আসক্তিময় তুমি পর্ব -০২

#আসক্তিময়_তুমি
#নুসাইবা_রেহমান_আদর
#পর্ব_২

খান বাড়ির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আফরিন আর আবরার। আবরারের মা দরজা আটকে দিয়ে দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে। উনি খুব আহত হয়েছে একমাত্র ছেলে তাকে না জানিয়ে বিয়ে করে বউ নিয়ে হাজির হওয়ায়।

– মা একবার দরজা খুলো তুমি দেখো কা কে তুমি বাহিরে দাড় করিয়ে রেখেছো একবার।
– আমি অই মেয়ের মুখ দেখবো না। আমাকে না জানিয়ে বিয়ে করেছিস একবার ও আমার কথা ভাবলি না।

– ভাবি একবার আমার কথা শুনুন এতে আবরারের দোষ নাই পরিস্থিতি এমন ছিলো কাউকে জানানোর সুযোগ পাই নাই।

মিসেস খান দরজা খুলে দিলেন ছেলের জন্য তো আর দেবর কে বাহিরে রাখতে পারেনা।

– ভাইয়া আপনি ভিতরে জান আর আজান তুই ও।

আফরিন মাথা তুলে আবরারের মা কে দেখে অবাক হয়ে যায়। চোখ দিয়ে দুফোটা অশ্রু গরিয়ে পরে। সে নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছে না।

– ফুপুমা তুমি?

কারো ফুপুমা ডাকে নতুন বউয়ের দিকে তাকায় মিসেস খান। নতুন বউ তো আর কেউ না তার একমাত্র ছোট ভাইয়ের মেয়ের আফরিন। মিসেস খান গিয়ে জোরে জরিয়ে ধরে আফরিন কে।

– কেমন আছিস আফরু তুই? কোথায় ছিলি এতোদিন। ফুপুমা তোকে কত খুঁজেছি জানিস।

– ফুপুমা তুমি আমার বিশ্বাস হচ্ছেনা আজ থেকে এতোগুলা বছর পর আমি তোমাকে দেখতে পাচ্ছি।

– আম্মু তুমি নাকি আমার বউয়ের চেহারা দেখবে না তাহলে এখন তো ওকে নিজের থেকে আলাদা করছো না।

আবরার বাদে ফ্যামিলির বাকি সবাই অবাক হয়ে যায় মিসেস খানের কাজে। আফরিন তাহলে মিসেস খানেত ভাইঝি। আজান এসব ড্রামা দেখতে পারবে না তাই সে নিজের রুমে চলে গেলো৷

– চুপ কর পাজি ছেলে আগে বলবি না এটা আফ্রু তাহল্র তো আমি দরজা সেই কখন খুলে দিতাম।

– আমার কথা শুনলে তো তুমি আম্মু। যাইহোক,সরে দাড়াও আমি ভিতরে যাবো কত রাত হয়েছে খেয়াল আছে? তোমার ভাইঝি কে নিয়ে এখানেই দাঁড়িয়ে থাকো তুমি।

আবরার দোতলার সিরি বেয়ে সোজা উপরে নিজের রুমে চলে গেলো। মিসেস খান আফরিন কে নিয়ে সোফায় বসিয়ে দিলেন। বাডির সবাই উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে সব কথা শুনার জন্য। সবার এভাবে তাকানো তে লজ্জা লাগছ্র আফরিনের। আফরিনের ভাবতেই অবাক লাগছে তার বিয়ে হয়েছে তার ছোট বেলার সেই সাদ ভাইয়ার সাথে।

– ভাইয়া আপ্নারা আফরিন কে কোথায় খুজে পেলেন? ওর বাবা আমার বাবার সাথে ঝগড়া করে বাড়ি থেকে ওদের নিয়ে চলে যাওয়ার পথে ওদের এক্সিডেন্ট হয়। শুনেছিলাম এক্সিডেন্টে ওর মা-বাবা মারা যায়। আর ওর মামা ওকে নিয়ে অন্যকোথাও সিফট হয়ে যায় এরপর থেকে তো আর আমি ওদের খোজ পেলাম না।

মিসেস খান কান্না করছে, বাবা মায়ের কথআ মনে পড়তেই আফরিনের ও কান্না পেলো। মিস্টার রহমান ঝান বলতে লাগ্লেন।

– এক কাজে আমি সখিপুর যাই সেখানে আমি আমার পুরানো বন্ধুর সাথে দেখা হয়। তাত অনুরোধে আমি ওদের বাসায় যাই ওখানে গিয়ে দেখি আফরিনের মামি এক সন্ত্রাসি ও বয়স্ক লোকের সাথে ওর বিয়ে দিচ্ছিলো। আফরিনের মামা অনুরোধে আমি আজানের সাথে আফরিনের বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। আজানকে মেসেজ করাই যে আমার হার্ট এট্যাক হয় সে যেনো জলদি আসে। আজান তখন এয়ারপোর্টে আবরার কে আনতে গেছে। আবরার আর আজান সোজা বিয়ে বাড়িতে আসে আমার মেসেজ পেয়ে। আজান ওখানে গিয়ে সোজা জানিয়ে দেয় সে আফরিন কে বিয়ে করতে পারবেনা কারন আমাদের না জানিয়ে সে অলরেডি বিয়ে করে নিছে। তখন আবরার রাজি হয় বিয়ে করতে আর আমিও করাই যাতে মেয়েটার জিবন বেচে যায় ভাবি।

আজানের মা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে যে তার ছেলে বিয়ে করছে আর সে জানেনা।

– what are you saying rahman? are you gone made?

