উপন্যাসের শেষ পাতায় তুমি পর্ব -৪৩+৪৪

#উপন্যাসের_শেষ_পাতায়_তুমি
#Writer_Tanisha_Akter_Tisha
#Part_43

কপি নিষিদ্ধ ❌

ওসমান দরজা খুলে দেখে,রুমটা খুব সুন্দর করে ক্যান্ডেল,ফেয়রী লাইট,গোলাপের পাপড়ি দিয়ে
ডেকোরেট করা,ড্রেসিং টেবিলের উপর ও সেন্টার টেবিলের উপর কারুকাজ করা বোলের পানিতে ক্যান্ডেল আর গোলাপের পাপড়ি ভাসছে,বেডে গোলাপের পাপড়ি বিছিয়ে রেখেছে,রুমটা অসম্ভব সুন্দর লাগছে,কিন্তু রুমের কোথাও তিশা নেই,
ওসমান বারান্দায় যায় কিন্তু তিশা সেখানেও নেই,
হঠাৎ ওর কানে নুপুড়ের শব্দ এলো ও আস্তে করে বারান্দা থেকে রুমে আসে তিশাও বাহির। থেকে রুমে
আসে,তিশা আসতেই সাউন্ড বক্সে সফট মিউজিক বাজতে শুরু করে।
ওসমান পলকহীন চোখে তিশার অপরুপ মায়াজরানো মুখশ্রীতে তাকিয়ে আছে।
তিশা হট রেড কালারের জরজেট শাড়ী পরেছে,সাজ বলতে শুধু চোখে কাজল আর ঠোঁটে লিপস্টিক দিয়েছে
কানে দুল,হাতে কাঁচের চুড়ি ও পায়ে নুপুড় পড়েছে।
আজ এই সাজে তিশাকে একটু বেশিই আবেদনময়ী লাগছে।তিশার শরীর থেকে পারফিউমের স্মেইল আসছে।
কিন্তু তিশা তো কখনো পারফিউম দেয় না ইভেন পারফিউম পছন্দই করে না তবে আজ কেন দিল?
আর রুমটাই বা এতো সুন্দর করে সাজিয়েছে কেনো?
এই প্রশ্ন গুলো ওসমানের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।
পারফিউমের স্মেইলটা ওসমানকে তিশার দিকে খুব টানছে,ওসমান তিশাকে এভাবে দেখে এক অজানা ঘোরে চলে যাচ্ছে,নিজেকে দিশেহারা মনে হচ্ছে।

তিশা মুচকি হেসে ওসমানের কাছে আসে,
তিশা ওসমানের হাত থেকে ঘড়ি খুলে ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখে।

তিশা ওসমানের আর একটু কাছে যাবে তখনই ওসমান ওর কাছ থেকে দু কদম পিছিয়ে মুখে কা’ঠি’ন্য ভাব এনে বলে,
এসব কি তিশা?

আয়োজন।

আয়োজন!

হুম,তোমার জন্য করেছি,কেন তোমার পছন্দ হয়নি?

আমি কি তোমাকে এসব করতে বলেছি।

তুমি কেন বলবে আমি নিজ থেকে করতে পারি না বুঝি,
তিশা মুচকি হেসে ওসমানের একদম কাছে এসে গলা জড়িয়ে ধরে,কানে ফিসফিস করে বলে,
সেদিন আমাকে ভালোবাসার জন্য তুমি আমার থেকে অনুমিত চেয়েছিলে আজ আমি নিজ থেকে তোমাকে অনুমতি দিচ্ছি।

তিশার এভাবে জড়িয়ে ধরে ফিসফিস করে কথা বলায় ওসমান কেমন ঘোরে চলে যাচ্ছে,তিশা ওসমানের হাত নিজের কোমড়ে রাখে,তিশা ওসমানের ঠোঁটের দিকে এগোচ্ছে,তিশা চোখ বন্ধ করে ফেলে,ওদের ঠোঁট প্রায় ছুঁইছুঁই,তিশা ওসমানের ঠোঁটের সাথে ঠোঁট মিলাবে তখনই ওসমান ওর কাছ থেকে সরে এসে বলে,
আমার থেকে দূরে থাকো।

মানে!

