#আমি_তোমার_গল্প_হবো🍁
লেখিকা- মাহিয়া তাহসীন মেরিন
পর্ব:::২১
দেখতে দেখতে প্রায় একমাস পার হয়ে যায়। অধরার আজ শেষ পরীক্ষা।
আশ্বিন অধরাকে কলেজে পৌঁছে দিয়ে দ্রুত অফিসে চলে আসে।
কিছুক্ষণ পর ফাহাদ আর জনি তার রুমে এসে,
— ” স্যার, আমরা আপনার ডিটেইলস অনুসারে উনাকে অনেক খুঁজেছি বাট আমরা কোথাও উনাকে খুঁজে পাইনি।
আমার মনে হয় আপনার মা আমাদের মিথ্যে কথা বলেছে। ”
— আশ্বিন চেয়ারে হেলান দিয়ে, ” যদি কথাটা মিথ্যাও হয় তাহলেও নানাভাই এখন কোথায় আছেন? উনি তো আর এভাবে নিখোঁজ হয়ে যাবেন না। ”
— জনি কিছু একটা ভেবে, ” আমার মনে হয় আপনার নানাভাই এখানে নেই। আমরা এতোদিন ধরে যেটা জেনে এসেছি মানে, আপনার নানাভাই ইতালি আছেন।
আমার মনে হয় সেখানে একবার চেক করা দরকার। হয়তো এতোদিন ধরে আমরা বিনা কারণে পরিশ্রম করে এসেছি। হয়তো আপনার মা নিজের ভুল ঢাকতে এই মিথ্যা কথাটা বলেছে। ”
— আশ্বিন কিছুক্ষণ ভেবে, ” আমারও মনে হয় তুমি ঠিক বলছো জনি। আমাদের উচিত সেখানে একবার খোঁজ নেওয়া। তবে আমি চাই বিষয়টা যেনো গোপন থাকুক। ”
— ” ডোন্ট ওয়ারি স্যার। আমরা বিষয়টা হেন্ডেল করছি। ”
ফাহাদের কথা শুনে আশ্বিন মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।
🌻🌻
অধরা পরীক্ষা দিয়ে বাসায় এসেই দাদির রুমে চলে আসে।
— দাদি মুচকি হেসে, ” ছোট্ট বুড়ি চলে এসেছিস? পরীক্ষা কেমন হয়েছে? ”
— ” পরীক্ষা আলহামদুলিল্লাহ ভালোই হয়েছে দাদি। কিন্তু আমার মন ভালো নেই। ”
— ” কেনো? তোর আবার কি হলো? ”
— ” কতোদিন হয়ে গেলো আমি কোথাও ঘুরতে যাই না।
এই চার দেয়ালের মাঝেই আমার জীবন সীমাবদ্ধ। এই কষ্ট চোখে দেখা যায় নাকি? ”
— দাদি মুচকি হেসে, ” তাহলে আশ্বিনকে বলে কিছুদিন নাহয় ঘুরে আয়। ”
— ” হুম বলতেই হবে। আমি আজই বাসায় চলে যাবো। ”
তখনি রুমে আশ্বিন প্রবেশ করে,
— ” না, বাসায় যেতে পারবে না তুমি। ”
আশ্বিনের কথা শুনে অধরা আর দাদি আশ্বিনের দিকে ফিরে তাকায়।
— অধরা মুখ ফুলিয়ে, ” কেনো যেতে পারবো না আমি? ”
— ” কারণ কাল আমরা তিনজন ইতালি যাচ্ছি। ”
হঠাত আশ্বিনের কথাটা শুনে অধরা আর দাদি হা হয়ে যায়। দুজন চোখ বড় বড় করে একে অপরের দিকে তাকায়।
— অধরা অবাক হয়ে, ” কিহহ? হঠাত ইতালি যাচ্ছি কেনো? ”
— আশ্বিন স্বাভাবিক কণ্ঠে, ” বিজনেসের কাজে আর সাথে ঘুরতে যাচ্ছি।
কেনো? তুমি যেতে না চাইলে থাকতে পারো, আমি আর দাদি চলে যাবো। ”
— অধরা খুশিতে এক লাফ দিয়ে উঠে, ” আমি এখনি যাচ্ছি, ব্যাগটা গুছিয়ে ফেলি। ”
কথাটা বলেই অধরা দৌড়ে রুমে চলে আসে। দাদি অধরার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে,
— ” কি ব্যাপার আশ্বিন? হঠাত আজ ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান করলি…। ”
