উপন্যাসের শেষ পাতায় তুমি পর্ব -৪১+৪২

#উপন্যাসের_শেষ_পাতায়_তুমি
#Writer_Tanisha_Akter_Tisha
#Part_41

কপি নিষিদ্ধ ❌

আজ ১ মাস হলো ওসমান তিশার সাথে ঠিক মতো কথা বলে না,না তো ভালো মতো তাকায়,প্রয়োজন ছাড়া তিশার সাথে একটা কথাও বলে না,ওসমান এই
১ টি মাসের এক দিনও তিশাকে বুকে নিয়ে ঘুমায় নি,
না তো আগের মতো যত্ন করেছে,আগে ওদের মধ্যে কতো ভালোবাসা ছিল কিন্তু এখন আর তা নেই,
ওসমান আগে সময় পেলেই তিশাকে নিয়ে ঘুরতে বের হতো,কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে ওসমানের কাছে তিশার জন্য বিন্দু মাএ সময়ও নেই।
আগে তো মাঝরাতে তিশাকে সাজতে বলতো শুধু এক পলক দেখবে বলে।
আর এখন তিশা নিজ ইচ্ছেতে সাজলেও ওসমান ওর দিকে ফিরেও তাকায় না।আগে যখন তিশার খেতে ইচ্ছে করতো না তখন ওসমান ওকে যত্ন সহকারে খাইয়ে দিতো,আর এখন তিশা খেয়েছে কিনা সে খবর নেওয়ার প্রয়োজনও মনে করে না।
ওসমান যেন কেমন হয়ে গেছে,নিজের মধ্যে একটা আলাদা আবরণ নিয়ে চলে,প্রতিদিন অনেক রাত করে বাসায় ফেরে আবার তিশার ঘুম ভা’ঙার আগেই হসপিটালে চলে যায়,ওসমান তিশাকে ভীষণ রকমে ইগনোর করে মনে হয় যেন ওর লাইফে তিশা নামের কোনো অস্তিত্বই নেই।
ওসমানের এই রুপ তিশাকে ভীষণ ভাবাচ্ছে,প্রথম প্রথম স্বাভাবিক ভাবে নিলেও দিন যত বাড়ছে ওসমানের অবহেলাও ততো বাড়ছে,প্রথম প্রথম ভাবতো হসপিটালে কাজের অনেক চাপ থাকাতে ওসমান ওকে সময় দিতে পারছেনা,কিন্তু দিন যত বাড়ছে ততই ওর মনে হচ্ছে ওসমান ওকে ইচ্ছে করে ইগনোর করছে,কেনো না আগেও তো কাজের প্রেশার ছিল কই তখন তো ওসমান ওকে এভাবে ইগনোর করতো তবেও এখন কেনো এত ইগনোর করছে।
ওসমানের অবহেলা তিশা স’হ্য করতে পারছে না,
ওর ওসমানের প্রতি এক আকাশ পরিমাণ অভিমান জমেছে।

তিশার মনে অজানা এক ভয় জন্ম নিয়েছে ও এখন সারাক্ষণই চিন্তিত থাকে অজানা এক ভয় ওকে সর্বক্ষণ গ্রা’স করে যাচ্ছে,
ওসমানের হঠাৎ কি হয়েছে আমাকে এভাবে ইগনোর করছে কেন আমি কি কোন ভুল কিছু করেছি?কিন্তু আমার জানামতে আমি তো এমন কিছু করিনি যার জন্য ওসমান আমাকে অবহেলা করবে।
ওসমান কেন তুমি আমাকে এত অবহেলা করছো,
আমার যে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে,তোমার অবহেলা আমাকে ভীষণ ভাবে পো’ড়া’চ্ছে,কেন করছো এমন,কেন,কেন,
তিশার চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় জল গড়িয়ে পরছে।

তিশা সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে আয়েশা আর অবান্তিকার কাছে যায়,ও আয়েশার পাশের সোফায় বসে,
ওকে পাশে বসতে দেখে আয়েশা বলে,
আচ্ছা তিশা তোর কি হয়েছে বল তো,
কিছু দিন ধরে লক্ষ্য করছি তুই কেমন মন ম’রা হয়ে থাকিস না তো আমাদের সাথে আড্ডা দিস না তো আগের মতো মজা করিস,
কি হয়েছে তোর?

