#ইট_পাটকেল
#সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_২৩
(১৮+ সতর্কতা)
উত্তরায় বিশাল সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। আশমিন সেখানে চিফ গেস্ট। সিটি করপোরেশনের মেয়র সহ কয়েকজন এমপি ও সেখানে উপস্থিত আছে। আশমিনের গাড়ি বহর ঢুকতেই সাংবাদিকরা হামলে পরলো। সানভি ড্রাইভারের পাশের সিটে মুখ কুচকে বসে আছে। মেয়ে হলে এতক্ষণে সে কেদে ভাসিয়ে দিত। আশমিনের সেদিকে ধ্যান নেই। সে ব্যাস্ত ভঙ্গিতে ফোনে কারোর সাথে কথা বলে যাচ্ছে। বিগত কয়েক মাস যাবৎ ঢাকার বিভিন্ন স্কুল কলেজ থেকে মেয়েরা নিখোজ হচ্ছে। কয়েকজনকে পাওয়া গেলেও বাকিদের খোঁজ এখনো পাওয়া যায়নি। পুলিশ আর গোয়েন্দা বিভাগের সাথে সাথে আশমিন নিজের লোকদের ও লাগিয়ে দিয়েছে।কিন্তু ফলাফল শূন্য। প্রায় পঁচাত্তর জন মেয়ে নিখোঁজ। যেদের পাওয়া গেছে তারা বয়ফ্রেন্ড নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল। বাকিদের এরকম কোন রেকর্ড নেই।আশমিন পুলিশের উপর চাপ সৃষ্টি করে রেখেছে।আজকের সমাবেশ শেষে এই নিয়ে একটা মিটিং আছে।
আশমিনের গাড়ি থামতেই বাহাদুর তার টিম সহ পুরো গাড়ি ঘেরাও করে ফেললো। প্রয়োজনের তুলনায় আজ অনেক বেশি সিকিউরিটি দেয়া হচ্ছে আশমিন কে।রাজনীতি বিদদের উপর এরকম জনসমাগমেই সবচেয়ে বেশি হামলা হয়। নূর নিজের সিকিউরিটি টিম ও পাঠিয়ে দিয়েছে আশমিনের অগোচরে। আশমিনের উপর রাগ টা কমে এসেছে নূরের।আশমিন কানাডা থাকা অবস্থায় আমজাদ চৌধুরী তাকে সবকিছু খুলে বলেছে।কামিনী চৌধুরীর করা কীর্তি আর আশিয়ান অমির ব্যপারে সব জানে নূর।বাকরুদ্ধ হয়ে শুনেছিল সব।তাই আশিয়ান কে দেখে সে অবাক হয় নি। হোটেল রুমের সেই মেয়ের ঘটনার পিছনে লারার হাত আছে।আর তাকে সাহায্য করেছে কামিনী চৌধুরী। উদ্দেশ্য ছিল শুধু নূর কে আশমিনের জীবন থেকে সরানো।এতো টা ঘৃণা কেন করেন কামিনী চৌধুরী তার উত্তর পায়নি নূর। আশমিন কে করা ড্রাগস দেয়া হয়েছিল সেদিন।সানভি সময় মতো না পৌছালে আশমিনের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়ে যেতো সেদিন।সেই মুহুর্তে মাথায় খু*ন চেপে গিয়েছিল নূরের। আমজাদ চৌধুরী থামিয়েছে তাকে।এখনো অনেক কিছু খোলসা হওয়া বাকি।তাই কামিনী চৌধুরী কে নিজের মতো ছেড়ে দিতে হবে।সবকিছু শুনে নিজেকে শান্ত করেছে নূর।মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছে কামিনী চৌধুরীর বুকে প্রথম গু*লিটা সে ই করবে।শুধু সময়ের অপেক্ষা। নূরের আশমিনের উপর রাগটা এখন আর এতটা প্রখর ভাবে নেই।সে নিজেও চায় জীবন টা কে গুছিয়ে নিতে।আশমিন কে টাইট দেয়ার জন্য সারাজীবন পরে আছে।
