আসক্ত🔥
জান্নাত
পর্ব : ৯
শাড়ি সিলেক্ট করছে রিমপি রিমি তিতলি নিশু আর টায়রা! সাথে জুইলারিও! কিছুক্ষণের মধ্যেই বিউটিশিয়ানরা চলে আসবে বর্ষাকে সাজাতে! আর বর্ষার সাথে সাথে তারাও রেডি হবে, তাই সব প্রস্তুতি নিয়ে নিচ্ছে!
এর মধ্যেই রুমে এলো মোর্শেদা!
– পতুল তোমার মা বাবা এসছে!
মোর্শেদার কথা শুনে আর দাড়ালো না টায়রা, এক দৌড়ে নিচে চলে গেলো!
পিছন পিছন গেলো বাকিরাও!
– আব্বু কেমন আছো?
বাবাকে গিয়ে জরিয়ে ধরলো সে! আহান মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,
– হ্যা আম্মু ভালো আছি! তুমি কেমন আছো?
– আমিও ভালো আছি!
বাবাকে ছেড়ে দিয়ে মাকে গিয়ে পেচিয়ে ধরলো!
– কেমন আছিস?
– ভালো আম্মু! টিকলি আসেনি?
– হ্যা আসছে তো! ও বর্ষার কাছে গেছে!
– ওওহ!
পেছন থেকে লাজুকের আওয়াজ পেতেই টায়রা তার মাকে ছেড়ে সোজা হয়ে দাড়ালো!
– আসসালামু আলাইকুম! মামা কেমন আছেন!
লাজুককে দেখে হেসে জবাব দিলো আহান!
– জি ভালো আছি বাবা! তুমি ভালো আছোতো?
– জি! আপনাদের আসতে লেট কেনো হলো, গাড়িতো সকালেই চলে গিয়েছিলো!
– আসলে টিকলি ওর শশুড় বাড়ি থেকে আসতে দেড়ি করেছে তাই!
লাজুক আড় চোখে টায়রার দিকে তাকিয়ে, সে মাথা নিচু করে মায়ের আচুল হাতে পেচাতে ব্যাস্ত!
– মামা আপনারা রুমে গিয়ে রেস্ট নিন!সন্ধ্যার পর গায়ে হলুদের আয়োজন শুরু হবে!
– আচ্ছা!
টায়রা আড় চোখে লাজুকের দিকে তাকাতেই দেখলো সে তার হাতের দিকে তাকিয়ে আছে! তাই তারা তারি হাত সরিয়ে নিলো মায়ের আচল থেকে!
_________________________
বিকেল হতেই সাজের ধুম পরে গেলো সবার! বিশেষ করে বাড়ির পিচ্চি পাচজন সদস্যর! তারা ডিসাইড করেছে বর্ষার সাথে সাথে তারাও হলুদ শাড়ি পরবে! আর বর্ষার মতই ফুল দিয়ে সাজবে!
দুজন বিউটিশিয়ানরা বর্ষাকে সাজাতে ব্যাস্ত! আর তার পাশেই তিনজন টায়রা,তিতলি,নিশু,রিমপি আর রিমি কে সাজাচ্ছে!
হলুদ সিল্কের শাড়ি পরেছে তারা, তবে বর্ষার মত গ্রামের বউদের স্টাইলে না! কুচি দিয়ে পরেছে!
সাথে ফুলের গয়না! বেশ লাগছে পাচ জনকেই!
বাড়ি থেকে বেরিয়ে গার্ডেনের সাইডে গেলো তারা, যেখানে বর্ষার হলুদের আয়োজন হচ্ছে!
টায়রাকে দেখে সাজিদা মুচকি হেসে এগিয়ে এলো তার কাছে!
– বাহ্ আমার আম্মুটা তো দেখছি আজ হঠাৎ করেই একে বারে বড় হয়েগেছে! শাড়ি পরলে যে এতো বড় লাগবে আগে জানলে তো কবে থেকে শাড়ি পরতে বলতাম!
লজ্জা পেয়ে হেসে দিলো টায়রা!
মোর্শেদা এসে টায়রার কপালে চুমু খেয়ে বললো,
– মাশাল্লাহ্! নতুন বউ বউ লাগছে!
পাশ থেকে তিতলি বললো,
– নানি তাহলে এক কাজ করো, বর্ষা দি-র বিয়ের সাথে সাথে টায়রার বিয়ে টাও দিয়ে দেও! বেচারা আর কত অপেক্ষা করবে!
তিতলির কথা শুনে হেসে উঠলো রিমপি, নিশু, রিমি সাথে সাজিদাও!
