#আসক্ত🔥
জান্নাত
পর্ব : ১১
শুনসান নিরবতা পুরো বাড়ি জুরে! যে বাড়িতে সারাদিন হইচই তে ভর পুর থাকে তার ছিটে ফোটাও নেই!
বর্ষার বিদায়ের সাথে সাথে বাড়িটাও নিরবতায় ঢেকে গেছে! মেয়েকে বিদায় দিয়ে অসুস্থ হয়ে পরেছে সাজিদা! শাহেদও নিজের রুমে স্ত্রীর পাশে চুপ চাপ বসে আছে!
আর লাজুক, সে তো রুমের মধ্যে নিজের অফিসের ফাইল নিয়ে বসেছে!
শুধু টায়রাই এক মাত্র এখানে সেখানে ছটফট করে বেরাচ্ছে! তার ছোট্ট মনে যে নিস্তব্ধতার বিতৃষ্ণায় ভরে আছে!
এই বাড়িতে আসার পর, এমন ভাবে একটা দিন ও পার করতে হয়নি তাকে!
রিমপি,রিমি,নিশু,তিতলি তারা তো বর্ষার সাথে সাথেই চলে গেছে! গেস্ট জারা ছিলো তারাও কিছু চলে গেছি! বাকিরা গেস্ট হাউজে!
এই মুহূর্তে টায়রার কি পরিমান অসহ্য লাগছে বোঝাতে পারবে না সে!
মিউজিক বক্সে হালকা আওয়াজ করে গান ছেড়ে দিয়ে সে, রুমের সাথের মিনি ছাদের দোলনাটাতে গিয়ে শুয়ে পরলো!
কালো আকাশের দিকে তাকিয়ে টায়রা! টুকরো টুকরো মেঘ দেখাচ্ছে, আর তাদের আরালে উকি দিচ্ছে ছোট ছোট তারা গুলো!
সেভাবেই শুয়ে থাকতে থাকতে কখন যেনো ঘুমিয়ে পরলো টায়রা!
লাজুক টায়রার রুমে এসে তাকে না দেখতে পেয়ে চলে গেলো ছাদে! টায়রা শীতের কারনে গুটিশুটি মেরে দোলনাতে শুয়ে!
রুম থেকে হালকা আলোতে মুখটা দেখা যাচ্ছে তার! চুল গুলো এলো মেলো হয়ে মুখের উপর পরে!
শীতে কাপনি দিচ্ছে তা স্পস্ট বোঝা যাচ্ছে!
ধীর পায়ে টায়রার কাছে গিয়ে কোলে তুলে নিয়ে রুমে চলে এলো! তারপর বিছানায় শুইয়ে দিয়ে গায়ে ভালো ভাবে কম্বলটা জরিয়ে দিয়ে,চলে আসতে নিয়েও আবার ফিরে এসে টায়রার পাশে বসলো!
কপালের চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো ঘুমন্ত টাুয়রার দিক!
দু হাতে ভর রেখে ঝুকে গিয়ে টায়রার কপালে ছোট্ট করে একটা চুমু খেলো!
তারপর আবার কম্বলটা গায়ে ভালো ভাবে জরিয়ে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো লাজুক!
______________________
সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজেকে বিছানায় দেখে বেশ অবাক হয়ে গেলো টায়রা! সে বুঝতে পারছে না যে এখানে কিভাবে এলো!
হঠাৎ একটা চেনা স্মেইল পেতেই তার বুকটা ধুকধুক করে উঠলো!
গায়ের টিশার্টটা কিছটা উচু করে নাকের কাছে নিয়ে শুকতেই লাজুকের শরীরের গন্ধ পেলো সে!
শিরশির করছে তার শরীর , ঝিম ঝিম করছে হাত পা! ভাবতেই কাল রাতে তবে কি লাজুক তাকে রুমে এনে শুইয়ে দিয়ে গেলো?
অদ্ভুত একটা কাজ করলো টায়রা এই প্রথম বার! কেনো যে এমনটা করলো সে নিজেও যানে! এরকম পাগলামির মানে কি?
গায়ের টিশার্টটা খুলে সে সেটা যত্ন করে আলমারিতে তুলে রেখে দিলো! কিন্তু কেনো?
শুধু মাত্র লাজুকের গন্ধ লেগে আছে বলে তাতে?
