#আমি_তোমার_গল্প_হবো🍁
লেখিকা- মাহিয়া তাহসীন মেরিন
পর্ব:::১৩
শাহিন হাসাদ রুমে প্রবেশ করে রাগে সবকিছু ভাঙতে শুরু করে। সাহিল চুপচাপ ঘরের এক কোণে বসে আছে।
শব্দ শুনে অনুরিমা দৌড়ে রুমে এসে দেখে শাহিন একে একে সব ভেঙে ফেলছে।
— ” এসব কি করছেন আপনি? সব ভেঙে ফেলছেন কেনো? ”
শাহিন রেগে দৌড়ে এসে অনুরিমার চুল টেনে ধরে….
— ” এই সব তোর জন্য হয়েছে। আজ তোর ছেলের জন্য এতোগুলো লোকের সামনে আমার সম্মানহানী হয়েছে। এতো বড় একটা বিজনেস ডিল আমি হারিয়েছি, শুধু তোর ছেলে আর ছেলের বউয়ের জন্য…। ”
কথাটা বলে অনুরিমার চুল ছেড়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। অনুরিমা পরে গিয়ে মাথায় একটু ব্যাথা পায়।
সাহিল বসে বসে সব দেখছে।
— অনুরিমা মাথায় হাত দিয়ে, ” আশ্বিন তার নিজ যোগ্যতায় এই ডিল পেয়েছে। এখানে আমার কি দোষ? আপনি কেনো আমার ছেলের পিছনে লেগে আছেন? ”
— সাহিল উঠে দাঁড়িয়ে, ” এনাফ মম। তোমার ছেলে শুধু আমি, বুঝতে পেরেছো? আর কিসের যোগ্যতা ওই ছেলের? বউয়ের সাহায্য নিয়ে প্রোজেক্ট হাতিয়ে নিয়েছে সে। ”
— অনুরিমা সাহিলের দিকে তাকিয়ে, ” কি করেছে অধরা? তোমার বাবার মতো টাকার বিনিময়ে ডিল কিনতে চেয়েছে? সে শুধু অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে। ”
— শাহিন অনুরিমার চুল টেনে ধরে, ” তুই এসব কথা কিভাবে জানলি? তার মানে অধরার সাথে তুই গোপনে হাত মিলিয়েছিস। তাই না? ”
— অনুরিমা ব্যাথায় কুঁকড়ে ওঠে, ” আমি কিছুই করিনি।
অধরাকে ছোট বলে দূর্বল ভাববেন না। অধরা এমন মেয়ে না। আমি যে ভুল করছি আপনি হাজার চাইলেও অধরাকে দিয়ে সেই ভুল করাতে পারবেন না। ”
— শাহিন হাসতে হাসতে, ” এতোটা কনফিডেন্স? ঠিক আছে। তবে আমিও দেখে নিবো। বিজনেসের রাজ্যে একমাত্র আমিই রাজত্ব করবো। আর আমার পথে যে আসবে…। ”
কথাটা বলেই ভিলেন হাসি দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায় শাহিন। সাহিলও তার বাবার সাথে সাথে চলে যায়।
এদিকে অনুরিমা মেঝেতে বসে নিরবে চোখের পানি ফেলে।
🌻পরদিন🌻
অধরা সকাল থেকেই বাসায় যাওয়ার জন্য একদম রেডি। আশ্বিন ল্যাপটপে কাজের ফাঁকে ফাঁকে আঁড়চোখে অধরার সব কর্মকান্ড দেখছে। সকাল থেকেই আশ্বিন নানাভাবে তার কাজের মাধ্যমে অধরাকে বোঝাতে চেয়েছে যে সে রেগে আছে। কিন্তু অধরা কোনভাবেই তার দিকে খেয়াল করছে না।
— অধরা রেডি হয়ে আশ্বিনের কাছে এসে, ” দেখুন তো, আমাকে কেমন লাগছে? ”
— আশ্বিন ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে, ” হুম। সুন্দর। ”
— অধরা ভ্রু কুঁচকে, ” আরে আপনি তো আমার দিকে তাকালেনই না। ”
— আশ্বিন বিরক্তি নিয়ে, ” বললাম তো সুন্দর লাগছে। আর, এতো রেডি হওয়ার কি আছে? নিজের বাসায়ই তো যাচ্ছো নাকি? ”
— অধরা বাঁকা চোখে তাকিয়ে, ” হ্যা। বিয়ের পর আজ প্রথম যাচ্ছি বাসায়।
ওফ হো, আপনি বুঝবেন না। আমি দাদি বুড়িকে জিজ্ঞেস করে আসছি। ”
