#আসক্ত🔥
জান্নাত
পর্ব : ১৩
ভোর হতেই সবাই বেরিয়ে পরলো বর্ষার শশুর বাড়ি থেকে! লাজুকদের বাড়িতে পৌছতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে! তাই তাড়াতাড়িই বেরিয়ে পরেছে সবাই!
দুটো গাড়ি করে রওনা দিলো তারা!
একটাতে আছে নিশু রিমি বর্ষা আর আবির! আবির ড্রাইভ করছে তার পাশে বসে বর্ষা!বাকি দুজন পেছনের সিটে গল্পে মশগুল!
বর্ষাদের গাড়ির সামনের গাড়িতে লাজুক ড্রাইভ করছে, টায়রা তার পাশে বসে! আর তাদের পরছনের সিটে রিমপি তিতলি!
চুপ করে সিটে মাথা বা দিকে এলিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে টায়রা! কোনো কথা বলছে না সে! কালকের সেই ঘটনার পর থেকেই টায়রা কেমন যেনো হয়ে আছে! হয়তো মাথার মধ্যে হাজারো প্রশ্ন ঘুর পাক খাচ্ছে তার!
লাজুক টায়রার থেকে চোখ সরিয়ে ড্রাইভিং এ মনোযোগ দিলো! সে টায়রার মনের অবস্থা বুঝতে পারছে, কিন্তু সে এখন টায়রাকে কিছুই বলতে চাইছে না!
টায়রাকে এমন চুপচাপ দেখে পেছন থেকে রিমপি লাজুকের দিকে কিছুটা ঝুকে গিয়ে আস্থে করে জিগ্গেস করলো,
– ভাই কি হয়েছে? তুমি কি কিছু বলেছো ওকে?
রিমপির দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়লো লাজুক, মানে কিছুই হয়নি!
ছোট্ট একটা নিশ্বাস ফেলে রিমপি তিতলি নিজেদের মধ্যে কথা বলতে শুরু করে দিলো!
এভাবে বেশ কিছু সময় পার হয়ে গেলো! দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেলো! লাজুক গাড়ি রাস্তার এক সাইড করে নিয়ে গাড়ি থামিয়ে দিলো!
তা দেখে পেছনে আবিরও গাড়ি থামালো! টায়রা অবাক হয়ে লাজুকের দিকে তাকিয়ে! সে ইতিমধ্যে গাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে!
– সবাই বাইরে বেরিয়ে এসো!
লাজুকের কথায় রিমপি তিতলি বেরিয়ে এলো, সাথে টায়রাও!
পেছনের গাড়ি থেকে আবির বর্ষা রিমি নিশু তারাও এগিয়ে এলো ওদের কাছে!
– কি হলো শালাবাবু গাড়ি থামালে কেনো এখানে?
আবিরের কথায় লাজুক বলল,
– সকাল থেকেই তো সবাই একই ভাবে বসে আছে! একটু ব্রেক নেওয়া দরকার এখন! নয়তো বাড়ি পৌছে বেশি ক্লান্ত হয়ে পরবে!
লাজুকের কথা শুনে রিমপি বলল,
– ঠিক বলেছো ভাই! [ কোমড়ে হাত দিয়ে দাড়িয়ে ]সে কখন থেকে বসে থাকতে থাকতে আমার কোমড় শেষ হয়ে গেছে!
সবাই গিয়ে রাস্তার পাশে বসার জন্য ব্যাঞ্চ রাখা আছে সেখানে বসলো! লাজুক গিয়ে গাড়ির উপরে পা ঝুলিয়ে বসে পরলো!
আর তাদের থেকে কিছুটা দূরে রাস্তার কিনারায় গিয়ে দাড়িয়ে টায়রা আকাশের দিকে তাকিয়ে! শো শো বাতাস তার খোলা চুল গুলো এলো মেলো করে উরিয়ে দিচ্ছে! সে দিকে এ দৃষ্টিতে তাকিয়ে লাজুক!
এদের দুজনের এই অন্যরকম ব্যাবহারটা নজরে পরছে সবারই! কিন্তু ঠিক কি হয়েছে ধরতে পারছে না কেউই!
লাজুক হঠাৎ গাড়ির উপর থেকে নেমে কোথাও একটা চলে গেলো! বর্ষা এগিয়ে গিয়ে টায়রার পাশে দাড়ালো নিঃশব্দে! বুঝতে পারলো না টায়রা যে কেউ এসে ওর পাশে দাড়িয়ে!
– টায়রা!
বর্ষার ডাকে ঘুরে তাকালো তার দিকে!
– কি হয়েছে তোর?
বর্ষার কথায় মুখে কৃত্তিম হাসি ফুটিয়ে টায়রা জবাব দিলো,
– কই দি, কিছু তো হয়নি!
– বাহহ! ভাইয়ের পিচ্চি এতো বড় হয়েগেছে যে মিথ্যে বলতেও শিখে গেছে!
বর্ষার দিকে স্তব্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে টায়রা! হঠাৎই তার বুকটা কেপে উঠলো!
বর্ষা ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে টায়রার গালে হাত দিয়ে বলল,
– কাল রাতের সব কথাই ভাই আমায় বলেছে!
মাথা নিচু করে ফেললো টায়রা! তার গাল বেয়ে পানি পরছে!
