ইট পাটকেল পর্ব -৩৯+৪০

#ইট_পাটকেল
#সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_৩৯

বিপুল ভোটে জয় লাভ করেছে আশমিন। সারাদিন অনেক ব্যস্ত ছিল সে। কয়েকটি কেন্দ্রে গন্ডগোল হয়েছে।দলের প্রায় বিশ জন মানুষ আহত হয়েছে।তার মধ্যে দুই জনের অবস্থা আশংকাজনক। আশমিন ঠিক করেছে কাজ শেষ করেই একবার হসপিটালে যাবে। নূরের সাথে কথা হয়েছে ঘন্টা দুয়েক আগে।মেয়েদের নিয়ে ঘুমাবে বলায় কথা দীর্ঘ হয় নি। তানভীর আজ সারাদিন আশমিনের সাথেই ছিল। ছেলেটা তাকে বড় ভাইয়ের মতো সম্মান করে। নূর কেও নিজের বোনের মতো ভালবাসে।কিন্তু আশমিনের হিংসুটে মন সব জেনেও তানভীর কে হিংসা করতে পিছ পা হয় না। সারাদিনের ধকলে সবাই খুব ক্লান্ত। আশমিন নিজের কেবিনের ডিভানে গা এলিয়ে বসে আছে। অমি, সানভি,আশিয়ান, তানভীর এখনো কাজ সামলাতে ব্যস্ত।

আশমিনের ফোন বাজছে। পাঞ্জাবীর পকেট থেকে ফোন বের করে ভ্রু কুচকে ফেললো আশমিন। বাসার ল্যান্ড লাইন থেকে কল এসেছে। কপালে চিন্তার ভাজ ফেলে কল রিসিভ করলো আশমিন। হ্যালো বলার আগেই মায়া বেগমের আটকে আটকে যাওয়া আওয়াজ পিলে চমকে দিলো তার।

— ব বাবা আ আশ মিন। ব বউ ম মাকে ব বাচাও। ও ওরা ম মে রে ফ ফেলবে ওদ দের।

আশমিন চিৎকার করে উঠলো। হাত পা থরথর করে কাপছে তার। অস্থির হয়ে মায়া বেগম কে ডাকতে ডাকতে বলল,

— কি হয়েছে মায়া আন্টি? নূর কোথায়? আল্লাহ! আমার মেয়েরা কোথায় আন্টি?

ততক্ষণে মায়া বেগমের কথা চিরতরে থেমে গেছে। আশমিন কথা বলতে বলতেই পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটে বেরিয়ে গেছে।বাহাদুর সহ বাকি গার্ড রা ও তার সাথেই দৌড়ে বেরিয়ে গেল। বাহাদুর অমি আর সানভি কে কল করে আশমিনের বেরিয়ে যাওয়ার খবর বলতে বলতে অন্য একটা গাড়ি তে উঠলো। আশমিন নিজেই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেছে। বাহাদুর ঝড়ের গতিতে গাড়ি চালাচ্ছে। আশমিন কে একা ছাড়া মারাত্মক রিস্ক। তাই যেভাবেই হোক আশমিনের গাড়ি ধরতে হবে।

অমি বাহাদুরের কল পাওয়ার পর আশিয়ান কে কল করলো। বাড়ির কাছাকাছি আশিয়ান আছে। আশিয়ান কে সমস্ত ঘটনা খুলে বলতেই আশিয়ান অমি কে আসতে নিষেধ করলো। সে গিয়ে পরিস্থিতি জানাবে বলে আস্বস্ত করে ফোন রেখে বাসার দিকে রওনা হয়ে গেলো।

আশমিন পাগলের মতো গাড়ি চালাচ্ছে। চিন্তায় উত্তেজনায় মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড়। ভয়ে চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে বারবার। এক হাতে চোখ মুছে আবার কল করলো বাড়ির সিকিউরিটি হেড কে। কয়েকবার রিং হতেই কল ধরলো সে। আশমিন কল ধরেই অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করল,

— রাফিক বাসায় কি হয়েছে? সবাই ঠিক আছে তো? তোমাদের ম্যাম কল ধরছে না কেন?

