আসক্ত🔥
জান্নাত
পর্ব : ৩
বিছানায় এক গাদা শপিং ব্যাগ পরে আছে, আর রিমপি-রিমি, তিতলি-নিশু সেগুলো নেড়ে চেড়ে দেখছে! টায়রা সেদিকেই তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে!
কিছুক্ষণ আগেই লাজুক অফিস থেকে ফেরার সময় এগুলো এনেছে!
কিছু লং স্কার্ট, টপ’স, হাটু সমান প্যান্ট, কামিজ, গাউন! এখন থেকে নাকি টায়রাকে এগুলোই পরতে হবে!
বাইরে কামিজ আর গাউন ছাড়া কিছু পরা জাবে না, আর বাসায় টপ’স টিশার্ট পরতে পারবে,এমনটাই বলে গেলো টায়রাকে লাজুক!
– একটা কথা কিন্তু মানতেই হবে ভাইর ড্রেস সেন্স কিন্তু চমৎকার ! দেখ কি সব লেটেস্ট ডিজাইনের ড্রেস এগুলো!
নিশুর মাথায় একটা গাড্ডা মেরে তিতলি বললো,
– গাধী এগুলো ভাইয়ের নিজের ডিজাইন করা, সুন্দর তো হবেই!
– আহহ! [ মাথা ডলতে ডলতে ] বুঝলাম কিন্তু টায়রা বাড়িতে এই গুলো পরলে প্রবলেম কি বুঝলাম না! আমরাও তো পরি, ইভেন আগে ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ড গুলোকে দেখতাম তারা তো আরো ছোট ড্রেস পরে ঘুরে বেরাতো!
নিশুর কথা শুনতেই মুখটা ভার হয়ে এলো টায়রার!
রিমপি লাফিয়ে নিশুর পাশে বিছানায় বসে পরলো,তারপর জিগ্গেস করলো,
– আচ্ছা প্রাই দু বছর থেকে ভাইকে কোনো মেয়ের সাথে রিলেশনে যেতে দেখিনি! আগেতো ভাইয়ের আগে পিছে মেয়েদের অলওয়েজ দেখা যেতো! এখন কি হলো?
– কি জানি কি হয়েছে!
টায়রার কেনো জানি বুকের ভিতর হঠাৎ হু হু করে উঠলো, কান্না কান্না পাচ্ছে এখন তার! অভিমান হচ্ছে খুব লাজুকের উপর, কিন্তু কেনো?
________________
সন্ধ্যা পেরতেই টায়রা ছাদে যাওয়ার জন্য রুম থেকে বেরিয়ে গেলো! এটা তার রোজ কার অব্ভ্যাস, রাত হতেই ছাদে উঠে রাতের আকাশ দেখা! এর মধ্যেই লাজুককে চোখে পরলো!
পুল সাইডে বসে বসে ফাইল চেক করছে! আর ওখানেই ছাদের শিরি!
টায়রা ভেবেই নিজেছে সে আর লাজুক কে ভয় পাবে না, তার কথাও শুনবে না! কেনো ভয় পাবে? সে বাগ না ভাল্লুক যে খেয়ে ফেলবে?
লাজুক কে দেখেও না দেখার মত করে তার পাশ ঘেসে শিরির কাছে যেতেই ডাক পরলো!
– এই পিচ্চি দাড়াও!
লাজুকের দিকে ঘুরে চোখ গুলো ছোট ছোট করে মুখ বেকিয়ে বললো,
– আমি মোটেও পিচ্চি না ওকে, যথেষ্ট বড় হয়েছি! তাই পিচ্চি ডাকবেন না!
– ওউউউ! রিয়েলি? কই দেখি কোথা থেকে বড় হয়েছো!
কথাটা বলে টায়রার কাছে এগিয়ে যেতে নিলেই, লাফ দিয়ে দুপা পিছিয়ে গেলো টায়রা!
তা দেখে লাজুক ভ্রূ কুচকে তাকিয়ে বললো,
– কি হলো কাছে এসো, চেক করে দেখি কোথায় বড় হয়েছো!