টায়রার চোখের পানি মুছে দিয়ে বর্ষা আবারও বলতে লাগলো,
– যখন প্রাপ্ত বয়স্ক একজন ছেলে একটা ১৪ বছরের পিচ্চি মেয়েতে আসক্ত হয়, সেটা কতটা যন্ত্রনার হয় ছেলেটার জন্য যানো? নিজেকে কতটা হেল্প লেস লাগে, নিজের উপরে কতটা ঘৃনা হয় যানো? যানো না!
কিন্তু আমার ভাই যানে! কারন সেও যে একটা পিচ্চি মেয়েতে আসক্ত হয়েছে!
অবাক চোখে তাকিয়ে টায়রা বর্ষার দিকে! তার বুকের মধ্যে যেনো কেমন করছে!
বর্ষা আবার বলতে শুরু করলো,
– অবাক হচ্ছো না? অবাক হওয়ারই কথা! আমি যখন প্রথম বুঝতে পারি তখন আমিও অবাক হয়েছিলাম! ভাইকে প্রতি মুহূর্তে কষ্ট পেতে দেখে কতটা খারাপ লাগতো বোঝাতে পারবো না! আমার ভাইয়ের মত একটা ছেলে সে কি না দুনিয়াতে এতো মেয়ে থাকতে একটা টিন এইজের মেয়ের প্রতি আসক্ত হয়ে পরেছে!
ওকে অনেক বার জিগ্গেস করার পরেও ও কখন শিকার করেনি! কিন্তু আমি তো বুঝি আমার ছোট্ট ভাইটার মনের মধ্যে কি চলছে! প্রতিটা মুহূর্তে যে সে ধূকে ধুকে মরছে! তার পিচ্চির আসেপাশে কোনো ছেলে সহ্য করতে পারতো না সে, এখনো পারে না! তার দিকে কোনো ছেলে বদ নজর পরুক সেটা সে সহ্য করতে পারে না! কেনো পারবে? সে যে তার পিচ্চি কে অতিরিক্ত ভালোবাসে!
ভাই যার প্রতি আসক্ত ছিলো সে কে যানো? সে তুমি ছিলে টায়রা! আমার ভাইয়ের পিচ্চি! তার আসক্তি!
বর্ষার কথা গুলো শুনে মাথা নিচু করে ফুপিয়ে কাদছে টায়রা! কেনো জানি তার কষ্ট হচ্ছে! খুব কষ্ট হচ্ছে! সেটা কেনো যানা নেই তার!
বর্ষা মুচকি হেসে টায়রার চোখের পানি গুলো মুছে দিলো!
– এভাবে কাদছিস কেনো? ভালোবাসিস কি আমার ভাইকে?
মুহূর্তেই কান্না থেমে গেলো টায়রার! সে অবাক হয়ে বর্ষার দিকে তাকালো!
বর্ষা হালকা হেসে টায়রার গাল টেনে দিয়ে বলল,
– মন খারাপ করে থাকিস না! তোকে এভাবে দেখলে আমার ভালোলাগে না! তোর হাসি মুখটা মিস করছি আমি!
বর্ষার কথা শুনে ভেজা চোখেই হেসে দিলো টায়রা!
পিছনে আবিরের ডাক শুনে সে দিকে চলে গেলো বর্ষা!
সেখানেই দাড়িয়ে টায়রা! তার পুরো শরীর যেনো নিজতেজ হয়ে আছে!
কিছুক্ষন পর লাজুক ফিরে এলো হাতে করে অনেক গুলো আইসক্রিম নিয়ে!
আইসক্রিম দেখতেই তিতলি নিশু রিমপি রিমি হামলে পরলো তার উপর! যে যারটা নিয়ে খাওয়া শুরু করে দিলো!
বর্ষা আর আবির কে আইসক্রিম দিয়ে, বাকি দুটো আইসক্রিম নিয়ে এগিয়ে গেলো টায়রার দিকে!
চুপ করে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আকাশের দিকে মুখ করে আছে টায়রা! লাজুকের আওয়াজ পেতেই সে দিকে ফিরে তাকালো!
হাতের আইসক্রিম টায়রার দিকে এগিয়ে দিয়ে,
– কি হয়েছে?
লাজুকের হাত থেকে আইসক্রিম নিয়ে নিরবে তাকিয়ে মাথা নাড়ালো টায়রা! আড় চোখে দেখতে লাগলো তাকে!
এই লোকটা ওকে ভালোবাসে?সত্যিই বিশ্বাস হচ্ছে না!
টায়রার পাশে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাড়ালো লাজুকও! নিঃশ্বচুপ সে সামনে তাকিয়ে,
– কেদেছো কেনো?
হঠাৎ লাজুকের প্রশ্নে টায়রা ফিরে তাকালো তার দিকে!
– কক..কই না তো! কা..কাদছিলাম না!
লাজুক দৃষ্টি টায়রার ফোলা লাল চোখের উপর!ডান হাত দিয়ে টায়রার বাম গালে স্পর্শ করতেই একটু কেপে উঠলো সে!
লাজুক শান্ত কণ্ঠে বলল,
– গালের উপর চোখের পানির দাগ রয়ে গেছে এখনো!
লাজুকের কথার কোনো জবাব দিতে পারলো না সে,মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইলো!
খানিক পরেই লাজুকের স্পর্শে পেতেই চোখ তুলে তার দিকে তাকালো টায়রা! লাজুক দু হাতে টায়রার মুখ নিয়ে উপরের তুলে,টায়রার ফোলা দু চোখের পাতায় আলতো করে চুমু খেতেই চোখ চেপে বন্ধ করে নিলো সে!
লাজুক টায়রার থেকে সরে আসতেই মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইলো সে!
