আমি তোমার গল্প হবো পর্ব -২৩+২৪

#আমি_তোমার_গল্প_হবো🍁
লেখিকা- মাহিয়া তাহসীন মেরিন
পর্ব:::২৩

🌻পরদিন🌻

অধরা আর আশ্বিন সকাল সকালই সেই ঠিকানা অনুসারে চলে এসেছে নানাভাইয়ের খোঁজে।

অসম্ভব সুন্দর একটা গ্রাম, চারদিক গাছপালায় ঘেরা। অধরা আশ্বিনের দিকে একবার তাকিয়ে,

— ” আশ্বিন, আপনি শিওর এখানে নানাভাই থাকতে পারে? ”

— আশ্বিন কিছুক্ষণ চুপ থেকে, ” আমি জানি না, অধরা।
আশা করি নানাভাইকে খুঁজে পাবো। ”

অধরা মাথা নেড়ে হ্যা বোঝায়। তারপর আশ্বিনের হাত ধরে হাঁটতে থাকে।
গ্রামটা ছোট থাকায় সেখানে ঘরবাড়ি কম, তাই অধরা আর আশ্বিন প্রতিটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে নানাভাইয়ের খোঁজ নিতে থাকে।

কিন্তু কেউই আহমেদ নামের কাউকে এই গ্রামে দেখেননি।
অবশেষে আশ্বিন হতাশ হয়ে একটা ছোট দোকানের সামনে বসে পড়ে। অধরা আশ্বিনের পাশে বসে,

— ” আশ্বিন, এভাবে ভেঙে পড়বেন না। আমরা নানাভাইকে খুব শীঘ্রই পেয়ে যাবো, ধৈর্য ধরুন। ”

আশ্বিন কিছু না বলে চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে থাকে। অধরা আশ্বিনের মন খারাপ বুঝতে পেরে আশ্বিনের হাত ধরে তাকে সান্ত্বনা দিতে থাকে।
কিছুক্ষণ পর আশ্বিন স্বাভাবিক হয়ে বসে অধরার দিকে তাকিয়ে,

— ” অনেকটা সময় হয়ে গিয়েছে আমরা এখানে এসেছি।
তুমি তো সকালে কিছু না খেয়েই আমার সাথে চলে এসেছো।
এখানে হয়তো আর ভালো কোন দোকান নেই, এই দোকানে যা পাওয়া যাই তাই খেতে হবে। চলো। ”

কথাটা বলে আশ্বিন উঠে দাঁড়িয়ে অধরার হাত ধরে দোকানের ভেতর এসে বসে। দোকানটা ছোট হলেও ভেতরে খুব সুন্দর করে সাজানো গোছানো। নিত্যদিনের সাধারণ খাবারগুলোই এখানে পাওয়া যায়।

আশ্বিন অধরাকে নিয়ে একটা বেঞ্চে এসে বসে। বেশ কিছুক্ষণ ধরে বসে থাকার পর একজন বৃদ্ধ লোক তাদের সামনে এসে,

— ” আমি দুঃখিত বাবা। একটু ব্যস্ত ছিলাম তাই দেরি হয়ে গেলো।
বলুন আপনারা কি খেতে চান? ”

আশ্বিন এতোক্ষণ চোখ বন্ধ করে মাথা নিচু করে বসে ছিলো। হঠাত কথাটা কানে আসতেই ধীরে ধীরে চোখ খুলে পাশে ফিরে তাকাতেই অবাক হয়ে যায় সে।
অধরা স্বাভাবিক ভাবেই বসে আছে আর আশ্বিনের কিছু বলার অপেক্ষা করছে।

এদিকে আশ্বিন অবাক হয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে কাপা কণ্ঠে,

— ” ন…ন…নানাভাই ! ”

বৃদ্ধ লোকটা এতোক্ষণ স্বাভাবিক ভাবে থাকলেও আশ্বিনের কথা শুনে চমকে উঠে। নিজের মোটা ফ্রেমের চশমা দিয়ে ভালোভাবে কিছুক্ষণ আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠেন তিনি।

— ” আ..আশ্বিন? আমার ছোট আশ্বিনটা কি তুমি? ”

নানাভাইয়ের কথা শুনে আশ্বিনের চোখ থেকে অজান্তেই পানি পড়ে যায়। সে মুচকি হেসে মাথা নেড়ে হ্যা বোঝায়। নানাভাই আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে চোখ মুছে আশ্বিনকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।
এদিকে অধরা নিরব হয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। অবশেষে তাহলে নানাভাইকে খুঁজে পেয়েছে তারা। ভাবতেই একটা মুচকি হাসি দেয় অধরা।

