#ইট_পাটকেল
#সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_৩৫
আশমিন আমজাদ চৌধুরীর কাছ থেকে কামিনী চৌধুরী কে সরিয়ে নিজের দিকে টেনে নিলো।বাহাদুর কে ইশারায় কিছু বলে কামিনী চৌধুরী কে কোলে নিয়ে সাথে সাথেই বেরিয়ে গেল রুম থেকে। আমজাদ চৌধুরী আশিয়ান তার পিছু নিতে চাইলে তাদের আটকে দিলো বাহাদুর। সানভি বাবুকে মেয়ে গার্ডের কোলে দিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে গেল আশমিনের পিছু পিছু।আমজাদ চৌধুরী বাহাদুরের দিকে রক্তিম চোখে তাকিয়ে বললো,
— আমার সামনে থেকে সরে যাও বাহাদুর। নাহলে আজ আমার হাতে অনর্থ হয়ে যাবে।কোথায় নিয়ে গেল কামিনী কে? পথ ছাড়ো। আমাকে কামিনীর কাছে যেতে দাও।
বাহাদুর নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নূর এক কোনে চুপ করে বসে আছে। তার ভালো খারাপ কোন অনুভূতি ই হচ্ছে না। আশমিন এতো পাষাণ কি করে হলো। যাই হোক না কেন কামিনী চৌধুরী তার মা! তাকে সে কিভাবে গু*লি করতে পারলো! নূরের মাথা ধরে যাচ্ছে। আশিয়ান বাহাদুর কে সরিয়ে খুব সহজেই বেরিয়ে গেছে।তার কাছে বাহাদুর দুধভাত। নূরের জন্য খারাপ লাগছে তার। বাস্তবতার মুখোমুখি হলে মেয়েটা আবার কি করে বসে কে জানে! এখানে তার ও কিছু ভুমিকা আছে।তা পালন করতেই তাকে ছুটতে হচ্ছে। আমজাদ চৌধুরী হতভম্ব চোখে শুধু সব দেখেই গেলো। তার মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। বাহাদুর অমি কে কিছু বলতেই অমি আমজাদ চৌধুরী নূর আর বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে নূর মঞ্জিলের দিকে রওনা হলো। নূর চুপ হয়ে সব মেনে নিচ্ছে। খেলার শেষ দৃশ্য দেখার অপেক্ষায়। আশমিন মানুষ টা তার কাছে একটা গোলকধাঁধার মতো। তাকে বুঝতে চাওয়া আর অদৃশ্য গুহায় নিজেকে হারিয়ে ফেলা একই কথা।আপাতত নিজের সুস্থ হওয়া টা খুব জরুরি। তবেই না খেলা জমবে।
আশমিন কামিনী চৌধুরী কে নিয়ে কোথায় গেছে তা কেউ জানে না।সানভি আর আশিয়ান কেউ ই তার নাগাল পায়নি।সানভির ফোনে আশমিনের এস এম এস আসতেই সানভি কাজে লেগে পরলো।এতক্ষণ কামিনী চৌধুরীর জন্য খারাপ লাগলেও আবার তার মন টা বিষিয়ে উঠলো। মৃত মানুষের উপর রাগ রাখতে নেই।তবে সানভির রাগ হচ্ছে। ভভয়ংকর রাগ হচ্ছে। আশমিনের দেয়া ঠিকানায় আসতেই সেখানে পুলিশ কে ফোর্স সহ পজিশন নিয়ে দাড়িয়ে থাকতে দেখলো সানভি।সেখান থেকে সরে গিয়ে নিজেকে লুকিয়ে ফেললো সে।তাকে কেউ এখানে দেখলে স্ক্যান্ডেল হতে সময় লাগবে না। গত কয়েকমাসে গায়েব হওয়া মেয়ে গুলো এখানেই আছে।তাদের মধ্যে কিছু কিছু মেয়েকে পাচার করে দেয়া হয়েছে চড়া দামে।আশমিনের মেয়েদের ও বিক্রি করে দিতে চেয়েছিল কামিনী চৌধুরী। না জানি এভাবে আরো কতো মায়ের বুক সে খালি করে দিয়েছে।