– গাড়িতে উঠে বস! আমাদের যাওয়ার সময় হয়ে গেছে!
মাথা নাড়িয়ে গাড়িতে উঠে বসলো টায়রা! লাজুক বাকিদের ডাকতেই তারাও এসে পরলো গাড়িতে!
_________________
সবাই ফিরতেই পুরো বাড়িতে ধুম পরে গেলো আনন্দের! খাবার দাবারেরও হল হরেক আয়োজন!দুদিনের নিছতেজ হয়ে পরে থাকা বাড়িটা আবার হর্টোগোলে ভরে গেছে!
রাত নয়টার পর প্লান হলো সবাই মিলে ছাদে আড্ডা দিবে! সেই অনুযাই একটা বড় ম্যাট্রেস নিয়ে বিছিয়ে দিলো ছাদের মাঝে! তিতলি টায়রা নিশু রিমপি রিমি পাচ জনে হাতে করে কিছু বালিশ আর টুল নিয়ে এলো বসার জন্য!
বর্ষা আর আবির চলে আসতেই সবাই গোল হয়ে ম্যাট্রেসের উপর বসে পরলো!
টুকটাক বিষয়ে কথা শুরু হলো! সবার কথার মাঝেই রিমপি বলে উঠলো,
– বর্ষা দি আমাদেরকে তোমার আর জিজুর লাভ স্টোরিটা বল না!
রিমপির কথায় সায় দিলো বাকি চার জন!
– হ্যা হ্যা, জিজু তুমিই বল না, কি ভাবে কি হলো?
আবির বর্ষার দিকে তাকাতেই সে লজ্জা পেয়ে মুচকি হেসে মাথা নিচু করে ফেললো!তা দেখে হেসে ফেললো আবির!
– আমাদের তেমন কোনো লাভ স্টোরি ছিলো না! যা ছিলো তা একে বারেই বরিং!
আবিরের কথা শুনে তিতলি বলল,
– যাই হোক জিজু আমরা তাই শুনবো, তুমি বল!
আবির মুচকি হেসে বর্ষার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,
– আমাদের প্রথম দেখা হয় ভার্সিটিতে! বর্ষা তখন কেবল ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হয়, আর আমি ফাইনাল ইয়ারে!
প্রথম দেখাই ভালোবেসে ফেলি ওকে! কিন্তু কখনো প্রকাশ করা হয়নি! মাঝে সাজে ভার্সিটিতে দেখা হলে দু একটা কথা হতো ওর সাথে শুধু! সে ভাবেই দিন পারহতে লাগলো! বর্ষাও কখনো কিছু বলে নি! কিন্তু যখন আমি বুঝতে পারলাম ও ও আমাকে ভালোবাসে, তখন ওকে বলার সিদ্ধান্ত নেই! কিন্তু….
এতটুকু বলেই দীর্ঘ শ্বাস ফেললো আবির! বর্ষাও মুখ অন্ধকার করে তাকিয়ে রইলো আবিরের দিকে!
আবির সবার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলতে লাগলো,
– হঠাৎই তখন আমাকে দেশের বাইরে চলে যেতে হয় কিছুদিনের জন্য! কিন্তু দেশে ফিরে বর্ষাকে আর খুজে পাইনি! ও ওখান থেকে চলে এসেছিলো! অনেক খুজেছি!কিন্তু তারপর এতোবছর পর আবার দেখা হলো আমাদের! আমাদের ভালোবাসার জোর ছিলো তাই আবারও দেখা হয়েছে আমাদের! আমি ফিরে পেয়েছি বর্ষাকে!
অবাক চোখে শুনে যাচ্ছে টায়রা আবিরের কথা গুলো! কত গুলো বছর অপেক্ষা করেছে তারা একে অপরের জন্য! তাও কোনো কিছু না যেনে! কে কোথায় আছে, বিয়ে করেছে কিনা? কিছুই জানতো না! ভালোবাসা এতো গভীর হয় বুঝি?
টায়রার চোখ চলে গেলো ছাদের গেটের কাছে, লাজুক এগিয়ে আসছে ওদের দিকে,তার নজর টায়রার দিকে! হঠাৎ কেমন যেনো লাগতে লাগলো টায়রার! বার বার লাজুকের দিকে চোখ যাচ্ছে তার!
লাজুক কে দেখতেই রিমি বলে উঠলো!
– তুমি এতক্ষনে এসেছো! কখন ডেকে আসলাম তোমায়!
টায়রার থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে লাজুক জবাব দিলো,
– একটু কাজ ছিলো, তাই শেষ করে আসলাম!
আবির মুচকি হেসে বললো,
– শালাবাবু এসো এসো বস এখানে!
লাজুক পাশ থেকে একটা টুল নিয়ে সেখানে বসে পরলো!
তিতলি বলল,
– জানো জিজু ভাই না খুব সুন্দর ভায়লিন বাজাতে পারে! আগে প্রাই বাজাতো কিন্তু এখন আর দেখি না!
টায়রা অবাক চোখে তাকালো লাজুকের দিকে!
আবির বললো,
– বাহহ! তাই নাকি ? তাহলে শালাবাবু আমাদের কেও একটু বাজিয়ে শোনাও!
রিমি লাফিয়ে উঠে বললো,
– আমি ভায়লিন নিয়ে আসছি!
বলেই ছুটলো নিচে!
লাজুক রিমিকে আটকাতে গিয়েও পারলো না তার আগেই চলে গেলো সে! তা দেখে বর্ষা বললো,
– আরে ভাই এমন কেনো করছিস? বাজা না একটু!
