আমি ফাইসা গেছি পর্ব -১৪+১৫

#আমি_ফাইসা_গেছি(১৪)
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

কুশানের সামনে ফাইনাল এক্সাম সেজন্য এ কয়দিন তাকে যেতেই হবে ভার্সিটিতে।কিন্তু ভার্সিটিতে যেতে কুশান ভীষণ লজ্জা বোধ করতে লাগলো।কারণ সে নিশ্চিত তার দুষ্টু বন্ধুরা তার বিয়ে নিয়ে মজা করতে থাকবে।
কুশান ছিলো ডিপার্টমেন্টের মধ্যে সবচেয়ে ভদ্র,সহজ, সরল একজন ছেলে।সেই ছেলে যখন সবার আগেই বিয়ে করে তখন তো তাকে নিয়ে বন্ধুরা মজা করবেই?
কুশান কিন্তু তার আর তোড়ার সম্পর্কের কথা বন্ধুদের জানায় নি।লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করেছে সে।সে তার বন্ধুদের বিশ্বাস করতে পারে নি।যদি আবার তাদের মধ্যে কেউ একজন তোড়াকে পটিয়ে নেয়।
অবশ্য তার বন্ধুদের না জানানোর আরো কিছু কারন আছে।
🖤
একদিন ভার্সিটির ক্যান্টিনে বসে কুশান,রিয়ান,জনি আর শাওন আড্ডা দিচ্ছিলো।হঠাৎ করেই টুং করে একটা মেসেজ বেজে উঠলো কুশানের ফোনে।কুশান মেসেজ টি চেক করতেই দেখে তার বিকাশ একাউন্টে পাঁচ হাজার টাকা এসেছে।কুশান তা দেখে মনে মনে ভাবতে লাগলো তার আম্মুর মন হঠাৎ করে এতো বড় কি করে হলো?না চাইতেই পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছে আজ।কুশান টাকার চিন্তা বাদ দিয়ে বন্ধুদের সাথে আবার আড্ডায় মেতে উঠলো।

আজকের আড্ডার টপিক কিভাবে শাওন রিমিকে প্রপোজ করবে।
আসলে শাওন তার ডিপার্টমেন্টেরই রিমি নামের এক মেয়ের প্রেমে পড়ে গেছে।এখন রিমিকে সে কি করে প্রপোজ করবে বা তাকে কিভাবে তার মনের কথা জানাবে সেই বিষয়ে রিয়ান জ্ঞান দিচ্ছিলো তাকে।যদিও রিয়ান এখনো সিঙ্গেল তবুও তার এসব প্রেম পিরিতি বিষয়ে অনেক অভিজ্ঞতা।
শাওন আর রিয়ান গল্প করছে। আর জনি আর কুশান মনোযোগ দিয়ে তাদের কথা শুনছে।

ঠিক তখনি কুশানের ফোনে রিং বেজে উঠলো।আননোন নাম্বার থেকে কল এসেছে,কুশান সেজন্য ভাবছিলো কল রিসিভ করবে কি করবে না।কারণ অচেনা নাম্বার থেকে কল রিসিভ করতে বারণ করেছে তার আম্মু।সেজন্য কুশান কল কেটে দিলো।
আসলে কুশান তার বংশের একমাত্র ছেলে সন্তান হওয়ায় কামিনী সবসময় ভয়ে ভয়ে থাকে তাকে নিয়ে।এই বুঝি কেউ তাদের কুশান কে কিডন্যাপ করে মুক্তিপন আদায় করে নিলো।এখন একমাত্র আদরের সন্তানের বিনিময়ে তো কামিনী তার সবকিছু দিতেও রাজি।
কুশানকে তার আব্বু বা দুলাভাই দের যেকোন একজন রেখে আসতো ভার্সিটিতে আবার আসার সময় কেউ গিয়ে নিয়ে আসতো।

আবার সেই আননোন নাম্বার থেকে কল আসলো।আবার কুশান কেটে দিলো কল টা।
কিন্তু অচেনা লোকটিও কম যায় না,সেও বার বার দিতে লাগলো।

জনি তা দেখে বললো, কে কল দিয়েছে রে দোস্ত?বার বার কেটে দিচ্ছিস কেনো?

–চিনি না রে?অচেনা নাম্বার।

জনি সেই কথা শুনে হাসতে হাসতে বললো,চিনিস না?না আমরা আছি দেখে ধরছিস না?

কুশান তখন বললো সত্যি আমি চিনি না।নে কথা বলে দেখ।

হঠাৎ টুং করে আরেকটা মেসেজ আসলো কুশানের ফোনে।অচেনা লোকটি বড় করে একটা মেসেজ দিয়েছে,

এই ছোটো লোকের বাচ্চা?জন্মে কি টাকা চোখে দেখিস নি?মানুষের টাকা পেয়ে সেটা মেরে খাওয়ার ধান্দায় আছিস?টাকা টা ফেরত দেওয়ার ভয়ে কল ই রিসিভ করছিস না?যদি মানুষের বাচ্চা হয়ে থাকিস আমার টাকা আমাকে ফেরত দিয়ে দিবি।আর যদি না ফেরত দেস তাহলে আমি দোয়া করে দিচ্ছি এই টাকা তুই হজম করতে পারবি না।তার আগেই তুই মারা যাবি।আমার দোয়া কিন্তু কবুল হয়। এখন ভাব কি করবি?

এইরকম একটা মেসেজ দেখে কুশানের হার্ট এট্যাকের উপক্রম হলো?তার পুরো শরীর ঘামতে লাগলো।এই লোক বলে কি?কুশানের মুখ চোখ একদম শুকিয়ে গেলো।সে তখন সাথে সাথে তার আম্মুকে কল দিলো আর জিজ্ঞেস করলো তার আম্মু তাকে আজ টাকা দিয়েছে নাকি?
কামিনী যখন জানালো তিনি কোনো টাকা পাঠান নি কুশান তখন ভয়ে সাথে সাথে সেই নাম্বারে পাঁচ হাজার টাকা সেন্ড করে দিলো।যে নাম্বার থেকে টাকা এসেছিলো কুশানের ফোনে।

টাকা পেয়ে সেই অচেনা লোকটি আবার কল দিলো কুশানকে।কুশান মনে মনে ভাবতে লাগলো আবার কেনো কল দিচ্ছে?টাকা কি তাহলে যায় নি নাকি?

শাওন এবার বিরক্ত হয়ে বললো,কুশান ধর না কল টা।না হয় সাইলেন্ট করে রাখ।দেখছিস না আমরা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কথা বলছি।

এদিকে কুশান কল ধরছে না দেখে লোকটি আবার একটা মেসেজ দিলো।

সরি।আসলে আমার মাথা ঠিক ছিলো না।সেজন্য রাগ করে আজেবাজে কথা বলেছি আপনাকে।এতে কিন্তু আমার কোনো দোষ নাই।আপনার একাউন্টে আমি ভুল করে টাকা টা পাঠাইছিলাম।সেজন্য কত বার কল দিলাম।কিন্তু আপনি তো রিসিভই করছেন না।সেজন্য ভেবেছিলাম আপনি আর টাকা টা দিবেন না আমাকে।মাত্র পেলাম টাকাটা।অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

কুশান মেসেজটি দেখে মনে মনে ভাবতে লাগলো হায় রে মানুষের মুখের ভাষা?যে মুখে গালমন্দ করলো আবার সেই মুখেই মধুর ভাষা বের হলো।মানুষ বড়ই আজব।

এদিকে কুশান কে এভাবে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে জনি হঠাৎ তার ফোন টা কেড়ে নিলো।আর কেড়ে নিতেই এই মেসেজ দুই টা তার চোখে পড়লো।জনি তখন বললো,

তুই কি ছেলে মানুষ কুশান?তোর কি একটুও রাগ নেই?লোকটি তোকে গালমন্দ করার সাথে সাথে টাকাটা পাঠিয়ে দিলি?আমি হলে জীবনেও দিতাম না।

কুশান তখন বললো ওই লোক গালমন্দ করলেই কি? আর ভালোভাবে কথা বললেই কি?ওনার টাকা তো আমি এমনিতেই দিয়ে দিতাম।তাছাড়া অন্য মানুষের টাকা নিয়ে আমি কি করবো?

