এই অবেলায় তুমি পর্ব -৩৯+৪০+৪১ ও শেষ

#এই_অবেলায়_তুমি
#পর্ব_৩৯
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

বাসার কলিং বেল বাজাতেই বড় আম্মু দরজা খুলে দিলো।
দরজার সামনে ফুপিমণির হাতে বউ বরন করার জিনিসপত্র।
নীল তো হা হয়ে আছে ওর আম্মু এই বাসায় কেনো আর এই সব কি??
ইরিন মাথা নিচু করে আছে। মাথার ঘোমটাটা একটু বেশি লম্বা করে দেওয়া তাই সামনের কিছুই দেখছে না। মনে মনে আল্লাহকে ডাকছে।
নীল কিছু বলতে গেলে রূপা বেগম এক ধমক দিয়ে চুপ করয়ে দিলেন।
দরজার বাহিরে রেখে কিছু নিয়ম মেনে ঘরে প্রবেশ করার আগেই পিছন থেকে আওয়াজ আসলো।

~এই, এই, না না ঘরে পা রাখবে না।

ইরিন পা বাড়াতে গিয়েও পা পিছিয়ে নিলো। কন্ঠটা তো মাহি আপুর।

রুদ্র আর নীল মাহি কে দেখে আরো বেশি অবাক হলো। আসতে আসতে এক এক করে সবাই এসে জরু হলো দরজার সামনে।

বড় আম্মুঃ কি হয়েছে মাহি? ঘরে পা রাখবে না তো বাহিরে কি দাঁড়িয়ে থাকবে?

মাহিঃ বড় আম্মু আমি কিন্তু সেটাও বলিনি। দাঁড়াও তোমরা সাইডে যাও।

এই নীল বউ কোলে নিয়ে ঘরে প্রবেশ কর।

নূরঃ এটা আবার কেমন নিয়ম??

মাহিঃ আমার শশুর বাড়িতে এমন নিয়ম মানা হয়।

নূর মন খারাপ করে বললো,’ ওওহহ কত ভালো নিয়ম।’

সবাই নীল আর ইরিনের দিকে তাকিয়ে আছে।
নীল এক ঝটকায় ইরিন কে কোলে তুলে নিলো।
ইরিন লজ্জায় মনে হয় অজ্ঞান হওয়ার মতো অবস্থা।

দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে আদিবা, শুভ্রতা, রুহি,মিম, নূর, মাহি। কেউ দরজা খোলছে না। তালা দেওয়া দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে যার চাবি নূরের হাতে।

নীলঃ সমস্যা কি? চাবি দে..

নূরঃ আহ্ এতো তারা কিসের…

নীল রুদ্রের দিকে তাকালো, ‘ ভাই তোমার বউকে বলো দরজা খুলতে।

শুভ্রতাঃ আজ কিন্তু কারো সুপারিস কাজে দিবে না। এটা ভেবো না নিজে অন্য কাউকে বিয়ের সময় বাঁচিয়েছো তাই তোমাকেও বাঁচাবে।

নীলঃ ভাবি আপনিও…!

নূরঃ আর কত সময় দাঁড়িয়ে থাকবি। তোর নিজেরি কিন্তু সময় নষ্ট হচ্ছে।

নীলঃ আমার নিজের কিভাবে?

নূরঃ এত কথা কেনো বলছ? আমার জান্স এর কষ্ট হচ্ছে..

নীলঃ তোর জান্স আমার কোলে আরামে আছে। নিজের ভাইটার প্রতি একটু মায়া কর। এই আটার বস্তা কোলে নিয়ে আমি শেষ।

আদিবাঃ একবার বলেছো দেবরজি দ্বিতীয় বার বললে কিন্তু আজ আর বাসর করতে পারবা না।

আদিবার কথা শুনে সবাই হেসে দিলো।

নীলঃ আমি কি জানতাম যে বিয়ে করবো? আর আমি কি চাকরি করি নাকি। পারলে বউ পালার জন্য তোরা এই অসহায় ভাইটাকে হেল্প কর।

আরো অনেক কথা বলে দরজা খোলে দিলো নূর।

রুমের ভেতর প্রবেশ করে রুদ আর নীল অবাক হয়ে বললো,’ এত ফুল দিয়ে এত সুন্দর করে রুম সাজানো হলো কখন??