মাথা ঘোরাচ্ছে টায়রার! হঠাৎ করে কেনো জানি তার খুব লাজুক কে দেখতে ইচ্ছে করছে! তার সাথে সময় কাটাতে মন চাইছে!
রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে ধীর পায়ে লাজুকের রুমের সামনে গিয়ে দাড়ালো!
দরজাটা খোলাই আছে! লাজুক রুমে বসে লেপটপে কিছু একটা করছে!
কালো টিশার্ট-এ বেশ লাগছে দেখতে,চুল গুলো ভেজা ভেজা! হয়তো শাওয়ার নিয়েছে!
কিছুটা সময় লাজুকের দিকে তাকিয়ে থেকে সেখান থেকে চলে গেলো!
নিচে নামতেই দেখলো শাহেদ সোফায় খবরের কাগজ পরছে! কিচেনের দিকে উকি মেরে দেখলো রেশমি হয়তো ব্রেকফাস্ট তৈরীতে লেগে! তা দেখে ভেতরে ঢুকলো টায়রা!
– রেশমি ফুল মা কোথায়?
– সে তো তার রুমে সকালে একবার নিচে এসেছিলো! আমাকে ব্রেক ফাস্ট বানাতে বলে আবার চলে গেছে!
– ও আচ্ছা!
– ছোট মনি আপনার কি কিছু লাগবে? হঠাৎ কিচেনে এলেন যে?
– না, এমনিই আসলাম! ফুল মা কিচেনে আছে কি না দেখার জন্য!
– ওওহ! আপনি টেবিলে গিয়ে বসেন! আমি ব্রেকফাস্ট বানিয়ে আনি!
কিচেনের বাসন-কোসন নাড়তে নাড়তে টায়রা বললো,
– তুমি গিয়ে অন্য কাজ করো! আজ আমি ব্রেকফাস্ট বানাবো সবার জন্য!
টায়রার কথায় রেশমি করুন মুখ করে বললো,
– ছোট মনি আপনি পারবেন না! হাত-টাত পুড়ে গেলে ছোট সাহেব বোকবে আমাকে!
– আরে কিছু হবে না! তুমি যাও তো! আমি এখন বড় হয়ে গেছি, আর ছোট নই!
– কিন্তু ছোট মনি..
– আবার?
– আচ্ছা ঠিকআছে! তবে কিছু লাগলে বলবেন!
রেশমি কিচেন থেকে চলে যেতেই, টায়রা লেগে পরলো ব্রেকফাস্ট বানানোর কাজে!
এক এক করে সব টেবিলের উপর এনে সাজিয়ে রাখলো টায়রা! পুরো মুখ লাল হয়ে গেছে, এতোক্ষন কিচেনে আগুনের কাছে থাকায়! গলার স্কার্ফটা কোমড়ে বাধা! চুল গুলো হাত খোপা করা!
অবাক চোখে দেখছে লাজুক টায়রা কে!
একে বারে ভিন্ন রকম লাগছে আজ তার পিচ্চি কে!
সাজিদা বেগম অবাক হয়ে জিগ্গেস করলো,
– টায়রা এই গুলো তুই রান্না করেছিস?
এক গাল হেসে মাথা নাড়িয়ে জবাব দিলো টায়রা,
– হ্যা!
– সে কি ? তুই কেনো এতো কষ্ট করতে গেলি আম্মু?
– আরে কি হয়েছে বলো করেছি তো? এমনিই একা একা কিই বা করবো বলো! ভালো লাগছিলো না তাই ব্রেকফাস্ট রেডি করলাম! তোমরা বস আমি তোমাদের কে সার্ভ করে দিচ্ছি!
টায়রার কথায় হেসে সাজিদা আর শাহেদ দুজনেই টেবিলে বসলো! লাজুকও সোফা থেকে উঠে টেবিলে গিয়ে বসলো!
টায়রা সবাই কে সার্ভ করে দিচ্ছে! হঠাৎ করেই সবার বিষন্ন মন ভালো হয়ে গেলো টায়রার জন্য!
আর লাজুক তো শুধু টায়রাকেই দেখে যাচ্ছে! কয়েক দিন যাবত সে টায়রার মধ্যে আমুল পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছে!
আগের সেই পিচ্চি টায়রার স্বভাব এখন আর তার মাঝে খুব একটা দেখা যায় না!
