#আমি_তোমার_গল্প_হবো🍁
লেখিকা- মাহিয়া তাহসীন মেরিন
পর্ব:::১৫
সকালে ঘুম থেকে উঠেই অধরা জনিকে ফোন দেয় কিন্তু দুইবার রিং হওয়ার পরও রিসিভ না হওয়ায় ফোন রেখে বারান্দায় চলে আসে। কাল রাত থেকে বিষয়টা নিয়ে চিন্তায় ঘুম হয়নি তার।
— ” বাসা থেকে এতোটা দূর একটা কবরস্থানে অনুরিমা মামুনি এভাবে লুকিয়ে কেনো গিয়েছিলো? এর কি কারণ থাকতে পারে? ”
হঠাত অর্ণব বারান্দায় প্রবেশ করে অধরার পাশে বসে। অধরা এক নজর অর্ণবের দিকে তাকিয়ে,
— ” কি হয়েছে ভাইয়া? ”
— ” বোন, তুই আবার কি শুরু করেছিস? ”
— ” আমি আবার কি করলাম? ”
— ” তুই আর জনি মিলে কিসব তথ্য খুঁজে বেড়াচ্ছিস? আশ্বিন এসব জানলে কি হবে ভেবেছিস? জানিস তো, আশ্বিন তার জীবনের সেদিন গুলোর কথা মনে করতে চায় না। ”
— ” জানি ভাইয়া। কিন্তু সত্যিটা আমার জানার দরকার। প্রথম প্রথম শুধু আগ্রহ নিয়ে অনুরিমা মামুনির এমন কাজের কারন জানতে চেয়েছিলাম। এর পর থেকে সবকিছু কেমন যেন রহস্য জনক মনে হচ্ছে।
জানি না কেনো মনে হচ্ছে, যা হচ্ছে তা সত্য না। আর সত্যটা আমরা জানি না। ”
— ” কি হয়েছে আমাকে সব কিছু ঠিক করে বলো। ”
অধরা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সবকিছু অর্ণবকে খুলে বলে। অর্ণব সবটুকু শোনার পর কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে,
— ” এমন তো হতে পারে কবরটা উনার কোন দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের। ”
— ” হুম হলেও পারে ভাইয়া। কিন্তু মনের সন্দেহ দূর করতে এর আসল কারণটা আমার জানা দরকার। তাই তো জনি ভাইয়ার সাহায্য নিয়েছি। ”
— অর্ণব কিছুক্ষণ চুপ থেকে, ” অধরা, জনি আমার জন্য অন্যান্য বিজনেস ম্যানদের সব ডিটেইলস কালেক্ট করে ঠিক, কিন্তু আমি কখনো তাকে কারো পার্সোনাল লাইফের তথ্য কালেক্ট করতে দেইনি। এটা ঠিক না।
তোর এট লিস্ট আমাকে জানানো উচিত ছিল। যাই হোক, আমি এবারের জন্য কিছু বললাম না তবে এমন যেন আর না হয়। কোন সমস্যা হলে আগে ভাইয়াকে বলবি। নিজ থেকে মাতব্বরি করবি না। ”
— অধরা মুচকি হেসে, ” ঠিক আছে ভাইয়া। ”
অর্ণব কথাগুলো বলে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। অধরা অর্ণবের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে,
— ” সরি ভাই। তোমাকে না জানিয়ে এমনটা করা হয়তো ঠিক হয়নি।
ভাইয়াকে আরো আগে বললে হয়তো অনেক সাহায্য করতে পারতো। ”
দেখতে দেখতে দুদিন পার হয়ে যায়। কিন্তু জনি একবারও অধরাকে কল দেয়নি। এর মধ্যে অধরা অর্ণবকে বারবার জনির খবর জিজ্ঞেস করেছে। কিন্তু তাতেও কোন লাভ হয়নি।
এদিকে আশ্বিনও একটু পর পর কল দিয়ে অধরার খোঁজ নিয়েছে। অধরা হাজার চিন্তিত মন নিয়েও আশ্বিনকে তা বুঝতে দেয়নি।
🌻পরদিন🌻
অধরা কণার রুমে বসে এক ধ্যানে কিছু ভেবে যাচ্ছে। তার পাশে কণা কিছু শাড়ি সিলেক্ট করছে আর অধরার সাথে কথা বলছে।
