#এই_অবেলায়_তুমি
#পর্ব_৩৩
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
আজ দু দিন হলো আদির কোনো খুঁজ খবর নেই। বাসায় আসে না, কারো কাছে কল দেয় না। বাসা থেকে কল দিলে মোবাইল বন্ধ দেখায়। খুব টেনশনে মেঝো আম্মু অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
রুহি গিয়ে ওর শাশুড়ীর সামনে দাঁড়াতেই উনি বলে উঠলো, ‘ কেমন মেয়ে তুমি! আজ দুইটা দিন স্বামী বাড়িতে নেই। তোমার কোনো চিন্তা আছে..? আছই তো শুধু রূপচর্চা নিয়ে। স্বামীর খুঁজ খবর রেখে কি করবে।
শায়েলা বেগমঃ আহ্ মেঝো থাম তো। আবির দেখছে আদি কোথায় আছে।
রুহি অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে ড্রয়িং রুমে শাশুড়ীর পাশে দাড়িয়ে আছে। চোখে জল চিকচিক করছে। ওর রাগ শুধু নূরের উপর। না হলে এই বাড়ির প্রত্যেকটা সদস্য কে ও খুব পছন্দ করে। শান্ত সৃষ্ট মেঝো আম্মুর মুখে এমন কড়া কথা শুনে চোখ জ্বালা ধরে উঠলো।ও ভাবতেও পারছে না ওর জীবনে কি ঘটতে যাচ্ছে।
নূর আর ইরিন বসে আছে ক্যান্টিনে।
নূরঃ কি বলবি বল..?এমন কি কথা যা বলার জন্য এত কাহিনি করলি। এবার বল.??
ইরিনঃ কাহিনি করলাম কই! জাস্ট একটু পর পর কল দিয়েছি।
নূরঃ আচ্ছা যাই হোক এবার বল…
ইরিনঃ শুন তাহলে, কালকে রাত ২টার দিকে একটা কল আসলো মেবাইলে। এটা নতুন কিছু না প্রায়ই মধ্য রাতে এমন কল আসে। তবে কোনো কথা বলে না। শুধু নিশ্বাসের শব্দ ছাড়া কিছুই শুনা যায় না। তবে কয়েক দিন আগে তোর বিয়ের দিন রাতে ওই আগুন্তকঃ আমার সাথে কথা বলেছে তবে ঘুমের কারনে কন্ঠ চিনতে পারিনি। তারপর কাল কে আবার কল দিলো। কাল আমি পড়তে ছিলাম ওই সময়। যেহেতু জেগে আছি কল রিং হওয়ার সাথে সাথেই ধরলাম ওপাশ থেকে বলে উঠলো,
শোনো গো দক্ষিনো হাওয়া
প্রেমে পড়েছি আমি।
লেগেছে চোখেতে নেশা
দিক ভুলেছি আমি।
তারপর একদম চুপ হয়ে গেলো।
ইরিনঃ আপনি কে..?প্রতি রাতে আমাকে কল কেনো দেন???
~আজকের চাঁদ টা খুব সুন্দর। চাঁদের আলোয় মধ্য রাতেও চারপাশ আলোয় আলোকিত হয়ে আছে।
ইরিনঃ আমার উওর কিন্তু এটা নয়…
~আমি উওর দিতে ইচ্ছুক নই।
ইরিন রেগে বলে উঠলো, ‘ তাহলে কল দেন কেনো?? আপনাদের মতো বখাটে ছেলেদের কাজ রাত বেরাতে মেয়েদের কল দিয়ে ডিস্টার্ব করা!
~তুমি কি বিরক্ত হচ্ছো..?
ইরিনঃ অবশ্যই মাঝ রাতে একটা ছেলে চিনা নেই জানা নেই ফোন দিয়ে অদ্ভুত অদ্ভুত কথা বললে সবাই বিরক্ত হবে।
~সবাই বিরক্ত হবে সেটা আমিও জানি কিন্তু তুমি তো হচ্ছো না। বিরক্ত হলে আমি কল দিলে কখনই রিসিভ করতে না।
ইরিন এবার একদম চুপ হয়ে গেলো৷ আসলেইতো ও কেনো ফোন ধরলো। কেনো ফোনের অপেক্ষায় এত রাত পর্যন্ত জেগে আছে..?
~কি হলে বলো..? বিরক্ত হচ্ছো নাকি ঠোঁটের কোনে হাসি লেপ্টে আছে।
ইরিন কিছু না বলেই খট করে ফোন রেখে দিলো।
ওপর পাশের মানুষটি ফোন কেটে দেওয়ার পর হুঁ হুঁ করে হেসে উঠলো।
ইরিন নূরের দিকে তাকিয়ে বললো,’ শুনলি তো সব কিছু এখন বল ছেলেটা কে হতে পারে..?
নূর ভাবান্তর দৃষ্টিতে ইরিনের দিকে তাকিয়ে বললো,’ তোর এই প্রেমিক পুরুষ আসলো কই থেকে..? আর লুকোচুরিই বা খেলছে কেনো??
ইরিনঃ একদম প্রেমিক বলবি না!!
নূরঃ তাহলে কি বলবো??
ইরিনঃ লুকোচুরি পুরুষ!
সারাদিন ভালোই কাটলো ক্লাস রুম থেকে বের হতেই একটা ছেলে এসে সামনে দাঁড়ালো।
~আপনাদের মধ্যে নূর কে..?
ইরিনঃ কেনো??
~বড় ভাই ডাকতেছে… পুকুর পাড়ে ভাই দাঁড়িয়ে আছে। বলেই ছেলেটা যেদিক দিয়ে আসছিলো ওই দিকে আবার দৌড়।
কিসের বড় ভাই? কার বড় ভাই? আর ওকেই বা ডাকছে কেনো? যাবে না, যাবে না করেও কৌতুহলে এগিয়ে গেলো পুকুর পাড়ে।
ইরিনঃ নূর যাওয়া লাগবো না। চল বাসায় চলে যাই
নূরঃ এসেই তো পরছি.. বলে সামনে তাকিয়ে দেখে শুভ মামা তুক্কো শুভ ভাই গাছের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ওদের দিকেই তাকিয়ে আছে।
ইরিন ফিসফিস করে বললো,’ এই ব্যাটা এখানে কি করে..?