রফিক হতভম্ব হয়ে গেলো আশমিনের কথা শুনে। সে তো সারাদিন আশমিনের আশেপাশে ই ছিল। কয়েকজন কে অফিসের সামনে রেখে একটু ওয়াশরুমে গিয়েছিল। এখনো সে ওয়াশরুমের ভিতর। এই টুকু সময়ে কি হয়ে গেলো!

রফিক কাপাকাপা গলায় বলল,

— স্যার, আমাদের কে ম্যাম আজ আপনাকে প্রোটেক্ট করতে বলেছে। আমারা সারাদিন আপনার আশেপাশে ই ছিলাম। বাসার খবর তো কিছু জানি না।

আশমিন রেগে কয়েকটা বিশ্রী গালি দিলো। চিৎকার করে বললো,

— জা*নো*য়ারের বা*চ্চা,তোদের কি আমি আমাকে পাহারা দিতে রেখেছি? আমার সাথে কি আমার গার্ড নেই? তোরা কেন আমার পিছু আসলি? আমার পরিবারের কিছু হলে সব কয়টা কে আমি জ্যান্ত পু*তে দিবো।

রফিক তরতর করে ঘামছে। ভয়ের চোটে ডায়রিয়া হয়ে যাবে এমন অবস্থা। মিনমিনে গলায় বলল,

— স্যার,,আমি আসতে চাই নি।ম্যাম কে তো চিনেন। আমাকে জোর করে পাঠিয়েছে।তবুও আমি পাচজনকে রেখে এসেছি ম্যাম কে না জানিয়ে। আমি ওদের কল করে দেখছি।

রফিক কল কেটে দ্রুত ওই গার্ডদের কল করলো। কেউ কল রিসিভ করছে না। আমজাদ চৌধুরী সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে গেছে। এখন প্রায় ভোর হতে চললো। সারা রাত ভোট গননার কাজ হয়েছে। আশমিন স্টেয়ারিং এ আঘাত করলো। রাগে দুঃখে তার ভিতরে লণ্ডভণ্ড হয়ে যাচ্ছে। ফাকা রাস্তা হওয়ায় গাড়ি হাই স্পিডে চালিয়ে যেতে কোন সমস্যা হচ্ছে না। কয়েক মিনিট পরেই বাহাদুরের গাড়ি আশমিন কে ধরে ফেললো। আশমিনের সেদিকে হুস নেই। আজ রাস্তা টাও অনেক দীর্ঘ মনে হচ্ছে। নূরের এই অতিরিক্ত বোঝার ফল যদি তাকে আবারও নিঃস্ব করে দেয় তাহলে নূর কে শাস্তি পেতে হবে। ক্ষমা পাবে না নূর।

আশিয়ান বাড়িতে ঢুকে স্থির হয়ে গেলো।মনে হচ্ছে এখানে ঘূর্ণিঝড় বয়ে গেছে।সব কিছু এদিক সেদিক পরে আছে। ভাঙা কাচ মাড়িয়ে একটু সামনে এগুতেই মায়া বেগমের রক্তাক্ত দেহ পরে থাকতে দেখলো আশিয়ান। কাপা কাপা পায়ে সামনে এগিয়ে বুঝতে পারলো মায়া বেগম আর বেচে নেই।তাকে মারাত্মক ভাবে আঘাত করা হয়েছে।কপালের দিকটা থেতলে গেছে।পেটে ছু*রি দিয়ে আঘাত করা হয়েছে।চারিদিকে রক্ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

আশিয়ান কাপছে। এই হাতে কত মানুষ মে*রেছে। অথচ আজ মায়া বেগমের নাকের সামনে হাত নিতে তার হাত কাপছে। ঝাপসা চোখে চারিদিকে চোখ বুলিয়ে বায়া বেগমের নিঃশ্বাস পরছে কিনা চেক করল আশিয়ান। তার ধারণা সত্যি হয়ে গেলো। মায়া বেগম আর বেচে নেই। ড্রয়িং রুমে কয়েকজনের লা*শ পরে আছে। তাদের কে গু*লি করা হয়েছে। আশিয়ান দ্রুত পায়ে সিরি দিয়ে উপরে উঠলো। নূর ঠিক আছে তো! তার প্রিন্সেস রা কোথায়!

