আসক্ত পর্ব ৭+৮

আসক্ত🔥
জান্নাত
পর্ব : ৭

গাল ফুলিয়ে বসে আছে টায়রা নিজের রুমে! শপিং মল থেকে ফেরার পথে বেশ ঝারি খেতে হয়েছে লাজুকের থেকে! তাও ঐ ছেলেটার জন্য!
টায়রা চুপচাপ সব সহ্য করলেও মনে মনে সেই ছেলেটাকে হাজারও গালি দিয়েছে! তার জন্যই তো আজ এত্তো গুলো বকা খেতে হলো তাকে!

কতক্ষণ গাল ফুলিয়ে বসে থাকার পর উঠে ওয়াশরুমে গেলো ফ্রেশ হতে! সোজা শাওয়ার নিয়েই বেরলো ওয়াশরুম থেকে! ঠান্ডা পানিতে শাওয়ার নেওয়ার ফলে কাপুনি উঠে গেছে তার!
বিছানার দিকে নজর দিতেই দেখলো একটা প্যাকেট! শপিং এর প্যাকেট তো সব ও উঠিয়ে রেখেছে, এটা এলো কই থেকে?

চুল গুলো মুছতে মুছতে বিছানা থেকে প্যাকেট টা নিয়ে খুলে দেখতেই টায়রার মুখ হা হয়ে গেলো!
এটা তো সেই শপিং মলে দেখা কালো লেহেঙ্গা টা! কিন্তু কে আনলো?

ড্রেসটা খুলতেই একটা কাগজ পেলো,কিছু লেখা আছে তাতে!
” পছন্দের কোনো জিনিস কখনো সেক্রিফাইস করতে নেই ”

লেখাটা পরতেই মুখে হাসি ফুটে উঠলো টায়রার! এটা লাজুকের হ্যান্ডরাইটিং! ও যে তখন লেহেঙ্গা টায় মগ্ন ছিলো সেটা তাহলে দেখেছে সে!

ড্রেসটা তুলে বুকের সাথে চেপে জরিয়ে নিলো, কেনো জানা নেই! তবে খুব খুশি খুশি লাগছে! এক অদ্ভুত ভালোলাগা কাজ করছে!

ড্রইং রুম ভর্তি শাড়ি জুইলারিতে! এগুলো ছেলে পক্ষ থেকে পাঠিয়ে দিয়েছে বর্ষার জন্য! আর সেগুলো দেখছে বাকিরা!

গয়না গুলো দেখতে দেখতে টায়রা বললো,
– দিদুন দেখেছে গয়না গুলোর কি সুন্দর ডিজাইন! বর্ষা দি কে দারুন মানাবে!

টায়রার কথায় মুচকি হাসলো মোর্শেদা ! পাশ থেকে তিতলি বললো,
– ঠিক বলেছিস, আমার কিন্তু শাড়ি গুলো বেশ পছন্দ হয়েছে! বিশেষ করে বিয়ের লেহেঙ্গাটা!

– দিদুন আমি কিন্তু হলুদে শাড়ি পরবো,,,আর বিয়েতেও!

টায়রার কথায় মোর্শেদা হেসে জবাব দিলো,
– সেতো ভালো কথা, কিন্তু পুতুল তুমি সামলাতে পারবে তো শাড়ি?

মোর্শেদার কথার পরিপেক্ষে বর্ষা বললো,
– কেনো পারবে না দিদুন? টায়রা কি আর ছোট আছে নাকি! বড় হয়ে গেছে এখন ও! তাই না টায়রা?

টায়রা হেসে উপর নিচে মাথা নাড়ালো!
রিমপি বললো,
– হ্যা তাহলে তো এখন টায়রাকে বিয়ে দেওয়াই যায় তাই না! বর্ষা দি তোমার বিয়ের পর টায়রার বিয়ে দিবো আমরা! ছেলে তো ঠিকই আছে তাই না!

রিমপির কথা শুনে মুচকি হাসলো বর্ষা, বাকি সবাইও হাসতে লাগলো!

টায়রা অবাক হয়ে জিগ্গেস করলো,
– ছেলে ঠিক আছে মানে?

টায়রার কথায় সাজিদা বললো,
– আম্মাজান সেটা পরেই জানতে পারবে! এখন এসব নিয়ে না ভাবলেও চলবে!

