উমা পর্ব -২৩

#উমা [কপি করা নিষেধ]
#২৩তম_পর্ব

উমা জল ছেড়ে দিলো। কোমল গাল বেয়ে নোনাজলের স্রোত গড়াচ্ছে। উমার জল যেনো তীরের মত বিধছে রুদ্রের বুকে। নিজেকে আটকে রাখতে পারলো না সে। তড়িৎ গতিতে উমাকে জড়িয়ে ধরলো সে। নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে বললো,
“কথা দিচ্ছি উমা, আর কখনো তোমাকে অভিযোগের সুযোগ দিবো না। কখনো তোমার কাজলকালো চোখে অশ্রুর বিন্দু জমতে দিবো না। কথা দিলাম”

উমা মুখ তুলে চাইলো। রুদ্র তখন পরম আদরে তার অধরজোড়ায় গভীর ছোয়া একে দিলো। আজ কেনো যেনো উমা বাধা দিলো না। অভিমানের প্রাচীর ভাঙ্গছে ধীরে ধীরে। ঘরের নৈঃশব্দ্যতা ভালোবাসার উষ্ণ আবেশে মুখোরিত হলো। সেই মূহুর্তেই ডিমের প্লেট নিয়ে হাজির হলো ফুলির মা। ফুলির মার আকস্মিক আগমনে স্বম্বিত ফিরে উভয়ের। উমা খানিকটা সরে দাঁড়ায় রুদ্রের থেকে। কোমল গাল জোড়া উষ্ণ লালিমায় রঞ্জিত হয়ে রয়েছে। ফুলির মা বরাবরি এমন, তার জায়গা জ্ঞান নেই এর কাছাকাছি। স্বামী স্ত্রীর অন্তরঙ্গ মূহুর্তে তার আকস্মিত উপস্থিতিতে সে মোটেই লজ্জিত নয়। বরং নির্বিকার চিত্তে বললো,
“নাও নাও, রুদ্র দা খায়ে লও। কত্তা মা পাঠাইছে।“
“তোমার বোধ কোনোদিন হবে না তাই না?”
“বারে, আমার কি দোষ। ফটক খুইলে প্রেম করলে আমি কেমনে বুঝবো। এখন আমি যাচ্ছি গা, তুমি দরজা দিয়ে চুম্মাচাটি করো”

উমার ইচ্ছে হলো লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে। এতোটা অপ্রস্তুত এই প্রথম হলো। রুদ্র খানিকতা বিব্রত বোধ করলো। ফুলির মা ডিমের থালা রেখে বেড়িয়ে গেলো। উমা থালাটা এগিয়ে দিয়ে বললো,
“খেয়ে নিন, বলের অভাব হয়েছে আপনার”
“কে বলেছে তোমায়?”
“রহিম কাকু তো বলে গেলেন”
“ও টাকা খাওয়ার ধান্দা, আমার মতো উচা লম্বা লোকের কি বলের অভাব হবে? এ মানা যায়।“
“উহু, বেশি কথা কেনো বলছেন। খেয়ে নিন না।“
“বেশ বল্লুম না। কাজের কথা বলি।“
“বলেন”
“আগামীকাল তোমার কলেজ ভর্তি। সক্কালে বের হবো। প্রিন্সিপালের সাথে আমার কথা হয়ে গেছে। উনি আমাকে ভালোভাবে চেনেন। বলেছে তোমার ভর্তি হয়ে যাবে। যদিও বছরের মাঝে কিন্তু নিবে বলেছেন”

রুদ্রের কথা শুনে উজ্জ্বল হয়ে উঠে বিমর্ষ মুখখানা। এতো কাজের মাঝেও রুদ্র তার ভর্তির সকল ব্যাবস্থা করে এসেছে দেখে সন্তোষের কোমল দোলা মনকে পুলকিত করে তুললো। নমনীয় কন্ঠে বললো,
“আপনার মনে ছিলো?”
“থাকবে না কেনো?”
“এমনি”
“সব ভুললেও দুজন নারীকে আমি ভুলতে পারি না। একজন যে এই ডিমের পেছনে ছুটেছে, আরেকজন তুমি।“
“আমার জন্য তো অপর জন বেশ চটেছেন”
“পুরোনো দিনের মানুষ কি না। তাদের চিন্তাধারা এক বাক্সে বন্দী। স্বামী, সন্তান এবং সংসার। এর বাহিরে কখনো সে বের হতেই পারে নি। আমি চাই না তুমি সেই বাক্সে আটকে থাকো। আমি চাই তুমি আমার সাথে সাথে এগোও।“
“আপনি কি এবার সত্যি ভোটে দাঁড়াবেন?”
“রাজনীতি আমার রক্তে আছে, রক্ত তো শরীর থেকে আলাদা করতে পারবো না।“