হঠাত অধরার ফোন বেজে ওঠায় অধরা ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে জনি। অধরা তড়িৎ গতিতে ফোন নিয়ে নিজের রুমে এসে,
— ” হ্যালো জনি ভাইয়া, কোথায় আপনি? কালকে আমি কতোবার ফোন করেছি। ”
— ওপাশ থেকে শান্ত কণ্ঠে, ” ছোট মনি, কাল সারাদিন প্রমাণ খুঁজতে ব্যাস্ত ছিলাম। অনেক কষ্টে সব কিছু জানতে পেরেছি। ”
— ” সত্যি? তাহলে কবরটা কার ছিলো? অনুরিমা মামুনি কেনো সেখানে গিয়েছিলো? ”
— ” বলবো। তবে, ফোনে বলা যাবে না। তুমি সম্ভব হলে এখনি বাসার সামনের ক্যাফেতে চলে আসো। ”
— ” আচ্ছা। আমি এখনি আসছি। ”
অধরা ফোন রেখে জলদি রেডি হয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে আসে।
🌻🌻
অধরা আর জনি কফি শপে মুখোমুখি বসে আছে। জনি অনেকক্ষণ ধরে চুপচাপ বসে আছে। অধরা তার দিকে তাকিয়ে,
— ” জনি ভাইয়া, কি হয়েছে? আপনি কিছু বলছেন না কেনো? ”
— ” ছোট মনি, আসলে,
আমি সত্যিটা জানতে পেরেছি। যদিও অনেক কষ্টে সবকিছু জানতে পেরেছি।
কাল তোমার কথা শোনার পর, প্রথমেই আমি সাথে সাথে কবরস্থানের দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা লোকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম। তারা বলেছে এই কবরটা নাকি বেশ আগের তখন উনারা এখানের দায়িত্বে ছিলেন না। তাই এই কবর সম্পর্কে কিছু জানেন না। তবে এই কবরটা নাকি হঠাত রাতারাতি হয়ে গিয়েছে। কেউ তেমন এর সম্পর্কে জানে না। ”
— ” তারপর…। কিভাবে জানতে পারলেন? ”
— ” উনাদের সাথে কথা বলে যখন আমি চলে আসছিলাম তখন হঠাত একটা বৃদ্ধ লোক এসে জানান, হালিম সাহেব নামক একজন লোকের কথা। যে কিনা বলতে পারবে এই কবরটা কার।
আমি উনার কাছে ঠিকানা নিয়ে সেই অনুযায়ী যাই। কিন্তু দুর্ভাগ্য উনারা তখন সেই এলাকা ছেড়ে অন্য কোথাও চলে গিয়েছিলেন।
আশেপাশের অনেক মানুষদের জিজ্ঞেস করে একটা ধারণা পেয়েছিলাম উনি এখন কোথায় আছেন তাই দেরি না করে সেখানে চলে যাই।
কিন্তু, এতো কষ্টে উনাকে খুঁজে পাওয়ার পরও তেমন লাভ হয়নি। কারণ উনি নাকি একটা এক্সিডেন্টে প্যারালাইস্ড হয়ে গিয়েছেন। কথা বলার ক্ষমতাও উনার নেই। ”
— অধরা আফসোস করে, ” মানে কি? সবটা শুনে তো মনে হচ্ছে কেউ একজন সব তথ্য গোপন রাখতে এসব করছে। ধুর!
যাই হোক, তারপর? ”
— ” আমি যখন হতাশ হয়ে ফিরে আসছিলাম তখন উনার ছেলে এসে জানান সেই কবরটা কার উনি সেটা জানেন।
আমি কারণ জানতে চাইলে বলেছেন, অনেক দিন আগে একজন মহিলা তার বাবার কাছে এসে কবরটার কথা জানতে চেয়েছিলেন। প্রথমে তার বাবা ভয়ে বলতে না চাইলেও পরে মহিলার প্রতি মায়া লাগায় তিনি বলেছেন। আর ফল স্বরূপ সেদিনই তার বাবার এক্সিডেন্ট হয়।
হয়তো মহিলাটা আর কেউ না অনুরিমা ছিলো। ”
— ” কেউ একজন ইচ্ছে করে উনার এক্সিডেন্ট করাননি তো?