নীল নূরের দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

নূর আমতা আমতা করে বললো,’ আমার দিকে এভাবে তাকানোর কি আছে। নিজের জন্য বাসর ঘর সাজাইছি। বিয়ে হলো এখন বাসর হলো না এটা কেমন দেখায় না। তাই আজ শখ করে নিজ হাতে নিজের বাসর সাজাইছি। কিন্তু এখন দেখছি আমার থেকে এটা তোদের বেশি দরকার তাই আজকের জন্য তোদেরকে দিয়ে দিলাম।
এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে সবার দিকে তাকালো।

সবাই হা করে তাকিয়ে আছে। একটা মানুষ এতগুলো মানুষের সামনে নিজের বাসর ঘর সাজানোর কথা কিভাবে বলতে পারে??

নূরঃ সবাই এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো??

রুদ্র রেগে নীলের দিকে তাকালো।
নীল সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নিলো।
রুদ্রের তাকানোর মানে হলো,’ তোর জন্য আজ আমার বাসর হতে গিয়েও হলো না! তোর আজ কেই বিয়ে করা লাগলো?। তোরে আমি পরে দেখে নিমু৷ ‘

শুভ্রতাঃ এখনো বাসর হয়নি!!

নূর নিজের মাথায় নিজে বারি মারতে ইচ্ছে করছে। কি বলতে গিয়ে কি বলে ফেললো।

ফায়াজঃ আহারে তাহলে তো আজও আমার বন্ধুর বাসরটা হলো না। আদিবা ভাবি ভাইকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করেন তো ফুলের দোকান খোলা আছে কি-না??

রুদ্রঃ ফুলের দোকান খোলা দিয়ে কি করবি??

ফায়াজঃ তোদের বাসর ঘরও সাজাতাম শত হলেও একটা মাত্র শালিকা আমার ওর বাসর করার ইচ্ছে জেগেছে।

রুদ্রঃ আমি জিজ্ঞেস করছি ভাইকে..

রুদ্রের কথা শুনে সবাই হাসাহাসি শুরু করলো।
নূর লজ্জায় রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।

শুভ্রতাঃ মেয়েটাকে এভাবে লজ্জায় ফেলা একদম ঠিক হয়নি।

নীলের কাছে সব কিছু রহস্য রহস্যময় লাগছে।
প্রথম বাসায় আশার পর সবাই আগে থেকেই বউ বরন করার জন্য রেডি আবার কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলো না। এখন আবার রুম ফুলে ফুলে সাজানো। এই সব কিছুর পেছনে কি নূরের হাত? নূর কি আগে থেকেই সব জানতো? বিয়ে ভেঙে যাওয়ার কথা শুনে নূর একটু ও চমকায়নি। ইরিনের চাচা এতটাও ভালো মানুষ না যে চৌধুরী বাড়ির ছেলে শুনে বিয়েতে নাচতে নাচতে রাজি হয়ে যাবে নূরের এক কথায় কোনো গন্ডগোল না করে।
হঠাৎ নীলের মনে পরলো নূরকে ইরিনের বড় চাচার সাথে কি যেনো বলতে দেখে ছিলো। প্রথম লোকটা রেগে গেলেও পরে উনার চোখে মুখে ভয়ের ছাপ ছিলো। এমন কি কথা বলেছে নূর??

নূর ছাঁদে বসে আছে। কেমন কেমন করে যেনো বিয়ের একমাস বিশ দিন চলে গেলো।

ওই দিন রুদ্র ওর প্রশ্নের উত্তর দেয়নি। রুম থেকে বের হয়ে গিয়ে ছিলো নূরের মোবাইল হাতে নিয়ে ।
নূর কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে গিয়ে ছিলো। সকালে উঠে রুদ্রকে কোথাও দেখেনি তার মানে রুদ্র রাতে বাসায় আর আসেনি। কিন্তু কোথায় ছিলো সারা রাত? এই সব চিন্তা করতে করতে কলেজের জন্য বের হয়ে ছিলো। আজ দেখবে শুভ মামা তুক্কো শুভ ভাই নূর কি! এত দিন শান্ত সৃষ্ট ভদ্র মেয়ে সেজে ছিলো। কোনো গন্ডগোল বাঁধাতে চায়নি। কিন্তু এই শুভ এখন বেরে গেছে। আজ তার অবস্থা যদি ওর ভাইয়ের মতো না করে, তাহলে ওর নাম ও নূর না!!