বোকার মত টায়রা তাকিয়ে দেখছে সবাইকে! কেমন মিটমিট হাসছে! টায়রার মনে হচ্ছে এমন কোনো কাহিনী আছে যেটা সে বাদে সবাই জানে!
আর সবাই তাকে নিজে মজা করছে!

রিমি বললো,
– টায়রা ভাই নাকি তোকে আজ একটা আই ফোন কিনে দিয়েছে?

– হুমমম!

তিতলি বললো,
– দিতেই পারে, টায়রাকে দিবে না তো কাকে দেবে বল?

তিতলির কথায় মুখ টিপি হাসছে সবাই! এবার সত্যিই টায়রার অসহ্য লাগছে! এরা সবাই এমন কেনো করছে যেনো কোনো কমিডি শো চলছে, আর টায়রা হলো শো এর মুল বিষয়!
বিচ্ছিরি মেজাজ নিয়ে উঠে গেলো ওখান থেকে সে!
সোজা নিজের রুমে!

লাজুক ফাইল দেখতে ব্যাস্ত, আর তার পাশেই ফোনটা কন্টিনিউজলি বেজে যাচ্ছে এক ঘন্টা জাবত!
স্কৃনে সোনিয়া নামটা দেখতেই বিষস্বাদে মেজাজ ভোরে গেলো লাজুকের! প্রচন্ড রকমের বেহায়া মেয়ে সে! এত কিছু বলার পরেও বার বার ফোন করা থামায়নি!
মেজাজ তার সপ্তম আসমানে এখন!

ফোনটা নিয়ে রিসিভ করতেই চেচিয়ে বলে উঠলো,
– প্রবলেম কি তোমার? কখন থেকে ফোন করে যাচ্ছো! তোমাকে একটা কথা বললে বুঝতে পারো না, বার বার ডিসটার্ভ কেনো করছো?

উপাশ থেকে আওয়াজ এলো,
– এমন কেনো করছো লাজুক আমার সাথে? আমি কি এমন করেছি বলো? আই লাভ ইউ লাজুক, প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে নেও তোমার লাইফে!

নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে কয়টা শ্বাস ফেললো!

– প্রচন্ড বেহায়া মেয়ে তুমি! তুমি আমার লাইফে ছিলে কবে যে আবার ফিরিয়ে আনার কথা বলছো?

– লাজুক কি বলছো তুমি এসব, তোমার আর আমার রিলেশন কতটা ডিপ ছিলো সেটা কি তুমি জানো না? তার পরও একথা কি করে বলতে পারো?

– শোনো সোনিয়া তুমি আমার লাইফের প্রথম মেয়ে ছিলে না যে আমার বেড পার্টনার হয়েছো! আমাদের মধ্যে কোনো রিলেশনই ছিলো না, আমার সাথে থেকেছো তুমি নিজের ইচ্ছায়, আর যার পরিবর্তে পর্যাপ্ত টাকা পেয়েছো! তাই বার বার সেই কথা গুলো বলে আমায় ডিস্টার্ভ করা বন্ধ কর!
যা ছিলো তা আরো দুই বছর আগে! আমার লাইফে এখন আর তোমাদের মত কারোর কোনো জায়গা নেই!

কথা গুলো বলেই ফোন কেটে দিলো লাজুক! প্রচন্ড রকমের রাগ হচ্ছে এই মেয়েটার উপর! এত বেহায়া মেয়ে এর আগে কখনো দেখেনি সে!
অসহ্য লাগছে সব এখন! ফাইলটা ছুরে বিছানায় ফেলে দিলো! চেয়ারে চোখ বন্ধ করে গা এলিয়ে দিলো!

– আসবো?

টায়রার আওয়াজ পেতেই চোখ খুললো লাজুক দরজার দিকে তাকাতেই দেখলো হাতে সুপের বাটি হাতে দাড়িয়ে আছে!

– আসো!

ধীর পায়ে এগিয়ে এলো লাজুকের সামনে! স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে লাজুক টায়রার দিকে! মনের অস্থিরতা গুলো ধীরে ধীরে মিইয়ে যাচ্ছে ! এ কোন চাওয়ায় আসক্ত লাজুক, যা ধীরে ধীরে তাকে সম্পূর্ণ ভাবে গ্রাস করে শুষে নিচ্ছে!