অনুরিমা মামুনিও প্রথম এই কবরটা সম্পর্কে জানতো না। এটা কি করে সম্ভব? ”
— ” আমি যখন ছেলেটাকে কবরটা কার জিজ্ঞেস করলাম তখন তার উত্তর আমার মাথার উপর দিয়ে চলে গিয়েছিলো। আমি কোনভাবেই কথাটা বিশ্বাস করতে পারিনি। কিন্তু তারপর সব তথ্য নিয়ে জানতে পারি এটাই সত্যি। ”
— ” কার ছিলো? কে সে? ”
— ” কবরটা,
আকাশ চৌধুরীর। আশ্বিনের বাবার। ”
জনির কথাটা হঠাত করে শুনে অধরা স্তব্ধ হয়ে যায়। মাথায় রক্ত চলাচল যেনো বন্ধ হয়ে গিয়েছে তার।
— অধরা কাপা কণ্ঠে, ” ক..ক..কিহহহ? ”
— ” এটাই সত্য ছোট মনি। ছেলেটা বলেছিলো এই কবর মহিলাটার স্বামী মানে আকাশ চৌধুরীর। ”
— ” আরে জনি ভাইয়া। এটা সম্ভব না। আকাশ চৌধুরী তো লন্ডনে থাকে। সেখানেই উনার বিজনেস সামলে রাখছেন…। ”
— ” এটা মিথ্যা। এই দেখো, আকাশ চৌধুরীর পাসপোর্ট। হ্যা উনি এখানে থেকে পাসপোর্ট চেক করালেও তিনি সেই ফ্লাইট দিয়ে লন্ডনে যায়নি।
লন্ডনে আমি আমার লোক দিয়ে খোঁজ নিয়েছি বাট সেখানে কেউ জানেন না আকাশ চৌধুরীর কথা।
এইযে সব তথ্য এখানে আছে। ”
অধরা কাপা কাপা হাতে ফাইল নিয়ে সব চেক করতে শুরু করে। সবটা দেখে অধরা সোজা হয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে। তার মাথায় কোন কাজ করছে না।
— ” কিভাবে হলো এসব? উনি কিভাবে মারা গেলেন? আর এই কথা অনুরিমা মামুনি কাউকে কেনো বললেননি? ”
— ” খুব সম্ভবত উনাকে খুন করা হয়েছে। আর তাই সব প্রমাণ শেষ করে দিতে সবকিছু করেছেন।
আর আমার মনে হয় অনুরিমা সব জানেন। তাকেও হয়তো কোন এক ভাবে মুখ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে নয়তো উনিও এর সাথে জড়িত।
আমাদের পুলিশকে জানানো উচিত। ”
— ” এখনই বলা যাবে না। কাল অনুরিমা মামুনির সাথে আমি কথা বলবো। তারপর চিন্তা ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ”
— ” ঠিক আছে। ”
অধরা কথাটা বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। আশ্বিনের জন্য খুব খারাপ লাগছে তার। আশ্বিন সবটা জানতে পারলে কতোটা কষ্ট পাবে। আর দাদি, উনাকে কি বলবো? কথাগুলো ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অধরা।
#আমি_তোমার_গল্প_হবো🍁
লেখিকা- মাহিয়া তাহসীন মেরিন
পর্ব:::১৬
অধরা জনির সাথে কথা বলে কফি শপ থেকে বেরিয়ে বাসায় চলে আসে। তারপর কাউকে কিছু না বলে ব্যাগ গুছিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসতেই অধরার মা সামনে আসে,
— ” কিরে কোথায় যাচ্ছিস? ”
— ” আম্মু, আমি বাসায় ফিরে যাচ্ছি। একটা দরকারে এখনি যেতে হবে। আমি পৌঁছে তোমাকে ফোন দিয়ে জানাবো। ”