কথাটা বলেই অধরা দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। এদিকে আশ্বিন রাগে একটানে ল্যাপটপ বন্ধ করে দেয়।
— ” ড্রামা কুইন একটা। সবকিছু উনি বুঝেন অথচ আমি যে রেগে আছি এটা উনি বুঝেন না। ”
কথাটা বলে আবার ল্যাপটপ অন করে আবার সাইডে রেখে, ” ধ্যাত। ভালো লাগে না। ”
🌻বিকেলে🌻
অর্ণব আর কণা অধরাকে নিতে চলে আসে। অধরা তাদের দেখে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে। আশ্বিন আর অর্ণব কথা বলায় ব্যাস্ত হয়ে পড়ে আর অধরা কণাকে নিয়ে রুমে চলে আসে।
— কণা সোফায় বসতে বসতে, ” বুঝলি ছোট, অবশেষে মাহিনকে নিজের করে পাবো। ভাগ্যিস সেদিন তুই ওই প্ল্যানটা দিয়েছিলি। ”
— অধরা একটা বাঁকা হাসি দিয়ে, ” আপুনি, তোমাকে বলেছিলাম না আমার আইডিয়া কখনো ফ্লপ হতেই পারে না। দেখো কিভাবে এক ঢিলে দুই পাখি শিকার করেছি আমরা। ”
— কণা মুচকি হেসে, ” হুম ঠিক। বাই দ্য ওয়ে, আশ্বিন কি সবটা জানে? ”
— ” আরে তুমি কি পাগল হয়েছো আপুনি? আমাদের প্ল্যানের কথা ভুলেও উনাকে জানতে দেওয়া যাবে না। ”
” আমাকে কি জানতে দেওয়া যাবে না? ”
হঠাত কথাটা শুনে অধরা আর কণা চমকে ওঠে পিছনে ফিরে দেখে আশ্বিন দাঁড়িয়ে আছে। আশ্বিনকে দেখে দুজন চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।
— আশ্বিন রুমে প্রবেশ করে, ” কি হয়েছে? চোখগুলো এভাবে গোল গোল করে তাকিয়ে আছো কেনো? আর কি জানতে দিবে না আমাকে? ”
— অধরা অনেক কষ্ট হাসির চেষ্টা করে, ” ইয়ে মানে আসলে, আমি আপুনিকে বলেছি আমি সাতদিনের জন্য বাসায় যাচ্ছি। তাই আপুনিকে নিয়ে কোথায় কোথায় ঘুরতে যাবো সেটা নিয়েই কথা বলছিলাম।
আর আপনি সব শুনে ফেললেন। ”
— আশ্বিন কণার দিকে এক নজর তাকিয়ে অধরার দিকে তাকিয়ে, ” ওহ আচ্ছা। যাই হোক, অর্ণব তোমাদের ডাকছে। ”
— কণা জোরপূর্বক একটা হাসি দিয়ে, ” জি ভাইয়া। এই ছোট, ভাইয়ার কাছে বিদায় নিয়ে তারাতারি নিচে আয়। ”
— অধরা কণার কথা শুনে আশ্বিনের তাকিয়ে, ” টাটা, বাই বাই। আমি যাচ্ছি, আপনি ভালো থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।
বিদায় নেওয়া শেষ, চলো আপুনি। ”
— অধরার কণা শুনে কণা অধরার মাথায় আলতো করে চড় দিয়ে, ” তুই সবসময় গাধীই রয়ে গেলি। এভাবে বিদায় নিতে হয়? ”
— অধরা মাথায় হাত বুলিয়ে, ” আমি আবার কি করলাম? ”
অধরার কথা শুনে কণা আশ্বিনের দিকে একবার তাকিয়ে অধরার কানের কাছে এসে,
— ” আরে গাধী, তোর বরের কাছে বিদায় নিচ্ছিস। একটু রোমান্টিক ভাবে বিদায় নিবি। সব কিছু কি আমার বলে দিতে হবে? ”
কণার কথা শুনে অধরা ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ কণার দিকে তাকিয়ে ধীরে ধীরে আশ্বিনের কাছে এসে ধপ করে মাটিতে বসে আশ্বিনের পা ছুঁয়ে সালাম করে,
— ” ওগো শুনছেন, আমি সাতদিনের জন্য বাবার বাসায় যাচ্ছি।
আপনি কিন্তু যথাসময়ে অনুষ্ঠানে চলে আসবেন। ভালোভাবে থাকবেন। আর যদি আমার কথা মনে পড়ে তবে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলবেন,