আশমিনের রুমের সামনে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ দেখে কলিজা কেপে উঠলো আশিয়ানের। কোমড় থেকে নিজের রিভা*লবার টা বের করে দরজা হালকা ধাক্কা দিতেই খুলে গেলো। ঠিক সে সময় আশমিন প্রবেশ করলো বাড়িতে। গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে এসেছে সে। দ্রুত নিঃশ্বাস উঠা নামা করছে। সিরির কাছে এসে থমকে গেলো আশমিন। মায়া বেগমের নিথর শরীরটার দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে রইলো। ধীর পায়ে তার কাছে গিয়ে আলতো হাতে জরিয়ে ধরলো তাকে। চোখ থকে কয়েক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পরলো মায়া বেগমের কপালে। বাহাদুর তার দল নিয়ে উপরে চলে গেছে। সবাইকে চারিদিকে ছড়িয়ে পরতে বলা হয়েছে। একজন কে সিকিউরিটি রুমে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে সিসিটিভি চেক করার জন্য। আশমিন মায়া বেগম কে রেখে টলমল পায়ে উপরে উঠছে। বার বার পা ভেঙে পড়ে যেতে নিয়েও নিজেকে সামলে নিলো সে। বাহাদুর অস্রুসিক্ত চোখে দাঁড়িয়ে আছে আশমিনের রুমের দরজার সামনে। আশমিনের বুকের ব্যথা বেগতিক ভাবে বেড়ে যাচ্ছে।

আশমিন কাছে আসতেই বাহাদুর দরজা থেকে সরে দাড়ালো। আশিয়ান পাখি কে বুকে নিয়ে বসে আছে। পাখির ছোট্ট দেহটা নিস্তেজ হয়ে আছে আশিয়ানের কোলে। মাথা থেকে চুয়িয়ে চুয়িয়ে র*ক্ত পরছে। আশমিন ঝাপসা চোখে একবার চোখ বুলালো। আশিয়ান নিরবে অশ্রু ঝরাচ্ছে। আশমিন পাখিকে আশিয়ানের কাছ থেকে নিজের কোলে নিলো। বুকে চেপে ধরে চিৎকার করে কেদে উঠলো আশমিন।সকালে এই হাতে নিজের পুতুল গুলো ক্র কোলে নিয়ে আদর করেছে সে। তখন তারা খিলখিল করে হাসছিল। এখন সেই আদরের মেয়েকে নিস্তেজ দেখে কলিজা ফেটে যাচ্ছে আশমিনের। হুট করেই আশমিনের কান্না থেমে গেলো। চিৎকার করে আশিয়ান কে ডেকে বললো,,

— আশিয়ান আমার মেয়ে বেচে আছে।ওরে আমার মেয়ে বেচে আছে। বাহাদুর গাড়ি বের করো। আমার মেয়েকে হসপিটাল নিয়ে যাও ভাই।

আশিয়ান এসে পাখিকে নিজের কোলে নিয়ে ঝড়ের গতিতে বেরিয়ে গেল। বাহাদুর দৌড়ে বেরিয়ে গেল আশিয়ানের সঙে। ৷

আশমিন কয়েক সেকেন্ড নিজের রক্তাক্ত হাত আর পাঞ্জাবির দিকে তাকিয়ে গা ঝারা দিয়ে উঠে দাড়ালো। তার সুখ আর নূর কে ও যে খুজতে হবে।

কয়েকজন গার্ড এসে জানালো নূর আর সখ কে বাড়ির পিছনের বাগানে পাওয়া গেছে। আশমিনের আর কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস হলো না। সে সেদিকে ছুটলো।

একটা ঝোপের আড়ালে থেকে হালকা কান্নার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। সেখানে গিয়ে সুখ কে দেখে আশমিনের জানে পানি এলো। সুখ হাত পা নাড়িয়ে কান্না করছে। অনেক ক্ষন কান্না করার দরুন গলা ভেঙে গেছে। সুখ কে কোলে নিয়ে কপালে চুমু খেয়ে আশমিন চারিদিকে পাগলের মতো নূর কে খুজতে লাগলো।

