#উত্তর
#নিয়াজ_মুকিত
#অন্তিম পর্ব
২.
রিয়াজ ভাইয়ের সাথে তার বাসায় এসে যে কি ভুল করেছে সেটা বুঝতে পারে তুলি।তার দিকে লোভী চোখে তাকিয়ে আছে ৫টি ছেলে।এখন হয়তো আর তার বাঁচার উপায় কম।পেটের মধ্যে সজ্জিত রয়েছে ৫মাসের বাচ্চা।মনে মনে আল্লাহকে ডাকছে তুলি।রিয়াজ ভাইয়ের ৪জন বন্ধুর ২জন ভিতরে চলে যায়।সাথে রিয়াজ ভাইও।আর তার বাকি দুজন বন্ধু তুলির দিকে এগোতে থাকে আস্তে আস্তে।তুলি হঠাৎ লক্ষ করে সেখানে একটা গাড়ি আসে।গাড়িটা তুলির অপরিচিত নয়।এটা বিধানদের গাড়ি।কিন্তু এখানে কেন?
গাড়ি থেকে নামে একটা মেয়ে।মুখ ঢাকা রয়েছে।তার পিছন পিছন নেমে আসে একটা মহিলা।তারও মুখ ঢাকা।অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছেনা।অবশেষে গাড়ি থেকে নামে একটি বাচ্চা ও একটি ছেলে।ছেলে আর বাচ্চাটাকে চিনতে বিন্দুমাত্র বেগ পেতে হয় না তুলিকে।চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে তার।বিধান আর একা।বিধান একাকে কোলে তুলে নেয়।তুলি চিল্লিয়ে তাদের ডাকতে চাইলে একটা ছেলে তার মুখটা চিপে ধরে।
বিধান ও বাকিরা সবাই ভিতরে প্রবেশ করে।তুলিকে তারা কেউই দেখতে পারেনি।ছেলেগুলো তুলিকে ধরে ভিতরে নিয়ে যায়।তারা তুলির সাথে কোনোপ্রকার জোর করছে না।তুলিকে আস্তে করে হাটিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।তুলিও বাধ্য হয়ে যাচ্ছে।সে কোনো প্রকার হাঙ্গামা করতে চাচ্ছে না।হাঙ্গামা করতে গিয়ে যদি পড়ে যায়,আর তাতে পেটের বাচ্চাটার ক্ষতি হতে পারে।
লোক গুলো তুলিকে নিয়ে গিয়ে একটা অন্ধকার ঘরে বসায়।চারদিকে অন্ধকার।খট করে দরজা বন্ধ করার আওয়াজ পায় সে।লোকগুলো তাকে বন্ধ করে রেখে গেছে।তুলি কিছুই দেখতে পারছে না।পড়ে যাওয়ার ভয়ে উঠে দাঁড়াতেও পারছে না।যদি পড়ে যায় পেটের বাচ্চাটার ক্ষতি হতে পারে।একটা মা কি পারে স্বইচ্ছাতে নিজের বাচ্চার ক্ষতি করতে?কখনো পারে না।তুলিও পারছে না।বসে বসে চোখের পানি ফেলছে সে।কিছুক্ষন পরই হয়তো তার নামের সাথে তার শাশুড়ির দেয়া উপাধিটা বসে যেতে পারে।তার আরেকটা ব্যাপার নিয়ে সবচেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে যে এসবের সাথে তার শশুড় বাসার সবাই জড়িত।
তুলি চোখের পানি ফেলতে ফেলতে অন্ধকারে নিজের পেটের দিকে তাকায়।দেখা যাচ্ছে না।তুলি বলতে শুরু করে,
–‘জানিনা তোকে এই পৃথিবীর আলো দেখাতে পারবো কিনা।তবে আমার শরিরে বিন্দু রক্ত থাকা পর্যন্ত শেষ চেষ্টা করেই যাবো।আল্লাহ সফল করার মালিক।তিনি সফল করবেই আমার বিশ্বাস।’
এই কথাগুলো তুলি তার পেটে বাচ্চাকে বলে।তুলির চোখের পানি কিছুতেই থামছে না।তুলি পানি থামানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করে চলেছে।কিন্তু কিছুতেই থামাতে পারছে না।
এই মুহুর্তে আবারো খট করে দরজা খোলার শব্দ হয়।আচমকা জ্বলে ওঠে ঘরের লাইট।তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে একটা ছেলে।হাতে খাবারের প্যাকেট।প্যাকেটটা দিতে দিতে বলে,
–‘শেষ খাবার খেয়ে নে।এরপর হয়তো খেতে পারিস নাকি জানিনা।খা!’