লাজুকের কথা শুনে চোখ গুলো বড় বড় করে বললো,
– মানে কি? আমি কি কোনো পোশাক যে পরে দেখে নিবেন ঠিক আছে কি না!
পকেটে দু হাত ভোরে দাড়িয়ে বললো,
– আগে এদিকে তো আসো তারপর না হয় দেখো কিভাবে চেক করি!
ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো টায়রা লাজুকের এরুপ কথায়! আড় চোখে লাজুকের মুখের দিকে তাকাতেই দেখলো তার চোখে মুখে দুষ্টুমির ছাপ!
– আ..আপনি আমায় ভয় দেখাবেন না, আমি ম..মোটেও ভয় পাইনা আপনাকে!
– আচ্ছা তাই নাকি?
টায়রা ভয়ে ভয়ে বললো,
– হ..হ্যা পাইনা ভ..ভ..ভয় আপনাকে!
– ওকে লেট সি..
কথাটা বলেই টায়রা দিকে এগোতে লাগলো!
লাজুক কে এগোতে দেখে শুকনো ঢোক গিললো টায়রা! এতক্ষন লাজুকে কে শুনিয়ে এত বড় বড় কথা বললেও, এক মাত্র টায়রা যানে এর মধ্যে কয়বার হার্ট এ্যাটাক হতে গিয়েও হয় নি! এবার নির্ঘাত হার্টফেল করবেও!
তাই আগেই পালাতে হবে এখান থেকে!
হুট করেই টায়রা লাজুককে কিছু বুঝতে না দিয়ে খিচে দৌড় লাগালো! এ মুহূর্তের জন্যেও পিছন ফেরেনি, তাহলে হয়তো দেখতো লাজুকের মুখের হাসির ছাপ!
______________
সকালে ঘুম থেকে উঠে কফি নিয়ে ধীরে ধীরে লাজুকের রুমে গেলো টায়রা! কালকের রাতের কাহীনির জন্য না যানি আবার কি করে?
বুক কাপছে ওর!
সাদা কম্বোল মুড়ি দিয়ে উবুত হয়ে ঘুমাচ্ছে লাজুক!টায়রার স্থীর দৃষ্টি সে দিকেই! চুল গুলো কপালে লেপটে আছে! ফর্সা নাকটা লাল হয়ে আছে!
লোকটার ঘুমানোর স্টাইলটাও এতো সুন্দর যে শুধু তাকিয়েই থাকতে ইচ্ছা করে!
গুটি গুটি পায়ে বিছানার কাছে এগিয়ে গেলো! হালকা আওয়াজে ডাকতে নিলো,
– ভাই…..
সাথে সাথে দু হাতে মুখ চেপে ধরলো! লাজুক কে ভাইয়া বলে ডাকার মত ভুল ও আর দ্বিতীয় বার করবে না! এক বারেই চরম শিক্ষা হয়েছে!
সেদিক কিছু একটা কারনে টায়রা লাজুক কে ডাকতে গিয়ে ভাইয়া বলেছিলো!
আর তা শুনে লাজুক ভারী আওয়াজ করে বললো,
– তোমাকে যেনো আর কখনো আমায় ভাইয়া বলতে না শুনি!
লাজুকের কথা শুনে ঘাবড়ে গিয়ে টায়রা বললো,
– কিন্তু আ….আপনি তো আ..আমার ভাভ..ভাইয়াই হন!
লাজুক রেগে টায়রাকে ধমক দিয়ে চেচিয়ে বললো,
– কাজিন হই তোমার, আপন ভাই নই! এই পৃথিবীতে সবাইকে নিজের বোন ভাবতে পারবো শুধু তুমি ছাড়া!
তোমাকে কখনো নিজের বোন ভাবতে পারবো না, বুঝেছো তুমি? এর পর যেনো এমনটা না হয়!
খুব খারাপ লেগেছিলো লাজুকের কথায়! কেনো তাকে বোন ভাবা যাবে না? সে কি এমন করেছে?
লাজুকের এরুপ আচরনে ভয়ে কুকড়ে গেছিলো টায়রা, সেদিনের সেই ভয়ংকর রুপ আর দেখার ইচ্ছা নেই!