– আপনার সুপ!
খাবারটা টেবিলের উপর রেখে, ফের চলে যেতে নিলো টায়রা!

লাজুকের ভারী আওয়াজে থেমে গেলো সে!
– আমি কি যেতে বলেছি?

লাজুকের দিকে ফিরে মাথা নাড়ালো!
– তাহলে যাচ্ছিলে কেনো?

– ঐ এমনিই!

– এদিকে আসো!

লাজুকের কথায় চোখ তুলে তাকালো টায়রা তার দিকে!
– কি বলেছি আমি?

টায়রা এগিয়ে লাজুকের সামনে গিয়ে দাড়ালো! তার বুক ধুকধুক করছে! লাজুকের চাহনি যেনো কেমন অদ্ভুত লাগছে তার!

– সুপটা খাইয়ে দেও!

অবাক টায়রা লাজুকের মুখের দিকে তাকিয়ে, কি বললো সে, ভুল শুনেছে না কি?
– কি..কিছু বললেন?

ফাইল গুলো ফের উল্টে পাল্টে দেখতে দেখতে জবাব দিলো!
– বাটিটা তোলো আর খাইয়ে দেও আমায়! কাজ করছি আমি!

– আ..আমি পারবো না!আ..আপনি নিজে খেয়ে নিন!

ভ্রূ কুচকে টায়রার দিকে তাকালো লাজুক! তারপর ঝারি মেরে বললো,
– আর একবার যদি বলতে হয় তাহলে সারা রাত গার্ডেনে বসিয়ে রাখবো!

– দিদ..দিচ্ছি !
ভয়ে ভয়ে তারাতারি বাটি তুলে লাজুক কে খাইয়ে দিতে লাগলো!

টায়রার হাত কাপছে, সাথে পুরো শরীর ! প্রচন্ড রকম অস্থির অস্থির লাগছে তার!

____________
প্রতি দিনের মত আজও টায়রা কফি নিয়ে গেলো লাজুকের রুমে! টায়রাকে আসতে দেখে পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে গভীর ভাবে দেখে নিলো!

বা হাতে পেট চেপে ধরে আছে, চোখ মুখ খিচে রেখেছে! মুখ দেখেই ওর অসহ্য যন্ত্রনাটা বোঝা যাচ্ছে ! ধীর পায়ে হেটে লাজুকের সামনে এসে দাড়ালো!

টায়রার থেকে কফির মগটা নিয়ে ভ্রূ কুচকে জিগ্গেস করলো,
– কি হয়েছে? তুমি কি অসুস্থ ?

ডানে বামে মাথা নাড়ালো টায়রা!

লাজুক ধমক দিয়ে বললো,
– মিথ্যে বলছো কেনো? দেখেই তো বোঝা যাচ্ছে অসুস্থ! কি হয়েছে, কি সমস্যা?

চুপ করে মাথা নিচু করে রাখলো টায়রা! লাজুকের আর বুঝতে বাকি রইলো না কি হয়েছে!
মগটা রেখে দাড়িয়ে সোজা টায়রাকে কোলে তুলে নিলো! হতবাক টায়রা ভুত দেখার মত চমকে আছে! সেদিকে তোয়াক্কা না করে!
টায়রাকে সোজা তার রুমে নিয়ে বিছানায় আধ শোয়া করে বসিয়ে দিয়ে তখনই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো!

একটু পরে একটা হট ব্যাগ নিয়ে এলো সাথে করে!
টায়রার হাতে একটা পেইন কিলার দিয়ে বললো,
– এটা খেয়ে নেও! ব্যাথা কমে জাবে!

কোনো রকম প্রশ্ন ছাড়াই খেয়ে নিলো টায়রা!

– পেটে ব্যাথা হচ্ছে কাউ কে বলেছিলে?

মাথা নাড়িয়ে না বললো টায়রা!

– ঠাটিয়ে দুটো চড় মারবো বেয়াদপ! [ কেপে উঠলো লাজুকের ধমকে ] বলনি কেনো কাউ কে? খুব বড় হয়ে গেছো তাই না! পাকনামো করা হচ্ছে!

