আষাঢ়ে প্রেমের গল্প পর্ব -১৩+১৪

#আষাঢ়ে_প্রেমের_গল্প
#নুজহাত_আদিবা
#পর্ব ১৩

— এমনিই জিজ্ঞেস করেছি। তুমি এত প্রশ্ন কেন করো বলো তো?

— প্রশ্ন আমি আগে করেছি না কি আপনি?

— তুমি!

— মিথ্যা কথা বলবেন না বলে দিলাম। আপনি আগে প্রশ্ন করেছেন আমাকে।

— আচ্ছা বাবা যাও,আমিই আগে প্রশ্ন করেছি। এবার খুশি?

— হুম।

— এবার বলো তোমার এমন কোনো ফ্রেন্ড আছে? যাকে তুমি সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করো?

— হুম, আছে একজন।

— তাঁকে একটু বলো না, তোমাকে যে কোনো বাহানায় বাসা থেকে বের করতে।

— ইশ্ পারবো না আমি।

— প্লিজ, আমি তো চলেই যাবো কিছুদিন পর। তোমার সাথে একটু নিজের মতো করে সময় কাটাতে চাচ্ছি। একবার বাইরে চলে গেলে আবার কবে না কবে দেশে আসি।

— আমি আপনার পরিস্থিতিটা বুঝতে পারছি। কিন্তু, এখন সম্ভব না আসলে। আমি পারবো না আপনার কথা রাখতে। মাফ করবেন আমাকে।

— শোনো, তুমি তোমার ফ্রেন্ডকে বলো তোমাকে কোনো ভাবে বাসা থেকে বের করে যেন। এরপর বাকিটা আমার দায়িত্ব। একটু কষ্ট করো আমার জন্য। প্লিজ?

— আপনি আজকাল বেশি জালাচ্ছেন আমাকে!

–এখনই তো একটু জালাবো। তারপর তো চলেই যাবো। তখন দেখি কে জালায় তোমাকে!

— আচ্ছা, আমি চেষ্টা করবো কিন্তু পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে বলতে পারছি না যে বাসা থেকে বের হতে পারবো কি না।

— আচ্ছা দেখো। আমি অপেক্ষা করছি তোমার জন্য।

— হুম,

আমি এবার কল কেটে বসে রইলাম যে আমি কীভাবে আম্মাকে ম্যানেজ করবো। আম্মা আমাকে একা একা কখনোই বাসা থেকে বের হতে দেবে না। কিছুক্ষন চিন্তা- ভাবনা করে মনিরাকে কল দিলাম। মনিরা কল ধরেই বললো,

— কীরে কী খবর মেহুল?

— হুম ভালো, কিন্তু এখন এইসব কথা বাদ দে। একটু সাহায্য করতে পারবি আমাকে?

— কী সাহায্য?

— আমাকে যে কোনোভাবে বাসা থেকে বের করতে পারবি রে?

— হুম, কিন্তু কেন?

— সব বলবো তোকে। কিন্তু এখন তুই আমাদের বাসায় এসে আমাকে তাড়াতাড়ি বাসা থেকে বের কর।

— আচ্ছা, আমি আসছি তুই অপেক্ষা কর।

— হুম আয় জলদি।

আমি কল কেটে এবার আম্মার ঘরে গিয়ে আম্মাকে বললাম,

— আম্মা একটা কথা ছিল।

আম্মা তখন কাপড় ভাঁজ করছিল। আম্মা কাপড় ভাঁজ করতে করতেই জবাব দিল,

— হুম শুনছি আমি।

— আম্মা মনিরার আসলে খুব শখ আমাকে একদিন ওদের বাসায় নিয়ে যাবে। আমি যাবো আম্মা? মনিরা আমাকে নিতে বাসায় আসছে।

— হঠাৎ?

— আমিও জানি না আম্মা। মাত্র আমাকে ফোন করে বললো।

— আমাদের বাসা থেকে ওদের বাসা কতদূর?

— আমি তো কখনো যাইনি আম্মা। তাই জানি না।

— হুম,

— আমি কী যাবো আম্মা?

— নাহ। একা একা কোথাও যেতে হবে না তোমাকে।

আমি এবার মন খারাপ করে রুমে চলে এলাম। পরিস্থিতি যা বুঝলাম আম্মা আমাকে বাসা থেকে আর বের হতে দেবে না। এরপর কলিংবেল বাজার শব্দ শুনে আমি দৌড়ে গেলাম। আমি জানি মনিরা ছাড়া আর কেউ আসেনি।

মনিরা বাসায় ঢুকেই বললো,

— আন্টি কোথায় দোস্ত?