কিন্তু দুঃখের বিষয় এত এত প্রস্তুতি নিয়ে গিয়েও কোনো লাভ হলো না। ওই দিন কেনো আজও নূর শুভর চেহারা দেখেনি। শুভ ওর সামনে দূর আশেপাশে আর এই কয়দিন আশে নি। তাহলে লোকটা কোথায়? রুদ্র ওই ফোনটা আর নূরকে দেয়নি। পরের দিন রুদ্র নূরের জন্য নতুন ফোন কিনে এনে ছিলো। এমন ভাবে কথা বলছিলো যেনো কাল রাতে কিছুই হয়নি। নূর বার বার জিজ্ঞেস করতে গিয়েও ফিরে এসেছে। আপনি সারা রাত কোথায় ছিলেন?? কিন্তু কখনো সাহস হয়ে উঠেনি জিজ্ঞেস করার।

ওর পাশে এসে মাহি বসলো।

মাহিঃ কি ভাবতেছিস?
নূর হাসি দিয়ে ছিলো,’তেমন কিছু না। জিজু কই?’
মাহিঃ রুমে।
নূরঃ একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
মাহিঃ হুম বল?
নূরঃ তুই কি সত্যি জিজুকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিস?

মাহি কিছু সময় চুপ থেকে বললো,’ বিয়ের আগে ভালোবাসা কি বেশি জরুরি? বিয়ের আগে ভালোবাসা থেকে বিয়ের পর ভালোবাসায় শান্তি অনেক। বিয়ের আগের ভালোবাসা পুড়ায় ঠিক আগুনে হাত দিলে যেমন জ্বালা ধরে আর বিয়ের পরের ভালোবাসা হলো এতটা মিষ্টি যে তুই নিজের বর কে যত ভালোবাসবি নিজের কাছে পৃথিবীটা আরো সুন্দর মনে হবে।

নূরঃ তুমি তো দেখছি ভালোবাসায় পিএসডি করছো। স্যার কি খুব বেশি ভালোবাসে না-কি? আমার আনরোমান্টিক বোনটা এত ভালোবাসা সম্পর্কে জেনে গেলো।
মাহিঃ নূর তুই কিন্তু দিন দিন ফাজিল হয়ে যাচ্ছিস। আমি তোর বড়।
নূরঃ তো কি হয়েছে?
মাহিঃ কিছু না। নিচে চল।
নূরঃ তুমি যাও আমি একটু পর আসছি।

মাহি নিচে যাওয়ার কিছু সময় পর রুদ্র এলো ছাঁদে।

রুদ্রঃ এখানে কি করছো??
নূরঃ কিছু না। বসে আছি।
রুদ্রঃ এই সব প্লেন তোমার ছিলো?
নূর রহস্যময় হাসি দিয়ে রুদ্রের দিকে তাকালো।
রুদ্রঃ এমন হাসিতে তোমাকে ঠিক শয়তানের মতো লাগে।
নূর কটমট দৃষ্টিতে তাকালো রুদ্রের দিকে।
রুদ্রঃ বিয়ের পর মনে হয় সব মেয়েরা সাহসী হয়ে যায়। আগে ভয়ে চোখের দিকে তাকাতে পারতে না। আর এখন আমাকে এই চোখ দিয়ে ভয় দেখাচ্ছো।

নূর দৃষ্টি ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকালো।
রুদ্রঃ কথা বলছো না কেনো??
নূরঃ রুমে যাবো।
রুদ্রঃ রুমে তো এখন যাওয়া যাবে না।
নূরঃ কেনো??
রুদ্র লাজুক হেসে বললো,’ রুম তো আদিবা ভাবি সাজাচ্ছেন। ‘
নূরঃ রুম তো গোছানো আর কি গোছাবেন ভাবি?
রুদ্রঃ কি জানি..
নূর সন্দিহান চোখে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে উঠে যেতে নিলে রুদ্র হাত আঁকড়ে আটকে দিলে।
রুদ্রঃ আমার পাশে চুপটি করে বসে থাকো।
নূরঃ রুমে যাবো হাত ছেড়ে দিন..
রুদ্র নূরকে হেঁচকা টানে নিজের বুকে নিয়ে ফেললো।
রুদ্রঃ আর একটা কথা যেনো না শুনি।
নূর গুটিশুটি মেরে রুদ্রের বুকে মাতা রেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আজকের আকাশটা খুব সুন্দর। তাঁরায় জ্বলজ্বল করছে পুরো আকাশ মাঝ খানে চাঁদ।