মোর্শেদা হালকা ধমক দিয়ে বললো,
– বাজে কথা বন্ধ করবি তুই?
– বেচারা টা কে তিতলি?
টায়রার প্রশ্নে সবাই মুখ টিপে হাসতে লাগলো! নিশু হাসতে হাসতে বললো,
– আরে বেচারা না বেচারি বলতে চেয়েছিলো! ও বুঝিয়ে বলতে পারেনি!
সবার দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে রইলো টায়রা! ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না এদের কথা!
একটু পরেই টিকলি বর্ষাকে নিয়ে আসতে লাগলো! তা দেখে দৌড়ে তাদের কাছে গেলো সবাই!
টায়রা বর্ষার ডান পাশে গিয়ে দাড়াতেই বর্ষা মুচকি হেসে টায়রার হাত ধরে হাটতে লাগলো!
লাজুক তার ছোট চাচার সাথে কথা বলা শেষ করে পাশ ফিরতেই নজর আটকে গেলো তার!
হলুদ শাড়িতে জেনো আজ হঠাৎ করেই পিচ্চি থেকে পুরো পুরি একজন যুবতি মেয়ে হয়ে গেছে টায়রা!এই টায়রাকে দেখার জন্যই তো এতো অপেক্ষা তার! বুক টা জোরে জোরে ধকধক করতে লাগলো লাজুকের!
ঠোটের কোনে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো!
অবশেষে তাহলে তার পিচ্চি বড় হয়ে গেছে!
বাকিদের সাথে কথা বলতে বলতে টায়রার নজর চলে গেলো লাজুকের দিকে! যে আপাদত তাকে খুটিয়ে খুটিয়ে নিখুত ভাবে পর্যবেক্ষন করছে!
চোখাচোখি হতেই চোখ নামিয়ে নিলো টায়রা!
কিন্তু তাও কেনো জানি চোখ যাচ্ছে তার দিকেই!
_____________________________
গায় হলুদের তত্য নিয়ে বর্ষার শশুড় বাড়ি থেকে অনেকেই এসছে আজ! তাদের মধ্যে আছে কিছু ছেলেও!
তাদের ভিতরেই একজন টায়রাকে বার বার ফলো করছে, যেটা বুঝতে বাকি রইলো না টায়রার!
বর্ষাকে হলুদ লাগানো শেষ! এখন আবার মেহেদি লাগাবে! তাই তাকে ভেতরে নেওয়া হয়েছে হলুদ তোলার জন্য!
এদিকে টায়রা ঘুরে ফিরে দেখছে চারপাশ! তিতলি রিমি ওরাও যে যার মত ঘুরে বেরাচ্ছে!
যেই ছেলেটা এতক্ষন তাকে ফলো করছিলো, এবার সে টায়রার পাশে এসে দাড়ালো!
টায়রা ভ্রূ কুচকে তার দিকে তাকাতেই ছেলেটা বললো,
– হাই! আমি সাফি! আপনি?
টায়রা আড় চোখে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে জবাব দিলো,
– টায়রা!
– ওয়াও! আপনার নাম টা তো খুব কিউট!
কিছু বললো না টায়রা চুপ করে রইলো! ছেলেটা আবার বললো,
– আপনার বয়ফ্রেন্ড আছে?
ছেলেটার কথা শুনে টায়রা ভ্রূ কুচকে তাকালো তার দিকে!
– এক্সকিউজ মি! আমি আপনাকে কেনো বলতে যাবো তা!
ছেলেটা মুচকি হেসে মিনমিনে গলায় বললো,
– আরে আপনি রেগে যাচ্ছেন কেনো? এমন একটা কিউট মেয়ে তার বয়ফ্রেন্ড থাকবে স্বাভাবিক তাই না? তাই জিগ্গেস করলাম!
টায়রা বিরক্তি লুক নিয়ে একবার তার দিকে তাকিয়ে আবার সামনে তাকাতেই ঢোক গিললো!
লাজুক রক্ষচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে তার দিকে! মনে হচ্ছে যেনো পারলে কাচা চিবিয়ে খায়!
অসহায় চোখে তাকিয়ে টায়রা! আর পাশের ছেলেটাতো আঠার মত লেগে আছে!
টায়রা লাজুকের দিকে তাকাতে পারছে না ভয়ে! জোমরাজ খেপেছে, আজ তার কপালে দুঃখ্য আছে!
