উপন্যাসের শেষ পাতায় তুমি পর্ব -৩৭+৩৮

#উপন্যাসের_শেষ_পাতায়_তুমি
#Writer_Tanisha_Akter_Tisha
#Part_37

কপি নিষিদ্ধ ❌

ওসমান তিশার চিৎকার শুনতে পেয়ে পিছনে ফিরে জেসমিনও ওসমানের দিকে তাকায়,
আতঙ্কিত হয়ে জোরে বলে,
ওসমান তিশা এখান থেকে পা পিছলে নিচে পরে গেছে।
ওর কথা শুনে সবাই ঐ দিকে ছুটে যায়।
ওসমান জোরে জোরে তিশা তিশা বলে চিৎকার করছে কিন্তু পাহাড়ের নিচ থেকে কোনো শব্দ আসছেনা, চারিদিকে ওসমানের কথাই ভেসে বেড়াচ্ছে,
ওসমানের চিৎকার বার বার বারি খেয়ে ফিরে আসছে,
ওসমান দু হাঁটু গেড়ে মাটিতে বসে পড়ে।
নিশি লক্ষ্য করলো সাইনবোর্ডটা উল্টো দিকে ঘুরিয়ে রাখা আছে,নিশি তা ঠিক করে সাইনবোর্ডের লেখাটা পড়ে বলে,
এখানে তো লিখা আছে,”D’a’n’g’e’r,এ পাশের মাটি অনেক নরম পা পিছলে নিচে পরে যেতে পারেন তাই এদিকে কেউ আসবেন না”।
তার মানে তিশা কি,

নিশি কথা শেষ হওয়ার আগেই জেসমিন বলে,
হ্যাঁ নিশি আপু তিশা এখান থেকে পা পিছলে নিচে পড়ে গেছে,তিশা হয়তো আর বেঁ’চে নেই।

জেসমিনের কথা শুনে ওসমান হুঙ্কার দিয়ে বলে,
জাস্ট সাট আপ জেসমিন কি যা তা বলছো আমার তিশার কিছুই হয়নি,কিছুই হয় নি,
কথাটা বলতে বলতে ওসমানের চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে।আয়েশা,অবান্তিকা চিৎকার করে কাঁদছে,ওমর,ওয়াহিদ ওদের সামলাতে পারছে না।নিশি,মায়রা,সামিহা,ইশরাত,আলিফা,রাবেয়া ওদের চোখেও পানি তিশা এই কদিনে সবার মন জয় করে ফেলেছে তিশা যে আর বেঁ’চে নেই তা ওরা মানতে পারছে না।ওয়াহিদ ওমর ওসমান নিরবে চোখের জল ফেলছে।রায়হান ইতোমধ্যে পু’লি’শকে কল করে সব কিছু বলেছে,পু’লি’শ আসছে এখানে।জেসমিন ওসমানের কাছে যায় মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে,ওসমানকে সান্ত্বনা দিতে দিতে বলে,
ওসমান কষ্ট পেয় না মানুষ তো আর সারাজীবন বেঁ’চে থাকে না,মানুষকে তো এই পৃথিবীর রংমহল ছেড়ে যেতেই হয়,তিশা খুব ভালো ছিল ওর মৃ’ত্যু আমরা মেনে নিতে পারছি না,প্লিজ ওসমান শক্ত হও,আমাদের তো তিশার লা’শও খুজতে হবে।

জেসমিনের কথার উত্তরে ওসমান কিছুই বলে না, ওসমান একদম স্তব্ধ হয়ে গেছে।
আজ সবার চোখে পানি একজন মানুষ সব গুলো মানুষকে কাঁদিয়ে গেল।হ্যাঁ কাঁদছে সবাই।কাঁদবে না কেন?সবাই যে তিশাকে অনেক ভালোবাসে তিশার এভাবে চলে যাওয়া কেউ মানতে পারছেনা।

হঠাৎ ওসমান তিশার কন্ঠ স্বর শুনতে পেল,ওসমান অবাক হয়ে বলে,”তিশা”।ওসমান বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়।ওর সাথে সাথে সবাইও উঠে দাঁড়ায়।

বাবা আমি তিশার কন্ঠস্বর শুনেছি।

কি বলছো ওসমান!