রুদ্রঃ ওই যে আকাশে দেখছো চাঁদ টা ওটা তুমি আর পাশের তাঁরা টা আমি। আমার চাঁদের দিকে কেউ তাকালে আমার সেটা সয্য হবে না। যেটা আমার সেটা শুধুই আমার। অন্য কেউ তার দিকে নজর দিতে পারবে না।
নূর মুগ্ধ হয়ে শুনছে রুদ্রের কথা। রুদ্রের ছোটো ছোটো কথায়, কেয়ারে নূর মুগ্ধ হয়। রুদ্রের হাসি তে মুগ্ধ হয়। এক কথায় রুদ্রের সব কিছুতে নূর মুগ্ধ হয়।

ফাইজা মন খারাপ করে টেবিলে বসে আছে সামনে বই খোলা। কিন্তু তার মন পড়ার আশেপাশে কোথাও নেই৷ এই কয়দিন নীলের সাথে ফোনে কথা বলে ভালোবেসে ফেলেছিলো। কিন্তু আজ শুনলো নীল বিয়ে করে নিয়েছে ক্রাশ ওকে এভাবে প্রেম না করে ধোঁকা দিলো। আহ্ কি কষ্টের কথা ক্রাশ তার বউয়ের সাথে হয়তো এখন বাসর করছে আর এদিকে সে দুঃখ প্রকাশ করছে বইয়ের সাথে।
পাশেই মোবাইলটা বেজে উঠলো।
মোবাইলের স্কিনে জ্বলজ্বল করে নীলের নামটা দেখে হা হয়ে গেলো ফাইজা। এই পুলা নতুন বউ রেখে ওকে কেনো কল দিয়েছে? ওহ হয়তো বিয়ের কথা বলতে।
ফাইজা কল ধরে সালাম দিলো।
ওপাশ থেকে সালামের উওর আসতেই ফাইজা বলে উঠলো,’ নতুন বউ রেখে আমাকে কল দেওয়ার সাইন্স টা বুঝলাম না..?’

~ কিসের বউ? কার বউ? কি কও তুমি।

ফাইজা এমন কথা শুনতে শুনতে অবস্তু হয়ে গেছে। নীল বলেছে ফোনে ওর এভাবে কথা বলতে ভালো লাগে। তাই ফাইজাও ইমোশনাল হয়ে বলে ছিলো। তাহলে সব সময় আপনি ফোনে এভাবে কথা বলবেন। আমারও শুনতে ভালো লাগে।

ফাইজাঃ আপনি তো আজ বিয়ে করেছেন। বউ নিশ্চয়ই আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।

~ বার বার কার বউয়ের কথা বলতাছো? আমি আজ ৬০বছর ধরে বিয়ে করি না বউ আসবো কই থেকে। (রিফাত ভাই নীলের বিয়ের বিষয় কিছু জানেনা)

ফাইজাঃ৬০ বছর!! তোমার বয়স কতো?

ওপাশের লোকটা ভাবলো আর কত মিথ্যা কথা বলবো। এবার সত্যি টা বলে ফাইজার পা ধরে হলেও বিয়ে করে নিবে। তাই প্রথম থেকে শেষ অবদ্ধি সব খোলে বললো ফাইজা কে।

রাগে ফাইজার সারা শরীর কাঁপছে মোবাইলটা ছুঁড়ে ফেললো বিছানার এক কোনায়। শুধু সকাল হোক ওই নীলের একদিন কি ওর একদিন। শালা ঠকবাজ শুধু হাতের কাছে একবার পাই ফুটবল যদি না খেলছি আমিও ফাইজা না!!