অধরা কথাটা বলেই দ্রুত বেরিয়ে যায়। অধরার মা কয়েকবার ডাক দিলেও শুনেনি সে। এই মুহূর্তে কোনকিছুই তার মাথায় ঢুকছে না, জনির বলা প্রতিটি কথাই তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।
🌻🌻
অধরা বাসায় এসেই প্রথমে দাদির রুমে চলে আসে। দাদি হঠাত করে অধরাকে দেখে খানিকটা অবাক হয়ে,
— ” ছোট্ট বুড়ি! হঠাত কোন কিছু না বলেই চলে এসেছিস যে! কোন সমস্যা? ”
— অধরা দাদির পাশে বসে জোরপূর্বক হেসে, ” নাহ, এমনিই চলে এসেছি। ভালো লাগছিলো না তাই। ”
— ” কি বলিস? নাকি কেউ কিছু বলেছে তোকে? ”
— ” আরে নাহ। কে কি বলবে? তোমাকে মিস করছিলাম তাই চলে এসেছি। ”
— দাদি মুচকি হেসে, ” হুমমম, বুঝেছি। আমার নাতির মায়ার জড়িয়ে গিয়েছিস। তাই তো বেশি দিন দূরে থাকতে পারলি না।
হুহহ, আমিও কিন্তু এমনই ছিলাম। তোর দাদুকে রেখে বেশিদিন থাকতে পারতাম না, হিহিহি।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে, আমার ছেলেটাও হয়েছে এমন। ছেলেটা অনুরিমাকে খুব ভালোবাসতো। দেখ এখন অনুরিমার জন্য আমাদের সবাইকে ফেলে কিভাবে চলে গেলো।
একবার খোঁজও নেয়নি আমার মা কেমন আছে? আমার ছেলেটা কেমন আছে। তবে, আমার মন বলছে আমার আকাশ একদিন ঠিকই ফিরে আসবে। ”
কথাগুলো বলেই দাদি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আঁড়ালে চোখ মুছে। এদিকে অধরা দাদির কথা শুনে মাথা নিচু করে বসে আছে।
কিভাবে বলবে দাদিকে এই কথা?
— দাদি মুচকি হেসে, ” দেখেছিস আমার কান্ড? তুই এতো দূর থেকে এসেছিস। আর আমি তোকে নিয়ে গল্প জুড়ে দিলাম। যা রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে একটু রেস্ট নাও।
আর, আমি কিন্তু আশ্বিনকে বলবো না তুই এসেছিস। তোরা কি যেন বলিস? হ্যা, সারপ্রাইজ দিবো। ”
অধরা দাদির কথায় মুচকি হেসে রুমে থেকে বেরিয়ে আসে। নিজের রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে জানালার ধারে বেশ কিছুক্ষণ ধরে বসে আকাশের দিকেই তাকিয়ে আছে।
এই মূহুর্তে তার কি করা উচিত? আশ্বিনকে কি সবটা বলে দিবে? তারপর যদি কোন সমস্যা হয়? অধরা এক ধ্যানে কথাগুলো ভেবে যাচ্ছে।
🌻এদিকে🌻
আশ্বিন ফোনে কথা বলতে বলতে রুমে প্রবেশ করে হঠাত অধরাকে দেখে চমকে উঠে। অধরা আশ্বিনের কথা শুনে তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দেয়।
— আশ্বিন অবাক হয়ে অধরার দিকে তাকিয়ে, ” রনি, আমি তোমাকে পরে ফোন দিচ্ছি। ”
আশ্বিন ফোন রেখে দ্রুত গতিতে অধরার কাছে এসে তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। এতোদিন পর যেনো মনের প্রশান্তি ফিরে এসেছে তার। কিছুক্ষণ পর অধরাকে ছেড়ে দিয়ে,
— ” হঠাত না বলেই চলে এসেছো। আমাকে বললেই তো আমি গিয়ে নিয়ে আসতাম। ”
— ” ভালো লাগছিলো না তাই চলে এসেছি। আর আপনার এই অবস্থা হলো কিভাবে?