শাওন আর রিয়ান এতোক্ষন দিয়ে শুনতে চাইছে তারা কি নিয়ে আলোচনা করছে?
কুশান তখন ওদের পুরো কাহিনী বলতেই শাওন চিৎকার করে বললো,

পেয়েছি আইডিয়া।আমিও যদি এইভাবে রিমির মোবাইলে টাকা পাঠায়।তারপর টাকাটা ফেরত নেওয়ার জন্য কল করি।ও যখন আমার সাথে কথা বলবে আমি আমার আসল পরিচয় দিবো না।এইভাবে যদি শুরু করি কেমন হবে তখন?এবার আর কেউ আটকাতে পারবে না আমাদের প্রেম?

রিয়ান সেই কথা শুনে বললো আইডিয়া টা কিন্তু মন্দ না।
শাওন সেই কথা শুনে কুশানকে জড়িয়ে ধরে বললো দোস্ত,তুই আজ একটা কাজের মতো কাজ করলি?এই বলে শাওন কুশানের গালে একটা কিস করলো।

কুশান তখন বললো এই এই কি করছিস?আমাকে এতো ধন্যবাদ দিচ্ছিস কেনো?ঐ লোককে ধন্যবাদ দে।যার টাকা ভুল করে এসেছে।

শাওন সেই কথা শুনে বললো, তুই পরে দিয়ে দিস দোস্ত।আমি এখন যাই।বিকাশে কিছু টাকা উঠাই আগে।এবার আমার আর রিমির প্রেম কেউ আটকাতে পারবে না।এই বলে শাওন দ্রুত সেখান থেকে চলে গেলো।

হঠাৎ সেই অচেনা লোকটি আবার কল দিলো।কুশান তখন ওর ফ্রেন্ডদের বললো লোকটি আবার কল দিয়েছে।এই লোকটি কেনো যে বার বার এতো কল দিচ্ছে এই বলে কুশান এবার রিসিভ করলো।

জনি তখন বললো, লাউড দে দোস্ত।আমরাও একটু শুনি।

কুশান রিসিভ করে হ্যালো বলতেই অপর পাশ থেকে মিষ্টি সুরেলা কন্ঠে তোড়া বললো,

সরি আপনাকে আবার ডিস্টার্ব করলাম।আপনি তো ভুল করে ৫০০ টাকা বেশি দিয়েছেন।

কুশান তোড়ার কন্ঠ শুনে হা হয়ে রইলো।কারণ সে কখনোই ভাবে নি ইনি একজন মেয়ে হবে।সে তো ভেবেছিলো কোনো ছেলে মানুষ হবে।

কুশানকে এভাবে চুপ থাকা দেখে জনি বললো, ৫০০ টাকা টা আমি ইচ্ছে করেই দিয়েছি।কারণ এরকম ৫০০/১০০০ টাকা আমি রেগুলার কোনো ভিক্ষুক কে দান করে থাকি।আজ না হয় ভিক্ষুকের বদলে আপনার মতো কোনো ছোট মনমানসিকতার মেয়েকে দিয়ে দিলাম।

তোড়া জনির কথা শুনে রাগান্বিত হয়ে বললো,শাট আপ।কি বলছেন কি?ছোটো মন মানসিকতা মানে?আমার সম্পর্কে জেনেবুঝে কথা বলুন।

–হ্যাঁ।জেনেই কথা বলছি।খুব ছোট মন আপনার।তা না হলে আপনি এরকম মেসেজ কখনোই দিতেন না।সুন্দর করে তো বলতে পারতেন যে আমার টাকা ভুল করে আপনার একাউন্টে চলে গিয়েছে?তা না করে কি ভাষা ইউজ করেছেন?ফালতু মেয়ে কোথাকার?

তোড়া তখন রাগ করে এক নিঃশ্বাসে বললো,
তুই হলি একজন ছোটো লোকের বাচ্চা,ইতর,অভদ্র।তোকে কল দেওয়াটাই উচিত হয় নি আমার।তোর পাঁচশো টাকা আমি আর ফেরত দিবো না।এই টাকা টা তুলে ইচ্ছেমতো কুটি কুটি করে ছিড়ে পানিতে ফেলে দিবো।যেমন করে তোকে কাছে পেলে করতাম এখন।সেই প্রতিশোধ টাকার উপর নিবো।এই বলেই তোড়া কল কেটে দিলো।

রিয়ান তো জনি আর তোড়ার ঝগড়া দেখে হাসতে হাসতে শেষ হয়ে গেলো।কিন্তু কুশানের ভীষণ খারাপ লাগলো।সে জনিকে বললো,কি দরকার ছিলো এভাবে ঝগড়া করার?শেষে তো তোকেই ইচ্ছেমতো বকে দিলো।

জনি তখন বললো দাঁড়া আমিও কম যাই না।নাম্বার টা দে তো।বেশি করে মিনিট তুলে ওকে আমি দিনে রাতে জ্বালাবো।ও আমাকে গালিগালাজ করলো?

কুশান তখন বললো দোস্ত বাদ দে এখন।যা হবার হয়ে গেছে।

রিয়ান তখন বললো তোর কি মায়া লাগছে দোস্ত?দে আমাকেও দে নাম্বার টা।এই বলে জনি আর রিয়ান দুইজনই তোড়ার নাম্বার টা নিয়ে নিলো।

ক্লাস শেষ হওয়া মাত্র সবাই সবার বাড়ি চলে গেলেও কুশান গেলো না।কারণ তাকে নেওয়ার জন্য এখন পর্যন্ত কেউই আসে নি।সেজন্য কুশান অপেক্ষা করছিলো তার আব্বুর জন্য।

হঠাৎ টুং করে আবার একটা মেসেজ আসলো।তোড়া ৫০০ টাকা টা ফেরত দিয়েছে।
কুশান কি মনে করে যেনো কল দিলো তোড়াকে।এই কল দেওয়াটাই তার জীবনের বড় ভুল ছিলো।কে জানতো এইবার কথা বলেই সে অর্ধেক পটে যাবে।অবশ্য ভুল বললে ভুল হবে।কুশান আর তোড়ার প্রেম ভালোবাসা এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই শুরু হয়েছে।

কুশান কল দিতেই তোড়া রিসিভ করলো।কুশান কিছু বলার আগেই তোড়া বললো,
এই ছোটো লোকের বাচ্চা কল দিছিস কেনো রে?মেয়ে মানুষের কন্ঠ শুনে আর থাকতে পারলি না?খবরদার আর কল দিবি না।তোর ৫০০ টাকা তো ফেরত দিয়েছি।

কুশান তখন শান্ত কন্ঠে বললো,হ্যাঁ পেয়েছি।মাত্র আসলো।

–মাত্র আসলো?আমি তো অনেক আগে পাঠিয়েছি।

কুশান সেই কথা শুনে বললো, কিন্তু আপনি না তখন বললেন পাঠাবেন না টাকা টা।টাকা টা নাকি ছিড়ে টুকরো টুকরো করে পানিতে ফেলে দিবেন।

তোড়া তখন বললো, তোর কথাবার্তা শুনে আমার মেজাজ বিগড়ে গিয়েছিলো।সেজন্য বলেছিলাম।পরে ভাবলাম মানুষের টাকা কেনো নষ্ট করবো এভাবে?

