#উপন্যাসের_শেষ_পাতায়_তুমি
#Writer_Tanisha_Akter_Tisha
#Part_47
কপি নিষিদ্ধ ❌
ওসমান ওদের কাছে এসে টি টেবিলের উপর একটা কাগজ রাখে,ওরা সবাই কাগজটার দিকে তাকায়।
ওয়াহিদ ভ্রু কুঁচকে ওসমানকে জিগ্যেস করে,
ওসমান এটা কিসের পেপার?
ডিভোর্স পেপার।
কি!
হ্যাঁ তিশা আর আমার ডিভোর্স পেপার।
কি!
সবাই বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়।
তিশা দ্রুত পেপার টা হাতে নেয়,পেপারের লেখা গুলো পড়ে তিশা বাকরুদ্ধ হয়ে যায়।
ভাইয়া কি বলো এই সব তোমার আর ভাবির ডিভোর্স মানে?
হ্যাঁ ওমর আমাদের লিগ্যালি ডিভোর্স হয়ে গেছে।
তিশা হেঁটে ওসমানের সামনে যেয়ে বলে,
ওসমান তুমি কি পাগল হয়ে গেছো,কি বলছো এইসব আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে মানে?
আমি তো এই ডিভোর্সের ব্যাপারে কিছুই জানি না,
ইভেন আমি তো ডিভোর্স পেপারে সাইনও করি নি।
তিশা দেখো পেপারে স্পষ্ট তোমার সাইন দেখা যাচ্ছে আর তুমি বলছো তুমি সাইন করো নি,
সাইনটা কি তোমার না?
হ্যাঁ সাইনটা হুবুহু আমার সাইনের মতো কিন্তু আমি তো সাইন করি নি,আমি তো এ সম্পর্কে কিছুই জানি না,
আর আমি কেনো তোমাকে ডিভোর্স দিব।
এতো কিছু তো আমি জানি না,সাইনটা যেহেতু তোমার সেহেতু আমাদের লিগ্যালি ডিভোর্স হয়েছে,এখন এটা তুমি মানো বা না মানো এটা সম্পূর্ণ তোমার ব্যাপার বাট আমাদের লিগ্যালি ডিভোর্স হয়েছে।
তোমাকে তো আমি বলছি সাইনটা আমার না তবুও তুমি কেনো এসব বলছো,ওসমান কেনো মিথ্যে বলছো?
তিশা এখন তো এসব বলে লাভ নেই,আর আমি মিথ্যে বলছি না,আমাদের ডির্ভোস হয়ে গেছে।
ওসমানের কথা শুনে ওয়াহিদ রেগে বলে,
ওসমান অনেকক্ষণ ধরে তোমার কথা শুনছি,তুমি কি বলছো এসব,কিসের ডির্ভোস,যেখানে মামনি বলছে ও সাইন করেনি সেখানে আবার কিসের ডির্ভোস,
আমরা কেউই তো এই ডিভোর্সের ব্যাপারে কিছু জানি না,আর ধরে নিলাম মামনি সাইন করেছি,কিন্তু তুমি কেন সাইন করেছো,তুমি না মামনিকে ভালোবাসাে তবে কেন সাইন করলে ডিভোর্স পেপারে?
কারণ তিশাকে আমি ভালোবাসি না ঘৃণা করি,
আমি আর ওর সাথে এক ছাদের নিচে থাকতে পারবো না।
ওয়াহিদ রেগে বলে,
কেন পারবে না,কেমন ভালোবাসলে তুমি তোমাদের বিয়ের মাএ কিছুদিন হয়েছে আর এতেই তিশার প্রতি তোমার ভালোবাসা ঘৃনায় পরিবর্তন হয়ে গেল।
বাবা আমি এতো কথা বলতে চাই না,আমার জীবনের সিদ্ধান্ত আমাকেই নিতে দাও,আমার মনে হয়েছে তোমাদের ব্যাপারটা জানানো উচিৎ তাই জানিয়েছি।আর হ্যাঁ আরেকটা কথা আমি পাঁচ দিনের মধ্যে বিয়ে করবো।
কি বলছো এসব তুমি বিয়ে করবে মানে!