চলবে…
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।#এই_অবেলায়_তুমি
#পর্ব_৪০
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

নূর ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। রাতের মৃদু বাতাসে খোঁপা করা চুল ছেড়ে দিলো। কোমর পর্যন্ত চুল ছড়িয়ে পরলো।
রুদ্র রুমে প্রবেশ করে কাউকে না পেয়ে আবার আহত হলো আজ-ও কি নূর পালিয়েছে?? কথাটা মনে হতেই বুকটা ভার হয়ে উঠলো। এত দিনেও কি নূরের মনে একটু জায়গা করে নিতে পারেনি? আসলেই সে ব্যার্থ।
মন খারাপ করে ফুলে ফুলে সাজানো রুম টার দিকে একবার তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। ওয়াশরুমে যাওয়ার সময় ব্যালকনিতে একটা ছায়া দেখে থমকে গেলো। ঘার ঘুরিয়ে ছায়াটা ভালো করে দেখে ঠোঁটের কোনে হাসির ঝিলিক ফুটে উঠলো।

রুদ্র নিঃশব্দে গিয়ে নূরের পিছনে দাঁড়ালো। নূর টের পেলো তার পেছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। মিষ্টি একটা পুরুষালি ঘ্রাণ এসে নাকে ঠেকলো। এই ঘ্রানটা খুব পরিচিত নূরের। এই পারফিউম টা তার বর সব সময় ব্যাবহার করে।
নূর পেছন ফিরতে গিয়ে রুদ্রের সাথে ধাক্কা খেলো। নূর সরে আসতে নিলে রুদ্র নূরের কোমর জড়িয়ে নিজের আরো কাছে নিয়ে আসলো। নূর লজ্জায় নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।

রুমের লাইটের আলো এসে ব্যালকনিতে পরছে। নূরের লজ্জা মাখা মুখটা রুদ্রের কাছে খুব আকর্ষণীয় লাগছে।
নূরের চুল গুলো বাতাসে এসে চোখে মুখে আঁচড়ে পরছে। রুদ্র ফুঁ দিয়ে চুল গুলো উড়িয়ে দিলো।
নূর হালকা কেঁপে উঠল।
রুদ্র নূরের দিকে তাকিয়ে বলে,’ আজ রাতটা আমাকে দিবে নূর..?
নূর সাথে সাথে ফ্রিজড হয়ে যায়। কোনো কথা বলতে পারছে না।
রুদ্র আবার বলে,’ নিরবতা কি সম্মতির লক্ষন।’
নূর রুদ্রের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বললো,’ শুধু আজ নয় আমি সারাজীবনের জন্য আপনাতে মিশে যেতে চাই।’
রুদ্র খুশিতে নূরকে জড়িয়ে ধরে, নাক, মুখ ডুবিয়ে দেয় নূরের ঘাড়ে।
রুদ্রঃ শাড়ি পড়লে তোমাকে আরো বেশি সুন্দর লাগে নূর। কাল থেকে শুধু শাড়ি পড়বে।’
নূরকে কোলে নিয়ে রুমে চলে যায় (তারপর কি হইছে🧐 সত্যি আমি জানিনা🥴🤭)

সকালে নীল নিচে নেমে জোর পূর্বক হাসি ঝুলিয়ে ফাইজার দিকে তাকালো।
নীল মনে মনে ভাবছে,’ এই মেয়ে এই সময় এখানে কেনো??’

ফাইজাঃ ওফ্ফ কেমন আছো হ্যান্ডসাম বয়??

মাহি ফাইজার কথা বলার স্টাইল দেখে ফিক করে হেসে দিলো।
ইরিন মাহির পাশে বসে আছে। এই ঘা ঘেঁষে ঘেঁষে কথা বলা মেয়েটাকে একদম পছন্দ না ইরিনের।

নীলঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুমি??
ফাইজাঃ ভালো.. কাল রাতে এত এত ফোন দিলাম ধরলে না যে??
নীল রাগে মন চাচ্ছে এই মেয়ের গালে ঠাস ঠাস করে তবলা বাজাতে।
নীল কথা পাল্টানোর জন্য বললো,’ কখন আসলে??’
ফাইজা খুব ভালো করেই বুঝলো নীল কথা এরিয়ে যাচ্ছে।
ফাইজাঃ এই তো একটু আগে।
নীলঃ ওহ্হ।

ফাইজাঃ সবাই একটা গল্প শুনবে??

মাহিঃ হুম বলো??