হ্যাঁ বাবা আমি তিশার কন্ঠস্বর শুনেছি।

“ওসমান” তিশা জোরে ডাক দেয়।
এবার তিশার কন্ঠ স্বর সবাই শুনতে পায়।

ওসমান ঐ জায়গা থেকে স্বরে শক্ত মাটি যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে পাহাড়ের নিচের দিকে ঝুঁকে দেখে পাহাড়ের গায়ে লেগে থাকা পাথর ধরে তিশা অনেক কষ্টে ঝুলে আছে।তিশার চোখ যায় ওসমানের দিকে,
ওসমান হেল্প মি,আমার খুব কষ্ট হচ্ছে ওসমান।

আমি আসছি জানপাখি।

ওসমান ওর বাবার কাছে যায়।
বাবা আমাদের তিশাকে বাঁচাতে হবে,ওর খুব কষ্ট হচ্ছে বাবা।

ওয়াহিদ কিছু বলবে তার পূর্বে পু’লি’শ চলে আসে।

অফিসার বলে,
ডক্টর রায়হান লা’শ কোথায়?

অফিসার আমাদের বউমা বেঁচে আছে।

কি বলছেন?

হ্যাঁ ও বেঁচে আছে।

ওদের কথার মাঝে ওসমানের চোখ যায় এক কন’স্টে’বলের উপর উনি হাতে মোটা দড়ি,ওসমান ওনার কাছ থেকে দড়িটা নিয়ে বাম পাশে থাকা বড় গাছটার সাথে বেঁধে ফেলে গাছটা খুব পুরোনো আর খুব মজবুত,দড়ির প্রথম অংশ গাছের সাথে বাঁধে আর শেষ অংশ নিজের কোমড়ের বাঁধে।
ওকে এসব করতে দেখে ওয়াহিদ বলে,
কি করছো ওসমান?

বাবা আমি নিচে যাবো তোমরা আমাকে আর তিশাকে দড়ির সাহায্য উপরে তুলবে।

অফিসার বলে,
মি.খান আপনার জন্য এটা খুব রি’স্কি হবে,একটু ধৈর্য ধরুন আমরা আপনার ওয়াইফকে বাঁ’চাচ্ছি।

নো অফিসার আমিই আমার ওয়াইফকে বাঁ’চাবো আপনারা শুধু একটু সাহায্য করবেন আমাকে।

নো মি.খান আপনি থামুন আমরা দেখছি কি করা যায়।

সবাই ওসমানকে নিচে যেতে মানা করছে কিন্তু ওসমান সবার কথা উপেক্ষা করে দঁড়ির সাহায্যে পাহাড়ের নিচে নামে,ওসমানের থেকে তিশা এখনো কিছুটা দুরে,
ওসমান আর এগোতে পারছেনা,তিশাও পারছেনা কারণ হাত ছেড়ে দিলেই পাহাড় থেকে একদম নিচে পরে যাবে।ওসমান এগোতে পারছেনা তাই ডান হাত বারিয়ে দিয়ে বলে,
জানপাখি আমার হাতটা ধরো।

আমার ভয় লাগছে ওসমান।

আমি আর এগোতে পারছিনা প্লিজ হাতটা ধরো।

আমি হাত সরালেই পরে যাবো আমার খুব ভয় লাগছে ওসমান।

প্লিজ হাতটা ধরো পরবে না তুমি।

না আমি পরে যাবো।

পরবেনা তুমি,ট্রাস্ট মি,প্লিজ হাতটা ধরো,প্লিজ বিশ্বাস করো আমাকে।

তোমাকে আমি বিশ্বাস করি।

তিশা পাথর থেকে এক হাত সরিয়ে অন্য হাত দিয়ে পাথর ধরে রেখেছে,ও ওসমানের হাত ধরতে পারছেনা,
তবুও চেষ্টা করছে,শেষমেশ অনেক চেষ্টা করে ওসমানের হাত প্রায় ধরে ফেলে কিন্তু ওর হাত ফসকে যায় ওর পরতে নিবে তখনই ওসমান ওর হাত ধরে ফেলে,টান দিয়ে নিজের সাথে জড়িয়ে নেয়,তিশা ওকে দুহাত দিয়ে আঁকড়ে ধরে,তিশা ভিষণ ভয় পেয়ে গিয়েছিল,ভয়ে ওর হাত পা কাপছে,ওসমান এক হাত দিয়ে তিশাকে ধরে রেখেছে আর অন্য হাত দিয়ে দড়ি ধরে রেখেছে,ওসমান জোরে বলে ওদের উপরে উঠাতে,পু’লি’শরা দড়ি টেনে ওদের উপরে উঠাচ্ছে,একা পু’লি’শরা পারছেনা দেখে ওমর নাহিদ আহাদ ওরাও দড়ি ধরে টানছে ওসমান তিশাও উপরে উঠার জন্য চেষ্টা করছে।ওরা সবাই দড়ি ধরে টেনে অনেক কষ্টে ওদের উপরে টেনে তুলে।অবান্তিকা ওদের জড়িয়ে ধরে,
আমার বাচ্চারা তোমরা ঠিক আছো তো?
তিশা বলে,
মামনি শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে,খুব দুর্বল লাগছে।