— আশ্বিন মুচকি হেসে, ” আরে তেমন কোন কারণ নেই। অনেক দিন হয়ে গেলো একসাথে ঘুরতে যাই না। আজ হঠাত বিজনেসের কাজে ইতালি একটা মিটিং ডাকায় ভাবলাম তোমাদেরকেও সাথে নিয়ে যাই। ”
— ” খুব ভালো করেছিস। কিন্তু আমাকে নেওয়ার দরকার নেই। তুই বরং অধরাকে নিয়ে ঘুরে আয়।
আমি নাহয় ততোদিন ভাইয়ের বাসায় ঘুরে আসি। ”
— ” না দাদি। এটা কেমন কথা? তোমার কি মনে হয়? আমি তোমাকে একা রেখে নিশ্চিন্তে থাকতে পারবো? ”
— ” আরে আমি ঠিক আছি…। ”
— আশ্বিন রাগ দেখিয়ে, ” নাহহ। আমি কোন কথা শুনতে চাই না। তুমিও আমাদের সাথে যাচ্ছো। আমি কোন রিক্স নিতে চাই না। ”
— দাদি মুচকি হেসে, ” আচ্ছা বাবা ঠিক আছে। আমিও যাবো তোদের সাথে। ”
আশ্বিন দাদির কথা শুনে মুচকি হেসে মনে মনে, ” সরি দাদি। তোমার উপর রাগ করার জন্য। আমি চাই না তোমাদের এখানে একা রেখে যেতে, যদি শাহিন তোমাদের ক্ষতি করে দেয়…। ”
কথাটা ভেবে আশ্বিন নিজের রুমে প্রবেশ করে দেখে অধরা নাচতে নাচতে ব্যাগ গুছিয়ে রাখছে। অধরার অবস্থা দেখে আশ্বিন মুচকি হেসে,
— ” এতো খুশি খুশি লাগছে কেনো…? ”
— অধরা একনজর তাকিয়ে, ” খুশি হবো না? আমরা ইতালি যাচ্ছি…।
অনেক ঘুরবো, শপিং করবো। কতো মজা হবে। ”
অধরার কথা শুনে আশ্বিন মুচকি হেসে খাটে হেলান দিয়ে শুয়ে পড়ে। এদিকে অধরা ব্যাগ গোছাতে গোছাতে বকবক করেই যাচ্ছে। আর আশ্বিন ঘোর লাগা দৃষ্টিতে অধরার দিকে তাকিয়ে আছে।
🌻পরদিন🌻
আশ্বিন অধরা আর দাদি একসাথে এয়ারপোর্টে বসে আছে, কিছুক্ষণ পর তাদের ফ্লাইট। অধরা আর দাদি খুশি মনে একসাথে গল্প করছে আর আশ্বিন একটু দূরে দাঁড়িয়ে ফাহাদকে কল দিয়ে,
— ” ফাহাদ, সব ঠিকঠাক আছে তো? ”
— ” জি স্যার। আমরা সবকিছু চেক করে রেখেছি। আপনার নানাভাই যে বাসায় থাকতো এবং উনার সকল আত্নীয়ের বাসার ঠিকানা আমি আপনাকে পাঠিয়ে দিচ্ছি। আর এখানেও বিষয়টা আমি আর জনি ভাই মিলে হ্যান্ডেল করছি। আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন। ”
— ” ঠিক আছে। আমি পৌঁছে আবার ফোন দিবো। ”
কথাটা বলে আশ্বিন ফোন রেখে দেয়। তারপর অধরা আর দাদিকে নিয়ে ফ্লাইটে এসে বসে। অধরার খুশি তার চোখ মুখে ফুটে উঠেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদের ফ্লাইট টেক অফ করে। অধরা অনেকক্ষণ ধরে দাদির সাথে গল্প করতে করতে এক পর্যায়ে দুজনেই ঘুমিয়ে পড়ে। আশ্বিন তাদের পাশে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে।
🌻🌻
এয়ারপোর্ট থেকে বের হতেই কয়েকজন গার্ড আশ্বিনের কাছে এসে তাদের একটা বড় গাড়িতে করে হোটেলে নিয়ে আসে।
অধরা কোনরকম হোটেল রুমে প্রবেশ করেই ধপ করে খাটে শুয়ে মূহুর্তেই ঘুমিয়ে পড়ে।