লাজুকের পাশে গিয়ে হালকা আওয়াজে ডাকতে লাগলো!
– এই যে শুনছে? আপনার কফি এনেছি! ঠান্ডা হয়ে যাবে!
লাজুক সেই আগের মতই ঘুম! টায়রা বুকে ফু দিয়ে, কাপা কাপা হাতে লাজুক কে ধাক্কা দিয়ে ডাকতে লাগলো!
– এই যে উঠুন না, কফি এনেছি! আপনিই তো বললেন এখন যাতে ডেকে দেই! এখন ঘুমাচ্ছেন কেনো?
ঘুম ঘুম কন্ঠে জবাব দিলো,
– ডোন্ট ডিস্টার্ব মি টায়রা, যাও এখান থেকে! আমি উঠলে তোমার কপালে দুঃখ্য আছে!
টায়রা ভয় পেয়ে হাত সরিয়ে দু পা পিছিয়ে গেলো!
লাজুক এখন এই কথা বলছে,কিন্তু যখন ঘুম ভাঙ্গবে তখন আবার সেই টায়রাকেই বোকবে!
কিছু একটা ভেবে ওয়াশ রুমে গিয়ে আবার ফিরে এলো! তারপর মগের পানি হাতে নিয়ে লাজুকের মুখের উপর ছিটিয়ে দিতেই হুড়মুড় করে উঠে বসলো লাজুক!
– হোয়াট দ্যা হেল আর ইউ ডুইং? হ্যাভ ইউ লস্ট ইওর মাইন্ড?
লাজুকের চেচানি শুনে ভয়ে টায়রা ততক্ষনাক দৌড়ে রুমের বাইরে দারজার কাছে গিয়ে দাড়িয়ে পরলো!
– এদিকে এসো তারা তারি!
টায়রা ভয়ে মাথা নাড়িয়ে না বললো,
– আ..আমি সস…সরি! আপনিই তো উঠছিলেন! আর না উঠালে সেই আবার আমায় বোকতেন!
লাজুক ভারী আওয়াজে বললো,
– আমি এদিকে আসতে বলেছি টায়রা! আর সেটা এক্ষুনি!
টায়রা ঢোক গিলে একটু একটু করে বিছানার কাছে এগিয়ে যেতেই ওর হাতে একটা টাওয়াল দিয়ে বললো,
– পানি গুলো তারাতারি মুছে দেও!
টায়রা হা করে তাকিয়ে রইলো লাজুকের মুখের দিকে! ও মুছে দিবে ?
টায়রাকে ঝাড়ি মেরে বললো,
– কি হলো শুনতে পাও নি কি বলেছি?
– হ্য..হ্যা! দিচ্ছি তো!
অসহায় ভাবে দু পা এগিয়ে লাজুকের সামনে গিয়ে দাড়ালো! কাপছে টায়রা, ভিষন রকমের! কাপা কাপা হাতে টাওয়াল টা নিয়ে লাজুকের মুখের পানি মুছে দিতে নিয়ে দেখলো, ঘোলাটে সবুজ চোখ গুলো স্থির হয়ে আছে টায়রার মুখের দিকে!
তা দেখে কাপার মাত্রা যেনো আরো বেরে গেলো!
আলতো হাতে লাজুকের মুখে স্পর্শ করতেই নিজেই কেপে উঠতে লাগলো!
যেমন তেমন করে মুখের পানি মুছেই সরে এলো লাজুকের থেকে! বুক কাপছে ওর!
আর একবার লাজুকের মুখের দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো!
শ্বাস দ্রুতো ওঠা নামা করছে!
– আ..আমি যায..যাবো..?
টায়রার কথা শুনে কিছুক্ষন চুপ করে রইলো লাজুক!
– হু যাও!
_____________
সে কখন থেকে ফোনের দিকে তাকিয়ে ব্লাশিং হচ্ছে রিমপি! যখন থেকে ফোনে কথা বলে এখানে এসেছে তখন থেকে এটা করে যাচ্ছে!
আর ওর এমন আজব বিহেইভ গুলো অদ্ভুদ দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষন করছে টায়রা সহ বাকিরা!