বাবার বুকে এসে সুখের কান্না থেমে গেছে। একজন গার্ড এসে নূর কে দেখিয়ে দিলো। রক্তাক্ত হয়ে একপাশে পরে আছে নূর। মেয়েকে বাচাতেই ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে রেখেছিল হয়তো।

আশমিন নূরের রক্তাক্ত দেহটাকে এক হাতে বুকে আগলে নিলো। রক্তাক্ত চোখে চিবিয়ে চিবিয়ে বললো

— আমি তোমাকে ক্ষমা করবো না নূর। এর শাস্তি তোমাকে পেতে হবে।

একজন গার্ড এসে ভয়ে ভয়ে আশমিন কে বললো,,

— স্যার, আমজাদ স্যারের গুলি লেগেছে। ম্যামের অবস্থা ও ভালো নয়। প্লিজ স্যার, তারাতাড়ি হসপিটাল নিয়ে চলুন।
#ইট_পাটকেল
#সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_৪০

হাসপাতাল চত্তরে মানুষের ঢল নেমেছে। আশমিনের দলের কয়েকশ লোক এসে জমা হয়েছে সেখানে। সবার চেহারায় তীব্র ক্ষোভ বিদ্যমান। সাধারণ জনগণ ও এসেছে। অনেকে এসেছে তামাশা দেখতে।আবার অনেকেই প্রিয় নেতার খারাপ সময়ে ছুটে এসেছে তাকে একটু শান্তনার বানী শোনাতে। অমি, সানভি আশিয়ান, বাহাদুর সবার অবস্থা ভয়ংকর খারাপ।আশমিন নূর, আমজাদ চৌধুরী আর সুখ কে নিয়ে হসপিটাল পৌঁছাতে পৌঁছাতে নিজেই স্ট্রোক করে বসেছে। তাকে হসপিটালাইজড করতে হয়েছে সবার আগে। পরিস্থিতি দেখে সানভি পাগলের মতো কান্না করছে। কিছুক্ষণ পর পর হাত পা ছেড়ে বসে পরছে। হাতে পায়ে সামান্য টুকু শক্তিও পাচ্ছে না সে। বাহাদুরের মতো শক্ত পোক্ত মানুষ টা ও বিধ্বস্ত চোখে শুধু ফ্যালফ্যাল করে এদিক সেদিক তাকাচ্ছে। অমি আর আশিয়ান পাগলের মতো একবার নূরের কাছে যাচ্ছে তো একবার পাখির কাছে যাচ্ছে। আশমিনের কেবিনের সামনে কাওকে এলাও করছে না ডাক্তার। সেখানে সামরিক বাহিনীর সদস্যরা কড়া পাহাড়ায় আছে। পুরো হসপিটাল পুলিশের লোকেরা ঘিরে রেখেছে। তদন্ত কমিটি বসেছে । পুরো শহরে কার্ফু জারি হওয়ার মতো অবস্থা। আমজাদ চৌধুরীর অবস্থা আশংকাজনক। নূরের মাথায় শক্ত কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। পেটের মধ্যে কয়েকবার ধারালো ছু*রি
দিয়ে আঘাত করার ফলে খাদ্যনালী অনেকটা কেটে গিয়েছে। নূরের অপারেশন চলছে। বাচার আশা ক্ষীণ। পাখি এখন কিছুটা ভালো আছে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি হাতের বাইরে। রফিক তার সিকিউরিটি টিমের পাচ জনের লা*শ সমস্ত ফর্মালিটি শেষ করে পরিবারের হাতে হস্তান্তর করেছে। মায়া বেগমের লাশ মর্গে রাখা হয়েছে। পোস্টমর্টেম করার পরে তাকে দাফন করা হবে। অমি আপাতত পোস্টমর্টেম করতে নিষেধ করেছে। আশমিনের অনুমতি ছাড়া সে এ ব্যপারে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। আর আশমিন এখন কিছু বলার অবস্থায় নেই।

আশিয়ান নিজের লোকদের লাগিয়ে দিয়েছে হামলাকারী কে খুজে বের করার জন্য। শুভ্র মুখটা রক্তজবার মতো লাল হয়ে আছে। তার চিৎকারে হসিপিটালের স্টাফরা ও কেপে কেপে উঠছে।