ভয়ে গুটিয়ে টায়রা মাথা নিচু করে আছে! তার আত্মা লাফাচ্ছে লাজুলের ধমকে! এতো কেনো ধমকায় তাকে? কবে না জানি আত্মাটা লাফালাফি বন্ধ করে একে বারে পগার পার হয়ে যায়!

হট ব্যাগটা নিয়ে টায়রার পাশে বসে বললো,
– টিশার্ট টা উপরে তোলো!

চোখ গুলো বেরিয়ে আসার উপক্রম হল টায়রার কি বলছে এসব! টিশার্ট তুলবে মানে?
– কি বলছি শুনতে পাওনি?

– আ..আমি করে নিন..নিচ্ছি! আপনি যায..যান!

লাজুকের ভারী আওয়াজ,
– যা বলছি কর!

ভিতু ফেইস নিয়ে ডানে বামে মাথা নাড়ালো টায়রা! লাজুক বিরক্তি লুক নিয়ে নিজেই টিশার্ট উপরে তোলার জন্য হাত বারাতেই, টায়রা দু হাতে টিশার্ট টেনে ধরলো!

-পি..প্লিজ না, এমনটা করবেন প্লিজ!

তীক্ষন দৃষ্টিতে তাকিয়ে লাজুক টায়রার দিকে! মাথা নিচু করে আছে টায়রা! লাজুকের মুখের দিকে তাকালো না আর সে!
হট ব্যাগটা নিয়ে টায়রার টিশার্টের উপর দিয়েই পেটের নিচে সেক দিতে লাগলো! লজ্জায় গুটিয়ে আছে টায়রা!

ব্যাগটা টায়রার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,
– এটা দিয়ে সেক দেও আমি ডক্টরের সাথে কথা বলে আসছি! আর দুধ পাঠাচ্ছি খেয়ে নেবে, নয়তো থাপ্পড়িয়ে গাল লাল করে দিবো!

ঢোক গিলে মাথা নাড়ালো টায়রা! এই লোকটাকে বুঝতে পারে না সে! যত্নও নিবে কিন্তু তাও ধমকে ধমকে ! এতোটুকু শরীরে এতো অত্যাচার কি সহ্য হয় নাকি!

To be continue…..
Shuchona Zannat….
আসক্ত🔥
জান্নাত
পর্ব : ৮

হুট করেই ঘুমটা ভেঙে গেলো টায়রার! ড্রইং রুমে কি সব চেচামেচি হচ্ছে!
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো ৪:৪৫ বাজে!
বিকেল হয়ে গেছে! তারা তারি বিছানা থেকে নেমে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো!
দোতালার বারান্দার রেলিং এর কাছে এসে নিচে তাকাতেই দেখলো বাড়ি ভর্তি মানুষ!
কিছুটা সময় মাথা কাজ করা বন্ধ হয়ে গেছিলো! কি হচ্ছে এখানে?
হঠাৎ মাথায় আসলো কালতো বর্ষার গায়হলুদ! তার মানে গেস্টরা চলে এসেছে!
আর এরা বাড়ি সাজাতে এসেছে!