মনে মনে একটা কথাই বলতে লাগলো “ইয়া আল্লাহ এই বারের মত বাচাও”
এই সব কাহিনী গুলো চোখে পরলো রিমপি রিমিদের! তিতলি আড় চোখে একবার লাজুকের দিকে আবার একবার টায়রার দিকে তাকাচ্ছে!আবার লাজুকের মুঠোয় চেপে রাখা বোতলটার দিকে তাকাচ্ছে!
যার অবস্থা খুবই শোচনিও! লাজুকের সব রাগ বেচারা বোতলটার উপরে ঝারছে!
টায়রার সাথে তাদের চোখাচোখি হতেই, টায়রা অসহায় মুখ করে ইশারায় তাকে বাচাতে বললো!
রিমপি তিতলি ওরা শুরশুর করে এগিয়ে গেলো টায়রার পাশে!
ওদের কে দেখতেই সস্থির নিশ্বাস ছাড়লো টায়রা!
তিতলি একবার ছেলেটার দিকে তাকিয়ে তারপর আবার টায়রার দিকে তাকালো!
– টায়রা মামি তোকে ডাকছে যাতো তারাতারি!
– হ্যা এই তো যাচ্ছি!
টায়রা চোখের ইশারায় ওদের থ্যাংকস বলে ওখান থেকে পালালো!
রিমপি গলা ঝেরে নিয়ে ছেলেটার দিকে তাকালো!
– কি মিস্টার লাইন মারা হচ্ছে বুঝি?
রিমপির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো ছেলেটা!
পাশ থেকে নিশু বললো,
– আপনি কাকে লাইন মারছেন যানেন?
ছেলেটা অবাক চোখে প্রশ্ন করলো,
– কাকে?
হাতের ইশারায় লাজুককে দেখিয়ে দিয়ে!
– ঐ যে লম্বা চওড়া হীরো মতন দেখতে ছেলেটাকে দেখতে পাচ্ছেন! টায়রা হলো ওনার বউ, আর আমাদের ভাবি!
ছেলেটা অবাক হয়ে লাজুককে দেখতে লাগলো!
– কি বলছেন, ঐ পিচ্চি মেয়েটার বিয়েও হয়ে গেছে! আমার বিশ্বাস হচ্ছে না!
ছেলেটার কথা শুনে তিতলি বললো,
– এই মিস্টার, শুনুন টায়রার থেকে দূরে দূরে থাকবেন! নয়তো ঐ যে হীরো দাড়িয়ে আছে সে তার হীরোইন কে জালাতন করতে দেখলে , আপনার অবস্থা হবে তার হতের মুচড়ানো চ্যাপটা বোতলের মত!
তিতলির কথা শুনে লাজুকের হাতের দিকে তাকিয়ে ঢোক গিললো ছেলেটা! লাজুকের চেহারার দিকে তাকাতেই দেখলো যেনো ফুসছে সে!
রিমি আবার বললো,
– তারা তারি গিয়ে তাকে সরি বলুন! আপনি যে তার মিসেস কে বিরক্ত করছিলেন তা কিন্তু সে সব দেখেছে!
ছেলেটা কতক্ষণ সেখানে থম মেরে দাড়িয়ে থেকে চলে গেলো! আর তার পরেই কিটকিটিয়ে হেসে উঠলো চারজন!
লাজুক চুপচাপ একটা চেয়ারে বসে ফোন টিপছে আর আড় চোখে দেখছে টায়রা কে!
এমন সময় তখনকার সেই ছেলেটা এসে লাজুকের সামনে দাড়ালো!
– আম সরি স্যার আমি বুঝতে পারিনি উনি আপনার ওয়াইফ! যানলে কখনো ওনাকে ডিসটার্ব করতাম না!
লাজুক ভ্রূ কুচকে তাকিয়ে ছেলেটার দিকে!
– আপনি কার কথা বলছেন?
ছেলেটা হাতের ইশারা করে টায়রাকে দেখিয়ে বললো,
– ঐ যে দাড়িয়ে আছে হলুদ শাড়ি পরে! টায়রা যার নাম!
– আপনাকে কে বলেছে, ও আমার বউ?
রিমপি নিশু ওরা ঠিক লাজুকের থেকে কিছুটা সামনেই ছিলো!
ছেলেটা ওদের কে দেখিয়ে বললো,
– ঐ তো আপনার ছোট বোনেরা!
লাজুক তিতলিদের দিকে তাকাতেই, তারা দুষ্টো হেসে চোখ মারলো লাজুক কে! প্রথমে কপালে চিন্তার রেখা উঠলেও তার পরমুহূর্তেই মুচকি হাসলো সে!