আশমিন মনোযোগ দিয়ে ফোনে কিছু একটা করছে। সানভি ভয়ে ভয়ে বললো,
— স্যার,,
আশমিন ভ্রু কুচকে তাকালো সানভির দিকে। তারা এখনো গাড়ির ভিতর অবস্থান করছে।ভীড় নিয়ন্ত্রণে আসলে গাড়ি থেকে নামবে।সানভি ইতস্তত করতে করতে বললো,
— আপনার পাঞ্জাবি টা চেঞ্জ করা দরকার।
আশমিন এক ভ্রু উচু করে তাকালো সানভির দিকে। সানভি ফোনে একটা ছবি তুলে আশমিনের দিকে এগিয়ে দিল।আশমিন ছবি দেখে হালকা হাসলো। প্রিয়তমার দেয়া চিহ্ন জ্বলজ্বল করছে তার পাঞ্জাবি তে। ভালবাসার মুহুর্ত গুলো মনে করতেই কটমট করে তাকালো সানভির দিকে। সানভি বেলুনের মতো চুপসে গিয়ে আরেকটা পাঞ্জাবি এগিয়ে দিলো আশমিনের দিকে। গাড়ি তে সব সময় এক সেট কাপড় থাকে আশমিনের।
— তোমার শাস্তি আরো বারানো হলো সান।বিয়ের পর তুমি একা হানিমুনে সুইজারল্যান্ড যাবে। এটা আমার পক্ষ থেকে তোমার বিয়ের গিফট।
সানভি অসহায় চোখে তাকালো আশমিনের দিকে। সামান্য একটা পাঞ্জাবি চেঞ্জ করতে বলার অপরাধে তাকে একা একা সুইজারল্যান্ড হানিমুনে যেতে হবে! সানভি দুঃখী দুঃখী গলায় বলল,,
— বউ খুব রাগ করবে স্যার।
আশমিন সেদিকে পাত্তা দিলো না।পাঞ্জাবি চেঞ্জ করে ফেললো। গায়ের পাঞ্জাবি সানভির হাতে দিয়ে বললো,
— এটা এভাবেই আমার কভার্ডে রেখে দিবে।
সানভি মাথা দুলিয়ে সায় জানালো।বাহাদূর দরজা খুলতেই আশমিন গটগট করে বেড়িয়ে গেলো। সবার সাথে কথা বলে বিশ্রামের জন্য বরাদ্দকৃত রুমে চলে গেলো। মন খুব বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে।কপালে চিন্তার ভাজ পরেছে আশমিনের। আশিয়ানের একটা ব্যবস্থা খুব তারাতাড়ি করতে হবে। হাত পা বাধা না থাকলে এক গু*লিতে কাহিনি খতম করে ফেলতো সে।বিরক্তি তে মুখ তেতো হয়ে গেলো আশমিনের। তার হাত পা বাধা থাকলেও আশিয়ানের নেই।সে যে কোন সময় আক্রমণ করতে পারে।চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে বাকা হাসলো আশমিন। বিরবির করে বললো,
— দুই একবার ছাড় পাবি ছোট ভাই। আমি আবার ভালো সাজার ভং বেশিক্ষন ধরে থাকতে পারবো না। আমি জন্মগত ব্যাড বয়।
~
নূরের মুখোমুখি বসে আছে অমি।মলিন মুখে ইতস্ততার ছাপ স্পষ্ট।
— আমার উপর রেগে আছো অমি?
অমি অবাক চোখে তাকালো নূরের দিকে। তড়িঘড়ি করে বললো,
— না না।কি বলছেন ম্যাম?আমি কেন রাগ করবো আপনার উপর?
— সত্যি টা আমরা দুজনেই জানি অমি।সম্পর্কে আমরা ভাই বোন। তুমি সব আগে থেকেই জানতে।সব সময় বড় ভাইয়ের মতো আগলে রেখেছো আমাকে।কখনো নিজের পরিচয় প্রকাশ করো নি। একবার বোন বলে কাছে ডেকেই দেখতে। নিরাশ করতাম না তোমায়।আমার নিঃসঙ্গ সময়ের একমাত্র সাথী তুমি। ভাইয়া বলে জরিয়ে ধরার অধিকার কি নেই আমার?