নূর ও ইরিনের মতো ফিসফিস করে বললো, ‘ কি জানি, কি করে আমি কেমনে যানমু।’
নূরকে দেখে শুভ ভাই এক পা এক পা করে এগিয়ে আসলো।
নূর আর ইরিন উনার দিকে তাকিয়ে সালাম দিলো।
উনি সালামের উওর না দিয়েই তাকিয়ে আছেন।
ওরা এক জন আরেক জনের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো।
নূরঃ কেমন আছেন..?
শুভ নূরের দিকে তাকিয়ে আছে। নূরের চোখ গুলো শুভর খুব ভালো লাগে।নূর যখন বড় বড় ডাগর ডাগর আঁখি তুলে ওর দিকে তাকায় ওর মনে হয় থমকে যাজ সব কিছু সময়,পরিস্থিতি, দূরত্ব। নূরের এই চোখে তাকিয়ে সে চেয়ে ছিলো তিল তিল করে গড়ে তোলা পাপের পথ থেকে বের হয়ে আসতে। কিন্তু নিয়তি যে অন্য কিছু চায়।
আচমকাই শুভ নূরকে জড়িয়ে ধরলো।
ইরিন মুখে হাত দিয়ে চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে।
নূর মনে হয় জমে গেছে।
শুভ নূরকে জড়িয়ে ধরেই বললো,’ আমি তোমার কথা বিশ্বাস করি নূর। আমি অন্য কারো কথা বিশ্বাস করি না। আমার নূরের বিয়ে কখনো অন্য কারো সাথে হতেই পারে না।
নূর শুভকে এক ধাক্কায় দূরে সরিয়ে দিলো। হাত উঠাতে নিয়েও নিজেকে সামলে নিলো। রাগে শরীর কাঁপছে।চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলো।
শুভর দিকে তাকিয়ে হুংকার দিয়ে বলে উঠলো, ‘ আপনার এত বড় সাহস হয় কিভাবে আমাকে জড়িয়ে ধরার। আপনার এই হাত আমি চাইলে এখন ভেঙে গলায় ঝুলিয়ে দিতে পারি।
নূরের এই হুংকার মনে হয় কোনো কাজে আসলো না। শুভ ভয় পাবে তো দূর হুঁ হুঁ করে হাসা শুরু করলো।
শুভঃ খুব ভয় পেয়েছি নূর এভাবে ভয় দেখিও না।তোমার এই রূপ দেখলে আমি আবার নতুন করে প্রেমে পড়ি। তুমি চাইলে আমি আমার জীবন দিতেও রাজি। কিন্তু তুমি অন্য কারো সেটা শুনতে রাজি নই।
নূরঃ বাংলা সিনেমার ডায়লগ শেষ! আর নেক্সট টাইম আমার হাত ধরার ও সাহস দেখাবেন না!
ইরিনের দিকে তাকিয়ে বললো, চল ইরিন।
নূর পিছন ঘুরে চলে যেতে নিলে শুভ আবার নূরের হাত শক্ত করে ধরে।
এবার আর কোনো দিকে না তাকিয়ে ঠাস করে থাপ্পড় পরলো শুভর গালে।
নূরঃ আপনার সাহস দেখে আমি অবাক না হয়ে পারছি না। নিষেধ করার পর ও বেহায়া,বখাটে ছেলেদের মতো হাত কেনো ধরছেন?
শুভ হয়তো ভাবতে পারেনি নূর সত্যি ওকে থাপ্পড় মারবে।নিচের দিকে তাকিয়ে বললো,’ আমার কথা এখনো শেষ হয়নি..!
ইরিন অবাক হয়ে কতক্ষন নূরের দিকে আবার শুভর দিকে তাকাচ্ছে।
ও কলেজে ওঠার পর থেকে অনেক শুনেছে শুভ ভাই সম্পর্কে খুবই ডেঞ্জারাস লোক আবার কত মেয়ের ক্রাশ আজ সেই ছেলে একটা মেয়ের হাতে মার খেয়েও এত চুপচাপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এটাও ভাবা যায়!
নূরঃ জ্বি বলুন…!?
শুভঃ তুমি কি জানো আমি চাইলে এখন তোমার অবস্থা কি করতে পারি।
নূর ও কাটকাট কন্ঠ বলে উঠলো, ‘ আপনার এই সব থার্ড ক্লাস থ্রেড এখানে আমাকে দেখাতে আসবেন না। আমি অন্য সবার মতো না। এই সবে আমি ভয় পাই না।
শুভ নূরের দিকে তাকিয়ে হাসি দিলো। নূরের নিচ থেকে উপর পর্যন্ত এক পলক তাকালো।সাদা সেলোয়ার-কামিজ পরিহিত নূরকে দেখে মনে হচ্ছে এক টুকরো মেঘ ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে। শুভ মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে।
শুভঃ আমি জানি তুমি খুব সাহসী মেয়ে। না হলে শুভ ভাইয়ের কলিজার টুকরো এক মাত্র ভাইকে মেরে হসপিটালে পাঠানোর মতো সাহস এই এলাকায় কারো নেই। আর তুমি তো নিতান্ত একটা বাচ্চা মেয়ে। তোমার এই সাহসী কতাই আমাকে তোমার প্রতি দূর্বল করে তুলে।
নূর কিছু বলছে না নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
শুভ আবার বললো,’ আমি যা শুনেছি সব মিথ্যা না নূর..? আমি জানি সবাই আমাকে মিথ্যা বলেছে। তাও মনের ভিতর কেমন যেনো করছে। সত্যি করে একটা কথা বলবে।
নূর আবার শুভর দিকে তাকালো। ছেলেটার চোখ অসম্ভব লাল হয়ে আছে তাও নিজেকে কত সুন্দর শান্ত রাখার চেষ্টা করছে। চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে।
শুভঃ তোমার নাকি বিয়ে হয়ে গেছে..?
