#আমি_সেই_তনু
#পর্ব_১৫
#জান্নাত_উল_ফেরদৌস
আকাশ রিপোর্ট হাতে নিয়ে মনে মনে ভাবছে। আকাশের হয়তো কোথাও ভুল হচ্ছে, তনু কেনো অন্য কেউ হতে যাবে। বিয়ে হয়েছে তাই হয়তো নিজেকে পরিবর্তন করার চেষ্টা করছে। আর কিছু না ভেবে রিপোর্ট নিয়ে বেরিয়ে গেলো….
সারাদিন অফিস এ কাটিয়ে রাতে বাসায় ফিরে দেখে তনু শাড়ী পরে খুব গুছিয়ে হাঁটছে , আকাশ ঐদিকে নজর না দিয়ে টিভি অন করল… হঠাৎ নিউজ দেখে আকাশের পায়ের তলার মাটি সরে গেলো !! তনুর স্কুল এর ইরফান স্যার নর্দমার পেছনে মরে পড়ে আছে, কে বা কারা মেরেছে তার কোনো হদিস নেই।
তনু নিউজ টা দেখে কোনো প্রতিক্রিয়া করলো না!! আকাশ তনুর এমন আচরণে বেশ অবাক হলো ।
রাতে খাবার খেয়ে রুমে বসে ল্যাপটপ দেখছে , তনু কে রুমে দেখে আকাশ কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না । তনু আকাশের ব্যাবহারে পাত্তা না দিয়ে আকাশের কাছে চলে গিয়েছে…
আকাশ: দেখ তনু আমার কাজ আছে অফিস এর কাজের চাপে আমি একটি টেনশন এ আছি আমাকে কিছুদিন একা থাকতে দে। কয় একদিন তুই তোর ঘরে থাকলে খুশি হবো( রাগী চোখে )
তনু আকাশের রিয়াকশন বুঝে আর কথা বাড়ালো না, যতই হোক পুরুষ মানুষ না চাইলে মেয়েরা চাইলে ও ভালোবাসা পাওয়া সম্ভব না!!
তনু: ঠিক আছে তুমি যা বলবে তাই হবে ,, তোমার ভালোর জন্য কিছু দিন আমি নিজের ঘরে থাকবো। বলে নিচে চলে গেলো তনু।
আকাশ যেনো দ্বিধায় আছে খুব!!
কেটে গেছে ২বছর””
আকাশ বিভিন্ন বাহানায় তার পর থেকে আর তনু কে নিজের কাছে আসতে দেয় নি আর পারলে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
তনু আর লিখা পড়া করে না, কারণ তনুর পড়াশোনায় অমনোযোগিতা, বিভিন্ন অপরাধের জন্য তনু কে স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।
তনু আজকাল নাইট ক্লাবে যাচ্ছে , ছোটো ছোটো জমা পরে ঘুরে বেড়ায়, লতিফা তনু কে কিছু বললে আইন এর কথা বলে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেয় । তাই লতিফা আর কিছু বলে না, রোহিত এর ও শরীর টা ভালো নেই এক বার হার্ট অ্যাটাক ও হয়ে ছিল তারপর থেকে একদম বেড রেস্ট দিয়েছে ডক্টর।
অফিস পার্টির পর আকাশ অনেক ড্রিংক করে বাসায় ফিরে , লতিফা কাজ করে ক্লান্ত অবস্থায় ঘুমিয়ে পড়েছে । তনু টিভি দেখছে, আকাশ কে দরজায় মাতাল অবস্থায় দেখে তনু আকাশ কে ধরে আকাশের রুমে নিয়ে যায়….
মাতাল অবস্থায় আকাশ তনুর মুখটা দেখে আকাশের তনুর সাথে কাটানো পুরনো স্মৃতি মনে পড়ে, মাতাল অবস্থায় তনুকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে, আকাশের স্পর্শ পেয়ে তনু ভীষণ খুশি হয়!!
আকাশ তনুর চুল সরিয়ে তনুর কাধে যখন চুমু খেতে যাবে তখন আকাশ খেয়াল করে তনুর কাধের সেই তিল টা আর নেই!! বিয়ের আগে তনুর কাধে চুমু খেতে গিয়ে তিল টা দেখেছিল আকাশ।
তনু কে এক ধাক্কা দিয়ে মাতাল অবস্থায় দূরে সরিয়ে দেয় আকাশ, তুই আমার তনু না! কে তুই? বল কে তুই?
আকাশের মুখে এমন প্রশ্ন শুনে ঘাবড়ে যায় তনু!! এসব কি বলছো ভাইয়া আমি ই তনু!!