তোমাকে আমি থেকে দূরে থাকতে বলেছি।

কিন্তু কেন?

কারণ আমার তোমাকে স’হ্য হয়না।

কি!

হ্যাঁ,আমার তোমাকে স’হ্য হয় না।

কি বলছো এসব,তুমি তো আমাকে ভালোবাসো।

আমি তোমাকে ভালোবাসি না ঘৃণা করি।

ওসমানের কথা শুনে তিশার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরে,ওসমান তিশার চোখে পানি দেখেও না দেখের ভান করে।তিশা কান্নাভেজা কণ্ঠে বলে,
তুমি আমার সাথে মজা করছো তাইনা।

তোমার কি মনে আমি মজা করার মুডে আছি,তুমি কখনই আমার ভালোবাসা ছিলে না,তুমি আমার জিদ ছিলে তোমাকে নিজের করে পাওয়াটা আমার জিদ ছিল ভালোবাসা নয়,তোমার রুপ দেখে পাগল হয়েছি,
তোমার রুপ ছিল একপ্রকার নে’শার মতো,তোমার রুপের নে’শায় আস’ক্ত ছিলাম আমি,আজ আমার নে’শা কে’টে গেছে,আমার তোমাকে আর প্রয়োজন নেই,তোমার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে।লিসেন তুমি আমার মোহ ছিলে ভালোবাসা নয়।আজ আমার মোহ কে’টে গেছে তাই আমার তোমাকে আর স’হ্য হচ্ছে না।তুমি আমার প্রয়োজন ছিলে প্রিয়জন নাহ।

আমি তোমার মোহ ছিলাম!
তোমার প্রয়োজন ছিলাম!
কিন্তু তুমি তো আমাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলে।

হুম মোহ ছিলে নাহলে কি তোমার মতো এতিম মেয়েকে বিয়ে করতাম নাকি,তুমি তো নিজেই জানো না তোমার বাবা মা কে,কি তোমার পরিচয়,তোমার মতো পিতৃ পরিচয় হীন মেয়েকে আমি কি না ভালোবেসে বিয়ে করবো,হাহা হাসালে।লিসেন তোমাকে আমি করুণা করে বিয়ে করেছি ভালোবেসে না,তোমার মত এতিম মেয়েকে করুণাই করা যায় ভালোবাসা যায় না।

ওসমানের বলা এক একটা কথা এক একটা শব্দ তিশার হৃদয়কে ক্ষ’তবি’ক্ষ’ত করে দিচ্ছে বুকটা কষ্টে ভারী হয়ে আসছে,চোখজুড়ে নেমে এসেছে অগণিত বাষ্পজল কণা তিশার পক্ষে নিজের কানকে বিশাস করা সম্ভব হচ্ছে না,কি করে পারছে ওসমান এভাবে ওর সাথে কথা বলতে,আচ্ছা ওসমান কি কোনো ঘোরে আছে?তিশার মনে হলো ওসমান হয়তো নিজের মধ্যে নেই,নিজের অজান্তেই হয়তো কথা গুলো বলছে।