কুশান তোড়ার কথা শুনে হাসতে হাসতে বললো, আমি ছিলাম না ওটা।আমার বন্ধু জনির সাথে তখন আপনি ঝগড়া করেছেন।আপনিও যেমন তেমন আমার বন্ধুও।

তোড়া সেই কথা শুনে বললো, নিজে আবোলতাবোল কথা বলে এখন বন্ধুর দোষ দেওয়া হচ্ছে?আমাকে কি পাগল পাইছেন আপনি?রাখেন ফোন।

–সত্যি বলছি আমি।আমি বলি নি কিছু।আমার বন্ধুরা কিন্তু আপনার নাম্বার নিয়েছে। ওরা আপনাকে এখন দিনেরাতে বিরক্ত করবে।

তোড়া কুশানের কথা শুনে বললো,ওরে আমার শুভাকাঙ্ক্ষী রে?কি উপকার টাই করতে এসেছে।রাখেন এখন।আর খবরদার কল দিবেন না।

–আর কেনো দিবো কল?টাকাটা আসলো সেজন্য জানানোর জন্য দিলাম।আল্লাহ হাফেজ।ভালো থাকবেন।এই বলে কুশান কল কেটে দিলো।

ওই দিনের পর থেকে তোড়ার কথা দিনে রাতে মনে হতে থাকে কুশানের।কেনো জানি তোড়ার কন্ঠ শুনেই কুশান পটে যায়।কুশান মনের অজান্তেই তোড়ার নাম্বার টা সেভ করে রাখে।আর তখনি সে WhatsApp এ মিষ্টি তোড়ার ছবি দেখতে পায়।
গালে হাত দিয়ে এক চোখ বন্ধ করে জিহবা দেখিয়ে তোলা ছবিটা WhatsApp এর প্রোফাইল এ লাগিয়েছে তোড়া।তবে কুশান আর নিজের থেকে কল দেয় না তোড়াকে।আর তোড়াও কল দেয় না।

কিন্তু এক সপ্তাহ পর হঠাৎ তোড়া নিজের থেকেই কল দেয় কুশানকে।আর বলে আমাকে একটা হেল্প করতে পারবেন?
–কি হেল্প?
–আপনার বন্ধুদের ঠিকানা দিতে পারবেন?
–কেনো কি করবেন?
তোড়া তখন রাগান্বিত হয়ে বললো ওই ছোটো লোকের বাচ্চাদের উচিত শিক্ষা দেবো।ওদের বাবা মাকে এসব কল রেকর্ড শুনাবো।ফোন করে কিসব আজেবাজে কথা বলছে আমাকে।

কুশান তা শুনে বললো আপনাকে তো আগেই বলেছিলাম।আমার বন্ধুরা ভীষণ দুষ্ট।আচ্ছা আপনি কি ভীষণ রাগী?সবসময় এতো রেগে রেগে কথা বলেন কেনো?

–হ্যাঁ রাগী।আমার কন্ঠই এমন।

কুশান তখন বললো এতো সুন্দর একটা মেয়ের কিন্তু এতো বেশি রাগ ভালো না।রাগ কে কন্ট্রোল করতে হবে?

–আমি সুন্দর না অসুন্দর তা বুঝলেন কিভাবে?

–আপনার কন্ঠ শুনেই বুঝতে পেরেছি আপনি ভীষণ সুন্দর।

তোড়া সেই কথা শুনে বললো এসব আজাইরে কথা বাদ দিয়ে যা বললাম সেটা করেন।ওনাদের ঠিকানা দিন।আমি আর আমার বান্ধুবীরা মিলে উচিত শিক্ষা দিয়ে আসবো সবাইকে।তোড়াকে চিনতে ভুল করেছে ওনারা?

–আপনার নাম তাহলে তোড়া।ভীষণ সুন্দর নাম।

তোড়া এবার চিৎকার করে বললো আপনি কি দিবেন ওনাদের ঠিকানা?

কুশান সেই কথা শুনে বললো ওদের ঠিকানা নিয়ে কোনো লাভ হবে না।কারণ ওদের বাবা মা কেউ নেই।ওরা একদম স্বাধীন মানুষ। যেখানে রাত ওখানেই কাঁত।তারচেয়ে বরং আপনি ওদের নাম্বার টা ব্লক দিয়ে দিন।তাহলেই আর বিরক্ত করবে না।

তোড়া সেই কথা শুনে রাগ করে বললো জীবনেও না।ওদের কে আমি উচিত শিক্ষা দিবো তো ছাড়বো।এই বলে তোড়া কল কেটে দিলে কুশান আবার কল দেয়।

তোড়া তখন বিরক্ত হয়ে বলে,আবার কেনো কল দিলেন?

–আপনার সাথে পরিচিত হতে চাই?আচ্ছা আপনার বাড়ি কোথায়?

তোড়া তখন বললো, আমি বলবো না আপনাকে।

–ওকে না বললেন,আপনারা কয় ভাই বোন সেটা তো বলেন।

–আমি একাই।আমার কোনো ভাই বোন নাই।

কুশান সেই কথা শুনে বলে তাই নাকি?আমাদের দুইজনের মাঝে কত মিল?আমিও একাই।কুশান এবার বলে আপনাদের ফ্যামিলিতে কে কে আছে?

–আমি, আব্বু,আম্মু আর দাদী।

–ও মাই গড।এটাতেও মিল।আমার পরিবারেও শুধু আব্বু,আম্মু আর দাদী।

–আচ্ছা আপনি কিসে পড়াশোনা করেন?

–এবার ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে।

কুশান চিন্তা করলো যদি সে বলে সেও একজন স্টুডেন্ট তখন যদি আর তাকে পাত্তা না দেয়।সেজন্য কুশান মিথ্যা কথা বলে যে সে জব করে।তার বাবা মাকে নিয়ে শহরে থাকে।

প্রথম প্রথম তোড়া পাত্তা না দিলেও শেষমেশ সে ঠিকই পটে যায়।কুশান তোড়াকে পটানোর জন্য অনেক অভিনয় করেছিলো।আর অনেক মিথ্যা কথাও বলেছিলো।সে তো তোড়াকে দেখার পর থেকে নিজেকেই ভুলে গিয়েছে।বলতে গেলে সে একদম পাগল হয়ে গিয়েছিলো।
কুশানের বন্ধুরা আজও জানে না সেই মেয়ের সাথে কুশান প্রেম করতেছে।কুশান একদম লুকিয়ে লুকিয়েই দেখা করেছে তোড়ার সাথে।

কুশান সহজ সরল বোকাসোকা ছেলে হলেও সে নিজেও কিন্তু দেখতে ভীষণ কিউট ছিলো।লম্বা মুখাকৃতি আর উজ্জ্বল ফর্সা বর্ণের কুষান কে কোনো মেয়ে এক নজর দেখলেই তার প্রেমে পাগল হয়ে যেতে পারে।যেমন করে তোড়া হয়েছিলো।তোড়া আগে থেকেই জানতো কুশান সহজ সরল ছেলে কিন্তু সে যে এতো বেশি সহজ সরল সেটা আর জানতো না।তবে জীবন যুদ্ধে কিন্তু কুশানই এগিয়ে গেলো। একজন বোকা সোকা সহজ সরল ছেলে ভীষণ রাগী,আর চঞ্চল মেয়েটার মন জয় করতে সক্ষম হয়েছে।তারপর আবার ভাগ্যক্রমে সেই প্রেমিকাকেই বিয়ে করেছে।অন্যদিকে শাওন এখন পর্যন্ত রিমিকে পটাতে পারে নি।এখন সে রিমির আশা ছেড়ে দিয়ে অন্য মেয়েকে পটানোর ধান্দা করছে।অন্যদিকে জনির রগচটা ব্যবহারের কারণে ইতোমধ্যে তার একবার ব্রেকাপও হয়ে গেছে।রিয়ান সে শুধু অন্যজনকে প্রেম বিষয়ে সাহায্য করেই যাচ্ছে তার জীবনে আর প্রেম আসলো না।
🖤
আজ তোড়ার ভীষণ ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।এ কয় দিন কুশান সারাক্ষন বাসায় থাকায় এই অনুভূতি টা সে বুঝতে পারে নি।কারণ কুশান বাসায় থাকলে সারাদিন তাকে জ্বালাতো।
কোনোবার বলতো রুমে এসো তাড়াতাড়ি, বা কোনোবার বলতো আমার পাশে এসে বসো।মাঝেমাঝে শয়তানি করে বলতো এখন তুমি একটা শাড়ি পড়ো।আমার কেনো জানি দেখতে ইচ্ছে করছে।কোনোবার বা বলতো আমার না এখন প্রেম প্রেম পাচ্ছে?এখন একটু ভালোবাসি তোমাকে?
এর মধ্যে কতবার যে তোড়া রাগ করে থেকেছে তার ঠিক নাই।আর কুশান তার রাগ না ভাঙ্গানো পর্যন্ত ছেড়ে দেয় নি তাকে।কিন্তু আজ দশ ঘন্টা হয়ে গেছে এখন পর্যন্ত কুশানকে সে একবারের জন্যও দেখতে পেলো না।