বড় বড় একটা ভাব চলে এসেছে! এগুলোর জন্যই তো এতো অপেক্ষা তার!
শাহেদ খাবার মুখে দিয়ে বললো,
– বাহ্ অসাধারন রান্না করেছো মামনি!
মুচকি হাসলো টায়রা শাহেদের কথায়!
সাজিদা বললো,
– সত্যিই দারুন হয়েছে! তোর রান্নার হাত তো দারুন, একদম মায়ের মত!
টায়রা আড় চোখে লাজুকের দিকে তাকিয়ে দেখলো সে চুপ চাপ খাচ্ছে! মনটা ভারী হয়ে উঠলো টায়রার! আজ সে প্রথম রান্না করলো,অথচ লাজুক কিছু বললো না কেনো! অন্তত কেমন হয়েছে সেটাতো বলা উচিৎ ছিলো!
শাহেদ খেতে খেতে বললো,
– সবাই মিস করে গেলো তোমার রান্না!
শাহেদের কথায় টায়রা মৃদু হেসে জিগ্গেস করলো,
– দিদুন কবে ফিরবে?
– কালকেই হয়তো চলে আসবে!
– ওও আচ্ছা!
খাবার শেষে টেবিল ছেড়ে উঠতেই লাজুক বললো,
– সন্ধার পর আমরা চট্টগ্রাম-এ যাওয়ার জন্য বের হবো, রেডি হয়ে থেকো!
লাজুকের কথায় মাথা নাড়ালো টায়রা!
_______________________
সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে কিছুক্ষণ আগে! নিজের রুমে রেডি হতে ব্যাস্ত টায়রা! মনের মধ্যে একটা এক্সসাইটমেন্ড কাজ করছে ওর!
লাজুকের সাথে এতোটা সময় কাটাবে তাই ভেবে! আর তারউপরে শীতের রাত ব্যাপারটা আরো রোমাঞ্চকর করে তুলেছে!
ধূসর রঙের একটা কামিজ পরে নিলো সাথে ম্যাচিং ওড়নাটা খুজে গায়ে জরাতেই নিচে লাজুকের ডাক শুনতে পেলো!
বিছানা থেকে ফোন আর ব্যাগ টা নিয়ে ভোঁ দৌড়!
সাজিদার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে লাজুকের পেছন পেছন ছুটলো!
ড্রাইভিং সিটে লাজুককে বসতে দেখে টায়রা জিগ্গেস করলো,
– আপনি ড্রাইভ করবেন? ড্রাইভার কে নিয়ে গেলেই তো হয়!
টায়রার দিকে ভ্রূ কুচকে তাকালো লাজুক!
– কেনো আমার ড্রাইভিং-এ কি বিশ্বাস নেই? নাকি ভাবছো এক্সসিডেন্ট হতে পারে?
মাথা নাড়িয়ে টায়রার জবাব,
– না না তা ভভা..ভাববো কেনো? আ..আমি তো শুধু বলতে চাইছি এতো টা রার..রাস্তা আপনি কি ভাবে…
গাড়ি স্টার্ট দিয়ে লাজুক বললো,
– গাড়িতে উঠবে নাকি রেখেই চলে যাবো?
– উঠছিতো!
টায়রা মুখ গোমড়া করে গাড়িতে উঠে বসলো! লাজুকের দিকে না তাকিয়ে জানালার দিকে ফিরে গেলো সে!
আড় চোখে টায়রা কে দেখে বাকা হেসে গাড়ি স্টার্ট দিলো লাজুক!
শোঁ শোঁ বাতাস বইছে! অন্ধকার রাত! হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে টায়রার তাও জানালা খুলে বাইরে তাকিয়ে সে!
লাজুক টায়রার দিকে তাকিয়ে বললো,
– জানালার কাচ টা তুলে দেও!ঠান্ডা বাতাস আসছে, শরীর খারাপ করবে!
কোনো জবাব দিলো না টায়রা চুপ করে রইলো যেমন ছিলো তেমন!
হঠাৎ গাড়ি থেমে যেতেই জানালা থেকে মুখ সরিয়ে লাজুকের দিকে তাকালো টায়রা!
ততক্ষণে লাজুক গাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে!
– কই যাচ্ছেন আপনি?