অমি নিচের দিকে তাকিয়ে নিজের চোখের পানি লুকাতে ব্যস্ত। ছোট বোন টাকে সে প্রচন্ড ভালবাসে।কিন্তু নিয়তি তাকে হাতে পায়ে বেড়ি পরিয়ে দিয়েছে। চাইলেও সে বুকে আগলে ধরতে পারেনি তার বোনকে।নিজের বাবার লাশের পাশে বসে দু ফোটা চোখের পানি ফেলতে পারার অধিকার ও তার ছিল না। অবৈধদের এতো অধিকার থাকে না। আর পাচটা সাধারণ মানুষের মতো সে বাবার কবরে দু মুঠো মাটি দিয়েছে।
নূর নিজের চেয়ার থেকে উঠে এসে একপাশ থেকে জরিয়ে ধরলো অমি কে।যে নিঃস্বার্থ ভাবে সারাজীবন আগলে রেখেছে তাকে।অমি ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো।শক্ত করে জরিয়ে ধরলো বোন কে।নূরের চোখ থেকেও পানি ঝরছে।দুটো ভাই আছে তার। একজন শামুকের আবরণের মতো আগলে রাখে তাকে।আরেকজন মারার পায়তারা করছে।অমি নূররে মাথায় চুমু খেয়ে ভরাট কন্ঠে বললো,
— আমার বোন তুই।সসম্পর্কের মানদন্ড আমাদের যেমন ই হোক না কেন।তোর ভাই সারাজীবন তোর সাথে আছে। আশিয়ান কে নিয়ে ভাবিস না।সেও নিজের ভূল বুঝতে পারবে একদিন। আমরা দুই ভাই আগলে রাখবো তোকে।আমাদের ম্যাম হয়েই থাকবি তুই।তুই যে খুব আদরের বোন আমার।
নূর শক্ত করে জরিয়ে রইলো তার ভাই কে। তার আপনজন। তার ও ভাই আছে ভাবতেই বুক খুশিতে নেচে উঠলো।
~
আশমিন সব সময় শান্ত থাকতে পছন্দ করে। অতিরিক্ত রেগে গেলেও তার মুখবয় থাকে শান্ত।সেই শান্ত মানুষ টা আজ কোন ভাবেই শান্ত থাকতে পারছে না।অস্থির হয়ে পা নাচিয়ে যাচ্ছে বারবার। পাশের কয়েকজন তার অস্থিরতা দেখে নিজেরাও অস্থির হয়ে উঠছে।বার নার জানতে চাইছে সে ঠিক আছে কি না।সে কিভাবে বোঝাবে তার এখন বউ কোলে নিয়ে বসে থাকতে ইচ্ছে করছে। বিকেল পাচটা বেজে গেছে।লম্বা বক্তৃতা শুনতে শুনতে কান পচে গেলো। এদের মুখেই শুধু বড় বড় কথা।কাজের বেলায় ঠনঠনা ঠন ঘন্টা। নিজের বিরক্তি প্রকাশ করেই ফেললো আশমিন। গম্ভীর গলায় বলল,
— নিজের বক্তব্য ছোট করুন।অপ্রয়োজনীয় কথার দরকার নেই।যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু বলুন।
সবার বক্তব্য শোনার পর আশমিনের কপালে চন্তার ছাপ পরলো। এভাবে চলতে থাকলে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাবে।
— ঢাকা শহরের এমনকি মফস্বলের প্রত্যেকটি স্কুল কলেজের সামনে দুজন করে পুলিশ মোতায়ন করুন।সংবাদ সম্মেলন করে বাবা মা এবং স্কুল কলেজ কর্তৃপক্ষ কে সাবধান করে দিন।স্কুল কলেযে থাকাকালীন শিক্ষকেরা এবং বাইরে থাকাকালীন বাবা মায়েরা যেত তাদের সন্তানের উপর কড়া নজরদারি রাখে। সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। তাদের কেউ সতর্ক থাকতে হবে। যেহেতু স্কুল কলেজ থেকেই বেশি অপহরণ হচ্ছে সেহেতু সেদিকেই বেশি খেয়াল রাখুন।স্টুডেন্ট সাজিয়ে আপনাদের কিছু টিম মেম্বার পাঠিয়ে দিন।হাত ফস্কে যাবে কোথায়? ঠিক এসে জালে আটকা পরবে।নিজেদের দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করবেন। দায়িত্বে অবহেলা করলে কেউ ছাড় পাবেন না।
মিটিং শেষ করে আশমিন বেড়িয়ে গেলো। ঘড়ি তে অলরেডি রাত দশটা বাজে।ক্লান্তিতে শরীর ভেঙ্গে আসছে। গাড়ি তে বসে গা এলিয়ে দিলো আশমিন।
— সোজা বাড়িতে যাবে সান।
সানভি তারাতাড়ি গাড়ি ছাড়ার নির্দেশ দিল।আশমিন কে ক্লান্ত লাগছে খুব।
বাড়িতে প্রবেশ করতেই আমজাদ চৌধুরীর কে গোমড়া মুখে বসে থাকতে দেখে তার দিকে এগিয়ে গেলো আশমিন। ঘড়ির কাঁটা বারোটার ঘরে যেতে পনেরো মিনিট বাকি আছে।
— দুই দুটো বউ থাকতে এতিমের মতো এখানে বসে আছো কেন? আর কি চাই(কপাল কুচকে)?