নিশি দ্রুত তিশাকে পানি খাইয়ে দেয়।
তিশা মাটিতে অবান্তিকার বুকে মাথা দিয়ে বসে আছে,তিশার সম্পূর্ণ শরীর কাঁপছে।অবান্তিকা ওকে শক্ত করে ধরে রেখেছে।তিশা ক্লান্ত চোখে ওসমানের দিকে তাকিয়ে আছে,ওসমানও ওর দিকে তাকিয়ে আছে সবার সামনে মন খুলে কিছু বলতেও পারছে
না,ওসমান চোখের ইশারায় ওকে শান্ত হতে বলে।
হঠাৎ তিশার চোখ পড়ে জেসমিনের উপর।
“মামনি আমি একটু উঠবো”।
তিশা বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়।
তিশা হেঁটে জেসমিনের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে জেসমিনের গাল “ঠাস” করে চ’ড় মা’রে।
জেসমিনসহ উপস্থিত সবাই চমকে উঠে।
জেসমিন চোখ তুলে তিশার দিকে তাকালে তিশা আবারও ওর বাম গালে “ঠাস” করে চ’ড় মে’রে বলে,
কেন ধাক্কা দিয়েছিলেন আমাকে,মা’রতে চেয়েছিলেন আমাকে?

তিশার কথা শুনে ওসমান অবাক হয়ে বলে,
কি! জেসমিন তোমাকে ধাক্কা দিয়েছে!

হ্যাঁ ওসমান,জেসমিন আপু আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিল।কেন করলেন আপু,সেদিন রাতে আপনার চোখের পানি দেখে আপনার কথা শুনে আমার মনে হয়েছে আপনি হয়তো ভালো হয়ে গেছেন নিজের ভুল বুঝতে পেরেছেন কিন্তু না আমি ভুল ছিলাম আপনি আমার সাথে মিথ্যা বলেছেন,আমি এ কদিন আপনাকে নিজের বড় বোনের মতো বিশ্বাস করেছি সম্মান করেছি কিন্তু আপনি কি করলেন এতদিন আমাদের সাথে নাটক করলেন ছি্।সবার মনে হয়েছিল আপনি কোনো না কোনো কারণে আমাদের বাসায় এসেছেন কিন্তু আমি সবাইকে বুঝিয়ে রেখেছি যে না জেসমিন আপু কোনো কিছু করতে আসেনি কেবল নিজের ভুলের জন্য মাফ চাইতে এসেছে।আজ বুঝলাম আপনি কেন এসেছেন আমাকে মা’রতে এসেছেন তাই না?

জেসমিন চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে একটা টু শব্দ করছে না।

কেন আপু আমি কি করেছি কেন আমাকে মা’রতে চেয়েছিলেন?আপনি কিছু বলতে চাইছেন না তো ঠিক আছে কিছু বলতেও হবে না আপনি এখান থেকে চলে যান আমি আপনাকে এক মুহূর্তও স’হ্য করতে পারছিনা প্লিজ চলে যান এখান থেকে।

রায়হান বলে,
বউমা ওকে পু’লি’শে দাও,অফিসার ওকে নিয়ে যান।

রায়হানের কথা শুনে জেসমিন ঘাবড়ে যায়,
অফিসার জেসমিনের হাতে হে’ন্ড’কাপ পড়াবে তার পূর্বেই তিশা বলে উঠে,
নো অফিসার থামুন,চাচ্চু আমি জেসমিন আপুকে জে’লে পাঠাতে চাইনা।

কেন বউমা?

চাচ্চু উনাকে এর আগেও জে’লে পাঠানো হয়েছিল কিন্তু উনি শুধরান নি তাই আমার মনে হয় এবারও উনাকে জে’লে পাঠিয়ে কোনো লাভ হবে।আপু আপনি আমার চোখের সামনে থেকে চলে যান,যান বলছি।
লাস্টের কথাটা তিশা জোড়ে বলে।
জেসমিন আর এক মুহূর্তও না দাঁড়িয়ে এখান থেকে চলে যায়।