ওদের থেকে চোখ সরিয়ে ছেলেটাকে বললো,
– হুমম! আপনি যান!
– থ্যাংক ইউ স্যার!
ছেলেটা চলে যেতেই, লাজুকের চোখের ইশারায় তিতলি রিমি, রিমপি নিশু শুরশুর করে ওর সামনে এসে দাড়ালো!
– ছেলেটাকে কি বলেছো?
– বলেছি টায়রা তোমার বউ!
– আচ্ছা তো বিয়ে কবে হলো?
লাজুকের প্রশ্নে রিমি হেসে বললো,
– হয়নি বাট খুব তারাতারিই হয়ে যাবে! তাই না ভাই?
মুচকি হাসলো লাজুক! পকেট থেকে মানি ব্যাগ টা বের করে ২০০০০ হাজার টাকা ধরিয়ে দিলো চারজন কে!
– এটা শপিং খরচ আমার তরফ থেকে!
খুশি হয়ে চেচিয়ে উঠলো সবাই!
– থ্যাংক ইউ ভাই! এমন শপিং খরচ পাবো জানলে বহুত আগে টায়রাকে তোমার বউ বানিয়ে দিতাম!
হাসলো লাজুক তাদের কথা শুনে!
____________________
দু হাত ভর্তি মেহেদি দিয়ে বসে আছে টায়রা! বসে থাকতে থাকতে এখন বেশ বোর লাগছে! চুল গুলো সেই কখন থেকে চোখে মুখে পরছে! সরাতেও পারছে না! মাথা নাড়িয়ে চাড়িয়ে চুল সরানোর চেষ্টা করেও লাভ হই নি!
বসা থেকে উঠে হাটা ধরলো বাড়ির ভিতরের দিক!
চুল ঠিক করতে গিয়ে আর এক মসিবতে পরলো সে! বেশি নড়া চড়া করতে করতে পেটের কাছ থেকে শাড়ির আচলটাও সরে গেছে!
সেটা ঠিক করতে গিয়ে আলো বেরিয়ে গেছে ! এখন নাভি টাও দেখা যাচ্ছে!
বিরক্তিতায় এখন কাদতে মন চাইছে টায়রার!
শাড়ি ঠিক করতে করতে হঠাৎ কারোর সাথে ধাক্কা লেগে থেমে গেলো! মাথা উচু করে তাকিয়ে দেখে লাজুক ভ্রূ কুচকে তাকিয়ে!
– কি হচ্ছে, তখন থেকে ব্যাঙের মত নাচছো কেনো?
মাথা নিচু করে টায়রা জবাব দিলো,
– কিছু না! এমনিই..
লাজুক টায়রার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে দেখে,
– আমার সাথে এসো!
কথাটা বলে আগে আগে হেটে নিজের রুমে চলে গেলো! বাধ্য টায়রা তাকেও যেতে হলো!
রুমে ঢুকতেই লাজুক এসে টায়রার সামনে দাড়ালো, মাথা তুলে একবার লাজুকের দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো সে!
– সাড়ি পরলে সেইভটি পিন ইউস করতে হয় যানো না?
লাজুকের কথায় কোনো জবাব দিলো না টায়রা চুপ করে রইলো!
লাজুক টায়রার সামনে বসে পেটের দিকে সাড়ির আচল ধরতেই, একপ্রকার লাফিয়ে উঠে সরে যেতে চাইলো টায়রা! কিন্তু তার আগেই লাজুক টায়রার হাত ধরে আটকে দিলো!
কাপছে টায়রা, বুকের ভিতরে মনে হচ্ছে ঢোল বাজছে! নিশ্বাস আটকে যাচ্ছে!
চোখের সামনে টায়রার খোলা কোমড় দেখতেই ঢোক গিললো লাজুক!
চোখ সরিয়ে নিতে চাইলেও বেহায়া চোখ বার বার চলে যাচ্ছে সে দিকেই!
আচল ধরতেই থরথর করে কেপে উঠলো টায়রা!
আচল ঠিক করতে গিয়ে লাজুকরে হাত তার পেটে লাগতেই ভূমিকম্পের মত কাপতে লাগলো সে!
চোখ দুটো শক্ত করে চেপে রেখেছে!
আচলটা ঠিক করে দিয়ে সেইভটি পিন লাগিয়ে দিয়ে উঠে দাড়ালো লাজুক!
মাথা নিচু করে আছে টায়রা! তার সমস্ত শরীর কাপছে!
