#আমি_সেই_তনু
#তৃতীয়_পর্ব
#জান্নাত_উল_ফেরদৌস
তনু কিছু বলতে যাবে তখনই আকাশ তনুর ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে চুপ করিয়ে দিল……
আকাশ বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে তনুর ঠোঁট পর্যবেক্ষণ করছে তনু ভয়ে কুকড়ে গেছে,ঘেমে যাচ্ছে তনু। কী করছে এসব আকাশ ভাইয়া!!
হঠাৎ আকাশ এর হুস ফিরে আকাশ উঠে দাড়ায় কি করতে যাচ্ছিল আকাশ ভেবে ই রক্ত হিম হয়ে আসে আকাশের!! আকাশ কিছু না বলে ই তনুর রুম থেকে বেরিয়ে যায়…
ভয়ে তনুর চোখে মৃদু জলে উৎযোল হয়ে গেছে, আকাশ ভাইয়া এমন করলো কেনো!!
আকাশ ছাদে দাড়িয়ে আছে সকালের আকাশ দমকা হাওয়া খেতে বেশ ভালো লাগে তার… মনে মনে আকাশ নিজেকে বলছে , সংযত করো নিজেকে আকাশ! কী করতে যাচ্ছিলে তুমি!? তনু একটা বাচ্চা মেয়ে তোমার কোনো অধিকার নেই এই মেয়ের ওপর কেনো বার বার ভুলে যাচ্ছো!? আকাশ তো এমন নয় তবে কেনো তনু কে দেখলে ওর এমন লাগে…. এসব ভাবতে ভাবতে আনমনে আনমনে তাকিয়ে রইলো আকাশের দিকে।
রোহিত এসে আকাশের কাধে হাত দিল,আকাশ পেছনে ফিরলো বাবা এত সকালে?
রোহিত: কিরে কিছু ভাবছিস নাকি আনমনে তাকিয়ে আছিস যে?
আকাশ:তুমি কখন এলে বাবা?
রোহিত: এইতো কিছুক্ষন, তোর সাথে কিছু কথা ছিল ভালোই হলো এখানে এসে।
আকাশ: কী কথা বাবা?
রোহিত: দেখ আমার বয়স হয়েছে এসব ব্যাবসা মিটিং আমি আর পারছি না !
আকাশ: কেনো করছো এসব আমি তো বলেছি এসব তোমায় এখন আর করতে হবে না কেনো করো?
রোহিত: আমি চাইনা তুই আর বিদেশ যা! Usa এর ব্যাবসা টা দিহান এর ওপর ছেড়ে দে।
আকাশ: কেনো একই কথা বার বার বলো বাবা? দিহান এসব একা পারবে না….
রোহিত: তুই যদি এবার আমার কথা না শুনিস তবে আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো না হয় কিছু একটা করে বসবো বলে দিলাম! এই বুড়ো বয়সে আর ইচ্ছা করে না নিজের ছেলে দূরে থাক!
আকাশ: বাবা কি পাগলামো শুরু করলে!?
রোহিত: আকাশের হাত ধরে অশ্রু মিশ্রিত চোখে, জীবনে তোর কাছে কিছু চাই নি আজ আমার কথা টা রাখ?
আকাশ কোনো ভাবে ই আর না করতে পারলো না।
আচ্ছা বাবা আমি দীহান কে বলে দিচ্ছি আমি আর ফিরছি না, এবার খুশী?
রোহিত আকাশ কে জড়িয়ে ধরলো, thank you so much my son.
দিহান আকাশের চাচাতো ভাই এত দিন দুজনে এক সাথে ই ব্যাবসা সামলেছে, চাচা মারা যাবার পর আন্টি কে নিয়ে দিহান কে আকাশ ই usa নিয়ে যায় সেখান থেকে ই ওরা ওখানে সেটেল… এখন থেকে আকাশের বিজনেস টা দিহান ই দেখবে।
রোহিত আর আকাশ নিচে নেমে আসলো, লতিফা রান্না করছে,,,, শায়লা লতিফার হাতে হাতে কাজ করে দিচ্ছে, শায়লা ও এখানে কাজ করে।
তনু আকাশ কে দেখে লম্বা ঘোমটা দিয়ে রুম এ চলে গেলো, আকাশ জানে তনু কেনো এমন ভয় পাচ্ছে তাকে। আকাশ কিছু বলতে গিয়ে ও বললো না ।
শায়লা সবাই কে খেতে দিচ্ছে আকাশ আর রোহিত খেতে বসলো, লতিফা তনু কে ডাকছে…. তনু এই তনু খেতে আয় মা? এই মেয়ে টা এতো বেখেয়ালি হয়েছে না !! বলতে বলতে তনুর ঘরে গেলো, তনু খাটে চুপ চাপ বসে আছে।
লতিফা: কিরে তনু খাবি না?