আমজাদ চৌধুরী আশমিনের কথায় পাত্তা না দিয়ে আগের মতোই বসে রইলেন। আশমিন তার মুখের দিকে তাকিয়ে চোখ বড় বড় করে বললো,
— আস্তাগফিরুল্লাহ! তুমি কি আবার বিয়ে করতে চাইছো? এসব বায়না চলবে না। দুটো পর্যন্ত ঠিক আছে। নিজের বয়স টা ও তো একবার দেখো। এই বয়সে এতো গুলো বউ সামলাতে পারবে না। যাও রুমে যাও।ভালো ছেলেরা জেদ করে না।
আমজাদ চৌধুরী আগুন চোখে তাকালো আশমিনের দিকে। দাত কড়মড় করতে করতে বললো,
— চুপ করো বেয়াদব ছেলে। মুখের লাগাম কি নর্দমায় ফেলে দিয়ে এসেছো? বাবা হই তোমার। সম্মান দিয়ে কথা বলো। বাবার সাথে এসব কি ধরনের কথাবার্তা!
আশমিন অবাক হওয়ার ভান করলো। নাদান গলায় বলল,
— আমি আবার কি বললাম?
আমজাদ চৌধুরী আর কিছু বললো না। কামিনী চৌধুরী কে হাজার অনুরোধ করে ও গলাতে পারেনি সে।কতদিন হলো ঠিক মতো চোখের দেখা টাও দেখতে পায়না। নিজেকে খুব অসহায় লাগছে।গেস্ট রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল সে।এই নির্লজ্জ ছেলের যন্ত্রণায় কোথাও বসেও শান্তি নেই।
বাবার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে তপ্ত শ্বাস ছাড়লো আশমিন।এভাবে কথা না বললে সে সারারাত এখানে বসেই পাড় করে দিতো।
নিজের রুমে ঢুকে মুচকি হাসলো আশমিন। সারা রুমে ফুলের ছড়াছড়ি। বউ তার জন্য অপেক্ষা করছে ভাবতেই মন খুশিতে ভরে উঠলো। তারাতাড়ি ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে।নূর রুমের কোথাও নেই। ফ্রেশ হয়ে এসে সোজা বেলকনিতে চলে গেলো আশমিন। সিদুর লাল শাড়ি তে নূর কে অপ্সরাদের মতো লাগছে।শুকনো ঢোক গিলে দাঁড়িয়ে গেলো আশমিন। কোমোড়ের নিচ পর্যন্ত লম্বা কোকড়ানো চুল গুলো আশমিনের দূর্বলতা। হালকা পায়ে এগিয়ে গিয়ে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলো নূর কে।কেপে উঠলো নূর।
— আমার হাত পা কাপছে বউ। তোমাকে দেখলে আমি হয়তো আজ ম*রেই যাবো। পাগল পাগল লাগছে নিজেকে।
নূর ঘুরে তাকাল আশমিনের দিকে। সত্যিই আশমিনের হাত পা কাপছে। নূরের মুখের দিকে তাকিয়ে কাপাকাপি বন্ধ হয়ে গেলো আশমিনের। চাদের আলোয় নূরের সৌন্দর্য উপচে পরছে। ঘোরে চলে গেলো আশমিন। এক হাতে কোমড় পেচিয়ে ধরে নিজের কাছে নিয়ে এলো নূর কে।নূরের শরীরের হালকা কাপুনি আরো অস্থির করে তুলছে আশমিন কে। বারান্দার দেয়ালের সাথে চেপে ধরেই দুজনের ওষ্ঠ এক করে দিলো সে। আশমিনের বেহায়া হাতের বিচরণ থেকে বাচতে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো নূর। আশমিন আরো শক্ত করে চেপে ধরলো। ঠোঁট ছেড়ে কপালে কপাল ঠেকিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে দুজন। আশমিন নেশালো গলায় বলল,
— আমার তোমাকে চাই নূর।এই মুহুর্তে চাই।আর অপেক্ষা করতে পারছি না।
নূর জরিয়ে ধরলো আশমিন কে।লজ্জায় মুখ গুজে দিলো আশমিনের বুকে।আশমিন শব্দ করে হাসলো।প্রেয়সীর কপালে চুমু খেয়ে কোলে তুলে নিল তাকে।রুমের ভিতর অগ্রসর হতে হতে শয়তানি হেসে বললো,
— আজ তোমাকে কে বাচাবে সুন্দরী?