নূর নিজেকে সামলে সুন্দর করে হাসি দিয়ে বললো,’ আসলে হঠাৎ সব কিছু হয়ে গেলো তাই কাউকে বলা হয় নি। জ্বি ভাইয়া আমার বিয়ে হয়েছে।
শুভঃ তুমি ও কি মজা করছো..?
নূরঃ আপনার সাথে কি আমার মজা করার সম্পর্ক যে মজা করবো।
শুভঃ তোমার বিয়ে হলেও আমি তোমাকে আমার করেই ছারবো! আমার জীবনের প্রথম ভালোলাগা ভালোবাসা তুমি।এত সহজে আমার কাছ থেকে মুক্তি পাবে না। বিয়ে হয়েছে তো কি হয়েছে। আমার স্পর্শ ছাড়া তুমি সর্বদাই আমার কাছে কুমারী। শুভ স্থির নয়নে তাকিয়ে বড়ো বড়ো পা ফেলে সামনে থেকে চলে গেলো।
ইরিন ভয়ে নূরের হাত আঁকড়ে ধরলো। এবার কি হবে নূর..?
————
বাসায় এসে শুনে মাহি আর ফায়াজ চলে গেছে। হঠাৎ নাকি রোকেয়া বেগম অসুস্থ হয়ে পরেছেন তাই ওরা চলে গেছে।
নূরের মন এমনিতেই খারাপ ছিলো তাই বেশি না গেঁটে নিজের রুমে চলে গেলো।
সন্ধ্যায় পাশের বাসার রাবেয়া আন্টির ছেলে আর ছেলের বউয়ের জন্য অনুষ্ঠান অনেক মানুষ দাওয়াত করেছেন রাবেয়া বেগম। উনার একটা মাত্র ছেলে। পালিয়ে বিয়ে করেছে তো কি হয়েছে এখন আবার অনুষ্ঠান করে সবাইকে দাওয়াত দিয়েছেন।
সন্ধ্যায় আন্টির বাসায় সবার দাওয়াত।
বিকেলে নীল বের হলো রিফাত ভাইয়ের দোকানের উদ্দেশ্যে। দোকানের সামনে এসে দাঁড়াতেই নীল কে দেখে খুশিতে গদোগদো হয়ে রিফাত ভাই চা বিস্কুট এগিয়ে দিলো।
নীল বলে উঠলো,’ কি ভাই মন এতো ফুরফুরে কেনো..? ভাবি ভালোবাসার কথা বলছে নাকি..?
রিফাত ভাইঃ নেও ধরো চা বিস্কুট। এখনো বিয়া করলাম না আবার ভাবি আসবো কই থাইকা! হাসতে হাসতে বললো।
নীলঃ আহ্ ভাই তুমিও না। কাল যেটা দিলাম পুরাই লাল টাটকা টমেটো চালিয়ে যাও।খুব জলদি পটে যাইবো।বলে চা মুখে দেওয়ার আগেই কেউ এক ঝটকায় হাত থেকে চা নিয়ে নিজের মুখে লাগিয়ে চা খাওয়া শুরু করলো।
নীল ঘার ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখে ইরিন মানে ওর হরিণ এদিক ওদিকে তাকিয়ে মনে সুখে চা খাচ্ছে। দেখে মনে হচ্ছে চা না শরবত খাচ্ছে।
নীল সামনে তাকিয়ে বললো,’ রিফাত ভাই চা কি গরম না..?’
রিফাত ভাই বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে বললো,’ ভাই তোমার যদি গরম লাগে। তাহলে আফা মনি যে তোমার মনে আছে ওখানে গরমে গলে যাইবো তাই ঠান্ডা করে চা দিছি।
নীল হতভম্ব হয়ে গেছে উনার কথা শুনে। পিছনে তাকিয়ে দেখে হরিণ রিক্সায় উঠে গেছে।
এটা তো আর চা না যে ফুঁ দিয়ে দিয়ে খেতে হবে। শরবতের মতো চা একটানে খেয়ে ফেলেছে। আর নীল জিজ্ঞেস করায় ব্যস্ত তাই রিক্সা পেয়ে উঠে গেলো।
এখানে থাকলেই নীল বকবক শুরু করবে এত সুন্দর নামটা কে পচিয়ে নর্দমার পানির মত না!না! বন জংগলের পশুর নাম বানিয়ে ফেলবে।
সন্ধ্যায় সবাই রেডি হয়ে নূরকে বলছে রেডি হতে। কিন্তু নূর বলে দিয়েছে সে কিছুতেই যাবে না। শাশুড়ী আম্মুর ডাকে দরজা খুললো।
শাশুড়ী আম্মুঃ নূর আমি চাই তুমি পাঁচ মিনিটে রেডি হয়ে বের হও।
শাশুড়ী আম্মুর মুখের উপর কোনো কথা বলতে পারলো না।
উনি রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় নূরকে একটা শাড়ি আর কিছু সাজগোজের জিনিস দিয়ে যায়।
সন্ধ্যায় নূর হালকা বেগুনি রঙের সিল্কের শাড়ি যার পাড়টা কালো রঙের।
মুখে ফেইস পাউডার, কাজল আর হালকা করে লিপস্টিক।
এই হালকা সাজেই নূরকে খুব সুন্দর লাগছে। ঠোঁটের নিচে একটা ছোট্ট তিল যার জন্য মুখের সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে।
চলবে….
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।#এই_অবেলায়_তুমি
#পর্ব_৩৪
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
নূরকে এই হালকা সাজে খুব সুন্দর লাগছে। । সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতেই শায়েলা বেগম বললে,’ মাশাল্লাহ খুব সুন্দর লাগছে। ‘
একে একে সবাই খুব প্রশংসা করলো।
আদিবা, শুভ্রতা,রুহি সবাই শাড়ি পড়ে খুব সুন্দর করে সেজেছে। রুহি যাবে না কিন্তু শুভ্রতা জোর করে রেডি করিয়েছে।
ছেলেরা কেউ যেতে পারবে না।
সবাই রেডি তখনই শায়েলা বেগম এর মুঠোফোনে বেজে উঠলো।
শায়েলা বেগমঃ হ্যালো..
