#উপন্যাসের_শেষ_পাতায়_তুমি
#Writer_Tanisha_Akter_Tisha
#Part_49
কপি নিষিদ্ধ ❌
দুদিন পর,
আজ দুদিন যাবৎ তিশা ওসমানকে বুঝাচ্ছে কিন্তু ওসমান বুঝতেই চাইছে ও জেসমিনকে বিয়ে করবেই,
সবাই ওর থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে,কেউ ওসমানকে বুঝাতে পারছে না,ওসমান ওদের কথা মানতে নারাজ, এখন ওরা বুঝতে পারছেনা কিভাবে বিয়েটা আটকাবে।
তিশা এই দুদিন যাবৎ বুঝতে পারছে ওর শরীর খুব বেশি ভালো না,এখন ওর সারাক্ষণই মাথা ব্যাথা করে,
মাথা ব্যাথার য’ন্ত্র’ণায় ও চোখে কিছুটা ঝাপসা ঝাপসা দেখে,ঘাড়ের র’গ ফুলে উঠেছে,কিছু খেতে পারে না,
খেলেই মুখ ভরে বমি করে,এখন তিশা নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পারে না,কেমন যেন খিটখিটে হয়ে গেছে,রাগ উঠলে নিজেকে ঠিক রাখতে পারে না,ওর অবস্থা দিনকে দিন খারাপ হচ্ছে,ওমর ওকে হসপিটালে যেতে বলছে কিন্তু তিশা যাচ্ছে না,ওমর এখনও তিশার অসুস্থতার কথা কাউকে জানায়নি,তিশাই জানাতে দেয়নি,তিশার এখন নিজের প্রতি বিন্দু মাএ চিন্তা নেই,
ওর মাথায় এখন সারাক্ষণই ওসমান জেসমিনের বিয়ের
চিন্তা থাকে,কি করবে কিছু বুঝতে পারছে না,কি করে
ওদের বিয়ে আটকাবে।
এতো কিছুর মাঝে তিশা লক্ষ্য করলো জেসমিনের মাঝে বিয়ে নিয়ে কোনো আনন্দ নেই,ওসমানের মুখে যেই খুশির ঝলক আছে তার বিন্দু মাত্রও খুশি জেসমিনের মাঝে নেই ওকে দেখে বোঝা যাচ্ছে ও বিয়েটা নিজের ইচ্ছেতে করছে না বাধ্য হয়ে করছে।
কিন্তু ও কেন বাধ্য হয়ে বিয়ে করছে তা তিশা বুঝতে পারছেনা।
আজ রাত ১০ টায় ওসমান জেসমিনের বিয়ে হবে,
বিয়েটা ঘরোয়া ভাবে হবে,জেসমিনের পক্ষে থাকবে ওর দুটো বন্ধু আর ওসমানের পক্ষে কেবল ওর বর্ডিগার্ড স্পর্শ থাকবে।ওমর,ওয়াহিদ,অায়েশা,অবান্তিকা কেউ ওসমানের পক্ষে না,যদিও ওসমানের এতে কিছু যায় আসে নাহ,ও কারাে ইচ্ছে বা মতামত নেওয়ার প্রয়োজন মনে করে না,ওসমান জেসমিনের বিয়েটা মাএ কয়েকজনের উপস্থিতিতে হবে,বিয়েটা সাদা মাটা ভাবে হবে।
এখন দুপুর ২টা বাজে,
তিশা নিজের রুমে কপালে হাত দিয়ে শুয়ে আছে,
আর মাএ ৮ ঘন্টা তারপর সব শেষ হয়ে যাবে।
তিশার চোখ থেকে শতশত অশ্রু কণা ঝরে পরছে।
ও কি করে এই বিয়ে আটকাবে ওসমান তো ওর কথা শুনতেই চাইছে না,টেনশনে তিশার হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে,টেনশনে মাথা কাজ করছে না,
কি করবো,ওকে আর কতো বোঝাবো,ও তো আমার কথা শুনতেই চাইচ্ছে,ওমর,আয়েশা,বাবা,মামনি তারাও কতো করে বোঝাচ্ছে কিন্তু ও তো ওর কথাতেই আটকে আছে,ও কেন জেসমিন আপুকে বিয়ে করতে চাইছে?ওসমান তুমি যে আপুকে ভালোবেসে বিয়ে করছো না তা আমি জানি আর আপুও তোমাকে নিজ ইচ্ছেতে বিয়ে করছে না,তাহলে তোমরা কেন বিয়েটা করতে চাইছো,আচ্ছা বিয়েটার একমাত্র উদ্দেশ্যে কি আমাকে কষ্ট দেওয়া?