ফািজা নীলের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ দাঁড়িয়ে আছো কেনো বসো??’
নীল ইরিনের পাশে বসলো।

ফাইজা প্রথম থেকে শেষ অবদ্ধি নীল, রিফাত ভাই আর ওর কাহিনিটা বললো।

কাহিনি শেষ হতেই নীল ভয়ে খুক খুক করে কেশে উঠলো ।

মাহি আর ইরিন হাসতে হাসতে অবস্থা খারাপ। ওদের ও বুঝা হয়ে গেছে এটা কার জীবন কাহিনি আর ছেলেটা কে।

ফাইজা হেলান দিয়ে সোফায় বসে আহত কন্ঠে বললো,’ জীবনের সেরা বিনোদন ছিলো এটা।’

এভাবে হাসি খুশিতে কেটে গেলো আরো অনেক দিন।

ইদানীং নূর খেয়াল করছে আদিবা ঠিক নেই। কেমন যেনো অন্য মনস্ক হয়ে থাকে। কেউ একটা কথা বললে একটু পর ভুলে যাচ্ছে। সারাক্ষণ কি যেনো চিন্তা করে।

কয়েকদিন আগে নূর রুহি আর ইরিনের পরীক্ষা শেষ হয়েছে আজকে রেজাল্ট দিবে।

নাস্তার টেবিলে সবাই বসে আছে৷
হঠাৎ নূরের বড় আব্বু বললো,’ আদির খবর পেয়েছো?’

রুহি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

উনি আবার বললেন,’ মেঝো তোর ছেলেটাকে আর মানুষ বানাতে পাড়লি না। ‘

মেঝোঃ ভাই সে কোথায় আছে আমি জানার চেষ্টা করেছি। আবিরও অনেক চেষ্টা করেছে৷ আমার মনে হয় আবির জানে কিন্তু কিছু বলছে না।
আবির খাওয়া বন্ধ করে ওর বাবার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো।
আবিরঃ ওকে তোমার ছেলে বলতে লজ্জা হয়না আব্বু…? প্রেম করে একজন কে ঠকিয়ে তারি বেস্ট ফ্রেন্ড কে বিয়ে করলো আবার এখন এই মেয়েকে ও ভালো লাগছে না। এমন ভাইকে তো গুলি করে মেরে ফেলা উচিত। তোমাদের অতিরিক্ত আদরে ও এমন হয়েছে বলে কি তোমার মনে হয় না।??

~কি বলতে চাচ্ছো সোজাসুজি বলো? এটা তোমার কাজের জায়গা নয় যে পেঁচিয়ে ঘুরিয়ে কথা বলবে।

আবিরঃ তোমার ছেলে ডিভোর্স পেপার পাঠিয়েছে, বলে হাত ধুয়ে উঠে চলে গেলো।

সবার মুখ থতমত হয়ে আছে।

রুহি মুচকি হাসি দিলো। সে তো জানতই খুব তারাতারি এই দিনের মুখোমুখি হতে হবে। যার জীবন নরক বানাতে চেয়ে ছিলো তার জীবন আজ সুখের শেষ নেই। কিন্তু আজ ওর জীবন অন্ধকারে ছেয়ে গেছে। নিজের পাপের শাস্তি সে পেয়েছে খুব জঘন্য ভাবে পেয়েছে।

রাতে ডিভোর্স পেপার হাতে নিয়ে এক কাপড়ে বেরিয়ে গেলো রুহি। সবাই হাজার বলেও আটকাতে পারেনি। আর কি বলেই বা আটকাবে।

সময় চলে যাচ্ছে নিজের মতো সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে পালটে গেছে কয়েকটি জীবন।

নূর এখন রুদ্রকে খুব ভালোবাসে। অতীত ভুলে নিজের স্বামীর সাথে খুব ভালো আছে।

নীল আর ইরিন সারাদিন ঝগড়া লেগে থাকে।তবে নীরবে একজন আরেক জনকে পাগলের মতো ভালোবাসে।

আদিবা আর আবিরের ভালোবাসার মধ্যেও কোনো ত্রুটি নেই। খুব ভালো যাচ্ছে ওদের জীবন। তবে আবির খেয়াল করছে কয়েক দিন ধরে আদিবা কেমন যেনো হয়ে যাচ্ছে।

শুভ্রতা ভাবির এখন পাঁচ মাস চলছে। জিসান ভাই এখন বেশি রাত বাহিরে থাকে না। কাজ শেষ হওয়ার সাথে সাথে বাসায় চলে আশে। ভাবির খুব খেয়াল রাখে। এতে ভাবি এখন খুব খুশি।