তোমার কি মনে হয় তুমি যাকে বিয়ে করবে আমরা তাকে মেনে নিব?
কখনো না,আমাদের বাড়ির বড় বউ তিশা ছিল তিশাই থাকবে।
বাবা আমি তোমার সিদ্ধান্ত চাচ্ছি না,জাস্ট জানিয়ে রাখলাম।
ওসমানের কথায় আয়েশা,ওমর,অবান্তিকা,ওয়াহিদের
রাগ উঠে যায়,ওরা ভাবতে পারে নি ওসমান এই কথা বলবে।
অবান্তিকা রেগে ওসমানকে জিগ্যেস করে,
তুমি কাকে বিয়ে করবে?
ওসমান মুচকি হেসে সদর দরজার দিকে তাকিয়ে একটু জোরে বলে,”জেসমিন ভেতরে আসো”।
জেসমিন ওসমানের ডাক শুনে সদর দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে,জেসমিন মুচকি হেঁসে হেটে ওদের সামনে আসে,ওসমান মুচকি হেসে জেসমিনের হাত ধরে বলে,
আমি জেসমিনকে বিয়ে করবো,আমি জেসমিনকে ভালোবাসি,আর মাএ পাঁচ দিন পর জেসমিন পুরোপুরি আমার হয়ে যাবে,আমাদের ভালোবাসা পুরণতা পাবে।
ওসমানের কথা শেষ হতেই তিশা ওসমানের গালে স্ব জোরে চ’ড় মা’রে।
ওসমানসহ উপস্থিত সবাই অবাক হয় তিশা এমনটা করবে কেউ ভেবতেও পারে নি।
তিশা ওসমানের কলার চেপে ধরে দাঁতে দাঁত কামড়ে বলে,
কি বললে,তুমি আপুকে বিয়ে করবে,তাকে ভালোবাসাে,
তোমাদের ভালোবাসা পুরণতা পাবে,
হাহ্ তোমার কি মনে হয় আমি এমনটা হতে দিবো?
কখনো না,তোমার এই স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে যাবে।
আমি এই বাড়ির বড় বউ ছিলাম আমিই থাকবো।
দু মাস ধরে তোমার অবহেলা স’হ্য করছি,তোমার দেওয়া কষ্টগুলো মুখ বুঝে মেনে নিয়েছি,একটা টু
শব্দও করিনি,আর তুমি আমার ধৈর্য্যকে আমার দূর্বলতা ভেবেছো,তোমাকে ভালোবেসে সবকিছু স’হ্য করেছি,কিন্তু আজ তুমি আমার স’হ্যের বাঁধ ভে’ঙ্গে দিয়েছো।তোমাকে আমি এতোটা ভালোবাসলাম আর তুমি আমার ভালোবাসার এই প্রতিদান দিলে,
আচ্ছা আমার ভালোবাসায় কি কমতি ছিলো ওসমান,
কেন করলে এমন?