– দি কত আগে বাজাতাম, তা কি এখন মনে থাকে?
লাজুকের কথায় বর্ষা নাক ফুলিয়ে বললো,
– তুই ভুলে গেছিস, আর সেটা আমাকে সেটা বিশ্বাস করতে বলছিস?
বর্ষার দিক তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেললো লাজুক!
রিমি নিচ থেকে ভায়লিন এনে লাজুকের কাছে দিয়ে বসে পরলো তিতলির পাশে!
টায়রা আড় চোখে তাকিয়ে লাজুকের দিকে!
চোখ বন্ধ করে ভায়লিন বাজাচ্ছে লাজুক! আর টায়রা এক ধ্যানে তাকিয়ে লাজুকের দিকে! সে লাজুকের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে একমন একটা ঘোরে ঢুবে যাচ্ছে! চম্বুকের মত টানছে লাজুকের মুখ তাকে! টায়রা চাইতেও চোখ সরাতে পারছে না লাজুকের থেকে!
ভায়লিন বাজানো শেষ হতেই লাজুক চোখ খুলে তাকাতেই দেখলো টায়রা তার দিকে একই ভাবে তাকিয়ে! যেনো চোখের পলকও পরছে না! পাশ থেকে তিতলি রিমির আওয়াজে ধ্যান ভাঙলো টায়রা! ফের লাজুকের দিকে তাকাতে সে ভ্রু নাড়িয়ে টায়রা কে ইশারায় জিগ্গেস করলো, কি হয়েছে?
মাথা নাড়িয়ে কিছু না বলে লাজুকের থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে নিচের দিকে তাকালো টায়রা!
To be continue….
suchona zannat….
#আসক্ত🔥
জান্নাত
পর্ব : ১৪+১৫
কোনো কিছুই যেনো ভালো লাগছে না টায়রার! অস্থির অস্থির লাগছে সবেতেই! এ কোন ঝামেলায় পরলো সে বুঝতে পারছে না! সারাটা ক্ষন মাথায় লাজুকের চিন্তা ঘুর পাক খায়! আবার লাজুকের সামনে গিয়ে দাড়াতেও কেমন শরীর শিরশির করে ওঠে! তার চোখের দিকে তাকাতে পারে না সে!
রুম থেকে বেরিয়ে সোজা ছাদে চলে গেলো! চারদিক নিরব, ঘুটঘুটে অন্ধকার! রাস্তায় দিয়ে দু একটা গাড়ির আলো দেখা যাচ্ছে! অধিকাংশ বাড়িরই লাইটস অফ আছে! ছাদের হালকা নীল আলোর দুটো লাইটস জালিয়ে নিলো টায়রা! এখন চারপাশটা কিছুটা দেখা যাচ্ছে!
এগিয়ে গিয়ে রেলিং ঘেসে দাড়িয়ে পরলো টায়রা! শীতল বাতাসে গাঁ শিরশির করছে! গাঁয়ে কাটা দিয়ে উঠছে ঠান্ডায়! চোখ বন্ধ করে উপভোগ করতে লাগলো সে একাকিত্বের এই সময় টুকু! নিশ্বাসের সাথে টেনে নিচ্ছে ঠান্ডা বাতাস গুলো!
কোনো এক চেনা সু-গন্ধ নাকে এসে লাগলো তার! মনে করিয়ে দিলো কারোর কথা! মুহূর্তেই বুক ধুকপুক করতে লাগলো! চোখটা খুলে ধীরে ধীরে পিছনে ফিরে তাকালো! লাজুক তাকিয়ে টায়রার মুখের দিকে! চোখ তুলে লাজুকের মুখের দিকে তাকাতেই আবার তারাতারি চোখ নামিয়ে মাথা নিচু করে নিলো!
– শীতের রাতেই কি শুধু তোমার বাইরে বেরতে মনচায় নাকি হাহ?
– না মানে ভা..ভালো লাগছিলো না তাই…
টায়রার কথায় তার পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বুলালো লাজুক! তারপর শান্ত কন্ঠে বললো,
– ভালো লাগছিলো না তাই এভাবে শীতের কোনো পোশাক ছাড়াই চলে আসবে? বাচ্চা কি তুমি?
কিছু বললো না টায়রা চুপ করে নিচের দিকেই তাকিয়ে রইলো!
হঠাৎ গায়ে কিছু পেচানোর হচ্ছে অনুভব করতেই তাকিয়ে দেখে লাজুক তার জ্যাকেট টায়রার গায়ে জরিয়ে দিয়েছে!
– আমি ঠিক আ..আছি! লাগছে না তেত..তেমন ঠান্ডা! আপনি পরে নিন এটা!
কথা গুলো বলে গায়ে মোড়ানো জ্যাকেট টা লাজুকের দিকে এগিয়ে দিতে নিলেই, দিলো এক ধমক!
– এতো পাকনামি করতে বলিনি! চুপচাপ ওটা গায়ে ঢোকাও!
ভয়ে ঢোগ গিললো টায়রা, তারাতারি জ্যাকেট টা গায়ে পরে নিলো! কিন্তু টায়রার মনে হচ্ছে ও জ্যাকেট পরেনি জ্যাকেট ওকে পরেছে! গিলে নিয়েছে একদম ওকে!
নিজের থেকে চোখ সরিয়ে লাজুকের দিকে তাকালো মুখ গোমরা করে!