ভালো আছি, ভালো থেকো।
আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো। ”
অধরার বলা কথাগুলো শুনে কণা তো প্রায় অজ্ঞান হওয়ার অবস্থা। এদিকে আশ্বিন অনেক কষ্টে নিজের হাসি আটকে রেখেছে।
কণা অধরার মাথায় একটা চড় মেরে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। অধরা উঠে দাঁড়িয়ে কণার পিছু যেতে চাইলেই…
আশ্বিন অধরার হাত টেনে তাকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে ফেলে। আচমকা এমন হওয়ায় অধরা চোখ বড় বড় করে আশ্বিনের দিকে তাকায়। আশ্বিনের এতোটা কাছে আসায় তার বুকর ভেতর যেনো কেউ হাতুড়ি দিয়ে পেটাচ্ছে।
আশ্বিন চোখ বন্ধ করে অধরার কপালে কপাল ঠেকিয়ে শান্ত কণ্ঠে…
— ” এতোদিন থাকার কি খুব দরকার ছিলো? আমাকে ছেড়ে থাকতে পারবে তুমি? ”
— আশ্বিনের এমন শীতল কণ্ঠে অধরা হালকা কেপে ওঠে, ” এতোদিন কোথায়? মাত্র তো সাতদিন।
আর তাছাড়া আমি না থাকলে তো আপনি খুশিই হবেন। কেউ আপনাকে কাজের সময় এসে বিরক্ত করবে না। স্বাধীন ভাবে থাকবেন। একদম আগের মতো। ”
— ” আগের সাথে তুলনা করে কোন লাভ নেই। আগে তো তুমি ছিলে না। কিন্তু এখন তুমি আছো। আমার অভ্যাসে মিশে আছো।
এখন রোজ সকালে আমার দিন শুরু হয় তোমাকে দেখে..
আমার সকল কল্পনা আর চিন্তা থাকে তোমাকে ঘিরে।
দিন শেষে বাড়ি ফিরে প্রথম তোমায় খুঁজি..
তোমার কোলে মাথা রেখে সকল ক্লান্তি ভুলি। ”
কথাগুলো বলে আশ্বিন কিছুক্ষণ চুপ থেকে একটু দূরে সরে এসে বললো…
— ” যাই হোক, সাবধানে যেও। পৌঁছে আমাকে ফোন দিয়ে জানাবে। মম ড্যাডকে আমার সালাম দিবে। আর, খবরদার কোন প্রকার ঝামেলা করবে না। ”
অধরা এতোক্ষণ মনোযোগ দিয়ে আশ্বিনের কথাগুলো শুনছিলো। আশ্বিন কথাগুলো বলে মুচকি হেসে অধরার কপালে আলতো করে চুমু খেয়ে তার হাত ধরে নিচে নেমে আসে।
অধরা দাদির কাছে বিদায় নিয়ে অর্ণব আর কণার সাথে চলে আসে।
🌻এদিকে🌻
শাহিন চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে চোখ বন্ধ করে কিছু একটা ভাবছে। সাহিল ধীরে ধীরে তার পাশে বসে..
— ” কি ভাবছো ড্যাড? ”
— শাহিল চোখ মেলে তাকিয়ে, ” ভাবছি, লাইফে প্রথম কেউ আমাকে চ্যানেল করলো। হুহহ, তাও আবার অধরার মতো একটা বাচ্চা মেয়ে। ”
— ” কিন্তু ড্যাড। তার কাজে কিন্তু প্রকাশ পায়নি সে একটা বাচ্চা মেয়ে। ”
— শাহিন সোজা হয়ে বসে, ” আগুন নিয়ে খেলার খুব ইচ্ছা অধরার। কিন্তু সে হয়তো জানে না আগুন নিয়ে খেললে সে নিজেই সেই আগুনে পুড়ে যাবে। ”
— ” কি করবে তুমি? ”
— ” অধরা যদি আমার পথের কাঁটা হতে চায়, তবে আমি সেই কাঁটা তুলে ফলে দিবো। ”
কথাটা বলেই একটা বাঁকা হাসি দেয় শাহিন।
#আমি_তোমার_গল্প_হবো🍁
লেখিকা- মাহিয়া তাহসীন মেরিন
পর্ব:::১৪
অধরা বাসায় প্রবেশ করতেই তার মা দৌড়ে এসে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে। তারপর একে একে সবাই নিচে নেমে আসে।
— অধরাকে ধরে তার মা, ” কেমন আছে আমার আম্মুটা?