পাচার চক্রের মেইন মাথা ই ছিল কামিনী চৌধুরী। আশিয়ানের ডুবাই তে অ*স্ত্রের ব্যবসা আছে। সেখানকার মাফিয়া সে।তবে মেয়ে পাচারের সাথে সে জড়িত নয়। কামিনী চৌধুরীর এই চক্রের খবর আশিয়ান ই আশমিন কে দিয়েছে। আশমিন নিজেই সব কিছু করেছে। একজন মন্ত্রীর মা নারী পাচারকারি! বিষয় টা জানাজানি হলে জনগণের তোপের মুখে পরতে হবে তার পুরো পরিবার কে। তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়ে যাবে এক মুহুর্তে। তবুও সে এসব কিছুত তোয়াক্কা করে নি।আশিয়ানের মাধ্যমে অনেকবার কামিনী চৌধুরী কে বোঝানোর চেষ্টা করেছে।ফলাফল শূন্য। কিন্তু তার মেয়েদের সাথে যখন একই কাজ করতে চাইলো তখন আশমিন শান্ত থাকতে পারলো না। তার পনের দিনের মেয়েদের জন্য যদি তার এতো কষ্ট হয় তাহলে যারা পনের বিশ বছর লালন পালন করে নিজের মেয়েদের হারিয়েছে তাদের না জানি কি অবস্থা। এই সিদ্ধান্ত নিতে তার অনেকবার ভাবতে হয়েছে। এই ঘটনা কে কেন্দ্র করে তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংস হলে তার পরিবার কে ও সে বাচাতে পারতো না। চারিদিকে শত্রুর মেলা।সুযোগ পেলে তাকে শেষ করতে এক মুহুর্ত ও সময় নিবে না কেউ।জনগনের ভালো করতে গিয়ে নিজের দলেই অনেক শত্রু হয়েছে তার।তাই সব কিছু গোপনেই শেষ করার সিদ্ধান্ত নেয় সে।
শহর থেকে দূরে একটা ভাঙা বাড়ির সামনে পুলিশের অবস্থান। সানভি জানে ভিতরে কয়েকজন পাতি গুন্ডা ছাড়া আর কেউ নেই। তবুও পুলিশের এতো সময় নেয়া দেখে মেজাজ খারাপ হচ্ছে তার।বাংলা সিনেমার পুলিশের মতো কি ক্লাইমেক্স হওয়ার অপেক্ষা করছে নাকি! এদিকে মশা তকে নিয়ে মনের সুখে পিকনিক করছে।
খাজা বাবার ডেগ আকারের পেটের অধিকারী পুলিশ অফিসার সিগারেটে শেষ টান দিয়ে হেলেদুলে এগিয়ে গেলো বাড়ির দিকে। সানভি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। পুলিশের একটা টিম ভিতরে ঢুকতেই সে সেখানে উপস্থিত হলো। গোলাগুলির মধ্যে যাওয়ার কোন মানেই হয় না। একটা মাত্র প্রাণের অধিকারী মানুষদের এতো রিস্ক নেয়ার কোন মানে হয়না।
আমজাদ চৌধুরী বিধ্বস্ত অবস্থায় বাড়িতে ফিরলো। মায়া বেগম গার্ডের কোল থেকে বাবু কে নিয়ে করুন চোখে অমির দিকে তাকালো। অমি মাথা নিচু করে ভিতরে চলে গেলো। তার কিছু ভালো লাগছে না। এখানে তার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। কোথাও পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে তার।যেখানে বুক ভরে শ্বাস নেয়া যায়।
নূর কে নিজের রুমে নিয়ে গেলো মায়া বেগম।তার মুখটাও শুকিয়ে গেছে।আজ বারবার নিজের অতীত মনে পরে যাচ্ছে। নূর কে বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে বালতি তে করে হালকা গরম পানি এনে ফ্রেশ করিয়ে দিলো।বাচ্চাদের ফিডিং করাতে হেল্প করে নূরের পাশেই উদাস মুখে বসে রইলো মায়া বেগম।
— কামিনী আপা কি আর বেচে নেই বউমা?