রাতটা স্বপ্নের মতো সুন্দর মনে হলো নূরের কাছে।আশমিন এতো বছরের ভালবাসা তাকে উজার করে দিয়েছে।প্রতিটি মুহুর্তে তাকে অনুভব করিয়েছে তার ভালবাসার গভীরতা। ভালবাসায় উন্মাদ হলেও তার সুভিধা অসুভিধার দিকে সম্পুর্ন ধ্যান ছিল আশমিনের।
সকালে আশমিনের চিৎকারে ঘুম ভাঙ্গলো নূরের। মাত্র দুই ঘন্টা হয়েছে ঘুমিয়েছে সে। সারা শরীরের সাথে মাথার যন্ত্রণা ও এসে যোগ হলো আশমিনের চিৎকারে।
— এভাবে আমার সর্বনাশ করলে নূর! আমার ইজ্জত লুটে নিতে তোমার লজ্জা করলো না? একজন ভোলা ভালা মন্ত্রীর ইজ্জত হরণ করেছো তুমি।কি সাংঘাতিক!
নূর ঘুম ঘুম চোখে নিজের কপাল চাপড়ালো।সারা রাত নিজেই ওকে ঘুমাতে দেই নি।এখন এসে সকাল সকাল নাটক শুরু করেছে।নূর আবার শুয়ে পরলো।গায়ে কম্বল জড়াতে জরাতে বললো,
— থানায় ফোন দিয়ে বলুন আপনার বউ আপনার ইজ্জত লুটে নিয়েছে। তারা নিশ্চয়ই আপনাকে সাহায্য করবে।
আশমিন পিছন থেকে জরিয়ে ধরলো নূর কে। ঘাড়ে চুমু খেয়ে টেনে বসিয়ে দিল। নূর বিরক্ত চোখে তাকালো আশমিনের দিকে। আশমিন হালকা হেসে একটা একবাটি নুডুলস এগিয়ে দিলো নূরের দিকে। নিজেই চামচ নিয়ে মুখের সামনে ধরলো। নূর কিছু না বলে খেয়ে নিলো। না খেলে আশমিন ছাড়বে না সে খুব ভালো করেই জানে। কয়েক চামচ খেয়ে আর খাবে না জানালে একটা পেইন কিলার খাইয়ে দিল নূর কে। হালকা জ্বর জ্বর ভাব আছে শরীরে।
নূর আবার শুয়ে পরতেই আশমিন ও তাকে জরিয়ে ধরে শুয়ে পরলো।
চোখ বন্ধ করে ভাবলো সানভির একটা খোঁজ নেয়া দরকার। সত্যি সত্যি নর্দমায় নেমে গেছে নাকি দেখতে হবে।
#ইট_পাটকেল
#সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_২৪
সারে দশটায় ঘুম ভাঙ্গলো নূরের।মাথা ব্যথাটা এখন একটু কম।তবে চোখ জ্বালা করছে। বিছানা থেকে উঠে চারিদিকে চোখ বুলালো নূর।আশমিন রুমে নেই।
বাকা হেসে ওয়াশরুমে চলে গেলো। আজ মন্ত্রী সাহেব কে একটু জ্বালানো যাক।
গোসল সেরে একবারে রেডি হয়ে বের হলো নূর।একটু অফিসে যেতে হবে। বজ্জাত মন্ত্রীর একটা খবর নেয়া যাক।ফোন হাতে নিয়ে কল দিতেই আশমিন সাথে সাথে রিসিভ করলো।
— আমাকে মিস করছিলে বউ? একদিনেই বর পাগল হয়ে গেলে! তুমি না,আমাকে একটু বেশিই ভালবাসো।
নূর হতাশার শ্বাস ফেললো। এই লোক এ জীবনে ঠিক হওয়ার নয়।
— কোথায় আপনি?
