#আমার_ভাঙা_ক্যানভাসে (৯)
#তানজিলা_খাতুন_তানু
কয়েকদিন কেটে যায়। রুহি আর জয়ের সম্পর্কের কোনোপ্রকার উন্নতি হয়নি, আর হবেই বা কিভাবে রুহি তো আবারো মামার বাড়িতে ফিরে গেছে। এবং ১মাস হয়ে গেছে এখনো ফেরেনি।
জয় বিষন্ন হয়ে বসে আছে। কিছুই ভালো লাগছে না, চারবছর ধরে রুহির অভিমানের আগুনে পুড়তে হয়েছে আর এখনো হচ্ছে। মেয়েটার রাগ অভিমান কিছুতেই কমাতে পারছে না, কিভাবে কি করবে সেটাও বুঝতে পারছে না। রাগটা যে ভাঙাবে তার আগেই মেয়ে তো আবারো চলে গেছে, কবে আসবে আদৌও আসবে কিনা সেটাও তো জানে না।
– ‘কি রে ভাই এইভাবে মুখ গোমড়া করে বসে আছিস কেন?’ (সোহান)
– ‘আর কেন করেছি জানিস না বুঝি।’
– ‘সবই জানি সবই বুঝি। কিন্তু কিছুই করতে পারি না।’ (হতাশ হয়ে)
– ‘তোর বোনের এত অভিমান কেন?’
– ‘আমি কিভাবে জানব, তুই রুহুর বেস্টফ্রেন্ড তোর তো জানার কথা।’
– ‘আর বেস্টফ্রেন্ড! গত চারবছর ধরে আমার সাথে কোনোরকমের সম্পর্ক রাখেনি, বর্তমানে আমাকে সহ্যই করতে পারে না!’ (মন খারাপ করে)
জয়কে মনখারাপ করে থাকতে দেখে সোহানের ভালো লাগল না। জয়কে ছোট থেকেই দেখে আসছে, সবসময়ে হাসি খুশিতে মেতে থাকত কিন্তু রুহি চলে যাবার পর থেকে কিরকম একটা মনমরা হয়ে গিয়েছিল। আবার যখন রুহি ফিরে আসলো রুহির অভিমান ভাঙ্গানোর জন্য নিজের ছেলেবেলায় ফিরে গিয়েছিল আগের সেই প্রানোচ্ছল জয় ফিরে এসেছিল। এখন আবার সেটা হারিয়ে গেল। এইসব ভাবনার মাঝে সোহানের মাথাতে একটা কথা কথা আসে,
– ‘জয় একটা প্ল্যান পেয়েছি।’
– ‘কি প্ল্যান!’
– ‘রুহি ফিরবে।’
– ‘তুই কি করে জানলি! তোকে কি বলেছে?’
– ‘নাহ।’
– ‘তাহলে!’
– ‘আরে আর ১৫দিন পর তিথি আপার বিয়ে। রুহু নিজে বড়ো মামুর কাছে গিয়েছিল যাতে অনুষ্ঠানটা এইখানে হয়।মামু রাজি হয়েছে এইবাড়িতে থেকেই বিয়ে হবে আর এখন যদি রুহু না থাকে তাহলে বড়ো মামু ক্ষেপে যাবে আর রুহু সেটা হতে দেবে না। তাই শিওর থাক ওহ আসবে।’
সোহান একদমে কথাগুলো বলে দম ফেলল। জয়ের মুখের কোনে হাসি ফুটে উঠল।
– ‘তিথি আপার বিয়ের সময়টাতেই আমাকে কিছু একটা করতে হবে।’
– ‘বেস্ট অফ লাক।’
সোহানের কথাটাই ঠিক হলো। দুইদিন পর রুহি ফিরে আসলো ঠিকই কিন্তু একা না সাথে আবার একজন সুদর্শন যুবককে নিয়ে।
দিয়া জয়কে খবরটা দিতেই জয় রুহিকে একপলক দেখার জন্য ছুটে আসলো। কিন্তু রুহির পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটাকে দেখে অবাক কুঁচকে যায়, এই ছেলে আবার কোথা থেকে আসলো?