– চুপচাপ বসে থাকো! এক পাও নোড়বে না! আমি গাড়ি লক করে দিয়েছি!
টায়রাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে হনহন করে লাজুক চলে গেলো ওখান থেকে!
অবাক টায়রা! লাজুক কি রেগে গেলো তার কথা না শোনায়!
বেশ কিছুক্ষণ পর লাজুক ফিরে এলো, হাতে বড় সড় সাইজের একটা প্যাকেট নিয়ে!
গাড়িতে ঢুকে বসতেই সেটা টায়রাকে দিয়ে বললো,
– এখানেই দোকান-পাঠ শেষ! এর পর মেইন রোডের পাশে আর কিছু পাওয়া যাবে না!
তাই আপাদতো এগুলো খেয়ে পার করো!
অবাক টায়রা প্যাকেটটা খুলে দেখলো, চিপস,বিস্কুট,চকলেট, জুস,পেপসি এরকম নানান জিনিসে ভর্তি করে এনেছে!
– এ..এতো কিছু কেনো?
ড্রাইভ করতে করতে লাজুক জবাব দিলো,
– খেতে মন না চাইলে ফেলে দেও!
কোনা চোখে তাকিয়ে টায়রা লাজুকের দিকে!ভাবতে লাগলো সে এই লোকটা কি একটু ভালো ভাবে কথা বলতে শিখবে না?ঘাড় ত্যারা কোথা কার!
To be continue…………..
Shuchona Zannat..
#আসক্ত🔥
জান্নাত
পর্ব : ১২
সামনে তাকিয়ে ড্রাইভ করছে লাজুক, আর তার পাশেই বসে চকোলেট খেতে ব্যাস্ত টায়রা!
আড় চোখে একবার লাজুকের দিকে তাকালো!
‘ এতো গম্ভীর কেনো এই লোকটা?’
– বলছিলাম কি! চকোলেট খাবেন?
টায়রার দিকে না তাকিয়েই লাজুক জবাব দিলো,
– আমি সুইট খাইনা! তুমি যানো না?
লাজুকের কথায় টায়রা তার সামনে চকোলেট ধরে বললো,
– খান না তো কি হয়েছে! আজ একটু খান! দেখবেন মিষ্টি মুখ করলে কথাও মিষ্টি মিষ্টি বলবেন!
টায়রার কথা শুনে চোখ রাঙিয়ে তার দিকে তাকালো লাজুক!
সেদিকে পাত্তা না দিয়ে টায়রা আবার বলতে লাগলো,
– আমি তো ভালোর জন্যই বললাম! মিষ্টি খান না দেখেই তো সব সময় এমন তেতো তেতো কথা বলেন! ফুল মা মনে হয় আপনার জন্মের সময় তিতা করল্লার রস খাইয়ে ছিলো!
টায়রার কথা শেষ হতে না হতেই জোরে ব্রেক কষলো লাজুক!
– মুখে বুলি ফুটেছে না! খুব কথা বলতে শিখে গেছো?আজ বার করছি সব!
কথা গুলো বলে, হুট করেই লাজুক টায়রার কোমড় ধরে হ্যাচকা টান মেরে নিজের কাছে নিয়ে এলো!
টায়রা কিছু বোঝার আগেই ওর ঠোট গুলো লাজুকের ঠোটের মাঝে চলে গেলো!
স্তব্ধ টায়রার জেনো রৃৎপিন্ড টা বেরিয়ে গেছে! পুরো দুনিয়া ঘুরছে তার!
এর মধ্যেই টায়রা বুঝতে পারলো, লাজুক বড়সড় একটা কামড় বসিয়ে দিয়েছে ওর ঠোটে!
ব্যাথায় লাজুক কে সরিয়ে দু হাতে ঠোট চেপে ধরে চেচিয়ে উঠলো!
– আহহহহহহহহহহহহহহহহহহ!!!!
টায়রার চিৎকার শুনতেই হতভন্ব হয়ে লাজুক ততক্ষনাক গাড়ি দাড় করালো!
দু হাতে ঠোট চেপে ধরে আহাম্মকের মত বসে টায়রা! কি ছিলো এটা? ওকি তা হলে স্বপ্ন দেখছিলো? তাও এমন ?
আড় চোখে লাজুকের দিকে তাকাতেই দেখলো সে নাক ফুলিয়ে তাকিয়ে তার দিকে!
