#ইংলিশ_টিচার
পর্ব-৫
সুমনা হক
সবাই খেয়ে চলে গেলো শুধু যায়নি মিলি আর তার শ্বশুর আংকেল,শুভ আড়াল থেকে দেখছে।
মিলি তার শ্বশুর আংকেল কে শ্বশুর আংকেল ধন্যবাদ বলছে আর ঠিক তখন শুভ গিয়ে বললো
“অহ আচ্ছা এসব হয়েছে, আমিও তো বলি কিভাবে মিলি রান্না করলো এই মাছ”
মিলি আর তার শ্বশুর একটা হাসি দিলো।
মিলি অনেকদিন হলো কলেজ যায়নি,
মিলি আজ বেশ কিছুদিন পর কলেজ যাবে আর সে কলেজ যাওয়ার আগে শুভকে রুমে রেখে দরজা লক করে চলে গেছে।
কলেজ এ মিলি আর শুভর বিয়ের কথা সবার জানা হয়ে গেছে এতদিনে কিন্তু তবুও মিলিকে দেখে তারা এমন আগ্রহের দৃষ্টিতে দেখছে মনে হচ্ছে মিলি একটা এলিয়েন।
মিলি এদের এসব পাত্তা না দিয়ে তার ক্লাস রুমে গেলো আর সেখান গিয়ে অবাক হয়ে গেলো এটা দেখে যে তার বান্ধবীরা তাকে এমন ভাবে আদর করে কথা বলছে মনে হচ্ছে মিলিই তাদের পরীক্ষার খাতায় নাম্বার বাড়িয়ে দিবে। মিলিকে তার এক বান্ধবী তাদের কলেজ এর বসন্ত বরণ উৎসব এর কথা বললো,আর তারা মিলিকে বললো এবার তো মিলি নাচতে পারবেনা কারণ এবার তো আর মিলি আর মিলি নেই।
মিলি তাদের কে স্পষ্ট বলে দিলো প্রোগ্রাম এ সে নাচবেই
এক বান্ধবী বললো
-স্যার যদি রাজি না হয়?
-স্যার রাজি হবেনা স্যারের বাবা রাজি হবে।
এরপর মিলি বাসায় গিয়ে দেখে শুভ চোখ লাল লাল করে বসে আছে আর তা দেখে মিলি ভয় পেয়ে যায়।
মিলিকে শুভ বলে
-দরজা লক কেন করলে?
-আসলে আপনি তো জানেন আমি মিথ্যা বলিনা,আসলে আজ অনেকদিন পর ক্লাসে গেলাম, আপনার ক্লাস হয়নি তাই আড্ডা দিতে পারলাম।
-নাচবেন শুনলাম?
-হুম,কেন আপনার আপত্তি আছে?
-আমার কেন আপত্তি থাকবে? ছোটকাল থেকে নেচে আসছো তোমার বাবা ও বলে দিছে তোমার নাচার শখ আছে। বাট গান সিলেকশন ভালো করো। আমার একটা মান সম্মান আছে।
-এসব আপনি টেনশন নিবেন না।
-কি গান দিয়ে নাচবে?
-দিলবার দিলবার হু দিলবার দিলবার।
-মিলি আমার মান সম্মান প্লিজ!
মিলি শুভকে রাগাতে বাসায় ও এই গান দিয়ে রিহার্সাল করতো অনেক।
আজ অনুষ্ঠান আর একটু পর মিলর নাচ, শুভ মিলিকে বকা দিচ্ছে আর নখ কামড়াচ্ছে।
এরিমধ্যে মিলি স্টেজ এ উঠেছে।কি সুন্দর লাগছে মিলিকে, সাদাটে শাড়ী আর খুপা তে বেলিফুল। তারিমধ্যে গান বাজতে শুরু করলো
বাতাসে বহিছে প্রেম
নয়নে লাগিল নেশা
কারা যে ডাকিল পিছে
বসন্ত এসে গেছে
মধুর অমৃত বাণী
বেলা গেল সহজেই
মরমে উঠিল বাজি
বসন্ত এসে গেছে
থাক তব ভুবনের
ধুলি মাখা চরণে মাথা নত করে রব
বসন্ত এসে গেছে বসন্ত এসে গেছে
মিলির নাচ দেখে একবার হলে ও যেকোনো ছেলের তার প্রেমে পড়তে ইচ্ছে হবে কিন্তু শুভর ইচ্ছে হয়েছে কিনা তা জানা নেই।
এরিমধ্যে ক্লাস টেস্ট এ মিলি সব বিষয়ে পাশ করলে ও ইংলিশ এ ফেইল।
এই নিয়ে সবাই হাসাহাসি করতে শুরু করে দিয়েছে।ছাত্রছাত্রী পর্যন্ত মজা করছে। শুভর প্রচণ্ড খারাপ লাগছে।
তাই সেদিন বাসায় এসে বলে সে মিলিকে নিয়ে হানিমুন করতে কক্সবাজার যাবে এই কথা শুনে সবাই জাস্ট হা হয়ে আছে। যারা সারাদিন টম এন্ড জেরির মতো লেগে থাকে তারা যাবে কক্সবাজার! তাও আবার হানিমুন এ??