দেখি দেখি….আমার মেয়েটা দুদিনেই কেমন যেন শুকিয়ে গিয়েছে। তারা কি ঠিক মতো তোমার খেয়াল নেয় না? ”
— অধরা মুচকি হেসে, ” আমি একদম ঠিক আছি আম্মু। আর তারা আমার অনেক খেয়াল রাখে। স্পেশালি দাদি বুড়ি…আমাকে খুব খুব খুব ভালোবাসে। ”
— অধরার বাবা, ” আরে কি করছো তুমি? মেয়েকে নিয়ে কি দাঁড়িয়েই থাকবে? নাকি ভেতরে আসতে দিবে? আর, আশ্বিন কোথায়? তারা আসেনি? ”
— অধরা বাবাকে জড়িয়ে ধরে, ” বাবাই তুমি তো আমার কথা ভুলেই গিয়েছো। আসতেই আশ্বিনের কথা জিজ্ঞেস করলে…আমার তো কোন দামই নেই। একমাত্র ভাইয়াই আমাকে ভালোবাসে। ”
— অধরার নাক আলতো করে টেনে, ” আমি কি আমার মাকে ভুলে যেতে পারি নাকি? যাই হোক, চলো দাদুভাইয়ের সাথে দেখা করবে। ”
দাদাভাইয়ের কথা শুনে অধরা দৌড়ে দাদুর রুমে এসে দাদুকে জড়িয়ে ধরে।
— দাদুভাই মুচকি হেসে, ” এইতো আমার কলিজাটা চলে এসেছে। তোকে ছাড়া এতোদিন বাসাটা একদম খালি খালি লাগছিলো। এখন একদম ঠিক আছে। ”
অধরা মুচকি হেসে দাদুর সাথে গল্প জুড়ে দেয়।
🌻এদিকে🌻
আশ্বিন বসে ল্যাপটপে কাজ করছে আর বারবার ফোনের দিকে নজর দিচ্ছে। এতোটা সময় হয়ে গেল তাও অধরার ফোন আসলো না।
— ” এতোক্ষণে তো পৌঁছে যাওয়ার কথা। নিশ্চিত সবাইকে পেয়ে এখন আমাকে ফোন দিতে ভুলে গিয়েছে। ”
কথাটা ভেবে আশ্বিন ফোন নিয়ে অধরাকে কল দেয়। কিন্তু দুবার রিং হওয়ার পরেও অধরা ফোন রিসিভ করেনি। তাই রাগে ফোন রেখে খাটে এসে শুয়ে পড়ে।
অধরা এতোক্ষণ সবার সাথে গল্প শেষ করে নিজের রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখে আশ্বিনের এতোগুলো মিসকল। মূহুর্তেই মুখে মুচকি হাসি ফুটে ওঠে তার। বারান্দায় এসে আশ্বিনকে কল দিয়েই সাথে সাথে রিসিভ করে আশ্বিন…
— ” হ্যালো আশ্বিন…। ”
— ওপাশ থেকে, ” বলো। ”
আশ্বিনের কণ্ঠ শুনে অধরা ঠিকই বুঝতে পারছে আশ্বিন রেগে আছে। তবুও অধরা একটু দুষ্টুমি করে…
— ” আপনি ফোন দিয়েছিলেন আমাকে। আমি আসলে সবার সাথে গল্প করছিলাম তাই খেয়াল করিনি। ”
— ” হ্যা খেয়াল তো করবেই না। আমি তো আর কেউ না, আমার ফোন রিসিভ করবে কেনো? ”
— অধরা মুচকি হেসে, ” আরে আরে, আপনি রেগে যাচ্ছেন কেনো? আমি তো এখন ফোন দিয়েছি, নাকি? ”
— ” হুমম, খুব ভালো করেছো। ”
— ” হুম। এতো রাত হয়ে গিয়েছে আর আপনি এখনও জেগে আছেন? কাল অফিসে যেতে হবে না? ”
— অভিমানী কণ্ঠে, ” ঘুম আসছে না আমার। হয়তো প্রতিদিনের মতো মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়ার মতো কেউ নেই তাই। ”
আশ্বিনের কথা শুনে অধরা মুচকি হেসে বারান্দার দোলনায় বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে।