আকাশ: না তুই আমার তনু না, তুই তনু হতে ই পারিস না । আমার তনু কোথায় …? বলতে বলতে ঘুমিয়ে যায় আকাশ।
তনু ভয়ে, দৌড়ে নীচে চলে আসে তনু ঠান্ডার মধ্যে ঘেমে যাচ্ছে। যেনো অজানা ভয় অস্টে পিস্টে বেধে ফেলছে তনু কে!!
আকাশ শুধু আমার শুধু ই আমার! আমি আর কারোর হতে দিবো না আকাশ কে। বির বির করে এসব বলে যাচ্ছে তনু!!
পরদিন সকালে, আকাশ কিছু মনে করতে পারছে না। মাথা টা ও ভীষণ ঝিম ঝিম করছে!! একটা শাওয়ার নিয়ে নাস্তা করে বেরিয়ে গেলো অফিসে…. অফিসের সামনে রাস্তায় ছোটো একটা অ্যাকসিডেন্ট হয়ে যায় আকাশের…
অফিসের স্টাফ আকাশ কে দেখে, আপনি ঠিক আছে স্যার ?
আকাশের পা অনেক টা কেটে গেছে হাতে ও বেশ আঘাত লেগেছে। আমি ঠিক আছি অভিক
অভীক আকাশের অফিসের একটা বিশ্বস্ত কর্মচারী।
অভীক: না স্যার রক্ত পড়ছে তো!! চলুন আপনাকে হসপিটালে নিয়ে জাই।
অভীক আকাশকে ধরে হসপিটালে নিয়ে গেলো, ডক্টর দেখে আকাশ কে ওষুধ লিখে অল্প কেটেছে তাই নার্স কে ড্রেসিং করে দিতে বললো।
আকাশ অন্য দিকে তাকিয়ে ফোন চাপছে, নার্স ও আকাশের মুখের দিকে না দেখে। পায়ে ড্রেসিং করছে, ব্যান্ডেজ করে দিয়ে নার্স নিচের দিকে তাকিয়ে ই বললো ওষুধ গুলো ঠিক মত খাবেন খুব তাড়াতাড়িই রিকোভার করে উঠবেন।
কণ্ঠ টা শুনে আকাশ স্তব্ধ হয়ে গেলো!! আকাশের মধ্যে শিহরণের স্রোত বয়ে যাচ্ছে…
#আমি_সেই_তনু
#বনাস_পার্ট
#জান্নাত_উল_ফেরদৌস
কণ্ঠ টা শুনে আকাশ স্তব্ধ হয়ে গেলো!! আকাশের মধ্যে শিহরণের স্রোত বয়ে যাচ্ছে…
নার্স নিচের দিকে তাকিয়ে নিজের কাজ করছে।
আকাশের চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে একটু পরে ই বাঁধ ভাঙবে!!
আকাশ:তনু!?
তনু ডাক টা শুনে নার্স যেনো ওখানে ই শক্ত হয়ে গেছে…
আকাশ নার্স এর দিকে তাকালো,,,, সেই বোকা সোকা মেয়ে টা পরনে নার্স এর পোশাক, থুতনি তে কুচকুচে কালো তিল, চঞ্চল চোখ যেনো আরো সুন্দর হয়েছে !!
আকাশের হাত দিয়ে নার্স এর থুতনি উচু করে দেখছে , আখন মেয়ে টা চোখে চোখ রাখতে পারে না !!
আকাশের চোখে পানি!! তনু আমার তনু , বলে ই তনুর সামনে আকাশ হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে শীতল চোখে তনুর দিকে তাকিয়ে, কোথায় গিয়েছিলি তুই? কী করে তোর আকাশ ভাইয়া কে ভুলে গেলি? তুই জানিস তোর মত দেখতে একটা মেয়ে তুই সেজে আছে? প্রমাণের অভাবে কাউকে কিছু বলতে ও পড়ছি না!!