তিশা ডিভোর্স পেপার হাতে তুলে পেপারটা ছিঁড়ে ফেলে,
কিসের ডিভোর্স,কোনো ডিভোর্স হয়নি,মানি না এই ডিভোর্স,আমাদের যে ডিভোর্স হয়নি এটাও আমিও জানি তুমিও জানো,তবুও কেন এমন করছো তা আমি জানি না,শুধু একটা কথা মাথায় রেখো আমি বেঁচে থাকতে তোমাদের বিয়ে হতে দিবো না,কখনো না।
তুমি শুধু আমার,আমাদের মাঝে যে দেয়াল হয়ে দাঁড়াবে তাকে মে’রে ফেলতেও আমার হাত কাঁপবে না,
মাইন্ড ইট।
তিশা পক্ষে আর কান্না আটকে রাখা সম্ভব না ও দৌড়ে উপরে চলে যায়।
আয়েশা ওর কাছে যেতে নিলে ওমর ওর হাত ধরে চোখের ইশারায় যেতে মানা করে।
তিশা রুমে যেয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়।
নিচ থেকে সবাই ভা’ঙচুরের শব্দ শুনতে পাচ্ছে।
ওমর ওসমানের দিকে তাকিয়ে বলে,
ভাইয়া তুমি আমার বড়,তোমাকে কিছু বলা মানে বেয়াদবি করা হবে,আর আমি বেয়াদবি করতে চাই না,
আজ ভাবির জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে আর নিজের উপর রাগ উঠছে,তার ভাই হিসেবে আমি তার জন্য কিছুই করতে পারলাম না,তোমাকে শুধু একটা কথাই বলবো আজ যা করলে ঠিক করলে না,যেই ভাবি তোমাকে এতোটা ভালোবাসলো সেই ভাবিকে তুমি এতোটা কষ্ট দিলে,কেন করলে,এ তোমার কেমন ভালোবাসা।
ওমর আর কিছু না বলে আয়েশার হাত ধরে সিঁড়ি দিয়ে উপরে চলে যায়।
অবান্তিকা ওসমানের কাছে যেয়ে বলে,
আজ তোমাকে আমার ছেলে বলেতেও ঘৃণা হচ্ছে,
আমি এই কোন ওসমানকে দেখছি যে ওসমান তিশাকে
এতোটা ভালোবাসতো আজ সেই ওসমান তিশাকে এতোটা কষ্ট দিলো,তোমার বিয়ের দিন আমি তোমাকে বলেছিলাম তুমি তিশাকে কখনো কষ্ট দিও না কিন্তু তুমি সেই কাজটাই করলে,২ মাস ধরে ওকে অবহেলা করছো,ওকে কষ্ট দিচ্ছো,মেয়েটা একটি বারও এ কথা কাউকে জানায়নি সব কিছু মুখ বুঝে স’হ্য করেছে,তার
সাথে তুমি এমন করলে,ওসমান তোমাকে আমার কিছু বলার নেই,কিছু বলার নেই।
অবান্তিকা তার রুমে চলে যায়।
ওয়াহিদ ওসমানের কাঁধে হাত রেখে বলে,
দেখলে ওসমান সবাই তোমার থেকে বেশি তিশাকে ভালোবাসে,আর ভালোবাসবে নাই বা কেন ও মানুষটাই এমন সবাই ওকে ভালোবাসতে বাধ্য হয়।
তুমি আজ ওকে অনেক কষ্ট দিয়েছো,কষ্ট শুধু ও একাই না আমরাও পাচ্ছি।
ওয়াহিদ আর কিছু না বলে ওর রুমে চলে যায়।
তিশার রুমের ফ্লোরের সব জায়গায় কাঁচ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে আছে,ঘরের সো পিস,ফুলদানি,
ফ্লাওয়ার স্টেন্ড,ড্রেসিং টেবিলের আয়না,সেন্টার টেবিলের কাঁচ ভে’ঙ্গে চুরমার হয়ে পরে আছে,