— আমি ওদের চাই মিজান। আকাশ থেকে আনবে না পাতাল থেকে আনবে আমি জানি না। আমি আজকের দিন শেষ হওয়ার আগেই সব কয়টা কে আমার চোখের সামনে দেখতে চাই। কে করেছে? কেন করেছে তার কোন এক্সপ্লেনেশন চাই না। আমার ওদের আমার সামনে চাই।পুরোপুরি জ্যান্ত। একটা আচড় ও জেন ওদের গায়ে না লাগে। বুঝেছো?(চিৎকার করে)

মিজান ভয়ে জড়সড় হয়ে গেছে। কাপা কাপা গলায় বলল, ‘ঠিক আছে স্যার’।

আশিয়ান ফোন রেখে অপারেশন থিয়েটারের দিকে ছলছল চোখে একবার তাকালো। বাহাদুর অসহায় মুখে দাড়িয়ে আছে। আশিয়ান গম্ভীর গলায় বাহাদুর কে বলল,

— বাহাদুর,,আমাদের ব্যক্তিগত গার্ডরা যদি নাও থাকে তবুও এরকম হামলা হওয়ার কথা নয়। সরকারি ফোর্স তো ছিল। তাদের থাকা অবস্থায় এরকম হামলা হলো! তোমার কি মনে হয়?

বাহাদুর ভনিতা না করে সরাসরি বলল,

— পচিশ জন পুলিশের মধ্যে বারোজন অজ্ঞান ছিল স্যার।তাদের সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকি তেরো জন মা*রা গেছে স্যার। কেউ তাদের খাবারের সাথে বি*ষ মিশিয়ে দিয়েছিল। তাদের খাবার যারা তৈরি করতো তাদের পুলিশ গ্রেফতার করেছে। জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

আশিয়ান একবার দূরে এদিক ওদিক ছূটতে থাকা অমির দিকে তাকালো। অমির সবসময় এমন শান্ত থাকা তাকে বারবার ভাবিয়ে তোলে। মায়ের পেটে একসাথে থাকা সত্ত্বেও তারা দুজন কতো ভিন্ন। সে পাখিকে নিয়ে এসে পাগলের মতো ব্যবহার করেছে। তার হুংকারে ডাক্তাররা পাখিকে ধরতেও ভয় পাচ্ছিল। অবশেষে কয়েকজন সিনিয়র ডাক্তার এসে তাকে সামলেছে। নূর আর সুখ কে নিয়ে আসার পর যখন আশমিন অসুস্থ হয়ে গেলো তখন আশিয়ান উন্মাদের মতো করেছে। সানভি তো হাউমাউ করে কেদে দিয়েছে। কিন্তু অমি ছিল শান্ত। সবাইকে সামলে নিজের দায়িত্ব গুলো কতো সহজেই না পাগল করে যাচ্ছে!

বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ব্রেকিং নিউজ চলছে।
“মিনিস্টার আশমিন জায়িন চৌধুরীর পরিবারের উপর হামলা করা হয়েছে। তাদের সবার অবস্থা আশংকাজনক। পরিবারের এই অবস্থা দেখে আশমিন জায়িন চৌধুরী নিজেও অসুস্থ হয়ে পরেছেন। তাদের এই সংকটময় মুহুর্তে প্রধানমন্ত্রী তাদের সমবেদনা জানিয়েছেন”

তিনদন পর জ্ঞান ফিরেছে আশমিনের। পুরো সময়টা পরিবারের সদস্য ছাড়া আর কাওকে এলাউ করেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। র‍্যাব আর ডিবি পুলিশ সারাক্ষণ পাহারায় আছে। সাংবাদিকরা দিন রাত হসপিটালের নিচে কাটিয়ে দিচ্ছে লাইভ নিউজ করে। এই পর্যন্ত পুলশ কোন ক্লু খুজে বের করতে পারেনি। তবে আশিয়ান লারা আর তার বাবা কে তুলে এনেছে। সেদিন বাড়িতে লারা এসেছিল তা সিসিটিভি ক্যামেরাতে ধরা পরেছে। কিন্তু মিনিস্টার আশমিন জায়িন চৌধুরীর বাড়িতে হামলা করার মতো কলিজা লারা বা তার বাবার এখনো হয়নি। এর পিছনে অন্যকারো হাত আছে নিশ্চিত। পেয়াদাদের সমাদর করলেই রাজার নাম বের করা যাবে।একজন মা*ফিয়া হিসেবে আশিয়ান বড় নিষ্ঠুর। তার নিষ্ঠুরতা সিরিয়াল কি*লারদের ও হার মানায়।

