#আমার_ভাঙা_ক্যানভাসে (৬)
#তানজিলা_খাতুন_তানু
– ‘আমি চাইছিলাম তিথির বিয়েটা ওই বাড়িতে থেকেই হোক।’
রুহি নিজের উ’ত্তেজনা নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে চেঁচিয়ে উঠল,
– ‘ইয়া হু..
হামিদ চৌধুরী ভ্রু কুঁচকে আদরের ভাইঝির দিকে তাকালেন, মেয়েটা এত বড়ো হয়ে গেছে কিন্তু এখনো বাচ্চামো গেল না। সকলের দিকে রুহির চোখ পড়তেই ওহ কাঁচুমাচু হয়ে খেতে লাগল আর মনে মনে নিজেকে হাজার একটা গা’লাগা’লি দিতে লাগল।
হামিদ চৌধুরী গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
– ‘নিজেকে এত বকাবকি না করে চুপচাপ খাও নাহলে বিষম লেগে যাবে।’
রুহি লজ্জায় মাথা নীচু করে নিল। প্রতিবারের মতো এবারেও ধরা পড়ে গেছে, আগে যখন এইরকম করত তখন বিষয়টা কেউ না ধরতে পারলেও হামিদ চৌধুরী ঠিকই বুঝতে পারতেন।
– ‘থাক এত লজ্জা পেতে হবে না। তিথির বিয়ের দায়িত্ব আমি তোমাদের কাজিন মহলের উপরেই দিতে চাই। তোমরা তোমাদের ইচ্ছামতো বিয়ের আয়োজন করো, আমার কোনো আপত্তি নেই।’
রুহি তো বেজায় খুশি, এটাই তো চাইছিল। ওই বাড়িতে হলে সবাই একসাথে হইচই করতে পারবে যেটা এইখানে থাকলে সম্ভব না।
– ‘তাহলে বাবা সকলকে নেমন্তন্ন করার সময়ে জানিয়ে দিতে হবে বিষয়টা।’
– ‘হ্যাঁ জানিয়ে দিও। আমি ওদের সাথে কথা বলেছি ওদের কোনো আপত্তি নেই আর এমনিতেও বৌভাত তো এইখানেই হবে।’
বিকালে রুহি আর সোহান ফুরফুরে মেজাজে বাড়ি ফেরার পথে রওনা দিলো। ওরা দুজন হেঁটে চলেছে, রুহি তো বেশ এনজয় করছে বিষয়টা কিন্তু সোহানের বিরক্তের শেষ নেই।
– ‘এই রুহু আর কতটা হাঁটব আমরা।’
– ‘এই পথ যদি না শেষ হয় …
– ‘পাগল নাকি তুই, এই রাস্তা হেঁটে যাবার প্ল্যান করছিস তুই!’
– ‘ক্ষ’তি কি। চল না হেঁটে হেঁটে যায়।’
– ‘খবরদার নয়। এমনিতেই তোর চক্করে আমার অফিস যাওয়া হয়নি কালকে গেলেই বস ঝা’ড়বে।’
– ‘তোর বসের নম্বরটা দিয়ে দিস আমি কথা বলে নেব।’ (দাঁত কেলিয়ে)
– ‘দাঁত বের করো না। আমার বসের নাম শুনলে তোমার হাসি আর থাকবে না।’
– ‘কেন কেন কে তোর বস?’
– ‘আদ্রিয়ান নিহান জয়।’
– ‘কি!’
– ‘হ্যাঁ রে।’
– ‘তুই কেন ওর আন্ডারে কাজ করতে গেছিস? বলি আর কি জব ছিল না!’
– ‘মজা করলাম। জয় আর আমি আলাদা কোম্পানিতে জব করি।’ (হেসে দিয়ে)
– ‘তাহলে বললি কেন?’ (রাগ দেখিয়ে)
– ‘মজা করে।’
– ‘সোহানের বা’চ্চা।’
– ‘আইসক্রিম খাবি?’
আইসক্রিমের কথা শুনে রুহির জিভে পানি চলে আসে। অনেকদিন হলো রাস্তায় দাঁড়িয়ে আইসক্রিম খাইনে, তাই নিজের রাগ মাথা থেকে ঝে’ড়ে ফেলে দিয়ে বলল
– ‘এই জন্যই তো তোকে এত ভালোবাসি। চল তাড়াতাড়ি আমার আর স’হ্য হচ্ছে না।’
– ‘ঠিক আছে তবে একটা মাত্র।’
– ‘না দূটো প্লিজ।’
– ‘এই তোর না ঠান্ডায় এ’র্লাজি আছে!’