ঘর সাজানোর লোক গুলোকে লাজুক বলে দিচ্ছিলো কোথায় কি ভাবে সাজাতে হবে!
এর মধ্যেই হঠাৎ চোখ গেলো দোতলার বারান্দায়!
কয়েক মুহূর্তের জন্য দম বন্ধ হয়ে গেছিলো!
বুকটা কাপছে তার!
সদ্য ওঠা ঘুম জরানো টায়রা! এলো মেলো চুল, ঘুম ঘুম ফেইস! পড়নের জামাকাপড়ের ও হদিস নেই ঠিক মতন! স্লিভ লেস গেঞ্জি সাথে হাটুরও খানিকটা উপরে ওঠা প্যান্ট!
সদ্য ঘুম থেকে ওঠাতে হুস আসেনি তার যে গেঞ্জির এক পাশের বেলট কাধ থেকে নেমে গেছে! অন্য দিকে পেটের কাছে কুচকে উঠে গিয়ে বেশ খানিকটা দেখা যাচ্ছে !
ঘোর লেগে যাচ্ছে লাজুকের! বুকের মধ্যের আওয়াজটা ক্রমশই জোরে জোরে হচ্ছে!
ঢোকের উপর ঢোক গিলছে সে!
কিন্তু টায়রা এই সব ব্যাপার থেকে সম্পূর্ণ অজানা! সে তো তার বড় বড় চোখ গুলো দিয়ে চারদিক দেখতে ব্যাস্ত! আর দু হাতে চুল গুলোকে আরোও অগোছালো করছে!
চোখ নিয়ন্ত্রন করা দায় হয়ে পরেছে এই মুহূর্তে লাজুকের! নিচের দিকে চোখ নামিয়ে জোরে জোরে কিছু শ্বাস ফেললো! তারপর সোজা শিরি বেয়ে উপরে উঠে গেলো!
____________________________
– এখানে এভাবে দাড়িয়ে আছো কেনো?
লাজুকের ধমকে লাফিয়ে উঠলো টায়রা!
লাজুকের মুখের দিকে এক বার তাকিয়ে মাথা নারালো, মানে কিছু না!
– নিজের দিকে একবারও তাকিয়ে দেখেছো কি হাল? দিনকে দিন বড় হচ্ছো নাকি ছোট?
লাজুকের কথায় নিজের দিকে তাকাতেই দেখলো অবস্থা খারাপ! কাপড় চোপড়ের কোনো দিক দিশা নেই! লজ্জায় মনে হচ্ছে দম আটকে গেছে তার!
লাজুক টায়রার দিকে এক পলক তাকিয়ে নজর সরিয়ে গম্ভীর হয়ে বললো,
– রুমে গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ কর! বিয়ের কদিন যেনো এমন ড্রেস পরতে না দেখি!
কোনো রকম মাথা নাড়িয়ে দিলো দৌড় টায়রা! ওর হুশ কোথায় ছিলো? ঘুম থেকে উঠে নিজেকে না দেখেই চলে গেলো ওখানে! সেতো ভালো নিচে যাওয়ার আগেই লাজুক বলে দিলো!
লজ্জায় দম বন্ধ হয়ে আছে টায়রার! এর পরে ও লাজুকের সামনে কি ভাবে যাবে সেটাই ভাবছে!
___________________________
সন্ধ্যা হতেই সারা বাড়ি আলোতে ভরে উঠেছে! বিশেষ করে গার্ডেন সাইডটা আর ছাদটা! মরিচ বাতি গুলো সব জায়গায় ঝুলিয়ে দেওয়া আছে! গাছ গুলোর ডালের সাথেও ঝুলিয়ে দেওয়া বাতি! চারপাশ এতো সুন্দর লাগছে বলে বোঝানো যাবে না! এই সব কিছু মুগ্ধ হয়ে দেখছে টায়রা! পড়নের ঘাগরা টা তুলে হাটা ধরলো বোনেদের কাছে! লাজুকের ভয়েই এই ড্রেস পরা তার! নয় তো দেখা যাবে কখন আবার রেগে আগুন হয়ে গায়ের জামা কাপড় গুলোই টেনে ছিরে ফেলে!
না বাবা না! এমন হলে তো টায়রা আর কারোর সামনেই আসতে পারবে না!
চেয়ার পেতে সবাই গোল হয়ে বসে, আর রিমপি শুধু সাইডে বসে ফোনে কথা বলতে বিজি!
আর বাকিরা বিজি আজ রাতে নিজেরা নিজেরা কি ভাবে মজ-মাস্তি করা যায়, সেই প্লানিংএ!
টায়রাও গিয়ে জয়েন করলো সেই গ্রুপে!
সবার মাঝে তিতলি বলে উঠলো,
– আরে এতো ভাবা ভাবির কি আছে, চল সবাই মিলে আজ গ্রুপ ডান্স প্র্যাকটিস করে নেই! গায় হলুদে তো নাচতে হবে নাকি!
তিতলির কথায় সায় দিয়ে নিশু বললো,
– ঠিক বলেছিস, চল সেটাই করা যাক! আমি গিয়ে রহিম চাচাকে বলছি মিউজিক বক্সটা দিয়ে যেতে!
নিশু উঠে চলে গেলো বক্সের খোজে!