ফ্লোরের প্রতিটা কোণায় কোণায় কাঁচ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে,কোথাও বাদ পড়েনি।
তিশা এক কোণায় হাঁটুতে মুখ গুঁজে বসে আছে,
তিশার হাতের তালুর,পায়ের পাতা থেকে গলগল করে র’ক্ত পরছে,র’ক্তে সাদা টাইলস লাল বর্ণ ধারণ করে।
তিশার চোখ থেকে অঝোরে অশ্রু কণা ঝরে পরছে,
তিশা হিঁচকি তুলে কাঁদছে,
আর কতো আর কতো স’হ্য করবো আমি,আমি আর পারছিনা,পারছিনা নিজেকে শক্ত রাখতে,ওসমান প্রতিটা পদে পদে আমি ম’রছি তুমি কি তা বুঝো না,
আমার হাহাকার কি তুমি শুনতে পাও না,আচ্ছা আমার ভালোবাসায় কি কমতি ছিল বলতে পারো,এতোদিন ভেবেছি আমি হয়তো তোমাকে নিজের কাছে ফিরিয়ে আনতে পারবো,কিন্তু তুমি আজ আমার এই আশাটাও শেষ করে দিলে।
র’ক্ত মাখা হাতটার দিকে তাকিয়ে আপনমনে বিড়বিড় করে বলে,
তখন রাগের মাথায় সবার সামনে তোমাকে চ’ড় মে’রেছি,কিন্তু দেখো আমি সেই হাত অক্ষ’ত রাখি নি,
দেখো না কিভাবে গলগল করে র’ক্ত বের হচ্ছে,
তোমাকে চ’ড় মারাতে তুমি যতটা কষ্ট পেয়েছো তার
চেয়ে দিগুণ কষ্ট আমি পাচ্ছি,আমি আমার এই হাত অক্ষ’ত রাখিনি ওসমান,অক্ষ’ত রাখিনি।
মাথা ব্যাথার য’ন্ত্র’ণায় তিশার ঘাড়ের র’গ ফুলে উঠেছে,
মাথা ব্যাথায় চোখ ভার হয়ে আছে,হাত পা থেকে র’ক্ত পরায় তিশার শরীর দূর্বল হয়ে গেছে,ওর পক্ষে আর বসে থাকা সম্ভব হলো না,মাথা ঘুরে ফ্লোরে পরে গেলো।
চলবে কি?
[কেমন লেগেছে কমেন্টে জানাবেন,কোনো প্রকার ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]#উপন্যাসের_শেষ_পাতায়_তুমি
#Writer_Tanisha_Akter_Tisha
#Part_48
কপি নিষিদ্ধ ❌
আজ দুদিন ধরে তিশা নিজেকে ঘর বন্ধী করে রেখেছে,
ওমর,ওয়াহিদ,আয়েশা,অবান্তিকা অনেকবার দরজা খুলতে বলেছে কিন্তু তিশা দরজা খুলতে নারাজ ও দরজা খুলবে না কারো সাথে কথাও বলবে না,ওকে নিয়ে সবাই চিন্তায় পরে গেলো।
জেসমিন এখন এই বাসাতেই থাকে বিয়ের আগপর্যন্ত ওসমান জেসমিন আলাদা আলাদা রুমে থাকবে।
তিশা ব্যতীত সবাই ব্রেকফাস্ট করতে বসেছে,
সবাই ওসমানের থেকে মুখ ঘুরিয়ে রেখেছে,কেউ ওর সাথে কথা বলে না,যদিও এতে ওসমানের কিছু যায় আসে না।ব্রেকফাস্ট শেষ করে ওসমান জেসমিন বাসা থেকে বের হয়।
লিভিং রুমে ওমর,ওয়াহিদ,আয়েশা,অবান্তিকা বসে আছে,আজ ওয়াহিদ,ওমর হসপিটাল যাবে না।
ওমর চিন্তিত স্বরে বলে,
বাবা আজ দুদিন ধরে ভাবি নিজেকে ঘর বন্ধী করে রেখেছে,দুদিন ধরে কিছু খায়নি,এমনকি আমাদের ডাকে সাড়াও দেয় না,জানি না ভাবি কি অবস্থায় আছে আদও সুস্থ আছে কি না।
ওয়াহিদও চিন্তিত স্বরে বলেন,
আমিও এটা নিয়ে চিন্তিত,আদও মামনি সুস্থ আছে কি না?