নূর ঘাড় উচু করে মায়া বেগমের দিকে তাকালো। তার উদাস দৃষ্টি ভাবিয়ে তুললো নূর কে।এটা কি শুধু সতিনের জন্য মায়া নাকি এর পিছনে ও অন্য কোন গল্প আছে। আজকাল কাউকে বিশ্বাস হয় না নূরের।সবার মুখের উপরই যেন এক একটা মুখোশ টানা। মায়া বেগমের প্রশ্নের উত্তর দিলো না নূর।মায়া বেগম ও আর কোন কথা না বাড়িয়ে চলে গেলো। লুবানা আজ সকাল থেকে গায়েব। সে থাকলে এখন নূরের কাছে থাকতে পারতো।মায়া বেগম কে নূর খুব একটা পছন্দ করে না।তাই সে ও দূরত্ব বজায় রেখে চলে।একজন মেয়ে স্টাফ কে নূরের রুমের বাইরে থাকতে বলে মায়া বেগম নিচে চলে গেলো। আমজাদ চৌধুরী কামিনী চৌধুরীর রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে বসে আছে। থেকে থেকে ফুপিয়ে উঠার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। মায়া বেগম সেদিকে না গিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো। ক্লান্ত দেহমন এবার একটু বিশ্রাম চায়।
দুই’শ বেয়াল্লিশ জন মেয়েকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।তাদের মধ্যে একজন লুবানা। পরিস্থিতি আয়ত্তে আসতেই ভিতরে গিয়েছে সানভি।খাজা বাবার ডেগ ধাচের লোকটা আসলেই খুব কাজের।এখন আর তাকে এই নামে ডাকা যাবে না।হি ইজ আ রেস্পেক্টেড পারসন। ভিতরে গিয়ে মেয়েগুলোর অবস্থা দেখে বুক কেপে উঠলো সানভির।সে পাগলপ্রায় হয়ে লুবানা কে খুজতে লাগলো। একটা মেয়েও নিজের পায়ে দাঁড়ানোর অবস্থায় নেই।সবাইকে প্রচুর আঘাত করা হয়েছে। এখানে নিয়জিত থাকা লোক গুলো ক্রশ*ফায়ারে মারা গেছে।আশমিনের অর্ডারেই তাদের ক্র*শ*ফায়ার দেয়া হয়েছে।নহলে সত্যি বেরিয়ে আসতে সময় লাগবে না। সানভি চারিদিকে খুজে ও যখন লুবানা কে পেলো না তখন তার হাত পায়ে কাপুনি উঠে গেলো। ও ঠিক আছে তো? এই প্রশ্ন তার মাথায় যন্ত্রণা শুরু করে দিলো।
— স্যার এখানে একটা মেয়ে পরে আছে।মনে হয় না বেচে আছে।
এক কনস্টেবলের ডাকে সবাই সেদিকে তাকালো।সানভির বুক অসম্ভব কাপছে। পুলিশ অফিসার যাওয়ার আগেই সানভি দৌড়ে গেলো সেদিকে। লুবানা কে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকতে দেখে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো। ফর্সা মুখ রক্তিম আকার ধারণ করেছে তার।সামনে আগানোর সাহস কুলিয়ে উঠতে পারছে না সে। লুবানার সারা শরীরে মারের দাগ স্পষ্ট। সানভি কাপা কাপা পায়ে এগিয়ে গেলো লুবানার দিকে। হাটু গেড়ে বসে আলতো হাতে সোজা করল লুবানা কে।
— সাবানা,,,এই সাবানা।
গালে হালকা চাপড় দিতেও ভয় করছে সানভির। পাছে সে ব্যথা পায়। নাকের কাছে হাত নিয়ে চেক করতেই দেখলো হালকা নিশ্বাস পরছে। তড়িঘড়ি করে পাজা কোলে তুলে হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে গেল সানভি।একজন কনস্টেবল ও গেলো তার সাথে।মেয়েটাকে এখানে পাওয়া গেছে তাই তাকে এভাবে যেতে দেয়া যায় না।
#ইট_পাটকেল
#সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_৩৬
মামনী কোথায় ভাই?
