১.
‘তোমার মুখে পতিতাও থুথু দিবে না’
কথাটা বলে ডিবোর্স পেপারে সাইন করে চলে যায় বিধান।তুলি কান্না করতে করতে সেখানেই বসে পরে।আজকে তার জীবনের সবচেয়ে খুশির দিন হওয়ার কথা ছিল।এতদিনের অপেক্ষা সফল হয়েছিল।সে ছেলে সন্তানের মা হতে চলেছে।কিন্তু সেই খবরটা বিধানকে দেয়ার আগেই তাদের ডিবোর্স হয়ে যায়।তুলি বুঝতে পারছে না বিধান হঠাৎ করে কেন এই সিদ্ধান্ত নিল?
গত ৬মাস ধরে তাদের দুজনের মধ্যে ঝগড়া চলছিল,যার মূল কারন হলো তুলির ছোট ননদ রুহি।সে তার ভাইকে তুলির নামে মিথ্যা কথা।বাজে বাজে কথা বলে।সেই থেকে বিধান তুলির সাথে একটু কম কথধ বলে।তাদের ঘরে ৫বছরের একটা মেয়ে রয়েছে।বিধানই তার নাম রেখেছিল একা।আজ সত্ত্যি একা হতে চলেছে সে।
তুলি কান্না করতে করতে নিজের ঘরের দিকে যায়।ঘরের দরজার সামনে তাকে আটকায় তার ছোট ননদ রুহি।তার মুখে একরাশ হাসি জমে আছে।তুলি বুঝতে পারছে রুহি এখন খুশিতে আছে।কিন্তু সে এতদিন ধরে বুঝতে পারছে না যে,রুহির সাথে তার কিসের শত্রুতা।রুহি তার নিজের মাথার চুলে হাত দিয়ে বলে,
–‘ওদিকে নয় এদিকে যান’
এই কথা বলে তার আঙ্গুলটা সদর দরজার দিকে তুলে সে।তুলি রুহিকে ধাক্কা দিয়ে ভিতরে যায়।আজ সে এখানে থাকবেই।বিধানের কাছে জানবে যে,কেন তাকে ডিবোর্স দিল কোনো প্রকার কথা ছাড়াই।তুলির এহেন ব্যবহারে রুহি খুব রেগে যায়।সে তার মাকে নিয়ে বিধানের ঘরে যায়।রুহির মা তুলিকে খুব ভালোবাসতো আগে।কিন্তু কয়েকদিন আগ থেকে তিনি তুলিকে দেখতেই পারছেন না।তুলিকে দেখলেই যেন তার গা-পা জ্বলে যায়।তুলিও সেটা বুঝতে পারে।হঠাৎ তার শাশুড়ির এমন পরিবর্তে সে বেশ খানিকটা অবাক হয়েছে।তার চেয়ে বেশি অবাক হয়েছে বিধানের পরিবর্তনে।রুহির মা এসে তুলির সামনে দাঁড়ায়।
তুলি মাথা তুলে তার শাশুড়ির দিকে তাকায়।তার চোখ দিয়ে যেন আগুনের ফিরকি ঝড়ছে।তার শাশুড়ি তার হাত ধরে বলে,
–‘আমার ছেলে তোমাকে ত্যাগ করেছে।তুমি চলে যাও এখান থেকে।’
তুলি সাথে সাথে বলে,
–‘আমি আমার মেয়েকে নিয়ে যাব।’
এই কথাটা বলে তুলি বসে থাকে বিছানায়।তার শাশুড়ির রাগ হরহর করে বাড়ছে।রুহি পিছন থেকে মুচকি মুচকি হাসছে।তুলি ভাবেনি তার শাশুড়ি এমন কাজ করবে?তুলির শাশুড়ি তুলির চুলের মুঠি ধরে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।সাথে বলে,
–‘তোর মতো কলঙ্কিনিকে আমার বাড়িতে রাখলেও পাপ হবে।’
তুলি তার শাশুড়ির মুখে কলঙ্কিনি কথাটা শুনে চমকে ওঠে।সে তার পেটের দিকে তাকায়।পেটের ভিতরে রয়েছে ফুটফুটে নিষ্পাপ এক শিশু।কিন্তু সেই শিশুকে তারা অবৈধ বলছে।তুলি আনন্দের খবরটা না জানিয়ে কান্না করতে করতে সেই বাড়ি থেকে বের হতে ধরে।সদর দরজায় সে ধাক্কা খায়।মাথা তুলে তাকিয়ে দেখে বিধান।হাতে জলন্ত সিগারেট রয়েছে।তুলি অবাক হয়ে বিধানের দিকে তাকায়।বিধান সিগারেটের গন্ধ সহ্য করতে পারে না।সে আজ সিগারেট খাচ্ছে।বিধান তুলির দিকে তাকিয়ে ভিতরে যেতে ধরে।তুলি পিছন থেকে বিধানের ডান হাতটা টেনে ধরে বলে,
–‘একটা কথা জানার ছিল!’