– ‘কিছু হবে না।’
– ‘ঠিকাছে কিন্তু কিছু হলে আমার ঘাড়ে দো’ষ চাপাবি না একদম।’
– ‘হু চল।’
রুহি আইসক্রিম নিয়ে খেতে লাগল। সোহান দাঁড়িয়ে রুহির বাচ্চামো দেখে চলেছে, সেই আগের রুহিকে ই দেখতে পাচ্ছে, সেই আগের মতো চঞ্চলতা, দুষ্টুমি। সবকিছু সেই আগের মতোই আছে হয়তো মানুষটাই বদলে গেছে!
– ‘কাকু আর একটা আইসক্রিম দিন।’
– ‘আর একটাও নয়। চুপচাপ বাড়ি যা।’
চেনা কষ্ঠস্বর। গম্ভীর কন্ঠের মানুষটিকে চিনতে অসুবিধা হলো না রুহির, বিরক্ত হয়ে বলল,
– ‘আমি কি করবো আর না কি করবো সেটা কি আপনার মত অনুযায়ী করতে হবে?’
– ‘ইয়েস ম্যাম। চুপচাপ বাড়ি যা, গিয়ে রেস্ট নে।’
– ‘আমি আইসক্রিম খাবো।’
– ‘খবরদার নয়। এই তীব্র গরমে এমনিতেই সেদ্ধ হয়ে যাচ্ছিস তারউপরে ঠান্ডা খেলে আর উঠতে পারবি না।’
– ‘আমার শরীর আমি বুঝে নেব।আপনি যাবেন এইখানে থেকে।’ (বিরক্ত হয়ে)
জয় নিজের গলার স্বরটাকে একটু হালকা করে রুহির কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,
– ‘তোর শরীর হতে পারে কিন্তু তুই গোটাটাই তো আমার, আমি ভাবব না তো কে ভাববে।’
জয়ের ফাজলামি ভরা কন্ঠস্বর শুনে রুহি বিরক্ত হয়ে বলল,
– ‘দেখুন আপনার এইসব ন্যাকামী আমার একদম সহ্য হচ্ছে না। গার্লফ্রেন্ড থাকা সত্ত্বেও অন্য একটা মেয়েকে এইসব বলতে লজ্জা করে না।’
– ‘কার গার্লফেন্ড? কে গার্লফ্রেন্ড!’
– ‘দূরর আপনার সাথে কথা বলাই বেকার।’
রুহি রাগ দেখিয়ে আগিয়ে চলে গেল। জয় শব্দ করে হেসে উঠল। সোহান এতক্ষন দাঁড়িয়ে ওদের দুজনের কান্ড দেখছিল, জয়ের হাসি দেখে কিছুটা রাগ দেখিয়ে বলল,
– ‘এই শা’লা আমার বোনটাকে এত রাগাচ্ছিস কেন?’
– ‘আমি নয় তুই আমার শা’লা হবি।’
জয় কথাটা বলে আবারো শব্দ করে হেসে উঠল। সোহানের এইবার রাগ উঠল সত্যি সত্যি। জয়ের মাথাতে চাঁটি দিয়ে বলল,
– ‘তুই জীবনেও শো’ধরাবি না বল।’
– ‘কেন রে। রুহুকে কি আরো বিরক্ত করতে হবে!!’
জয়ের কথার উপরে সোহান কি বলবে বুঝতে পারল না। এই ছেলে শয়তানের হাড্ডি কোনো কিছুতেই দমানো যাবে না, সব সময়েই ফাজলামি করা চাই।
রুহি রাগ দেখিয়ে হেঁটে চলেছে, জয়ের ফাজলামি ভরা কথাগুলো রুহির বিরক্ত ছাড়া কর কিছুই লাগছে না। আর সহ্য করা যাচ্ছে না এর একটা বিহিত করতেই হবে। কিন্তু কি করবে বুঝতে পারল না, ভাবতে হবে!
**
জয় বাড়ি ফিরতেই ওর মা বলল,
– ‘জয় দিয়া ফোন করেছিল।’
– ‘কি বলল!’