হঠাৎ রিমপির এমন ব্লাশ হওয়ার কারন খুজে পাচ্ছে না ও !
– ওই ঢংগের মাসি! কি হইছে তোর বলতো?
তিতলির কথাতে যেনো আরো রিমপির গাল দুটো লাল হয়ে ফুলে উঠেছে!
টায়রা এলিয়েনের মত চোখ মুখ করে এগিয়ে গেলো রিমপির কাছে!
– ই..ইউ ওকে না?
টায়রার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে মাথা নাড়ালো!
– বোন আমার কি হয়েছে তোর? তোর হাব ভাব দেখে কিন্তু আমার শুবিধার মনে হচ্ছে না!
রিমির কথায় রিমপি মাথা নিচু করে বলতে লাগলো,
– আমাকে না ও কাল বাইরে যাওয়ার জন্য ডেকেছে!
– ও টা কে ?
টায়রার কথায় যেনো আরো লজ্জা পেলো সে!
– রু…রুহান!
– হোয়াট?
সবার এক সাথে চেচানোতে লাফিয়ে উঠলো রিমপি! অবাক হয়ে সবার দিকে তাকিয়ে,
– কি..কি হয়েছে, এনিথিং রং….
রিমপির কথা শেষ হওয়ার আগেই চার জন চেচিয়ে ঝাপিয়ে পরলো রিমপির গায়ে!
এতোক্ষনে রিমপিও বুঝে গেলো ওদের এমন রিয়াক্ট করার মানে!
রিমপি কে ছেড়ে দিয়ে টায়রা বললো,
– বোন আমার ওকি তোকে প্রপোজ করেছে?
মুচকি হেসে মাথা নাড়ালো,
– হুমম! একটু আগেই বললো, ওনাকি অনেক আগে থেকেই আমাকে লাইক করে! কিন্তু ভয়ে বলতে পারেনি! কাল দেখা করতে চাইছে আমার সাথে!
– সো হোয়াট? দেখা করে নে!
– আরে আমি একা কিভাবে? বাসায় কি বলবো? তোরাও চল না আমার সাথে?
নিশু আর রিমি বললো,
– তোরা তিন জন চলে যা, আমাদের শপিং এ যেতে হবে!
ওদের কথা শুনে টায়রা মুখটা কাচুমাচু করে বললো,
– আমিও যেতে পারবো না, জোমরাজ যদি খবর পায়না, আমাকে কেটে কুচি কুচি করে টেস্টি লবন ছরিয়ে খেয়ে ফেলবে!
– আরে ভাই জানবে না, ও তো অফিসেই চলে যাবে!আর আমরা তো আছিই!
– না না আমি যাবো না! যদি দেখে ফেলে?
– আরে কিছু হবে না!বোন আমার প্লিজ একটু হেল্প কর, দেখ আমার লাভ স্টোরিটা শুরু হওয়ার আগেই যেনো এন্ড না হয়!
মুখ টা করুন করে তাকালো রিমপির দিকে!
– প্লিজ!
– আ..আচ্ছা ঠিক আছে!
টায়রাকে জরিয়ে ধরলো রিমপি!
– থ্যাকইউ বেবি!
বিছানায় শুয়ে ভাবতে লাগলো টায়রা!
রিমপি ওর থেকে এক ক্লাস উপরে, সেও প্রেমে পরেছে, কিন্তু টায়রা এখনো বুঝতে পারে না কোনটা ভালো লাগার অনুভূতি আর কোনটা ভালোবাসার?
তাহলে হয়তো বুঝতে পারতো তার আসক্তিটা কিসের?
আসক্ত🔥
জান্নাত
পর্ব : ৪
বিকেল গরিয়ে প্রাই সন্ধ্যে হতে চলেছে! তিতলি টায়রা আগে আগে হাটছে, আর ঠিক তাদেরই পিছনে রিমপি আর রুহান নিজেদের মত প্রেমালাপ করতে ব্যাস্ত! তা দেখে মজা করছে ওরা দুজন!