আয়েশার ডাকে তিশা ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে।
তিশা।
হুম বল।
মামনি ডাকছে খেতে আয়।
হুম।
তিশা আয়েশার সাথে নিচে চলে আসে।
নিচে এসে দেখে সবাই আগে থেকে বসে আছে,আজ তিশা ওসমানের পাশে নয় মুখোমুখি চেয়ারে বসে,
তিশাকে বসতে দেখে ওসমান ওর দিকে চোখ তুলে তাকায়,ওদের চোখাচোখি হয় ওসমান চোখ নামিয়ে নেয়,ওসমান চোখ নামালেও তিশা চোখ নামায় না তিশা ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
ওসমান মুচকি হেসে জেসমিনের মুখের সামনে খাবার তুলে ধরে,জেসমিন তিশার দিকে তাকিয়ে ওসমানের হাত থেকে খাবার খেয়ে নেয়।জেসমিন তিশার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে ওসমানকে খাইয়ে দেয়,ওদের আদিখ্যেতা তিশার স’হ্য হচ্ছে না তাই না খেয়ে টেবিল ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়,ওসমান ওর দিকে তাকায়,তিশা ওসমানের থেকে চোখ সরিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠে রুমে চলে যায়।
৬ টায় ওসমান জেসমিনের জন্য বিয়ের ড্রেস কিনে নিয়ে আসে,ওসমান জেসমিনের রুমে যেয়ে ড্রেসগুলো দিয়ে এসে রুমে চলে আসে,রুমে এসে দেখে তিশা বিছানায় হেলান দিয়ে বসে আছে।
তুমি আমার রুমে!
তিশা সামনের দিকে তাকিয়ে বলে,
শেষবারের মতো এলাম।
তিশার কথায় ওসমান চুপ হয়ে যায়।
তিশা বিছানা ছেড়ে উঠে ওসমানের মুখোমুখি দাঁড়ায়,
আজ তিশার চোখে করুণতা নেই না আছে কঠোরতা,
আজ তিশার চোখ শান্ত,মলিন।
ওসমান আজ তিশার চোখের দিকে তাকাতে পারছে না
তিশা ওসমানের হাত ধরে ওসমানের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,
এতোদিন তোমার সামনে অনেক আকুতি মিনতি করেছি,কান্নাকাটি করেছি কিন্তু তুমি তা দেখেও না দেখার ভান করেছিলে,আমার কান্না তোমার মন বিন্দু মাএ গলাতে পারে নি।আচ্ছা ওসমান তুমি না আমার কান্না স’হ্য করতে পারতে না আমার কান্নায় নাকি তোমার বুকে র’ক্তক্ষ’রণ হয়,তবে আজ কেনো তুমি নিশ্চুপ।
তিশা চোখে ঝাপসা দেখছে মাথাও ঘুরছে,তিশার দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে,তবুও কষ্ট করে দাঁড়িয়ে আছে।চোখ বন্ধ করে নিজেকে শক্ত করে ওসমানের চোখে চোখ রেখে বলে,
ভালোবাসি তাই শত অবহেলা সয়েও বারবার তোমার কাছে ছুটে আসি,তোমাকে প্রোমিশ করেছিলাম কখনো তোমার প্রতি আমার বিশ্বাস ভাঙ্গতে দিবো না,দেখো না আমি আমার কথা রেখেছি এত কষ্ট দেওয়ার পরও তোমার প্রতি আমার বিশ্বাস,ভালোবাসা অটল।অবুঝকে বোঝানো যায় বুঝদারকে বোঝানো যায় না।