ওসমান।

হ্যাঁ তিশা।

আমাকে বাসায় নিয়ে চলো আমার আর ভালো লাগছে না।
ওসমান তিশাকে কোলে তুলে নেয়।
ওরা সবাই পাহাড় থেকে নেমে আসে,পু’লি’শও চলে যায়,সবাই গাড়িতে উঠে বসে।
তিশাকে রায়হানদের বাসায় নিয়ে আসে,ওর হাত পা বাজেভাবে কেটে গেছে অনেক জায়গায় ছিলেও গেছে,
ওসমান ওকে রুমি নিয়ে যায়,তিশাকে গোসল করিয়ে দিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে দেয়,নিজেও গোসল করে নেয়,
ওসমান তিশার ট্রিটমেন্ট শুরু করে,যেহেতু রায়হানও ডক্টর সেহেতু ট্রিটমেন্ট করার সব সরঞ্জামই ছিল।ওসমান তিশার জ’খ’মে অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে দিয়ে ওকে ঘুমের ইনজেকশন দেয় এটা ওর ব্যাথা কমাতেও সাহায্য করবে।ওসমানদের বাসায় ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যায়,জেসমিন তখনই পাহাড় থেকে এসে ওর লাগেজ নিয়ে চলে যায় ও কোথায় গিয়েছে সেটা কেউ জানে না,ওসমানরা দুই তিন দিন এখানেই থাকবে কেনো না তিশার এই অবস্থায় জার্নি করাটা ঠিক হবে না আর তিশাকে এই অবস্থায় কেউ যেতেও দিবে না।

জেসমিন পাহাড় থেকে নেমে রায়হানদের বাড়ি থেকে ওর লাগেজ নিয়ে সোজা ঢাকা চলে আসে।

ওমরদের রুমে,
ওমর বেডের সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে,আয়েশা ওমরের বুকে মাথা দিয়ে বসে আছে,ওমর আয়েশার চুল হাত বুলাচ্ছে,
আর কেঁদো না মায়াবতী।

আয়েশা কাঁদতে কাঁদতে বলে,
আমি আজকে ভিষণ ভয় পেয়েছিলাম,তিশাকে হারানোর ভয়,আমার লাইফে তিশা না থাকলে আমি হয়তো এতো ভালো থাকতে পারতাম না।
ওমর চুপ করে শুনছে কিছু বলছেনা।আয়েশা আবারও বলে,
ছোটবেলায় এতিমখানায় যখন খাবার দেওয়া হতো প্রায় সময় অল্প খাবার দিতো যার ফলে খাওয়ার পরও পেটে ক্ষুধা থাকতো,আমি ক্ষুধা স’হ্য করতে পারি না তাই অনেক সময় তিশা নিজে না খেয়ে ওর খাবার আমাকে খেতে দিতো,আমরা যখন এতিমখানা থেকে চলে আসলাম তখন তিশাই বুদ্ধি করে চাকরি জোগাড় করে ফ্ল্যাট ভাড়া করে,ও না সব সময় আমাকে নিয়ে চিন্তা করতো আমি কিভাবে ভালো থাকবো আমাকে কিভাবে সুন্দর লাগবে সব কিছু ওর দ্বায়িত্ব ছিল,আমি যা চেয়েছি আমাকে তাই দিয়েছে দেখো ওর এক্সি’ডেন্ট হয়েছে সেই হসপিটালেই তোমার সাথে আমার পরিচয় হলো ফ্রেন্ডশিপ হলো আমাদের এই একসাথে পথ চলাতেও তিশা অবদান রয়েছে,আমাদের মধ্যে র’ক্তে’র সম্পর্ক নেই কিন্তু ও সব সময় বড় বোনের মতো আমাকে আগলে রেখেছে আমাকে এতোটা ভালোবেসেছে যে আমার মনেই হয়নি আমি এতিম।
ছোট বেলায় যখন মা বাবার জন্য কান্না করতাম তখন তিশা যত্ন সহকারে আমার চোখের জল মুছে দিতো আমাকে সান্ত্বনা দিতো,তিশা না থাকলে আমার কোনো অস্ত্বিত্বই থাকতো না,আমি না ওর কাছে ঋণী,ওর ঋণ
কখনো শোধ করতে পারবোনা,ও না সবাইকে খুব সহজে বিশ্বাস করে ফেলে আপন করে ফেলে,যে তিশা আমাকে এতোটা ভালোবেসেছে,সেই তিশাই আজ মৃ’ত্যু’র মুখে ছিল,ওর হায়াত ছিল তাই ও আমাদের কাছে ফিরে এসেছে,যখন ওকে ঐ অবস্থায় দেখেছি তখন না আমার ভিতরটা ফেঁ’টে যাচ্ছিল আমি তখন ওর জন্য কিছুই করতে পারিনি,কিছু না।

