উপন্যাসের শেষ পাতায় তুমি পর্ব -৫৫ ও শেষ

#উপন্যাসের_শেষ_পাতায়_তুমি
#Writer_Tanisha_Akter_Tisha
#Part_55
(অন্তিম পর্ব)

কপি নিষিদ্ধ ❌

ওসমানদের রুমে,
ওসমানদের বেলকনিতে ছোট সিঙ্গেল বেড রাখা হয়েছে,ওসমান বেডে হেলান দিয়ে বসে আছে,আর ওর কোলে মাথা দিয়ে তিশা শুয়ে আছে।
ওসমান তিশার চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
হাসবেন্ডজ্বী তুমি খুশি তো?

আমি যে আজ কতোটা খুশি তা তোমাকে বলে বোঝাতে পারবোনা,আমার বরাবরই ছোট বেবি ভালো লাগে ওরা কতো কিউট হয়,ওদের কিউট কিউট ছোট ছোট হাত পা থাকে,আমাদেরও একটা কিউট বেবি হবে
বেবি তার ছোট ছোট হাত পা দিয়ে আমার সাথে খেলবে,আধোআধো গলায় আমাকে বাবা বলে ডাকবে,
তোমাকে মাম্মাম বলে ডাকবে,আমরা দুজন থেকে তিনজনে পরিণত হবো,তিশা কবে আসবে ও,
আমার যে ওকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।

হাহাহা তুমি ডক্টর হয়েও এমন বাচ্চাদের মতো কথা বলছো,ও দশমাস পর তোমার কাছে আসবে।
তুমি প্রথম ওকে কোলে তুলে নিবে আর সেই দৃশ্য দেখে আমার মন ভরে যাবে,হৃদয়ে প্রশান্তির হাওয়া বয়ে যাবে।

আমাদেরও একটা বেবি হবে যে আমাকে বাবা আর তোমাকে মাম্মাম বলে ডাকবে,দেখোনা এসব ভাবতেও কতো ভালো লাগছে।

তিশা শোয়া থেকে উঠে ওসমানকে জড়িয়ে ধরে,
জানো ওসমান আজ আমি অনেক খুশি অবশেষে সব ঝ’ড়ঝাপটা পেরিয়ে আমরা দুজন একসাথে,আমরা আবারও একসাথে হাসিখুশি আছি,শান্তিতে আছি,
ঐদিন গুলোর কথা ভাবলেও মনের মাঝে অজানা এক ভয় কাজ করে,কিন্তু এখন আমি তোমার কাছে তোমার বুকের মাঝে আছি,কথায় আছেনা সব ভালো তার শেষ ভালো যার,আমাদের শেষটা ভালো তাই আমাদের সবই ভালো।ইনশাল্লাহ আগামী পথ গুলো ভালোভাবে হাতে হাত রেখে পারি দিতে পারবো।

ওসমান মুচকি হেসে তিশার কপালে চুমু দিয়ে বলে,
আজ তোমাকে কিছু কথা বলবো মন দিয়ে শুনো।
তিশা ওসমানের কথা শুনে চুপটি করে ওর বুকের মাঝে শুয়ে রয়,ওসমান চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বলে,
তোমাকে আমি কষ্ট দিতে চাইনি জানপাখি,সিহাবকে ভয় পেয়ে ওর কথা মতো চলি নি,সিহাব কেন আমাদের নিজের ইশারায় নাচাতে চাইছে তা জানার জন্য এতো কিছু করেছি,যদিও একটা কথা সত্য আমি চাইলেও সবাইকে একসাথে বাঁচাতে পারতাম না,কারণ এটা মুভি না,না তো কোনো গল্প,এটা জীবন,বাস্তবতা।
সবাইকে একসাথে সুরক্ষিত রাখার জন্য আমি তোমাকে কষ্ট দিয়েছি অবহেলা করেছি,সিহাবের কথা মতো চলেছি,হ্যাঁ জানি আমি তোমার প্রতি অন্যা’য় করেছি কিন্তু কষ্ট যে তুমি একা পেয়েছো তা কিন্তু নয়,
আমিও প্রতিটা পদে পদে কষ্ট পেয়েছি,সিহাব ওর একটা ইচ্ছে পুরণ করতে পেরেছে ও তোমাকে আমাকে কষ্ট দিতে সক্ষম হয়েছে,কিন্তু তোমাকে অনেক ধন্যবাদ আমাকে মাফ করার জন্য সেকেন্ড চান্স দেওয়ার জন্য।