তুমি বুদ্ধিমান আমার কথা বুঝতেও পারছো,যদি সত্যি ভালোবাসো তবে এই বিয়ে করো না,যদি আজ এই বিয়ে করো তবে আমি বুঝে নিবো তুমি আমার ভালোবাসাকে নিজ হাতে হ’ত্যা করেছো।
তিশার চোখ টলমল হয়ে আসে চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরার আগেই তিশা রুম থেকে বেরিয়ে আসে।
রাত ১০ টায়,
হলরুমে বর বধু বেশে ওসমান জেসমিন সোফায় বসে আছে,ওদের দুপাশের দু সোফায় কাজি সাহবে ও উকিল বসে আছেন,ওয়াহিদ অবান্তিকা ওদের থেকে একটু দূরে চেয়ারে বসে আছে,ওমর আয়েশা তিশা অবান্তিকা ওয়াহিদের পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
তিশা এক দৃষ্টিতে ওসমানের দিকে তাকিয়ে আছে।
ওসমান একবারও তিশার দিকে তাকায়নি।
ওয়াহিদ,ওমর,অবান্তিকা,অায়েশা একবার তিশার দিকে তাকাচ্ছে তো আরেকবার ওসমানের দিকে তাকাচ্ছে,জেসমিন তিশার দিকে তাকিয়ে আছে।
তিশার মাথা ঘুরছে,ও ঘাড়ে হাত দিয়ে দেখে ঘাড়ের সমস্ত র’গ ফুলে উঠেছে,ওর দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে,
তবুও দাঁড়িয়ে আছে ও দেখতে চাই ওসমান কি এই বিয়ে করবে না কি না,ওর মনের কোণে এখনো স্তুপ্ত পরিমাণ আশা রয়েছে,ওর হার্ট দ্রুত বিট করছে,ওর জানা নেই কি হতে চলেছে।
পেপারস রেডি করে উকিল ওসমান,স্পর্শ,জেসমিনকে সাইন করতে বলে,ওসমান প্রথমে জেসমিনকে সাইন করতে বলে,জেসমিন হাতে কলম উঠিয়ে নেয় সবার মুখের দিকে তাকিয়ে পেপারটাতে সাইন করার জন্য পেপারটা সামনে রাখে কিন্তু অজানা এক কারণে জেসমিনের হাত কাঁপছে তবুও চোখ বন্ধ করে নিজেকে শক্ত করে পেপারটাতে সাইন করে দেয়,তারপর স্বাক্ষীর জায়গায় স্পর্শ সাইন করে শেষে ওসমান সাইন করার জন্য পেপারটা হাতে তুলে নেয়,চোখ উঠিয়ে তিশার দিকে তাকায় ও স্পষ্ট তিশার চোখের জল দেখতে পারছে,ওসমান চোখ নামিয়ে সাইন করার জন্য কলম হাতে তুলে নেয় আর পেপারটাতে সাইন করে দেয়।
তিশার বুক ধক করে উঠে,ও পরতে নিবে তার আগেই দেয়াল ধরে ফেলে ওর চোখ থেকে অশ্রু কণা ঝরে পরে
ওয়াহিদ,ওমর,অবান্তিকা,অায়েশা তিশার দিকে তাকায় তিশার কষ্টে ওরা নিজেরাও কষ্ট পাচ্ছে ওরা পারলো না জেসমিন ওসমানের বিয়ে আটকাতে।
এবার ধর্ম অনুসারে বিয়ে হবে,
কাজি সাহবে ওদের নাম,বাবা মার নাম,সব কিছু কাবিননামায় লিপিবদ্ধ করছেন।
কাজি যখন ওসমানকে কবুল বলতে বলে ঠিক
সেমুহুর্তেই পুরো বাড়ির লাইট অফ হয়ে যায়,সবাই এতে অবাক হয়ে যায়,কেনো না এমুহূর্তে তো কারেন্ট যাওয়ার কথা না।অন্ধকারেই ওসমান তিন কবুল বলে,
ওসমানের বলা তিন কবুল তিশার বুকে তীরের মতো বিঁধে।ওসমানের কবুল বলা শেষে কারেন্ট চলে আসে।