অায়েশা বলে,
ওমর আমাদের দরজা ভে’ঙ্গতে হবে।
কি বলো এসব দরজা কি করে ভা’ঙ্গি।
কিছু করার নেই আমরা ডাকার পরও ওর কোনো সাড়াশব্দ পাইনা,জানি না ও ঠিক আছে কিনা।আমাদের দরজা ভে’ঙ্গে ভেতরে যেতে হবে।
অবান্তিকাও আয়েশার কথায় একমত হয়ে বলেন,
হ্যাঁ এটাই করতে হবে,দুদিন ধরে না খেয়ে আছে এমন করলে তো ও অসুস্থ হয়ে পরবে।
আয়েশা বলে,
ওমর চলো উপরে,আজ তো আমরা ঘরে প্রবেশ করবোই।
ওয়াহিদ ওমর আর না করে না।
ওরা সবাই সিড়ি দিয়ে উপরে উঠে তিশার রুমের সামনে যায়,আয়েশা তিশাকে দরজা খুলতে বলে কিন্তু আজও তিশার কোনো সাড়াশব্দ নেই,শেষে ওমর উপায় না পেয়ে দরজা ভেঙ্গে ফেলে,ওরা ভেতরে এসে দেখে ফ্লোরের সব জায়গায় কাঁচ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে,
তিশা বিছানায় হাঁটুতে মুখ গুঁজে বসে আছে,আয়েশা নিচ থেকে সার্ভেন্টদের ডাক দিয়ে রুমটা পরিষ্কার করতে বলে,ওরা সাবধানে পা ফেলে তিশার কাছে যায়,
তিশা এখনো মুখ তুলে তাকায়নি অবান্তিকা ওর পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন,
জানি মামনি তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে,আর কষ্ট হওয়াটাও স্বাভাবিক পৃথিবীর কোনে নারী তার স্বামীর সাথে অন্য মেয়েকে দেখতে পারে না,দ্বিতীয় বিয়ের কথা শুনতে পারে না,জানি না ওসমান কেন এমন করছে কিন্তু আমরা তোমাকে বিশ্বাস করি ভালোবাসি তুমি সবসময় আমাদের তোমার পাশে পাবে।
অবান্তিকার কথা শুনেও তিশা কিছু বলে না সেভাবেই হাটুতে মুখ গুঁজে বসে আছে।
ওয়াহিদ তিশার অপর পাশে বসে ওর মাথায় হাত রেখে বলেন,
আমি জানি তো আমার মেয়েটা অনেক স্ট্রং,আমার মেয়ে কি অল্পতে ভে’ঙ্গে পরার মানুষ নাকি।
তিশা নিজের কান্না আটকে রাখতে পারলো না ওয়াহিদকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়।
ওয়াহিদ ওর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে,
আর কাঁদে না মামনি,আমরা সবাই তোমাকে খুব ভালোবাসি,দেখো আমরা সবাই তোমার পাশে আছি
আমি জানি আমার মামনিটা এতো সহজে ভে’ঙ্গে পরবে না,সে তার ভালোবাসার মানুষকে আবারও তার কাছে ফিরিয়ে আনবে,মামনি আমরা সবাই তোমার পাশে আছি।
ওমর তিশার ডান হাত ধরে বলে,
ভাবি তুমি তো আমাকে ভাই মানো,তোমার ভাই কি করে তার বোনের চোখে জল দেখবে বলো,তুমি দ্রুত চোখের জল মুছে ফেলো,তোমার আর ভাইয়ার ভালোবাসা আর ঘৃণার যুদ্ধে তোমার ভালোবাসাই জিতবে,তোমার ওসমানকে তুমি আবারও তোমার কাছে ফিরে পাবে,তুমি চিন্তা করো না সব ঠিক হয়ে যাবে,ভাইয়া আর জেসমিনের বিয়ে হবে না আমরা হতে দিবো না।
তিশা ওমরের কথা শুনে চোখ মুছে ফেলে।
কান্না করার কারণে তিশার চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে ও চোখ মুখ কিছুটা ফুলে গেছে।
তিশা ওদের দিকে তাকিয়ে বলে,
থ্যাংক ইউ আমাকে সাপোর্ট করার জন্য আমার পাশে দাঁড়ানোর জন্য,আমাকে এতোটা ভালোবাসার জন্য,
সত্যিই আমি খুব ভাগ্যবতী আমি তোমাদের মতো মানুষ পেয়েছি,আজ নিজেকে একা মনে হচ্ছে না।