অপর পাশে আশ্বিন খাটে হেলান দিয়ে বসে জানালা দিয়ে বাহিরের আকাশ দেখতে থাকে।
যেনো নিস্তব্ধতাই আজ দুটো মনের হাজারো অনুভূতির প্রকাশ করছে, যার সাক্ষী হয়ে থাকবে আকাশের সেই শুক্র তারা।
🌻পরদিন🌻
সকাল থেকেই বাসার মানুষ নানারকম কাজে ব্যস্ত।
আর অধরা কণার রুমে বসে তাকে রেডি হতে সাহায্য করছে। দুজনকেই আজ খুব সুন্দর লাগছে।
বিকেলের দিকে ধীরে ধীরে মেহমান আসতে শুরু করে। অধরার বাবা আর কণার বাবা মেহমান আপ্যায়ন করতে ব্যস্ত।
কিছুক্ষণ পর আশ্বিন আর দাদি চলে আসে। অধরার বাবা আশ্বিনের সাথে কণার ফিয়ন্সে মাহিনের পরিচয় করিয়ে দেয়।
আশ্বিন পরিচিত হয়ে মুচকি হেসে আশেপাশে তাকিয়ে কাউকে খুঁজতে শুরু করে। হঠাত সিঁড়ি দিয়ে অধরা কণাকে নিয়ে নেমে আসে।
অধরাকে দেখে আশ্বিনের চোখ আটকে যায়। কালো আর কমলা রঙের একটা লেহেঙ্গা পরে আছে অধরা। লম্বা চুলগুলো ছেড়ে রেখেছে আর মুখে হালকা সাজ, সব মিলিয়ে তার মায়াবতীকে আরো বেশি মায়াবী লাগছে।
অধরা মুচকি হেসে কণাকে নিয়ে নিচে নামার সময় হঠাত আশ্বিনের দিকে নজর যায়। ফরমাল লুকে আরও বেশি সুন্দর লাগছে আশ্বিনকে। অধরা আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে দাদির কাছে চলে আসে।
— ” দাদি বুড়ি…। ”
— ” আরে আমার ছোট্ট বুড়িটা। তোকে তো আজ খুব সুন্দর লাগছে। ”
— ” হিহিহি। ধন্যবাদ দাদিবুড়ি।
আসতে এতো দেরী করেছো কেনো? তোমাকে না বললাম তাড়াতাড়ি চলে আসবে। ”
— ” আমি তো সেই কখন থেকে রেডি হয়ে বসে আছি। কিন্তু আশ্বিনের জন্যই দেরী হলো। অফিস থেকে ফিরতেই চলে আসলাম। ”
— ” ভালো। চলো সবার সাথে তোমার পরিচয় করিয়ে দেই। ”
কিছুক্ষণের মধ্যেই অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেল। আশ্বিন ধীরে ধীরে এসে অধরার পাশে দাঁড়িয়ে একটা মুচকি হাসি দেয়। অধরা মুচকি হেসে আশ্বিনের দিকে তাকাতেই অর্ণব দূর থেকে মুহূর্তটার একটা ছবি তুলে নেয়।
রাতে খাওয়া শেষে আশ্বিন দাদিকে নিয়ে চলে যায়। অবশ্য অধরাকে বারবার যাওয়ার জন্য বলেছিলো কিন্তু অধরা যেতে রাজি হয়নি, তাই বাধ্য হয়ে অধরাকে রেখেই চলে যায় তারা।
🌻🌻
পরদিন বিকেলে অধরা কণা আর মাহিন একসাথে শপিং এর জন্য এসেছে। বিয়ের জন্য টুকটাক জিনিস পত্র এখন থেকেই কিনতে শুধু করেছে তারা।
অধরা কণা কথা বলতে বলতে রোড ক্রস করছে হঠাত একজনের উপর চোখ আটকে যায় অধরার। অধরা এক ধ্যানে সেদিকে তাকিয়ে থাকে।
— কণা অধরার দিকে তাকিয়ে, ” ছোট, কি হয়েছে? ”
— অধরা অন্যমনস্ক হয়ে, ” উনি এখানে কি করছেন? ”
— ” উনি মানে? কে? কি হয়েছে? ”