কই কি হবে,আমার কিছুই হয়নি।

অবান্তিকাও চিন্তিত স্বরে বলেন,
মামনি আমিও লক্ষ্য করেছি তুমি সারাদিন অন্যমনস্ক হয়ে থাকো,নিজের দিকে একবার তাকিয়ে দেখো টেনশন করতে করতে কতো টা শুকিয়ে গেছো,চোখের নিচে কালো দাগ বসে গেছে,তুমি না তো ঠিক মতো খাচ্ছো না তো ঠিক মতো ঘুমাচ্ছো,কিসের এত টেনশন তোমার,কি হয়েছে তোমার,বলো আমাকে।

আয়েশা বলে,
আচ্ছা তিশা ভাইয়ার সাথে কি কিছু হয়েছে,
ভাইয়াকে দেখি প্রতিদিন রাত করে বাসায় ফেরে আবার খুব সকালে বাসা থেকে বের হয়।

অবান্তিকা চিন্তিত স্বরে বলেন,
মামনি তোমাদের কি ঝগড়া হয়েছে?

ওহহো তোমরা কেন এতো চিন্তা করছো,
আমাদের মধ্যে কিছুই হয়নি সব ঠিক আছে,আর মামনি তোমার ছেলে আমাকে বলেছে তার হসপিটালে কাজ থাকে তাই ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যায়,
আমাদের ঝগড়া হয়নি আর তোমার কি মনে হয় তোমার ছেলে আমার সাথে ঝগড়া করবে?
তোমরা দু জন আমাদের নিয়ে এতো চিন্তা করো না তো।

তিশা কথা গুলো হাসিমুখে বললেও ওর মন অন্য কথা বলছে,
তোমাদের মিথ্যে বলার জন্য সরি,আমি চাইনা তোমরা আমাদের নিয়ে চিন্তা করো,আমাদের সমস্যা আমাদেরই মে’টাতে হবে।

অবান্তিকা নিশ্চিন্ত হয়ে বলেন,
কিছু না হলেই ভালো,আমি চাই আমার বাচ্চারা সব সময় হ্যাপি থাকুক।

তিশাও উওরে মিথ্যে হাসি দেয়।

তিশা বরাবরই চাপা স্বভাবের,নিজের দুঃখ কষ্ট কারো কাছে শেয়ার করতে পারে না,ওসমান ওর জীবনে আসার পর ও একমাএ ওসমানের সাথেই নিজের দুঃখ কষ্ট শেয়ার করতো,এখন তো ওসমানও ওকে পর করে দিয়েছে,এখন ওর এই কষ্ট ও কাকে বলবে?
ও কাউকে ওসমানের কথা বলতেও পারবে না কারণ এতে করে সবার সামনে ওসমান ছোট হয়ে যাবে,
আর ও চায় না ওসমানকে কারো সামনে ছোট করতে তাই নিজের কষ্ট গুলোকে বুকের মাঝে চে’পে মুখে মিথ্যে হাসি সাজিয়ে রেখেছে।

দুপুরে,

ওয়াহিদ ও ওমর হসপিটাল থেকে বাসায় চলে এসেছে,
কিন্তু ওসমান হসপিটাল থেকে বাসায় ফেরে নি।
ওরা সবাই ডাইনিং টেবিলে বসে আছে,

ওয়াহিদ ওমরকে উদ্দেশ্যে করে বলে,
ওমর ওসমান কোথায়?

আমরা তো একসাথেই বের হয়ে ছিলাম আমি তো জানি না ভাইয়া কোথায়।

তিশা বলে,
বাবা আমি কল করে দেখি ও কোথায় আছে।

হুম মামনি জিজ্ঞেস করো ও কোথায় আছে।

জ্বী।

তিশা রুমে চলে আসে,ওসমানকে কল করে কিন্তু ওসমান কল রিসিভ করে না,অনেক বার কল করার পরেও ওসমান কল রিসিভ করছেনা দেখে তিশা এসএমএস পাঠাতে নিবে তখনই ওর ফোনে ওসমানের এসএমএসে আসে,
এসএমএস এ লেখা,
কি সমস্যা বারবার কল দিচ্ছো কেনো?