কষ্ট পেও না মায়াবতী আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া ভাবিকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে।

হুম,আমার জীবনে সবচেয়ে মূল্যবান ব্যক্তি তোমরা দুইজন,তোমরা দুইজন আমার পৃথিবী আমার জীবন আমার সব তোমাদের ছাড়া একমুহূর্তও বাঁ’চতে পারবোনা,তিশার বিপদ লেগেই আছে প্রথমে ঐ এক্সি’ডেন্টটা হলো তারপর নিহা আপু ওকে পানিতে ডুবিয়ে মা’রতে চাইলো,হৃদিকার বউভাতের অনুষ্ঠানেও ওর খাবারে বি’ষ মিশিয়ে ওকে মা’রতে চাইলো,আজ আবার জেসমিন আপু ওকে পাহাড় থেকে ফেলে মা’রতে চাইলো,আচ্ছা ওমর বলতে পারো কেন সব সময় ওকেই বিপদে পড়তে হয়?ও কি করেছে?কেন সবসময় ওকে সাফার করতে হয়,
বলোনা ওমর কেন হয় এমনটা।

শান্ত হও মায়াবতী সব ঠিক হয়ে যাবে,তুমি একটু ঘুমাও,ঘুমালে বেটার ফিল করবা,চোখ বন্ধ করো।

আয়েশা ওমরের কথা মতো চোখ বন্ধ করে ফেলে আর সেই বন্ধ চোখ থেকেই জল গড়িয়ে পড়ে।

চলবে কি?

[কেমন লেগেছে কমেন্টে জানাবেন,কোনো প্রকার ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]#উপন্যাসের_শেষ_পাতায়_তুমি
#Writer_Tanisha_Akter_Tisha
#Part_38

কপি নিষিদ্ধ ❌

রাতে সবাই একসাথে ডিনার করতে বসে,তিশা আর ওসমানের খাবার নিশি ওদের রুমে দিয়ে এসেছে।
ওসমান খাবার খায়নি খাবার টেবিলে উপর ঢেকে রেখেছে।ওসমান তিশার হাত ধরে বসে আছে।
তিশা আস্তে আস্তে চোখ খুলছে,চোখ খুলে দেখে ওসমান ওর হাত ধরে বসে আছে,ও হাতের ইশারায় ওসমানকে বেডে বসতে বলে,ওসমানও তাই করে,
তিশা আস্তে করে উঠে ওসমানের বুকে মাথা দিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে,ওসমানও তার জানপাখিকে জড়িয়ে ধরে।তিশার চোখ থেকে পানি পরছে ওসমান তা অনুভব করতে পারছে।তিশার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে,
জানপাখি তুমি সেই কখন থেকে কিছু খাওনি উঠো ফ্রেস হয়ে একটু খেয়ে নাও।

আমি কিছুক্ষণ এভাবে তোমার বুকের মাঝে থাকতে চাই।

ওসমান আর কিছু বলে না কেবল তিশার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
কিছুক্ষণ পর ওসমান তিশাকে কোলে তুলে ওয়াশরুমে নিয়ে হাত মুখ ধুইয়ে নিয়ে আসে,ওসমান তিশার হাত মুখ মুছিয়ে দিচ্ছে,তিশা বেডের সাথে হেলান দিয়ে বসে, ওসমান ওর পাশে বসে ওকে খাবার খাইয়ে দিচ্ছে।
তুমিও খাও।

আমি খেয়েছি জানপাখি।

ওসমান একদম মিথ্যে বলবে না,আমি জানি তুমি কিছু খাওনি,তুমি লোকমাটা মুখে দাও।

জানপাখি তুমি খাওনা।

ওহ ওসমান খেতে বলেছি খাও।

ওসমান কি আর তিশার কথা উপেক্ষা করতে পারে ও খাচ্ছে তিশাকেও খাইয়ে দিচ্ছে।
খাওয়া শেষে ওসমান প্লেট গুলো নিচে রেখে আসে।
বর্তমানে ঘরের লাইট নিভিয়ে ওসমানের বুকে মাথা দিয়ে তিশা শুইয়ে আছে।
ওসমান আজ আমি অনেক ভয় পেয়েছিলাম।