তিশার চোখ থেকে পানি পরছে,নিজেকে সামলাতে পারছেনা কষ্টে ওর বুকটা ফে’টে যাচ্ছে,তবুও নিজেকে কিছুটা সামলে ওসমানের কাছে এসে ওসমানের গালে হাত রেখে কান্নাভেজা কন্ঠে বলে,
তোমার কি হয়েছে ওসমান,তুমি তো এমন ছিলে না, কেন তোমার দ’হনে এতো পো’ড়াচ্ছো আমায়,কেনো এভাবে তিলে তিলে মা’রছো,ওসমান আমার খুব কষ্ট হচ্ছে,তোমার কথাগুলো আমার বুকে তীরের মত বিঁ’ধছে,কেনো আমার সাথে এভাবে কথা বলছো আমি কি কোনো ভুল করেছি,কি করেছি আমি,বলোনা।
আচ্ছা ওসমান তুমি কি কোনো ব্যাপার নিয়ে চিন্তিত,
কিছু কি হয়েছে,বলো না এমন কিছু কি হয়েছে যা তুমি আমাকে বলতে পারছো না,কিছু কি লুকাচ্ছো আমার থেকে?

ওসমান নিজের গাল থেকে তিশার হাত সরিয়ে ফেলে,
তোমার থেকে আমি কিছুই লুকাচ্ছিনা,না তো কোনো কিছু নিয়ে চিন্তি করছি,আমি জাস্ট তোমাকে স’হ্য করতে পারছি না,তোমার মুখোমুখি হতে চাই না বলেই সকালে তোমার ঘুম ভা’ঙ্গার আগে চলে যাই আর রাতে দেরি করে বাসায় ফিরি আমি যে কেনো এমনটা করি তুমি কি এতোটুকুও বুঝোনা।

আমি জানি তুমি মিথ্যা বলছো,তুমি আমাকে ভালোবাসো।

আমি তোমাকে ভালোবাসি না ঘৃণা করি।

ওসমান আমি কি কোনো ভুল করেছি,কি ভুল করেছি বলোনা,কোন ভুলের শা’স্তি দিচ্ছো আমাকে।

তুমি কোনো ভুল করোনি,ভুল তো আমি করেছি তোমাকে বিয়ে করে,তোমাকে বিয়ে করে জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল করেছি,তিশা তোমাকে আমি কখনোই ভালোবাসিনি আর না কখনো ভালোবাসবো।

প্লিজ ওসমান এভাবে বলো না,তোমার কথা গুলো আমার বুকে তীরের মতো বিঁ’ধচ্ছে,আমার খুব কষ্ট হচ্ছে,কেন এভাবে তিলে তিলে মা’রছো,কেন এতো কষ্ট দিচ্ছো,এভাবে তিলে তিলে না মে’রে একবারেই মে’রে ফেলো না,
তিশা ওসমানের হাত দিয়ে নিজের গলা চেপে ধরে,
গলা টি’পে মে’রে ফেলে আমাকে,আমিই তো তোমার সমস্যা,আমাকে বিয়ে করে ভুল করেছো তো তাহলে কেনো ভুলের মাশুল দিচ্ছো মে’রে ফেলো আমায়,না থাকবো আমি না থাকবে কোনো সমস্যা।

কি করছো ছাড়ো আমার হাত।

আমাকে তুমি মে’রে ফেলো।

ওসমান ঝাড়া দিয়ে তিশার হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয়,
তুমি পা’গ’ল হয়ে গেছো,তোমাকে আমার আর কিচ্ছু বলার নেই,পা’গ’ল হয়ে গেছো তুমি।

ওসমান রেগে রুম থেকে বের হয়ে পাশের রুমে যেয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়।

তিশা হাঁটু গেড়ে মেঝেতে বসে পরে,ও চিৎকার করে কাঁদছে,
ওসমান মে’রে ফেলো আমাকে,মে’রে ফেলো,আমি আর পারছিনা তোমার অবহেলা স’হ্য করতে,আমি প্রতিটা মুহুর্ত তিলেতিলে শেষ হয়ে যাচ্ছি।তোমার প্রতিটা কথা আমার হৃদয়টাকে ক্ষ’ত’বি’ক্ষ’ত করে দিচ্ছে,আমি আর পারছিনা ওসমান,আর পারছি না।