তিশাও লিখে,
তুমি কলটা রিসিভ করো।

তিশা আবারও ওসমানকে কল দিল ওসমানও কল রিসিভ করে,
কি সমস্যা বারবার কল,মেসেজ দিচ্ছো কেন?

কোথায় তুমি,এখনো বাসায় আসোনি কেন?

একটু দূরে আছি আসতে লেট হবে।

ওহ,কোথায় আছো তুমি?

অাছি একটু দূরে।

কোথায় আছো সেটা তো বলো।

সবকিছুর কৈ’ফি’য়’ৎ কি তোমাকে দিতে হবে না কি?

ঝা’রি দিয়ে বলে,রাখো ফোন।
ওসমান কল কেটে দেয়।

ওসমানের ব্যবহারে তিশা খুব কষ্ট পায়,আজ প্রথম বার ওসমান ওর সাথে এতো রুড বিহেব করলো,তিশার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরে,কেউ দরজায় নক করাতে তিশা দ্রুত চোখের পানি মুছে ফেলে।
আয়েশা ওর রুমে আসে,
তিশা ভাইয়ার সাথে কথা বলেছিস?

হুম একটু দূরে আছে আসতে লেট হবে।

ওহ তো নিচে চল একসাথে লাঞ্চ করি।

তুই যা আমি খাবো না।

কেন?

এমনি ভালো লাগছে না।

আমি কি খাবার তোর রুমে দিয়ে যাব?

নাহ আমি খাবো না তুই নিচে যা আমি একটু ঘুমোবো।

আচ্ছা।
আয়েশা রুম থেকে চলে যায়,তিশা দরজা লাগিয়ে দেয়।তিশা ওয়াশরুমে যেয়ে ঝর্ণা ছেড়ে ঝর্ণার নিচে বসে পরে,পানির বিন্দু গুলো ওর সমগ্র শরীর ভিজয়ে দিচ্ছে,পানির সাথে তিশার চোখের জলও মিশে এক হয়ে বেয়ে পরছে,তিশার আজ খুব কষ্ট হচ্ছে,এমনটা তো হওয়ার কথা ছিলনা,তবে কেন হলো?
তিশা কাঁদতে কাঁদতে বলে,
ওসমান কেন এভাবে কষ্ট দিচ্ছো,কেন এভাবে অবহেলা করছো,কেন এতো রুড বিহেব করছো,কি করেছি আমি,ওসমান কি হয়েছে তোমার,তুমি তো এমন ছিলে না,তুমি তো সবসময় আমাকে ভালোবাসার চাদরে জড়িয়ে রাখতে তবে আজ কেন অবহেলার কাঁ’টাযুক্ত চাদরে মোড়াতে চাইছো,কোন অপরাধের অপরাধী করছো আমায়,তুমি আমাকে কষ্ট দিতে চাইছো তো ঠিক আছে দাও কষ্ট আমিও তোমার সমগ্র কষ্ট হাসি মুখে সয়ে নিবো,আমি দেখতে চাই তুমি কতো দিন আমার থেকে দূরে দূরে থাকতে পারো,তুমি যতো দূরে সরবে আমি তার চেয়েও বেশি তোমার কাছে আসবো,
দেখি অবহেলা আর ভালোবাসার খেলায় কে জয়ী হয়।
তিশা চোখ মুছে উঠে দাঁড়ায়,রুম থেকে জামা নিয়ে এসে ভেজে কাপড় পাল্টে নেয়।

তিশা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে চুল মুছছে,আর কি করা যায় তা ভাবছে,তিশা ভাবলো আজ রাতে ওসমানের
মুখোমুখি দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করবে কেন ওসমান ওর সাথে এমন বিহেব করছে।
অনেকক্ষণ ঝর্ণার নিচে বসে থাকায় তিশার মাথা ধরেছে তাই ও রুমে যেয়ে বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করে
মাথা ভার হয়ে থাকায় চোখে দ্রুতই ঘুম চলে আসে।

তিশার ঘুম ভাঙ্গে ৮ টার দিকে,
ও আয়েশা অবান্তিকার সাথে ডিনার রেডি করছে,
ওয়াহিদ ওমর ৯:৩০ চলে আসে,কিন্তু এবারও ওসমান ওদের সাথে বাসায় ফিরে না।সবাই খাবার খেতে বসলেও তিশা খেতে বসে না,ও পরে খাবে বলে রুমে চলে আসে,তিশা সারারুমে পায়চারী করছে,আর বার বার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে,তিশা কোনো রকমে সময় টুকু পার করছে,ও ওসমানের অপেক্ষায় আছে।

রাত ৩ টায়,

ওসমান ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাসায় ফিরে,ওর কাছে চাবি আছে,ও চাবি দিয়ে দরজার লক খুলে ভিতরে এসে দরজা ভালো মতো লক করে সিড়ি বেয়ে রুমে চলে যায়,ও রুমে এসে দেখে,

চলবে কি?