তিশা মুচকি হেসে বলে,
জানো এতো কিছু করার পরও কেনো তোমাকে দুরে সরিয়ে রাখি নি।
ওসমান মাথা নারায় যার অর্থ সে জানে না।
তুমি যদি সেদিন আমার কাছে না আসতে আমাকে না বোঝাতে তাহলে হয়তো তোমাকে সেকেন্ড চান্স দিতাম না,হ্যাঁ তোমার থেকে অনেক কষ্ট পেয়েছি,অনেক কেঁদেছি,তোমার উপর অনেক অভিমানও করেছি তবুও কেনো মাফ করেছি জানো কারণ আমি তোমাকে ভালোবাসি আর তুমিও আমাকে ভালোবাসো,হ্যাঁ কিছু সময় মানুষের জীবনে বাঁধা আসে,আমাদের জীবনেও বাঁধা এসেছে,কিন্তু শেষ অব্দি যে আমরা দুজন দুজনের পাশে আছি এটাই আমার কাছে অনেক,আজও আমার সেদিনের কথা মনে আছে,

সেদিন,
তিশা চোখ বন্ধ করতেই কেউ ওর রুমে আসে,সে ব্যাক্তি তিশার কাছে এসে চেয়ারে বসে তিশার মাথায় হাত রাখে,তিশাও চোখ মেলে তাকায়,
তুমি!

হ্যাঁ জানপাখি আমি।

তার মানে তখন আমি ভুল দেখিনি ঐ ছায়াটা তোমার ছিল!

হুম তখন ঐখানে আমি ছিলাম।

তোমার নতুন বউকে ঘরে রেখে আমার কাছে কেন এসেছো।

আমি তো আমার বউয়ের কাছেই এসেছি।

আমি তো তোমার এক্স ওয়াইফ।

উহুম তুমি আমার প্রেজেন্ট ওয়াইফ।

আমাদের তো ডিভোর্স হয়ে গেছো।

উহুম না তো আমাদের ডিভোর্স হয়েছে,না তো আমার আর জেসমিনের বিয়ে হয়েছে।

মানে!

মানে আমরা এখনো হাসবেন্ড ওয়াইফ।

কি!

জ্বী জানপাখি,এতদিন তোমার সাথে যা করেছি সব নাটক ছিল।

নাটক ছিল!

হুম নাটক ছিল।

কিন্তু কেন তুমি নাটক টা করেছিলে?

সিহাবকে ধরার জন্য,ও কেন আমাদের ক্ষ’তি করতে চাইছে তা জানার জন্য,আমি পরিস্থিতির চাপে পরে তোমার সাথে এমনটা করেছি,এতটা কষ্ট দিয়েছি,এত কাদিঁয়েছি,বুঝতে পারছি না তোমার কাছে কিভাবে ক্ষমা চাইবো,কোন মুখে ক্ষমা চাইবো,তুমি জিগ্যেস করেছিলে না আমি কেন তোমার কান্না দেখে নিশ্চুপ থাকি আমার কি কষ্ট হয় না?
হয় জানপাখি খুব কষ্ট হয়,তোমাকে যতোটা কষ্ট দিয়েছি তার থেকে দ্বিগুণ কষ্ট আমি পেয়েছি,
তুমি যত না কেঁদেছো তার থেকে বেশি আমি কেঁদেছি,
তোমার কি মনে হয়েছে আমি তোমাকে একদিনও
বুকে নিয়ে ঘুমাইনি?
উহুম তুমি ভুল ভেবেছো প্রতিদিন রাতে আমি বাসায় এসে তোমাকে বুকে নিয়ে ঘুমাতাম,তুমি গভীর ঘুমে থাকতে তাই বুঝতে পারতে না,ভালোবাসি তোমায় এতো সহজে কি করে তোমার থেকে দূরে সরে যাই বলো,তুমি যখন আমার বুকে মাথা রাখতে তখন আমার বুকের ভিতর জ্ব’লতে থাকা কষ্টের আ’গু’ন কিছুক্ষণের জন্য নিভে যেতো,জানো আমি তোমার চোখের দিকে তাকাতে পারতাম না,তোমার চোখের দিকে তাকালে আমাকে অ’প’রা’ধ বোধ ঘিরে ধরতো,তোমাকে আমি অনেক কষ্ট দিয়েছি সরি জানপাখি সরি।

তিশা ওসমান দুজনের চোখে পানি।

জানপাখি তোমাকে এভাবে দেখতে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে,আমাকে কেউ তোমার কাছে আসতে দেইনি,
এক পলক দেখতেও দেয়নি,আমাকে মাফ করে দাও জানপাখি তোমার অসুস্থতার জন্য আমি দায়ী,
আমি দায়ী।
ওসমান কাঁদতে কাদঁতে তিশার হাত জড়িয়ে ধরে তিশা আর নিজে আটকাতে পারে না ওসমানকে জড়িয়ে ধরে কাদেঁ দেয়,ওসমানও তিশাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।