— আম্মা আম্মার রুমে।

— আন্টির রুম কোনটা?

— ওই যে ওইটা।

মনিরা আম্মার রুমে ঢুকেই আম্মাকে সালাম দিলো। আম্মা মনিরার সালামের জবাব দিয়ে বললো,

— তুমি কখন এলে মা?

— এই যে আন্টি এই মাত্র।

— আচ্ছা বসো তুমি। আমি নাস্তা দিচ্ছি; নাস্তা খেয়ে যেও কিন্তু।

— আন্টি আসলে একটা কথা ছিল।

— হুম বলো মা।

— আন্টি মেহুলকে একটু আমাদের বাসায় নিয়ে যাই। আবার বাসায় পৌঁছে দিয়ে যাবো আন্টি। বেশি সময় লাগবে না আন্টি। প্লিজ আন্টি আপনি আর না করবেন না।

— মেহুলকে একা কোথাও বের হতে দেয় না তোমার আংকেল। তোমার আংকেল শুনলে রাগ করবে মা। আরেকদিন যাবে, আজকে সম্ভব না মা।

— আন্টি আমি এত কষ্ট করে আসলাম। একটু যেতে দিন না আন্টি। আপনি আংকেলকে একটু কল দিয়ে বলুন আন্টি। আংকেল কিছু বলবে না। প্লিজ আন্টি প্লিজ।

— আমি তোমার আংকেলকে বলে দেখছি এখন তাও যদি তোমার আংকেল না করে দেয়। তাহলে আমার হাতে কিছুই থাকবে না।

— জি আন্টি, বলে দেখুন একটু আংকেলকে।

এরপর আম্মা ফোন নিয়ে বারান্দায় চলে গেলেন। আমি আর মনিরা এবার চিন্তা করতে লাগলাম যে, আব্বা কী আসলেই আমাকে যেতে দিবে?

আম্মা কিছুক্ষন পর আব্বার সাথে কথাবার্তা বলে এসে আমাদেরকে বললেন,

— তোমার আংকেল মেহুলকে নিয়ে যেতে বলেছে। কিন্তু, আসার সময় তোমার আংকেল গিয়ে মেহুলকে নিয়ে আসবে বলেছে।

— আচ্ছা আন্টি। আমরা এখন যাই তাহলে?

— আচ্ছা যাও সাবধানে যেও। এই মেহুল তুই ফোন নিয়ে যাস আমি কিন্তু ফোনে কল দেবো।

— আচ্ছা আম্মা।

আমি আর মনিরা আম্মার রুম থেকে বেরিয়ে পুরো থ! আমরা কেউই চিন্তা করতে পারিনি আম্মা এত সহজে অনুমতি দিয়ে দেবে।

এরপর আমি আর মনিরা আমাদের বাসা থেকে বের হয়ে নিচে গিয়ে রিকশা নিলাম। রিকশায় উঠেই মনিরার প্রশ্ন শুরু হয়ে গেল। কেন ওকে এমন হুট করে ডেকে নিয়ে এলাম বাসায়?কেন বাসা থেকে বের হচ্ছি আমি? আমি এবার ফ্রি হয়ে মনিরাকে সব বললাম। মনিরা এসব শুনে আমাকে বলে,

— ওহ্ তাহলে তলে তলে এই কাহিনি? বাহ্ আজ একটা প্রেমিক থাকলে আমিও এভাবে ঘুরতে যেতাম প্রেমিকের সাথে।

— বাজে কথা বলবি না একদম। এমনিতেই মেজাজ গরম হয়ে আছে। এভাবে হঠাৎ করে বলা নেই কওয়া নেই কে দেখা করতে চায় বল? পুরোই পাগল!

— হুম, তোর প্রেমে পড়ে বেচারা পাগল হয়ে গেছে।

— আবার শুরু হয়ে গেল তোর?

— আমি কিছু বললেই দোষ? নিজে কথা বললে তাঁর কোনো দোষ নেই সব দোষ শুধু আমি কিছুই বললেই।

— তোর লেকচার বন্ধ হয়েছে? বন্ধ যদি হয়ে থাকে তাহলে বল আমরা এখন কোথায় যাচ্ছি?