— আমি একটু বের হয়েছি। কিছুক্ষণ পরেই চলে আসবো। বাসা থেকে বের হওয়ার কথা চিন্তাও করো না বউ।আমার কয়েক দিন খুব প্রেম পাবে। তুমি বাড়িতে না থাকলে প্রেম কার উপর এপ্লাই করবো বলো তো? আব্বুর মতো তো আমার আর দুটো বউ নেই।
নূরের বিরক্তির মাত্রা আকাশ ছুলো।দুম করে ফোন কেটে দিয়ে বেরিয়ে গেল অফিসের উদ্দেশ্যে।আজ একটা বড় ডিল হওয়ার কথা।এখনো হাতে একঘন্টা সময় আছে।
নূর ফোন কেটে দিতেই আশমিন মুখ কুচকে ফেললো। তার এতো রোমান্টিক কথা শুনে ফোন কেটে দিলো! রীতিমতো মানবতা বিরোধী কাজ। তার বউ বড্ড অমানবিক।
নূরের জন্য একজন পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট নিয়োগ দেয়া হবে। অমি আপাতত কয়েকদিন কিছু জরুরি কাজে ব্যস্ত। তাই একজন মেয়ে নিয়োগ দেয়া হবে। আশমিন ইন্টারভিউ নেয়ার দায়িত্ব সানভি কে দিয়েছে।
তারাহুরো করে অফিসে ঢুকতেই এক মেয়ের সাথে ধাক্কা খেয়ে কপাল ধরে দাড়িয়ে গেলো সানভি।মুহুর্তেই ঘটে যাওয়া মেজাজ টা আরো বেশি ঘটে ঘ হয়ে গেলো। সে মোটামুটি ভালোই লম্বা।তার কপালে বারি খেতে হলে অপর পাশের মানুষ টা কেও তার সমান লম্বা হতে হবে।সানভি কপাল ছেড়ে সামনে তাকাতেই দেখলো এক লিলিপুট সাইজের মেয়ে চার ইঞ্চি হিল পরে তার দিকে কটমট করে তাকিয়ে আছে। সানভি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে কর্কশ গলায় বলল,
— জুতা খোলো।
–কিহ?(অবাক হয়ে)
সানভি খ্যাঁক করে বললো,
— কথা কানে যায় নি।বলছি জুতা খোলো।
মেয়েটা ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো। রাগ সাইডে রেখে নিজের জুতা খুলে আশমিনের মুখের সামনে ধরলো। আশমিন রিসিপশন থেকে কাচি নিয়ে সাথে জুতার সব কয়টা বেল্ট কেটে দিলো। মেয়েটা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে সানভির দিকে।
— আর কোনদিন এতো উচু জুতা পরে অফিসে আসবে না।যা সামলাতে পারো না তা পরো কেন?
মেয়েটা রাগে দাত কটমট করতে লাগলো। হাতের জতা গুলো নিচে ফেলে চিৎকার করে বললো,
— বলি বাসায় কি খাবার দাবার কিছু দেয় না।সকাল সকাল চোখের মাথা কেন খেতে হলো আপনার।আমার মতো আস্তো একটা মানুষ আপনার চোখে পরলো না!নিজের চোখ যদি কাজে লাগাতে না পারেন তাহলে এই মুহুর্তে আমাকে খুলে দিন।আমি চক্ষু হাসপাতালে দান করে আসবো।
সানভি হতভম্ব হয়ে গেলো। এই অফিসে কেউ তার সাথে এভাবে কথা বলার সাহস পায় না। এই টুকু মেয়ে তাকে এভাবে ধমকাচ্ছে!
— তোমার সাহস দেখে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি মেয়ে।তুমি জানো তুমি কার সাথে কথা বলছো? এই পেরেন্টস গুলো আজকাল দায়িত্ব জ্ঞানহীন হয়ে গেছে।বাচ্চা কিন্ডারগার্টেন থেকে বেরিয়ে এখানে চলে এসেছে তাদের ধ্যান নেই। (একজন গার্ড কে ডেকে) একে এখুনি যে স্কুল থেকে এসেছে সেখানে নামিয়ে দিয়ে এসো।
মেয়েটা রাগে লাল হয়ে গেলো। দাতে দাত চেপে ওই গার্ড কে বললো,
— হ্যা।সাথে একেও কবরস্থানে ছেড়ে আসুন।কবর থেকে পালিয়ে এসেছে মনে হচ্ছে। আর ভুল করে চোখ দুটো ওখানেই রেখে এসেছে।তাই বুড়ো দাদু একজন অনার্স পাশ করা মেয়ে কে বাচ্চা ভাবছে।
— চুপ করো বেয়াদব মেয়ে।অভদ্রতার ও একটা ভদ্রতা থাকা দরকার। অসভ্যের মতো চিৎকার করছো কেন? এই অফিসে তোমাকে ঢুকতে দিয়েছে কে?এই একে এখুনি এখান থেকে বের করো।
অফিসের সবাই অবাক হয়ে ওদের ঝগড়া দেখছে।চিৎকার চেচামেচি শুনে আশমিন ও বেরিয়ে এসেছে।সানভি কে এভাবে ঝগড়া করতে দেখে সবার মতো সে ও অবাক হয়ে গেছে।
— এখানে কি হচ্ছে সান?
আশমিনের কথা শুনে সানভি চুপ করে গেলো। মেয়েটা কাদো কাদো চেহারা করে বললো,
— আমি ইন্টারভিউর জন্য এসেছি স্যার।এই লোকটার সাথে ধাক্কা খাওয়ায় সে আমার জুতা কেটে দিয়েছে। আবার আমাকে বকাবকি ও করছে।
আশমিন মুচকি হাসলো। শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করলো,
— তোমার নাম কি?