মনে তো হচ্ছে না ঘুমিয়ে এমন হয়েছে। ”
— আশ্বিন মুচকি হেসে, ” আমি এখন ঠিক আছি। যাই হোক, অনেক ক্লান্ত লাগছে। এক কাপ কফি বানিয়ে দিতে পারবে? ”
— ” হুম। আমি এখনি নিয়ে আসছি। ”
অধরা মুচকি হেসে চলে যায়। আশ্বিন অধরার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়।
কিছুক্ষণ পর অধরা কফি নিয়ে এসে দেখে আশ্বিন বারান্দায় বসে আছে। অধরাকে দেখে মুচকি হেসে পাশে বসতে বলে।
— অধরা কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থেকে, ” আশ্বিন, আমি আপনাকে কিছু বলতে চাই। ”
— আশ্বিন কফির মগে চুমুক দিয়ে, ” হুম, বলো। ”
— ” আসলে, আ…আপনার ব…বাবা…। ”
— আশ্বিন অধরার দিকে তাকিয়ে, ” ড্যাডকে নিয়ে কিছু বলো না, অধরা। আমি চাই না উনাকে নিয়ে কোন কথা বলতে। ”
— ” কিন্তু, আশ্বিন আমার কথাটা তো…। ”
— ” আমি কিছুই শুনতে চাই না অধরা। প্লিজ। ড্যাড আমার সুপারম্যান ছিলো, আমার সাপোর্ট ছিলো।
মায়ের ওই ভুলের জন্য তিনি আমাদের কেনো একা ফেলে চলে গিয়েছেন?
মমের চলে যাওয়ার পর আমার উনাকেই সবথেকে বেশি প্রয়োজন ছিলো। বাট, উনি তা কখনই বোঝেনি। এতোগুলো বছর ধরে একবারও তিনি আমাদের কথা মনে করেনি।
উনি যদি স্বার্থপরের মতো নিজের কথা ভেবে ভালো থাকতে পারে। তাহলে আমিও উনার খোঁজ খবর নিতে চাই না। ”
আশ্বিনের কথা শুনে অধরা চুপ হয়ে যায়। সে চাইলেও আশ্বিনকে সত্যটা বলতে পারেনি।
আশ্বিনের দিকে একনজর তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অধরা।
🌻পরদিন🌻
অনুরিমা বাসা থেকে বের হতেই কেউ একজন তাকে ফোন দেয়। অনুরিমা গাড়িতে বসে ফোন রিসিভ করে…
— ” হ্যালো। কে বলছেন? ”
— ” আমি অধরা। ”
— অনুরিমা অবাক হয়ে, ” তুমি? হঠাত ফোন দিয়েছো? ”
— ” আপনার সাথে আমার কথা আছে। অনেক জরুরি। এখনি সেই ক্যাফেতে চলে আসুন। ”
কথাটা বলেই অধরা কোন কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ফোন কেটে দেয়। অনুরিমা কিছুক্ষণ চিন্তা করে অবশেষে ক্যাফেতে চলে আসে।
🌻🌻
— অনুরিমা অধরার সামনে বসে, ” বলো কেনো ডেকে এনেছো? কি বলবে তুমি? ”
— অধরা অনুরিমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে, ” এতো বড় একটা সত্যি লুকিয়ে কিভাবে পারেন আপনি রাতে নিশ্চিতে ঘুমাতে? ”
— ” মানে? এসব কি বলছো তুমি? মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে? ”
— অনুরিমার কথায় অধরা হালকা হেসে, ” হুম আমার মাথা খারাপ।
সত্যিটা জানার পর থেকে আমি ঠিক মতো নিশ্বাসও নিতে পারছি না। আর আপনি দিনের পর দিন কিভাবে এইসব লুকিয়ে গিয়ে ভালো আছেন? ”
— ” অধরা! যা বলবে স্পষ্ট করে বলো। আমি এখানে এসব আজগুবি গল্প শুনতে আসিনি। বুঝেছি তোমার কিছুই বলার নেই, আমি যাচ্ছি। ”
— ” সেদিন বড় মসজিদের সামনের কবরস্থানে কেনো গিয়েছিলেন আপনি? কার কবর জিয়ারত করতে গিয়েছিলেন? ”
— হঠাত অধরার কথা শুনে অনুরিমা চমকে উঠে, ” ক..কিহহহ? এ..এসব কি বলছো? আ…আমি কেনো সেখানে যাবো? ”
— ” আমি নিজ চোখে দেখেছি আপনাকে। আর এখন মিথ্যে বলে কোন লাভ নেই। কারণ আমি সব সত্যি জানি। সব প্রমাণও আছে আমার কাছে। ”
অধরার কথা শুনে অনুরিমা স্তব্ধ হয়ে যায়। সে কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না।
— কাঁপা কণ্ঠে, ” আ…আশ্বিনও কি সবটা জানে? ”
— ” নাহ। তবে আমি তাকে খুব শীঘ্রই সব সত্যি বলে দিবো। ”
অনুরিমা মাথা নিচু করে অধরার কথাগুলো শুনে শান্ত কণ্ঠে বললো,
— ” বলো না এই কথাগুলো আশ্বিনকে। সে সহ্য করতে পারবে না। ”
— ” হুহহহ। আমি সত্য গোপন রেখে আশ্বিনকে আর অন্ধকারে রাখতে পারবো না।
আশ্বিন তার বাবাকে ঘৃণা করে। মানুষটা মৃত্যুর পরও, দোষ না করেও ছেলের কাছে দোষী হয়ে আছেন। আর আপনি?