টায়রা রিমপিকে উদ্দেশ্য করে বললো,
– ঐ জুলিয়েট, এবার তো এদিকে আয়! সারাদিন ফোনে প্রেমআলাপ করলে তো হচ্ছে না!
রিমপি রুহানকে বাই বলে এগিয়ে এলো টায়রাদের কাছে!
– তুই কি বুঝবি পেত্নি! আগে প্রেমে পর দেন টের পাবি!
– হ্যা! তোর কপালে তো আবার অতিরিক্ত চাওয়ার তৃষ্ণা আছে! বুঝবি কেমন লাগে!
তিতলির কথা শুনে হাসতে হাসতে একজন আর একজনের উপর গড়াগড়ি! এর মধ্যে নিশুও চলে এলো!
আর টায়রা বোকা মতন বসে, ঠোট উচু করে তাদের দিকে তাকিয়ে!
– মানে কি? ওটা তো গল্প, সেখানে আমার লাইফে তৃষ্ণা কেমনে আসবে?
রিমপি হেসে জবাব দিলো,
– সেটা পরেই টের পাবি!
রিমি ভাবনায় বিভোর হয়ে বসে,
– ইসসস! আমার লাইফে যদি এমন একটা রাগি হ্যান্ডসাম তৃষ থাকতো!
– হ্যা তখন বুঝতি কেমন লাগে! এর জালা শুধু বেলি আর আমাদের টায়রাই টের পায়! ওদের চুপশানো মুখদেখেও এমন কাউকে পাওয়ার আশা রাখিস? কেমনে বোইন কেমনে?
রিমপির কথায় হাসতে হাসতে তিতলি নিশুর চেয়ার থেকে পারেনা শুধু পরে যেতে!
রিমি ওদের দিকে তাকিয়ে মুখটা বাসি বেলুনের মত করে আছে!
ওদের অবস্থা দেখে টায়রা চোখ ছোট ছোট করে বললো,
– বোইন পাপনার টিকিট কি চারটা কাটলে হবে নাকি আরো চারটা এক্সট্রা কাটবো, যদি রাস্তায় তোদের জোরা খুজে পাস!
তখনই রহিম চাচা মিউজিক বক্সটা নিয়ে এলো ওদের কাছে!
তাকে দেখে টায়রা বললো,
– চাচা ঐটা ঐ পাশে রাখেন!
– আচ্ছা!
বক্সা সে পাশে রেখে দিয়ে চলে গেলো!
– বাচ্চারা চল শুরু কর ডান্স!
টায়রার কথায় রিমি বললো,
– টিচার ম্যাম ডান্স তো আপনি শিখাবেন! আমরা কি ভাবে শুরু করবো!
– তোরা গান সিলেক্ট কর আমি বর্ষা দি আর দিদুনকে নিয়ে আসছি!
– আচ্ছা!
টায়রা চলে গেলো বাড়ির ভেতরে তাদের আনতে!
___________________________
মিউজিক বাজছে আর তার সাথে তাল মিলিয়ে নাচছে পাচ বোন!
বর্ষা আর মোর্শেদা পাশেই চেয়ারে বসে দেখছে তাদের!
আর সাথে দর্শক হিসেবে কিছু গেস্টরাও আছে!
মোট মাট একটা জটলা পেকেছে এখানে!
আজ সন্ধ্যায় কোনো আয়োজনের প্লান ছিলো না!
সবাই ভেবেছিলো কাল গায় হলুদেই শুরু হবে নাচ গান!
কিন্তু এই পাচ জনের কারনে আজ থেকেই বিয়ে বিয়ের একটা জমজমাটি ভাব চলে এসেছে!
সময়ের অভাবে সংগিত মেহেন্দি এগুলো আলাদা ভাবে করা হচ্ছে না!
তবে আজকের রাতটা সংগিতের আয়োজন বলেই মনে হচ্ছে!
লোকজনের সমাগম দেখে লাজুকও চলে এলো ওখানে! দেখতে হচ্ছে কি?
টায়রা, তিতলি,নিশু , রিমপি,রিমি সবাই মিলে ডান্স করছে!
আর বাকিরা সবাই হাত তালি দিচ্ছে ওদের দেখে!মুখে হাসি ফুটে উঠলো লাজুকের!
আর তা নজর এরালো না টায়রার! নাচের মাঝেই লাজুকের সাথে চোখা চোখি হতে লাগলো! বিষ্মিত হয়ে টায়রা দেখছে লাজুকের মুখের হাসি!
এই লোক হাসতেও পারে নাকি?