অবান্তিকা মুচকি হেসে বলেন,
উহুম তুমি একা না আমরা সবাই তোমার সাথে আছি,
দেখো কেঁদে কেঁদে নিজের কি অবস্থা করেছো আর কাঁদবে না ঠিক আছে,এখন যাও হাত মুখ ধুয়ে আসো আমি তোমাকে খাবার খাইয়ে দেই দুদিন ধরে তো কিছু খাওনি।
না মামনি কিছু খাবো না,ক্ষিদে নেই।
আর একটা কথা বললে মা’ইর দিবো,দুদিন ধরে কিছু খায়নি আর সে বলছে কিনা ক্ষিদে নেই,আয়েশা যাও খাবার নিয়ে এসো দেখি আজ ও কি করে না খেয়ে থাকে তা আমিও দেখবো।
অবান্তিকার কথা শুনে আয়েশা খাবার আনতে নিচে যায়,তিশাও বুঝে গেছে অবান্তিকা ওকে খাইয়েই ছাড়বে তাই ও আর কিছু না বলে হাত মুখ ধুয়ে আসে,
আয়েশা খাবার নিয়ে আসে,অবান্তিকা তিশাকে খাবার খাইয়ে দিচ্ছে,তিশাও কিছু না বলে অবান্তিকার হাত থেকে খাবার খেয়ে নেয়।
তিশাকে খাইয়ে দিতে দিতে ওরা তিশার সাথে কথা বলে,সবার কথা শুনে তিশার মনে আশা আলো জ্ব’লে উঠে,তিশা নিজেকে প্রস্তুত করে নিচ্ছে,সবার কথায় তিশা সাহস পায়,ওরা ভাবছে কি করে ওসমান আর জেসমিনের বিয়ে আটকানো যায়।
বিকাল ৪ টায়,
তিশা মাথা চেপে ধরে সারা রুম পায়চারি করছে,
টেনশনে ওর মাথা ফে’টে যাচ্ছে,তিশা বুঝতে পারছে
না করবে,মাথা ব্যাথার য’ন্ত্র’ণায় কি করবে বুঝতে পারছে না,এক দিকে ওসমানের টেনশন আরেক দিকে হেল্থের টেনশন,তিশা আর ব্যাথা স’হ্য করতে না পেরে ঘুমের ঔষধ খেয়ে নেয়।
তিশার ঘুম ভাঙ্গে সাড়ে ৮ টার দিকে মাথার য’ন্ত্র’ণা বিন্দুমাএ কমেনি,তিশা তেল নিয়ে আয়েশার রুমে যায়।
আয়েশার রুমে এসে দেখে আয়েশা চুল আছড়াচ্ছে,
আরে তিশা আয় ভেতরে আয়।
শুননা মাথায় একটু তেল দিয়ে মাসাজ করে দিবি?
হ্যাঁ আয়।
তিশা যেয়ে বিছানায় বসে আয়েশাও বিছানায় বসে,
আয়েশা তিশার মাথায় তেল দিয়ে মাসাজ করে দিচ্ছে,
তিশার মাথা ব্যাথাটাও কমে আসছে।
১০ টায় সবাই ডাইনিং টেবিলে বসে,ওসমানের ডান
পাশে ওমর বসা বাম পাশের চেয়ার এখনও খালি জেসমিন এখনও রুম থেকে আসেনি,
একটুপর জেসমিন এসে ওসমানের পাশে বস তার আগেই তিশা যেয়ে ওসমানের পাশে বসে মুচকি হেসে বলে,
আপু আপনি এখনো ওসমানের ওয়াইফ হননি তাই এই জায়গাটা আমারই,আগে বিয়েটা হোক তারপর নাহয় ওর পাশে বসবেন।
তিশার কথা শুনে জেসমিন কিছু না বলে পাশের চেয়ারে বসে,ওসমানও তিশাকে কিছু বলে না,ওরা সবাই খেতে শুরু করে।
তিশা খাচ্ছে কম ওসমানকে দেখছে বেশি,তিশার চোখ টলমল করছে,ওর প্লেটে এক ফোঁটা চোখের জল পরে সবার আড়ালে চোখের জল মুছে ফেলে,ও না খেয়ে উঠে পরে,সবাই তিশার দিকে তাকায় কিন্তু কেউ ওকে বাঁধা দেয়না কারণ ওসমান না বুঝলেও বাকিরা তিশার অবস্থা বুঝতে পারে।
রাত ২টায় ওসমান রুমে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে,
ও দরজায় নক করার শব্দ পায়,ওসমান উঠে দরজা খুলে দেখে তিশা দাঁড়িয়ে আছে,তিশা ওকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ভেতরে চলে এসে দরজা লক করে দেয়,ওসমান ভ্রু কুচকে বলে,
তুমি আমার রুমে কেন এসেছো?