🌻🌻

অধরা আর নানাভাই রুমের একটা বেঞ্চে বসে আছে আর আশ্বিন জানালার সামনে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।

বৃষ্টির জন্য গ্রামের পরিবেশটা আরো বেশি সতেজ লাগছে। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য যেনো এই ছোট্ট গ্রামের, এই ছোট্ট কুটিরেই ফুটে উঠেছে।
আশ্বিন কিছুক্ষণ জানালার পাশে দাঁড়িয়ে তারপর ধীরে ধীরে নানাভাইয়ের সামনে এসে,

— ” তুমি এতোগুলো বছর ধরে এখানে লুকিয়ে ছিলে নানাভাই? ”

— ” হ্যা, বাবা। অনেক কষ্টে নিজেকে এই ছোট্ট কুটিরে আত্মগোপন করে রেখেছি। নয়তো কে জানে কি হতো…। ”

— আশ্বিন নানাভাইয়ের পাশে বসে, ” আমাকে সব ঘটনা খুলে বলো নানাভাই।
যদিও আমি অনুরিমার বলা একটা কাহিনী জানি। তবুও তার সততা যাচাই করতে তোমার কাছে শুনতে চাই। ”

অধরা এতোক্ষণ চুপচাপ তাদের পাশে বসে তাদের কথাগুলো শুনছে। নানাভাই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে,

— ” আকাশকে তারা মেরে ফেলেছে আশ্বিন। আমার চোখের সামনেই মেরে ফেলেছে। আমি কিছুই করতে পারিনি, বাবা।

তারা আমাকেও মেরে ফেলতে চেয়েছিলো। কারণ আমি বলেছিলাম তাদের পুলিশে দিবো।
তারা আমার জীবনটা শেষ করে দিয়েছে আশ্বিন। ”

— অধরা অবাক হয়ে, ” তারা মানে? কে কে ছিলো নানাভাই? ”

— আশ্বিন রাগী কণ্ঠে, ” আর কে হবে? শাহিন আর অনুরিমা। ”

আশ্বিনের কথা শুনে নানাভাই চোখ মুছে চোখে চশমা লাগিয়ে,

— ” অনুরিমাকে দোষ দিচ্ছো কেনো আশ্বিন?
জানি তারও দোষ আছে। কিন্তু অনুরিমার আকাশকে মেরে ফেলায় হাত নেই। ”

— অধরা আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে, ” শুধুমাত্র একটা বিজনেসের লিড হওয়ার জন্য কিভাবে একজনকে মেরে ফেললো তারা? ”

— নানাভাই অধরার দিকে তাকিয়ে, ” বিষয়টা শুধু বিজনেস রিলেটেড ছিলো না, মা। এখানে অনেক বড় একটা কারণ আছে।

শাহিন শুধু মাত্র আমাদের বিজনেস প্রতিপক্ষ না, আমার বড় মেয়ে অবণীর স্বামী ছিলো। ”

নানাভাইয়ের কথা শুনে অধরা আর আশ্বিন অবাক হয়ে যায়। তারা প্রশ্নবিদ্ধ চোখে নানাভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।

— ” অনুরিমা আমার একমাত্র মেয়ে না, আশ্বিন। আমার বড় মেয়ের নাম অবণী। তোমরা হয়তো জানো না, সাহিলের মা আমার বড় মেয়ে।

আমার মেয়েটা খুব শান্তশিষ্ট ছিলো। ছোট থেকেই একটুতেই বেশি ইমোশনাল হয়ে যেতো। বিজনেস প্রোগ্রামে একবার শাহিনের সাথে তার পরিচয়। সেই থেকেই মেয়েটার মনে শাহিনের প্রতি অনুভূতি প্রকাশ পায়। আর, আমার অজান্তেই তারা পালিয়ে বিয়ে করে ফেলে।

বিষয়টা আমি কোনভাবেই মেনে নিতে পারিনি। আমার মেয়ে শেষ পর্যন্ত কিনা আমার প্রতিপক্ষের সাথে বিয়ে করলো। তাও যদি শাহিন মানুষ হিসেবেও যদি ভালো হতো তাহলেও আমি মেনে নিতাম। কিন্তু….।