রুদ্রঃ আসসালামু আলাইকুম আম্মু।
শায়েলা বেগম সালামের উওর দিয়ে। আরো অনেক কিছুই বললেন। রুদ্র রাবেয়া আন্টির বাসায় নূরকে নিয়ে যেতে একদম নিষেধ করে দিলো। ও যেহেতু নেই তাই ওর বউ যেতে পারবে না। ওর বউ যেনো বাসায় থাকে।
হাজার বুঝানোর পরেও রুদ্র রাজি হলো না।
শায়েলা বেগম নূরের সামনে এসে চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছেন। কিভাবে নিষেধ করবেন বুঝতে পারছেন না।
নূরঃ কি হয়েছে বড় আম্মু..?
শায়েলা বেগম নূরকে রুদ্রের নিষেধ করার বিষয়টা বললো।
নূরঃ সমস্যা নেই। তোমরা যাও আমার এমনিতে যেতে ইচ্ছে করছে না।
শায়েলা বেগম যেতে চাননি নূর অনেক কিছু বুঝিয়ে জোর করে ওদের সাথে পাঠিয়েছে।
নূর শাড়িটা আর চেঞ্জ করলো না। গহনা গুলো খুলে রাখলো৷ মনটা হালকা খারাপ হয়ে গেলো। প্রথম যেতে রাজি না হলেও রেডি হওয়ার পর মন বললো যেতে আর তখনি এই সাদা হনুমান কি করলো!! হুহ্
আজ যত যাই হোক এই সাদা হনুমানের সাথে কোনো কথাই বলবে না নূর।
মোবাইল হাতে নিয়ে ঘাটাঘাটি করছে এমন সময় আননোন নাম্বার থেকে কল আসলো৷ প্রথম কল এসে কেটে গেলো নূর ধরলো না। আবার সাথে সাথে কল আসলো। এবার কল রিসিভ করে কানে দিতেই কেউ বলে উঠলো, ‘ ইচ্ছে করে প্রথম কল ধরো নি তাই না..?
নূর চুপ করে বুঝার চেষ্টা করলো কে ফোনের ওপাশের ব্যক্তিটি।রুদ্র ভাইয়ার কন্ঠ তো এমন নয়।
~কি হলো এখনো চিনতে পারো নি..?
নূরঃ পরিচয় না দিলে চিনবো কিভাবে.??
ওপাশের লোকটি হয়তো একটু হাসলো।
~ আচ্ছা বাদ দাও চিনতে হবে না। বাসায় কি একা..??
নূর এদিক ওদিকে তাকানো শুরু করলো। ওপাশের পুরুষটির কথার ধরন দেখেই বুঝা যাচ্ছে উনি জানেন নূর বাসায় একা।
নূরঃ আপনি কে..?
~আমার প্রশ্নের উত্তর এটা নয়…
নূরঃ আমার উত্তর ও এটা নয়..
~এতো কথা পেঁচাও কেনো??
নূরঃ আপনি সঠিকভাবে উত্তর দিলেই তো হয়।
~ চোখ বন্ধ করো কন্ঠটা মনে করার চেষ্টা করো!!
নূর তাই করলো চোখ বন্ধ করলো।
চোখ, মুখ, শক্ত করে শক্ত কন্ঠে বলে উঠলো,”শুভ ভাই”
রুদ্র অনেকক্ষন ধরে নূরের মোবাইল ফোন দিচ্ছে বার বার এক বিরক্ত কর মহিলা একি কথা বলছে “আপনি যেই নাম্বারে কল দিয়েছেন সে টি এখন ব্যস্ত আছে” বিরক্ত হয়ে ফোনটা পাশে রেখে চোখ বন্ধ করতেই মনে হলো নূর এত সময় কার সাথে কথা বলছে? মাহির সাথে কি? ফোনটা হাতে নিয়ে মাহির নাম্বারে কল দিলো।
মাহি মাত্র রাতের রান্না শেষ করে রুমে আসলো। ফায়াজ ড্রয়িং রুমে বসে চা খাচ্ছে। রোকেয়া বেগম অসুস্থ নিজের রুমে শুয়ে আছেন।
ফোনে রিং হতেই বালিশের নিচ থেকে মোবাইল হাতে নিয়ে স্কিনে তাকিয়ে থমকে গেছে। রুদ্র কেনো ওকে কল দিলো..?
হাজারো কথা ভাবতে ভাবতে কল রিসিভ করলো।
~হ্যালো…
রুদ্রঃ কেমন আছো মাহি..?
মাহির চোখ ছলছল করে উঠলো।
মাহিঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো…
রুদ্রঃ আমাকে জিজ্ঞেস করবে না..?
মাহিঃ কেমন আছেন..?
রুদ্রঃ আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি। আন্টির শরীর এখন কেমন?
মাহিঃ কিছুটা ভালো।
রুদ্রের নিজের উপর এখন নিজেরি রাগ হচ্ছে কেনো ফোন দিতে গেলো। মাহির কথা বলার ধরন দেখেই বুঝা যাচ্ছে ও কথা বলতে চাচ্ছে না।
রুদ্রঃ আচ্ছা তো ভালো থেকো। সময় করে একদিন ফায়াজকে আন্টিকে নিয়ে এসো।
মাহিঃ আচ্ছা।
রুদ্রঃ তো রাখি..
মাহিঃ কথা শেষ।
রুদ্র এর বিপরীতে কি বলবে বুঝে পেলো না।
মাহি নিজেই আর উত্তরের অপেক্ষা করলো না। কল কেটে দিলো।
শুভ হাসতে হাসতে বললো, ‘ বাহ্ রাণী সাহেবা আপনার রাজার কন্ঠ তো খুব ভালোই মনে গেঁথে রেখেছেন।
নূরঃ আপনি কি ফাজলামো করতে কল দিয়েছেন..?
শুভঃ না!
নূরঃ তাহলে??
শুভঃ প্রেম করতে ফোন দিয়েছি!
নূরঃ সামান্য লজ্জা বলতে কিছু থাকলে অন্য কারো বউকে এই সব বলতেন না।
শুভ হুঁ হুঁ করে হেসে বলে উঠলো, ‘ তোমরা বুঝি স্বামী স্ত্রী! তুমি তো এখনো পুরনো প্রেমিক কেই ভুলতে পারো নি..