মিলি তো শুনেই রাজি হয়ে গেছে কারণ সেখানে গিয়ে শুভকে আরো বিরক্ত করতে পারবে।
কিন্তু সবায় এইটা চিন্তা ও করতে পারছিলো না আসলে শুভ কেন কক্সবাজার যাচ্ছে।
মিলিরা চলে আসলো কক্সবাজার। হোটেল এ রুম বুক করা ছিলো আগেই তাই চাবি নিয়ে রুমে গেলো।
মিলি আসার পর থেকেই কখন সমুদ্র দেখবে তা নিয়ে রাগারাগি করছে।
মিলিকে শুভ বলে বিকেল এ যাবে আপাতত চুপ হয়ে থাকতে।
বিকেল হয়ে এলো মিলি আর শুভ সমুদ্র দেখতে গেলো আর তখনি শুভ মিলির হাতে ইংলিশ বই টা ধরিয়ে দিয়ে বলে ফাস্ট পেপার নাকি সেকেন্ড পেপার? কোনটা আগে শুরু করবে???
মিলি তো তখন ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কান্না করে দিবে এমন অবস্থা।
মিলি কান্নাকাটি করলে লাভ হবেনা তাই অযথা পানি অপচয় করবে না।
মিলি শুভ কে বললো
-স্যার আপনি তো জানেন, আমি মিথ্যা বলিনা।আসলে আমার মাথায় এসব থাকেনা। আমি পড়ালেখায় তেমন ভালো না,প্লিজ আমি এসব পারবো না।
-যে মেয়ে কিভাবে একজন মানুষ কে এত্ত জ্বালানো যায় এটা জানে আর সে পড়াশুনা পারবেনা তা কি হয়??
আর তুমি ভালো গল্প ও লিখো,আমি গল্প গুলো পড়েছে। তাই আমার মনে হচ্ছেনা, তুমি পড়াশুনা করলে ফেইল করবে।
-প্লিজ স্যার এমন জোর করে আমার পড়া হয় না।আমার ইচ্ছে না হলে, পড়লে ও সেগুলা মাথায় থাকবেনা।
আর তখন পড়ে ও লাভ হবেনা।আর এখানে তো মনোযোগ ও থাকবেনা পড়াতে।
শুভ মিলির কোনো কথা শুনতে রাজি না। মিলি এখানে একা তাই কিছু বলতে ও পারছেনা।
মিলকে এখানে তারা যতদিন ছিলো ততদিন ১ ঘন্টার জন্য ও বাহিরে যেতে দেয়নি এমন কি বই ও হাত থেকে ছাড়তে দেয়নি।
বেচারি মিলি হয়তো এমন টা স্বপ্নে ও চিন্তা করেনি।
মিলিরা ৭ দিন কক্সবাজার থেকে এসেই টেস্ট পরীক্ষা শুরু হয়ে যায়।
মিলি পরীক্ষা দিচ্ছে কিন্তু রেজাল্ট এর চিন্তায় শুভর ঘুম আসছে না।
শুভ নিজেকে বারবার বলছে “কেন যে সেদিন বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেলাম”!
ইংলিশ খাতা টা মিলির শুভর কাছে এসেছে আর তা দেখে শুভ তার পরিবার এর সবাই কে তার রুমে নিয়ে এসেছে।
চলবে,,,,
©Sumana Haque