আশমিন বিরক্ত চোখে তাকালো আশিয়ানের দিকে। কপাল কুচকে গমগমে গলায় বলল,
— তোমাকে আমার বিরক্তির লাগছে আশিয়ান। এখান থেকে যাও।ভাই হিসেবে একটা পরামর্শ দিচ্ছি,এখনো সময় আছে ভালো হয়ে যাও। আমি নিজের মা কেই ছাড় দেই নি।সেখানে তুমি তো সৎ শম্বোন্ধি। মিসেস চৌধুরীর কথা আর কখনো জানতে চাইবে না।পৃথিবী থেকে তার অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে। তাই তাকে নিয়ে কথা না বলাই তোমার জন্য ভালো।
আশিয়ান তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো আশমিনের দিকে। ওই ঘটনার আজ এক সপ্তাহ পার হয়ে গেছে। আশমিন সেদিন অনেক রাতে বাসায় এসেছিলো। কাউকে কিছু না বলেই নিজের রুমে দুই দিন দরজা বন্ধ করে বসে ছিল। দুই দিন পর যখন রুম থেকে বেরুলো তখন সব কিছু স্বাভাবিক। নূর শারীরিক ভাবে অনেকটাই অসুস্থ।
মেয়েদের নিয়ে আরো নাজেহাল অবস্থা। একটা ঘুমালে আরেকটা জেগে বসে থাকে।কারোর কোলে দিলে চিৎকার করে কান্না শুরু করে দেয়।একমাত্র নূর আর আশমিনের কাছেই তারা শান্ত থাকে। মাঝে মাঝে তো নূরের কোলেও থাকতে চায় না। দুই ইঞ্চি মেয়েরাই তার কলিজা ভেজে দিচ্ছে। একেবারে বাপের মতো হয়েছে।বেয়াদব!
রাতে টিউবলাইটের মতো চোখ দুটো খোলা থাকে তাদের একটা ও রাতে ঘুমায় না।তবে নূর কে জাগতে হয় না।আশমিন সারা রাত মেয়েদের নিয়ে বসে থাকে। মন্ত্রী সভার গভীর সমস্যা নিয়ে মেয়েদের সাথে আলোচনায় বসে।মেয়েরা ও গোল গোল চোখ করে বাপের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। মাঝে মাঝে প্যা পু শব্দ করে নিজেদের মতামত দেয়। মেয়েদের মতামত এয়ে আশমিন নতুন উদ্যমে আবার নতুন আলোচনা শুরু করে। এসব দেখে মাঝে মাঝে অসহায় চোখে তাকিয়ে থাকে নূর।এতো মাস পেটে রেখে শত্রুর দোসর জন্ম দিলো সে!
গতকাল লুবানা কে বাড়ি নিয়ে এসেছে। অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে লুবানার ট্রিটমেন্ট করিয়েছে আশমিন।মুলত কামিনী চৌধুরীর পরিকল্পনা জেনে ফেলায় লুবানার এই করুন পরিনতি। তার এক হাত ভেঙে গেছে। নির্মম ভাবে মারা হয়েছে তাকে।এক চোখ ফুলে আছে। শারীরিক অবস্থা আরেকটু স্টেবল হলে তার চোখ অপারেশন করা হবে। এখন এক চোখে দেখতে পায় না লুবানা।ফুলে যাওয়ার কারনে চোখ বন্ধ হয়ে আছে। শরীরের বিভিন্ন জায়গা থেতলে গিয়েছে।যন্ত্রণায় মাঝরাতে চিৎকার করে কাদতো লুবানা।তাই তাকে বেশিরভাগ সময় গুমের ইঞ্জেকশন দিয়ে ঘুম পারিয়ে রাখা হয়। সানভি এই কয়দিন লুবানার সাথেই ছিল। তবে সবসময় থাকতে পারে নি। আশমিনের সাথে ও থাকতে হয় তাকে। লামিম সারাক্ষণ বোনের সাথে থেকেছে।এই একটা মাত্র বোন ছাড়া তার আর কেউ নেই। যন্ত্রণায় ছটফট করে যখন লুবানা কেদে উঠত তখন তার সাথে লামিম ও কেদে ফেলতো।সানভি অসহায় চোখে ভাই বোনের কান্না দেখতো।লামিম কে বুকে জরিয়ে শান্ত করলেও লুবনার কষ্ট কমাতে পারতো না। নিজেকে তখন কতটা অসহায় লাগতো একমাত্র সানভি ই জানে।
আশমিনের সাথে আমজাদ চৌধুরীর সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। সে আশমিনের সাথে কথা বলা ই বন্ধ করে দিয়েছে। সারাদিন কিছু একটা চিন্তা করে গুমরে থাকে।আশমিন দেখেও কিছু বলে না। তাকে সময় দিচ্ছে নিজেকে সামলে নেয়ার।মায়া বেগম ও নিজের মতো ই থাকে।নিজের মতো কাজ করে রুমে গিয়ে বসে থাকে। কারোর সামনে পরতে চায় না। নিজেকে খুব উটকো লাগে তার। তবে এখানে থাকা ছাড়া তার কোন গতি নেই।ভালোই তো আছে।আশমিন তাকে খুব সম্মান করে। আর কি চাই!