তিশা মুচকি হেসে বলে,
সেদিন যদি তুমি আমার কাছে না আসতে তাহলে হয়তো আজ তুমি আমি একসাথে থাকতে পারতাম না,
না তো আমাদের বেবি আসতো,আমি পারিনি তোমাকে
শা’স্তি দিতে,নিজের থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারিনি,
পারিনি পা’ষা’ণ হতে,কি করে পা’ষা’ণ হবো বলো আমি যে তোমাকে কাছে পাওয়ার ম’রিয়া হয়ে উঠে ছিলাম,
তোমাকে দুরে সরিয়ে নিজের কষ্টে বাড়াতে চাইনি।জীবনে অনেক কষ্ট পেয়েছি আর কষ্ট পেতে চাইনা,
বাকিটা জীবন শান্তিতে তোমার বুকের মাঝে থাকতে চাই,তোমার সাথে হাজার পথ পারি দিতে চাই।থাকবে তো আমার সাথে ধরবে এই হাত।

হুম থাকবো তোমার পাশে,কখনো ছাড়বো না এই হাত,
তোমাকে সব সময় ভালোবেসে যাবো,আজ তোমাকে কথা দিচ্ছি জীবনে যতোই ঝ’ড় আসুক না কেন নিজের থেকে কখনো তোমাকে দূরে সরাবো না,কষ্ট দিবো না।
সব সময় ভালোবাসার চাদরে জড়িয়ে রাখবো,
আগলে রাখবো।

আমি আর ঐ দিনগুলো মনে করতে চাইনা,সব ভুলে যেতে চাই।

আমিও সব ভুলে যেতে চাই।

হাসবেন্ডজ্বী তোমার জন্য একটা গিফট আছে।

গিফট!

হুম,দাঁড়াও আমি নিয়ে আসছি।

তিশা রুম থেকে একটা রেপিং পেপার দিয়ে মোড়ানো বই নিয়ে আসে।

বইটা বাড়িয়ে দিয়ে,
এটা তোমার জন্য।

কিসের বই এটা?

আমার লেখা উপন্যাসের,এই উপন্যাসে আমাদের সম্পর্কের শুরু থেকে শেষ অব্দি লেখা আছে।

তুমি উপন্যাস কখন লিখলে?

যখন তুমি বাসায় থাকতে না তখন লিখতাম।

কি নাম দিয়েছো এই উপন্যাসের।

খুলে দেখো।

ওসমান রেপিং পেপার খুলে দেখে বইয়ের কভার পেজে খুব সুন্দর করে লেখা,
“#উপন্যাসের_শেষ_পাতায়_তুমি”।

ওসমান মুচকি হেসে বলে,
#উপন্যাসের_শেষ_পাতায়_তুমি।

হুম,আমার জীবনের উপন্যাসের শুরুতে যা কিছু হোক না কেন শেষ অব্দি তুমি আমার পাশে আছো তাই বইটার নাম দিয়েছই #উপন্যাসের_শেষ_পাতায়_তুমি।
জানো আজ আমি ডাবল খুশি।

ডাবল খুশি!

হুম,আজ আমি জানতে পেরেছি আমার গর্ভে ছোট একজন বেড়ে উঠছে,আমি মা হতে চলেছি,
আর আজই জানতে পারলাম আমার উপন্যাস পাবলিশ করা হয়েছে।

সত্যি!

হুম হুম সত্যি ওহ ওসমান আমি যে কতো খুশি তা তোমায় বোঝাতে পারবো না।

ওসমান তিশার পেটে কান ঠেকিয়ে বলে,
শুনলে বাবা তুমি আসবে বলে তোমার বাবা আর মাম্মা কতো খুশি,তুমি না তাড়াতাড়ি চলে এসে তাহলে তোমার মাম্মাম আরো খুশি হয়ে যাবে।

ওসমানের কান্ড দেখে তিশা হেসে দেয়।

বেবি তোমার বাবা বেশি খুশি তাই বাবার জন্য হলেও তাড়াতাড়ি চলে এসো।

তিশা ওসমান একে অপরের দিকে তাকিয়ে হেসে দেয়।

ওসমান বেডে শুয়ে পরে আর তিশা ওসমানের বুকে,
হাসবেন্ডজ্বী আমাদের দুজনকে আগলে রাখবে তো?

হুম রাখবো।

আমাকে এভাবেই ভালোবাসবে তো?

হুম সব সময় ভালোবেসে যাবো,
শেষ নি’শ্বা’স অব্দি ভালোবেসে যাবো।
তুমি ভালোবাসবে তো?

হুম জীবনের শেষ নি’শ্বা’স অব্দি ভালোবাসবো।

ওসমান তিশার মাথায় চুমু দেয়,তিশা মুচকি হেসে ওসমানের বুকে চুমু দিয়ে বলে,
Jis tarah main ne duaoon
Mein tujhe maanga hai
Aise rab se na kisine
Tujhe maanga hoga.

তিশার কথা শুনে ওসমান মুচকি হাসে আর ওর হাসি দেখে তিশাও হেসে দেয়।

সমাপ্ত।

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here