এই বলে লোকটা প্যাকেটটা রেখে লাইট অন করেই দরজা লাগিয়ে দিয়ে চলে যায়।তুলি এবার ঘরটা দেখতে থাকা।একটা ভাঙ্গা-চুরা ঘর।মনে হয় কতকাল থেকে অবহেলায় পড়ে রয়েছে ঘরটা।মাকড়সা জাল বুনেছে।তেলাপোকা উড়াউড়ি করছে।তুলি এবার প্যাকেটা নিয়ে খেতে শুরু করে।খুব ক্ষিধে লেগেছে।তাই তুলি তারাতারি খেতে শুরু করে।
খাওয়া শেষ হতেই তুলির চোখে ঘুম আসে।তুলি আস্তে করে সেই মেঝেতে বসে পড়ে।আস্তে আস্তে মাথাটা নামিয়ে সে শুয়ে পড়ে।নানান রকমের কথা তার মাথায় ঘুরছে।বিধানকে নিয়ে সব কথা।কিন্তু এখন ভেবে কি হবে?যা হবার হয়েই গেছে।চকিতে তুলির মনে পড়ে ডিভোর্স পেপারটার কথা।ডিভোর্স পেপারটাতে না দেখে সাইন করে দিয়েছি।এই কথাগুলো ভাবতে ভাবতে চোখ দুটো লেগে আসে তুলির।ঘুমিয়ে পড়ে সেই মেঝেতেই।
বিধান আর একা একটা চেয়ারে বসে আছে।বিধানকে খুব খুশি খুশি দেখাচ্ছে কিন্তু একাকে খুবই বিষন্ন দেখাচ্ছে।তার মন জুড়ে মা নামক বস্তুটা টহল দিচ্ছে।সদ্য ঘুম থেকে তুলে আনা হয়েছে তাকে।রুহি আর বিধানের মা ভিতরে আছে।কি কাজ করছে সেটা জানেনা একা।
এদিকে খট করে দরজা খোলার শব্দ হয়।সেই শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় তুলির।সম্পুর্ন ঘর অন্ধকার।কেউযে তার দিকে এগোচ্ছে সেটা ঢেড় বুঝতে পারছে সে।ভয়ে কলিজা শুকিয়ে গেছে।জীবনের শেষ মুহুর্তে এসে পৌঁছে গেছে মনে হয়।লোকটা এসে তুলির হাত ধরে ফেলে।তার চোখদুটো বেধে দেয়।তুলিকে ভয় দেখিয়ে বলে,
–‘চুপচাপ আস্তে আস্তে চল নাহলে অবস্তা খারাপ করে দিব।’
রুহি ভয়ে আস্তে আস্তে হাটতে শুরু করে।লোকটা তাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে এ সম্পর্কে তার বিন্দুমাত্র ধারণা নেই।আবার খট করে দরজা খোলার শব্দ হয়।তুলি যে নতুন কোনো রুমে প্রবেশ করেছে সেটাও বুঝতে পারে।নিশ্চয় পারফিউমের গন্ধে।এখানে বিভিন্ন পারফিউমের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।আস্তে আস্তে করে তার চোখের কাপড় সরে যেতে শুরু করে।তুলি চোখ খুলতেই চমকে ওঠে।সামনের দৃশ্য দেখে আনন্দে চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে।তার মেয়ে একা কান্না করতে করতে এসে জড়িয়ে ধরে তাকে।তুলিও কান্না করতে করতে জড়িয়ে ধরে।সম্পুর্ন রুম জুড়ে একটা শব্দ ভেসে উঠছে,