আশ্বিন গার্ডদের সাথে কথা বলে দাদিকে পাশের রুমে দিয়ে এসে নিজের রুমে প্রবেশ করে দেখে অধরা গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে।
— ” এতো ঘুম কোথা থেকে আসে তার? দেখো এখনো চেঞ্জও করেনি, এভাবেই ঘুমিয়ে পড়েছে…। ”
আশ্বিন অধরার কাছে গিয়ে একটা কম্বল দিয়ে দেয়। তারপর ফোন হাতে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে পড়ে।
জনির পাঠানো ঠিকানা অনুযায়ী আশ্বিন তার নানাভাইয়ের বাসার সামনে এসে দেখে দরজায় তালা দেওয়া। সে পাশের বাড়িতে কাউকে ডেকে…
— আশ্বিন ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করে, ” হ্যালো। আচ্ছা, আপনি কি বলতে পারবেন এখানে মিস্টার আহমেদ নামের একজন থাকতেন। তিনি এখন কোথায় আছেন? ”
— ” মিস্টার আহমেদ তো এখানেই থাকতেন। কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরেই উনাকে এখানে দেখি না। হয়তো উনি দেশে ফিরে গিয়েছেন। আমি উনার সম্পর্কে তেমন কিছু জানি না। ”
— আশ্বিন কিছুক্ষণ চুপ থেকে, ” আচ্ছা ঠিক আছে। ধন্যবাদ আপনাকে। ”
আশ্বিন আশেপাশের অনেককেই নানাভাইয়ের কথা জিজ্ঞেস করে। কিন্তু কোন লাভ হয় না। অবশেষে বিফল হয়ে হোটেলে ফিরে আসে।
— আশ্বিন বারান্দায় বসে বাহিরে তাকিয়ে, ” নানাভাইকে তো কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না। আমার এখন কি করা উচিত? নানাভাই হয়তো বলতে পারবেন আমার বাবার খুনের আসল অপরাধী কারা।
আই নিড ইউ নানাভাই। কোথায় আছো তুমি? ”
কথাটা বলে চোখ বন্ধ করে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে থাকে।
🌻সকালে🌻
আশ্বিন রেডি হচ্ছে মিটিং-এর জন্য। অধরা তার পাশে সোফায় বসে নাস্তা করছে আর আড়চোখে আশ্বিনকে দেখছে।
— অধরা আফসোস করে, ” ভেবেছিলাম সকালে একসাথে নাস্তা করবো বাহিরে গিয়ে। কি দরকার ছিল এতো সকাল সকাল মিটিং রাখার? ”
— আশ্বিন রেডি হতে হতে, ” মিটিংটা অনেক ইমপরটেন্ট অধরা। তুমি আর দাদি রেডি হয়ে থাকো। আমি মিটিং শেষ করেই তোমাদের ঘুরতে নিয়ে যাবো। ”
অধরা আশ্বিনের কথা শুনে গাল ফুলিয়ে বসে খেতে শুরু করে। তা দেখে আশ্বিন মুচকি হেসে অধরার সামনে হাটু গেড়ে বসে,
— ” এভাবে রাগ করে থাকলে তো আমি মিটিয়ে গিয়ে মনোযোগ দিতে পারবো না। আফটার অল একটা মাত্র পিচ্চি বউ আমার। ”
অধরা কথাটা শুনে অন্যদিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দেয়। তা দেখে আশ্বিনও মুচকি হেসে অধরার কপালে চুমু খেয়ে রুম থেকে বেরিয়ে পড়ে।
অধরা আশ্বিনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দাদির রুমে চলে আসে।
#আমি_তোমার_গল্প_হবো🍁
লেখিকা- মাহিয়া তাহসীন মেরিন
পর্ব:::২২
আশ্বিন মিটিং শেষ করে ঘন্টা দুয়েক পর ফিরে এসে দেখে অধরা রেডি না হয়ে দাদির সাথে বসে আছে।
— আশ্বিন তাদের কাছে গিয়ে, ” কি ব্যাপার?