– ক..কত বড় হচ্ছে এটা! আ…আমি নিচে যাচ্ছি! আপনার জ্যাকেট নিয়ে নিন!
– একপাও নড়বে না ছাদ থেকে! চুপচাপ ওখানে বস গিয়ে!
মুখ বেকিয়ে গিয়ে টায়রা পাশে রাখা টুলে বসে পরলো!
টায়রাকে দেখে বাকা হেসে নিজেও গিয়ে আর একটা টুলে বসলো!
লাজুক তাকিয়ে টায়রার দিকে! আর টায়রা নিজের গায়ে থাকা লাজুকের জ্যাকেটের হাতা নারছে! তার হাতের থেকে বেশ কিছুটা বড় এটা! তাই পাখির ডানার মত হয়ে আছে!
আড় চোখে একবার লাজুকের দিকে তাকিয়ে দেখলো সে এখনো টায়রার দিকে তাকিয়ে! চোখ নামিয়ে নিয়ে টায়রা জিগ্গেস করলো,
– আ..আপনার শীত করছে না? আপনার জ্যাকেট তো আমি পরে আছি!
টায়রার কথায় লাজুক বললো,
– আমি কি তোমার মত বাচ্চা?
টায়রা চোখ উল্টে লাজুকের দিকে তাকিয়ে বললো,
– আমি বাচ্চা? আমাকে কোন এঙ্গেল থেকে বাচ্চা মনে হয় আপনার বলেন তো? সব সময় শুধু বাচ্চা বাচ্চা বলেন!
– যে এঙ্গেল থেকেই দেখি না কেনো সব দিক থেকেই বাচ্চা মনে হয়!
লাজুকের কথায় তার মুখের দিকে তাকাতেই বাকা হাসলো লাজুক! লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে নিলো টায়রা লাজুকের কথার ধরন দেখে!
লাজুক যেভাবে কথার জবাব দিলো টায়রা ঠিক সেইরকম কিছু ভেবে জিগ্গেস করেনি!
– আ..আমি নিচে যাচ্ছি, ঘু..ঘুম পাচ্ছে!
কথাটা বলেই উঠে চলে গেলো সেখান থেকে! হাসলো লাজুক টায়রার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে!
_________________________
মনটা ছটফট করছে টায়রার সেই সোনিয়ার আশার পর থেকে! সোনিয়া বলেছে সে লাজুকের ফ্রেন্ড কিন্তু তাও তার মন মানাতে পারছে না! হঠাৎ করেই মনটা দুঃখে টইটম্বুর হয়ে গেছে!
বার বার আড় চোখে উপরে লাজুকের রুমের দিকে তাকাচ্ছে! সেই কখন সোনিয়া নামের মেয়েটা উপরে ঢুকেছে লাজুকের রুমে!
টায়রার এমন ছটফটানি কারোরই চোখ এরালো না! বর্ষা ট্রেতে দু কাফ এনে টায়রাকে দিয়ে বললো,
– যা এটা ভাইয়ের রুমে দিয়ে আয়!
মাথা নাড়িয়ে গুটিগুটি পায়ে শিরি বেয়ে উপরের দিকে উঠে গেলো সে! বুকটা কাপছে তার! কেনো তা যানা নেই!
দরজা চাপানো দেখে সেটা ঢেলে ভিতরে তাকাতেই স্তব্ধ হয়ে টায়রা দাড়িয়ে পরলো!
উদম শরীরে শুধু ট্রাইউজার পরে দাড়িয়ে লাজুক! আর তাকে জরিয়ে ধরে দাড়িয়ে সোনিয়া, যার পরনের শার্টটা ফ্লোরে পরে, গায়ে ছোট্ট একটা গেঞ্জি শুধু!
চোখ ফেটে পানি গরিয়ে পরছে টায়রার! তার ছোট্ট কলিজাটা কেউ যেনো কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলছে! ধম বন্ধ হয়ে আসছে!
পুরো শরীর থরথর করে কাপছে! হাতপা মনে হচ্ছে অবস হয়ে আসছে! চোখের সামনে এমন কিছু দেখে যেনো মনে হচ্ছে সে দুনিয়াতে নেই!
ট্রেটাও হাতে ধরে রাখার শক্তি টুকু নেই তার!
ধপ করে ট্রেটা নিচে পরে সব গুলো জিনিস ভেঙ্গে গুরিয়ে গেলো!
শকড হয়ে সোনিয়া লাজুক কে ছেরে দিয়ে দরজার দিকে তাকালো, সাথে লাজুকও! টায়রাকে ওভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখেই বুক কেপে উঠলো লাজুকের! টায়রার গাল ফেসে যাচ্ছে চোখের পানিতে!
টায়রা তাদের থেকে চোখ নামিয়ে নিয়ে কাপা কাপা কণ্ঠে বললো,
– সস…সরি! আআ…আ…মি. .. বুঝ…তে পারি নি!
কথা গুলো বলে আর এক সেকেন্ডও দাড়ালো না সে! দৌড়ে বেরিয়ে গেলো ওখান থেকে!
টায়রা চলে যেতে চেচিয়ে উঠলো লাজুক,
– ওহ শিট,ডেম ইট!
চোখ বন্ধ করে বড় একটা শ্বাস ফেললো! প্রচন্ড রেগে পাশে সোনিয়ার দিকে তাকালো সে! সোনিয়া কিছু বলতে যাবে তার আগেই ঠাসস করে একটা চড় বসিয়ে দিলো তার গালে!