উমা চুপ করে গেলো। তার নীরবতাকে উপলব্ধি করতে পারলো রুদ্র। রুদ্র তার চোখে চোখ রাখলো। কি অদ্ভুত না, কাজলকালো চোখের আড়ালে লুকিয়ে থাকে শত সন্তোষ, বিষাদের উপকথা; তবুও এই চোখের ভাষা বোঝা বড় দায়। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
“চিন্তা করো না, আমি আর কারোর রক্তে হাত রাঙ্গাবো না। একজন ভালো নেতা হয়ে দেখাবো তোমায়।“
“ভালো মানুষটি হওয়া কি খুব কঠিন।“
“কঠিন নয়, তবে আমি হতে চাই না। এই দুনিয়া ভালো মানুষের নয়। ভালো হয়ে ভালো থাকা যায় না। হিংস্র পশুরা ছিড়ে খাবে। আমার দূর্বলতাকে বাঁচাতে হলেও আমাকে শক্ত হতে হবে। শুধু একটাই আবদার, বিশ্বাস রেখো। বিশ্বাস আমি ভাঙ্গবো না।“

উমা গভীর নয়নে তাকালো রুদ্রের দিকে। আজ যেনো রুদ্রকে বড্ড চেনা লাগছে তার। সেই চেনা মানুষ যাকে ভালোবাসতে ইচ্ছে হয়। হ্যা, রুদ্রকেও ভালোবাসতে ইচ্ছে হয় তার। সে কি তবে মনের আঙ্গিনাতে ঠায় দিয়েছে এই নিষ্ঠুর মানবকে। কে জানে, হয়তো__________________

অভিনব সিংহ এর সামনে দাঁড়িয়ে আছে রুদ্র। অভিনব সিংহ পাইপ টানতে ব্যাস্ত। তিনি বেশ আয়েশ করেই পাইপ টানছেন। এতে রুদ্র বেশ বিরক্ত ই হচ্ছে। চোখ কুচকে বাবার দিকে তাকিয়ে আছে সে। বিগত আধা ঘন্টা যাবৎ অহেতুক ই সে অভুনব সিংহের সামনে বোকার মত দাঁড়িয়ে আছে। কারন বাবা তাকে জরুরি তলপ পাঠিয়েছে। কিন্তু রুদ্র বুঝতে পারছে না বাবা জরুরি ভাবে ডেকে কেনো পাইপ টানতে ব্যাস্ত। হাত ঘড়িটার দিকে বারে বারে সে তাকাচ্ছে। রাতের খাবার সময় প্রায় হয়ে এসেছে। বরাবর ই দ্রুত খাবার রেকর্ড অভিনব সিংহ এর। আজ যেনো খাবারের কথা ভুলেই গিয়েছেন তিনি। সে বেশ আয়েশ করে চুরুট টানতেই ব্যাস্ত। একরাশ বিরক্তি নিয়ে রুদ্র বললো,
“বাবা, ডেকেছিলেন যে। কিছু বললেন না, আমি কি চলে যাবো।“
“যাবে কেনো? বাবার সাথে দু মিনিট বসো। তোমার মা বলছিলো, কাল বৌ মা এর কলেজে নাকি ভর্তি”
“আজ্ঞে, হ্যা।“
“তাহলে কালীগঞ্জেই যাবে তোমরা?”
“তখন তো কথা হলো”
“হ্যা তা হলো, কিন্তু কালীগঞ্জ গেলে তুমি গুদাম কিভাবে দেখবে?”
“আমি তো জানালাম ই আমি এবার ভোটে মেম্বার হিসেবে দাঁড়াতে চাই। আর সত্যি বলতে লোকের কানে ঢি ঢি পড়ে গেছে আপনার জেলে যাওয়া। আমার মতে এসব থেকে আপনার বিরতি নেওয়াই উচিত। লোকে কি বলবে? চেয়ারম্যানকে পুলিশ ধরেছে। এর চেয়ে বরং আমিও রাজনীতিতে যোগ দেই। কালীগঞ্জে থাকলে আপনার সুবিধা বই অসুবিধা হবে না। একেক ভেতর দুই। আপনার পাল্লাও বাড়বে, আপনার নাম ও পরিষ্কার হবে।“

অভিনব সিংহ এবার চোখ মেললেন, পাইপ রেখে নড়ে চড়ে বসলেন। ভ্রু যুগল কুঞ্চিত করে তীর্যক চাহনী প্রয়োগ করলেন রুদ্রের দিকে। কিন্তু রুদ্র নির্বিকার। অভিনব বাবু গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
“তুমি কি সেদিনের ব্যাবহারে গোসা করেছো?”
“গোসা কেনো করবো বাবা?”
“না আসলে সেদিন একটু বেশি ই বলেছিলুম কি না। গোসা করে যদি আমার থেকে দূরে যেতে চাও তবে বলবো। এমন টা করো না। আমি তো বারো ঘাটে জল খেয়েছি। মানুষ ধরতে আমার সময় লাগে না। এসব অজুহাত দিলে কি আমি শুনবো। পুলিশ কেস এমনটা এই জীবনে কম সামলাই নি। এই আবদুল্লাহ এর জন্য তোমার সাহায্যের প্রয়োজন নেই আমার। তুমি এবার ঝেড়ে কাসো তো বাছা”
“সত্যি বলবো বাবা?”
“বলো”
“আমি উমাকে আপনার এই বন্দিশালা থেকে মুক্ত করতে চাই………………

চলবে

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here