তোমাদের না বলে গেলাম আমি মিটিং থেকে এসেই একসাথে ঘুরতে বের হবো। তাহলে তোমরা এখনও রেডি হওনি কেনো? ”
— অধরা গাল ফুলিয়ে, ” আশ্বিন দেখুন দাদি আমাদের সাথে যেতে চাইছে না। আমি দাদিকে রেখে কোথাও যাবো না। ”
— অধরার কথা শুনে আশ্বিন দাদির পাশে বসে, ” কি হয়েছে দাদি? তোমার শরীর খারাপ লাগছে?
আমি ডাক্তার ডেকে আনছি…। ”
কথাটা বলেই আশ্বিন উঠে যেতে নিতেই দাদি আশ্বিনের হাত ধরে ফেলে,
— ” আরে আরে…আমি একদম ঠিক আছি। এতো হাইপার হয়ে যাচ্ছিস কেনো? ”
— অধরা গাল ফুলিয়ে, ” তাহলে কেনো যেতে চাইছো না আমাদের সাথে? ”
— দাদি অধরার গাল আলতো করে টেনে ধরে, ” পাগলী মেয়ে একটা!
কাল এতোটা সময় ধরে জার্নি করে এসেছি তো তাই একটু পায়ে ব্যাথা করছে। একটু রেস্ট নিলেই ঠিক হয়ে যাবে। ”
— আশ্বিন দাদির কথা শুনে, ” তোমার পায়ে ব্যথা করছে আমাদের আগে কেনো বললে না?
অধরা হালকা গরম তেল নিয়ে এসো, পায়ে মালিশ করলে ভালো লাগবে। ”
অধরা আশ্বিনের কথা শুনে মাথা নেড়ে চলে যায়। দাদি অধরার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে,
— ” দাদুভাই এসবের কোন দরকার নেই। আমি তো বললাম আমি ঠিক আছি। ”
আশ্বিন দাদির কথা শুনে দাদির দিকে তাকিয়ে চুপ করে থাকে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই অধরা একটা ছোট পাত্রে তেল নিয়ে আসে। আশ্বিনকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই অধরা তার দিকে তাকিয়ে,
— ” আশ্বিন আপনি রুমে চলে যান। আমি আছি দাদির সাথে। ”
আশ্বিন একনজর দাদির দিকে তাকিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই অধরা দাদির পায়ে তেল মালিশ করতে শুরু করে। দাদি মুচকি হেসে অধরার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
🌻বিকেলে🌻
অধরা আর আশ্বিন একসাথে ঘুরতে বের হয়। মুলত দাদির জোরাজুরিতেই তারা রাজি হয়েছে।
আশ্বিন আসার আগে কয়েকজন গার্ডকে দাদির রুমের সামনে কড়া পাহারা দিতে বলে আসে।
অধরার বাহিরে আসার পর থেকেই মুখে একটা মিষ্টি হাসি লেগে আছে। আশ্বিন মুগ্ধ নয়নে অধরার দিকে তাকিয়ে আছে।
অধরা শক্ত করে আশ্বিনের হাত ধরে রেখে পাশাপাশি হাঁটছে। আশেপাশে অনেক মানুষ তাদের প্রিয়জনদের নিয়ে ঘুরতে এসেছে।
অধরা আর আশ্বিন একসাথে অনেকগুলো ছবি তোলে।
হঠাত আশ্বিনের জরুরি কল আসায় সে অধরাকে হোটেলে নামিয়ে দিয়ে দ্রুত চলে যায়।
অধরা হোটেল রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে বরান্দায় বসে রাতের শহরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে থাকে।
🌻এদিকে…..
