#আসক্তিময়_ভালোবাসা
#নুসাইবা_রেহমান_আদর
#পর্ব_৩
ভোরবেলা রীতিমতো খান বাড়িতে হইচই শুরু হয়ে গেছে।
– আমি আবরারের সন্তানের মা হতে চলেছি। আমি দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা আমাকে রেখে আবরার কিভাবে অন্য মেয়েকে বিয়ে করতে পারে?
অপরিচিত এক মেয়ের কথায় তার মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে মিসেস খান। মেয়েটির চিৎকার চেচামেচি শুনে আবরার বেরিয়ে এলো। আবরারের পিছু পিছু আফরিন ও নিচে নেমে আসলো।
আবরার কে নিচে নামতে দেখে মেয়েটি দৌড়ে এসে আবরার কে জরিয়ে ধরে। আবরার রীতিমতো শকড মেয়েটিকে দেখে। আবরার কে এভাবে আরেক মেয়ে জরিয়ে ধরে রেখেছে এটা দেখে অনেক বেশি খারাপ লাগতে শুরু করলো আফরিনের। আবরার নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে মেয়েটিকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিলো।
– জেনি তুমি আমার বাড়িতে কি করছো,আর এটা কোন ধরনের ফাইজলামি?
– জান তুমি আমাকে ধমক দিয়ে কথা বলতে পারলা? তুমি জানো না আমি প্রেগন্যান্ট আর এই সময় এভাবে কথা বললে বেবির উপর বেড ইফেক্ট পড়বে।
আবরার এক পলক আফরিনের দিকে তাকালো৷ বাড়ির সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে৷ কেউ কিছু বুঝে উঠতে পারছেনা।
– মজা বাদ দেও জেনি আমার বাড়ির এড্রেস তোমাকে কে দিয়েছে? আর কিসের বেবি কিসের প্রেগন্যান্সির কথা হচ্ছে।
– আবরার আমার সাথে মজা করছো তুমি? বেবি মানে আমার আর তোমার বেবি আবরার। তুমি কি সব ভুলে গেছো?
– তোমার চিকিৎসার দরকার জেনি বের হয়্র যাও আমার বাড়ি থেকে।
আবরার ভয়ংকর রেগে গেছে। আবরার এর ইচ্ছে করছে এই জেনিকে খু*ন করে ফেলতে কারন তার নামে এতো নোংরা একটা মিথ্যে অপবাদ দে দিচ্ছে। আবরারের কথায় জেনি কান্না করা শুরু করলো। কান্না করতে করতে তার হিচকি উঠে যাচ্ছে।
– আমার সাথে তুমি এমন করতে পারো না আবরার। আমি কোথায় যাবো এই শহরে যে আমার পরিচিত কেউ নাই তুমি জানোনা?নিজের বাচ্চাকে কিভাবে অস্বীকার করতে পারো আবরার। আংকেল আন্টি আমাকে বিশ্বাস করুন আমি সত্যি বলছি।
– আমার ধৈর্যের বাধ ভেঙ্গে যাচ্ছে জেনি বের হবা না সিকিউরিটি ডাকবো?
– আরে আবরার চিল আমি শুধু মজা করছিলাম আর তুই সিরিয়াসলি নিয়ে নিলি?
– তো কি করবো এইরকম ফালতু মজার জন্য আমার বউটা কান্না করে দিচ্ছে এখোন দেখ।
আবরারের কথায় আফরিন লজ্জা পেয়ে যায়। জেনি তা দেখে মুচকি হাসি উপহার দেয়।
– আরে বোন ভয় পেয়ো না। আমি তোমার জামাই কে নিয়ে যেতে আসি নাই। যার জন্য আসা এখানে আবরার আমাকে তোর বাবার মা*র*ডা*র কেসের দায়িত্ব দেওয়া হয় আর আমরা প্রমানের ভিত্তিতে মারিয়ায় বাবাকে গ্রেফতার করি। মারিয়া বলছে সে ওর বাবার পক্ষে শাক্ষি দিবে আর তা বলার জন্স আনি এখানে আসছি।
– মারিয়া কে তুই কিভাবে চিনিস?
– মারিয়া আমার কাজিন লাগে। আর আজান এবং মারিয়ায় বিয়ে আমি দিয়েছিলাম নিজ দায়িত্বে। আংকেল আন্টি আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন। মারিয়া মেয়ে হিসেবে একদম খারাপ না ওকে মেনে নেন।
– হ্যাঁ ভাইয়া যা হওয়ার হয়ে গেছে ওদের মেনে নেও। এভাবে তো আমরা ওদের আলাদা করতে পারিনা?