লাজুকের হাতের স্পর্শ পেতেই চোখ চেপে বন্ধ করে নিলো সে! কপালের চুল গুলো সরিয়ে কানের পিছনে গুজে দিয়েছে লাজুক!
সে একদৃষ্টি তাকিয়ে টায়রার মুখের দিকে! আজ যেনো নিজের উপরে কন্ট্রোল গুলো অদ্ভুত কোনো কারনে বার বার হারিয়ে যাচ্ছে তার!
দু হাতে আলতো করে টায়রার মুখটা তুলে কপালে চুমু খেয়ে নিলো!
হতবাক টায়রা, ফ্রিজ হয়ে আছে! তা বিশ্বাস হচ্ছে না লাজুক তাকে চুমু খেলো!
যে অলোয়েজ ধমকায় সে আজ এটা কেনো করলো?
হঠাৎ লাজুকের আওয়াজ শোনা গেলো,
– রুমে গিয়ে হাত ধুয়ে শাড়ি চেঞ্জ করে নেও!
মাথা নেড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো টায়রা! তার পুরো দুনিয়া ঘুরছে!
এসব কি সত্যি সত্যি ঘটছে তার সাথে, বুঝতে পারছে না!
To be continue…..
Shuchona Zannat….
আসক্ত🔥
জান্নাত
পর্ব : ১০
ভরা চাদের মৃদু আলোয় চারদিকে রুপালী আভায় জরিয়ে গেছে! চাদ টাকে একটুকরো রুপার খন্ড মনে হচ্ছে!
পৃথবীতে চাদের জোছনার মত সৌন্দরয্য বোধহয় আর কোথাও নেই!
জোছনার সাথে সাথে শীতের হার কাপানো বাতাসটাও প্রবল ভাবে কাপনি ধরাচ্ছে টায়রার শরীরে! ভেজা চুল থেকে টপ টপ করে পানি পরে টিশার্টা ভিজে গেছে অনেকটা!
সাথে মুখটা আর গলা-ঘাড় বেয়ে-ও ফোটা পানি পরছে!
অন্ধকারে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে টায়রা! শুনসান নিরবতা চারদিক!
আজ হঠাৎ করে কেনো জানি এই শেষ রাতে জোছনা বিলাস করতে মন চাইলো!
– এতো রাতে এখানে কি?
হঠাৎ পেছনে লাজুকের কন্ঠে ভারী আওয়াজ পেতেই লাফিয়ে উঠে পিছন মুড়ে তাকালো টায়রা! লাজুক হাতে কফির মগ নিয়ে দাড়িয়ে!
‘এই লোকটা যে কেনো এতো কফি খায়?’ ভাবতে লাগলো টায়রা!
চোখের পলক সরিয়ে নিয়ে টায়রা মিনমিনে গলায় জবাব দিলো,
– কিছু না, এমনি এসেছি!
হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখে নিলো লাজুক, তারপর আবার টায়রার দিকে চোখ বুলিয়ে নিয়ে বললো,
– রাত 3:47 বাজে এখন! এতো রাতে শাওয়ার কেনো নিয়েছো?
– রার..রাতে দি-এর গায়ে হলুদের সময় রিমপি ওরা গায়ে হ..হলুদ মাখিয়ে দিয়ে ছিলো! আর পুরোটা সন্ধ্যাই হুড়হুড়ির ম..ম..ধ্যে কেটেছে!
আপনি তো জানেনই আমার এ..এলার্জির প্রবলেম আছে! এমনই তাই শাওয়ার নিয়েছি, নয়তো শশ..শরীর চুলকাতো!
কথা গুলো বলে একপলক লাজুকের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে নিলো সে!
লাজুকের স্থির দৃষ্টি এখন টায়রার মুখে, চুল থেকে গরিয়ে পরা ঠোটের উপর ফোটা ফোটা জমে থাকা পানি গুলোর দিকে!
টায়রার থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে আশেপাশে কিছু একটা খুজতে লাগলো লাজুক! তা দেখে টায়রা প্রশ্ন করলো,
– কি..কিছু কি খুজছেন?
– হুমম! ছাদে যে কাপড় গুলো শুকতে দেয়, সে গুলো কোথায় রাখে?
হাত দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে,
– ঐ যে বড় রুমটাতে!
– আচ্ছা! [ হাতের কফির মগটা টায়রার দিকে এগিয়ে দিয়ে ] এটা খেয়ে নেও, শীতের এতো রাতে শাওয়ার নিয়েছো কোল্ড হতে পারে! আর সারাদিনের ক্লান্তিটাও চলে যাবে!