– জিজু আমার বোনের সাথেই কি শুধু কথা বলবেন? আমাদের সাথে কি কথা বলা যায় না? আফটার অল আমরাও আপনার শালী!
– হ্যা হ্যা অবশ্যই, শালী মানে তো আধী ঘারওয়ালী!
রুহানের কথায় লজ্জায় লাল হয়ে গেলো রিমপি!
তিতলি আবারও বললো,
– শুধু আধী ঘারওয়ালী বললেই তো আর হবে না! খরচা আছে বুঝেছেন! আমরা কিন্তু চার জন আছি আপনার শালী ! আজ আমরা দুজন এলাম!
তিতলির কথায় সায় দিয়ে টায়রা বললো,
– হ্যা, আগে আমাদের ইম্প্রেস করেন, দেন আমাদের বোনকে পাবেন, নয়তো মুড়ি খান!
কথাটা বলেই হেসে রিমপি কে টেনে নিজের পাশে নিয়ে এলো!
রুহান হেসে উঠে বুকে হাত রেখে মাথা নিচু করে ঝুকিয়ে বললো,
– জো হুকুম মহারানীরা! তো বলেন কি ভাবে আপনাদের খেদমত করে নিজেকে ধন্য করতে পারি?
তিতলিও রাণীদের মত পাট নিয়ে বললো,
– তেমন কিছু না, আপাদত আমাদের কে ফুচকা খাওয়ার ব্যাবস্থা করে দিন!
– ওকে চলুন তাহলে!
ফুচকার দোকানে গিয়ে চারজন চার প্লেট নিলো! টায়রা একটা ফুচকা হাতে নিয়ে রুহানের মুখে তুলে দিয়ে বললো,
– নিন জিজু, শালীকাদের হাতের প্রথম খাবার!
রুহান মুচকি হেসে খেয়ে নিলো, তারপর তিতলিও খাইয়ে দিলো রুহানকে!
– এবার আমি খাইয়ে দিবো!
রুহান প্রথমে তিতলিকে খাইয়ে দিয়ে, টায়রাকে খাইয়ে দিতে যেই ফুচকা মুখের কাছে নিলো!
ওমনি ঝড়ের গতিতে কেউ টায়রাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলো!
তারপর ঠাসস করে একটা শব্দ হলো, আর টায়রার বা হাত তার বা গালে!
হতভম্ব সবাই দাড়িয়ে! রিমপি সামনে তাকাতেই আতকে উঠলো ভয়ে! লাজুক রক্ষচোক্ষু নিয়ে তাকিয়ে টায়রার দিকে! চোখ দিয়ে মনে হচ্ছে আগুন বের হবে!
আর বেচারি টায়রা লজ্জায় অপমানে ভয়ে মাথা নিচু করে ফুপিয়ে কেদে যাচ্ছে!
লাজুকের হঠাৎ এমন কাজে সে নিজেও আহতো! কেনো মারলো তাকে? তাও এতো মানুষের সামনে! সবাই কেমন করে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে!
হঠাৎ লাজুকের আওয়াজ শোনা গেলো!
– রিমপি তিতলি গাড়িতে ওঠ!
লাজুকের কথায় মাথা নাড়িয়ে তারাতারি গাড়িতে গিয়ে বসে পরলো!ভয়তো তারাও পেয়েছে! রিতিমত রিমপি কাপছে, যদি টায়রার মত ওকেও এমন ভাবে থাপ্পড় দেয়! লাজুককে বিশ্বাস নেই দিতেও পারে! কথাটা ভাবতেই নিজের গালে হাত বোলাতে লাগলো!
লাজুক টায়রার হাত টেনে ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটে বসি দিয়ে নিজেও গাড়িতে উঠে পরলো!
মাথা নিচু করে আছে টায়রা, ভয়ংকর অভিমান হচ্ছে লাজুকের উপর, কই এর আগেও তো লাজুক তাকে মেরেছে তখন তো এমন খারাপ লাগেনি!
তবে আজ কেনো এতো অভিমান হচ্ছে?
সে যাই হোক না কেনো, আর কথা বলবে না সে লাজুকের সাথে! ঠিক করে ফেলেছে টায়রা!যদি তাকে এতোই অপছন্দ তাহলে মৃনাক্ষী গ্রামে রেখে আসলেই পারে! সে তো সেখানেই ভালো ছিলো!