– আচ্ছা মারিয়া এর আম্মুকে খবর দেও আগামিকাল আবরারদের সাথে ওদের ও বৌভাতের আয়জন করা হবে৷ তোমার কোনো সমস্যা নাই তো আয়াজের মা?
– নো রহমান আমার কোনো সমস্যা নাই।
– যাও যাও সবাই নাস্তার টেবিলে বসো তাড়াতাড়ি। দুষ্টু মেয়ে একদম ভয় পাইয়ে দিয়েছো আমাদের।
– সরি আন্টি। আফরিন তুমি কি রাগ করছো?
– না না আপু আমার আমি কেনো রাগ করবো।
আফরিন আবরারের দিকে তাকিয়ে উত্তর দেয়। সবাইকে খাবার খাইয়ে দেওয়া হলো। আবরারের আম্মু সবাইকে দাওয়াত দেওয়ার জন্য লিস্ট বানাতে বসে গেলো। আজানের আম্মু চলে গেছে সপিং করতে বৌভাতের।
আফরিন আবরারের রুমে বসে টিভিতে মুভি দেখছিলো। আফরিনের কোনো ফোন নাই কারন তার মামি তাকে কিনে দেয় নাই। আবরার পাশে বসেই নিজের ফোন নিয়ে ব্যাস্ত সময় কাটাচ্ছে। তখন দরজায় নক করলো আজান।
– ভাইয়া আসতে পারি আমি?
– আরব আয় তো তুই কভে ফরমালিটি করছিস আমার সাথে?
আজান রুমে এসে দাঁড়িয়ে থাকে। আজান কিছু বলতে চাইছে।
– আসলে ভাইয়া আমি ভাবির কাছে ক্ষমা চাইতে আসছি। আমি খুব দুঃখিত ভাবি। আসলে আমি মারিয়াকে খুব ভালোবাসি অই সময় বাবা এসে তোমাকে বিয়ের কথা বলায় আমি নিজের বিবেক বুদ্ধি সব হারিয়ে ফেলেছিলাম। আর তাই অইভাবে তোমাকে বলে ফেলেছি। বিশ্বাস কর আমাকে তোমাকে ইন্সাল্ট করার কোনো চিন্তা আমার ছিলো না। আমি শুধু কিছু কারন দেখিয়ে বিয়ে ভাঙ্গতে চেয়ছিলাম শুধু৷
– ইটস ওকে আমি তখন অপমানিতবোধ করলেও এখন আমার কিছু মনে নাই।আল্লাহ যা ভাগ্যে লিখেছে তাই হবে।
– আজান তুই আমার ছোটভাই। আমি কখোনো তোকে খারাপ বুদ্ধি দিবো না। শোন আর যাইহোক এভাবে কখোণো কাউকে ছোট করিস না।উদ্দেশ্য যেমন ই হোক কোনো কথা একবার মুখ থেকে বেরিয়ে গেলে তা ফিরত নেওয়া যায়না। কিছু কিছু শব্দ অনেক কষ্ট দেয় বুঝে শুনে কাউকে কিছু বলিস এরপর।
– সরি ভাই সামনে থেকে আমি সব কথা মাথায় রেখে চলবো। আমাকে ক্ষমা করার জন্য ধন্যবাদ ভাবি।
আজান চলে গেলো আফরিম আজানের কথায় মিষ্টি এক হাসি উপহার দিলো। আবরার আফরিনের দিকে তাকিয়ে আছে৷
– জ্বী কিছু কি বলবেন আপনি?
আফরিনের প্রশ্নে আবরার এক ভ্রু কুচকে বললো,
– না তো, তোমমার এমন কেনো মনে হলো আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই?
– না মানে কিছুনা।
আফরিন নিচে তার ফুপির কাছে চলে গেলো। আফরিন চলে যাওয়ার পর আবরার ও নিজের কাজে মনোযোগ দিলো। অনেক যায়গায় জবের জন্য এপ্লাই করতেছে। ওদের যা টাকা আছে তা দিয়ে আবরার অনায়াসে একটা কম্পানি খুলতে পারে। আবরারের ইচ্ছা ভিন্ন সে আগে জব করবে অভিজ্ঞতা অর্জন করবে এরপর সে বাকিটা বুঝবে।
আফরিনের শাশুরিমা ফোন করে সবাইকে ইনভাইট করছে আর আফরিন পাশে বসে আছে।
– আচ্ছা ফুপিমা দাদার সাথে আব্বুর কি নিয়ে ঝামেলা হয়েছিলো?