লাজুকের দিকে তাকিয়ে করুন মুখ করে টায়রা বললো,
– আমি এটা খাবোনা! আপনি অনেক তেতো কফি খান! ইয়াক! আমি খেতে পারবো না!
লাজুক চোখ রাঙিয়ে ধমক দিয়ে বললো,
– আমি খেতে বলেছি! খাবে কি না জিগ্গেস করিনি!
বাধ্য টায়রা, লাজুকের ভয়ে সেই কফিটা হাতে নিয়ে চুমুক দিলো!
আর সাথে সাথে চোখ নাক কুচকে করুন হাল করে নিলো! গাঁ গোলাচ্ছে তার, ‘এতো তেতো কফি কেমনে খায় লাজুক? এর জন্যই বোধহয় তার সব কথাই এমন তেতো তেতো!’ কথা গুলো আপন মনে ভাবতে লাগলো টায়রা!
টায়রাকে কফি খেতে দেখে লাজুক চলে গেলো সেই রুমটার দিকে, একটু পরে হাতে সাদা একটা টাওয়াল নিয়ে ফিরে এলো!
ভ্রূ কুচকে তাকিয়ে টায়রা লাজুকের হাতের টাওয়ালটার দিক! এটা দিয়ে সে কি করবে বুঝছে না টায়রা!
পাশের চেয়ারটা টেনে এনে টায়রার সামনে রেখে, লাজুক বললো,
– এখানে বসো!
চুপচাপ তাই করলো টায়রা! লাজুক টাওয়ালটা নিয়ে টায়রার সামনে দাড়িয়ে তার চুল মুছে দিতে লাগলো!
হতভম্ব টায়রা চুপ করে আছে! এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে তার ছোট্ট হার্ট টা বেরিয়ে যাবে!
আলতো হাতের ছোয়ায় ধীরে ধীরে মুছে দিতে লাগলো লাজুক টায়রার লম্বা চুলো গুলো!
এই মুহূর্তে টায়রা সেই সুপার এ্যাটিটিউড ওয়ালা লোকটা কে খুজে পাচ্ছে না এই লাজুকের মাঝে! লাজুক ওর চুল মুছে দিচ্ছে ভাবা যায় এগুলো!
এতো সব কিছুর মাঝে কোনো এক নতুন অনুভূতি নাড়া দিচ্ছে টায়রার ছোট্ট মন আর শরীরে !
লাজুকের শরীর থেকে এক আমাইক মিষ্টি গন্ধ পাচ্ছে সে!এই গন্ধ আগেও কয়েক বার পেয়েছে!তা খুবই অল্প-সল্প! তবে আজ প্রবল ভাবে পাচ্ছে, যা কোনো এক নেশার আবরনে আচ্ছাদিতো করছে ওকে!
লাজুকের এতো কাছের উপস্থিতিতে, ওর ছোট্ট রূদয়টা ধুকধুক করছে! হাত পা ঝিম ঝিম করছে কেমন!
চুল মোছা হতেই সরে দাড়ালো লাজুক টায়রার থেকে!
মাথা নিচু করে বসে টায়রা,হাতের মগটার দিকে তাকিয়ে!
– কি হলো এভাবে চুপ করে বসে কেনো? কফিটা খেতে বললাম তো!
– খেয়েছি, আর খেতে পারবো না!
টায়রার কথা শুনে চুপচাপ লাজুক ওর হাত থেকে কফিটা নিয়ে নিজে খেতে লাগলো!
বিস্মিত চোখে তাকিয়ে টায়রা! একবার লাজুক-কে দেখছে, আর একবার কফির মগটার দিকে! ওর আধ-খাওয়া কফিটা লাজুক খাচ্ছে!
লাজুকের চোখে চোখ পরতেই অন্য দিকে ফিরে গেলো সে! লাজুকের থেকে মন সরিয়ে চাদ দেখায় মন দিতে চেষ্টা করতে লাগলো!
এমন সময় লাজুকের আওয়াজ,
– এতো রাতে এখানে দাড়িয়ে থাকার দরকার নেই! রুমে যাও!
লাজুকের কথায় ঘাড় নেড়ে ওখান থেকে চলে গেলো টায়রা!
কফিতে আরো এক চুমুক দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো লাজুক!
_____________________
জমজমাটই সাজে সেজে উঠেছে পুরো বাড়ি, বাড়ির প্রতিটা সদস্য মেতে উঠেছে বিয়ের ব্যাস্ততায়! কেউ কাজে-কেউ বা সাজে!