আশ্বিন নিদিষ্ট ঠিকানায় এসে গাড়ি থামিতেই দুজন গার্ড তার সামনে আসে।
— আশ্বিন তাদের উদ্দেশ্যে, ” তোমরা কি শিওর নানাভাই এখানে থাকতে পারে? ”
— ” স্যার, মিস্টার আহমেদের পুরনো ডিটেইলস অনুসারে এই বাগানবাড়িতে তিনি প্রায়ই সময় কাটাতে আসতেন। হয়তো উনি এখানেই থাকতে পারেন। ”
— ” ঠিক আছে। চলো খোঁজ নিয়ে দেখি। ”
আশ্বিন কথাটা বলে বাগানবাড়ির দিকে এগিয়ে গিয়ে দেখে বাড়িটা অনেক পুরনো, হয়তো অনেকদিন এখানে কেউ আসেনি।
আশ্বিন তবুও বাড়িতে অনেকবার নক করে, কিন্তু কেউ নেই।
হঠাত পাশের বাড়ি থেকে একজন বয়স্ক লোক তাদের সামনে এসে,
— ” তোমরা কাকে চাও বাবা? এখানে কি করছো? ”
— আশ্বিন উনার কাছে গিয়ে, ” দাদু, এটা কি মিস্টার আহমেদের বাড়ি? তিনি কি এখানে থাকেন? ”
— ” হ্যা। এটা আহমেদের বাড়ি। কিন্তু তুমি কে? তোমাকে তো ঠিক চিনতে পারলাম না। ”
— ” আমি আশ্বিন, আশ্বিন চৌধুরী। আহমেদ খান আমার নানাভাই। ”
— ” ওহ, আশ্বিন? তোমার কথা আহমেদের কাছে অনেক শুনেছিলাম। তখন তুমি অনেক ছোট ছিলে। ”
— আশ্বিন খুশি হয়ে, ” নানাভাই কি এখানে থাকেন? উনি কোথায় আছে কিছু জানেন আপনি? ”
হঠাত প্রশ্নটা করায় লোকটা চুপ হয়ে যায়। তারপর আশেপাশে একবার তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,
— ” বাসায় এসো। তোমার সাথে কথা আছে। ”
কথাটা বলে লোকটা বাসার ভেতর ঢুকে পড়ে। আশ্বিন কিছু একটা ভেবে লোকটার পিছু পিছু প্রবেশ করে।
🌻🌻
অনেক রাত হয়ে যাওয়ার পরও আশ্বিন ফিরে না আসায় অধরার অনেকটা টেনশনে পড়ে যায়। দাদিকে কিছু একটা বুঝিয়ে খাবার খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে রুমে এসে বসে থাকে। কিন্তু আশ্বিনের ফিরে আসার কোন নাম নেই।
অধরা আশ্বিনের ফোনে একের পর এক ফোন করে যাচ্ছে কিন্তু আশ্বিন ফোন রিসিভ করে না। অধরার হঠাত ভয় লাগতে শুরু করে।
— ” আশ্বিন কোথায় আছেন আপনি? আমি এখন কোথায় খুঁজবো আপনাকে?
গার্ডদের সাহায্য নিয়ে দেখি…। ”
কথাটা বলেই অধরা দরজার কাছে আসতেই দেখে আশ্বিন হোটেলে প্রবেশ করছে। অধরা ভ্রু কুঁচকে আশ্বিনের দিকে তাকাতেই আশ্বিন অধরার দিকে মুখটা কালো করে তাকিয়ে রুমে চলে আসে। অধরাও তার পিছু আসে।
— ” আশ্বিন, কি হয়েছে? এতোক্ষণ কোথায় ছিলেন আপনি? জানেন আমি কতো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। আপনি এভাবে চলে গেলেন। ”
অধরার এতো কথার উত্তর না দিয়ে আশ্বিন চুপচাপ ফ্রেশ হতে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর বের হয়ে এসে বারান্দায় এসে বসে।
অধরা এতোক্ষণ আশ্বিনের কাজগুলো দেখছিলো। সেও আশ্বিনের পিছু পিছু বারান্দায় বসে শান্ত কণ্ঠে,
— ” আশ্বিন, কি হয়েছে? ”