— লুবানা জান্নাত।
— তোমার চাকরি হয়ে গেছে লুবানা।আজ থেকেই জয়েন করবে।ওকে কাজ বুঝিয়ে আরএস কোম্পানি তে পাঠিয়ে দাও।
আশমিন চলে যেতেই সবাই নিজের কাজে মন দিলো। সানভি ভোতা মুখ করে তাকিয়ে আছে লুবানার দিকে।লুবানা বিশ্বজয় করা হাসি দিল। সানভির দিকে তাকিয়ে ভাব নিয়ে বললো,
— চলুন দাদু।এভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে আপনার নাট বল্টুতে জং ধরে যাবে।আমাকে আমার কাজ বুঝিয়ে দিয়ে না হয় কবরে চলে যাবেন।আপনার জন্য বাইরের পরিবেশ উপযোগী না।
সানভি কটমট করে তাকিয়ে হনহন করে চলে গেলো। লুবানা ওর পিছু যেতে যেতে গা জ্বালানি হাসি দিতে লাগলো।
~
আশিয়ানের মুখোমুখি বসে আছে আশমিন। ঢাকার বিলাশবহুল পাচ তারকা হোটেলের সুইট রুমে তাদের সাক্ষাতের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
— কেমন আছেন জায়িন চৌধুরী?
আশমিন হালকা হাসলো।বাকা চোখে একবার আশিয়ানের দিকে তাকিয়ে ব্যঙ্গাত্মক গলায় বলল,
— আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি মাফিয়া সাহেব।আপনার কি খবর? বাংলাদেশ ঘোরা হয়েছে? সুন্দরবন ঘুরে আসতে পারেন।বাংলার বাঘ সম্পর্কে আইডিয়া হয়ে যাবে।তখন আর এই শহরের বাঘের সাথে টক্কর দেয়ার চুলকানি উঠবে না।
আশিয়ান শব্দ করে হেসে উঠলো। আশমিনের দিকে হালকা ঝুকে কৌতুক গলায় বলল,
— এতো ভালবাসা কার জন্য বাঘ সাহেব।নূরের জন্য?বোন কিন্তু আমার আস্তো বাঘিনী। আমি নাহয় কিছু না ই করলাম। আপনার বাঘিনী আপনাকে ছাড়বে তো?
আশমিন অবাক হওয়ার ভান করে বললো,
— ছাড়বে কেন?আমি ই বা ছাড়তে দিবো কেন? আমি তাকে আমার ভালবাসায় বন্দিনী করবো।তার তেজ আমি তে শুরু হয়ে আমি তেই শেষ হয়ে যাবে। বড্ড আদরের বউ আমার। আমি আবার বউ ছাড়া একদম থাকতে পারিনা।
আশিয়ান খুক খুক করে কেশে উঠলো। সম্পর্ক যেমন ই হোক না কেন। বোন তো হয়।তাকে নিয়ে এমন লাগামহীন কথাবার্তা কানে লাগছে। আশমিন আশিয়ানের অস্বস্তি কে পাত্তা না দিয়ে সরাসরি মুল কথায় ঢুকে গেলো।
— তোমার মামী তোমাকে এখানে কি মনে করে আনলো ভাই আমার। কি চাই তোমার?
— আমার পুরো সম্রাজ্য চাই। পুরোটা।
আশমিন বাকা হাসলো।
— সম্রাজ্য তো আমার রানীর। তার রাজা তোমার সামনে বসে। তাকে টপকে নিতে পারলে নিয়ে নাও।
— আর যদি রানী ই না থাকে?(এক ভ্রু উচু করে)
— আমার ফুপ্পির শেষ অংশ তুমি।তোমাকে মারতে আমার খারাপ লাগবে।বিষাক্ত অতীত টেনে এনো না আশিয়ান। আমি ধ্বংস হলে কেউ সুখে থাকবে না। চেনো তো আমাকে?কি করতে পারি নতুন করে বোঝাতে হবে না নিশ্চয়ই?
আশিয়ান আশমিনের শান্ত মুখের দিকে তাকালো। চেহারায় কোন ভয়,অস্থিরতা, চিন্তা, রাগ কোন কিছুরই ছাপ নেই। সে জানে আশমিন ভয়ংকর। যা কেউ জানে না তা আশিয়ান জানে।ভালো মানুষ তো সে ও নয়।
— আপনার সত্যি সামনে এলে আপনার রানী ই যথেষ্ট আপনাকে ধ্বংস করার জন্য।
— নিজেকে নিয়ে ভাবো। একটা মাত্র জীবন তোমার।এটা হারালে কি দিয়ে দেহ চালাবে!