— আমরা এখন আমাদের বাসায় যাচ্ছি। আমাদের বাসায় গিয়ে দুলাভাইকে কল দিয়ে আমাদের বাসার সামনে আসতে বলিস। তারপর তুই চলে যাস দুলাভাইয়ের সাথে।

— হুম বুঝলাম। তুই যাবি না আমাদের সাথে?

— তোদের মধ্যে আমি গিয়ে কী করবো? নতুন প্রেমিক-প্রেমিকা তোরা। নিজেরা নিজেদের মতো ঘুরাঘুরি করবি। আমার কাজ কী সেখানে?

— তবুও, তুই চল আমাদের সাথে।

— নাহ, তুই যা ;নিজেরা নিজেদের মতো সময় কাটা।

আমি আর জোর করলাম না মনিরাকে। আমি জানি ওকে বললেও কোনো লাভ হবে না। কারণ ও যা বলবে তাই করবে। তাই কিছু বলেও লাভ নেই।

ওদের বাসার নিচে রিকশা এসে থামলো। আমি রিকশা ভাড়াটা দিয়ে মনিরার সাথে ওদের বাসায় ঢুকে গেলাম। গিয়ে দেখি আন্টি বাসায় নেই। পরে শুনি আন্টি না কি ওনার বাবার বাসায় গিয়েছেন। মনিরাকে বলেছিল কিন্তু ওর না কি যেতে ইচ্ছে করছিল না। তাই ও যায়নি। আংকেল ও এখন অফিসে। বাসায় বলতে গেলে ও একাই।

— বসে আছিস কেন? দুলাভাইকে ফোন দিয়ে বল আমাদের বাসার সামনে আসতে।

— আসলেই বলবো না কি?

— নাহ! এমনি শুধু বসে থাক তুই।

মনিরার ঝারি খেয়ে আমি বর্ণকে কল দিলাম।

— হ্যালো বর্ণ।

— কী হলো? অনুমতি পেয়েছো আন্টির থেকে?

— হুম,

— সত্যিই!

— হ্যাঁ।

— কোথায় আসবো আমি?

আমি এরপর বর্ণকে মনিরাদের বাসার ঠিকনাটা দিয়ে বললাম এখানে আসতে। বর্ণ আমাকে আশ্বাস দিলেন উনি আসছেন।

আধা ঘণ্টা পরে বর্ণ ফোন দিয়ে জানালেন উনি এসেছেন। আমার এবার খুব ভয় লাগলো। আমি এবার মনিরাকে ভয় পেয়ে বললাম,

— আমার না খুব ভয় লাগছে রে।

— কেন?

— তুই জানিস না কেন?

— হুম, বুঝতে পেরেছি কিন্তু এত ভয় পাস না। কিছু হবে না আমি তো আছি। আমি তুই যাওয়ার পরই তোকে ফোন দিবো৷ কোনো সমস্যা হলে আমাকে বলবি তখন।

— আচ্ছা।

— হুম, এবার যা জলদি। ভাইয়া অপেক্ষা করছে কিন্তু।

— হুম যাচ্ছি আমি।

মনিরাকে আমাকে ওদের বাসার গেট অবধি আমাকে পৌঁছে দিয়ে এলো। এরপর বর্ণ আমাকে দেখে এগিয়ে আসলেন। আমি বর্ণ আর মনিরার পরিচয় করিয়ে দিলাম। বর্ণ মনিরাকে অনেক জোরাজোরি করলেন আমাদের সাথে আসার জন্য। কিন্তু, মনিরা এলো না। বারবার শুধু বললো,

— আপনারা যান ভাইয়া। আমি পরে আবার একদিন যাবো।

এরপরে বর্ণ আর কী বলবে? মনিরা বাসার গেটে ঢুকে গেল। এবার বর্ণ আমার দিকে ফিরে আমাকে বললেন,

— আচ্ছা, মেহুলিকা তোমাকে প্রশ্ন করি?

— হুম বলুন।

— তোমাকে আমার কাছে এত সুন্দর কেন লাগে বলো তো? তুমি কী আসলেই সুন্দরী না কি আমার চোখে তোমাকে সুন্দর লাগে?

— আপনার চোখের দোষ ওটা। আমি শুধু আপনার কাছেই সুন্দরী। আর কারো কাছে না।

–আর কারো কাছে সুন্দর হওয়া লাগবে না। আমার বউ আমার কাছেই সুন্দর। আর কারো কাছে আমার বউকে কেন সুন্দর লাগবে? অন্য কেউ তোমাকে সুন্দর বলবে এটা আমি মেনে নিতে পারবো না।

— বিয়ে শাদির খবর নেই এখনই বউ বউ শুরু করেছেন?