গালে হাত দিয়ে স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে সোনিয়া! লাজুক চিৎকার করে বললো,
– বেরিয়ে যাও আমার চোখের সামনে থেকে! নয়তো তোমাকে খুন করে ফেলতেও দু বার ভাবতে হবে না আমার!
সোনিয়া কিছু বলতে যাবে তার আগেই আবারও বললো,
– জাস্ট লিভ!
গাল থেকে হাত সরিয়ে চলে গেলো সোনিয়া ওখান থেকে!
লাজুক তৎক্ষণাৎ বেরিয়ে গেলো টায়রার রুমের সামনে! টায়রার ফোপানোর আওয়াজ আসছে ভেতর থেকে!
রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো লাজুক!
লাজুককে দেখতে আরো ফুপিয়ে কেদে উঠলো টায়রা! হেচকি উঠেগেছে তার!
ফ্লোরে পা গুটিয়ে হাটুতে মুখ গুজে ফুপিয়ে কাদতে লাগলো!
ধীরে ধীরে টায়রার দিকে এগিয়ে গেলো লাজুক! টায়রার সামনে বসে দু হাতে তার মুখ তুলে লাজুকের দিকে ফিরালো!
তাকালো না টায়রা লাজুকের দিকে! চোখ নিচের দিকে রেখেই কেদে যাচ্ছে!
দু হাতে টায়রার চোখে পানি মুছে দিয়ে,লাজুক শান্ত কণ্ঠে বললো,
– কাদছো কেনো? আমাকে অন্য কারোর সাথে দেখে কষ্ট লাগছে?
কিছু বললো না টায়রা! হুট করেই লাজুকের খোলা বুকে মুখ গুজে ফুপিয়ে কেদে উঠলো?
প্রথমে অবাক হলেও পরে, মুচকি হেসে দু হাতে জরিয়ে নিলো টায়রাকে নিজের বুকে!
লাজুকের পিট খামচে ধরে ফোপাচ্ছে টায়রা! কান্নার বেগ কমলেও ফুপিয়ে কেপে উঠছে বার বার!
টায়রার ঘাড়ে মুখ রেখে তার পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে লাজুক বলতে লাগলো,
– আম স্যরি! আমার জন্য কষ্ট পাচ্ছো তুমি! কিন্তু বিলিভ মি, ওর সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই!
[ কিছুক্ষণ চুপ থেকে ] কোনো একদিন ছিলো,তবে তা দু বছর আগে! বাট আই ডোন্ট লাভ হার! আর কখনো বাসিও নি! সেই জায়গাটা অলয়েজ তোমার জন্যই খালি রয়ে ছিলো!
আমার পাস্ট কি ছিলো তা ভেবো না! এখন আমিটা শুধুই তোমার! আর আসক্তি তুমি আমার!
দু হাতে শক্ত করে পেচিয়ে ধরলো লাজুক কে! চুপ করে তার বুকের সাথে লেগে আছে টায়রা! শান্তি লাগছে তার এভাবে লাজুকের বুকে থাকতে! এতক্ষনের কষ্ট গুলো নিমেষেই যেনো কোথায় হারিয়ে গেলো, বুঝতেই পারলো না!
টায়রার কপালে আলতো করে একটা চুমু খেয়ে তাকে নিজের সাথে আরো শক্ত করে জরিয়ে নিলো লাজুক!
To be continue…..
shuchona zannat…
আসক্ত🔥
জান্নাত
পর্ব : ১৫
অনেক্ষন যাবত সে ভাবেই লাজুক-কে জরিয়ে ধরে বসে আছে টায়রা! কান্না থেমে গেছে অনেক আগেই, এখন শুধু নাক টানার আওয়াজ আসছে!
লাজুক টায়রাকে নিজের থেকে একটু সরিয়ে দু হাতে তার মুখ তুলে চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,
– অনেক্ষন থেকে ফ্লোরে বসে আছো! ঠান্ডা লাগবে তো, চলো বেডে উঠে বস!
কিছু বললো না টায়রা, সে আবার মাথা নুইয়ে দিলো লাজুকের বুকে! মুচকি হাসলো লাজুক! সে ভাবেই কোলে তুলে নিয়ে বিছানার উপর বসিয়ে দিলো টায়রাকে!
এবারও ছাড়লো না টায়রা! লাজুকের বুকে মাথা রেখে চুপ করে আছে! ভালো লাগছে তার এভাবে লাজুকের বুকে থাকতে! একটা মিষ্টি স্মেইল নাকে এসে লাগছে, যা টায়রা এর আগেও পেয়েছে, কিন্তু আজ লাজুকের এতোটা কাছে থাকায় যেনো তা আরো মধুর লাগছে! লাজুকের হৃৎস্পন্দনের আওয়াজটা শুনতেও মধুর থেকেও মিষ্টি লাগছে! প্রতিটা বিটেই জেনো বলছে, “আসক্তি তুমি আমার”
টায়রাকে চুপ করে থাকতে দেখে লাজুক ধীরে ধীরে টায়রার ঘাড়ের কাছের চুল গুলো সরিয়ে দিলো! নড়ে ওঠে লাজুক কে আরো চেপে ধরলো টায়রা! লাজুকের ঠোটের স্পর্শ ঘাড়ে পেতেই কেপে উঠে চোখ খিচে বন্ধ করে নিলো সে! ঘাড়ের উপর আরো গভীর ভাবে অনুভব করছে লাজুকের ঠোটের স্পর্শ!