তোড়ার মনে হচ্ছে কত বছর ধরে সে দেখে না কুশানকে।এতো এতো মিস করছে যে বলার বাহিরে।তারা যখন প্রেমিক প্রেমিকা ছিলো এরকম ফিলিংস তার কখনোই হয় নি।তখন তো তারা শুধু ঝগড়াই বেশি করেছে।কিন্তু এখন ঝগড়া করছে যতক্ষন তার চেয়ে বেশিক্ষন ধরে ভালোইবাসছে বেশি।
তোড়া মনে মনে ভাবতে লাগলো বিয়ের পর ভালোবাসাগুলো বুঝি এজন্যই এত সুন্দর হয়?
🖤
অন্যদিকে কুশানেরও মনে পড়ছে ভীষণ তোড়াকে।কিন্তু তার বন্ধুদের অত্যাচারে সে অতীষ্ট হয়ে যাচ্ছে।বন্ধুদের প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে কুশান ক্লান্ত হয়ে গেলো।
সবার এক প্রশ্ন এটা কি করে সম্ভব হলো কুশান?তুই বিয়ে করলি কিভাবে?

কুশান তখন বললো আমি নিজের ইচ্ছাই করি নি রে।আমার আম্মু আব্বু বোন দুলাভাই রা জোর করে করিয়েছে।

দুষ্টু শাওন তখন কুশানের মুখ টি উপরে তুলে বললো, দোস্ত!তাহলে তো তুই এখন সবকিছু বুঝে গেছিস।যেহেতু বিয়ে করেছিস বাসর রাত তো হয়েছে তাই না?

কুশান কোনো উত্তর না দিয়ে শাওনের হাত টা সরিয়ে দিলো।
শাওন তখন বললো না মানে আমি বলতে চাচ্ছিলাম যেহেতু বিয়ে করেছিস তোর এখন বউ আছে।আর বউ কে তো ভালোবাসছিস নিশ্চয়?

কুশান সেই কথা শুনে বললো, তোরা কি শুরু করেছিস বল তো?এবার একটু চুপ থাক।বললাম তো জোর করে বিয়ে দিয়েছে আমাকে।এখনো বউ এর সাথে ভালোবাসা টালোবাসা হয় নি।

জনি সেই কথা শুনে বললো,তুই মিথ্যা বলছিস কুশান।বিয়ে করেছিস তবুও কিছু হয় নি এটা মানা যাচ্ছে না কিন্তু।

ঠিক সেই সময়ে তোড়া একটা মেসেজ দিলো,
জান কি করছো?একবারও তো কল দিলা না?ভীষণ মিস করছি।কখন আসবা বাসায়?একা একা ভালো লাগছে না আমার।

মেসেজ আসার শব্দ শুনেই জনি ফোনটা নিয়ে নিলো।আর বললো, দোস্ত তোকে মিস করছে তোর বউ।যা বাসায় যা।কি হবে এখন পড়ালেখা করে?

কুশান সেই কথা শুনে বললো, দে আমার ফোন দে।

রিয়ান তখন বললো, তুই না বললি তোদের মধ্যে এখনো প্রেম ভালোবাসা হয় নি?তাহলে তোর বউ তোকে মিস করছে কেনো?

কুশান তখন বললো শুধু প্রেম ভালোবাসা হলেই মিস করা যায় তা না হলে কি মিস করা যায় না?এখন যেহেতু ও আমার বউ সেজন্য এখন মিস করাটা স্বাভাবিক ব্যাপার।

শাওন কুশানের কথা শুনে মাথায় হাত দিয়ে বললো, আমরা কি করলাম জীবনে?তোর মতো যদি আমাদের বাবা মাও বুঝতো।ইসঃ তখন আমারো একটা বউ থাকতো।

রিয়ান সেই কথা শুনে বললো,এটাই নিয়ম রে দোস্ত।যারা বিয়ে বিয়ে করে পাগল তারা বিয়ে করতে পারছে না।আর যে প্রেম,ভালোবাসা,বিয়ে থেকে দশ হাত দূরে ছিলো সেই ছেলে এখন বউ নিয়ে ঘুমাচ্ছে।একেই বলে কপাল!

কুশান তার বন্ধুদের এমন হা হুতাশ দেখে সেখান থেকে চলে গেলো।তার আর এসব কথা ভালো লাগছে না।

কুশানকে এভাবে চলে যাওয়া দেখে রিয়ান বললো,হ্যাঁ এখন তো আমাদের ভালো লাগবেই না।আমরা থাকলে যে বউ এর সাথে প্রেম করতে অসুবিধা হয়ে যাবে।

আসলেই ঠিক কথা।তার বন্ধুদের জন্য সে একটিবার তোড়ার সাথে কথা বলতে পারছে না।কুশান সেজন্য ওদের থেকে একটু দূরেই সরে গেলো।তবে কুশান ঠিক করলো তার বন্ধুদের জানাবে সত্যি টা।সে আর তোড়া যে রিলেশনে ছিলো এতোদিন ব্যাপার টা ওদের জানানো দরকার।পরে আবার ভাবতে লাগলো যদি ওরা সবাইকে বলে দেয়।তার ফ্যামিলির লোকজন যদি জানতে পারে তখন আবার নতুন করে অশান্তির সৃষ্টি হবে।তারচেয়ে বরং না জানানোই ভালো।
🖤
কুশান না থাকায় সোনিয়া আর সুমনের সাথে তোড়ার আজ বেশ ভাব হলো।তোড়াকে একা একা রুমে দেখে সোনিয়া কুশানের রুমে আসলো।তারা অনেকক্ষন ধরে বিভিন্ন বিষয়ে গল্প করলো।শেষ মেষ সোনিয়া ঠিক করলো তারা এখন কেরাম খেলবে।যেই বলা সেই কাজ।তারপর সোনিয়া সুমনকেও ডেকে আনলো।
কুশান বাসায় থাকতে এটা সম্ভব হয় নি কখনো।

কুশান সেই সকাল নয় টায় ভার্সিটিতে গিয়েছে।তারপর সেখান থেকে আবার প্রাইভেটে গিয়েছে।কুশান বাসায় আসতে আসতে একদম সন্ধ্যা লেগে যাবে।

কুশান কে বাহিরের দিক থেকে সরল সোজা আর ভিতুরাম মনে হলেও সে কিন্তু যথেষ্ট মেধাবী একজন স্টুডেন্ট।
কুশান ফিজিক্স নিয়ে অনার্স করছে।সেজন্য কুশানের পড়ার চাপটা একটু বেশি।

তোড়ার আবার পড়াশোনা নিয়ে অতোবেশি মাথাব্যথা নাই।তাকে ভার্সিটিতেও যেতে হয় না আবার কোনো প্রাইভেট ও পড়তে হয় না।বাসাতে পড়লেই কম্পিলিট হয়ে যায় তার পড়ালেখা।