– সম্পত্তি নিয়ে। তোর বাবার নামে যা সম্পত্তি ছিলো তা বাবা তোর মায়ের নামে দিতে চেয়েছিলো। তোর বাবা বাহিরের এক মেয়েকে পছন্দ করতো। সব সম্পত্তি তোর মা কে না দিয়ে বাবাকে দিলে হয়তো সেদিন সে অই মহিলা কে বিয়ে করে নিতো । অইদিন তোর বাবা ইচ্ছাকৃত ভাবে এক্সিডেন্ট করে তোকে আর তোর মা কে খু*ন করতে চেয়েছিলো। সে ড্রাইভিং সিট থেকে লাফ ও দিয়েছিলো কিন্তু অপরপাশ থেকে আরেক গাড়ি এসে তার উপর দিয়ে গাড়িয়ে চালিয়ে দেয়। তোকে অইদিন তোর মা গাড়ি থেকে সাইডে ফেলে দেওয়ায় মাথায় আ*ঘা*ত পেয়ছিলি তাই তোর অনেক কথা মনে নাই। তোর মামার সাথে আমার কথা হয়েছিলো আজ সকালে। অইখান থেকে তোর মামা তোকে এসে নিয়ে যায় আর তোর বাবা- মাকে ওখানে কবর দেয়। তোর বাবার সেই প্রেমিকা তোকে মারা*র জন্য অই এলাকায় যায় ভাগ্যক্রমে তুই ভেবে তোর ঘুমন্ত মামাতো বোন কে মেরে ফেলে। এইজন্য তোর মামি তোর ক্ষেপা। আমরা তোর বাবার সেই প্র্বমিকা কে খুজে পাই আর তার কাছে এসব ঘটনা জানতে পারি। আমরা অই মহিলা কে পুলিশের কাছে দেওয়ায় সি রাগে অই মহিলার ভাই তোর ফুপাকে মেরে ফেলে৷ মারিয়ার ফুপু লাগে সেই মহিলা আর মারিয়ায় বাবা সেই লোক।
আফরিন কি রিয়েকশন দিবে সে বুঝতে পারছেনা। এতো এতো ঘটনা তার অগচরে ঘটেছে সে জানতেও পারেনাই। যে বাবাকে সে এত ভালোবাসতো এতো শ্রদ্ধা করতো সেই বাবাই তাদের মে*রে ফেলতে চেয়েছিলো। তার মায়ের মৃ-ত্যু*তে য়ার বাবা দায়ী?মাথা নিচু করে আফরিন কান্না করছে। তার ফুপু তাকে শান্তনা দিচ্ছে। মেয়েটা কে কাদতে দেওয়া উচিত এতে যদি সে নিজেকে শান্ত করতে পারে।
দেখতে দেখতে গোটাদিন গিয়ে রাত পেরিয়ে যায়। আজ ওদের বৌভাত। সকাল বেলায় মারিয়া আর আফরিন কে পার্লারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ওদের সাজানো শেষ হলে সোজা কমিউনিটি সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হবে। আবরার অনেক্ষন ধরে অপেক্ষা করে যাচ্ছে কখন নিয়ে আসা হবে আফরিন কে।
– ভাইয়া এতো পায় চারি করছো কেনো, কোনো সমস্যা?
– মেয়েদের পার্লারে যাওয়ার পরে এতো সময় লাগে কেন? কি সব মেখে ভুত বানায় ওদের।
– বাই এনিচান্স ভাইয়া তুমি ভাবিকে মিস করছো?
– আব না কি যা নিজের কাজে যা।
আবরার বেখেয়ালি ভাবে যে আজান কে কি বলছে তা ভেবেই নিজের মাথায় গাট্টা মারে। আজান মুচকি মুচকি হাসি দিচ্ছ আবরারব্র দিকে তাকিয়ে। অবশেষে সবার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আফরিন আর মারিয়াকে নিয়ে আশা হলো। মারিয়া কে ডার্ক ব্লু কালারের লেহেঙ্গা পরানো হয়েছে। ভারি মেকাপ আর গহনা পরানোতে মারিয়া কে অনেক সুন্দর লাগছে। অন্যদিকে আফরিন কে মিষ্টি কালারের লেহেঙ্গাতে অনেক সুন্দর লাগছে। কালারটাতে অনেক মানিয়েছে আফরিন কে। আফরিনকেও ভারি মেকাপ করানো হয়েছে। খান বাড়ির দুই বউ কেউ কারো থেকে কম সুন্দর না। দুই ভাত হাত বাড়িয়ে দাড়ড়িয়ে আছে তাদের প্রিয়তমা স্ত্রীদের দিকে। তাদের নতুন জিবন শুরু করার জন্য। আফরিন আর মারিয়া নিজেদের হাত এগিয়ে দিলো। অগ্রসর হলো তাদের নতুন জিবনের দিকে।
সমাপ্ত।