লাজুকের খোলা পিঠেই খামচে চেপে ধরলো টায়রা! চিনচিন ব্যাথা অনুভব করছে লাজুক! কিন্তু ভালো-লাগার অনুভূতির কাছে, এ ব্যাথা তুচ্ছ মনে হচ্ছে !
মাথা তুলে টায়রা এক পলক লাজুকের মুখের দিকে তাকালো ফের আবার বুকে মাথা রেখে চুপ করে রইলো! বুঝতে পারলো লাজুক, টায়রা হয়তো কিছু বলতে চায়! কিন্তু পারছে না!
বুকের সাথে টায়রার মাথাটা চেপে ধরে জিগ্গেস করলো লাজুক,
– চুপ করে আছো কেনো? কিছু বলার হলে বলে ফেলো!
লাজুকের প্রশ্নের কোনো জবাব দিলো না টায়রা! বড় একটা শ্বাস ফেলে লাজুক বলতে লাগলো!
– আমি জানি তুমি কি বলতে চাইছো! এটাই যে সোনিয়া কেনো আমায় ওভাবে জরিয়ে ধরে ছিলো?
চুপ করে টায়রা দু হাতে লাজুক কে আরো শক্ত করে চেপে ধরলো! তার ছোট্ট বুকটার ভিতরে যে চিন চিন ব্যাথা অনুভব করছে!
টায়রার জবাবের অপেক্ষা না করে আবার বলতে লাগলো,
– প্রতিটা মানুষের একটা পাস্ট থাকে, কারোর ক্ষেত্রে সেটা সুন্দর, উজ্জ্বল, তো কারোর অভিশপ্ত , মূল্যহীন জীবন!
আমারটাও তেমনই ছিলো, মূল্যহীন! যা ইচ্ছা হয়েছে করেছি! যে মেয়েকে ভালোলেগেছে তার সাথে রিলেশনে গেছি!
সোনিয়াও তাদের মধ্যে একজন! আমার ওর প্রতি কোনো ইন্টারেস্ট নেই ,না ছিলো! কিন্তু দু বছর যাবত পিছনে পরে আছে সে! বার বার অপমান করার পরেও পিছু ছাড় ছিলো না!
শাওয়ার নিয়ে ওয়াশ রুম থেকে বেরতেই দেখে ও আমার রুমে!
রেগে ওকে অনেক কথা বলার পরেও কাজ হয়নি, হঠাৎ করে এসেই জরিয়ে ধরে! আর ঠিক সেই সময়ই তুমি চলে আসো!
এতটুকু বলে চুপ করে গেলো লাজুক! ফোপাচ্ছে টায়রা লাজুকের বুকে মুখ গুজে! তার কষ্ট হচ্ছে ভিষন কষ্ট হচ্ছে ! কিন্তু কেনো যানা নেই!
লাজুক তো বললো সে সোনিয়াকে পছন্দ করে না, কিন্তু তাও সহ্য হচ্ছে না!
চুপ করে টায়রা পিঠে হাত বোলাচ্ছে লাজুক! সে টায়রার কষ্ট পাওয়ার কারন বুঝতে পারছে! কষ্ট পাওয়াটা স্বাভাবিক! টায়রা এখনো ছোট,এটুকু বয়সে ওর মাইন্ড খুবই সফট এবং সেনসিটিভ! তাই কষ্ট পাওয়াটা স্বাভাবিক! এই বয়সে আবেগটা বেশিই থাকে সবার মাঝে!
কিন্তু লাজুক জানে, আস্তে আস্তে ঠিক স্বাভাবিক হয়ে যাবে টায়রা!
টায়রার নিশ্বাস টা ভারী ভারী পরছে! লাজুকে চেপে ধরে রাখা হাতটাও আলগা হয়ে গেছে!
টায়রাকে হালকা করে ধরে মুখটা সামনে আনতেই দেখলো ঘুমিয়ে পরেছে সে!
দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিছানায় ঠিক করে ওকে শুইয়ে দিলো ! মুখের উপরে পরে থাকা চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে! কপালে আলতো করে চুমু খেলো! ভেজা দু চোখের পাতায়ও ঠোট ছোয়ালো! পায়ের কাছে ভাজ করা কম্বলটা টেনে টায়রার গায়ে জরিয়ে দিয়ে, বেরিয়ে গেলো লাজুক রুম থেকে!
টায়রার রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে গিয়ে একটা টিশার্ট পরে নিলো লাজুক! চুল গুলো ঠিক করতে করতে, পাশের সোফায় বসে ল্যাপটপ অন করতেই রুমে বর্ষা এলো!
– সব ঠিক আছে তো ভাই?
ল্যাপটপ রেখে বর্ষার দিকে তাকিয়ে জবাব দিলো,
– হুমম, কাদছিলো! এখন ঘুমিয়ে পরেছে! ঘুম থেকে উঠলেই স্বাভাবিক হয়ে যাবে!
সস্থির নিশ্বাস নিলো বর্ষা! ভয় পাচ্ছিলো সে,টায়রাকে নিয়ে! আবেগের বসে না জানি আবার কি করে বসে!
ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে গেলো টায়রা! মাথাটা ভারী ভারী লাগছে তার! হালকা পেইনও হচ্ছে! সোফায় বসে দু হাতে মাথা চেপে ধরে বসে রইলো! এর মধ্যেই পাশে এসে বসলো বর্ষা!
টায়রার দিকে এক কাফ কফি এগিয়ে দিয়ে বললো,
– এটা খেয়ে নে! মাথা ধরাটা কমে যাবে!