কাজি এবার জেসমিনকে কবুল বলতে বলে জেসমিন কিছুক্ষণ থম মেরে বসে কাঁপা কাঁপা স্বরে কবুল বলে দেয়।সব রীতিনীতি মেনে ওসমান ও জেসমিনের বিয়ে সম্পূর্ণ হয়,তিশার সব আশা শেষ হয়ে গেল,ওসমানকে চিরতরে হারিয়ে ফেললো,তিশা আর এসব সহ্য করতে পারলো না ও মাথা ঘুরে ফ্লোরে পরে গেল।
তিশাকে নিচে পরতে দেখে আয়েশা ওমর দ্রুত তিশার কাছে আসে,আয়েশা ফ্লোলরে বসে তিশার মাথা নিজের কোলে রাখে,গালে আলতো হাত ছুঁয়ে তিশাকে ডাকছে,
তিশা,এই তিশা,চোখ খোল,তিশা,
ওমর পানি নিয়ে আসো।
আয়েশার কথা শুনে ওমর দ্রুত পানি নিয়ে আসে,
ওয়াহিদ অবান্তিকাও তিশার কাছে চলে আসে।
ওমর দ্রুত তিশার চোখে মুখে পানির ছিঁটা দেয় কিন্তু তিশার কোন প্রতিক্রিয়া নেই।অনেকবার চোখের মুখে পানি ছিঁটা দেওয়ার পরও তিশার জ্ঞান না ফিরায় আয়েশা কাঁদতে কাদঁতে বলে,
ওমর আমার তিশা তাকাচ্ছে না কেন,আমার খুব ভয় করছে,ওমর তুমি কিছু করো।
তিশার জ্ঞান ফিরছে না দেখে ওসমান জেসমিন তিশার দিকে আসতে নিলে,ওয়াহিদ হাত উঠিয়ে ওদের বাঁধা দেয়,
খবরদার তোমরা কেউ ওর কাছে আসবে না,বিয়ে তো করেই ফেলেছো এবার তোমরা খুশি তো,তোমাদের জন্য আজ এমন হলো,ওসমান তিশার যদি কিছু হয় তাহলে আমি তোমাকে ছেড়ে কথা বলবো না,
ওমর তিশাকে গাড়িতে উঠিয়ে হসপিটালে নিয়ে চলো।
ওমর ওয়াহিদের কথামতো তিশাকে কোলে তুলে গাড়িতে শুয়ে দেয়,ওমর আয়েশা তিশাকে নিয়ে হসপিটালে যাচ্ছে,ওদের পিছনের গাড়িতে ওয়াহিদ অবান্তিকা আসছে।আয়েশার হাত থরথর করে কাঁপছে
ও আল্লাহকে ডাকচ্ছে।
ওরা দ্রুত হসপিটালে চলে আসে ওমর তিশাকে কোলে তুলে স্ট্রেচারে শুয়ে দেয়,নার্স দ্রুত তিশাকে ওটি তে নিয়ে যায়,ওমর ওয়াহিদও পোশাক পরে ওটিতে চলে যায়।
ওমরের শুধু একটা চিন্তাই হচ্ছে “ও যা ভাবচ্ছে তা হবে না তো”!
চলবে কি?
[কেমন লেগেছে কমেন্টে জানাবেন,কোনো প্রকার ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]#উপন্যাসের_শেষ_পাতায়_তুমি
#Writer_Tanisha_Akter_Tisha
#Part_50
কপি নিষিদ্ধ ❌
ওমর ওয়াহিদ সাথে দুজন সিনিয়র ডক্টর ওটিতে চলে যায়,দরজা বন্ধ হয়ে যায়।
আয়েশা অবান্তিকা বাহিরে বসে অপেক্ষা করছে,
ওদের চোখে পানি,মুখে আল্লাহর নাম।
১ ঘন্টা হয়ে গেলো এখনোও ওমর ওয়াহিদ কেউ বের হয় নি,টেনশনে আয়েশা অবান্তিকার হাত পা কাঁপছে।
বেশ কিছুক্ষণ পর ওমর ওয়াহিদ দরজা খুলে বের হয়,
অবান্তিকা ওমরকে বের হতে দেখে কান্নাভেজা কন্ঠে বলে,
ওমর আমার তিশা কেমন আছে?
ওমর নিশ্চুপ হয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
আয়েশা ওয়াহিদের দিকে তাকিয়ে বলে,
বাবা তিশা কেমন আছে?