অন্তত লাজুকের এই ভয়ংকর অত্যাচার থেকে মুক্ত ছিলো!
লাজুক কয়েক বার বলার পরেও টায়রা সিট বেল না বেধে মাথা নিচু করে বসে রইলো! তাই সে নিজেই বেল লাগিয়ে দিয়ে ড্রাইভ করতে লাগলো! ড্রাইভ করতে করতে বেশ কয়েক বার টায়রার দিকে দেখেছে কিন্তু সে এক বারও মাথা তোলেনি!
বাসায় ফিরতেই টায়রা সোজা নিজের রুমে ঢুকে গেলো! কেওর সাথে আর কোনো কথাও বললো না! কাদতে কাদতে চোখ মুখের ভয়ংকর অবস্থা হয়েছে!
অনেক বার খাবারের জন্যও ডাকা হয়েছে, কিন্তু লাভ হয় নি!
দরজা খোলার শব্দ হতেই টায়রা চেচিয়ে বলে উঠলো,
– বলেছি না আমি খাবো না! আর কত বার বলতে হবে? এখন কি মাইক নিয়ে সারা বাড়ি ঘুরে ঘুরে বলতে হবে?
কারোর কোনো সারা শব্দ না পেয়ে মাথা তুলে তাকাতেই দেখলো, লাজুক স্থির দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে! লাজুক কে দেখতেই আরো কান্না পাচ্ছে তার ভিষন রকমের! চোখের পানি গুলো টপ টপ করে গাল গরিয়ে পরছে! মাথা নিচু করে হাত পা গুটিয়ে বসে রইলো টায়রা!
লাজুক টায়রার কাছে এসে বিছানায় বসে বড় একটা টেডি বেয়ার টায়রার দিকে এগিয়ে দিলো!
– এটা তোমার জন্য!
টায়রা এক পলক টেডি টাকে দেখে মুখ ফিরিয়ে নিলো!
লাজুক একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে টেডিবেয়ারটা বিছানার পাশে রেখে টায়রার দিকে আর একটু এগিয়ে গেলো!
দু হাতে টায়রার মুখ তুলে আলতো করে চোখের পানি গুলো মুছে দিলো!
ফর্সা গাল লাল হয়ে আছে! হাতের বুরো আঙুল দিয়ে সেই লাল হওয়া স্থানটা ধীরে ধীরে স্পর্শ করতে লাগলো!
কেপে উঠলো টায়রা,ঢোক গিলে চোখ চেপে বন্ধ করে নিলো! বুক ধুকধুক করছে তার! শিরশির করছে পুরো শরীর ! লাজুকের স্পর্শ করা জায়গাটাও কেমন শীতল হয়ে গেছে!
লাজুকের দৃষ্টি টায়রার ফোলা ফোলা চোখের দিকে! নাকটা লাল হয়ে আছে, কান্নার কারনে ঠোট গুলোও কাপছে! যেটা এই মুহূর্তে খুবই ভয়ংকর মনে হচ্ছে লাজুকের কাছে!
গালে হাত বোলাতে বোলাতে শান্ত কন্ঠে বললো,
– আমি তোমাকে বলেছিলাম যেনো কোনো ছেলের সাথে মিশতে না দেখি! আমাকে না বলে কোথাও না যে! কিন্তু তুমি কি করলে? আমার কথা অমান্য করে সেই বাইরে ঘুরতে গেলে! তারউপর আবার একটা ছেলেকে ফুচকা খাইয়ে দিয়েছো, আবার তার থেকে খেতেও যাচ্ছিলে! [ কিছুক্ষণ চুপ থেকে ] ফের আমার কথা অমান্য করলে এমনটা আবার হবে!
কোনো ছেলের আশে পাশে যাতে না দেখি সে যেই হোক না কেনো!
টায়রা একদম চুপ, লাজুকের এরুপ কথার মানে সে খুজে পায়না!
– খেতে এসো সবাই অপেক্ষা করছে!