অবণীর সাথে আমরা সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ করে দেই। আমার ভয় ছিলো যদি অনুও অবণীর মতো ভুল করে তাই বাধ্য হয়ে আকাশের সাথে তার জোর পূর্বক বিয়ে দিয়ে দেই।
অনু কখনো এই বিয়েটা মেনে নিতে পারেনি। অল্প বয়সী মনের বিরুদ্ধে এই বিয়ে সে কখনোই আপন ভেবে দেখেনি। আকাশ আশ্বিন কাউকেই না।
বারবার নিজেকে ব্যস্ত রাখতে আর তোমাদের থেকে দূরে থাকতে পালিয়ে বেরিয়েছে।

সেদিকে, আমার অবণী ভালো ছিলো না। আকাশের যেভাবে অনুকে সবটা দিয়ে আগলে রাখতো, শাহিন কখনোই অবণীকে আগলে রাখেনি।
শাহিন একটু একটু করে আকাশের এতো উন্নতি দেখে ভেবেই নিয়েছিলো আকাশের এভাবে বিজনেসে টপ হওয়ায় আমার হাত আছে। ভেবেছে আমি ইচ্ছে করে শাহিনকে দেখিয়ে দিতে এসব করেছি।

একটা সামান্য বিষয় নিয়ে আমার অবণীর উপর সে সন্দেহ আর রাগ দেখাতো। আর এক পর্যায়ে যখন গায়ে হাত তুলতে শুরু করে তখন অবণী অনেক ভেঙে পড়ে আর কিছুদিন পর সে আত্মহত্যা করে। ”

নানাভাই কথাগুলো বলে চোখের পানি ছেড়ে দেয়। অধরা এসে নানাভাইয়ের কাধে হাত রেখে সান্ত্বনা দেয়।

— ” অবণীর এভাবে চলে যাওয়ায় শাহিন সর্বপ্রথম আকাশকেই দোষী মনে করে। তাই তার মনে প্রতিশোধ জেগে ওঠে।
নানাভাবে আকাশের বিজনেসে সমস্যা সৃষ্টি করে।

ছোট সাহিলকে দেখিয়ে অনুরিমাকে ব্লেকমেইল করে তার সাথে বিয়ে করতে। যেনো বিজনেস রাজ্যে আকাশের সম্মানহানী হয়।
সেদিন অনু এসেছিলো আমার সাহায্য নিতে কিন্তু আমার হাতও তখন বন্ধ ছিলো। অনু যতই বলুক আকাশকে মন থেকে মেনে নিতে পারেনি কিন্তু আমি জানি আমার মেয়েটা তোদের খুব ভালোবাসতো আশ্বিন, হয়তো কখনো প্রকাশ করেনি।

সেদিন বিয়েতে আকাশ হঠাত করেই চলে আসে। অনু সাহিলের বিষয়টা আকাশকে বলেনি তবুও কোন একভাবে আকাশ জেনে যায় আর ছুটে চলে আসে।
আকাশের কাছে কিছু মেডিক্যাল রিপোর্ট ছিলো যেখানে প্রমাণ হয় শাহিলের মানসিক সমস্যা আছে আর এই অবস্থায় সাহিলকে তার পাশে রাখা সম্ভব না।

আকাশ বলেছিলো রিপোর্টটা কোর্টে দিয়ে সাহিলকেও তাদের কাছে নিয়ে নিবে। কথাটা শুনে অনুরিমা খুব খুশি হয়েছিল। আর তখনই শাহিন রেগে গিয়ে….। ”

নানাভাইয়ের কথা শুনে দুজন স্তব্ধ হয়ে যায়। অধরা ঘোরের মধ্যে,

— ” মামুনী কেনো আমাদের আসল সত্যটা বলেনি? অবণী আন্টির কথা কেনো বলেনি। ”

— ” অনু সেদিন থেকেই ঘৃণা করে অবণীকে। অবণীর জন্যই এতোসব হয়েছে মনে করে। তাই হয়তো….। ”

— আশ্বিন কিছুক্ষণ চুপ থেকে, ” তুমি তাদের কাছ থেকে পালিয়ে আসলে কিভাবে? ”

— নানাভাই একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে, ” সেদিন যখন….”
#আমি_তোমার_গল্প_হবো🍁
লেখিকা- মাহিয়া তাহসীন মেরিন
পর্ব:::২৪

নানাভাই একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে,

— ” সেদিন আকাশকে নিথর অবস্থায় মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে অনুরিমা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। আমি পাশে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। বিশ্বাস হচ্ছিল না আমার কিছুই।