— আশ্বিন অধরার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে, ” অধরা, আমি তোমাকে একটা মিথ্যা বলেছিলাম।
আমি ইতালি মূলত নানাভাইকে খুঁজতে এসেছি। ”
— অধরা শান্ত ভাবে তাকিয়ে, ” আমি জানি। আমার আগেই সন্দেহ হয়েছিলো।
আপনি কি এখন নানাভাইকে খুঁজতেই গিয়েছিলেন? ”
অধরার কথা শুনে আশ্বিন মাথা নেড়ে হ্যা বোঝায়।
— ” কোন খবর পেয়েছেন নানাভাইয়ের? ”
অধরার কথা শুনে আশ্বিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাথা নেড়ে হ্যা বোঝায়।
🌻ফ্ল্যাশব্যাক🌻
আশ্বিন লোকটার পিছু পিছু তার বসার রুমে আসে।
— লোকটা সোফায় বসে, ” এখানে বসো। ”
— আশ্বিন চুপচাপ বসে চারদিকে একবার চোখ বুলিয়ে, ” আপনি কি বাসায় একা থাকেন? না মানে, আর কাউকে দেখছি না। ”
— ” আছে। আমার ছেলে তার স্ত্রী সন্তান নিয়ে একটু আগেই ঘুরতে বেরিয়েছে। ”
— ” ওহ আচ্ছা। ”
— ” হুম।
আমার নাম কামাল। আহমেদ আমার বন্ধু। ইতালিতে আসার প্রথম দিকে আমরা একসাথে বিজনেস করি। তখন থেকেই আমাদের পরিচয়।
তোমার নানাভাই খুব ভালো একজন মানুষ। তোমার বাবার আর তোমার কথা প্রায়ই আমাদের বলতেন।
কয়েকবছর আগেই হঠাত গভীর রাতে আমাদের বাসায় এসেছিলো। কেমন যেন অদ্ভুত লাগছিলো আমার কাছে বিষয়টা। অনেক বার জানতে চাওয়ায় শুধু বলেছিলো
“আকাশকে তারা মেরে ফেলেছে, আমাকেও মেরে ফেলতে চাইছে। আমি অনেক কষ্টে পালিয়ে এসেছি।”
সেদিন রাতে আমাদের সাথে কথা বলে নিজের বাড়িতে চলে যায়। আর পরদিন সকালে একটা গাড়িতে করে কয়েকজন লোক এসে আহমেদকে খুঁজতে শুরু করে। কিন্তু আহমেদ সেখানে ছিলো না, হয়তো আগেই চলে গিয়েছিলো।
তারা আহমেদকে না পেয়ে আমাদের অনেকবার জিজ্ঞেস করেছিলো সে কোথায় আছে। বলতে না পারায় আমাদের বাসায় অনেক ভাঙচুরও করে। ”
— আশ্বিন সবটা শুনে, ” নানাভাই কোথায় গিয়েছিলো কিছু জানেন?
তিনি কি কিছু বলে গিয়েছেন আপনাকে? ”
— ” তেমন কোন কথা সেদিন আমাদের হয়নি। আকাশকে কে মেরেছে, কার ভয়ে আহমেদ পালিয়ে বেড়াচ্ছে এসব জানি না।
তবে আহমেদ বারবার একটা ঠিকানা বলেছিলো। আমি শিওর না তবে, হয়তো সে এই ঠিকানায় থাকতে পারে। ”
— আশ্বিন শান্ত কণ্ঠে, ” কোথায়…? ”
লোকটা উঠে গিয়ে তার রুমে যেয়ে একটা ডাইরি নিয়ে এসে আশ্বিনের সামনে ধরে। আশ্বিন ডায়রির দিকে একনজর তাকিয়ে লোকটার দিকে ফিরে তাকায়।
— ” অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। ইনশাল্লাহ এবার নানাভাইকে আমি খুঁজে পাবো। ”
কথাটা বলেই আশ্বিন বেরিয়ে পড়ে।
🌻বর্তমান🌻
— অধরা সবটা শুনে, ” তাহলে তো আমাদের নানাভাইয়ের খোঁজে এখনি যাওয়া উচিত। আর দেরি করা ঠিক হবে না আশ্বিন।
বাই দ্য ওয়ে, কোথায় আছেন নানাভাই? ”
অধরার কথা শুনে আশ্বিন তার দিকে ফিরে তাকায়।
—চলবে❤
—চলবে❤