[কেমন লেগেছে কমেন্টে জানাবেন,কোনো প্রকার ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]#উপন্যাসের_শেষ_পাতায়_তুমি
#Writer_Tanisha_Akter_Tisha
#Part_42

কপি নিষিদ্ধ ❌

ও রুমে এসে দেখে তিশা বেডের সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে।তিশাকে এতো রাতে জেগে থাকতে দেখে ওসমান একটু অবাক হয়,তিশা বিছানা ছেড়ে উঠে কাবার্ড থেকে জামা কামড় নিয়ে ওসমানের কাছে আসে,
নাও গোসল করে আসো।

ওসমান ওর হাত থেকে জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়,একটু পর বের হয়ে দেখে তিশা বিছানার উপর খাবার ঢেকে রেখেছে,তিশা ওকে বের হতে দেখে ওর কাছে যায়,ওসমানের হাত থেকে টাওয়াল নিতে চাইলে,ওসমান এতে বাঁধা দেয়।ওসমান ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছছে।চুল মুছে বারান্দায় টাওয়াল রেখে আসে,রুমে এসে দেখে তিশা খাবারের উপর থেকে ঢাকনা সরাচ্ছে।
বিছানার উপরে খাবার রেখেছো কেনো?

তোমার জন্য এনেছি।

আমি ডিনার করেই এসেছি।

ওহ আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম,তুমি তো এখন আর আমাদের সাথে বসে খেতে চাও না এখন তো বাহির থেকে খেয়ে আসো।

এগুলো সরাও আমি ঘুমাবো।

তিশা ওসমানের কথা শুনে বিছানার উপর থেকে খাবার সরিয়ে ফেলে,তিশা ভেবে ছিল আজ দুজনে একসাথে বসে খাবার খাবে,খেতে খেতে কিছুক্ষণ কথা বলবে,কিন্তু তা তো আর হলো না।তিশা খাবার গুলো নিচে রেখে আসে,ওসমান পাশ ফিরে শুয়ে আছে।
তিশাও আর কিছু না বলে ওসমানের পাশে শুয়ে পরে।
তিশার ঘুম আসছে না,ও ভাবছে ওসমান কি জেগে আছে না কি ঘুমিয়ে পড়েছে।
তিশা আস্তে করে “ওসমান” বলে,কিন্তু উওরে ওসমান কিছু বলে না,ওসমানের সাড়া শব্দ না পেয়ে তিশা মনে করে ওসমান হয়তো ঘুমিয়ে গেছে।ওকে ঘুমাতে দেখে তিশাও নিরাশ হয়ে চোখ বন্ধ করে।

আজ তিনদিন ধরে তিশা ওসমানের জন্য রাত জাগে,
ওসমানের সাথে একটু কথা বলার জন্য তিশা চাতক পাখির মতো ছ’ট’ফ’ট করে,কিন্তু ওসমান সব সময় ওকে ইগনোর করে যাচ্ছে।আজ সকালেও তিশার ঘুম ভাঙ্গার আগেই ওসমান বাসা থেকে চলে যায়,তিশা ঘুম থেকে উঠে ওকে পাশে পায় না।তিশা আবারও নিরাশ হয়ে যায়।সকালে সবাই একসাথে বসে নাস্তা করলেও তিশা খাবার খেতে নিচে আসে না।
ওমর ওয়াহিদ নাস্তা করে হসপিটালে চলে যায়।

দুপুরে খাবারের টেবিলে সবাই একসাথে বসে খাবার খাচ্ছে,আজও ওসমান দুপুরে বাসায় ফিরেনি,তিশা এখন সবার সাথে খুব বেশি কথা বলে না আগের মতো দুষ্টুমিও করে না খুব চুপচাপ হয়ে গেছে,আর ওর এই পরিবর্তন সবার চোখেই পড়েছে।সবাই চুপচাপ খাবার খাচ্ছে,খাওয়ার মাঝে অবান্তিকার ফোন বেজে ওঠে।উনি কল রিসিভ করে,
হ্যালো বড় আপা কেমন আছো?