— অধরা কণার দিকে তাকিয়ে, ” ইয়ে মানে, কিছু না আপুনি। ভেবেছিলাম আশ্বিনকে দেখেছি। ”
— ” ওহ আচ্ছা। চল এখন। ”
— ” আপু তোমরা যাও। আমি একটা জরুরী কাজ করে আসছি। এখনি চলে আসবো। ”
কথাটা বলে অধরা এক মুহূর্ত দেরি না করে চলে আসে। পিছন থেকে কণা অনেকবার ডাকলেও শুনেনি সে।
আসলে হঠাত অনুরিমাকে দেখে চমকে উঠে অধরা। নিজেকে অনেকটা লুকিয়ে একা একা কোথায় যেন যাচ্ছে। অধরার কাছে বিষয়টি সন্দেহ লাগায় সেও অনুরিমার পিছু নেয়।
অনুরিমা লুকিয়ে একটা কবরস্থানে প্রবেশ করে। অধরা একটা দূরে দাঁড়িয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকায়।
— ” উনি এই কবরস্থানে কি করছেন? এখানে তো উনার পরিবারের কারো কবর থাকার কথা না। তাহলে? ”
অধরা ধীরে ধীরে কবরস্থানে প্রবেশ করে দেখে অনুরিমা একটা কবরের সামনে বসে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। দূর থেকে উনার কথাগুলো বোঝা যাচ্ছে না। তবে মনে হচ্ছে অনুরিমার আপন কেউ।
কিছুক্ষণ পর অনুরিমা চলে যেতেই অধরা কবরটার সামনে এসে দেখে এখানে নাম পরিচয় লেখা নেই। তাই ফোন বের করে জনিকে কল দেয়।
— ” হ্যা ছোট মনি। ”
— ” জনি ভাইয়া, অনুরিমা মামুনি আজ হঠাত বড় মসজিদের সামনের কবরস্থানে কারো কবর জিয়ারত করতে এসেছে। আপনি কি জানেন এটা কার কবর? ”
— ” না তো। আমার জানা মতে উনাদের একটা পারিবারিক কবরস্থান আছে। তাহলে সেখানে উনি কি করছেন? কবরটা কার জানতে পেরেছো? ”
— ” না ভাইয়া। আপনি একটু খোঁজ নিয়ে আমাকে জানান। কেনো জানি এখানে একটা বড় ধরনের রহস্য আছে মনে হচ্ছে। ”
— ” ঠিক আছে। আমি আজ কালের মধ্যেই সব তথ্য সংগ্রহ করে জানাচ্ছি। ”
— ” ঠিক আছে ভাইয়া। ”
অধরা ফোন রেখে কিছু একটা ভেবে বাসায় চলে আসে।
🌻রাতে🌻
অধরা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আজকের কথাগুলো ভাবছে। অনুরিমা মামুনি লুকিয়ে কেনো সেখানে গেলো? আর কার কবর আছে সেখানে?
কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই আশ্বিন ফোন করে। অধরা রিসিভ করতেই…
— ” কি ব্যাপার? আজকে তো একবারও ফোন দিলে না। শুনেছি শপিং করতে গিয়েছিলে। ”
— ” হ্যা। কণা আপু জোর করলো তাই…। আচ্ছা আশ্বিন, একটা কথা বলি? ”
— ” হুম বলো। ”
— ” বড় মসজিদের সামনের কবরস্থানে কি আপনার পরিবারের কারো কবর আছে? ”
— আশ্বিন কিছুক্ষণ ভেবে, ” না তো। কেনো? ”
— ” না, এমনি জিজ্ঞেস করেছি। ”
অধরার কথায় আশ্বিনের একটু সন্দেহ লাগলেও কিছু বলে না সে।
অপরদিকে, অধরা কোনভাবেই বুঝতে পারছে না অনুরিমা তাহলে কেনো সেখানে গিয়েছিলো।
—চলবে❤
—চলবে❤