আমিও অনেক ভয় পেয়েছিলাম তোমাকে হারানোর ভয়।

আমি আগে মৃ’ত্যু’কে ভয় পেতাম না,ছোটবেলায় সবসময় চাইতাম আল্লাহ জেনো এই কষ্টের দুনিয়া থেকে আমায় মুক্তি দেয়,জানো ওসমান এতিম হয়ে বেঁচে থাকা অনেক কষ্টকর,ছোটবেলায় খুব কষ্ট হতো,
না ছিলো বাবা মা না ছিল ভাই বোন প্রতিটা পদে পদে নিজেকে অসহায় মনে হতো,কিন্তু আয়শাকে পেয়ে আমার একাকিত্ব একটু হলেও কাটে,ওকে সবসময় নিজের ছোট বোনের মতো ভালোবেসেছি,ও কষ্ট পাবে কখনো এমন কিছু করিনি,ওকে খুব ভালোবাসি,তোমরা দুজন আমার পৃথিবী,তোমাদেরকে আমি ভিষণ ভালোবাসি,আগে মৃ’ত্যু’র ভয় করতাম কিন্তু এখন ভয় হয় আমি অনেক ভয় পাই,আমি যে তোমাকে হারাতে চাই না তোমাকে নিয়ে অনেক বছর বাঁচতে চাই।

আমিও তোমার সাথে অনেক বছর বাঁচতে চাই,
তোমার সাথে বৃদ্ধ হতে চাই আমিও তোমাকে হারাতে চাই না,আজ যখন সবাই বলছিলো তুমি আর নেই তখন না বুকের বাম পাশটায় ভিষণ ব্যাথা অনুভব করি,
আমার কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছিল আমি তোমাকে বোঝাতে পারবো না আমার তখন কি অবস্থা হয়েছিল।তোমাকে ভিষণ ভালোবাসি জানপাখি ভিষণ ভালোবাসি।

আমি তোমার চিৎকার শুনতে পেয়েছিলাম কিন্তু তখন না আমার গলা দিয়ে কোনো আওয়াজ বের হচ্ছিল না, মনে হয়েছিলো কেউ আমার গলা চে’পে ধরে রেখেছে,
আমি তোমার ডাক শুনেও সারা দিতে পারিনি,সরি।

সরি বলছো কেন,আর তুমি সব কিছু ভুলে যাও,তুমি যে আমার কাছে ফিরে এসেছো আমার কাছে এটাই অনেক বড় পাওয়া,আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া।

আচ্ছা ওসমান সবসময় আমার সাথে কেন এমন হয়,
সেদিন আপুর চোখের পানি দেখে তার করা অপরাধ ভুলে তাকে আপন করে নিয়ে ছিলাম কিন্তু উনি কি করলেন আমাকে মা’রতে চাইলেন,কেন আমি তো কিছু করিনি তবুও কেন সবসময় আমাকেই সবার ভুলের মা’শুল দিতে হয়।ওনাকে বড় বোনের মতো সম্মান করেছি,কিন্তু তিনি তার সম্মান ধরে রাখতে পারেন নি,
আচ্ছা আমি এমন কেন?কেন সবসময় সবাইকে খুব সহজে বিশ্বাস করে ফেলি?

কারণ তোমার মন স্বচ্ছ,তুমি ভাবো সবাই তোমার মতো ভালো,কিন্তু না জানপাখি এতো সহজ সবাইকে বিশ্বাস করো না,শেষে তুমিই সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাবে।

পাচ্ছি তো,সবাই আমার বিশ্বাস ভা’ঙ্গু’ক সমস্যা নেই আমি কষ্ট করে হলেও স’হ্য করে নিব,কিন্তু ওসমান প্লিজ তুমি কখনো আমার বিশ্বাস ভে’ঙ্গনা,আমি স’হ্য করতে পারবো না আমি তো ম..

হুসসস আর কোনো কথা না,ঘুমিয়ে পরো,ইউ নিড রেস্ট,ঘুমাও জানপাখি ঘুমাও।
তিশা ওসমানের কথা মতো চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করে।
ওসমান তিশার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর মনে মনে বলছে,
তুমি জেসমিনকে ক্ষমা করে দিলেও আমি এতো সহজে ওকে ক্ষমা করবো,ওকে কঠিন শাস্তি দিব,জেসমিন তুমি আমার জানপাখিকে মা’রতে চেয়েছো তোমাকে কি করে শান্তিতে থাকতে দেই বলো।

ঢাকায়,
জেসমিন বর্তমানে হোটেলে আছে,ও বসে বসে সিহাবের জন্য অপেক্ষা করছে,কিছুক্ষণ পর ওর রুমের দরজায় কেউ নক করে,জেসমিন দরজা খুলে দেখে সিহাব দাঁড়িয়ে আছে,
আসো সিহাব।