অবান্তিকার বড় বোন,
শরীরটা খুব বেশি ভালো নেই রে।

আপা কি হয়েছে তোমার?

কিছুদিন ধরে খুব অসুস্থ,আমার অবস্থা খুব বেশি ভালো না,তোকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।

আপা আমি কালই তোমার কাছে আসছি,
তুমি চিন্তা করো না।

আচ্ছা,ভালো থাকিস।

তুমিও ভালো থেকো।

অবান্তিকার বোন কল কেটে দেয়।
ওয়াহিদ অবান্তিকাকে জিজ্ঞেস করে,
বড় আপা কল করেছে?

হুম,আপা খুব অসুস্থ আমাকে দেখতে চাইছে,
আমি কি যাবো?

হ্যাঁ অবশ্যই যাবে,কাল ড্রাইভার তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আসবে,আর আমাকেও আজ চট্টগ্রাম যেতে হবে সেখানে ৩ দিন থাকবো,তুমিও নাহয় ৩ দিন আপা সাথে থেকো,তোমার সাথে সময় কাটিয়ে ওনারও ভালোলাগবে।

আচ্ছা।

ওমর ওয়াহিদকে বলে,
আমার ফ্রেন্ড তো ওর বোনের বিয়ের দাওয়াত দিয়েছে,
তোমাদের সবাইকেও যেতে বলেছে,ভাইয়েকে দাওয়াতের কথা বললাম ভাইয়া বললো যাবেনা,
তোমরাও বাসায় থাকবে না,এখন ওকে কি বলবো?

বিয়ে কবে?

কাল হলুদ পরশু বিয়ে,আমাদের আজ রাতেই ওদের বাসায় যেতে বলেছে।

একটা কাজ করো তুমি বউমাদের নিয়ে চলে যাও।

তিশা বলে,
বাবা আমি বিয়েতে যাবো না।

কেন মামনি?

বাবা যেখানে আপনার ছেলে যাবে না সেখানে আমি কি করে যাই বলুন,তার চেয়ে বরং ওরা দুজনই যাক।

আচ্ছা তুমি যখন যেতে চাইছো না ঠিক আছে ওমর তুমি আয়েশা মাকে নিয়ে যেও,আর তোমার বন্ধুকে বলে দিও কাজের কারণে আমরা আসতে পারিনি।

আচ্ছা,তুমিও তো আজ রাতেই চট্টগ্রামে যাবে তাইনা?

হ্যাঁ রাতের ফ্লাইটে যাবো।

তাহলে তো আমরা একসাথেই বের হতে পারি।

হুম।

ওরা খাবার শেষ করে রুমে চলে যায়।

রাতে ডিনার করে আয়েশা ওমর ওয়াহিদ বাসা থেকে বের হয়।

ওমর আয়েশা বিয়ে বাড়িতে পৌঁছে তিশাকে কল করে।
হ্যালো তিশা।

হুম বল।

আমরা বিয়ে বাড়িতে পৌঁছে গেছি।

ওহ,তোরা সাবধানে থাকিস।

হুম তুইও সাবধানে থাকিস।

আয়েশা তিশার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে দেয়,ওমর আয়েশাকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে,ওরা সবার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে,তারপর ওদের রুম দেখিয়ে দেওয়া হয়,ওরা ওদের রুমে চলে যায়,ক্লান্তা ছিল তাই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ে।

পরদিন সকালে,
অবান্তিকা ও তিশা নাস্তা করছে।নাস্তা শেষ করে ওরা টেবিল গুছিয়ে নেয়,অবান্তিকা একটু রেস্ট করে রেডি হয়ে রুম থেকে বের হয়ে তিশাকে নিচে আসতে বলে,
অবান্তিকার ডাক শুনে তিশা নিচে চলে আসে।অবান্তিকা ওকে জড়িয়ে ধরে,
মামনি আমি যাচ্ছি,বাসায় কিন্তু তুমি একা তাই সাবধানে থাকবে যদি কোনো সমস্যা তাহলে দ্রুত ওসমানকে কল করবে,ঠিক আছে।