ঠান্ডা মাথায় হুমকি দিয়ে চলে গেলো আশমিন। আশিয়ানের মাথায় চিন্তার ভাজ পরেছে।ভিতরে ভিতরে কিছু একটা হচ্ছে। নূর কে মে*রে ফেলা তার উদ্দেশ্য না।তার উদ্দেশ্য সব কিছু নিজের করে নেয়া।অমির সাথে কথা বলতে চেয়েছে কয়েকবার।ফলাফল শূন্য। তাদের জীবন টা বড্ড অগোছালো। সব থেকেও কেউ নেই। আশমিনের সাথে তার যে সম্পর্ক তা কয়েক জন ছাড়া কেউ জানে না। এমন কি অমি ও না। কামিনী চৌধুরী কে নিরাশ করবে না সে।নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে সে আশমিনের মোকাবেলা করবে। কেউ কাউকে জানে মা*রতে পারবে না সমস্যা টা এখানেই। নাহলে এতো দিনে কেচ্ছা খতম হয়ে যেতো।
আশমিন সরাসরি নূরের অফিসে চলে এসেছে। নূর সকাল থেকে তার ফোন রিসিভ করছে না। এতো আদর ভালবাসা দেয়ার পরেও বউ তাকে পাত্তা দিচ্ছে না! তার মেহনত সব জলে ভেসে গেলো! তাই সে চিন্তা করেছে এখন থেকে বউ কে বেশি বেশি ভালবাসবে।সকাল বিকাল ট্যাবলেট খাওয়ার মতো বউকে আদর করতে হবে।দরকার হলে রাজনীতি ছেড়ে বউয়ের আচল ধরে ঘোরার চাকরি নিয়ে নিবে।বউ কে তার জন্য পাগল করেই ছাড়বে। তবে না প্রেম টা মাখোমাখো হবে।
আশমিন কেবিনে প্রবেশ করতেই নূর ভ্রু কুচকে সেদিকে তাকালো।আশমিন কে দেখে কপাল কুচকে বললো,
— কি চাই?
— বউয়ের এটেনশন।তুমি এমন বেঈমান কিভাবে হলে নূর! সারা রাত ভালোবাসার এই দাম দিলা?এতো আদর ভালবাসার পরে তোমার উচিত ছিল আমার কোলে বসে থাকা।আর তুমি সকাল হতেই সব ভুলে গেলে! মানে,কাজ শেষ খোদা হাফেজ!
নূর শান্ত চোখে তাকিয়ে আশমিনের সমস্ত বাজে কথা হজম করে নিলো।আশমিন থামতেই পুনরায় কাজে মন দিয়ে শান্ত গলায় বললো,
— আপনার ছিঃ মার্কা কথা শেষ হলে বিদায় হন।
আশমিন নূর কে টেনে তুলে নিজের সাথে চেপে ধরলো। কপালে ঠোঁট ছুয়িয়ে শান্ত গলায় বললো,
— ফোন ধরছিলে না কেন?
— বিজি ছিলাম।
নূরের সহজ উত্তর টা সহজ ভাবে নিতে পারলো না আশমিন।তবে নূর কে কিছু বুঝতে দিলো না। কিছুক্ষণ নিজের সাথে জরিয়ে রেখে গালে বুলিয়ে বললো,
— খেয়েছো কিছু? এখন শরীর কেমন লাগছে?
— ভালো লাগছে।খাইনি,খাবো এখন।
— চলো একসাথে খাই।লুবানা নামে একটা মেয়ে আসবে।আজ থেকে ও তোমার পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট। সান সব বুঝিয়ে এখানে নিয়ে আসবে।তোমার সাথে সারাদিন থাকবে।মেয়ে টা এতিম। রাতে নূর মঞ্জিলে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়ো।ছোট একটা ভাই আছে।সেও ওর সাথেই থাকবে।কোন অসুবিধা নেই তো?
— সমস্যা নেই।আমি সব ম্যানেজ করে নিবো।এবার ছাড়ুন। ক্ষুধা পেয়েছে তো।
আশমিন ছাড়লো না। হাতের বাধর আরো শক্ত করে নূর কে নিজের সাথে চেপে ধরলো। ফিসফিস করে বললো,
— ছাড়তে পারবো না।আমার মুড নেই।বউ কি ছেড়ে দেয়ার জিনিস?বউ এভাবে জরিয়ে রাখার জিনিস।চুপ করে থাকো।নাহলে অফিস কে বেড রুম বানাতে আমার সময় লাগবে না।
চলবে,,,
।)