কারণ তোমার প্রতি আমার অধিকার আছে।
কিসের অধিকার আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে এখন আর আমরা স্বামী স্তী নই।
তুমি বললেই হবে না কি আল্লাহ জানে আমাদের সম্পর্ক শেষ হয়েছে কিনা,আচ্ছা ওসমান তুমি কি আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য বিয়েটা করছো?
তোমার সাথে এক ছাদের নিচে থাকতে চাইনা তাই বিয়েটা করছি।
কিন্তু তোমার তো আমার সাথেই একবাড়িতে থাকতে হবে।
কেন?
তুমি হয়তো ভুলে গেছো তোমার প্রোপার্টির ৫২% মালিক আমি,তাই তোমার যেমন এই বাড়িতে থাকার অধিকার আছে ঠিক তেমনই আমারও অধিকার আছে,
বলতে গেলে তোমার থেকে আমার অধিকার বেশি।
ওসমান আর কিছু বলতে পারেনা।
তিশা টলমল চোখে করুণভাবে ওসমানের দিকে তাকিয়ে বলে,
ওসমান আপুকে বিয়ে করো না,আমার ভালোবাসাকে এভাবে গলা টিপে মে’রো না,প্লিজ ওনাকে বিয়ে করো না,আমি তোমাকে অনুরোধ করছি।
ওসমান তিশার কথা উপেক্ষা করে তাচ্ছিল্য স্বরে বলে,
আমি ওকে বিয়ে করবোই,তোমার কথা শুনতে আমি বাধ্য নই।
তুমি সত্যিই তাকে বিয়ে করবে?
হ্যাঁ আমি ওকে বিয়ে করবোই।
তিশার চোখ থেকে করুণ আবরণ সরে,রাগে লাল বর্ণ ধারণ করে,ও ওসমানকে ধাক্কা দিয়ে দেয়ালের সাথে আটকে গলায় ছু’ড়ি চে’পে ধরে,
কি বললে তুমি আপুকে বিয়ে করবে,এই বলার তোমার সাহস কি করে হয়,কি বলেছিলে ভালোবাসো তাকে,
একটা কথা বলা রেখো তুমি শুধু আমার,তোমাকে মে’রে ফেলবো তবুও তোমার ভাগ কাউকে দিবো না।
তিশা ওর গলা থেকে ছু’ড়ি সরিয়ে রুমের দরজা খুলে বের হয়ে যায়।
ওসমান তিশার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রয়।
তিশা দ্রুত রুমে চলে আসে,হাতে থাকা ছু’ড়িটার দিকে তাকিয়ে তখনকার কথা মনে পরতেই তিশা নিজের গলায় ছু’ড়ি চে’পে ধরে।
তখন ওসমানের গলায় ছু’ড়ি ধরলেও গলা থেকে র’ক্ত বের হয়নি,কিন্তু তিশা এখন নিজের গলায় ছু’ড়ি চে’পে ধরায় গলা থেকে র’ক্ত বের হচ্ছে,তিশা চোখ বন্ধ করে বিড়বিড় করে বলে,
আমি তোমাকে যতটা কষ্ট দিবো তার থেকে দিগুণ কষ্ট নিজেকে দিবো।
চলবে কি?
[কেমন লেগেছে কমেন্টে জানাবেন,কোনো প্রকার ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]