‘হ্যাপি বার্থডে টু ইউ’
তুলি চমকে ওঠে।আজকে তার জন্মদিন।কিন্তু বিধানরা সবাই এখানে কেন?তারা কেন আমার জন্মদিন পালন করতে আসবে?বিধান এসে তুলির সামনে হাটু্গেড়ে বসে রিং আঙ্গুলের সামনে ধরে বলে,
–‘তোমাকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছি বিপুল পরিমানে।এর ক্ষমা তুমি নাও করতে পারো।তবে জানো কি একজন বাবার কাছে সবচেয়ে খুশির সংবাদ হলো সে পুনরায় বাবা হতে চলেছে।তুমি যে ডাক্তারের কাছে পরিক্ষা করতে গেছিল সে আমার বন্ধু ছিল।সে তোমার আগেই আমাকে জানায়।জানো তখন খুশিতে আমি কান্না করে ফেলেছি।এত খুশির খবর আমি আমার জন্মে দ্বিতীয়বারের মতো পেলাম।ব্যাপারটাকে আলাদা ভাবে সেলিব্রেট করতে চাই।বানিয়ে ফেলি একটা কাগজ।সেখানে কিছুই লেখা ছিল না।আমি রাগে সাইন করে দেই যাতে তুমিও সাইন করে দেও।ভাবো আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে।তবে মনের মধ্যে আশংকা ছিল ধরা পড়ার।যদি তুমি কাগজটা পড়ে দেখতে।আমার কথামতোই রুহি ও মা তোমার সাথে এরকম ব্যবহার করেছে।আমি জানি রুহি তোমার সাথে আগে থেকে খারাপ ব্যবহাত করতো।তারও কারন আছে।তুমি রুহির প্রাণের ভাইকে ছিনিয়ে নিয়েছো তাই।তুমি সাইন করে দিয়ে চলে গেলে।তারপর আমি এইসব প্লান করি।আর আজকে তোমার জন্মদিন ছিল।পারলে আমাকে মাফ করে দিও।’
তুলি কান্না করতে করতে বিধানকে জড়িয়ে ধরে।২মিনিটের মতো জড়িয়ে ধরে থাকে।তারপর রুহি এসে জড়িয়ে ধরে ক্ষমা চায়।তুলি গিয়ে তার শাশুড়িকে সালাম করে।তার শাশুড়িও তার কাছে ক্ষমা চায়।তুলি বলে,সে সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছে।তারা জন্মদিনটা খুব ভালোভাবেই উদযাপন করে।
পরিশেষে একা তার মাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
–‘আম্মু আমি আমার ভাইকে কোলে নিতে চাই।’একার এরকম কথায় তুলি অবাক হয়।তুলি একাকে বলে,
–‘তুমি যদি তাকে কোলে নিতে যাও তাহলে আমাকে কোলে নিতে হবে যা তুমি পারবে না।’
সাথে সাথে বিধান তুলিকে কোলে নিয়ে বলে,
–‘একার কাজটা আমিই করলাম।’
সুখে শান্তিতে কাটতে থাকে তাদের পরবর্তি দিনগুলো।
সমাপ্ত..
একটা বাবা কতটা পরিমানে খুশি হয় তার সন্তান আসার দিন তা শুধু সেই জানে।এটা একটা গল্প ছিল।যার মাধ্যেমে আমি এই চেষ্টাটা করেছি।জানি ভালো হয়নি।আল্লাহ হাফেজ।ও