ছেলেটার সাথে রুহির মা বেশ হাসি মুখেই কথা বলছে তাই জয় আর এগিয়ে যাবার সাহস পেল না। দাঁড়িয়ে কথা শুনতে লাগল। কথাবার্তা শুনে যতটা আন্দাজ করল ছেলেটি রুহির মামাতো ভাই অর্নব। কিন্তু ছেলেটার হঠাৎ এইখানে আসার কারনটা বুঝতে পারল না।
জয়কে দেখে রুহি মনে মনে বলল,
– ‘জয়কে এইরকম ছন্নছাড়া লাগছে কেন? কি হয়েছে!’
**
বিকাল থেকেই রুহিদের বাড়িতে বিশাল আয়োজন। গোটা পরিবারের মানুষজন সকলেই আবারো বাড়িতে ফিরে আসছে, রুহি তো ভীষন রকমের খুশি। ফাইনালি ওর মনের ইচ্ছাটা পূরণ হচ্ছে।
সন্ধ্যার আড্ডায় জয়কে দেখে রুহির কপাল কুঁচকে গেল। কিন্তু বাড়ির বড়োরা উপস্থিত থাকাতে কিছুই বলতে পারল না।
– ‘আঙ্কেল আমাকে ডেকেছিলেন?’
জয়কে দেখা মাত্র হামিদ চৌধুরী গম্ভীর স্বরে বললেন,
– ‘তোমাকে কি আলাদা করে আবার ডাকতে যেতে হবে?’
– ‘আসলে আঙ্কেল।’
– ‘থাক আর বেশি কথা বলতে হবে না। বসো তোমাদের সকলের সাথে আমার কথা আছে।’
সকলে উৎসুক হয়ে হামিদ চৌধুরীর দিকে দৃষ্টি দিলো। প্রিয়া বারবার জয়ের দিকে তাকাচ্ছে, ব্যাপারটা কেউ খেয়াল না করলেও রুহি ঠিকই খেয়াল করেছে। ওর বড্ড বিরক্ত লাগছে বিষয়টা। প্রিয়া এতটা গায়ে পড়া কিভাবে হলো, জয়ের গার্লফ্রেন্ড আছে জানার পরেও ওর দিকে নজর দিচ্ছে কেন? অসহ্য।
হামিদ চৌধুরী সকলের দিকে একনজর তাকিয়ে শান্ত স্বরে বললেন,
– ‘তোমরা সকলে একটা পরিবার। আমি সবসময়ে চাই আমাদের অবর্তমানে তোমরা সকলে এইভাবেই মিলেমিশে থাকো।’
– ‘কিন্তু বড়ো আব্বু জয় তো আমাদের পরিবারের কেউ নয়!!
সবাই থমথমে মুখে রুহির দিকে তাকাল, জয় একটু লজ্জাবোধ করল। কিন্তু হামিদ চৌধুরী একটু চটে গেলেন। রাগান্বিত স্বরে বললেন,
– ‘আমার কথার মাঝে কারোর কথা বলা আমার পছন্দ নয়।’
রুহি মুখটা গম্ভীর করে বসে রইল। জয় ইতস্তত করে বলল,
– ‘আঙ্কেল আমি আসছি।’
– ‘না তুমি কোথাও যাবে না। তোমাকে আমি দরকারেই ডেকেছি তাই চুপচাপ বসে থাকো।’
জয় মুখটা ছোট করে বসে রইল। প্রিয়া রুহি আর জয়ের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল,
– ‘কি হলো রুহুপু এইভাবে বলল কেন? তাহলে কি ওদের মাঝে সবকিছু ঠিক নেই!’