— তুমি বলো একবার তুমি আমাকে বিয়ে করবে। আমি এখনই তোমাকে কাজি অফিসে নিয়ে বিয়ে করে ফেলবো।

— নাহ থাক, এত ঝামেলার দরকার নেই।

— নাহ, একবার মুখ ফুটে যখন বলেছো। তখন এখনই চলো।

— বর্ণ আপনি বেশি বাড়াবাড়ি করছেন কিন্তু।

— এটা মোটেও বাড়াবাড়ি না।
#আষাঢ়ে_প্রেমের_গল্প
#নুজহাত_আদিবা
#পর্ব ১৪

— এটা মোটেও বাড়াবাড়ি না।

— বাড়াবাড়ি না তো কী এটা?

— আমি কথা বাড়াতে চাচ্ছি না মেহুলিকা। বলো কোথায় যাবে এখন?

— আপনার সাথে যেহেতু এসেছি এটা তো আমার থেকে আপনার ভালো জানা উচিত।

— উফ! আচ্ছা এত রেগে কেন আছো আমার উপরে? কী করেছি আমি?

— আমি কেন আপনার উপরে রেগে থাকবো? আপনি রেগে থাকার মতন কোনো কাজ করতে পারেন না কি?

— মেহুলিকা, আগে যা হয়েছে ওইসব বাদ দাও। এখন চলো যাই।

এরপর বর্ণ একটা রিকশা ডাকলো। আমি আর বর্ণ উঠে পড়লাম রিকশাতে। বর্ণ রিকশায় উঠেই আমাকে বললেন,

— রিকশার কী হুড টেনে দিবো না কি এভাবেই থাকবে।

আমি এবার বুঝতে পারলাম বর্ণ কোন উদ্দেশ্যে কথাটা বলেছে। আমি এবার বর্ণকে হালকা করে বললাম,

— মাইর যদি একটাও না খেতে চান তবে চুপ থাকুন। আর এমন আজগুবি কথাবার্তা বললে আপনার খবর করে ছাড়বো আমি।

— বাহ্ সব ইশারা ইঙ্গিত তো ভালোই বুঝতে পারো। যাক, আমার বউ হয়ে এতটুকু বুঝতে পারলে তো আরও ভালো।

— বউ করে আমার কানটা ঝালাপালা করে দিচ্ছেন আপনি! আরেকবার বললে খবর আছে বললাম।

— কেন বউ শব্দটা কী খারাপ না কি?

— আমি সেটা বলেছি একবারও?

— নাহ বলোনি। কিন্তু একটা জিনিস জানো? আমি তোমাকে প্রেমিকা হিসেবেও তোমাকে ততটা চাই না যতটা বউ হিসেবে চাই।

আমি এবার স্থির হয়ে বসে রইলাম। এত সুন্দর একটা কথা বর্ণ কীভাবে বললো? আমি এবার বর্ণকে রাগানোর জন্য বললাম,

— রাস্তায় এত সুন্দর সুন্দর মেয়ে দেখেই বুঝি মুখ দিয়ে এত; সুন্দর সুন্দর রোমান্টিক কথাবার্তা মাথায় আসছে আপনার?

বর্ণ এবার আমার বলা কথাটাকে খুব সিরিয়াসলি নিয়ে ফেললেন হয়তো। আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

— যদি অন্য মেয়েদের দেখার জন্যই রাস্তায় বের হতাম তবে তোমাকে কেন নিয়ে এলাম? একাও তো আসতে পারতাম?

— আমি কীভাবে বলবো বলুন? আপনার মনের ভেতর কী আছে;না আছে সেটা আমি কীভাবে জানবো?

— তুমি না কিছু বুঝো না মেহুলিকা। বুঝলে আমাকে এমন একটা কথা বলতে পারতে না।

বর্ণ এবার হালকা রেগে গিয়েছেন বলে আমার মনে হলো। আমার দিকে তাকাচ্ছেন ও না। বাইরের দিকে তাকিয়ে গভীর মনোযোগ দিয়ে কী যেন ভাবছেন। আমি এবার পরিস্থিতি একটু সামাল দেওয়ার জন্য বললাম,

— আমি কিন্তু এতকিছু ভেবে কথাটা বলিনি। এমনি মজা করে বললাম।

— হুম ভালো, মজার ছলে মানুষ প্রায়ই তাঁর মনের ভেতরে থাকা সত্য কথাগুলো বলে ফেলে। আজ আবারও তাঁর প্রমান পেলাম।