তিশা চিৎকার করে কাঁদছে,আজ প্রথম বার কেউ ওকে এতটা নিচু করলো,আজ তিশার নিজেকে সব চেয়ে নিকৃ’ষ্ট ব্যাক্তি মনে হচ্ছে,নিজের ভালোবাসার মানুষ আজ ওকে অপমান করলো,ওর ভালোবাসাকে অপমান করলো,ওর মন ভা’ঙলো,তিশা এসবকিছু মেনে নিতে পারছেনা।
তিশার চিৎকার তিশার কান্না ওসমান শুনতে পাচ্ছে,
কিন্তু ওসমান শুনেও না শুনার ভান করে আছে।

আজ কেন ওসমান এতোটা নি’ষ্ঠুর হলো,কেনো তিশার সাথে এতো খারাপ বিহেব করলো,কেনো ওকে এভাবে কষ্ট দিলো,সত্যিই কি ওসমান এসব মন থেকে বলেছে?
সত্যিই কি ওসমান ওকে কখনোই ভালোবাসেনি?

তিশা কাঁদতে কাঁদতে একটা সময় জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পরে,হঠাৎ এক দমকা হাওয়া এসে ঘরে জ্বলে থাকা সমস্ত ক্যান্ডেল নিভিয়ে দেয়,গোলাপের পাপড়ি গুলো উড়ে চারি দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে আছে।
আজ এমনই এক দমকা হাওয়া তিশার সাজানো গোছানো সংসারটাকে নিমেষেই ত’ছ’ন’ছ করে দিল,
শেষ হয়ে গেল সবকিছু।

চলবে কি?

[কেমন লেগেছে কমেন্টে জানাবেন,কোনো প্রকার ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]#উপন্যাসের_শেষ_পাতায়_তুমি
#Writer_Tanisha_Akter_Tisha
#Part_44

কপি নিষিদ্ধ ❌

সকাল ৬ টা,
তিশা আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকায়,চোখ মেলে ও নিজেকে মেঝেতে আবিষ্কার করে,ও মাথা চেপে ধরে উঠে বসে,মাথায় তীব্র য’ন্ত্র’ণা হচ্ছে,রাতের কথা গুলো ভাবতেই আবারও চোখে জল চলে আসে,
ও চোখ মুছে ঘড়ির দিকে তাকায়,ছয়টা বাজে এখনো কি ওসমান বাসায় আছে নাকি চলে গেছে?
প্রশ্নটা তিশার মাথায় আসতেই ও বসা থেকে উঠে
দাঁড়ায়,দরজা খুলে বের হয়,পাশের রুমের দরজা ভিড়িয়ে রাখা ওসমান দরজা লক করে নি,তিশা আস্তে করে দরজা খুলে দেখে ওসমান ঘুমিয়ে আছে।
ও আস্তে আস্তে পা ফেলে বিছানায় যেয়ে বসে,
তিশা ওসমানের ঘুমন্ত মুখশ্রীতে তাকিয়ে আছে।
তিশা ওসমানকে দেখছে আর ভাবছে,
জানি না গতকাল সেসব তুমি মন থেকে বলেছিলে কি না,কাল তোমার কথায় অনেক কষ্ট পেয়েছি,বুকের মাঝে ক্ষ’ত তৈরি হয়েছে,জানি না এই ক্ষ’ত কখনো সারবে কি না।আমরা সবার আঘাত স’হ্য করতে পারলেও প্রিয় মানুষের দেওয়া আঘাত কখনো স’হ্য করতে পারি না,জানো আমার না নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছে তোমার সাথে কিভাবে চোখ মিলাবো বুঝতে পারছি না,গতকাল তুমি যেভাবে আমাকে অপমাণ করেছিলে আজ অব্দি কেউ কখনো আমায় এভাবে অপমাণ করে নি,তবুও দেখো না এতো অপমাণ করার পরও তোমার কাছে এসেছি,না এসেই বা কি করবো,
আলিজার বিয়ের দিন তো তোমায় প্রোমিশ করেছিলাম তোমার প্রতি আমার বিশ্বাস এত সহজে ভা’ঙ্গতে দিব না এতো সহজে তোমায় ছেড়ে যাবো না।
তোমাকে নিজের ভালোবাসার বাঁধনে বাঁধার জন্য একবার না হয় শেষ চেষ্ট করেই দেখি।