ভয়ে ঢোক গিললো টায়রা!
মিনমিনে গলায় বললো,
– স.স..স্যরি! স্বপ্ন দেখেছিলাম হয় তো!
বিরক্তি লুকে টায়রার দিকে তাকিয়ে আবার গাড়ি স্টার্ট করলো লাজুক!
আর টায়রা ভাবতে লাগলো, এ কি দেখলো সে? হায় আল্লাহ মান সম্মান নিয়ে টানা টানি!
_____________
টায়রা আড় মোড়া ভেঙে চোখ মেলতেই দেখলো গাড়িতে সে একা বসে! ভোর হয়ে গেছে বাইরে! প্রচন্ড শীতও লাগছে!
জানালার কাচ নামিয়ে বাইরে মাথা বের করে লাজুক কে খুজতে লাগলো সে!
গাড়ি থেকে কিছুটা দূরে, রাস্তার কিনারায় দাড়িয়ে হয়তো কফি খাচ্ছে! টায়রা ভাবতে লাগলো, ‘কফি কিনলো কখন আবার?’
দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে এগিয়ে গেলো লাজুকের কাছে!
– আ..আমাদের পৌছতে আর কত সময় লাগবে?
টায়রার আওয়াজ পেতে ফিরে তাকালো লাজুক তার দিকে!
টায়রার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে সে বললো,
– গাড়িতে উঠো! বেরতে হবে আমাদের!
লাজুকের দিকে একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো! তারপর চুপ চাপ হেটে ফের চলে গেলো গাড়িতে!
পাশে লাজুকও এসে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো!
টায়রা চুপ, বাইরে দেখে যাচ্ছে!
হঠাৎ লাজুকের আওয়াজ পেতে ফিরে তাকালো তার দিকে!
গাড়ির উপরে একটা কাগজে মোড়ানো প্যাকেট দেখিয়ে বললো,
– এটা খেয়ে নেও!
– কি আছে এতে?
লাজুক ড্রাইভ করতে করতে জবাব দিলো,
– স্যান্ডউইজ!
– কিন্তু আ..আমি…
টায়রা কথা শেষ করার আগেই লাজুকের ধমক!
– জাস্ট ডু ওয়াট আম সেইং!
ভীতু চোখে লাজুকের দিকে একবার তাকিয়ে তারাতারি স্যান্ডইউজ টা বের করে খেতে লাগলো!
আড় চোখে একবার টায়রার দিকে তাকিয়ে লাজুক শান্ত কন্ঠে বললো,
– ধীরে খাও!
কথাটা বলার সাথে সাথে টায়রার বেষম লেগে গেলো! কাশতে শুরু করলো ও!
তৎক্ষণাৎ গাড়ি থামিয়ে, একটা পানির বোতল ধরলো টায়রার মুখের কাছে!
– ধীরে ধীরে খেতে পারো না? খেতে বলেছি বলে কি এভাবে খেতে হবে?
পানি খেয়ে নিয়ে মাথা নিচু করে আবার আস্তে আস্তে খেতে লাগলো টায়রা! টায়রার দিকে একপলক তাকিয়ে লাজুক আবার ড্রাইভিং এ মন দিলো!
_____________
বর্ষাকে জরিয়ে ধরে বিছানায় বসে টায়রা! তাদেরই ঘীরে বসে তিতলি,রিমি,নিশু,রিমপি! আর বিছানার পাশের সোফায় বসে লাজুক আর বর্ষার স্বামী আবির!
টায়রার নজর সোফায় বসা লাজুকের দিকে পরতেই দেখলো, তার নজর টায়রার দিকে! বর্ষাকে ছেড়ে দিয়ে ঠিক হয়ে বসলো!
বর্ষা নানান কথা জিগ্গেস করছে টায়রাকে, বাসার সবাই কেমন আছি, সে চলে আসার পর কে কি করেছে! এক এক করে সবার খবর বললো! তবে সাজিদার কথা শুনতেই মন খারাপ হয়ে গেলো তার!
তা দেখে টায়রা বললো,
– ওহো দি মন খারাপ করছো কেনো? শুধু আজকের রাত টুকু কাল ভোরে তো আবার তুমি আমাদের সাথে ফিরছো! এখন মন খারাপ করো না!