কথাটা নিজের মনে মনেই আউড়ালো!
_________________________
বেশ রাত করে ঘুমের ফলে সকালে উঠতেও বেগ পেতে হয়েছে সবাইকে!
রাতে এতো নাচার ফলে এমনিতেও অনেক এনার্জি লস হয়েছে! যার কারনে একটু বেশিই ঘুমের প্রয়োজন ছিলো!
কিন্তু সকাল ছয়টার মাঝেই উঠতে হয়েছে সবাইকে!
ঘুমে ঢুলুঢুলু টায়রা, কোনো রকম ফ্রেশ হয়ে ঢুলতে ঢুলতে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো!
চোখে যেনো কিছুই দেখছে না কোথায় যাচ্ছে কি করছে সব আওরিয়ে যাচ্ছে!
এক প্রকার ঘুমের মাঝেই মনে হয় হাটছে!
হঠাৎই কারোর সাথে ধারাম করে বারি খেলো টেরপেলো সে!
চোখ মেলে তাকাতেই দেখলো লাজুক ভ্রূ কুচকে টায়রার মুখের দিকে তাকিয়ে!
দু হাতে তার কোমড় জরিয়ে ধরে নিজের সাথে চেপে রেখেছে!
নিশ্বাস আটকে গেলো টায়রার! বুকের মধ্যে ধুকধুক করছে! শরীর হাত পা কাপছে! পেটের মধ্যে মোচড় দিচ্ছে!
লাজুকের এতো কাছে এর আগে কখনো আসে নি সে! আর লাজুকও এমন এক মনে তাকিয়ে টায়রার মুখ পানে!
লাজুক আলতো করে টায়রার কপালের চুল গুলো সরিয়ে কানের পিছনে গুজে দিলো!
কেপে উঠে চোখ বন্ধ করে ফেললো টায়রা!
লাজুকের হাত ছুয়ে দিলো টায়রার কানের কিছুটা নিচে গলার কাছের ছোট্ট তিলটাতে!
মুহূর্তেই দু হাতে খামচে ধরলো লাজুকের কোমড়ের কাছের টিশার্ট!
তা দেখে মুচকি হাসি ফুটে উঠলো লাজুকের ঠোটে ! টায়রার বন্ধ চোখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছেড়ে দিলো টায়রাকে!
মাথা নিচু করে দাড়িয়ে টায়রা লাজুকের সামনে! তার পুরো শরীর এখনো কাপছে!
একটু আগের এতো ঘুম কোথায় যে ফুস হয়ে গেলো আল্লাহ মালুম!
এক নিমিশেই সব হজবরল হয়ে গেলো!
হঠাৎ লাজুকের আওয়াজ শোনা গেলো,
– ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে হেটে কোথায় যাওয়া হচ্ছিলো শুনি?
মাথা নিচু করে জবাব দিলো টায়রা,
– নি..নিচে!
দু হাত পকেটে ঢুকিয়ে টায়রার মুখের দিকে তাকিয়ে,
– আচ্ছা! এক বার চারপাশে তাকিয়ে দেখো তো কোথায় এসেছো তুমি!
লাজুকের কথায় মাথা তুলে ঘাড় ঘুরিয়ে চারপাশে তাকিয়ে দেখে সে অবাক! লাজুকের রুমে কখন চলে এলো?
– আ..আমি এখানে কিভাবে এলাম?
– তোমার যে ঘুমের মধ্যে হাটার অভ্যাস আছে আগে যানা ছিলো না তো!
লাজুকের কথায়, তার মুখের দিকে তাকালো টায়রা!
– আমার মোটেও ঘুমের মধ্যে হাটার অভ্যাস নেই!
– তাহলে কি আমার রুমে ইচ্ছে করে এসেছো?
টায়রা চোখ ছোট ছোট করে লাজুকের দিকে তাকাতেই দেখলো তার মুখে বাকা হাসি!
– দে..দেখুন আমি ঘুমের মধ্যে হাটি না! কা..কাল রাতে লেট ঘুম হয়েছে তাই, ঘুমটা কাটছিলো না!
টায়রার গাল ফুলানো দেখে হাসলো লাজুক!
– হুমম! বুঝলাম! এবার ঘুম থেকে উঠে নিচে যাও!