সোনিয়া আর সুমন তোড়ার সাথে গল্প করতে করতে খুবই ফ্রি হয়ে গেলো।সুমন তখন বললো,আমরা ভাবতেই পারি নি আমাদের ভাবি এতো মিশুকে হবে।
সুমন তখন যুথির কথা বললো।
এমন অহংকারী মেয়ে সে জীবনেও দেখে নি।একটা আলাদা ভাব নিয়ে থাকে।কারো সাথে মিশতে চায় না।একা একাই রুমের মধ্যে থাকে তবুও একবারের জন্য না আমার সাথে কথা বলে না সোনিয়ার সাথে।

সোনিয়া,সুমন আর তোড়া মনের সুখে গল্প করতে করতে কখন যে সময়গুলো চলে গেলো তোড়া টেরই পেলো না।

হঠাৎ কুশান প্রবেশ করলো রুমে।

ফর্মাল প্যান্টের সাথে ইন করে পরা ফুল হাতা শার্টের স্লিভ গুটিয়ে রাখা ভার্সিটি আর প্রাইভেট থেকে ফেরত আসা ক্লান্ত কুশানকে দেখামাত্র তোড়া এগিয়ে গেলো।

চলবে,#আমি_ফাইসা_গেছি(১৫)
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

কুশান ভাইয়া!আজ আমরা অনেক মজা করলাম।ভাবি যে এতো মিশুকে স্বভাবের সত্যি আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।আমি,সোনিয়া আর ভাবি একসাথে বসে এতোক্ষণ কেরাম খেললাম,বিকালবেলা কফি খেতে খেতে অনেক মজার মজার গল্প করলাম।ভাবি এতো মজার মজার জোকস জানে আমরা দুইজন তো হাসতে হাসতে একদম গড়াগড়ি খাচ্ছিলাম।সত্যি খুব এনজয় করেছি আজকের দিনটা।তাই না ভাবি?
এই বলে সুমন তোড়ার দিকে তাকালো।

তোড়া কিছু বলার আগেই সোনিয়া বললো,হ্যাঁ কুশান ভাইয়া।আজ সারাদিন আমরা ভাবির সাথেই ছিলাম।

সুমন আর সোনিয়ার মুখে এরকম কথা শুনে কুশান হাসতে হাসতে বললো,

তাহলে তো আমি বাসায় এসে তোদের সবাইকে ডিস্টার্ব করে ফেললাম?

সুমন তখন নিজেও হাসির ছলে বললো, তা অবশ্য ঠিক বলেছিস ভাইয়া।তুই না আসলে আরো কিছুক্ষন খেলতে পারতাম আমরা।তুই এসে মজাটা একদম নষ্ট করে দিলি।

কুশান তখন বললো তাহলে আমি আবার চলে যাই।যাতে তোরা আবার এনজয় করতে পারিস।

সোনিয়া তখন সুমন কে বললো,ভাইয়া?তুই কি সব ইয়ারকি শুরু করলি?
চল না এখন আমরা চলে যাই।কুশান ভাইয়া মাত্র বাসায় ফিরলো।ও ফ্রেশ হয়ে নিক এখন।

–আচ্ছা ভাবি আসি এখন।এ ভাইয়া যাই তাহলে এই বলে সোনিয়া সুমনকে টানতে টানতে রুম থেকে নিয়ে গেলো।

কুশান তার ব্যাগ টা টেবিলের উপর রেখে ঘেমে যাওয়া শার্ট টা খুলতে ধরতেই তোড়া তাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
আই মিস ইউ ভেরি মাচ কুশান।এতো গল্প আর আড্ডার মাঝেও বার বার শুধু তোমার কথাই মনে হয়েছে।নিশ্চয় তুমিও আজ সারাদিন আমাকে অনেক বেশি মিছ করেছো?

তোড়ার এমন আবেগঘন কথা শুনেও কুশান কোনো রিয়্যাক্ট করলো না। সে উলটো তোড়ার হাত সরিয়ে দিয়ে তার শার্ট টা খুলে ওয়াল হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রেখেই ওয়াশরুমের দিকে চলে গেলো।

–ব্যাপার কি? কুশান এরকম রিয়্যাক্ট করলো কেনো?কুশান কেনো কোনো কথা বললো না?
কু,,,,,।তোড়া কুশানের নাম ধরে চিৎকার করতে ধরে থেমে গেলো।আর নিজেই নিজেকে শান্ত্বনা দিয়ে বললো,
কন্ট্রোল তোড়া কন্ট্রোল!নিজের মুখ কে এখন সংযত কর।এখন একদম কোনো কথা বলবি না।বেচারা মাত্র বাসায় ফিরেছে।সেজন্য বড্ড ক্লান্ত সে।তাছাড়া সারাদিন ধরে তোকে একবারের জন্যও কাছে পায় নি।মন মেজাজ সেজন্য তার ভীষণ ভাবে বিগড়ে আছে।
এজন্য এখন কিছু বলা যাবে না তাকে।

হঠাৎ জারিফ চৌধুরীর কন্ঠ ভেসে উঠলো।

তোড়া মা?এদিকে একটু এসো তো?
তোড়া তার শশুড়ের ডাক শোনামাত্র তাড়াতাড়ি করে ওনার রুমে চলে গেলো।
তোড়াকে দেখামাত্র কামিনী বললো, সবার জন্য সন্ধ্যার নাস্তা কি রেডি করেছো?

তোড়া কামিনীর কথা শুনে জিহবায় কামড় দিয়ে মনে মনে বললো ,
সে তো কেরাম খেলার চক্ররে ভুলেই গিয়েছিলো নাস্তার কথা।এই জয়া আর টুনিও তো তাকে মনে করে দিলো না একবার।এখন আবার কুশানও মাত্র ফিরলো বাসায়।এখন সে কোনদিকে যাবে?রান্নাঘরে?না নিজের রুমে?
এদিকে কুশান যদি তাকে রুমে না দেখে তাহলে তো একদম চিল্লাচিল্লি শুরু করে দিবে।এখন কি করবে তোড়া ভেবে পাচ্ছে না।

কামিনী তোড়াকে চুপচাপ থাকা দেখে বললো, কি হলো?ওভাবে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলে কেনো?আমার কথা কি শুনতে পারো নি নাকি?

–হ্যাঁ আম্মু শুনেছি।এই বলেই তোড়া সোজা রান্নাঘরের দিকে চলে গেলো।
কিন্তু তোড়া রান্নাঘরে গিয়ে দেখে টুনি আর জয়া কি যেনো রান্না করছে।
তোড়া ওদের কে দেখে বললো কি রে কি করছিস এখানে?

টুনি তখন বললো,ভাবি খালা আর খালুজানের জন্য চা আর আপুদের জন্য কফি রেডি করছি।

তোড়া তা শুনে বললো আমাকে একবারও ডাকলি না যে?আমি তো একদম ভুলেই গিয়েছিলাম।

–আপনি,সোনিয়া আপু আর সুমন ভাইয়ার সাথে ঘরে বসে খেলছেন দেখে আর ডাক দেই নি।সেজন্য ভাবলাম আপনাকে না বলেই নাস্তা বানায়।

–খুব ভালো করেছিস।আমার একদম মনেই ছিলো না।আব্বু আর আম্মু তো নাস্তা খাবে এখন।তোড়া এই বলে আর কথা না বাড়িয়ে জারিফ চৌধুরীর জন্য দুধ চা,কামিনীর জন্য চিনি ছাড়া রং চা আর পিরিচে কিছু সবজি পাকোড়া নিয়ে সবগুলো ট্রে তে করে কামিনীর রুমে চলে গেলো।

তোড়া খুব তাড়াহুড়ো করছিলো।সে নাস্তা গুলো দিয়েই যেতে ধরলো, তা দেখে জারিফ চৌধুরী বললো, মা বসো একটু।এতো তাড়াহুড়ো করছো কেনো?একসাথে নাস্তা করি।

তোড়া তখন বললো, না মানে আব্বু কুশান এসেছে।ওর জন্য কোল্ড কফি রেডি করতে হবে।এই বলেই তোড়া বের হয়ে গেলো রুম থেকে।