বর্ষা মুচকি হেসে টায়রাকে জরিয়ে ধরলো!
– ভাই আসার সময় রাস্তায় তোকে বোকে নিতো?
বর্ষার কথায় আড় চোখে একবার লাজুকের দিকে তাকালো! সে ফোন টিপছে, আর মাঝে সাজে তাদের দিকে তাকাচ্ছে!
লাজুকের থেকে নজর সরিয়ে বর্ষার দিকে তাকিয়ে মাথা নেড়ে না বললো টায়রা!
– মিথ্যে বলে লাভ নেই! আমি জানি ভাই কি বলতে পারে তোকে!
[ লাজুক কে লক্ষ্য করে বললো ] ভাই তুই সব সময় টায়রাকে এমন না বোকলেও তো পারিস! আমি তো কখনো দেখি নি যে ও বকার মতো কোনো কাজ করেছে!
লাজুক ফোন থেকে চোখ সরিয়ে টায়রার দিকে তাকিয়ে বললো,
– কিন্তু আমার কাছে তো ওর প্রতিটা কাজই বকা দেওয়ার মত লাগে!
লাজুকের কথা শুনে অসহায় মুখে টায়রা বর্ষার দিকে তাকালো! আর বর্ষা ভাবছে তার ভাই সোধরাবার না!
____________________
সন্ধ্যায় বর্ষার শশুড় বাড়িতে ওদের বউভাতের আয়োজন শুরু হয়েছে! লাজুকদের তরফ থেকে ওদের কিছু রিলেটিভরা এসেছে!
সাজিদা,শাহেদ তারা কেউই আসে নি, কারন কাল ভোরেই আবার বর্ষাকে নিয়ে সবাই ওখানে ফিরে যাবে!
টায়রা,তিতলি,রিমপি,রিমি,নিশু মিলে একটা টেবিলে বসে আড্ডা দিচ্ছে! এরি মধ্যে সেখানে এলো আবিরের বড় কাকার ছেলে অণি, মানে বর্ষার দেবর!
– হেই গার্ল’স! সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছো বুঝি?
অণি কে দেখতেই সবাই মেজাজ খারাপ করে বিরক্ত হয়ে মুখ বেকালো! এই ছেলেটা টায়রা এখানে আশার পর থেকে ওদের পিছে ঘুরঘুর করে যাচ্ছে!
বর্ষার দেবর বলে কেউ কিছু বলতেও পারছে না!
অণি গিয়ে টায়রার পাশ ঘেষে বসে পরলো! অণির দিকে আড় চোখে তাকিয়ে রিমপির দিকে ঘেষে বসলো টায়রা!
অণি মুচকি হেসে টায়রার দিকে তাকিয়ে বললো,
– ওয়াও, ইউ লুকিং লাইক অ্যা হোয়াইট এঞ্জিল!
অণির কথা শুনে মুখে জোর পূর্বক হাসি ফোটালো টায়রা! তার মোটেও ভালো লাগছে না এই ছেলেটার গায় পরা স্বভাব! টায়রা চোখ ঘুরিয়ে আশে পাশে লাজুক কে খুজতে লাগলো! কিন্তু কোথাও পেলো না তাকে! সন্ধ্যার পর থেকেই লাপাত্তা সেই মানুষটা!
টায়রার ছোট্ট মনটা আকুপাকু করছে লাজুক কে দেখার জন্য!
টায়রা যখন লাজুকের ভাবনায় হারিয়ে তখন তার পাশে বসে অণি হা করে দেখে যাচ্ছে তাকে! যার বিন্দু মাত্র খেয়াল নেই তার!
অণির হাবভাব দেখে রাগ লাগছে বাকিদের আবার হাসিও পাচ্ছে!
– ভাইয়া সন্ধ্যা থেকে কিছু খান নি আপনি?
রিমির কথায় ধ্যান কাটলো অণির! সে অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো,
– কেনো বলতো?
– না মানে সে কখন থেকে দেখছি, আপনি আমাদের বোনকে এমন ভাবে দেখছেন! যেনো চোখ গিলে খেতে চাইছেন!
রিমপির কথা শুনে লজ্জা পেয়ে গেলো অণি! তাই কথাটা ঘুরিয়ে বললো,
– আ..তোমরা থাকো আমি একটু আসছি! আমার একটা ফ্রেন্ড আসার কথা!.