লাজুকের কথায় কোনো রিয়াক্ট করলো না টায়রা, সে আগের মতই বসে!
লাজুক ভারী আওয়াজ করে বললো,
– আমি কিছু বলছি!
মাথা নিচু করে জবাব দিলো,
– আ..আমি খা…খাব না!
এই মুহূর্তে লাজুকের একটা ধমক দিতে মনে চাইছিলো টায়রাকে, কিন্তু নিজের রাগটাকে গিলে ফেললো!এমনিতেই কেদে গাল মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে!
তাই আর কোনো কথা না বলে, হুট করেই টায়রাকে কোলে নিয়ে হাটা ধরলো!
অবাক হয়ে লাফিয়ে উঠে নেমে যেতে চাইলো টায়রা!
– আ…আরে কি করছেন কি? নামান আমাকে, নামান বলছি! দে..দেখেন সবাই দেখবে! প্লিজ নামিয়ে দিন!
লাজুকের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ছোটা ছুটি করতে লাগলো!
হঠাৎ লাজুকের আওয়াজে থেমে গেলো সে!
– ডোন্ট ফাইট টায়রা! চুপ করে থাকো!
লাজুকের আওয়াজেই থেমে গেলো সে! সোজা নিচে ডাইনিং টেবিলের কাছে নিয়ে গিয়ে চেয়ারে বসিয়ে দিলো লাজুক টায়রাকে! সামনে খাবারের প্লেট এগিয়ে দিয়ে,
– তারা তারি খাও নয়তো অন্য গালটাও লাল হয়ে যাবে!
লাজুকের দিকে নাক ফুলিয়ে তাকালো টায়রা! এই মুহূর্তে ভয়ংকর কিছু গালি দিতে মন চাইছে! কিন্তু আফসোস সে পারবে না সেটা করতে! তাহলে লাজুকের বলা কথাটাই সত্যি হয়ে যাবে!
রুমে এসেই প্রথমে বিছানায় টেডিটার দিকে নজর গেলো! বেবি পিংক কালারের বড় একটা টেডি!
গুটি মেরে ঘুমনোর সময় টায়রার হাইট টাও এর মতই হয়ে যায়!
বিছানায় গিয়ে টেডিটা জরিয়ে ধরলো টায়রা!এটা বেশ পছন্দ হয়েছে তার! তখন তো রেগে ছিলো তাই তাকায়নি! কিন্তু মনের মধ্যে ঠিকই আকুপাকু করছিলো এটা ধরার জন্য!
টেডিকে জরিয়ে ধরে শুয়ে পরতেই একটা স্মেইল এলো নাকে! ভালো ভাবে চেক করে দেখলো হ্যাএটা লাজিকের শরীরের গন্ধ! লাজুকের দেওয়া টেডিটা আর তার শরীর থেকেই আসছে স্মেইল টা!
কেমন যেনো ভালো লাগছে টায়রার, বার বার গন্ধটা নিচ্ছে!
কেমন যানি মনে হচ্ছে লাজুক তার পাশেই আছে!
_______________
ড্রইং রুমের সোফায় বসে বার বার হাচ্ছি দিচ্ছে টায়রা, রুমাল দিয়ে নাক মুছতে মুছতে লাল হয়ে গেছে! চোখ গুলোও ফুলে লাল হয়ে আছে!
কালকের কাদার ফল এটা! টায়রা বেশি কাদলেই তার এমন ঠান্ডা লাগে! হাচিঁ হয় শুধু!
টায়রার পাশে বসেই মোর্শেদা তার লাল হয়ে যাওয়া গালে হাত বোলাচ্ছে!
নাতির কাজে খুবই অসন্তুষ্ট সে! কিছুদিনের জন্য মেয়ে বাড়ি গিয়েছিলো!আজ ফিরেছে, এসেই দেখে তার আদরের টায়রার গাল লাল পাচ আঙুলের ছাপ! কেদে ঠান্ডা বাধিয়ে ফেলেছে!
লাজুক শিরি বেয়ে নিচে নামতেই তিনি বললেন,
– ছোটো সাহেব তুমি কিন্তু কাজটা একদম ঠিক করনাই! আমার ছোট্ট পুতুলটার কি অবস্থা করছো দেখছো কি একবার?