নূরঃ আমার সম্পর্কে তো দেখছি ভালোই সব যেনে গেছেন..
শুভর কন্ঠ এবার কিছুটা শক্ত হয়ে আসলো।
শুভঃ আমি তোমাকেও খুব তারাতারি আমার কাছে নিয়ে আসবো।
নূর এবার রেগে বলে উঠলো,’দ্বিতীয় বার আমার কাছে আসা তো দূর ফোন দেওয়ার মতোও সাহস করবেন না!!..
শুভঃ সব সমস্যার মূল হলো রুদ্র তাই না.??
নূর কিছু বলছে না।
শুভঃ ডক্টর!
নূরের বুক কেঁপে উঠল। ভেতরটা নাড়া দিয়ে বলে উঠলো,’ খুব খারাপ কিছু হতে যাচ্ছে রুদ্রের সাথে।
নূর রেগে বললো,’ আপনি যদি চোখ তুলেও উনার দিকে তাকানোর চেষ্টা করেন আমি আপনার সেই চোখ তুলে ফেলবো।
শুভ হেঁসে উঠলো, ‘ নূর তুমি কি যানো তুমি কি বলছো আর কাকে.? তুমি বাঘ কে বেড়ালের ভয় দেখাচ্ছো..! বলে আবার হুঁ হুঁ করে হেসে উঠলো।
নূর কি বলবে! নিজেকে নিয়ে ভয় নেই কিন্তু এই ডেঞ্জারাস লোকের সম্পর্কে অনেক কিছুই শুনেছে। এখন ভয় ঢুকে গেছে রুদ্রকে নিয়ে।যদি এই লোক রুদ্রের কোনো ক্ষতি করে ফেলে।
শুভঃ কি হলো ভয় পেয়
য়ে গেছো..?? এটা ভয় নয় আমি খুব জলদি এই রুদ্রের চেপ্টার ক্লোজ করে ফেলবে। সরি দিবো সবাইকে যাঁরা যাঁরা তোমার আর আমার মধ্যে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে।
নূর খট করে ফোন কেটে জিম মেরে বসে আছে। রুদ্র কে নিয়ে ভয় করছে। মন বলছে সামনে খুব খারাপ কিছু হতে যাচ্ছে।
———
নূর ছাঁদে বসে আছে পাশের বাসার ছাঁদে খুব সুন্দর করে লাইটিং করা হয়েছে। পাশের ছাঁদের মৃদু আলো এসে এই ছাঁদে পরছে। চুল খোঁপা করা ছিলো। নূর ছেড়ে দিলো চুল। হালকা বাতাসে চুল গুলো এসে চোখ মুখ ডেকে দিচ্ছে।
নূরের পাশে রুদ্র এসে দাঁড়ালো। নূর রুদ্রের দিকে তাকিয়ে আবার সামনের বিল্ডিং এর ছাঁদের দিকে তাকালো।
নূরঃ কখন আসলেন??
রুদ্র কিছু না বলে নূরের দিকে তাকিয়ে আছে।
নূর আবার তাকালো রুদ্রের দিকে। রুদ্র কিছু বুঝে উঠার আগেই নূর রুদ্রের সামনা সামনি দাঁড়িয়ে রুদ্রের ঠোঁটের মাঝে ঠোঁট ডুবিয়ে অধরজোড়া আঁকড়ে ধরলো।
মাহি সব কিছু গুছিয়ে রেখে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। প্রচুর গরম পরেছে এলার্জিয়ে শরীর জায়গায় জায়গায় লাল লাল দাগ পরে গেছে।
গোসল করে রুমে এসে দেখে ফায়াজ মোবাইলে কার সাথে যেনো কথা বলছে।
মাহি কাপড় ছড়িয়ে এসে ফায়াজের সামনে দাঁড়ালো।
ফায়াজ মাহির দিকে তাকিয়ে আবার ফোনে কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে গেলো।
মাহি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থেকে বুঝলো ফায়াজ কোনো মেয়ের সাথেই কথা বলছে। কিন্তু মেয়েটা কে?? আর মেয়েটার জন্য ওকে দেখেও দেখলো না!! মন খারাপ করে শাশুড়ীর রুমের দিকে চলে গেলো।
মাহির চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ফায়াজ ফোন রেখে দিলো।
———
সময় কারো জন্য থেমে থাকে না। আদির খুঁজ এখনও পাওয়া যায় নি। রুহি দিন দিন কেমন যেনো হয়ে যাচ্ছে। নিজেকে রুম বন্ধি করে নিচ্ছে।
নূর লজ্জায় ছাঁদ থেকে নেমে আর রুদ্রের সামনে জায়নি। রুদ্রকে দেখলে এখন লজ্জা, ভয়ে লুকিয়ে যায় ছি!ছি!ছি লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে কি কিভাবে পারলো এমনটা করতে।
নূর আর ইরিন বসে আছে ওদের পাশেই আরেকটা মেয়ে বসে আছে। ইরিন আবারও মেয়েটার দিকে তাকালো।
নূরঃ তোমার নাম কি..?
~আপনি এখনো আমাকে চিনলেন না আপু!! মন খারাপ করে মেয়েটি বললো।
নূরঃ পরিচয় দিলে তো চিনবো।
মেয়েটি কিছু বলবে তার আগেই পেছন থেকে বলে উঠলো, ” এই হরিণ ”
ইরিন রেগে নূরের দিকে তাকালো।
নূরঃ হেবলার মতো আমার দিকে তাকিয়ে আছিস কা…
ইরিনঃ তোর এই বেয়াদব ভাইকে আমি মাথা ফাটিয়ে দিবো। আমার এত সুন্দর নামটার অবস্থা কি করলো!…
মেয়েটা বলে উঠলো,’ কি হয়েছে??’
