেকে বাবা! আমার বিয়ে ঠিক করা ছিল অথচ আমি নিজেই জানি না, আর হঠাৎ করে কি এমন হলো যে যাতে তোমরা আমার বিয়ে দিতে চাইছো?’
– ‘কারন তুমি আমাদের কাছে আমানত স্বরূপ। আমরা কেউই চাই না সেই আমানতে কারোর নজর পড়ুক তাই এই সিদ্ধান্ত।’ (বাবা)
রুহি কথার ভাষা হারিয়ে ফেলছে। একটার পর একটা ধাক্কা খেতে খেতে মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। তখনি পাশ থেকে ওর মামা বলে উঠল,
– ‘আপনারা এইসব কি শুরু করেছেন? একজন প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েকে আপনারা জোর করে বিয়ে দিতে পারেন না।’
– ‘জোর করে তো নয়। রুহির মতামত নিয়েই এই বিয়েটা আমরা দিতে চাই।’ (হামিদ চৌধুরী)
– ‘তাই নাকি কিন্তু সেটার তো কিছুই দেখতে পারছি না।তা পাত্র কে?’
– ‘পাত্র আমাদের খুব চেনা কেউ।’ (হামিদ চৌধুরী)
– ‘কে?’
– ‘জয়।’ (রুহির বাবা)
রুহি সহ সকলের মাথাতে আকাশ ভেঙে পড়ল। রুহির মামা রাগে ফুঁসে উঠে, হামিদ চৌধুরীর উদ্দেশ্যে বললেন,
– ‘আপনি কিন্তু এইটা ঠিক করলেন না। আমার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে ওই ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চাইছেন? ওই ছেলের মাঝে কি এমন আছে যা আমার ছেলের মাঝে নেই!’
হামিদ চৌধুরী হাসলেন। যেটা রুহির মামার রাগকে আরো দ্বিগুন করে তুলল। ওনার রাগে ঘি ঢালার জন্য হামিদ চৌধুরী বলে উঠলেন,
– ‘যে ছেলে বাবার অনুমতি ছাড়া এক পাও হাঁটতে পারে না সে কিভাবে অন্য একটা মেয়ের দায়িত্ব নেবে!’
– ‘আপনি কিন্তু আমাকে আর আমার ছেলেকে অপমান করছেন।’
– ‘আরে আপনার মান অপমান বোধ আছে?’
রুহির মামা অধৈর্য হয়ে উঠে বোনের উদ্দেশ্যে বললেন,
– ‘এইসব কি হচ্ছে, তোর ভাসুর আমাকে অপমান করছে আর তুই সেইটা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিস?’
– ‘ওহ কি বলবে, আপনি কি কারোর কথা বলার মুখ রেখছেন?’ (হামিদ চৌধুরী তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল)
– ‘কি এমন করেছি আমি, যার জন্য আপনি আমার সাথে এইভাবে কথা বলছেন?’
– ‘কি করেননি সেটা বলুন। রুহি আপনার কাছে থেকে পড়াশোনা করতে গিয়েছিল কিন্তু আপনি ওকে নিজের কাছে রাখেননি।’
সকলের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। রুহি ওর মামার কাছে থাকত না মানে? পরিস্থিতি খারাপ দেখে রুহি বলল,
– ‘বড়ো আব্বু এইসব টপিক বাদ দাও না। আমার ভালো লাগছে না।’
– ‘না রুহি আজকে সবার সবটা জানা প্রয়োজন। প্রথম ১টা মাস রুহি ওর মামার কাছে থাকলেও একটা মাস পর ওর স্থান হয় গার্লস হোস্টেলে। কি ঠিক বললাম তো।’
রুহির মামা কথা বলার মতো কিছু খুঁজে পাচ্ছেন না। রুহি পরিস্থিতি সামাল দেবার চেষ্টা করছে কিন্তু পেরে উঠছে না। রুহির মা ভাইয়ের কান্ডে লজ্জায় শেষ হয়ে যাচ্ছেন। ছিঃ ওর দাদা এতটা নীচ, নিজের ভাগ্নীকে নিজের বাড়িতে না রেখে গার্লস হোস্টেলে রেখেছিল!
– ‘বড়ো আব্বু প্লিজ এইসব কথা বাদ দাও। তিথি আপার বিয়েটা আগে হোক তারপর না হয় এইসব কথা হবে।’
– ‘আজকে বিয়ে হলে এইখানে দুটো বিয়ে হবে, নাহলে কোনো বিয়ে হবে না।’ (হামিদ চৌধুরী)
– ‘বড়ো আব্বু!’