পর মূহুর্তে শাহিনের হুশ ফিরে, সে কি করেছে তা বুঝতে পেরে চুপ হয়ে যায়। আমি অবাক চোখে শাহিনের দিকে তাকিয়ে বলেছিলাম এর শাস্তি তাকে পেতেই হবে। শাহিন কিছুক্ষণ চুপ থেকে শুধু সেখানে থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। আর পর মুহূর্তেই তার লোকেরা আমাদের বাসা চারদিক থেকে ঘিরে ধরে।

তারা আমাকে আটকে এদেশে নিয়ে এসে বন্দি করে রাখে। কয়েকবছর ধরেই আমি শাহিনের বন্দি অবস্থায় আটকে ছিলাম।
অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু পালানোর কোন সুযোগই খুঁজে পাইনি। তারপর হঠাত একদিন শাহিনের লোকদের গাফিলতির সুযোগ নিয়ে আমি সেখান থেকে পালিয়ে যাই।

ভেবেছিলাম পালিয়ে তোমার কাছেই আসবো কিন্তু আমার পাসপোর্ট তাদের কাছে ছিলো। আর ফিরে যাওয়ার মতো আমার কাছে সুযোগও নেই, কেননা শাহিনের লোকরা এখনও আমাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। যদি তারা কোনভাবে আমাকে খুঁজে পায়….।
তাই তখন থেকেই সবার থেকে পালিয়ে এই ছোট্ট গ্রামে নিজের আশ্রয় খুঁজে পেয়েছি। ”

অধরা আর আশ্বিন চুপচাপ নানাভাইয়ের কথাগুলো শুনছিলো।

— অধরা আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে, ” নানাভাইকে আমাদের সাথে ফিরিয়ে নিয়ে যাবো আশ্বিন। তারপর নানাভাইকে স্বাক্ষী করে শাহিনের বিপক্ষে আকাশ বাবার হত্যার মামলা করবো আমরা। ”

— আশ্বিন কিছুক্ষণ চুপ করে গভীর ভাবে চিন্তা করে, ” না অধরা। নানাভাই আমাদের সাথে দেশে যেতে পারবে না।
কারণ নানাভাইয়ের জন্য নতুন পাসপোর্ট করতে হলে, শাহিনরা জেনে যাবে। তখন তারা সহজেই নানাভাইকে খুঁজে পেয়ে যাবে।

আর তাছাড়া এই মুহূর্তে ড্যাডের হত্যা মামলা করলে শাহিন মুহূর্তেই তা ধামাচাপা দিয়ে দিবে।
কারণ শাহিন এই মুহূর্তে বিশ্বের টপ বিজনেস ম্যানদের মাঝে আছে। এমন দুএকটা কেইস ধামাচাপা দিতে তার বেশি কিছুই করতে হবে না। ”

— নানাভাই চিন্তিত হয়ে, ” তাহলে এখন আমাদের কি করতে হবে? ”

— ” নানাভাই আমার একটা প্ল্যান আছে। আমাদের যে কোন ভাবে শাহিনের বিজনেস ডাউন করতে হবে। তার বিজনেসের মার্কেট যখন কমে আসবে তখন তার পাওয়ারও কমে যাবে। আর তখনই সুযোগ বুঝে আমাদের শাহিনের বিরুদ্ধে কেইস ফাইল করতে হবে। ”

— নানাভাই কিছুক্ষণ ভেবে, ” হুম। আইডিয়া খারাপ না। তবে এতে কিন্তু অনেক সময় লাগবে আশ্বিন। ”

— ” জানি নানাভাই। সময় লাগুক, তবুও আমি চাই, শাহিন তার কাজের শাস্তি পাবে। আর আমি তাড়াহুড়ো করে কোন ভুলও করতে চাই না। ”

— ” ঠিক আছে তাহলে। আমি তোমার সাথে আছি, বাবা। ”

নানাভাইয়ের কথা শুনে আশ্বিন মুচকি হাসি দেয়। নানাভাই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে,

— ” যাই হোক,
আমার ছোট ছেলেটা কতো বড় হয়ে গিয়েছে, এখন তার একটা পুতুলের মতো বউ আছে। ”

নানাভাইয়ের কথা শুনে আশ্বিনের ঠোঁটের কোণে হালকা হাসি ফুটে ওঠে। অধরা তাদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে মাথা নিচু করে বসে আছে।