বিধান এক ঝটকা দিয়ে হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,
–‘আমি কোনো কথা বলতে চাই না।আর একা আমার কাছেই থাকবে।’
এই বলে বিধান ভিতরে চলে যায়।ঘরের ভিতরে গিয়ে সে বিছানায় হেলান দিয়ে শুয়ে পড়ে।চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে।মনটা ভাবছে,তুলি কিভাবে আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারলো?কিভাবে পারলো নিজের ৫বছরের মেয়েকে রেখে..?ছি.
তুলি কান্না করতে করতে রাস্তা দিয়ে চলছে।দিনের ১২টা বাজে।সূর্য মাথার উপরে।সূর্যের তাপে মাথার চাঁদি ফেটে যাচ্ছে।মনে হচ্ছে মরুভূমিতে হাটছে।চোখ দিয়ে পানিও বের হচ্ছে না।তুলি এখন কই যাবে?নিজের বাসায়।নাহ সেখানে গিয়ে সৎ মায়ের অত্যাচার সহ্য করতে পারবে না।তার চেয়ে এরকম হেটে বেড়াই ভালো।হাটতে থাকে তুলি।উদ্দেশ্য নেই কোনো।কোথায় যাবে যানে না?দেখতে দেখতে সূর্যটা অস্ত যায়।পেটের ভিতরে ইঁদুর দৌড়াদৌড়ি করছে।
স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পর থেকেই কান্না করে চলেছে একা।সামনে বিছানো আছে কয়েক প্রকারের চকলেট পর চিপস।কিন্তু কোনো কিছুই তার কান্নাকে আটকাতে পারছে না।বিধানতো একাকে সব কিছু এনে দিয়েছে তবুও কান্না থামছে না একার।বারবার বলছে,
–‘মা কই?মায়ের কাছে যাব!’
কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে একা।বিধানও চোখের পানি ফেলতে ফেলতে চোখ বুজে ফেলে।তার মনের ভিতরে তুলির জন্য এখনো ভালোবাসা সিমাহীন।কিন্তু তুলি তার এই ভালোবাসাকে নিয়ে খেলা করেছে।এই কথা ভেবে বিধানের রাগ আরো বেড়ে যায়।এক পর্যায়ে সেও ঘুমিয়ে পড়ে।
রাত কোথায় কাটাবে সেটা ভেবে পাচ্ছেনা তুলি।এই রকম ক্ষিধা নিয়ে থাকলে পেটে থাকা বাচ্চাটার বাঁচার সম্ভাবনা 0% নেমে আসবে।কিছুতো খেতেই হবে।নিজের জন্য নয় কিন্তু পেটে থাকা বাচ্চাটাকে বাঁচানোর জন্য।তুলির চোখ দিয়ে পানি পড়ছে টপটপ করে।সে জীবনেও কল্পনা করেনি তাকে এমন দিন দেখতে হবে?খাবারের জন্য তাকে পথে নামতে হবে।কিন্তু পেটে থাকা বাচ্চাটাকে তো বাঁচাতে হবে।
রাত ১০টার কাছাকাছি সময়।দোকানদার গুলো নিজ নিজ দোকান বন্ধ করে বাসার দিকে চলেছে।সেই নির্জন বাজারে রাস্তায় বসে আছে এক মেয়ে।যার পেটের মধ্যে রয়েছে ৫মাসের একটা বাচ্চা।তুলি বুঝতে পারছে তার এখানে এভাবে থাকা ঠিক হবে না।নাহলে সত্যি সত্যি তার শাশুড়ির কথাটা সত্য হয়ে যেতে পারে।তুলি কষ্ট করে উঠে আস্তে আস্তে হাটতে থাকে।নির্জন রাস্তায় একটা মেয়ে হেটে চলেছে।
প্রায় ১০মিনিটের মতো হাটার পর হঠাৎ সামনে এসে দাঁড়ায় একটা কার।কার থেকে ছুটে আছে একটা ছায়ামূর্তি।এসেই জড়িয়ে ধরে তুলিকে।তুলি এখনো বুঝতে পারেনি কে এই ছায়া মূর্তিটার মালিক?কিছুক্ষন পরই সে বুঝতে পারে কে এই মানুষটা?কিন্তু হঠাৎ এই মানুষটা এতদিন পর কেন?