টায়রা বাদে বাকি চারজন মানে রিমপি,রিমি,তিতলি,নিশু তারাও মেতে আছে ব্যাস্তোতায়! বর্ষার শশুর বাড়িতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা!
বর্ষার সাথে আজ তারাও যাবে!
এসব কিছুই দেখে যাচ্ছে এক কোনে বসে টায়রা! মন খারাপ তার! কারন লাজুক সরাসরি বলে দিয়েছে, সে কোথাও যেতে পারবে না! আর লাজুকের কথার অমান্য হওয়ার সাধ্য কই ওর?
তাই বেচারি চুপসানো মুখ নিয়েই বসে আছে!
টায়রার মন খারাপ দেখে চার বোনই এসে ঘীরে বসলো তাকে!
– মন খারাপ করিস না তুই! আমরা ভাইকে বলে দিবো যাতে কাল তোকে নিয়ে চলে যায় আমাদের কাছে! ব্যাস আজ রাত টুকু কাল দিনটা অপেক্ষা কর!
রিমির কথায় মৃদু হাসলো টায়রা!
– আমি ঠিক আছি! চিন্তা করিস না তো!
পাশ থেকে নিশু বললো,
– ভাইকে কত করে বললাম, আমরা তো আছিই প্রবলেম হবে না! কিন্তু তারপরও রাজি হলো না!
“ভয়ে, তার পিচ্চি বউ কে আবার কে না কেউ পটিয়ে নিয়ে যায়” বিড়বিড় করে বললো কথাটা!
নিশুর লাস্ট কথাটা টায়রা না বুঝলেও বাকিদের বুঝতে সমস্যা হলো না! মিটমিটিয়ে হাসতে লাগলো বাকিরা! টায়রাকে অবাক চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে তিতলি বললো,
– এসব কথা বাদ দে, চল রেডি হতে হবে! আর লেট করা যাবে না!
– হু! চল!
বরযাত্রি-রা এসে গেছে অনেক আগে! এখন তাদের খাতির যত্নে ব্যাস্ত সবাই!
নাচ গানও শুরু হয়ে গেছে ইতিমধ্যে! টায়রা,তিতলি,রিমি,রিমপি,নিশু চারজনে মিলে বর্ষাকে নিয়ে এলো স্টেইজের ওখানে! তাকে সিংহাশনে বসিয়ে চারপাশ দিয়ে ঘীরে দাড়ালো পাচজন!
সবার পরনে এক ড্রেস! আর তাদের পাচ জনের ড্রেসের সাথে বর্ষার পরনের লেহেঙ্গারও মিল অনেক!
তাই সহজেই সবার নজর কারছে এই ছয় সুন্দরী! এই ছয় বোনেরই সৌন্দর্যের প্রশংসা করতে বাধ্য যে কোনো মানুষ!
তবে এদের মাঝে টায়রার গায়ের রঙটা অনেকটা বেশিই ফর্সা! যেমনটা দুধে আলতা রঙ হয়!
তাই এতো গয়নার ভিতরে মুখের আদোলটা আরো ফুটিয়ে তুলেছে!
মোর্শেদা এগিয়ে এলো ওদের দিকে!
– বাহ্ ছয় জন হুর পরী একসাথে! মাশাল্লাহ্!
মোর্শেদার কথার পিঠে টায়রা বলে উঠলো,
– দিদুন ছয় পরী নয় বল সাত পরী! পরীরা সব সময় সাত জনই থাকে! তুমি তো হলে আমাদের মহারানী, হুসনে কি রানী ‘মালেকা তুজ জাহুরা’!
টায়রার কথায় মোর্শেদা দুষ্টুমি করে বললো,
– হুসনের কি দেখেছো পুতুল! যখন যুবোতী ছিলাম তোমার দাদা তো দেখেই ভিরমি খেয়ে পরেছিলো সাতদিন! বিয়ের পরতো পাচ বছর পর্যন্ত আমার পিছন ছোটাতে পারিনি!
মোর্শেদার কথায় হেসে উঠলো সবাই!
বর্ষা বললো,
– তাই তো তোমাকে ভিষন ভালোবাসতো দাদা! শুনেছি তোমাকে ছেড়ে দাদা নাকি কোনো দিন একা বাইরে বিজনেস টুরে যায়নি! তোমাকে সঙ্গে নিয়ে হোটেলে উঠতো!
– কেনোই বা বাসবে না! আমাদের সুইট দিদুন এখনও তো সুইট 16 মনে হয়! তখন তো আরো সুইট ছিলো!
রিমপির কথায় হিহি করে হাসতে লাগলো বাকিরা!