তনু চোখের পানি মুছে , আকাশ ভাইয়া উঠুন আমি সব জানি, এখানে আমাকে তনু বলে ডাকবেন না plz আমার সাথে আসুন ।
অভীক চুপ চাপ দাড়িয়ে আছে , তনু আকাশ কে চোখে ইশারা করে যাতে অভীক না আসে তাই আকাশ অভীক কে কিছু কাজ বুঝিয়ে দিয়ে অফিস এ যেতে বলে ।
তনু হসপিটাল থেকে আকাশ কে একটা বাসায় নিয়ে আসে, তনু একটা লোকের সাথে আকাশের পরিচয় করায় । উনি এই হসপিটালের ডাক্তার।
তনু: আমি জানি ভাইয়া আপনার মনে অনেক প্রশ্ন, আমি আপনাকে যে আর একবার দেখতে পাবো এই আশা ছেড়ে ই দিয়েছিলাম। আমাদের বিয়ের পরে যখন আমি প্রথম স্কুল এ জাই তখন ক্লাস শেষে সবাই চলে যাওয়ার পরে আমি প্রতিদিনের মত আপনার আসার অপেক্ষা করছিলাম,, কিছুক্ষন পর আমার মনে হচ্ছিলো আমার আসে পাশে কেউ আছে কিন্তু আমি কাউকে দেখছিলাম না!! হঠাৎ কেউ আমার পেছন থেকে মুখ চেপে ধরে একটা রুমাল দিয়ে , আমি জ্ঞান হরাই।
কিছুক্ষন পর আমি নিজেকে একটা রুমে আবিষ্কার করি!! সেখানে অনেক মেয়ে বাধা ছিলো, তাদের শরীরে অনেক অত্যাচারের চিহ্ন আর হাত পা বাঁধা অবস্থায় ছিল।
আমারও হাত পা বাধা ছিল। আমি খুব কদছিলাম , কিন্তু কেউ এলো না আমাকে বাঁচাতে। খুব কান্না পাচ্ছিল , কিছুক্ষন পর ঘরে 3জন লোক প্রবেশ করলো মাস্ক পরা । একজন পুরুষ একজন মহিলা আর একটা মেয়ে ছিল, পুরুষ টা যখন মুখ খুলে আমার কানের কাছে এসে ফিস ফিস করে বললো, “তোমাকে আমি এত ভালোবাসার পরে ও যখন ক্লাস ভর্তি ছেলে মেয়েদের সামনে আকাশ আমাকে মেরেছিল খুব অপমানিত হয়েছিলাম আমি জানো তনু?
আমার দুই চোখ বেয়ে শুধু অশ্রু ঝরছিল!! যেই সার কে এত সম্মানের চোখে দেখেছি সেই শিক্ষক ই কিনা!! আমি শুধু জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কেনো!?
বিনিময় সে শুধু অট্ট হাসি দিল আর বলল প্রতিশোধ….
কিছুক্ষন পর ওই মেয়ে দুইটা বলে উঠলো, ওকে তৈরি করতে হবে তুমি যাও। আজ রাতে ওকে দেখতে আসবে বিদেশি বাবুরা!!
ভয়ে আমার প্রাণ বেরিয়ে যাচ্ছিলো!! তখন যখন ঐ মেয়ে দুই টা ওর মাস্ক খুললো আমি নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না! মেয়ে টা অবিকল আমার মত।
আমি জিজ্ঞাসা করলাম কে তুমি?
মেয়েটা আমার কাছে এসে উত্তর দিলো, “চলো তোমাকে একটা গল্পঃ বলি। কারণ কালকে ই তুমি বাংলাদেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে, আর শহরের বাবুরা তোমায় নিয়ে যতদিন ইচ্ছা খেলবে তারপর কে*টে তোমার শরীর এর মূল্যবান অঙ্গ গুলো বিক্রি করে দিবে।
আমার নাম জলি, যখন ক্লাবে প্রীতির সাথে আমার পরিচয় হয় ও আমাকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়েছিল আকাশের বউ কে সরিয়ে দিতে আর আকাশ কে তার করে দিতে। আমি তোমার ছবি দেখতে চাইলে প্রীতি আমাকে তোমার ছবি দেয়, আমি নিজের ছবি দেখে প্রীতিকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম । মস্করা করছেন আমার সাথে?
পরে উনি বললেন তুমি নাকি আমার কার্বন কপী,,, তোমার আর আকাশের বিয়ে তে তোমাদের বাড়িতে গিয়ে আমি পুরো sure হয়েছিলাম প্রীতি ঠিকই বলেছে । আমি সব কিছু পর্যালোচনা করার জন্য বাড়ি টা ঘুরে দেখছিলাম হঠাৎ আকাশের সাথে আমার ধাক্কা লাগে….
তুমি তো খুব লাকি, এমন সুদর্শন পুরুষ কিভাবে তোমার প্রেমে হাবুডুবু খায় সেটা ভেবে ই আমার গা জ্বলে যাচ্ছিল। সেদিনই আমি ঠিক করেছিলাম তোমাকে মে*রে দেবো কিন্তু প্রীতির জন্য নয় আমার জন্য ।
সেই বিয়ে তে তোমাকে মারতে আমি বার্থ হই,,,, প্ল্যান চেঞ্জ করলাম কারণ আকাশ থাকা অবস্থায় তোমাকে মারা সম্ভব হবে না । আমি আকাশ কে পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠলাম সেদিন রাতে ই এসব ভাবতে ভাবতে রাতে একটা স্ট্যান্ড এ এসে বসলাম… হঠাৎ একটা ছেলে আমাকে তনু বলে ডাকলো আমি বেশ অবাক হলাম….
চলবে?
চলবে?
(আপনাদের একটা বোনাস পার্ট দেওয়া হবে তাড়াতাড়ি।
পর্ব ছোট হওয়াতে দুঃখিত!!)