ইদানীং আশমিনের রাজনৈতিক নেতাদের সাথে কিছুটা মতবিরোধ হচ্ছে। দলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। চারিদিকে শুধু দুর্নীতি। মন মেজাজ খারাপ হয়ে যায় এসব দেখলে। যে যেভাবে পারছে লুটেপুটে খাচ্ছে। মিটিংয়ে তাদের সাথে কথা কাটাকাটি করে ক্ষিপ্ত মেজাজে বাসায় এসেছে আশমিন। নিজের রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে সোজা নূরের রুমে চলে গেলো সে। মেয়েরা দোলনায় ঘুমিয়ে আছে।নূর তাদের কাপড় ভাজ করে রাখছে। আশমিন সোজা গিয়ে নূরের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরলো। মাথার রগ গুলো দপদপ করছে। নূর হাত থামিয়ে আশমিনের দিকে তাকালো। ক্লান্ত মুখটা দেখে মায়া হলো তার। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চুপচাপ বসে রইলো। এমন ধোয়াশা ভালো লাগছে না তার। নিজের মনে কথা গুলো গুছিয়ে শান্ত গলায় বললো,
— আব্বু কে মিসেস চৌধুরী মেরেছে তাই না?
— হুম।
আশমিনের নির্লিপ্ত গলা শুনে হতাশ হলো নূর। ক্লান্ত গলায় বলল,
— তাহলে আমার কাছে দোষী সাজলেন কেন মন্ত্রী সাহেব?
আশমিন নূরের কথার জবাব দিলো না।নূরের পেটে চুমু খেয়ে ম্লান গলায় বলল,
— মামি মার কাছে যাবে নূর?
চমকে উঠলো নূর। পুরো শরীর কাপছে তার।মনে হচ্ছে ভুল শুনেছে।কাপা কাপা গলায় বলল,
— কি বললেন আপনি?
আশমিন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সোজা হয়ে বসলো। হাতের আজলে নূরের মুখটা নিয়ে তার কম্পমান ঠোঁটে চুমু খেয়ে বললো,
— তোমার মা বেচে আছে নূর। কাল আসছে এখানে। মিসেস চৌধুরী তাকে কানাডায় আটকে রেখেছিলেন। মামি মার কোমড়ের নিচের অংশ প্যারালাইজড হয়ে গেছে।
–ত তাহলে ওই লা*শ?