সকাল ৭ টার দিকে,
ওসমান ঘুমের মাঝে বুকে ভারী কিছু অনুভব করে,
ও আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে তিশা ওর বুকে মাথা দিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে।
ওসমান চটজলদি তিশাকে নিজের বুকের উপর থেকে সরিয়ে দেয়।ওসমান রেগে বলে,
তুমি কেন এই রুমে এসেছো,আর আমাকে জড়িয়ে ধরেছে কোন সাহসে।

তিশা মুচকি হেসে বলে,
ভালোবাসার সাহসে জড়িয়ে ধরেছি,আর বাড়িটা তো আমার শ্বশুর বাবার তাই আমি যখন যেখানে ইচ্ছে সেখানে যেতে পারি।

আমি না তোমাকে কাল বলেছি আমার থেকে দূরে থাকতে,আমার তোমাকে জাস্ট স’হ্য হয় না।

তিশা ওসমানের কাছে এসে ওর টি শার্টের কলার চেপে ধরে,নিজের একদম কাছে এনে বলে,
তোমার কি মনে হয় তুমি এসব বলবে আর আমি চুপ করে মুখ বুঝে মেনে নিব?নো মিস্টার এটা হবে না,আমি এতোটাও দূর্বল নই,তুমি কাল আমাকে যা বলেছো আমি সে সব মুখ বুঝে হজম করে নিয়েছি,অবশ্য তুমি যা বলেছো ঠিকই তো বলেছো আমি এতিম,আমি জানি না আমার বাবা মা কে,কি আমার পরিচয়।
কিন্তু তুমি হয়তো ভুলে গেছো আমি তোমার স্ত্রী,
আমি তোমার স্ত্রী এটাই আমার পরিচয়।তুমি আমার থেকে দূরে সরতে চাইছো তো আমিও দেখবো তুমি আমার থেকে কিভাবে দূরে সরে থাকো,তোমার প্রতি আমার বিশ্বাস এতোটাও ঠুনকো না যে তুমি দুটো কথা বলবে আর আমি তোমাকে ছেড়ে চলে যাবো।
ভালোবাসেছি তোমাকে,এতো সহজে তো তোমাকে হারাতে দিবো না,তোমাকে আমি আমার ভালোবাসার বাঁধনে বেঁধে রাখবো।

হঠাৎই তিশা ওসমানের ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দেয়।
তিশা মুচকি হেসে বলে,
নিয়ে নিলাম মর্নিং কিস,এখন যাও ফ্রেস হয়ে আসো,
আমি তোমার জন্য নাস্তা বানিয়ে আনছি।
তিশা মুচকি হেসে রুম থেকে চলে যায়।

ওসমান থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে,এতো তাড়াতাড়ি সব কিছু হয়েছে যে ও কিছু বুঝতেই পারে নি।
আজ ও তিশার নতুন রুপ দেখলো,ও তো ভেবে ছিল ওর কথা শুনে তিশা ভে’ঙ্গে পরবে,কিন্তু তিশা ওকে ভুল প্রমাণ করে দিল।