— আপনি রাগ করলেন না কি বর্ণ? আমি মজা করেই বলেছিলাম। আপনি এতটা সিরিয়াস হবেন জানলে বলতাম না।

— যে-ই চোখ দিয়ে তোমাকে দেখে তোমার প্রেমে পাগল হয়েছি। সেই চোখ দিয়ে অন্য মেয়েদের দিকে কীভাবে তাকাবো আমি? আমার চোখ গুলো তোমাকে দেখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ মেহুলিকা।

— তাহলে সারাজীবন এমনই থাকুন। আমি ব্যতীত অন্য কোনো মেয়ের দিকে তাকালে; আপনার চোখ গুলো তখনই নষ্ট হয়ে যাক!

— আমার চোখগুলো নষ্ট হলে তোমাকে দেখবো কী ভাবে?

— দেখা লাগবে না আমাকে। আপনি শুধু অনুভব করবেন আমাকে।

— হুম সেটাই করবো।

বাতাসে আমার চুল গুলো বারবার এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। এমন সময় বর্ণ আমার কাঁধে মাথা রাখলেন। আমি ব্যাথা পেয়ে চিৎকার করে উঠলাম!বর্ণ চমকে উঠে বললেন,

— কী হয়েছে মেহুলিকা?

— আমার চুল ছাড়ুন। চুলের ওপরে হুট করে এভাবে কেউ মাথা রাখে? কত জোরে চুলে টান খেয়েছি আমি।

— আমি এত কিছু খেয়াল করে মাথা রাখিনি।

— আপনার তো কিছুই খেয়ালে থাকে না। কিছু মনেও থাকে না আপনার।

— তোমাকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে অন্যকিছু খেয়াল; করার মতো এত সময় থাকে না আমার।

— হয়েছে হয়েছে অনেক হয়েছে। চাপাবাজিটা একটু কম করুন।

— আচ্ছা তুমি এমন কেন?

— কেমন?

— কেমন আমার কাছে জানতে চাচ্ছো? তুমি পুরোই আনরোমান্টিক। রোমান্টিকতার ছিটেফোঁটা ও নেই।

— আহারে আপনি যেন কত্ত রোমান্টিক!

— তোমার থেকে অন্তত বেশিই আছি। অবশ্য এখানে তোমাকে দোষ দিয়ে লাভ কী? সব দোষ তোমার আম্মুর৷ উনি তো নিজের মেয়েকে ঠিকমত গল্পের বই ও পড়তে দেন না। এজন্যই ওনার মেয়েটা এমন আনরোমান্টিক। তোমাকে যাওয়ার সময় কতগুলো রোমান্টিক গল্পের বই কিনে দিয়ে যাবো। ওগুলো পড়ে যদি অন্তত একটু রোমান্টিক হও।

— দরকার নেই আমার এত রোমান্টিক হওয়ার। যেমন আছি তেমনই ভালো।

— হুম তোমার জন্য তো ভালোই৷ যা কষ্ট সব আমার।

— ঝগড়া করা বন্ধ করুন এবার।

— হুম, আমি কিছু বললেই তো ঝগড়া মনে হয় তোমার কাছে।

— বর্ণ! আর একটা কথা বললে খবর আছে। চুপ একদম চুপ!

সেই কখন থেকে রিকশা চলছে তো চলছেই। আমার মনেও নেই বর্ণকে জিজ্ঞেস করতে। আসলে আমরা যাচ্ছি কোথায়?আমি এবার খুব কৌতুহল নিয়ে বর্ণকে জিজ্ঞেস করলাম,

— আমরা আসলে যাচ্ছি কোথায় বর্ণ?

বর্ণ আমার কথা শুনে আমার কাঁধ থেকে মাথা তুলে আমাকে বললেন,

— কোথাও না।

— মানে?