কথাটা বলেই উঠে চলে গেলো ওখান থেকে সে! অণি চলে যেতে বাকিরা তাকালো টায়রার দিকে! যে আপাদত টেবিলের উপর হাতের কনুই ঠেকিয়ে গালে এক হাত দিয়ে, আর এক হাতে টেবিলে রাখা জুসের গ্লাসের স্ট্র টা নাড়ছে! কোনো এক গভীর ভাবনায় বিভোর সে!
তাকে এভাবে দেখে অবাক হয়ে গেলো সবাই!
– টায়রা!
প্রথম ডাকে কোনো সারা না পেয়ে আবার ডাকলো,
– টায়রা কি ভাবছিস তুই বলতো?
এবারও কোনো রেসপন্স করলো না টায়রা! তা দেখে তিতলি জোরে চেচিয়ে বলে উঠলো,
– আরে ঐ! মরে টরে গেলি নাকি! সাড়া দিচ্ছিস না কেন?
লাফিয়ে উঠলো টায়রা তিতলির ওমন বিকট আওয়াজে! বুকে এক হাত দিয়ে চেপে ধরে, চোখ গরম করে তাকালো তার দিকে!
রেগে গিয়ে টায়রা তিতলিকে ধমকে বললো,
– চেচাচ্ছিস কেন? আমি কি কালা নাকি সে শুনতে পাবো না?আর একটু হলে তো হার্ট এ্যাটাক হয়ে যেতো বেয়াদপ!
– এখান আমার দোষ তাই না! কখন থেকে ডেকে যাচ্ছি, আর নিজে যে ধ্যান মগ্ন হয়ে ছিলেন তার বেলায়!
তিতলির কথায় থম খেয়ে যায় টায়রা! তারপর মিনমিনে আওয়াজে বললো,
– বা..বাজে কথা বলবি না একদম!
– তিতলি মোটেও বাজে বলে নি! তুই নিজেই তো কি যেনো ভেবে যাচ্ছিলি তখন থেকে! ভাবছিস টা কি এতো?
চুপ হয়ে যায় টায়রা, কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না! তাই একটু রাগ দেখানোর ভাব করে বললো,
– যত্তোসব পাগল ছাগলের দল! তোদের সাথে থাকলে আমিও পাগল হয়ে যাবো!
কথাটা বলে ওখান থেকে উঠে চলে গেলো!
বাকিরা অবাক ওর কথায়!
হাটতে হাটতে একটা নিরিবিলি জায়গায় চলে এলো টায়রা! চুপ করে দাড়িয়ে অন্ধকারে তাকিয়ে রইলো সে! এতো লোকের ভিরেও সে কোনো কিছুর শূন্য তা অনুভব করছে!
পেছন থেকে কারো আওয়াজে ফিরে তাকালো সেদিকে!
একগুচ্ছো লাল গোলাপ হাতে দাড়িয়ে অণি! টায়রা ফিরে তাকাতেই সে ওর সামনে হাটু মুড়ে বসে পরলো!
অবাক চোখে তাকিয়ে টায়রা! এই মুহূর্তে ঠিক কি এক্সপ্রেশন দেওয়া উচিৎ ভেবে পাচ্ছে না সে!
অণি হাতের ফুল গুলো টায়রার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলতে লাগলো!
– হুট করে যে প্রথম দেখাই কারোর প্রেমে পরা যায় সত্যিই আগে আমি বিশ্বাস করিনি! কিন্তু তোমাকে আজ দেখার পর বুঝতে পারলাম, হ্যা হুট করেও প্রেমে পরা যায়! যদি সামনের মানুষটা তোমার মত সুন্দরী হয়!
আমি তোমাকে প্রথম দেখাই ভালোবেসে ফেলেছি টায়রা আই লাভ ইউ!
চোখ গুলো বড় বড় করে তাকিয়ে টায়রা অণির দিকে! কি সব পাগলের প্রলাপ করে যাচ্ছে?
– কি সব বলছেন আপনি? মাথা ঠিক আছে তো?
অণি উঠে দাড়িয়ে টায়রার হাত চেপে ধরলো!
– আমি সত্যিই তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি টায়রা! আই রিয়েলি লাভ ইউ! প্লিজ আমায় একসেপ্ট করে নেও!