তিশা দ্রুত রান্না ঘরে এসে বুক ভরে শ্বাস নেয়,
এতক্ষণ অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে ওসমানের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলেছে,
আরেকটু হলেই দম আটকে ম’রে যেতাম,উফ।
হাসবেন্ডজ্বী এখন দেখবে তোমার জানপাখি কিভাবে তোমাকে তার আঁচলে বেঁধে রাখে।
তুমি কি ভেবেছিলে তিশা কান্নাকাটি করে চুপ করে সব কিছু মুখ বুঝে মেনে নিবে?
উহুম একদম না।তুমি আমাকে এখনো চিনতে পারো নি
আমি এতটাও দূর্বল মেয়ে না,একা একা এতটা বছর সংগ্রাম করেছি,জীবনে অনেক বাঁধা এসেছে কিন্তু কখনো ভে’ঙ্গে পরিনি,আজও তার ব্যাতিক্রম হবে না,
আমি জানতে চাই কি কারণে তুমি এমন করছো,
কি হয়েছে এই এক মাসে যার জন্য তুমি আমার সাথে এতটা খারাপ ব্যবহার করছো,আমি জানতে চাই।

তিশা মাথা থেকে সমস্ত চিন্তা ঝেড়ে ফেলে,চোখে মুখে পানি ছিটা দেয়,এখনো অব্দি রাতের পোশাকই পরে আছে,তিশা ভাবছে কম সময়ের মধ্যে কি বানাবে,আর
ওসমান কোন খাবারটা পছন্দ করবে।
এসব চিন্তা করতে করতে ওর মাথায় আসে আলু পরোটা বানানোর কথা,ওসমান আলু পরোটা খুব পছন্দ করে,একবার তো রাত ৩ টায় তিশাকে আলু পরোটা বানাতে বলেছিল।
তিশা ভাবলো আলু পরোটাই বানাবে এতে বেশি সময়ও লাগবে না,ওসমানেরও পছন্দ হবে,যেই ভাবা সেই কাজ
ও আটা সিদ্ধ করতে এক চুলায় একটা পাএে একটু পানি নিয়ে তা গরম করতে দেয়,আলু ধুয়ে অন্য চুলায় আলু সিদ্ধ করতে দেয়।ও দ্রুত রুমে যেয়ে দেখে ওসমান রুমে নেই ওয়াশরুম থেকে পানির শব্দ আসছে তিশা বুঝতে পারে ওসমান গোসল করছে।
তিশা আবারও নিচে চলে যায়,ও যত দ্রুত সম্ভব পরোটা বানাচ্ছে,পরোটা বানানো শেষে টেবিলে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখে।
ওসমানও সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামে।
তিশা ওকে নামতে দেখে বলে,
নাস্তা রেডি খেতে বসো।

মুড নেই খাবো না।

বললেই হলো নাকি আমি এত কষ্ট করে তোমার জন্য রান্না করেছি আর তুমি না খেয়েই চল যাবে।

আমি কি তোমাকে রান্না করতে বলেছি।

তোমার বলতে হবে কেন।

ওসমান আর কথা না বারিয়ে সামনের দিকে হাটা শুরু করে,তিশাও ওর পেছন পেছন যায়,ওসমান পকেট থেকে চাবি বের করে লক খুলতে নিবে তখনই তিশা ওর হাত থেকে ছো মেড়ে চাবিটা নিয়ে নিজের কোমড়ে গুঁজে ফেলে।
ওর কাজে ওসমান রেগে যায়,
এসব কি তিশা,চাবি দাও।

কোমড়েই গোঁজা আছে,নাও।

ওসমান হাত বারিয়েও হাত সরিয়ে ফেলে।
তা দেখে তিশা মুচকি হেসে বলে,
আমি জানি তুমি পারবে না,চাবি নিতে হলে তো আমার কোমড় ছুঁতে হবে আর তুমি তো আমাকে স্পর্শ করবে না তাই আমি যা বলছি মেনে নাও,চুপচাপ নাস্তাটা করে ফেলো।

ওসমান উওরে কিছু না বলে ডাইনিং টেবিলের কাছে যেয়ে চেয়ারে বসে পরে,তিশা ওর কাছে যেয়ে ওর প্লেটে পরোটা দেয়।
বেশি সময় ছিল না তাই অল্প সময়ে আলুর পরোটা বানিয়ে দিলাম,খেয়ে বলো তো কেমন হয়েছে।