হামিদ চৌধুরী নিজের কথা পুনরায় শুরু করলেন।
– ‘সামনেই তিথির বিয়ে। আমি চাইছি ওর বিয়ের সমস্ত দায়িত্ব তোমার কাজিন মহলের সবাই মিলেমিশে ভাগ করে নাও। টাকা যা লাগবে আমি দেবো, কিন্তু আয়োজনটা তোমাদের করতে হবে।মিলন আর জয় তোমাদের উপরে আমি গুরুতর কিছু দায়িত্ব দেবে আশা করি তোমরা সেটা ভালো করেই পালন করবে।’
দুজনেই মাথা নাড়ল। হামিদ চৌধুরী সবাইকে কাজ বুঝিয়ে দিলেন। জয়কে দায়িত্ব দেওয়াতে রুহি তো রেগে ফোঁস ফোঁস করছে কিন্তু কিছু বলতে পারছে না।
কথাবার্তা শেষ হয়ে গেলে, বাড়ির বড়োরা চলে যায়। ছোটরা নিজেদের মধ্যে সবকিছু নিয়ে ডিসকাস করছে তখনি প্রিয়া মাঝখান থেকে জয়কে বলল,
– ‘জয়’দা তোমার গার্লফ্রেন্ড আছে।’
রুহি সবেমাত্র পানিতে মুখ দিয়েছিল প্রিয়ার এইরকম কথা শুনে বিষম খেল। জয় উঠে আসার আগেই অর্নব রুহিকে সামলে নিয়ে বলল,
– ‘একটু দেখে খাবি তো।’
রুহির কাছাকাছি অর্নবকে দেখে জয়ের মনে অজানা দহন সৃষ্টি হলো, বুকের মাঝে চিনচিনে ব্যাথা অনুভব করছে। প্রিয়া আবারো প্রশ্নটা করল,
– ‘কি হলো জয়দা বলো।’
– ‘কেন? কি দরকার!’ (প্রশ্নবিদ্ধ চোখে)
– ‘না রুহিপু বলছিল তোমার গার্লফ্রেন্ড আছে তাই।’
কথাটা শুনে জয় রুহির দিকে তাকাতেই দুজনের চোখাচোখি হয়ে যায়। দুজন দুজনের চোখে কিছু একটা দেখতে পাচ্ছে কিন্তু বুঝে উঠতে পারছে না। প্রিয়া জিজ্ঞাসা করেই চলেছে যেন পন করেছে আজকে সত্যিটা জেনেই ছাড়বে। জয় বিরক্ত হয়ে উঠছে দেখে সোহান বলল,
– ‘জয়ের গার্লফ্রেন্ড নে_ই…
নেই কথাটা একটু টেনে বলে রুহির দিকে তাকাল, রুহি অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সোহানের দিকে। সোহান জয়ের গার্লফ্রেন্ড নেই বলতে কি বুঝিয়েছে!! সেটাই বোঝার চেষ্টা করছে।
– ‘সত্যি নেই? তাহলে রুহিপু বলল যে!’ (খুশি হয়ে)
– ‘আরে পুরো কথাটা তো শোন।’
– ‘কি বলো।’
– ‘হ্যাঁ এটা সত্যি জয়ের গার্লফ্রেন্ড নেই। তবে..
– ‘তবে কি!’
– ‘জয়ের পাত্রী ঠিক করা আছে। আর খুব শীঘ্রই ওদের বিয়ে হবে।’
রুহি চমকে উঠল। অনেকগুলো প্রশ্ন মনের মধ্যে উঁকি দিতে লাগল। জয়ের গার্লফ্রেন্ড নেই কিন্তু পাত্রী ঠিক করা আছে মানে কি!! এইদিকে প্রিয়ার মনটা আবারো ভেঙে গেল। মনের কোথাও আশা জেগেছিল যে জয় হয়তো সিঙ্গেল। কিন্তু এইবারের সমস্ত আশা ভেঙে গেল, প্রিয়া ঠিক করল জয়ের থেকে দূরে থাকবে কিন্তু অবাধ্য মনকে কি আটকে রাখা যায়!
#চলবে…