ওয়াহিদও নিশ্চুপ হয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
কি হলো তোমরা কিছু বলছো না কেন আমার
তিশা মামনি কেমন আছে,ও সুস্থ আছে তো?
ওমর ওয়াহিদ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
আয়েশা ওমরের বাহু ধরে ঝাকিয়ে বলে,
ওমর কথা বলছো না কেন,তিশা সুস্থ আছে তো,
কি হলো কথা বলো।
ওমর চোখ বন্ধ করে কাঁপা কাঁপা স্বরে বলে,
ভাবি ব্রে’ন স্টো’ক করেছে।
কি!
অবান্তিকা ধপ করে চেয়ারে বসে পরে।
কি বলছো এসব,তিশা ব্রে’ন স্টো’ক করেছে!
হ্যাঁ আয়েশা ভাবি ব্রে’ন স্টো’ক করেছে,ওনার অবস্থা বেশি ভালো না এর আগেও ব্রেন বাজে ভাবে ডেমেজ হওয়ায় এখন ব্যাপারটা খুব সিরিয়াস হয়ে দাঁড়িয়েছে,
ভাবির অবস্থা বেশি ভালো না,এখনো অব্দি তার জ্ঞান ফিরেনি,যদি ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ভাবির জ্ঞান না ফিরে তাহলে,
তাহলে কি ওমর?
ওমর কিছু বলতে পারে না।
কি হলো ওমর বলো তাহলে কি?
কি হলো বলছো না কেন?
তাহলে ভাবি কো’মায় চলে যাবে।
কি!
আয়েশা ধপ করে বসে পরলো,ওর চোখ থেকে পানি পরছে।ওমর বুঝতে পারছে না কি করে আয়েশাকে সান্ত্বনা দিবে।অবান্তিকা অায়েশা অঝোরে কাদঁছে।
ওমর ওয়াহিদের চোখ টলমল করছে,
ওদের এই দৃশ্য দেখে দূর থেকে কেউ পৈশাচিক আনন্দ পাচ্ছে,সে তো এটাই চেয়েছিলো,খানদের চোখের পানি দেখতে চেয়েছিল।
হঠাৎ অবান্তিকা বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়,ও পা ফেলে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে।
বাবা মামনি কোথায় যাচ্ছে?
তুমি আয়েশা মামনির সাথে এখানে থাকো আমি দেখছি তোমার মামনি কোথায় যাচ্ছে।
ওয়াহিদ দ্রুত পায়ে অবান্তিকার কাছে যাচ্ছে।
ওয়াহিদ অবান্তিকার হাত ধরে বলে,
অবান্তিকা কোথায় যাচ্ছো?
বাসায় যাচ্ছি।
একা যাচ্ছো কেন আমি তোমাকে দিয়ে আসছি,গাড়িতে বসো।
ওরা গাড়িতে উঠে বসে,কিছুক্ষণ পর ওরা বাসায় চলে আসে,ওরা বাসায় এসে দেখে ওসমান ল্যাপটপে কি যেনো করছো,অবান্তিকা দ্রুত পায়ে ওসমানের কাছে যায়,ওসমানও ওকে দেখে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়,
অবান্তিকা ওসমানের গালে ঠাস্ করে চ’ড় মে’ড়ে দেয়,
ওসমান ওয়াহিদ অবাক হয়ে অবান্তিকার দিকে তাকায়,অবান্তিকা আরেকটা থা’প্পড় মে’ড়ে বলে,
তোমার জন্য শুধু মাএ তোমার জন্য মেয়েটা এতোটা কষ্ট পাচ্ছে,যদি ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ওর জ্ঞান না ফিরে তাহলে ও কো’মায় চলে যাবে,তুমি এবার খুশি তো যা চেয়ে ছিলে তাই তো পেলে মেয়েটাকে কষ্ট দিতে চাইছিলে দেখো মেয়েটা কতোটা কষ্ট পাচ্ছে,
আজ আমার ঘৃণা হচ্ছে তোমাকে ছেলে বলতে আমার ঘৃণা হচ্ছে,ঘৃণা হচ্ছে।
অবান্তিকা কাদঁতে কাদঁতে ওর রুমে চলে যায়।
ওয়াহিদ অবান্তিকার পেছন পেছন চলে যায়।