ওসমান কথাও বলছে না খাচ্ছেও না।

কি হলো খাচ্ছো না কেন?
ওহ তুমি আমার হাতে খেতে চাও,এটা তো বলেই পারো
ওয়েট আমিই খাইয়ে দিচ্ছি।

তিশা পরোটা একটু ছিঁড়ে ওসমানের মুখের সামনে ধরে
কিন্তু ওসমান খাচ্ছে না।

কি হলো হা করো।

ওসমান হা করছে না দেখে তিশা ওর মুখ চেপে ধরে পরোটা মুখে পুড়ে দেয়।
শুনো তোমাকে ভালোবাসি কিন্তু এর মানে এই না যে তোমার সব কথা সব কাজ মেনে নিব,আমি তোমার স্ত্রী,তোমার ভালো মন্দের খবর আমাকেই রাখতে হবে,
আজ বলে দিচ্ছি তুমি আবারও সবার সাথে বসে ব্রেকফাস্ট,লান্চ,ডিনার করবে।তুমি যদি বাসায় এসে না খাও তাহলে আমি তোমার হসপিটালে চলে যাবো।এখন থেকে তোমার আমার কথা মানতে হবে,এতো দিন তোমার অবহেলা স’হ্য করেছি কিন্তু আর না।

ওসমান এবারও চুপ কিছুই বলছেনা,তিশা ওকে খাইয়ে দিচ্ছে,খাওয়া শেষে তিশা দরজার লক খুলে ওসমানের হাতে চাবি ধরিয়ে দেয়,আর গালে অালতো করে ঠোঁট ছোঁয়ায়।
বায় সাবধানে যেও।

ওসমান বাসা থেকে বের হয়,তিশাও দরজা লাগিয়ে ওর রুমে চলে আসে।তিশা রুমে আসতেই ওর মন খারাপ হয়ে যায় গতকাল কতো আশা নিয়ে রুমটা সাজিয়ে ছিল কিন্তু ওসমান এক নিমিষেই ওর মন ভে’ঙ্গে দিল,
ও আর এসব কথা না ভেবে রুম পরিষ্কার করা শুরু করে দিল।বেশ কিছুক্ষণ পর রুম পরিষ্কার করে,গোসল করে ফেলে।
মাথা টাওয়াল পেঁচিয়ে রান্না যায়,তিশা জানে ওসমান আজও দুপুরে বাসায় আসবে না তাই ও ভেবেছে রান্না করে হসপিটালে নিয়ে যাবে।
যেই ভাবা সেই কাজ,তিশা রান্না করতে শুরু করে,
রান্না করতে করতে আযান দিয়ে দেয়,ও খাবার গুলো বক্সে বেড়ে রুমে যেয়ে নামাজ পড়ে ফেলে।
নামাজ শেষ করে তিশা খুশি মনে রেডি হচ্ছে।
আজ কফি কালারের শাড়ী পরেছে,সুন্দর করে রেডি হয়ে নিচে এসে খাবার গুলো নিয়ে দরজা লক করে গাড়িতে উঠে বসে,ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দেয়,
ওরা হসপিটালের দিকে যাচ্ছে,তিশার মধ্যে একটা আলাদা ভালো লাগা কাজ করছে,ওরা ওসমানদের হসপিটালে চলে আসে,তিশা গাড়ি থেকে নেমে আসে,
তিশা হেটে হেটে হসপিটালের ভিতরে প্রবেশ করে এখন লান্চ আওয়ার কেউ কেউ বাসায় চলে গেছে কেউ কেউ খাবার নিয়ে এসেছে,তিশা হেটে ওসমানের কেবিনের সামনে যায়,ও নক না করেই দরজা খুলে দেখে,

চলবে কি?

[কেমন লেগেছে কমেন্টে জানাবেন,কোনো প্রকার ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here