তনু: খিদে নেই খালামনি।
লতিফা: এসছে খিদে নেই! খুব খিদে আছে আমি জানি আমার তনুর মণ খারাপ বলতে বলতে হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো তনুর…
আকাশ খাচ্ছে, লতিফা তনুকে নিয়ে আকাশের পাশের চেয়ারে ই বসালো, তনুর মাথায় লম্বা করে ঘোমটা দিয়ে রেখেছে খুব একটা তাকাচ্ছে না আকাশের দিকে।
লতিফা তনু কে খাউইয়ে দিচ্ছে তনু মজা করে যাচ্ছে আর ড্যাপ ড্যাপ করে ঘোমটার নিচে দিয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে… আকাশ একবার তনুর দিকে তাকিয়ে আবার খাবার নিতে নিতে বলছে, আমাদের তনু বাবু কে কি এখনও খাইয়ে দিতে হয় নাকি? তনু এবার আর চুপ থাকতে পারলো না… ও খালামনি দেখো না আকাশ ভাইয়া সব সময় আমায় বাবু বলে আমি বড়ো হয়ে গেছি না বলো?
লতিফা হাসলো..
আকাশ: তনু রেডি হয়ে নিস তোকে নিয়ে বের হবো, হঠাৎ বের হবার কথা শুনে তনুর ভয় হলো। কাল রাতে আনন্দ লাগলেও আজ ভয় লাগছে… তনু আমতা আমতা করে, না মানে ভাইয়া আজ তো আমার ক্লাস আছে অন্য একদিন যাই?
আকাশ কিছু টা বুঝতে পেরে সম্মতি দিলো।
খাওয়া শেষ করে রোহিত তনু কে স্কুল এ ড্রপ করে দিতে গেলো আর আকাশ আজ তার বাবার অফিসে গেলো…. রোহিত এর আজ থেকে ছুটি।
তনু সব নিয়েছিস ত মা? ওয়াটার পট নিয়েছিস? (রোহিত)
তনু: জ্বি আঙ্কেল সব নিয়েছি। তনু কে স্কুল এ ড্রপ করে দিয়ে রোহিত বাসায় ফিরলো।
এইদিক এ রোহিত এর অফিস এ নতুন বস দেখে সবার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেছে…. রোহিত এর কোম্পানির ফ্যাশন ডিজাইনার খুবই সুন্দরী ও চতুর সভাবের।
আকাশ কে প্রথম দেখে ই সে ফিদা….
আকাশ প্রথম দিন এসে ই অফিস এর সব ফাইল চেক করছে, খুব পাকা বিজনেসম্যান আকাশ তার চোখ ফাঁকি দেওয়া সহজ না সব হিসেব মিলিয়ে নিচ্ছে, এমন সময় ফ্যাশন ডিজাইনার প্রীতি এর আগমন ।
আসতে পারি?
আকাশ ফাইল দেখতে দেখতে আসুন?
প্রীতির পরনে ইন করা শার্ট আর খুবই টাইট ধরনের প্যান্ট পড়া আর শার্ট এর বোতাম দুই টা খোলা🥴
স্যার বলছিলাম আজ কি আপনি ফ্রী আছেন?
আকাশ: কেনো?
প্রীতি: ঘনো নিঃশ্বাস এর সাথে না মানে একটু ফ্রী টাইম স্পেন্ড করতাম খুব ক্লান্ত লাগছে…
আকাশ : চেয়ার থেকে উঠে দাড়িয়ে how dare you to say that !? রাগে আকাশের চোখ লাল হয়ে গেছে।
প্রীতি : im sorry sir!
আকাশ: get out from my room right now, dont show me your face again!!!