এই সব কিছু আপনার জন্য হয়েছে। আপনার জন্য একজন মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে, আশ্বিনকে এতিম হতে হয়েছে আর দাদিকে…।
হুহহ, তারা কেউ তো এই সত্যি জানেই না।
এতোগুলো জীবন নষ্ট করে আপনি কিভাবে শাহিন হাসাদের সাথে সুখে সংসার করছেন? তিনি একজন খুনী। আপনি জানেন এসব। সব কিছু জানেন আপনি।
আমার তো মনে হচ্ছে, আপনিও আকাশ চৌধুরীর খুনের জন্য দায়ী। আপনারা দুজন মিলে প্লান করে আকাশ চৌধুরীকে হত্যা করেছেন। ”
— ” এনাফ অধরা। অনেক বলেছো তুমি। না জেনে কোন কথা বলবে না।
হ্যা মানছি আমি ভুল করেছি।
আর সবকিছুর জন্য আমি দোষী। আমার লোভের জন্যই হয়তো এসব হয়েছে।
আমিও চেয়েছিলাম ভালো থাকতে। শাহিন ভালোবাসার মিথ্যা অভিনয় করে আমার চোখে পর্দা পড়িয়ে দিয়েছিলো। ভেবেছিলাম আমি ভালো থাকবো তাই নিজ ভুলে আকাশকে ছেড়ে চলে যাই। আর দেখো, কতো বড় শাস্তি পাচ্ছি আমি। ”
— অধরা কিছুক্ষণ চুপ থেকে, ” সব কিছু খুলে বলুন আমাকে। আমি সত্যিটা জানতে চাই। ”
— অনুরিমা চোখের পানি মুছে একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে,
” আকাশের বিজনেসে যখন একের পর এক সমস্যা আসতে শুরু করে, তখন আমার আর আকাশের মাঝে দূরত্ব তৈরি হয়। আর তখন শাহিন আমার কাছে তার ভালোবাসার মিথ্যা অভিনয় প্রকাশ করে। আমিও তার ফাঁদে পা দিয়ে ভুল করি। হঠাত একদিন আকাশ বুঝতে পারে আমি শাহিনকে পছন্দ করি। আর সেদিনই আমি আকাশের সাথে ঝগড়া করে বাসা ছেড়ে চলে যাই।
আকাশ অনেক বার এসেছিলো আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে কিন্তু আমি যাইনি। আমার ছোট্ট আশ্বিনও এসেছিলো, আমার হাত ধরে কাঁদতে কাঁদতে অনেক অনুরোধ করেছিলো। কিন্তু আমি ফিরে যাইনি। কতোটা অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম আমি। ”
কথাগুলো বলে একটা দীর্ঘশ্বাস নেয় অনুরিমা। অধরা এক ধ্যানে অনুরিমার সব কথা শুনছে।
— অনুরিমা আবার বলতে শুরু করে, ” আর তারপর, সেদিন বিয়েতে…..। ”
—চলবে❤
—চলবে❤