— মানে কোথাও যাচ্ছি না আমরা।আমার খুব শখ ছিল রিকশা দিয়ে তোমার সাথে এই পুরো শহরটা ঘোরার। তাই আমি আপাতত নিজের শখ পূরন করছি। আবার যেদিন তোমার সঙ্গে বের হবো সেদিন; তোমার ইচ্ছেমত ঘোরাঘুরি করবো। কিন্তু, আজকে তুমি যতক্ষন আছো আমরা রিকশা দিয়েই ঘুরবো।

বর্ণের এমন উদ্ভট শখের কথা শুনে আমার খুব হাসি পেল। আসলেই, বর্ণ পারেও বটে। এরপর রিকশা দিয়ে আরও কিছুক্ষন রাস্তায় ঘোরাঘুরি চললো আমাদের। কিন্তু একটা সময় আমি খুব বিরক্ত হয়ে গেলাম। রিকশায় বেশিক্ষন বসে থাকলে আমার খুব কোমর ব্যাথা করে। আমি এবার অনুরোধের স্বরে বর্ণকে বললাম,

— বর্ণ? আমরা এখন একটু রিকশা থেকে নামি চলুন। আমার এভাবে বসে থাকতে ভালো লাগছে না।

এরপর বর্ণ আমার কথা শুনে রিকশা থেকে নামলেন। আমাকেও হাত ধরে রিকশা থেকে নামালেন। এরপর রিকশা ভাড়া দিয়ে রিকশা ওয়ালাকে বিদায় করলেন বর্ণ। আমি রিকশা থেকে নেমেই কোমর ধরে দাঁড়িয়ে রইলাম। আমাকে এভাবে কোমর ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বর্ণ বললেন,

— কী হয়েছে তোমার? এভাবে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছো যে?

— এতক্ষন ওভাবে বসে ছিলাম যে তাই কোমরে ব্যাথা করছে এখন।

— বেশি খারাপ লাগছে? বাসায় দিয়ে আসবো তোমাকে? মেডিসিন লাগবে কোনো?

— নাহ, কিছু লাগবে না। একটু হাঁটলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।

— এই নাহ, এই কাজ করো না। বেশি অসুবিধা হলে বলো তোমাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসি।

— নাহ, সেরকম কিছু না।

আমি এবার হাঁটা শুরু করলাম। বর্ণ ও আমাকে হাঁটতে দেখে হাঁটা শুরু করলো।

— এখানে তো আর খুব বেশিদিন থাকছি না।কানাডায় যখন চলে যাবো তখন তুমি মিস করবে না আমাকে?

— আপনাকে? আমি মিস করবো না মোটেও।

বর্ণ বেচারা আমার দেওয়া ডোজটা হজম করতে পারলো না ঠিকমত। ওনার মুখের ভঙ্গি দেখে বোঝাই যাচ্ছে উনি; আসলে আবার বলা কথাটা মানতে পারছেন না। আবার আমাকে জিজ্ঞেস করলেন বর্ণ।

— আসলেই?

— হুম। ফোনে তো যোগাযোগ হবেই। তাহলে মিস কীভাবে করবো।

বর্ণ এবার মুখটা একটু কালো করে বললেন,

— হুম।

আমি খুব মজা পেলাম এই জিনিসটাতে। আমার পেট ফেটে হাসি আসছিল। কিন্তু বর্ণ বুঝে ফেলবে ভেবে আর হাসিনি। তবে এটা সত্য যে বর্ণ কানাডা চলে গেলে আমি খুবই মিস করবো বর্ণকে।

— আপনি চলে গেলে আপনার পায়রাগুলো কে দেখাশোনা করবে?

— আমার কাজিন আছে ওর কাছে দিয়ে দিবো। ওর ও আমার মতো পায়রা খুব পছন্দ। ওকে দিয়ে দিবো তাই।

— হুম, আপনার পায়রাগুলো কিন্তু খুব কাজের। নিজের মালিকের প্রেমটা কী সুন্দর করিয়ে দিলো।

— এটা একটা মজার কথা বলেছো। মজার হলেও এটা সত্যি। পায়রা আনতে যদি তোমাদের বাসায় না যেতাম;তাহলে তোমাকে দেখতাম ও না কখনো।

— হুম, সেজন্যই তো বললাম আপনার পায়রাগুলো খুব কাজের। যারা পায়রা পোষে তাদের একটু শেখা উচিত আপনার পায়রাগুলোর থেকে। ভবিষ্যতে কাজে দিতে পারে।

— হাহা, ওই পায়রার কথা বাদ দাও। তুমি পায়রা থাকতে আর আমার কী লাগে বলো? তুমিই তো আমার পায়রা। আমাদের বিয়ের পর আরও দুইজোড়া পায়রা আসবে আমাদের সংসারে।

— আপনার আবার শুরু হয়ে গেল? চুপ করবেন এবার? না কি মুখটা সেলাই করে দিবো?

— মেহুলিকা তুমি এত রাগ কেন করো বলো তো?

— আপনার এইসব কাজকর্ম দেখে।

চলবে…
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here