সিহাব রেগে রুমের ভেতরে প্রবেশ করে,ওর চেহারায় রাগ স্পষ্ট।সিহাব রুমে আসতেই জেসমিন দরজা লাগিয়ে দেয়।
সিহাব রেগে বলে,
তুমি একটা কাজও ঠিক মতো করতে পারলে না।

আমি তো কাজটা করতেই চাইনি তবুও তোমার কথায় রাজি হয়েছি,এখন ও বেঁ’চে গেছে এতে আমি কি করবো,ওকে তো ধা’ক্কা দিয়েছিলাম ওর কপাল ভালো নাহলে এতো উপর থেকে পরেও ম’রেনি।

বুঝেছি কিন্তু এখন আমাদের অন্য কিছু ভাবতে হবে,
এবার যা করার আমিই করবো।
সিহাব রুম থেকে চলে যায়।

জেসমিন হতাশ হয়ে আপন মনে বলে,
সিহাব কেন এমন করছো,কেনো সবার সামনে আমাকে খারাপ হতে বাধ্য করছো।

সিলেটে,
পরদিন সকালে,
তিশা এখন কিছুটা সুস্থ আছে,শুধু হাতে পায়ে জখম গুলো সারতে সময় লাগবে।
তিশার রুমে বসে ভালো লাগছিলনা তাই ওসমানের সাথে নিচে নামে।
সবাই নাস্তা করতে বসে,ওসমান তিশাও চেয়ার টেনে বসে।তিশাকে নিচে আসতে দেখে সবাই খুশি হয়,কাল সবাই ভয় পেয়েছিল,ওরা সবাই ভেবে ছিল তিশা আর বেঁ’চে নেই,কিন্তু এখন তিশাকে সুস্থ দেখে সবার ভালো লাগছে।তিশার হাতে ব্যান্ডেজ করায় ও হাত দিয়ে খেতে পারবেনা তাই ওসমান ওকে খাইয়ে দিচ্ছে।যদিও সবার সামনে এভাবে খাইয়ে দাওয়ায় তিশা ভিষণ লজ্জা পাচ্ছে কিন্তু কিছু করার নেই ওসমানের হাতেই খেতে হবে।
খাওয়ার মাঝে রাসেদ বলে,
তিশা এখন কেমন আছো মা?

এখন কিছুটা ভালো আছি চাচ্চু।

তুমি সুস্থ না হওয়া অব্দি তোমরা সবাই এখানেই থাকছো ঠিক আছে।

ঠিক আছে চাচ্চু।

সবাই খাওয়া শেষ করে যার যার রুমে চলে যায়।

ওসমান তিশার হাতে পায়ে অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে দিচ্ছে।

ওসমান।

হুম।

আমরা বাসায় যাবো কবে?

৪/৫ দিন পর।

আমার এখানে আর ভালো লাগছে না চলো না বাসায় চলে যাই।

কেন জানপাখি তোমার তো সিলেট শহর ভালো লেগেছে তবে কেন চলে যেতে চাচ্ছো?

তখন ভালো লাগলেও এখন আর ভালো লাগছে না আমাকে বাসায় নিয়ে চলো।

আচ্ছা চাচ্চুর সাথে বলে দেখি।

আচ্ছা।

তিশাকে রুমে রেখে ওসমান রাসেদের রুমে যায়।
রাসেদের সাথে কথা বলে,রাসেদ তো কিছুতেই ওদের এক সপ্তাহ আগে যেতে দিবে না তবুও ওসমান ওনাকে অনেক করে বুঝানোর পর উনি রাজি হয়,ওসমানরা পরশুদিন চলে যাবে।

দুপুরে সবাই একসাথে লাঞ্চ করে নেয়।
খাবার টেবিলে ওসমান ওদের যাওয়ার খবর সবাইকে জানিয়ে দেয়।

আসরের নামাজ শেষ করে নিশি,সামিহা,ইশরাত,
মায়রা তিশার রুমে আসে,আয়েশা আগে থেকেই তিশার কাছে বসে আছে,ওসমান ওর ভাইদের নিয়ে বাহিরে গিয়েছে।নিশিরা তিশার কাছে আসে,
মায়রা বলে,
এখন কেমন আছো ভাবি?