কফিটা হাতে নিয়ে অবাক চোখে তাকালো টায়রা!
বর্ষা মুচকি হেসে বললো,
– এতো অবাক হওয়ার কিছুই নেই! ভাই অফিসে যাওয়ার আগে বলে গেছে, তুই ঘুম থেকে উঠলে যেনো কফি করে দেই!
ব্লাশিং হয়ে মাথা নুইয়ে রাখলো টায়রা!
টায়রার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে,
– আজ প্রথম ভাইকে এতোটা খুশি দেখলাম! আমার গম্ভীর ভাইটা যেনো তোকে পেয়ে তার প্রান ফিরে পেয়েছে! ও খুব ভালোবাসে তোকে, দেখবি কখনো কষ্ট পেতে দেবে না!
এভাবেই সব সময় আগেলে রাখিস ওকে!
মুচকি হেসে টায়রা জরিয়ে ধরলো বর্ষাকে! খুব ভালো লাগছে,তার আজ! নিজেকে পৃথবীর সব থেকে হ্যাপি মানুষ মনে হচ্ছে !
সন্ধ্যার দিকে লাজুক বাড়ি ফিরতেই, টায়রা এক মগ কফি নিয়ে গেলো তার রুমে!
ফ্রেশ হয়ে কেবলই বেরিয়েছে লাজুক ওয়াশরুম থেকে! মাথা মোছায় ওগাছালো হয়ে ভেজা চুল গুলো লেপটে আছে কপালে! হোয়াইট ফুল হাতার টিশার্টটার হাতা কনুই পর্যন্ত তোলা! পুরো চার্মিক লাগছে লাজুক কে!
এই লোকটা কি দেখে টায়রার প্রতি আসক্ত, তা প্রতিটা মুহূর্তে ভাবায় তাকে!
টায়রাকে চুপ চাপ দরজার কাছে দাড়িয়ে থাকতে দেখে, এগিয়ে গিয়ে লাজুক তাকে টেনে ভেতরে এনে দরজা চাপিয়ে দিলো!
টায়রার হাত থেকে কফিটা নিয়ে টেবিলের উপর রেখে দিয়ে, দু হাতে টায়রার মুখ টা তুলে কপালে আলতো করে ঠোট ছোয়ালো!
– মাথা ব্যাথা কমেছে! নাকি এখনো আছে!
নিচে তাকিয়ে জবাব দিলো টায়রা!
– ক..কমেছে!
– কিছু খেয়েছো বিকেলে?
মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললো টায়রা!
টায়রাকে ছেড়ে দিয়ে লাজুক কফির মগটা তুলে কয়েক চুমুক খেয়ে নিলো! কফির মগটা পাশে টেবিলে রেখে দিয়ে! টায়রাকে টেনে নিয়ে পাশেরই সোফাতে বসে পরলো সে!
আড় চোখে টায়রা লাজুকের দিকে তাকিয়ে তার থেকে কিছুটা সরে বসলো!
ভ্রূ কুচকে তাকালো লাজুক টায়রার দিকে!
– এটা কি হলো?
লাজুকের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নিয়ে টায়রা বললো,
– ক..কই কি?
কিছু না বলেই লাজুক হুট করেই টায়রাকে টেনে নিজের কোলের উপর নিয়ে এলো! শকড হয়ে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে টায়রা লাজুকের দিক!
বাকা হেসে টায়রার কোমড় থেকে পেট পর্যন্ত স্লাইড করে দু হাতে নিজের সাথে চেপে জরিয়ে ধরলো!
কেপে উঠলো টায়রা! বুক ধুকধুক করছে তার! ঝিম ঝিম করছে পরো শরীর ! মাথা নিচু করে আছে,সে! লাজুকের দিকে তাকানোর শক্তি টুকু নেই!
হঠাৎ ঘাড়ের কাছে কারো ভারী নিশ্বাস পরতেই তার পেট জরিয়ে রাখা লাজুকের হাত চেপে ধরলো শক্ত করে!
টায়রার ঘাড়ের কাছে নাক নিয়ে স্লাইড করতে করতে নিশ্বাস টেনে নিতে লাগলো লাজুক! যেনো টায়রার শরীরের বস স্মেইল নিজের মধ্যে নিয়ে নিবে! আলতো করে ঠোট দিয়ে ঘাড়ে ছুয়ে দিতে লাগলো টায়রা!
ভূমিকম্পর মত কাপছে টায়রা! বুক টা ধকধক হাতুড়ি পিটানোর মত আওয়াজ হচ্ছে! মনে হচ্ছে এই বুঝি বেরিয়ে যাবে হার্টটা!
লাজুক আরো গভীর ভাবে ছুয়ে দিতে লাগলো টায়রাকে! এতো বছরে আবগ অনুভূতি গুলো সব বেরিয়ে আসছে! আর নিজেকে সংযতো রাখতে পারছে না!
বড্ড বেশি অপেক্ষা করতে হয়েছে তো তাকে তার পিচ্চির জন্য!
লাজুকের এই তীব্র ভালোবাসা সহ্য করতে পারছে না টায়রা! উল্ট ঘুরে জরিয়ে ধরলো সে লাজুক কে!
চোখ চেপে বন্ধ করে নিয়েছে! শরীর কাপছে তার!
মুচকি হেসে টায়রার কপালের পাশে চুমু খেয়ে নিজের সাথে আরো গভীর ভাবে জরিয়ে নিলো! এতো শান্তি এর আগে কখনো উপলব্ধি করেনি সে!
To be continue…
shuchona zannat,