— অধরা কিছুক্ষণ চুপ থেকে, ” নানাভাই, আমাদের সাথে দাদিও এসেছে।
আশ্বিন, নানাভাইকে আমাদের হোটেলে একবার নিয়ে চলুন দাদির সাথে দেখা করতে। ”

— আশ্বিন অধরার দিকে তাকিয়ে, ” হ্যা নিয়ে যাবো তো নানাভাইকে। ”

আশ্বিন কথাটা বলে নানাভাইয়ের দিকে এক নজর তাকিয়ে অধরার দিকে ফিরে,

— ” অধরা, তুমি গিয়ে আমাদের জন্য কিছু নাস্তা বানিয়ে ফেলো, আর নানাভাইয়ের ব্যাগটাও গুছিয়ে দাও।
কিছুক্ষণ পরেই রওনা দিবো সবাই। ”

অধরা মাথা নেড়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। অধরা চলে যেতেই নানাভাই আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে,

— ” বাবা, আমার অনু কেমন আছে? ”

— আশ্বিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে, ” ভালোই আছে।
ভালো থাকার জন্যই তো আমার বাবাকে ছেড়ে শাহিনের কাছে গিয়েছিলো। ”

— ” না আশ্বিন। তুমি ভুল বুঝছো…। ”

— ” নানাভাই প্লিজ। আর যাই করো, অনুরিমাকে ভালো প্রমাণ করো না।
যে কিনা নিজের সন্তানের কথা একবার ভেবে দেখেনি সে বোনের সন্তানকে বাঁচাতে নিজের স্বামী সন্তানকে রেখে চলে গিয়েছে। বিষয়টা একটা মিথ্যা গল্প ছাড়া আর কিছুই না।

আমি উনাকে বিশ্বাস করি না, নানাভাই। জন্ম দিলেই কেউ মা হতে পারে না।
ছোট থেকেই বই আর মানুষের কাছে মা সম্পর্কে যেসব বর্ণনা শুনে এসেছি কখনো আমি মাকে পেয়েও তা আমার মায়ের সাথে মিলাতে পারিনি।

অনুরিমা শুধু আমার মা না আমার বাবার স্ত্রীও হতে পারেনি।
আজ আমি বাবাকে হারিয়েছি শুধুমাত্র উনার জন্য। এর শাস্তি উনাকে পেতেই হবে নানাভাই। কোন ক্ষমা নেই উনার। ”

কথাটা বলেই আশ্বিন রুম থেকে বেরিয়ে যায় ঠিক তখনই অধরা খবরের ট্রে হাতে রুমে প্রবেশ করে। আশ্বিনকে এভাবে চলে যেতে দেখে অবাক হয়ে আশ্বিনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে,

— ” কি হয়েছে? উনি এভাবে কোথায় চলে গেলেন? ”

— নানাভাই জোরপূর্বক মুচকি হেসে, ” একটু বাহিরে গিয়েছে, এখনি চলে আসবে। তুমি চিন্তা করো না। ”

অধরা সোফায় বসে নানাভাইয়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দেয়।

🌻🌻

আশ্বিন অধরা আর নানাভাই একসাথে তাদের হোটেলে ফিরে আসে। নানাভাইকে অনেকটা সেইফ ভাবে এখানে নিয়ে আসা হয়েছে যেনো শাহিনের লোকেরা উনাকে দেখতে না পারে।

অধরা দৌড়ে হোটেল রুমে চলে যেতেই আশ্বিন নানাভাইয়ের দিকে তাকিয়ে,

— ” নানাভাই, মনে আছে তো? দাদিকে কিছু বুঝতে দেওয়া যাবে না। ড্যাডের কথা উনাকে বলো না। ”

— ” হুম। আমার মনে আছে। ”

আশ্বিন মাথা নেড়ে নানাভাইকে নিয়ে রুমে প্রবেশ করে।

— অধরা দাদির রুমে এসে, ” দাদিইইইই, দেখো আমরা কাকে নিয়ে এসেছিইইই। ”

— দাদি বারান্দা থেকে এসে সোফায় বসে, ” কাকে নিয়ে এসেছে আমার ছোট্ট বুড়িটা? ”

কথাটা বলতেই নানাভাই আর আশ্বিন রুমে প্রবেশ করে। তাদের দেখে দাদি অবাক হয়ে যায়।

— ” আহমেদ ভাই ! ”

— নানাভাই দাদির সামনে দাঁড়িয়ে, ” কেমন আছেন আপা? ”