ওসমান মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
কেটে গেছে ২৫ ঘন্টা এখনো অব্দি তিশার জ্ঞান ফিরে নি,ওরা সবাই আল্লাহকে ডাকছে,আয়েশা অবান্তিকা মোনাজাতে অঝোরে কেঁদে আল্লাহর কাছে তিশার সুস্থতা কামনা করছে,ওয়াহিদ ওমরও নামাজ পড়ে তিশার জন্য দোয়া করছে,ওসমান হসপিটালে এসে ছিল কিন্তু ওকে কেউ তিশার রুমে যেতে দেয়নি,
দিবেই বা কেন ওর জন্যই তো তিশা অসুস্থ হলো,
সব কিছুর জন্য ও দায়ী।
আল্লাহ ওদের কামনা পুরণ করেছে ৪৭ ঘন্টা পর তিশার জ্ঞান ফিরে,কিন্তু জ্ঞান ফেরার পর থেকেই ও ওসমানের নাম ধরে ডাকছে আর কান্না করছে,ধীরে ধীরে ওর পাগলামী বাড়তে থাকে তাই ওয়াহিদ তিশাকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে দেয়।
রাত ১১টা,
তিশা আস্তে আস্তে চোখ মেলে,তাকিয়ে দেখে সবাই ওর রুমে দাঁড়িয়ে আছে,ওর ঘুম ভাঙ্গতে দেখে সবাই ওর সাথে কথা বলে কিন্তু ও কারো সাথে কথা বলে না চুপচাপ সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে আছে,ওরা তিশার দিকটা বুঝতে পেরে কেউ আর কোনো কথা না বলে রুম থেকে চলে যায়,ওমর ওর কেবিনে গিয়েছে,
ওয়াহিদ অবান্তিকা বাসায় চলে গেছে,আয়েশা তিশার পাশে বসে আছে আজ রাত ও এখানেই থাকবে।
তিশা নিথর হয়ে শুয়ে আছে,ওর মাঝে যেন কোনো প্রাণ নেই,শুধু সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে আছে আর নিঃশব্দে চোখের জল ফেলছে,আজ নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে,ও আজ ওসমানকে চিরতরে হারিয়ে ফেললো ওসমান অন্যকারো হয়ে গেলো,ও ওসমানকে নিজের করে রাখতে পারলো না,ও হেরে গেলো, ওসমানের ঘৃণার কাছে তিশার ভালোবাসা হেরে গেলো,
কেন হলো এমন কেন ওর ভালোবাসা হেরে গেলো?
আজ আয়েশাও কিছু বলছে না এক দৃষ্টিতে তিশার দিকে তাকিয়ে আছে,ও তিশার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর মনে মনে বলছে,
তোকে এভাবে দেখতে আমার খুব কষ্ট হচ্ছেরে,তোর সাথে কেন এমন হলো,কেন তোকে এতো কষ্ট স’হ্য করতে হচ্ছে,আমিও তোর জন্য কিছু করতে পারলাম না,পারলাম না তোর কষ্ট গুলো মুছে দিতে তোকে আগলে রাখতে পারলাম না।
তিশার কান্না দেখে আয়েশার চোখ থেকেও জল পরছে।
হঠাৎ তিশার চোখ যায় বাহিরে ওর মনে হলো ও কারো ছায়া দেখলো,ও ভ্রু কুচকে সে দিকে তাকিয়ে দেখলো সেখানে কেউ নেই,কাউকে দেখতে না পেয়ে সে দিক থেকে চোখ সরিয়ে আয়েশার দিকে তাকিয়ে বলে,
আয়েশা তুই বাসায় চলে যা।
কিন্তু আমি তো আজ রাতে তোর সাথে থাকবো।
রাতে থাকতে হবে না,তুই বাসায় চলে যা।
বোঝার চেষ্টা কর তুই অসুস্থ তোর কোনো কিছু প্রয়োজন পরতে পারে,আমি না থাকলে তোকে কে হেল্প করবে।
আমার কোনো কিছু লাগবে না তুই বাসায় চলে যা।
কিন্তু তিশা,
উফফ আমি তোকে যেতে বলছি তো।
