আরশিকথা -১২
ধূমায়িত শলাকা দুই আঙুল দিয়ে ধরে সাধারণ ভাবেই দাঁড়িয়ে আছে শুভ্র।
সুপ্রভা দাঁড়িয়ে পড়ল। অসহ্য ভালোলাগা এই বদ ছেলের জন্য, কেউ সিগারেট টানছে, সেটা দেখতেও এত ভালো কেন লাগবে!
ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ল সুপ্রভা, বের হয়ে দেখল শুভ্র দাঁড়িয়ে আছে।
সুপ্রভা না তাকিয়ে বলল, এখানে কেন এসেছেন!
শুভ্র বলল, জানিনা, সত্যি ই জানি না। তোমাকে বিব্রত করার জন্য সরি!
আমি বিব্রত হই নি, আপনার যদি সত্যি কাজ থাকে, তাহলে থাকুন, আর যদি এমনি এসে থাকেন, তাহলে চলে যান।
শুভ্র বলল, প্রভা, আমার কিছু করার ছিল না। তখন দীপ্র কোথাও চান্স না পেয়ে প্রচন্ড ডিপ্রেশনে ছিল, দেখেছ তুমিও! ওকে ভালো একটা ইউনিভার্সিটিতে পড়াতে হবে, এই চাপ ছিল মায়ের উপরে। তুমি জানো আমি স্কলার স্টুডেন্ট কখনো ছিলাম না, দেশে খুব ভালো কোনো জবও পাচ্ছিলাম না।, তাই চেষ্টা করছিলাম৷ বাইরে চলে যাওয়া যায় যদি!
সুপ্রভা বলল, আমি এসব শুনে এখন কি করব!
কিছু করার দরকার নেই প্রভা! শুধু শুনে রাখো। যখন আমার বাইরের বিষয়টা ঠিকঠাক, তোমাকে বলব ভেবেছি, তখন একদিন দীপ্র মাঝরাতে আমাকে জানাল, ও তোমাকে ভালোবাসে, তোমাকে প্রপোজ করতে চায়!আমি শুনে চুপ হয়ে গেলাম। আমি জানি দীপ্র তোমার ভালো বন্ধু! ও তোমাকে কবে থেকে পছন্দ করতে শুরু করেছিল আমি জানি না। যদি ও তোমাকে প্রপোজ করে জানতে পারে, আমাদের একটা সম্পর্ক চলছে, এমনিতেই ও ডিপ্রেশনে ছিল!
-ব্যস, আমাদের সম্পর্ক এতটাই ঠুনকো ছিল, এইটুকু কারণে আপনি আমাকে কিছু না জানিয়ে ইউএসএর টিকিট কনফার্ম করে ফেললেন! আর আমি যখন জানলাম, তার পরদিন আপনার ফ্লাইট! আবার কোনো কিছু না জানিয়ে কোনো যোগাযোগ রাখলেন না, দীপ্রর কাছে তো শুনেছি আপনার একটা এ্যাফেয়ারও আছে ওখানে, ফিরে গিয়ে বিয়ে করবেন৷ তাহলে কেন আবার আমার বিষয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছেন?
-দীপ্রকে তুমি একসেপ্ট করবে না, এটা আসলে আমি বুঝতে পারিনি। আমি ভেবেছিলাম, তোমাদের মাঝে একমাত্র সমস্যা আমি!
সুপ্রভা তাচ্ছিল্য করে হেসে বলল, এই আপনি আমাকে চিনতেন, ভালোবাসেন বলতেন, আসলে আপনার কোনো অনুভূতিই ছিল না আমার জন্য! শুধু টাইম পাস করেছিলেন!
এইটুকু কথা হতে সময় লাগল দশমিনিটের মত! রেস্টুরেন্টে অনেক সময়। সুপ্রভা বাইরে তাকিয়ে বলল, আমি আসছি।
শুভ্র সুপ্রভার হাতটা ধরে ফেলল, প্লিজ প্রভা, বিয়েতে রাজী হয়ো না। আমাকে ক্ষমা করে দাও। প্লিজ। আমি তোমাকে যতবার ভুলতে চেয়েছি, আমার মনে তুমি আরো শক্ত হয়ে বসে গেছ!
সুপ্রভা বলল, আমার বছরগুলো নষ্ট করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। যেটা শেষ হয়ে গেছে, সেটা আর আমি শুরু করতে চাই না। কিন্তু আমি তো আসলে টাইম পাস করিনি, সত্যিই ভালোবেসেছিলাম।
তাই আমার ইমোশন মরে যায় নি। আমি এটাকে আর প্রশ্রয় দিতে চাই না। জুবায়েরকে আমি বিয়ে করব।
সুপ্রভা হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বের হয়ে গেল।
জুবায়ের সুপ্রভাকে দেখে বলল, কোনো সমস্যা? এতক্ষণ লাগল?
সুপ্রভা বসে বলল, আপনি ঠিকই বলেছিলেন, ওখানে শুভ্র বসেছিল। আমার এক্স! আমাকে কিছু একটা বলতে এসেছিল, ওয়াশরুমে বেসিনের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বললাম!
জুবায়ের বলল, কথা হলো?
হুম।
জুবায়ের টিস্যু ভাজ করতে করতে বলল, সুপ্রভা, আমার মনে হচ্ছে আপনি শুভ্রকে ভালোবাসেন।
সুপ্রভা বলল, ভালোবাসি, একটা সম্পর্কও ছিল। সেটা ভেঙে গেছে চার বছর আগে। এখন সমস্যা হচ্ছে ও দীপ্রর বড় ভাই, দীপ্র আমার অনেক কাছের বন্ধু, বারবার তাই সামনে আসছে, আমার একটু সমস্যা হচ্ছে।
দীপ্র জানে না, তাই না?
হ্যা, ও কিছুই জানে না। ও সহজ ভালো মানুষ, এত জটিলতা নিয়ে কিছু ভাবে না।
সুপ্রভা, আজ তুমি ভীষন আনরেস্ট। এখনি কোনো সিদ্ধান্ত নিও না৷ তুমি আমাকে বিশ্বাস করেছ, নিজের সব চাইতে সিক্রেট বিষয়টা আমার কাছে রিভেল করেছ, আমি তোমার বিশ্বাসের সম্মান রাখব। আমি সব সময় চেয়েছি, এমন একজন মানুষ, যে অনেস্ট হবে। তুমি তেমনি একজন। আমরা পরে কোথাও মিট করে গল্প করব, কেমন?
সুপ্রভা হাসল অল্প করে।
আর একটা কথা, তুমি ভীষণ মিষ্টিও।
সুপ্রভা হেসে ফেলল।
আরেকটা সিগারেট শেষ করে শুভ্র বের হয়ে দেখল৷ সুপ্রভা হাসছে জুবায়েরের দিকে তাকিয়ে। ওর মাথা গরম হয়ে গেল, মনে হচ্ছে সামনের জুস বার থেকে একটা কাঁচের বোতল নিয়ে জুবায়েরের মাথা ফাটিয়ে দিয়ে আসে! বিয়ে করা বের করে দিতে পা*ছা দিয়ে, বদ ছেলে একটা!
চলবে
শানজানা আলম