মানুষটা হলো তুলির মামাতো ভাই রিয়াজ।তুলির মা মারা যাওয়ার পর থেকে সবাই নিখোঁজ হয়ে গেছিল।আজ হঠাৎ করে বেড়োনোর মানে কি বুঝতে পারছে না তুলি?সে রিয়াজ ভাইয়ের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,
–‘এতদিন পর কোথা থেকে আগত হলে রিয়াজ ভাই?’
তুলির এই কথায় রিয়াজ চমকে ওঠে।তুলি সেটা ঢেড় বুঝতে পেরেছে।তাই আবার একই প্রশ্ন করে।রিয়াজ মুখে হাসি আনার চেষ্টা করে বলে,
–‘এইতো বিদেশে গিয়েছিলাম।গত কয়েকদিন আগে এসেছি।’
তুলি অবাক হয়ে তাকায় রিয়াজের দিকে।রিয়াজের চাহনিও তুলির দিকে।তুলির মা মারা যাওয়ার ২ কি ৩বছর হয়েছে।এর মধ্যে রিয়াজ বিদেশে গেছিল আবার ঘুরেও এসেছে।ব্যাপারটা তুলি বিশ্বাস করতে পারছে না।
‘এতরাতে তুই বাহিরে কেন?’কথাটা তুলিকে উদ্দেশ্য করে বলে রিয়াজ।তুলি বিক্ষিপ্ত গলায় বলে,
–‘এমনি।’
রিয়াজ তুলিকে জোর করে তাকে সব বলার জন্য।শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে তুলি গড়গড় করে সব বলতে শুরু করে।সাথে কান্না করতে থাকে।তবে সে একটা কথা বলে না যে,সে প্রেগন্যান্ট।রিয়াজ তাকে বলে যে,সে আজকে এখনি তাকে নিয়ে যাবে তার বাড়িতে।কি মনে করে যেন রাজি হয়ে যায় তুলি।হয়তো নিজের মানুষকে বিশ্বাস করে।সে রিয়াজের সাথে রওনা দেয় তাদের বাসার উদ্দেশ্য।
তাদের বাসার সামনে যেতেই তুলি বুঝে যায় সে কি ভুল করেছে।তার দিকে লোভী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ৪টা ছেলে।সাথে যোগ হয়েছে তার মামাতো ভাইও।বাঁচানোর মতো কেউ নেই এখন তাকে?হয়তো তার নামের সাথে যুক্ত হতে চলেছে তার শাশুড়িত দেয়া উপাধিটা।নয়তো অন্যকিছু,
{
•••”অভিভাবক হিসেবে আল্লাহই যতেষ্ট,সাহায্যকারী হিসেবেও আল্লাহই যতেষ্ট।”
——সূরা আন নিসা~৪৫
}
চলবে..
#উত্তর
#নিয়াজ_মুকিত
#প্রথম_পর্ব
{গল্পটা কি আপনাদের ভালো লেগেছে?আপনাদের মতামতের উপরই নির্ভর করবে পরের পার্ট দেয়া।আল্লাহ হাফেজ।}