আচ্ছা মামনি,তুমিও সাবধানে যেও আর পৌঁছে কল দিও।

আচ্ছা তুমিও সাবধানে থেকো।

অবান্তিকা বাসা থেকে বের হয়ে গাড়িতে উঠে বসে,
তিশা দরজা লাগিয়ে দিয়ে রুমে চলে আসে।

কিছুক্ষণ পর,
তিশা বসে বসে বোর হচ্ছিল,হঠাৎ ওর মাথায় একটা বুদ্ধি আসে,ও কাউকে কল করে,
আসসালামু ওয়ালাইকুম।
…….

আপনি কি ৮টায় আমার বাসায় আসতে পারবেন?
……

হ্যাঁ আপনাকে এড্রেস এসএমএস করে দিব।
………

হ্যাঁ কাজটা ঠিক মতো করতে পারবেন তো?
……..

ওকে আমি রাখছি তাহলে।

তিশা কল কেটে দিয়ে ফোনটা বিছানার উপর ছুড়ে মা’রে,আর বাঁকা হাসি দিয়ে বলে,
হাসবেন্ডজ্বী এত দিন নিজের কাছ থেকে আমাকে অনেক দূরে সরিয়ে রেখেছো কিন্তু আর না,তোমার সাথে একটু কথা বলার জন্য আমি ম’রিয়া হয়ে যাচ্ছি,
কিন্তু তুমি তা দেখেও না দেখার ভান করছো।
আমি জানতে চাই কেন তুমি এমন করছো,কেনো আমাদের মাঝে অদৃশ্য দেয়াল তৈরি করছো,আজ তো তোমাকে সব বলতেই হবে,আজ তুমি আমাকে সব প্রশ্নের উওর দিবে হাজার হলেও আমি তোমার স্ত্রী,
স্বামী কতোদিন আর স্ত্রীর কাছ থেকে দূরে সরে থাকবে,
স্ত্রীর ডাকে তাকে তো সারা দিতেই হবে,
আজ না তো তুমি আমার থেকে দূরে সরতে পারবে না তো আমি তোমায় দূরে সরতে দিবো।

তিশা রান্নাঘরে যেয়ে পাস্তা রান্না করে,গোসল করে এসে বসে বসে পাস্তা খাচ্ছে,খাওয়ার মাঝে অবান্তিকার কল আসে,
হ্যাঁ মামনি পৌঁছে গেছো?

হুম মাএই আসলাম।

ওহ খালামনি কেমন আছে?

খুব বেশি ভালো না,খুব আস্তে আস্তে কথা বলছেন।

ওহ।

তুমি কি করছো,খেয়েছো কিছু?

হুম খেতে খেতেই তোমার সাথে কথা বলছি।

ওহ তাহলে খাও,আমি রাখি।

আচ্ছা।

অবান্তিকা কল কেটে দেয়,তিশা খাওয়া শেষ করে,
কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে রেডি হয়ে শপিং করতে বের হয়,
শপিং মলে যেয়ে তিশার কিছুই পছন্দ হচ্ছে না,সব জিনিস ঘুরে ঘুরে দেখছে,শপিং করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে যায়,শপিং করে ৬:৫০ টার দিকে তিশা বাসায় আসে।৮ টার দিকে দুটো মেয়ে এসে ওদের কাজ করে চলে যায়।

রাত ১২:৪৫ বাজে,

ওসমান ক্লান্ত হয়ে হসপিটাল থেকে বের হয়।ও এখন সারাক্ষণ হসপিটালেই থাকে,ওসমানের আজ ড্রাইভ করতে ইচ্ছে করছেনা তাই ও টেক্সিতে করে বাসায় আসছে,বাসায় আসতে আসতে ১ টা বেজে যায়।
ও চাবি দিয়ে লক খুলে দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করে,পুরো বাড়ির লাইট অফ করা,ওসমান জানে তিশা ছাড়া বাসায় আর কেউ নেই,ওসমান সিড়ি বেয়ে উপরে উঠছে,ও রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে,
ওসমান দরজা খুলে দেখে,

চলবে কি?

[কেমন লেগেছে কমেন্টে জানাবেন,কোনো প্রকার ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here