টায়রা অণির থেকে নিজের হাত ছোটানোর চেষ্টা করতে করতে বললো,
– দেখুন ভাইয়া আমি মোটেও এসব পছন্দ করি না! তাই প্লিজ আমায় যেতে দিন!
অণি টায়রার হাত আরো শক্ত করে চেপে ধরে বলতে লাগলো,
– টায়রা প্লিজ এমন করো না! দেখো আমাকে কি তোমার পছন্দ না? কোন সাইডটা খারাপ আমার বলো?
টায়রা এবার রেগে গিয়ে বললো,
– আপনি হাত ছাড়বেন কি না বলুন?
– দেখ..টায়রা! আমার কথা শুনো….
হঠাৎ অণি টায়রার পিছনে তাকিয়েই ওর হাত ছেড়ে দিয়ে দু পা পিছিয়ে গেলো!
টায়রা অবাক হয়ে পিছনে ফিরে তাকাতেই ঢোক গিললো বড় করে! চোখ দুটো লাল হয়ে আছে লাজুকের! রাগে কপালের রগ গুলো জেগে গেছে! চোয়াল শক্ত করে তাকিয়ে সে অণির দিকে!
বুক ধুকধুক করছে টায়রা! অণি এখান থেকে না গেলে নির্ঘাত মারা পরবে!
এর মধ্যেই লাজুক অণির দিকে একপা এগিয়ে গিয়ে ভারী আওয়াজে প্রশ্ন করলো,
– কি বলছিলে ওকে?
অণি ভয়ে ঘাবরে গেছে! কাপা কাপা আওয়াজে বলতে নিলো,
– আ..আসলে আ..আম..আমি…
– আসলে হোয়াট?
টায়রা ভয়ে ভয়ে বললো,
– দে..দেখুন আপ..নি এতো রাগবেন না প্লিজ! [ অণির দিকে তাকিয়ে বললো ] চলে যান এখান থেকে!
টায়রার কথা শুনে অণি তারাতারি চলে যেতে নিলো! লাজুক অণিকে ধরার জন্য সামনের দিকে আগাতেই টায়রা হাত চেপে ধরে তার!
চোখ লাল করে তাকালো লাজুক টায়রার দিকে! ভয় পেয়ে হাত ছেড়ে দিলো তার!
– আ..আপনি এ…তো রেগে যাচ্ছেন কে..নো? প্রো..পো..প্রোপজ তো করতেই পা..পারে….
লাজুক টায়রার কথা শুনেতেই তেড়ে গেলো তার দিকে! ভয়ে তৎক্ষনাত কয়েক পা পিছনে চলে গেলো টায়রা!
– কি বললে তুমি?
চুপকরে নিচে তাকিয়ে টায়রা! ভয়ে তার আত্মা লাফাচ্ছে! লাজুক চোয়াল শক্ত করে এগিয়ে গেলো টায়রার দিকে..
– কেনো করবে প্রোপজ তোমায়? বলো কেনো করবে?
মাথা নিচুকরে দু পা পিছিয়ে জবাব দিলো,
– এ..এটাতো স্বাভাবিক ব..ব্যাপার! সবাই কেই করে..
লাজুক ধুম করে টায়রার দু বাহু চেপে ধরে পাশের দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে ধমকে বললো,
– সবাইকে করলেও তোমায় করবে না!কোন সাহসে ও তোমায় টাচ করেছে? [ ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো টায়রা ]
একটা কথা স্পস্ট ভাবে শুনে রাখো! ইউ আর অনলি মাইন! ক্যান ইউ হিয়ার?ইউ আর অনলি মাইন! তুমি শুধু আমার! তোমাকে টাচ করা তো দূরে থাক, কেউ তোমার দিকে চোখ তুলে তাকালেও সহ্য করবো না আমি!
কথা গুলো বলে টায়রা কে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে ওখান থেকে চলে গেলো লাজুক!
ভয়ে গুটিয়ে আছে টায়রা! তার বুক ধুকধুক করছে! শরীর থরথর করে কাপছে! কি বলে গেলো লাজুক?
সে শুধু লাজুকের!
এর মানে কি? মাথার ভীতরে সব কিছু ফাকা ফাকা লাগছে এই মুহূর্তে সব টায়রা!
দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাড়িয়ে রইলো সেখানে সে!
To be continue…
shuchona zannat..