— ” আলহামদুলিল্লাহ। আপনি ভালো আছেন?
এতোদিন ধরে এখানে ছিলেন আপনি? ”

— ” জি, এখানেই ছিলাম। এখানে আমার পুরনো কিছু বিজনেস সামলাতে হয়েছে।
আর কিছু মানুষের চোখের সামনে থেকে দূরে থাকতে চেয়েছিলাম। তাই…। ”

— ” এভাবে বলবেন না, আহমেদ ভাই। আপনি আমার আকাশের বিপদে আপদে ঢাল স্বরূপ ছিলেন। আপনার কাছে আমরা কৃতজ্ঞ, আকাশ লন্ডন চলে যাওয়ার পর আশ্বিনের তো আপনার প্রয়োজন ছিলো। ”

— নানাভাই মাথা নিচু করে কিছুক্ষণ চুপ থেকে, ” হুমম। আসলে পরিস্থিতিই এমন ছিলো…
যাই হোক, যা হওয়ার হয়েছে। এখন থেকে আমি আছি আশ্বিনের পাশে। আপনি চিন্তা করবেন না। ”

কথাটা শুনে দাদি মুচকি হাসি দেয়। অধরা দাদির পাশে বসে,

— ” দাদি, এখন পুরনো দিনের কথা বাদ। সবাই যেহেতু অনেক বছর পর একসাথে হয়েছি, তাই এখন অনেক অনেক আড্ডা হবে। আর সাথে মজার মজার খাবার। ”

কথাটা বলে দাঁত বের করে একটা লাজুক হাসি দেয় অধরা। অধরার হাসি দেখে বাকিরাও হেসে ওঠে।

— আশ্বিন উঠে দাঁড়িয়ে, ” আমি খাবার অর্ডার দিয়ে আসছি। ”

কথাটা বলেই আশ্বিন চলে যায়। আর অধরা দাদি আর নানাভাই গল্পে মেতে ওঠে।

🌻এদিকে🌻

শাহিন অফিসে বসে কিছু ফাইল চেক করছিলো হঠাত রুমে তার পিএ প্রবেশ করে,

— ” স্যার, একটা নিউজ পেয়েছি। ”

— শাহিন ফাইলের দিকে তাকিয়ে, ” বলো। ”

— ” স্যার, শুনেছি আশ্বিন চৌধুরী তার দাদি এবং স্ত্রীকে নিয়ে ইতালি একটা বিজনেস ডিল করতে গিয়েছেন। আর বিষয়টা তিনি গোপন রাখতে চেয়েছিলেন। ”

— শাহিন ফাইল থেকে চোখ তুলে, ” কোথায় গিয়েছে? ”

— ” ইতালি। ”

— ” কবে গিয়েছে? ”

— ” শুনেছি তিনদিন আগে গিয়েছে। ”

— শাহিন টেবিলে একটা বারি দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে, ” তিনদিন আগে তারা ইতালি গিয়েছে আর তোমরা এই কথা আজ আমাকে বলছো?
ইডিয়েট, গেট আউট। ”

শাহিনের বকা খেয়ে তার পিএ দ্রুত বেরিয়ে যায়। শাহিন মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে।

— ” আশ্বিন যদি উনাকে পেয়ে যায়…। ড্যাম ইট। ”

কথাটা বলে টেবিলের সবকিছু ফেলে দেয় সে।

🌻🌻

অধরা সবার সাথে গল্প শেষ করে যার যার রুমে পৌঁছে দিয়ে রুমে প্রবেশ করতেই কেউ একজন পিছন থেকে তার চোখ বেঁধে ফেলে। আচমকা এমন হওয়ায় অধরা চমকে উঠে।

— ” আ…আশ্বিন…! ”

আশ্বিন অধরার কানের কাছে মুখ এনে,

— ” ভয় নেই। আমি আছি তো। ”

অধরা অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হঠাত আশ্বিন অধরাকে কোলে তুলে নেয়। তারপর ধীরে ধীরে অধরাকে নিয়ে এসে গাড়িতে উঠে বসে।

— অধরা অবাক হয়ে, ” আশ্বিন আমরা এতো রাতে কোথায় যাচ্ছি? ”

— আশ্বিন অধরার হাত চেপে ধরে, ” সারপ্রাইজ। গেলেই দেখতে পারবে। ”

কথাটা বলে মুচকি হাসি দেয় আশ্বিন।

—চলবে❤
—চলবে❤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here