— অন্য কারো ছিলো। এক্সিডেন্টে তোমার মায়ের ই হয়েছিল। তবে সে বেচে ছিল।কোমড় পর্যন্ত প্যারালাইজড হয়ে গিয়েছিল। মিসেস চৌধুরী তোমার বাবার সাথে তোমার মা কে ভালবাসার মানুষ হারানোর যন্ত্রণা দিতে চেয়েছিল। তাই তাকে কানাডা নিয়ে গিয়েছিল সবার অগোচরে। নিজের অক্ষমতার জন্য তোমার মা ও ফিরে আসতে পারেনি। যদিও তাকে এতো বছর বন্দি করে রাখা হয়েছিল।
নূরের চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পরছে। তার মা বেচে আছে! কামিনী চৌধুরী এতটা পাষাণ কি করে হতে পারলো। সে কতো রাত নির্ঘুম কাটিয়ে মায়ের জন্য কান্না করতো। কামিনী চৌধুরী দেখে বিরক্ত হয়ে ঢং বলে রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিতো।
নূর রাগে কাপতে লাগলো। ধরা গলায় চিৎকার করে বললো,
— আপনার মা একজন সাইকো মন্ত্রী সাহেব। পাগল সে।সুস্থ মানুষ কখনো এমন নিকৃষ্ট হতে পারে না।
আশমিন নূর কে আগলে রাখলো বুকে।নূরের মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত গলায় বললো,
— তুমি ঠিক বলেছো নূর। সে মেন্টালি সিক ছিল। ভালো হোক খারাপ হোক।সে আমার মা ছিল নূর। তাই তাকে নিয়ে আর কিছু বলো না। আমার কষ্ট হয়। বুকটা ফেটে যায়। আমি আমার আম্মুকে খুব ভালবাসি নূর।সে যা করেছে তার শাস্তি সে পেয়ে গেছে।তাকে আর অসম্মান করে কিছু বলো না।
কথা গুলো বলতে বলতে আশমিনের গলা ধরে এলো। নূর বুঝতে পেরে চুম করে সম্মতি দিলো।যে নেই তাকে নিয়ে আর কটু কথা বাড়াতে চায় না সে। আশমিন কে জরিয়ে ধরে বসে রইলো চুপচাপ। উত্তেজনায় তার হাত পা কাপছে। কাল সে তার মায়ের দেখা পাবে। এতগুলো বছর পর সে তাকে নিজের চোখের সামনে দেখবে ভাবতেই সারাদিনের ক্লান্তি পালিয়ে গেল। আশমিন নূরের মাথায় চুমু খেয়ে নিজের মেয়েদের কাছে গেলো। একজন ঘুমিয়ে আর একজন চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে আছে। আশমিন হালকা হেসে তাকে কোলে তুলে নিলো। দুজনের নাম দেয়া হয়েছে সুখ পাখি। ভালো নাম বড় করে আকিকা দিয়ে রাখা হবে। এত ঝামেলায় নাম ঠিক করা হয়নি। নূর অবশ্য মেয়েদের নাম আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছে। তবে আশমিন তা মানতে নারাজ।এ নিয়ে দুজনের কয়েক দফা ঝগড়া ও হয়ে গেছে। তাই আপাতত তাদের সুখ আর পাখি বলেই ডাকে সবাই। এই ঝগড়ার প্রতিশোধ আশমিন আর দশদিন পরে নিবে। শুধু একটু সুস্থ হয়ে নেক। অসভ্য মেয়ে। মেয়েকে আদর করতে করতে আড় চোখে তাকালো আশমিন। নূর মনের আনন্দে গুন গুন করছে। সুখ কে দোলনায় শুয়িয়ে ধির পায়ে নূরের কাছে গেলো। নূর কে ঝাপটে ধরে নেশালো গলায় বলল,
— বউ,,আমার প্রেম পাচ্ছে। হবে নাকি একটু?
নূর ভয়ার্ত চোখে তাকালো আশমিনের দিকে। তার কাছে পারমা*ণবিক বো*মার চেয়েও এই কথা টা বেশি ভয়ংকর। শুকনো ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বললো,
— ক কি সব ব বাজে কথা! দ দূরে থাকুন।
আশমিন কবে কার কথা শুনেছে? সে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলো। নিজের মন ভরে আদর করে নূরের ভেজা চোখে চুমু খেলো।ফোলা ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে দুঃখী দুঃখী গলায় বলল,
— তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাও বউ। মন ভরে ভালবাসতে পারছি না তো!
নূরের ইচ্ছে করলো ছাদ থেকে লাফফ দিয়ে ম*রে যেতে। আশমিন কে ধাক্কা দিতে দিতে বললো,
— আপনি একটা অসহ্য মানুষ। আমার কাছে আসবেন না। লুটেরা কোথাকার।
আশমিন শব্দ করে হেসে উঠলো। নূর কে আদর করতে করতে বললো সুন্দরী বউ লুটেরা।হু হা হা।
চলবে,,,
!)
চলবে,,