সবাই পিছন ফিরে তাকালো।
মেয়েটা পিছনে নীলকে দেখেই খুশিতে এক দৌড়ে নীলের সামনে গিয়ে নীলের চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে বলে উঠলো,’ আমি মনে মনে তোমারকে খুব মিস করতে ছিলাম আর দেখো তুমি আমার সামনে। ‘
মেয়েটা নীলের চুল ধরাতে ইরিন রাগে নূরের হাত খামচে ধরলো।
চলবে…
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।#এই_অবেলায়_তুমি
#পর্ব_৩৫
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
নূর বাসায় এসেই শুনলো এক খুশির খবর।
সকালে শুভ্রতা ভাবি কাজ করতে গিয়ে রান্না ঘরে মাথা ঘুরে পড়ে গেছেন। ধরাধরি করে রুমে এনে মাথায় পানি দিয়ে একটু স্বাভাবিক করে ডক্টর কে কল দিলো বড় আম্মু। বাসায় কোনো পুরুষ না থাকায় বড় আম্মু নিজেই ডক্টরের কাছে নিয়ে গেলেন শুভ্রতা ভাবি কে। ওখানে গিয়ে রুদ্র ভাইয়া নিজের পরিচিত ভালো ডাক্তার দেখালো ভাবি কে।
কয়দিন ধরে নাকি মাঝে মাঝে বমি-টমি হয়,মাথা ঘুরে, কোনো কিছুর গন্ধ শুনলেই পেট আওরায়।
ডাক্তার কতগুলো টেস্ট দিলো।
টেস্ট গুলো করে। ডক্টরের চেম্বারে গেলো রুদ্র ভাইয়া।
অনেকক্ষন পর রিপোর্ট হাতে একজন নার্স এসে দিয়ে গেলো।
ডাক্তারঃ রুদ্র পেশেন্টের স্বামী কোথায়??
রুদ্রঃ ভাইয়া অফিসে আছে।
ডাক্তারঃ আর কে এসেছে সাথে??
রুদ্রঃ আম্মু এসেছে। কেনো কি দরকার শফিক ভাই বলতে পারেন আমাকে।
ডাক্তারঃ আগে মিষ্টি মুখ করাও তারপর না হয় বলছি..
রুদ্রের যা বুঝার বুঝে নিলো। খুশিতে ডাক্তার কে জড়িয়ে ধরে বললো। আমার আম্মু, আব্বু, ভাইয়ার জন্য এর থেকে বড় সারপ্রাইজ কি হতে পারে। ধন্যবাদ শফিক ভাই।
ডাক্তারঃ আমাকে ধন্যবাদ না দিয়ে যা কে দেওয়ার তাকে দাও। আর আমার কিন্তু মিষ্টি চাই।
ডাক্তারের কথা শুনে রুদ্র হুঁ হুঁ করে হেঁসে উঠলো।
রুদ্রঃ আজ আমি ভাইয়ার পক্ষ থেকে সবাইকে মিষ্টি খাওয়াবো।
ডাক্তারঃ না রুদ্র আমরা এই মিষ্টি খাবো না।
রুদ্রঃ কেনো??
ডাক্তারঃ আমরা খুব জলদি আঙ্কেল ডাক শুনতে চাই। ওই দিন শুধু মিষ্টি নয়, ওই দিন পেট ভরে তোমার বাসায় গিয়ে ছোট ভাইয়ের বউয়ের হাতে রান্না খেয়ে আসবো।
রুদ্র ডাক্তারের কথা শুনে মনে মনে বললো,’ সেই দিন আর মনে হয় বেঁচে থাকতে দেখবেন না ভাই…
রুদ্র ডাক্তারের ক্যাবিন থেকে বের হতেই শায়েলা বেগম চিন্তিত হয়ে ছেলের সামনে গিয়ে বললেন,’ ডাক্তার কি বললো রে রুদ্র?? বউ মা ঠিক আছে তো?? বড় ধরনের কিছু হয়নি তো??
রুদ্রঃ আস্তে আম্মু এত টেনশনের কিছু নেই। শুনো এখন আমি যেটা বলবো একদম মন দিয়ে শুনবে। লাফালাফি করবে না।
শায়েলা বেগম মনে আবার ভয় ঢুকে গেলো। উনি শুভ্রতাকে নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসেন।
শায়েলা বেগমঃ কি হয়েছে রে রুদ্র আমাদের শুভ্রতার??
রুদ্রঃ আম্মু আমাদের পরিবারের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেতে যাচ্ছে। নতুন অতিথি আসছে। আমি চাচ্চু হতে যাচ্ছি।
শায়েলা বেগম খুবই বুদ্ধিমতী মহিলা রুদ্রের প্রথম কথাতেই তিনি বুঝে ফেলেছেন। খুশিতে বউয়ের কেবিনের দিকে দৌড়ে গেলেন।
শাশুড়ী কে এভাবে আসতে দেখে শুভ্রতা ঘাবড়ে গেলো।
শায়েলা বেগম খুশিতে কথা বলতে ভুলে গেছেন। কি বলবে না বলবে কথা সব পেচিয়ে যাচ্ছে। চৌধুরী বাড়ির প্রথম সন্তান আসতে যাচ্ছে এত খুলে রাখবে কোথায়।
রুদ্র জিসান কে কল দিয়ে বললো তারাতাড়ি বাসায় চলে আসতে।
শুভ্রতা খুশিতে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করছে। এটা যে অধিক পরিমাণে খুশির ঠেলায় কান্না আসছে।বিয়ের তিন বছর পর অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে।
ইতি মধ্যে বাড়ির সবাই জেনে গেছে এই খুশির খবর।
কিন্তু এখনো জিসান যানে না।
জিসান বাসায় এসে দেখে সবার চোখে মুখে খুশির জলক। কাউকে কিছু না বলে মায়ের সামনে গিয়ে বললো,’ আম্মু সবাই জানুক বা না জানুক তুমি তো জানো অফিসে আমার থাকাটা কতটা জরুরি। এত বার কল দিয়ে পাগল বানিয়ে বাসায় আনার কি প্রয়োজন।
জিসান বাসায় এসেছে শুনে শুভ্রতার লজ্জা, লজ্জা লাগছে তাও রুম থেকে বের হয়ে সিঁড়িতে এসে দাঁড়িয়ে ছিলো। স্বামীর মুখে এমন বিরক্তি প্রকাশ পেয়ে আবার রুমে চলে গেলো। এই লোক কাজ ছাড়া চোখে কিছুই দেখে না। এই লোকের বিয়ে কাজের সাথে হওয়া দরকার ছিলো মানুষের সাথে না!!