মোর্শেদার কথা শুনে আড় চোখে টায়রার দিকে একবার তাকালো লাজুক, তারপর আবার সোফায় বসে পেপারে মনযোগ দিলো!
তা দেখে মোর্শেদা বললেন,
– তোমাকে ফের যাতে না দেখি আমার পুতুলরে কিছু বলতে!
পেপার পরতে পরতে জবাব দিলো,
– তোমার পুতুলকে বলে দিও যাতে সেও আমার কথার অমান্য না হয়!
মোর্শেদা তাকিয়ে রইলো নাতির মুখের দিকে, আর টায়রা অসহায় চোখে তাকিয়ে মোর্শেদার দিকে!
– দিদুন আমি উপরে যাচ্ছি!
– যাও!
টায়রা আড় চোখে একবার লাজুকের দিকে তাকিয়ে শিরি বেয়ে উপরে চলে গেলো!
রিমপির রুমে গিয়ে ঢুকতেই রিমপি কাচুমুচু মুখ করে টায়রাকে বললো,
– আম সরি ইয়ার! আমার কারনে তোকে ভাইয়ের থেকে বকা খেতে হলো! তোর কথাটা শোনা উচিৎ ছিলো আমার!
টায়রা আহাত কন্ঠে বললো,
– তুই কেনো সরি বলছিস? সরি তো আমার বলা উচিৎ , আমার কারনে তোদের কালকের ডেটটা মাটি হয়ে গেলো! রুহান ভাইয়া না জানি কি না কি ভাবলো! ইসস বেচারা!
– আরে তুই রুহানের চিন্তা করিস না! ওকে আমি সব বলেছি, ওতো আরো তোর জন্য টেনশন করছে! তুই ঠিক আছিস কি না তার জন্য!
– তোরা না হয় আবার এক দিন চলে যাস ঘুরতে! বেচারা ঠিক মত তোর সাথে টাইম স্পেন্ডও করতে পারলো না!
টায়রার কথা শুনে লজ্জা পেয়ে হেসে দিলো রিমপি!
তিতলি বললো,
– ভাই নাকি কাল তোকে একটা টেডি বেয়ার গিফ্ট করেছে?
মুহূর্তেই মুখটা গোমরা হয়ে গেলো টায়রার!
– হু জুতো মেরে গরু দান!
হেসে উঠলো ওর কথায় সবাই!
রিমপি সিরিয়াস ফেইস বানিয়ে বললো,
– ইয়ার রুহান না আমাকে একটা কথা বলেছে ভাইয়ের ব্যাপারে! কিন্তু আমার একটুও বিশ্বাস হচ্ছে না! হবেই বা কি করে কোথায় ভাই আর কোথায়….. [ এটুকু বলেই থেমে গেলো ] আমার মনে হয় না এটা পসিবল!
রিমপির কথা শুনে অবাক হয়ে তাকালো ওর দিকে সবাই! তিতলি আগ্রহি কন্ঠে জিগ্গেস করলো,
– কি ব্যাপারে বলতো! কি বলেছে সে?
রিমপি আড় চোখে টায়রার দিকে তাকালো সেও আগ্রহ ভরা চোখে তাকিয়ে!
– আ…আসলে আমি এটা শিওর না, তাই তো..তোদের পরেই বলবো! ও কি ভেবে কি বলেছে কে জানে!
রিমি বললো,
– তুইও না, বলবি না যখন তো এতটুকু বলার কি দরকার ছিলো? খালি খালি মনের মধ্যে এখন খুত খুত করবে! হু…
টায়রা রিমির কথা শুনে হালকা হেসে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো! গালটা এখনো লাল হয়ে আছে! জোমরাজ কি শুধু শুধু বলে সে! কি জরেই না মেরেছে বাবাহ্! ঐ জিম করা বডি ওয়ালা লোক যদি তার এই তুলোর মত শরীরে আঘাত করে, তাহলে কি আর তা আস্ত থাকে নাকি?
To be continues ….
Shuchona Zannat…..