লাজুকের কথায় অদ্ভুত একটা লুক নিয়ে তাকালো টায়রা! এই মুহূর্তে লাজুক কে কিছু কথা শোনা তে মন চাইছে কিন্তু সে তা পারবে না, তাই মনে মনেই গালি দিয়ে গুষ্ঠি উদ্ধার করলো লাজুকের!
___________________________
ব্রেকফাস্ট টেবিলেও সবার একিই অবস্থা! ঝিমুচ্ছে সবাই! টেবিলেই মাথা নুইয়ে রেখে বসে আছে তিতলি নিশু! রিমপি রিমি এক জন আর এক জনের গায়ের উপর এলিয়ে বসে আছে!
আর টায়রা ড্যাবড্যাব করে তাদের কে দেখে যাচ্ছে!
তার ঘুম তো তখন সকালেই পালিয়ে গেছে!
শুধু মাঝে সাজে দু একটা হাই তুলছে!
আর এদের এসব কার্যকলাপ পর্যবেক্ষন করছে বর্ষা! এক রাত জেগেই এদের এই হাল না জানি এই দু দিন কি করবে! মেয়ে গুলো বড্ড ঘুম কাতুরে!
– রেশমি! রেশমি !
বর্ষার আওয়াজ পেতে রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে এলো রেশমি!
– জি আপা বলেন?
– এদের জন্য কড়া করে পাচ মগ কফি দিয়ে যাও!
– জি আমি এক্ষুনি দিচ্ছি !
রেশমি চলে গেলো কফি আনতে!
বর্ষা টায়রাদের উদ্দেশ্য করে বললো,
– কি দরকার ছিলো এমন ভাবে রাত জেগে নাচা নাচি করার?
বর্ষার কথা শুনে তিতলি চোখ মেলে তাকিয়ে বললো,
– কি বলছো দি তুমি? আমাদের ফ্যামিলিতে কত দিন পরে বিয়ে হচ্ছে! আর আমরা মজা করবো না, এটা কখনো হয়?
– এক্সজেকলি, তার উপরে তোমার বিয়ে! কত এক্সসাইটেড আমরা যানো!
– হ্যা দেখতেই তো পাচ্ছি! তোদের এক্সসাইটমেন্টের জন্য এখন ব্রেকফাস্ট টেবিলে ঝিমচ্ছিস! তো বাকি দু দিন কি করবো?
টায়রা হেসে বললো,
– টেনশন নিও না দি তুমি! আমরা ঠিক হয়ে যাবো!
বর্ষা ঠোট উলটে বললো,
– আল্লাহ মালুম কি ঠিক হবি!
এর মধ্যেই রেশমি সবাইকে কফি দিয়ে গেলো!
কফি মুখে দিতেই পাচ জনে বিচ্ছিরি এক্সপ্রেশন দিয়ে তাকালো বর্ষার দিকে!
– ইয়াক..ছিঃ ডিজগাস্টিং! কি তেতো…
টায়রার সাথে তাল মিলিয়ে রিমিও বলে উঠলো,
– দি এটা কি! এমন তেতো কেনো এর সাধ! আমার তো গা গোলাচ্ছে!
বর্ষা মুচকি হেসে জবাব দিলো,
– তেতো তো লাগবেই, তোরা যেমন ধারা ঝিমচ্ছিস ঘুম না কাটলে দেখা যাবে কখন যানি কোথায়, হুমরি খেয়ে পরেছিস!
টায়রা অসহায় মুখ করে তাকিয়ে,
– দি প্লিজ তাই বলে এটা খাইও না!
– আচ্ছা ঠিক আছে খাস না! আমি গিয়ে লাজুক কে বলছি, ও ভালো আইডিয়া বের করতে পারবে তোদের ঘুম তারানোর!
বর্ষার কথা শুনে টায়রা মুখ এমন করলো যেনো এক সপ্তাহের পুরোনো গী কেউ ওর মুখে পুরে দিয়েছে!
– থাক দি! তোমার আর কষ্ট করতে হবে না! এটাই খেয়ে নিচ্ছি!
কথাটা বলে, টায়রা নাক চোখ টিপে ধরে এক শ্বাসে মগ খালি করে দিলো!
আর তা দেখে হাসিতে ফেটে পরলো টেবিলের বাকিরা!

To be continue……..
Shuchona Zannat….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here