কুশানের কথা শোনামাত্র কামিনী একটা জোরে করে নিঃশ্বাস ছাড়লো।কামিনী তো ধরে নিয়েছে কুশান তাকে পুরোপুরিই ভুলে গিয়েছে।তা না হলে বাসায় ফিরেও একটিবার মায়ের সাথে দেখা করলো না?এতোই পরিবর্তন এসেছে কুশানের মাঝে।তাহলে মানুষ যা বলে সেটাই বোধ হয় ঠিক।আসলেই ছেলেরা বিয়ে করে পর হয়ে যায়।সারাদিন বাসায় ছিলো না,একটিবার ফোন করে জিজ্ঞেস ও করলো না তার আম্মু কি করছে?আগে ভার্সিটিতে গেলে কতবার কল দিতো?আর এখন বাসায় এসেও ঘরের মধ্যে চুপটি করে বসে আছে।

জারিফ চৌধুরী কামিনীকে চুপচাপ থাকা দেখে বললো,চা ঠান্ডা হয়ে গেলো কামিনী।ওসব আজাইরে চিন্তা করে কোনো লাভ নেই।তুমি যেটা ভাবছো তেমন কিছুই হয় নি।তোমার ছেলে এখনো তোমারই আছে।

কামিনী জারিফ চৌধুরীর কথা শুনে চা টা আবার ট্রে তে রেখে বললো,আমি আজাইরে চিন্তা করছি মানে?তুমি কিন্তু ইদানীং আমার ব্যাপারে বেশ নাক গলাচ্ছো।আমাকে নিয়ে একটু কম ভাবো।

–আমি আবার কি করলাম তোমায়?তুমি চা খাওয়া বাদ দিয়ে ছেলেকে নিয়ে ভাবছো আমি শুধু সেটা বললাম।
কামিনী জারিফ চৌধুরীর কথা শুনে রাগ করে বললো, আমি কখন বললাম যে আমি কুশানের কথা চিন্তা করছি?

ঠিক তখনি কুশান রুমে প্রবেশ করলো।

কুশানকে দেখামাত্র জারিফ চৌধুরী আর কামিনী দুইজনই চুপ হয়ে গেলো।
কুশান সোজা কামিনীর কাছে গিয়ে বসলো।আর জিজ্ঞেস করলো,
কি নিয়ে ঝগড়া করছো তোমরা?

–ঝগড়া? কখন ঝগড়া করলাম?এমনিতেই কথা বলছিলাম।
জারিফ চৌধুরীর কথা শেষ না হতেই কুশান কামিনী কে বললো, আম্মু মাত্র ফিরলাম বাসায়।এসে শুধু ফ্রেশ হয়ে নিয়েছি।

কামিনী তখন চায়ে চুমুক দিতে দিতে বললো, সে কথা আমাকে বলছিস কেনো?আমি কি শুনতে চেয়েছি তুই কখন ফিরেছিস?আর এখন শুনেই বা কি করবো?তোর সাথে গল্প করার বহুত লোক আছে এখন।
–এভাবে বলছো কেনো আম্মু?
কামিনী এবার কুশানের কথা এড়িয়ে গিয়ে বললো,

কিছু খেয়েছিস বাবা?

–না এখনো খাই নি।

কামিনী তখন বললো তুই নাকি আজ একাই গিয়েছিলি ভার্সিটিতে? তাহলে আসার সময়ও নিশ্চয় একাই এসেছিস?

–হুম।

জারিফ চৌধুরী সেই কথা শুনে বললো,বাবা কোনো সমস্যা হয় নি তো?

কুশান সেই কথা শুনে বললো,তোমরা আমাকে নিয়ে অযথাই চিন্তা করো বাবা।আমি কি এখনো সেই ছোটো কুশান আছি নাকি?আমি তো এখন বড় হয়ে গেছি।তারপরেও একা ছাড়তে ভয় করো।
আর কাউকেই যেতে হবে না আমার সাথে।আমার সাথে আমার ফ্রেন্ড রা তো সবাই থাকে।

এদিকে তোড়া কুশানের জন্য কোল্ড কফি রেডি করে ঘরে নিয়ে গিয়ে দেখে কুশান নাই।সেজন্য সে সোজা কামিনীর রুমে চলে এলো।কারণ সে জানে নিশ্চয় কুশান এখন তার মায়ের রুমে চলে গিয়েছে।

তোড়া কুশানকে কিছু জিজ্ঞেস না করেই ডাইরেক্ট কুশানের হাতে কফির মগ টা দিলো।কিন্তু কুশান আবার মগ টা তোড়ার হাতে দিয়ে বললো,
এখন খাবো না কিছু আমি।হোটেল থেকে খেয়ে এসেছি।এই বলে কুশান তার মায়ের সাথে গল্প করতে লাগলো।

তোড়া বুঝতে পারছে না কিছু।হঠাৎ কুশানের হলো টা কি?সে এরকম এড়িয়ে চলছে কেনো তাকে?
তোড়ার ভীষণ রাগ উঠলেও সে চুপচাপ রুম থেকে বের হয়ে গেলো।আর কুশানের জন্য রেডি করা কফির মগ টা ইরার রুমে নিয়ে গেলো।কারণ ইরাও কোল্ড কফি খায়।
ইরা কোনো কথা না বলে কফির মগ টা নিয়ে নিলো।এখন তারা তিন বোনই মোটামুটি শান্ত হয়ে গেছে।যেখানে তাদের আম্মুই তোড়াকে মাথায় তুলেছে,কিছু বলছে না তোড়াকে।সেখানে ওরা তোড়াকে অপমানজনক কথা বলে উলটো কামিনীর বকা কেনো খেতে যাবে?

শাহিন কে রুমে না দেখতে পেয়ে তোড়া ইরাকে বললো,

শাহিন দুলাভাইকে দেখছি না যে?

ইরা উত্তর দেওয়ার আগেই বেলকুনি থেকে শাহিন চিৎকার করে বললো, আমি এখানে আছি তোড়া।

তোড়া সেই কথা শুনে নিজেও বেলকুনির দিকে চলে গেলো,আর শাহিন কে বললো, দুলাভাই আপনার নাস্তা কি আনবো এখন?

শাহিন তখন তোড়ার কথা শুনে একটু জোরে জোরেই বললো,
আমার নাস্তা আমি নিয়ে এসেছি তোড়া। শুধু আমি না,মাহিন আর তুহিন ও নিয়ে এসেছে।আমাদের জন্য তোমাকে এতো বেশি ভাবতে হবে না।আমরা বাকি সবার মতো এতো কুঁড়ে নই।নিজের কাজ নিজেরা করতেই আমরা বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।

শাহিনের কথা শোনামাত্র ইরা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো।সে তখন কফির মগ টা রেখে নিজেও বেলকুনিতে চলে আসলো।আর শাহিন কে বললো, এই কি বললে তুমি?আমি কুঁড়ে?
শাহিন ইরার কথা শুনে জিহবায় কামড় দিয়ে আর কান ধরে বললো,বলো কি?তোমাকে আবার কখন আমি কুঁড়ে বললাম? তোমাকে অলস আর কুঁড়ে বলার সাহস আছে নাকি আমার?
ইরা সেই কথা শুনে রাগ করে তার মগে রাখা কফি গুলো শাহিনের দিকে ছুঁড়ে দিতে ধরলে তোড়ার দিকে তাকিয়ে থেমে গেলো।তোড়া না থাকলে হয় তো তাকে আজ ভিজিয়েই দিতো।
তোড়া ইরা আর শাহিনের এমন ঝগড়াঝাটি দেখে তাড়াতাড়ি করে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
কারণ তার এখন ঝগড়া দেখার সময় নাই।তার যে এখনো আরো দুই কাল নাগিনীর জন্য নাস্তা নিয়ে যাওয়া বাকি আছে।মিরা আবার খাবে হট কফি আর লিরা খাবে গ্রীন টি।সাথে কিছু স্ট্রবেরি, পেস্তা বাদাম আর খেঁজুর।