আয়েশা যেতে চায়না কিন্তু তিশার জোড়াজুড়িতে শেষমেশ ওকে যেতেই হয়,আয়েশা রুমের দরজা খুলে বের হয়,তিশা আয়েশার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রয়,
আয়েশা যেতেই তিশা চোখ বন্ধ করে নেয়,আর সেই বন্ধ চোখ থেকে জল গড়িয়ে পরে।
পরদিন সকালে সবাই তিশার রুমে আসে,অবান্তিকা ওকে নাস্তা খাইয়ে দিচ্ছে,ওয়াহিদ ওর জন্য মেডিসিন নিয়ে এসেছে,মেডিসিন গুলো কিভাবে খাবে তা ওমর ওকে বলে দিচ্ছে,আয়েশা তিশার পাশে বসে আছে,
আয়েশা অবান্তিকাকে তিশার কাছে রেখে ওমর, ওয়াহিদ পেশেন্টদের চেকআপ করতে চলে যায়।
নাস্তা খাওয়া শেষে তিশাকে মেডিসিন খাইয়ে বিছানার সাথে হেলান দিয়ে বসিয়ে দেয়,তিশা চুপচাপ বসে আছে।অবান্তিকা ওর চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বলে,
মামনি আমি বুঝতে পারছি ওসমান যা করেছে,
তিশা অবান্তিকাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
মামনি আমি ওর কথা শুনতে চাই না প্লিজ আমার সামনে ওর নামও উচ্চারণ করো না।
তিশার কথা শুনে অবান্তিকা আয়েশা একে অপরের দিকে তাকায়।
তিশা আর কিছু না বলে চোখ বন্ধ করে নেয়,
কিছুক্ষণ পর নার্স এসে ওকে মাথা ব্যাথা কমার জন্য ইনজেকশন পুষ করে যায়।
এভাবে সাত দিন পেরিয়ে যায়,এই সাত দিনের মাঝে এক দিনও ওসমান তিশাকে দেখতে আসিনি,একটা কল পর্যন্তও করেনি,অবশ্য করবেই বা কেন এখন তো ওর লাইফে জেসমিন আছে তিশার আর কি প্রয়োজন।
তিশা এখন কিছুটা সুস্থ,ওর সুস্থ হওয়ার পেছনে ওমর,
ওয়াহিদ,অবান্তিকা,আয়েশার অবদান,ওদের সেবায় তিশা আসতে আসতে সুস্থ হচ্ছে।
তিশা এখন কাঁদে না চোখের পানি যেন শুকিয়ে গেছে,
চোখের পানি শুকিয়ে গেলেও,বুকের মাঝের ক্ষত এখনো সাড়েনি আর হয়তো কখনো সাড়বেও না।
তিশা এখন জীবন্ত লা’শ হয়ে গেছে,হাসিখুশি মেয়েটা আজ নিশ্চুপ হয়ে গেছে।
কিছুক্ষণ আগেই আয়েশা তিশাকে নাস্তা খাইয়ে বাসায় গিয়েছে,তিশা শুয়ে চোখ বন্ধ করে ছিল,তখন দরজা ঠেলে কেউ ভেতরে আসে,তিশা চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে একজন নার্স এসেছে,
ম্যাম আপনাকে ইনজেকশন দিতে হবে।
আপনি কে,যিনি আমার টেক কেয়ার করতো উনি কোথায়?
ম্যাম ও অসুস্থ,ওর পরিবর্তে আমি এসেছি।
ওহ।
এখন কি ইনজেকশন দিবো?
হুম দিন।
তিশা শুয়ে পরে নার্সটা তিশার কাছে এসে ওর হাত ধরে ইনজেকশন পুষ করে দেয়,কিন্তু তিশার যেন কেমন লাগছে,মাথা ঝিমঝিম করছো,চোখ দুটো ভারি ভারি লাগছে,সবসময় তো ইনজেকশন দেয় কই তখন তো এমন লাগে না,আজ কেন এমন লাগছে,
তিশা আর কিছু ভাবতে পারে না জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
চলবে কি?
[কেমন লেগেছে কমেন্টে জানাবেন,কোনো প্রকার ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন,কাল গল্প দিবো না,
পরশুদিন দিব।]