প্রীতি : সরি স্যার বুঝতে পরি নি , বলে মাথা নিচু করে চলে গেলো।
আকাশ: ইডিয়েট!! বলে চেয়ার এ বসে পড়লো।
আকাশ অনেক ক্লান্ত, বিকেলে বাসার উদ্দেশ্যে গাড়ি বের করলো এর মাঝে লতিফার কল… Hello আকাশ আসার সময় তনু কে ড্রপ করে আনিস তো…
আকাশ: okay মা।
আকাশ গাড়ি ঘুরিয়ে তনু কে ড্রপ করতে গেলো,তনুর স্কুল এর সামনে গাড়ি দাঁড় করালো গাড়ির কাচ টা নামতে ই দেখলো তনু বের হচ্ছে সাদা স্কুল ড্রেস হতে ঘড়ি চুল গুলো দুই পাশে বেনি করা, একটা ওয়াটার পট হতে হেটে হেঁটে আসছে। তনুর সাথে আরো কয় একটা মেয়ে…
আকাশ গাড়ি থেকে বের হলো পরনে নীল শার্ট ইন করা গলায় টাই হতে ঘড়ি মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি চোখে আইগ্লাস । তনুর আসে পাশের মেয়ে গুলো আকাশ কে দেখে যেনো তাদের চোখ ওখানে ই আটকে আছে।
তনু: ভাইয়া আপনি?
আকাশ: মা তোকে বাসায় নিয়ে যেতে বললো বাবা আসতে পারবে না অসুস্থ তাই।
তনু বাধ্য মেয়ের মত মাথা নেড়ে গাড়ি তে গিয়ে বসলো।
আকাশ ড্রাইভ করছে তনু পাশে বসা…
আকাশ: তনু ফুচকা খাবি?
তনু ফুচকার কথা শুনে মুখে খুশির আভা ফেললো মাথা নেড়ে সায় দিলো।
আকাশ: জানে তনুর পছন্দ তনুবাবুর আবদার তাই।
পাশে ই গাড়ি পার্ক করে তনু কে ফুচকা কিনে দিলো, তনু খাচ্ছে আর আকাশ দেখছে মুচকি মুচকি হাসছে।
এতক্ষনে তনুর মুখে কথা ফুটলো…. Thanks ভাইয়া আপনি অনেক ভালো😊
আকাশ: তনু ঘুরতে জাবি ?
তনু: কোথায়?
আকাশ: আমি যেখানে নিয়ে জাই?
তনু জানে ছোটো সময় আকাশ ভাইয়ার হাত ধরে কত ঘুরেছে তাই ভরসা করে মাথা নেড়ে সায় দিলো।
আকাশ তনু গাড়িতে গিয়ে আবার বসলো, গাড়ি ছুটে চললো আপন গতিতে মাঝে দুজনে অনেক গল্পঃ করলো হঠাৎ গাড়ি বন্ধ হয়ে গেলো।
তনু: কি হয়েছে?
আকাশ: বুঝতে পারছি না দাড়া দেখছি…
আকাশ অনেক চেষ্টা করে ও গাড়ি ঠিক হলো না ।
আকাশ বললো তনু আমাদের টেক্সী তে বাসায় ফিরতে হবে গাড়ি আর চলবে না…..
তনু বেরিয়ে আসলো, আকাশ বললো চল একটু হাটি তনু ও খুশি হয়ে সায় দিল হাঁটতে হাঁটতে কত দূরে চলে এসেছে কে জানে সন্ধ্যা নেমে রাত হচ্ছে…. এবার তারা টাক্সি এর জন্য অপেক্ষা করছে রাস্তায়। হঠাৎ ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো আকাশ ছায়া খুঁজতে খুঁজতে একটা বিল্ডিং এর নিচে দাড়ালো।
তনু লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে, এতক্ষনে আকাশের তনুর দিকে চোখ পড়ল বৃষ্টি তে সাদা ড্রেস ভেদ করে তনুর শরীর পর্যবেক্ষণ করা যাচ্ছে… তনু স্কুল ব্যাগ সামনে ধরে দাড়িয়ে আছে মাথা নিচু করে।
আকাশ বুঝতে পারে তার কোট টা তনুকে খুলে জড়িয়ে দিলো। তনুর শরীর এ বয়ে গেলো এক শিহরণ….
একটা ট্যাক্সি দেখা যাচ্ছে রাত নেমে এসেছে রাস্তায় লাইট এর মৃদু আলো আকাশ টেক্সী দাড় করলো তারা টেক্সী তে উঠলো … তনু ভিজে শীতে কাপছে আকাশ তনুর দিকে তাকিয়ে আছে, তনুর চোখে ঘনো পলোল ঠোঁট এর কম্পন আকাশ কে দুর্বল করে দিচ্ছে …. আকাশ তনু কে হঠাৎ জড়িয়ে ধরলো তনু যেনো ঠান্ডা থেকে রেহাই পেলো কিন্তু কেমন শিহরণ তনু কে স্পর্শ করলো……
চলবে???