তোড়াকে কামিনী যেদিন থেকে এই সংসারের দায়িত্ব দিয়েছে সেদিন থেকেই তোড়া তার নিজের মনের মতো করে চালাচ্ছে সংসার টা?তোড়ার মধ্যে এখন বেশ পরিবর্তন ও এসেছে।তার আর আগের মতো অতো বেশি রাগ হয় না।কথায় কথায় অভিমান হয় না।তোড়া একদম পুরোপুরি সংসারী হয়ে গেছে।সে সবার সাথে এভাবে মিলেমিশে থাকতে চায় এই সংসারে।তোড়ার সাথে সাথে এই পরিবারের বাকি সকল সদস্য দের মধ্যেও বেশ পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।কিন্তু তাদের এই পরিবর্তন শুধুই লোক দেখানো না তারা সত্যি চেঞ্জ হইছে সেটা এখনো তোড়া বুঝতে পারছে না।

তোড়া সবার রুমে রুমে নাস্তা দেওয়া শেষ করে যখন নিজের রুমে চলে গেলো,সে দেখতে পেলো কুশান বিছানার উপর বসে পড়ালেখা করছে।খুব মনোযোগ দিয়ে বই দেখছে সে।
তোড়া তা দেখে ধীরে ধীরে কুশানের কাছে এগিয়ে গেলো আর কুশানের গলা ধরে বললো,

একজন যখন সম্পর্কে অনেক বেশি গভীর হয়ে যায় তখন অপর পাশের মানুষটার ব্যস্ততা বেড়ে যায়!সম্পর্কের শুরুতে যে বেশি গুরুত্ব দেয়, একটা পর্যায়ে এসে সেই আর আগের মতো থাকে না!তবে
এরকম ব্যস্ততা দেখালে আর অবহেলা করলে অপর পাশের মানুষটার কিন্তু ভীষণ অভিমান হয়।এটা তার অবশ্যই মনে রাখা উচিত।
আর এই অভিমানের মাত্রা যখন বেড়ে যাবে,তখন কিন্তু সে আবোলতাবোল ডিসিশন নিবে।তখন কিন্তু সামলানো কঠিন হয়ে যাবে।সো মাইন্ড ইট।

তোড়ার এরকম কথা শুনেও কুশান সেই আগের মতোই চুপচাপ হয়ে আছে।

ব্যাপার কি? এই শালা কিছু বলছে না কেনো?তোড়ার এবার ভীষণ রাগ হতে লাগলো।সে মনে মনে ভাবতে লাগলো,সে কি আর শখের বসে এই কুশানটারে মারধর করে আর ইচ্ছামত বকাবকি করে?না,এতো বেশি করে এরে ভালোবাসা দেখানো যাবে না,অতিরিক্ত ভালোবাসা দেখাতে যেয়ে এ অহংকারী হয়ে উঠেছে।
তোড়া এবার রাগ করে কুশানের বই বন্ধ করে সবগুলো বই টেবিলের উপর রেখে বললো,
এই তোর সমস্যা টা কি?কোনো কথা বলছিস না কেনো?না আমি এখন একটু ভদ্র ভাবে কথা বলি দেখে সেজন্য ভাবের ঠেলায় মাটিতে তোর পা পড়ছে না?

কুশান এবারও চুপচাপ।আর সে নিচ মুখ হয়ে আছে।

তোড়া তখন কুশানের মুখ টা উপরে তুলে বললো,
কুশান তোমার হয়েছে টা কি?এরকম কেনো করছো?কিছু তো বলো?
ভার্সিটিতে যাওয়ার সময় তো একেবারে ভদ্র ছেলে হয়ে গেলে,আমাকে না হলেও কমপক্ষে একশোটা কিস করলে,
আর মনে হয় দুইশোবারের মতো বললে,
আই মিস ইউ সোনাপাখি,আমার কলিজার টুকরা টা।ভীষণ মিস করবো আজ আমার জান পাখি টারে,কিছুতেই যেতে ইচ্ছে করছে না তোমাকে রেখে।

তাহলে ভার্সিটি থেকে এসেই হঠাৎ বোবা হয়ে গেলে কেনো?

তোড়া কিছু বুঝে উঠতে পারছিলো না।তবে সে খেয়াল করে দেখলো কুশানের চোখ লাল হয়ে গেছে। আবার তার গলার রগ গুলো স্পষ্ট ভাবে দেখা যাচ্ছে।কুশান রেগে গেলে তো এরকম অবস্থা হয় তার?কিন্তু কুশান কিজন্য রেগে আছে তার উপর?

তোড়া সেজন্য এবার একটু শান্ত হলো।তারপর কুশানের মাথায় হাত দিয়ে বললো, এই কুশান?কি হয়েছে তোমার?
তোড়া এখনও বুঝতে পারছে না কুশানের রাগের কারণ টা কি?
হঠাৎ কুশান তোড়ার হাত সরিয়ে দিয়ে বললো,ডোন্ট টাচ মি তোড়া।সরে যাও আমার সামনে থেকে।এই বলে সে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

তোড়াও তখন কুশানের পিছু পিছু চলে গেলো।কিন্তু তার আগেই কুশান কই যেনো চলে গেছে তোড়া বুঝতে পারলো না।তোড়া সেজন্য এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো।পরে আবার সে মনে মনে ভাবতে লাগলো,কুশান আবার তার মায়ের রুমে যায় নি তো?এই বলেই তোড়া কামিনীর রুমে চলে গেলো।কিন্তু গিয়ে দেখে কুশান নাই সেখানে।জারিফ চৌধুরী একাই শুয়ে আছে।আর কামিনী ফোনে কার সাথে যেনো কথা বলছে।

তোড়াকে দেখামাত্র জারিফ চৌধুরী বললো, মা কিছু বলবি?
তোড়া তখন বললো,আব্বু রাতে আপনার জন্য কি খাবার করবো সেটাই শুনতে আসছিলাম।

জারিফ চৌধুরী যখন দেখলো কামিনী ফোনে ব্যস্ত তখন সে তোড়াকে বললো,রাতের দিকে একটু ভাপা ইলিশ আর চিংড়ি মাছের দোঁপেয়াজা করলে ভালো হতো?আসলে কামিনী রাতের দিকে জারিফ চৌধুরী কে এতো বেশি খেতে দেয় না।শুধু সবজি আর রুটি খেতে দেয়।কিন্তু এখন কেনো জানি জারিফ চৌধুরীর ভাপা ইলিশ আর চিংড়ির দোঁপেয়াজা খেতে ইচ্ছে করছে।

তোড়া জারিফ চৌধুরীর কথা শুনে মনে মনে ভাবতে লাগলো তার স্বামী আছে রাগ করে, এখন পর্যন্ত সে জানে না কেনো সে এভাবে ফুলে আছে?আর এদিকে তার শশুড় এসব কি রান্না করতে বলছে?
তোড়া তবুও সাহস করে বললো আচ্ছা আব্বু।আমি যাই এখন।তোড়া রুম থেকে বের হতেই টুনি এসে দাঁড়ালো। আর বললো,

ভাবি তুমি এখানে?আমি তোমাকে খোঁজার জন্য রুমে গিয়েছিলাম।কিন্তু গিয়ে দেখি তুমি নাই।কুশান ভাই শুধু একাই শুয়ে আছে।

তোড়া কুশানের কথা শুনে অবাক হয়ে বললো, কুশান রুমে আছে?

–হ্যাঁ রুমেই আছে।কিন্তু কুশান ভাইয়ার হয়েছে টা কি?কতবার জিজ্ঞেস করলাম তিনি রাতে কি খাবেন একটা উত্তর ও দিলো না?
আচ্ছা ভাবি রাতে কুশান ভাইয়ার জন্য ভাত না রুটি করবো?