আশমিন জ্ঞান ফেরার পর থেকে শুধু মেয়েদের দেখতে চাইছে। সুখ এখন পুরোপুরি সুস্থ। তবে পাখির কপালে দুটো সেলাই পরেছে৷ তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। আশমিনের কাছে সুখকে এনে দিলো সানভি। ডাক্তার আশমিন কে বেশি কথা বলতে ও নড়াচড়া করতে নিষেধ করেছে। আশমিন সুখ কে বুকে জরিয়ে সুয়ে আছে। আমজাদ চৌধুরী আর মায়া বেগমের কথা জিজ্ঞেস করলেও নূরের কথা একবার ও জিজ্ঞেস করেনি আশমিন। উপরে অভিমান থাকলে মনে মনে সে অস্থির হয়ে উঠছে নূরের জন্য। সানভি বোধহয় আশমিনের মনের কথা বুঝতে পারলো। তাই নিজে থেকে নূরের অবস্থার কথা জানালো আশমিন কে। নূরের সার্জারি হয়ে গেছে। আপাতত সব ঠিক হলেও নূরের সুস্থ হওয়া সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। শারীরিক যন্ত্রণা ঠিক কতটা সহ্য করতে পারবে তা ও দেখার বিষয়। প্রতিদিন তার খাদ্যনালী দুই বার করে ড্রেসিং করতে হবে। তাই অপারেশন হলেও পেট সেলাই করা হয়নি। খাদ্যনালী প্রায় সত্তর পার্সেন্ট কেটে গিয়েছিল। নূরের এখনো জ্ঞান ফিরেনি।বেচে গেলেও সুস্থ হওয়া টা তার জন্য একটা চ্যালেঞ্জ।

আশমিন স্তব্ধ হয়ে গেলো। তার কলিজাটা মনে হয় কেউ বার বার খন্ড খন্ড করছে। সব পরিস্থিতিতে শান্ত থাকা মানুষ টা মেয়েকে বুকে জরিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো। সানভির চোখের কোনেও পানি জমেছে। আশমিনের সামনে কান্নাকাটি করা সম্পুর্ন নিষেধ। সানভি আশমিন কে আস্বস্ত করলো সবাই ঠিক আছে। আশমিন অসহায় চোখে সানভির দিকে তাকিয়ে ধরা গলায় বলল,,

— আমার এতো অসহায় লাগছে কেন সান! আমি কেন আমার পরিবার কে রক্ষা করতে পারলাম না? আমার পাখি,নূর, বাবা না জানি কতটা অসহায় ছিল তখন।ওরা আমাকে খুজেছে সান।আমার নাম ধরে ডেকেছেও হয়তো বাচার আশায়।আর আমি এসি রুমে আয়েশ করে বসে ছিলাম। আমার পাখি! আমার পাখিকেও ওরা আঘাত করেছে!মায়া আন্টি কে মে*রে ফেলেছে সান! আমি কি ব্যর্থ ছেলে! ব্যর্থ স্বামী, একজন ব্যর্থ বাবা। আমি ওদের সুরক্ষা দিয়ে পারিনি সান। আমার নজর রাখা উচিত ছিল।

আশমিনের এমন তীব্র অসহায় গলা শুনে সানভির চোখ থেকে কয়েক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পরলো। কোন রকম শান্তনা না দিয়ে শক্ত গলায় বলল,,

— আমরা কাওকে ছাড়বো না স্যার। ওদের দেহের প্রতিটি ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বুঝিয়ে দিবো কার কলিজায় ওরা হাত দিয়েছে।আপনি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুন। একটা কেও ছাড়বো না।

আশমিন চোয়াল শক্ত করে চোখ বন্ধ করে ফেললো। ঠান্ডা মাথায় যা করার করতে হবে।

চলবে,,,
। )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here