শায়েলা বেগমঃ এক থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিবো। এত কাজ! কাজ করতে কে বলেছে?? আজ থেকে তোর কাজে যাওয়া বন্ধ। আমাকে কাজ দেখাস তুই। শুধু কাজ নিয়ে পড়ে থাকলেই চলে না বউ বাচ্চার দিকেও নজর দিতে হয়।
জিসান অবাক হয়ে বললো,’ বাচ্চা কোথায় পেলে আম্মা। দিন দিন তোমার দেখি সৃতি শক্তি কমে যাচ্ছে।
শায়েলা বেগমঃ সারাদিন রাত বাহিরে থাকলে এমনটাই মনে হবে। ঘরের খবর রাখিস তুই? আমাদের কথা বাধ দিলাম নিজের বউটার খবর তো রাখবি।
জিসানঃ কি হয়েছে আম্মা সেটা বলো??
শায়েলা বেগম কিছু বলতে গিয়েও বললো না।
শায়েলা বেগমঃ ঘরে যা।
জিসান ওর আম্মুর এমন পাগলামি তে খুবই বিরক্ত হলো। এটা কোনো কথা কাজ থেকে এনে বলবে ঘরে যা।
শায়েলা বেগম ইচ্ছে করেই বললেন না। মায়ের মুখে শুনার থেকে নিজের বউয়ের মুখে শুনার আনন্দই অন্যরকম।
নূর মিষ্টি খেতে খেতে নিজের রুমের দিকে গেলো।
ফ্রেশ হয়ে এসে মাহি কে কল দিলো। এত বড় খুশির খবর অথচ তার বোনটা এখনো জানে না।
জিসান রুমে গিয়ে দেখলো শুভ্রতা ব্যালকনিতে। কিছু না বলে ফ্রেশ হয়ে এসে খাটে বসলো।
শুভ্রতা রুমে আসতেই ওকে কফি আনতে বললো।
শুভ্রতা চুপচাপ নিচে নামতেই শায়েলা বেগম যা বুঝার বুঝে গেলো। এই বেআক্কেল ছেলে উনার গর্ভে কিভাবে হলো??
শুভ্রতা কফি নিয়ে জিসানকে দিলো।
জিসানঃ আচ্ছা বাড়িতে কি আজকে কোনো কিছু হয়েছে??
শুভ্রতা রাগে চোখ মুখ লাল করে একটা কাগজ জিসানের হাতে ধরিয়ে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
জিসান শুভ্রতার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। আজ সবাই ওকে এভাবে রাগ দেখাচ্ছে কেনো। কাগজের বাজ খুলে দেখলো হসপিটালের রিপোর্ট।
জিসান থম মেরে বসে আছে। মানুষ বলে অধিক দুঃখে নাকি মানুষ পাথর হয়ে যায়। আর এদিকে জিসান অধিক সুখে, আনন্দে পাথর হয়ে বসে আছে।
***************
নূর রেলিং এ পা ঝুলিয়ে বসে আছে৷ আকাশের দিকে তাকিয়ে সারাদিনের কথা ভাবছে। আকাশের চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ মনে হলো একটা বাচ্চার মুখ বেসে উঠছে চাঁদয়ের সামনে। এমনিতেই নূরের বাচ্চা খুব পছন্দ।
ওর মনে হলো এমন একটা ফুটফুটে শিশু ওর ও চাই। শুভ্রতা ভাবির কোল জুড়ে ফুটফুটে বাচ্চা আসবে।ওর একটা মেয়ে বাবু থাকলে অনেক আদর করতো, ভালো বাসতো,যত্ন করে আগলে রাখতো।
পিছন থেকে রুদ্র বললো,’ রেলিং এর উপর কেনো?? নিচে নামো।
নূর শুনলো রুদ্রের কথা। নেমে গেলো।
নূর কিছু সময়ের জন্য ভুলে গেলো কালকে রাতের সেই অপ্রত্যাশিত কাহিনি।
নূরঃ কয়টা বাজে??
রুদ্রঃ ১২:৫০
নূরঃ আজ এত দেরি কেনো??
রুদ্রঃ আজ দুইটা অপারেশন ছিলো রাতে তাই। তুমি রাত বেরাতে ছাঁদে কি করো??
নূরঃ বাসায় তো আপু নেই তাই ছাঁদে সময় কাটাতে চলে আসলাম।
রুদ্রঃপড়াশোনা কি ছেড়ে দিয়েছো??
নূর কিছু বললো না। কথা বললেই কথা বাড়ে।
রুদ্র আবার বললো,’ কি হলো চুপ কেনো??
নূরঃ শুভ্রতা ভাবি প্রেগন্যান্ট!..
রুদ্রঃ তাতে সমস্যা কি..বিয়ে যেহেতু হয়েছে প্রেগন্যান্ট হওয়াটা স্বাভাবিক না..
নূরঃ হুহ্! আমারও বাচ্চা খুব ভালো লাগে।
রুদ্রঃ তাই??
নূরঃ হুম।
রুদ্রঃ কাল রাতে কোথায় ছিলে??
কাল রাতের কথা মনে হতেই লজ্জা ঘিরে ধরলো নূরকে। ছি কিভাবে এমন কাজ করতে পারলো সে।
নূর কিছু না বলে চলে যেতে নিলে রুদ্র হাত আঁকড়ে ধরে নূরের।
রুদ্রঃ আর কিছু সময় থাকো।
নূর এবারও শুনলো রুদ্রের কথা।
রুদ্র আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,’ নূর!!’