–ভাতই কর।এই বলেই তোড়া রুমের দিকে যেতে ধরলো।
হঠাৎ সে আবার ফিরে তাকালো টুনির দিকে।আর বললো,এই টুনি রাতে একটু ভাঁপা ইলিশ আর চিংড়ি মাছের দোঁপেয়াজা করিস তো।আব্বু করতে বললো।

টুনি সেই কথা শুনে বললো,কিন্তু খালু তো রাতে রুটি খাবে।
–আজ ভাতই খাবে।
— খালা শুনলে কিন্তু রেগে যাবে ভাবি।
তোড়া তখন বললো আব্বু নিজের মুখে খেতে চাইলো।একদিন খেলে কিছু হবে না।

টুনি তখন বললো, কিন্তু ভাবি,আমার যে তেমন একটা ভালো হয় না। তুহিন দুলাভাই খুব সুন্দর করে বানায় এগুলো।দুলাভাইকে রান্না করতে বলি?

তোড়া সেই কথা শুনে বললো,না।বলেছি না এ বাসার কোনো ছেলে মানুষ আর রান্না করতে পারবে না।তুই বরং দুলাভাই এর থেকে একটু শিখিয়ে নেস।

তোড়ার কথা শুনে টুনি চলে যেতে ধরলে হঠাৎ তোড়া বললো, এই দাঁড়া।দুলাভাই এর থেকে শিখতে হবে না।এই বলে তোড়া ইউটিউবে সার্চ দিয়ে ভিডিও অন করে টুনির হাতে দিয়ে দিলো।আর বললো,
এই ভিডিও টা দেখে দেখে রান্না কর।ঠিক আছে?

–আচ্ছা ভাবি।এই বলে টুনি তোড়ার মোবাইল টা নিয়ে চলে গেলো।

আর তোড়া এক মুহুর্ত দেরী না করে আবার তার রুমে চলে গেলো।

কুশান বিছানায় শুয়ে আছে।তোড়া কোনো কথা না বলে নিজেও কুশানের পাশে গিয়ে শুইলো।
কিন্তু কুশান তোড়াকে শোয়া দেখে সাথে সাথে উঠে বসলো।আর চিৎকার করে বললো,

এভাবে আমার পিছু পিছু কেনো ঘুরছো তোড়া?তোমাকে তো বললাম আমার সামনে না আসতে।আমার পিছনে এভাবে না ঘুরে বরং সুমনের পাশে বসে কেরাম খেলো,আর দুইজন গায়ে গা লাগিয়ে গল্প করো।সারাদিন আজ ওর সাথে সময় কেটে ভালোই তো লাগছিলো তোমার,তাই না?তাহলে এখন আমার কাছে কি?

তোড়া কুশানের মুখে এরকম আশ্চর্যজনক জনক কথা শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।সে তো ভেবেছিলো নিশ্চয় বড়সড় কিছু ঘটে গিয়েছে।আর জন্যই কুশান এরকম বিহেভ করছে তার সাথে।
কিন্তু এখন কুশানের মুখে সুমনের কথা শুনার পর সে হাসবে না কাঁদবে সত্যি বুঝতে পারছিলো না।তবে তোড়ার বেশ হাসিই পাচ্ছিলো।সে তার হাসিকে কন্ট্রোল করতে লাগলো।তবুও কন্ট্রোল করতে পারছিলো না।

তোড়াকে আবার এভাবে হাসতে দেখে কুশানের পুরো শরীর রাগে কাঁপছিলো।

তোড়া এবার কুশানকে জড়িয়ে ধরে বললো,এই কুশান!তুমি কি পাগল হয়ে গেলে নাকি?প্লিজ শান্ত হও।আরে!সুমন তো আমার ছোটো ভাই এর মতো হয়।সম্পর্কে আমরা দেবর ভাবি।আর দেবর ভাবির সম্পর্ক তো একদম ভাই বোনের সম্পর্কের মতোই হয়।তুমি সেটা নিয়ে সন্দেহ করছো?

কুশান তখন তোড়াকে সরিয়ে দিয়ে চিৎকার করে বললো,
এই চুপ!তুই হাসছিস?রাগে আমার শরীর জ্বলে যাচ্ছে আর তোর হাসি পাচ্ছে?কিছু বলি না দেখে ভাবিস না আমি দূর্বল।তুই যখন যেটা খুশি সেটাই করতে পারিস কিন্তু এভাবে অন্য ছেলের গায়ের সাথে ঢলাঢলি করতে পারিস না।সেটা এখন আমার ভাই হোক আর তোর ভাই হোক।
কুশান এবার তোড়ার গা টেলা দিয়ে বললো,আর কি বললি সুমন তোর ছোটো ভাই এর মতো হয়?ও আমার ছোটো ভাই হতে পারে কিন্তু তোর নয়।অন্যদিকে সে তোর সমবয়সীও।এরকম সমবয়সী ছেলের সাথে আমি তোকে মিশতে দিতে পারি না।
কুশান এবার রাগ করে ফুলের তোড়া টা হাতে নিয়ে মেঝেতে আছাড় দিয়ে বলতে লাগলো,
আমি নিজের চোখে দেখলাম তোরা দুইজন গায়ের সাথে গা লাগিয়ে পাশাপাশি বসে আছিস।ছিঃ তোড়া।আমি তো ভাবতেই পারছি না বাসায় না থাকলে তুই এসব রঙ তামাশা করে বেড়াবি।এই বলে কুশান রুম থেকেই বের হয়ে গেলো।

এদিকে তোড়া কুশানের এরকম ব্যবহার দেখে একদম স্তব্ধ হয়ে গেলো।বিশেষ করে সে কুশানের মুখে তুই কথা শুনে একদম আকাশ থেকে মাটিতে পড়ে গেলো।কুশান সামান্য একটা বিষয় নিয়ে তোড়ার সাথে যে এরকম ব্যবহার করবে সেটা তোড়া কল্পনাও করে নি কখনো।।কারণ এই প্রথমবার কুশান তাকে তুই করে বললো।

কুশান রাগের ঠেলায় ছাদে গিয়ে আগে একটা সিগারেটে আগুন ধরিয়ে ধোঁয়া ছাড়তে লাগলো।এইভাবে সে বেশ কয়েকটা সিগারেট খেয়ে চোখে মুখে পানি দিয়ে তবেই ছাদ থেকে নেমে এলো।
কুশান নিজেও বুঝতে পারলো সে রাগ করে তোড়াকে তুই বলে ফেলেছে।সেজন্য সে এবার নিজের রাগ কে কন্ট্রোল করে আবার রুমে চলে গেলো।

তোড়া এখনো সেই আগের জায়গাতেই দাঁড়িয়ে আছে।
কুশান এবার তোড়ার গা ধরে শান্ত সুরে বললো,

সুমন মোটেও ছোটো ছেলে নয়।সেও এবার অনার্স ফাস্ট ইয়ারে।সে হিসেবে দেখতে গেলে তোমরা দুইজন প্রায় সেম এজের।এজন্য আমি বলি কি ওর সাথে বেশি মিশবে না তুমি।আমার এসব পছন্দ না।তুমি তো জানো আমি তোমার সাথে অন্য ছেলেকে সহ্য করতে পারি না।

কুশান তোড়াকে কি বলছে সে দিকে তার বিন্দুমাত্র খেয়াল নাই।সে তো এখনো রাগে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো কুশানের দিকে।কেনো কুশান তাকে তুই করে বললো?
অথচ সে যে একটুতেই তুই তুই করে বলে সেটাতে কিছু যায় আসে না তার।তোড়া কি কুশানের রাগ ভাঙাবে?উলটো এখন সে নিজেই রেগে গেলো।
তোড়ার চোখ দুটো একদম আগুনের গোলার মতো জ্বলজ্বল করছিলো।এই চোখের দর্শনে এই বুঝি সে কুশানকে পুড়ে ভস্ম করে দেয়?

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here