এখন অনেকটাই ভালো আছি।

নিশি বলে,
তোমরা আরো কিছুদিন থাকো না।

না ভাবি আমরা আবার আসবো।

সামিহা বলে,
তোমাদের সাথে মিশে অনেক ভালো লেগেছে,
তোমরা আসলেই অনেক ভালো।

সামিহার কথায় তিশা আয়েশা মুচকি হাসে।

ইশরাত বলে,
জেসমিন আপুকে দেখে কতোটা ভালো মনে হয়েছিল,
ইভেন ওনার ব্যবহারও ভালো ছিল কিন্তু উনি যে ভাবির সাথে এমনটা করবে সেটা বুঝতে পারিনি।

তিশা বলে,
থাক না ইশরাত এসব কথা বাদ দাও।আসো আমরা কিছুক্ষণ আড্ডা দেই।

ওরা নানারকম কথা বলছে আর হাসাহাসি করছে।
ওরা সবাই একসাথে রান্নাঘরে যায় ডিনার রেডি করতে,
ওরা কাজ করছে আর তিশা বসে বসে ওদের রান্না দেখছে আর কথা বলছে।রান্না শেষে খাবার গুলো টেবিলে সাজিয়ে রাখে,ওসমানরাও বাহির থেকে চলে আসে,একসাথে সবাই মিলে ডিনার করে যার যার রুমে চলে যায়।
পরদিনও ভালো ভাবে কাটে।
আজ তিশারা চলে যাবে,ওরা সবাই একসাথে সকালের নাস্তাটা করে নেয়,একটু রেস্ট করে বেরিয়ে পরে সবাই সদর দরজায় দাঁড়িয়ে ওদের বিদায় জানায়,ওরা চলে যাবে তাই সবারই মন খারাপ,ওরা সবার সাথে কুশল বিনিময় করে গাড়িতে উঠে বসে,গাড়ি চলতে শুরু করে
ওরা লাঞ্চ রেস্টুরেন্টে থেকে করে নেয়,বাসায় আসতে আসতে সন্ধ্যা হয়ে যায়।সবাই টায়ার্ড ছিল তাই ডিনারও রেস্টুরেন্ট থেকে অর্ডার করে,খাবার চলে আসলে সবাই একসাথে খাবার খেয়ে রুমে যেয়ে ঘুমিয়ে পরে।

আজ এক সপ্তাহ হলো ওরা সিলেট থেকে ফিরেছে।
এখন তিশা সম্পূর্ণ সুস্থ,ওরা স্বাভাবিক ভাবে জীবন যাপন করছে ওরা জেসমিনের নাম ওদের স্মৃতির পাতা থেকে মুছে ফেলেছে।

আজ শুক্রবার,
সবাই একসাথে নাস্তা করে নেয়,গোসল করে রেডি হয়ে ওসমান ওমর ওয়াহিদ জুম্মার নামাজ পড়তে চলে যায়,
অবান্তিকা আয়েশা তিশা গল্প করছে আর দুপুরের খাবার রান্না করছে,রান্না শেষে গোসল করে ওরা যার যার রুমে যোহরের নামাজ আদায় করে।
নামাজ শেষ করে ওয়াহিদ ওসমান ওমর বাসায় চলে আসে সবাই একসাথে দুপুরের খাবারটা খেয়ে যার যার রুমে চলে যায়।
ওসমান বেডের সাথে হেলান দিয়ে ফোন চালাচ্ছে আর তিশাকে পর্যবেক্ষণ করছে,তিশা প্রথমে কার্বাড গুছালো তারপর সঁপিস গুলো মুছলো এখন আবার ড্রেসিংটেবিল গোছাচ্ছে মানে রুমে আসার পর থেকে এটা সেটা করেই চলছে আর ওকে দেখে ওসমান বোর হচ্ছে।ওসমানের মতে,আজ শুক্রবার বন্ধের দিন আজ তিশা ওসমানকে সময় দিবে ওর সাথে গল্প করবে ওকে ভালোবাসবে কিন্তু তা না করে উনি ঘর গোছাচ্ছে।ওসমান বিরক্ত হয়ে তিশাকে ডাক দেয়,
জানপাখি কি করছো?

চুড়ির আলনাটা পরিষ্কার করছি।

একটু এদিকে আসোনা।

আসছি।

তিশা হাত ধুয়ে,হাত মুছতে মুছতে আসে,
হ্যাঁ বলো তোমার কি লাগবে?

কাছে আসো।

তিশা ওর কাছে যায়।
হ্যাঁ বলো কি লাগবে?

তোমাকে লাগবে,
বলেই তিশা হাত ধরে হেঁচকা টান দিয়ে নিজের উপর ফেলে,হাত ধরে টান দেওয়ার পরপরই ওরা বি’ক’ট এক শব্দ শুনতে পেল।

চলবে কি?

[কেমন লেগেছে কমেন্টে জানাবেন,কোনো প্রকার ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here