নূর রুদ্রের শান্ত কন্ঠে ডাক শুনে রুদ্রের দিকে তাকালো।
রুদ্রঃ তুমি চাইলে আমাদের ও একটা মিষ্টি বাবু তোমার কোলে আসতে পারে। অতীত ভুলে যাও। অতীত মনে রাখতে নেই।যে দিন অতীত ভুলে আমার কাছে আসবে শীতের রাতের চাদরের মতো করে জড়িয়ে নিবো যত্ন করে। আমি অপেক্ষায় থাকবো তুমি আমার কাছে নিজ ইচ্ছায় আসার।
অতীতের কথা বলতেই নূরের চোখ জ্বলজ্বল করে উঠলো। তারমানে রুদ্র সব জানে!..
ঠোঁটের কোনে হাসি ঝুলিয়ে নূর বলে উঠলো, ‘ আমি সব ভুলে গেছি। ওটা অতীত নয় ওটা ছিলো এক কালবৈশাখী ঝড় হঠাৎ আমার জীবনের সাথে জড়িয়ে গেলো আবার হঠাৎ আমাকে ছেড়ে অন্য কারো জীবনে জড়িয়ে গেছে।’
সামনের বাসার ছাঁদের আলোই নূরের মুখটা স্পষ্ট হয়ে আছে।
রুদ্র নূরের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,’তুমি জানো এই চোখের চিকচিক করা জল আর ঠোঁটের কোনে হাসি তোমাকে মারাত্মক মায়াবিনী লাগে। আমার দেখা সৃষ্ট সুন্দরী।’
নূর মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে তার সামনে মানুষটির দিকে, তার বরের দিকে। হা সামনের মানুষটি শুধু তার অন্য কারো কোনো অধিকার নেই। শুধু ওর অধিকার এই মানুষটির উপর।
*********
মাহি রুমে আসতেই ফায়াজ সামনে রাস্তা আগলে দাঁড়ালো।
মাহি নিচের দিকে তাকিয়ে বললো,’ সরে দাঁড়ান। ‘
ফায়াজঃ কাল থেকে আমাকে ইগনোর কেনো করছো??
মাহিঃ আজব তো!! আমি কেনো আপনাকে ইগনোর করবো??
ফায়াজঃ তাহলে কি করছো?? সামনে পড়লে এরিয়ে যাচ্ছো। ঠিক মতো কথা বলছো না। তোমার এই নিরবতা আমাকে কষ্ট দিচ্ছে মাহি সেটা কি তুমি বুঝো..?
মাহি কিছু বলছে না। আসলে সে এমন কেনো করছে?? কাল রাতে ফায়াজ কোনো মেয়ের সাথে কথা বলেছে মনে হওয়ার পর থেকে সব কিছু এত বিরক্ত লাগছে কেনো?? এটা কেই মনে হয় স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক বলে। নারী সব কিছু সয্য করবে কিন্তু স্বামী কোনো নারীর আশেপাশে গেলেও সয্য করতে পারবে না।
ফায়াজঃ কি হলো বলো?? মাহি সব কিছু ভুলে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া যায় না? জানি তুমি আমাকে মন থেকে বা ইচ্ছে করে বিয়ে করনি। কিন্তু এখন আমরা এমন একটা বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গেছি চাইলেও বের হতে পারবো না। সব কিছু মেনে নেওয়ার চেষ্টা করো।
মাহি অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ফায়াজের দিকে খুব ইচ্ছে হলো বলতে,’ আপনি আগলে নিন না আমাকে। এত এত এত ভালোবাসা দিন যেনো আমি সব ভুলে যাই। সারাক্ষণ যেনো আপনার নামটাই মাথায় ঘুরে। এখন আমার আপনার ভালোবাসা খুব বেশি প্রয়োজন।ভালোবাসবেন আমায়? একটু ভালোবেসে আগলে নিন না। একটু জায়গা দিন না আপনার বুকে। কিন্তু না মনের কথা মনেই রয়ে গেলো মুখে আর বলা হলো না।
ফায়াজ মাহির মুখের উপর থেকে যত্ন করে চুল গুলো কানের পিছনে গুঁজে দিলো। ফিসফিস করে বললো, ‘ অন্য কাউকে ভুলতে নয়। যে দিন এই আমি টাকে মন থেকে ভালোবাসবে ওই দিন আগলে নিবো যত্ন করে নিজের বাহুডোরে। মাহি ভালো অনেক কেই লাগতে পারে কিন্তু ভালো একজন কেই বাসা যায়। আমি চাই সেই একজন টা আমি হতে।
*******
আবির মেয়েদের মতো গাল ফুলিয়ে বসে আছে।
আদিবাঃ কি হয়েছে আপনার??
আবিরঃ জিসান ভাই বাবা হয়ে যাচ্ছে।
আদিবাঃ তো?
আবিরঃ আমি এখনো হতে পারলাম না।
আদিবা বেআক্কেল এর মতো তাকিয়ে আছে। বিয়ে হয়েছে ১৫দিন হলো। আর এই লোক বাবা হওয়ার স্বপ্ন দেখছে পরক্ষনে লজ্জায় গাল দুটো লাল হয়ে উঠলো। যেখানে আজও ওদের মধ্যে কিছুই হয়নি সেখানে বাবা হওয়ার কথা আসে কোথায় থেকে।
আবিরঃ লজ্জা পেলে হবে না। আমিও বাবা হতে চাই??
আদিবা এক পা এক পা করে রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেলো শাশুড়ীর রুমে।
আদিবার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আবির হেসে উঠলো। আদিবার মুখের রিয়াকশন দেখে খুব মজা পেয়েছে। বেচারি লজ্জায় একদম টমেটোর মতো টকটকে লাল হয়ে গেছে।
*******
রুহি মোবাইল হাতে রেগে চিৎকার করে বলে উঠলো,’ নিজেকে কি ভাবো তুমি?? কোথায় আছো??
আদিঃ আজ থেকে ২মাস পর ডিভোর্স পেপার পেয়ে যাবে। বলেই খট করে কল রেখে দিলো।
রুহি বার বার কল দেওয়া শুরু করলো কিন্তু সিম বন্ধ।
নিচে হাঁটু গেড়ে বসে কান্নায় ভেঙে পড়লো। জীবন এত নিষ্ঠুর কেনো?? এমন কঠিন খেলা ওর সাথে কেনো খেলছে?? কোথায় পাবে এত এত প্রশ্নের উত্তর??
চলবে….
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।