– ‘রুহু মা আমি আমার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছি এইবার তোমার সিদ্ধান্ত জানানোর পালা।’
রুহি এক পা পিছিয়ে গেল। কি করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না, তিথি ফ্যাকাশ মুখ নিয়ে বসে আছে, সে ভালোই করেই জানে ওর বাবাকে এক কথার মানুষ যা বলেন তাই করেন। রুহির সকলের মুখে দিকে তাকাল, সকলের মুখটা মলিন হয়ে আছে। রুহির সবকিছু গুলিয়ে যেতে লাগল, কি করবে কিছুই বুঝতে পারল না।
এতক্ষন এতকিছু হয়ে গেছে সবকিছুর মাঝে জয় উপস্থিত ছিল না। খাবার দিকটা সামলাচ্ছিল সোহান ডাকতে যেতে তবে আসলো। আসতে আসতে সবটা জেনেও নিয়েছে।
জয় রুহির মুখের দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলল,
— ‘এমনিতেই রুহি আমার উপরে রেগে আছে, এই ঘটনাটা না আবার রাগটাকে আরো বাড়িয়ে দেয়।’
হামিদ চৌধুরী জয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন,
– ‘এই তো জয় চলে এসেছে। রুহি তোমার সিদ্ধান্ত জানাও।’
রুহি রাগে কটমট করে জয়ের দিকে তাকায়। সমস্ত রাগটা জয়ের উপরে গিয়ে পড়ল, ওর জন্যই সবকিছু হচ্ছে।
– ‘আঙ্কেল আমার কথাটা শুনুন। এইসবের কোনো দরকার নেই।’
– ‘না জয় এইসবের দরকার আছে। তোমাদের বিয়ে সেই ছোটবেলা থেকে ঠিক করা আছে সেটা নিশ্চয় তোমার অজানা নয়।’
– ‘কিন্তু আঙ্কেল আপনি তো সবটাই জানেন বলুন। এখন বিয়েটা ঠিক হবে না।’
– ‘ঠিক ভুল বিচার করেই আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।রুহি তুমি তোমার সিদ্ধান্ত জানাও।’
রুহি নিজের মা বাবার দিকে তাকাল, ওনারা সকলেই হ্যাঁ বলার কথা বলছেন। রুহি চোখ বন্ধ করে একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল,
– ‘আমি রাজি।’
সকলে চেঁচিয়ে উঠল। শুধুমাত্র প্রিয়া আর রুহির মামা ছাড়া। নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে তারই কাজিনের সাথে বিয়ে হতে দেখে বুকের মাঝে দহনের সৃষ্টি হচ্ছে। রুহির উপর বড্ড রাগ হচ্ছে তারমানে ওহ এতদিন মিথ্যা কথা বলেছে, ওদের মাঝে শুধু বন্ধুত্ব নয় ভালোবাসাও ছিল!!
অন্যদিকে রুহির মামা নিজের চোখে নিজের হার মেনে নিতে পারলেন না। উনি অনেক বড়ো একটা স্বার্থে রুহির সাথে অর্নবের বিয়ের কথা বলেছিলেন নাহলে যে মেয়েকে নিজের বাড়িতে রাখেননি সেই মেয়েকে নিজের বাড়ির বউ করে নিয়ে যাবে বিষয়টা একটু অদ্ভুত না। কিন্তু কি এমন কারন যার জন্য রুহির মামা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
দুজোড়া বিয়ে পড়ানো শুরু হলো, রুহির মাঝে কোনো অনুভূতি নেই। এখন অনেকগুলো প্রশ্ন মাথার ভেতরে ঘুরপাক খাচ্ছে সেইগুলোর উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত শান্তি পাবে না।
কাজি সাহেব রুহিকে কবুল বলার জন্য বলে চলেছে কিন্তু ওর সেইদিকে খেয়াল নেই, একমনে কিসব ভেবে চলেছে। জয় রুহির হাতে হাত রাখতেই ধরফরিয়ে উঠে নিজের অবস্থান বুঝতে পেরে আ’হত হলো। কাজি সাহেব কবুল বলার জন্য তাড়া দিল, রুহি সকলের দিকে একনজর তাকিয়ে কবুল বলে দিল। অবশেষে দুইজোড়া কপোত কপোতির বিয়ে সম্পন্ন হলো।
জয় রুহির দিকে তাকাল, মেয়েটাকে কি সুন্দর লাগছে। মনে হচ্ছে আগের থেকে আরো বেশি সুন্দরী হয়ে গেছে, জয় রুহির হাতে হাত দিয়েই ছিল। হাতটা আর একটু শক্ত করে ধরে মনে মনে বলল,
– ‘আজকে থেকে তোর ভালো থাকার দায়িত্ব নিলাম। আমি সজ্ঞানে এমন কিছুই করব না যাতে তুই কষ্ট পাস। আর পুরানো মান অভিমান সব ভাঙিয়ে দেব কথা দিলাম।’
জয় কি পারবে রুহির মনের মাঝে থাকা সমস্ত মান অভিমান দূর করে দিতে!!
#চলবে…