_________________
– সবাই এক সাথে কত সুন্দর ডান্স করছে দেখ! তুই আর টায়রাও একটু ডান্স করনা! আমার অনেক দিনের ইচ্ছা আমার বিয়েতে তুই ডান্স করবি!
বর্ষার কথা শুনে চোখ পিটপিট করে তাকালো টায়রা!
হাহ! যে কি না ওকে সহ্যই করতে পারে না! কথায় কথায় ধমকায়, সে কি না ওর সাথে কাপল ডান্স করবে! ইম্পসেবল, কখনো সম্ভব না!
কথা গুলো ভাবতে লাগলো টায়রা! এর মধ্যেই লাজুকের কথা শুনে হাজার ভোল্টেজের শকড খেলো টায়রা!
– তুই আমার কাছে কিছু চাইলি আর আমি দেইনি! এমন টা কখনো হয়নি! আর আজও হবে না!
কথা গুলো টায়রার সামনে গিয়ে ওর দিকে হাত বারিয়ে দিলো!
হতভম্ব টায়রার এবারে চোখ খুলে বেরিয়ে আসার মত দশা!
লাজুক আর ওর সাথে ডান্স…..! লাইক রিয়েলি?
টায়রাকে ভ্যাবলার মত তাকিয়ে থাকতে দেখে নিজেই হাত টেনে নিয়ে গেলো ডান্স ফ্লোরে!
তারপর ডিজে এমন একটা সং প্লে করলো যা শুনে টায়রার এবার হার্ট ফেইল হওয়ার যোগার!
‘এত্তো ইনটেন্স আর রোমান্টিক সং-এ লাজুক টায়রার সাথে ডান্স করবে?’ ভাবতেই টায়রার আত্মা লাফাচ্ছে!
টায়রাকে নিয়ে লাজুক ডান্স শুরু করতেই লজ্জায় টায়রার নাই নাই অবস্থা!
এমন একটা রোমান্টিক সং-এর সাথে তাল মিলিয়ে লাজুক যে ভাবে মুভমেন্ট গুলো করছে, যে টায়রার দম বন্ধ হয়ে আসছে!
কেসে কাহু ইষ্ক মে তেরে কিত্না হু বেতাব মে,
আখোসে আখে মিলাকে চুরালু তেরে খোয়াব মে(2)
মেরে ছায়ে হে সাথ মে,
ইয়ার আজ জিস জাগা তুম হো…!
মে যো জী রাহাহু…..
ওয়াজা তুম হো..
ওয়াজা তুম হো….(2)
হে এ্যা নাশা, ইয়া হে জেহের,
ইস পেয়ার কো হাম কেয়্যা নাম দে! (2)
কাবসে আধুরি হে এক দাসতা,
আজা উসে আজ আনজাম দে!
তুম হে ভুলু কেসে মে…
মেরি পেহলি খাতা তুম হো…. ..
মে যো জী রাহাহু…..
ওয়াজা তুম হো..
ওয়াজা তুম হো….(2)
নাচের মাঝে লাজুকের হাতের স্পর্শ টায়রার পেট কোমড়, হাতে লাগতেই টায়রার অবস্থা খারাপ হয়ে গেছিলো!
এই ছোট শরীরে এক সাথে এতো শকড হজম করতে পারছে না সে!
নাচের ছলে হলেও বেশ কয়েক বার লাজুকের ঠোটের স্পর্শ পেয়েছে টায়রা তার ঘাড়ে!
তখন তো ওর মনে হয়ে ছিলো ও দুনিয়াতে নাই! আউট অফ দ্যা ওয়াল্ড হয়ে গেছে!
হুট করে যে লাজুকের বিহেইভিয়ার এতোটা চেঞ্জ হবে কল্পনাও করতে পারেনি টায়রা!
ডান্স শেষ হতেই আশেপাশে না তাকিয়ে তারাতারি চলে এলো ওখান থেকে টায়রা! বুক কাপছে ওর, সাথে শরীর-ও! মনে হচ্ছে পুরো দুনিয়া ঘুরপাক খাচ্ছে!
চারপাশে হাততালির রোল পরে গেলো! পাশে তাকিয়ে দেখলো বর্ষা সহ ওর বাকি কাজিন গুলো মুখ চেপে হাসছে!
টায়রা অসহায় মুখ করে দাড়িয়ে,
– হায় আল্লাহ কই তুমি?
মনে মনেই বিরবির করতে লাগলো টায়রা! মান-সম্মান সব ধোয়া হয়ে গেছে!
To be continue………