– ‘বাড়ি ফেরার জন্য পাগল করে দিচ্ছে।’
– ‘কিন্তু ওর তো এক্সাম আছে।’
– ‘হ্যাঁ পরশু শেষ হয়ে যাবে তারপরে আসবে।’
– ‘অনেকদিন বুড়িটাকে দেখিনি। ওকে ছাড়া বাড়িটা কিরকম একটা ফাঁকা ফাঁকা।’
জয়ের কথা শুনে জয়ের মা মুচকি হাসল। দুই ছেলে মেয়েকে নিয়েই সংসার স্বামী তো কর্মসূত্রে দেশের বাইরেই পড়ে থাকেন, বছরে একবার কি দুইবার আসেন। উনি একাই জয় আর দিয়াকে বড়ো করে তুলেছেন, জয় পড়াশোনা শেষ করে জব করছে আর দিয়া মেডিকেল কলেজে পড়ছে।
**
জয় স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছে দিয়াকে রিসিভ করার জন্য। এই প্রচন্ড গরমে ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেছে, একবার করে কপালের ঘাম মুছছে আর একবার করে ঘড়ি দেখছে। ট্রেনটা এতটা লেট কেন করছে!!
অবশেষে ট্রেন আসলো, দিয়াকে রিসিভ করার জন্য জয় একটু আগিয়ে যেতেই কারোর সাথে একটা ধাক্কা লাগে, পরিস্থিতি বোঝার আগেই মেয়েটি ধপাস…
– ‘ও মা গো…
জয় তড়িঘড়ি মেয়েটাকে তুলতে গিয়ে শক খেল মেয়েটি আর কেউ নয় রুহি।
– ‘একটু দেখে হাটবি না, নে হাত ধর।’
জয়ের কথা শুনে রুহির বুঝতে অসুবিধা হলো না করা সাথে ধাক্কা লেগে ওহ নীচে পড়ে গেছে। রাগটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠল,
– ‘এই আপনি এইখানে! নিশ্চয়ই আমাকে ফলো করতে করতে চলে এসেছেন।’
– ‘তোকে ফলো করতে বয়েই গেছে। আমি এসেছি আমার দরকারে, বেশি না বকে তাড়াতাড়ি উঠ তো।’
– ‘দরকার নেই আমি একাই উঠে পড়ব।’
রুহি উঠতে গিয়ে আবারো পড়ে যেতে যায়, পায়ে খুব জোরেই লেগেছে ঠিকমতো দাঁড়াতে পারছে না। রুহি পড়ে যেতে গেলে জয় ওকে আঁকড়ে ধরে নিয়ে বলল,
– ‘জানিস পারবি না, তবুও তেজ দেখাতে কম করবি না।’
– ‘ছাড়ুন আমাকে।’
– ‘আবার ছেড়ে দিয়ে কোমড়টা আর থাকবে তো!'(চোখ টিপ দিয়ে)
– ‘শয়তানের চা’মচা একটা।’ (বিরবির করে)
– ‘এই কিছু বললি।’
– ‘না আমাকে দাঁড় করান।’ (মিষ্টি হেসে)
রুহির হাসি দেখে জয় টাস্কি খেয়ে গেল। যেই মেয়ে ওকে দেখতেই পারে না সে হাসি দিচ্ছে!! জয় রুহিকে দাঁড় করিয়ে দিতেই, রুহি ওর পায়ে হিল দিয়ে প্যা’রা দেয়।
– ‘আহহ্
– ‘আমাকে ফেলে দেবার শা’স্তি।’
রুহি গটগট করে হেঁটে চলে যায়। জয় করুন চোখে পায়ের দিকে তাকায়, বুট পড়ে থাকলে কিছু হত না কিন্তু নরমাল জুতো পড়ে থাকাতে ব্যথাটা জোরেই লেগেছে। জয় আগেই বুঝেছিল মিষ্টি হাসির পেছনে কিছু ঘাপলা আছে, আর সেইটাই ঠিক হলো। বাই দ্যা ওয়ে রুহি স্টেশনে কেন?
#চলবে…
রাইটিং ব্ল’কে আমার পিছু ছাড়ে না।😒
সকলে একটু দোয়া করবেন আমার জন্য। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আসসালামু আলাইকুম।