– no sima i am absolutely fine. Azaan is marrying Maria without informing us. And you know Maria’s father is the one who killed our elder brother.

মিসেস খান আর সিমা খান দুইজন কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। আজান এটা কিভাবে পারলো সব জেনে এমন এক মেয়েকে বিয়ে করতে। আচ্ছা এটা সাইফুল সিকদারের নতুন কোনো চাল না তো নিজের মেয়েকে ব্যাবহার করে এই বাড়ির ক্ষতি করা।

– Skip it now anyway. And I think big, bring the girl to Abrar’s room, it’s late at night. And will not feed him?

সিমাকে দেখে হা করে তাকিয়ে আছে আফরিন। সাদা চামড়ার এই বিদেশী আজানের মা। তাই হয়তো আজান এতো সুন্দর। মায়ের মতো হয়েছে ছেলেটা।

– ঠিক বলছো সিমা আমি তো এক্সাইটেড হয়ে ভুলে গেছি। আফরিন কে দিয়ে আসি আবরারের রুমে বাকি কথা সকালে হবে।

– ফুপিমা আবরার ভাইয়া আমাকে গাড়িতে খাবার কিনে দিয়েছে তুমি চিন্তা কইরো না।

মিসেস খান আফরিন কে আবরারের রুমে নিয়ে গেলো। আবরার তখন ওয়াসরুমে। মিসেস খান আফরিন কে য়ার লাগেজ দিয়ে দিলো।

– আবরার বের হলে তুই ফ্রেশ হয়ে নিস। কাল সকালে কথা হবে গুড নাইট।

– আচ্ছা গুড নাইট ফুপিমা।

মিসেস খান চলে গেলো। আফরিন দরজা আটকে পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে নিলো। রুমে একটা বড় বেড একপাশে আলমারি। একসাইডে টেবিল আর চেয়ার রাখা। খাটের সাইডে এডজাস্ট করা একটা ছোট ওয়্যারড্রপ। ওয়াসরুমের দরজা খুলে রুমে এসে চমকে যায় আবরার। আফরিন ঘুরে আবরারের দিকে তাকিয়ে চোখ বড় বড় করে ফেলে। আফরিন কে এভাবে তাকাতে দেখে একটু অসস্তি হয় আবরারের

– এইভাবে হা করে কি দেখছো তুমি আমার দিকে। আগে কখোনো ছেলে দেখো নি।

আবরারের ধমকে কেপে উঠে আফরিন। হকচকিয়ে যায় সে। এভাবে সামনে থেকে কখোনো কোনো ছেলে শুধু টাওয়াল পড়ে দাড়াতে দেখে নি।

– ছিহ ছিহঃ আফরিন তুই এতোটা লুচু কিভাবে হলি? এভাবে হা করে তাকিয়ে ছিলি কি মনে করছে সে। ( মনে মনে)

আফরিন অন্যদিকে ঘুরে তাকায়। এই ফাকে খাট থেকে নিজের জামাকাপড় নিয়ে পরতে শুরু করে আবরার।

– আপনি এভাবে শুধু একটা টাওয়াল পরে রুমে আসবেন কেন। জানেন না আপনার রুমে এখন একটা মেয়ে থাকতে পারে।

– আজব আমি কিভাবে জানবো যে তুমি আমার রুমে থাকবে। আমি ভাবছি তুমি নিচে আছো। যাও ফ্রেশ হয়ে আসো তাড়াতাড়ি।

আফরিন লাগেজ খুলে একটা কালো লাল এর সংমিশ্রণ করা সুতির থ্রিপিস নিয়ে লাগেজ আবার সাইডে রেখে দিলো। সোহা ওয়াসরুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে নিলো। আফরিনের এমন আচরনে মুচকি হাসলো আবরার। কম্বল টেনে এক সাইডে শুয়ে পড়লো। ওয়াসরুমে বসে ভাবছে এই ঠান্ডায় পানিতে হাত দিতেও শীত লাগছে তার। মুখের মেকাপ উঠাতে হলে তার পানি লাগাতেই হবে।

আবরার শুয়ে শুয়ে ফোন চাপছে আর টাইম দেখছে। মেয়েটা কি ফ্রেশ হতে গিয়ে ওখানেই ঘুমিয়ে পড়েছে নাকি।

– এই তুমি কি ওয়সরুমেই ঘুমিয়ে গেছো সেই ১ ঘন্টা আগে ঢুকছো।

ওয়াসরুম থেকে কাপতে কাপতে বের হলো আফরিন। ঠান্ডায় পুরো হাত পা কেপে কেপে উঠছে। চুল দিয়ে পানি পরছে। বুঝাই যায় গোসল করছে এই শীতে তাও রাতের বেলায়। আবরার দৌড়ে নিচে নেমে আফরিন কে ধরে বিছানায় বসিয়ে কম্বল পেচিয়ে দেয়। টাওয়াল নিয়ে ভালোভাবে চুল মুছিয়ে দিলো। আলমারি থেকে আরেকটা কম্বল নামিয়ে আনলো।

– সুয়ে পড় জলদি,পাগলের মতো এতোরাতে কে গোসল করতে বলছে তোমাকে।

আফরিন রীতিমতো কপাছে ঠান্ডায়।

– আয়ামি ইচ্ছা ককরে করি নাই৷ ভুলে শাওয়ারের চাপ লেগে শাওয়ার অন হয়ে যায়।

…চলবে..?

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here