রুহি আদির ডিভোর্স পেপারে এখনো সাইন করেনি। খুব যত্ন করে রেখে দিয়েছে। পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে।

কারো জীবন থেমে নেই। কারো ভালো কারো খারাপ চলছে। তবে সারাজীবন খারাপ চলবে না কোনো একদিন হয়তো হারানো হাসিটা আবার ফিরে আসবে। সেই ফিরে আশার অপেক্ষার প্রহর গুনছে রুহি। রুহি আগের মতো নেই নূরের সাথে কথা বলতে এখন লজ্জা পায়। এখন নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে নিজের বোনের মতো বেস্ট ফ্রেন্ড কে ঠকিয়ে আমি ভালো ছিলাম তো?? ও আমাকে ছেড়ে দিলেও প্রকৃতি ঠিক তার ঋণ শুধ করেছে।

আদিবা সবার নজর ফাঁকি দিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো।

সিএনজি স্টেশনে এসে একটা লোককে একটা ঠিকানা দেখালো নিয়ে যেতে। গাড়ি চলছে আর আদিবার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে।
গাড়ি গিয়ে থামলো একটা ভাংচুর পুড়া বাড়ির সামনে।

~আফা এটাই সেই ঠিকানা।

আদিবা শুষ্ক একটা ঢুক গিলে বাড়ির দিকে তাকিয়ে বললো,’ ঠিক আছে আপনি ভাড়া রেখে চলে জান।

~ আফা জায়গাটা ভালা না। আফনে একা একটা মেয়ে মানুষ আমি কেমনে একা রেখে যা-ই।

আদিবা এত এত চিন্তার মধ্যে হেসে দিলো।

আদিবাঃ যেখানে নিজেই জীবন অন্যের হাতে। সেখানে ভয় পাওয়া বোকামি। আপনি চলে জান ভাই।

লোকটা অদ্ভুত দৃষ্টিতে আদিবার দিকে তাকিয়ে চলে গেলো গাড়ি নিয়ে।

টুং করে আরেকটা মেসেজ আসলো মোবাইলে।
আদিবা মেসেজ চেক করে বাড়ির ভেতর চলে গেলো।

বাড়িটা বাহিরে ভাংচুর পুড়া হলেও ভেতরটা অতোটা ভাংচুর না।

আবারও মেসেজ আসলো।

মেসেজ অনুযায়ী আদিবা চেয়ারে বসে পরলো।

সাথে সাথে আশেপাশে থেকে কয়েকটা লোক এসে ওর হাত চেয়ারের সাথে বেঁধে দিলো।

আসতে ধীরে ধীরে একজন লোক ওর দিকে শয়তানি হাসি দিয়ে এগিয়ে আসলো।

লোকটিকে দেখে মুখ থেকে বেড়িয়ে আসলো” মামা!!”

লোকটা ওর সামনের চেয়ারে বসে বি*শ্রী এক হাসি দিয়ে বললো, ‘ বাহ্ মনে আছে তাইলে।’
আদিবা নিজের চোখ কে বিশ্বাস করাতে পারছে না নিজের মামা ওকে এতদিন মানুষিক রোগী বানিয়ে দিচ্ছিলো!!
আদিবাঃ মামা আপনি তাহলে…
মামাঃ কেন সামনে দেইখা চিনবার পারতাছোস না? না-কি পুলিশ নাগর পাইয়া কয়দিন বড়লোক পুলা দেইখা চোখে সরিষার চশমা পড়ছোস?
আদিবার চোখ জ্বালা ধরে উঠলো। জলে টইটম্বুর হয়ে গেলো। জার কাছে ছোটো থেকে বড় হলো। হয়তো কষ্ট দিয়েছে তাতে কি শিয়াল কুকুরে ছিঁড়ে খাওয়া থেকে তো আগলে রেখে ছিলো। সেই লোক ওর প্রিয় মানুষটিকে শেষ করার পরিকল্পনা করছে।

আদিবার সামনে তুবড়ি বাজাতেই টপ করে গাল বেয়ে গড়িয়ে পরলো জল।

মামাঃ কি ভাবছিস? এত দিন নিজে খাইয়ে পেলে বড় করলাম আর আজ সেই মামু কি-না বুকে ছুরি মারতে যাচ্ছি তাই তো??

হিহি তাহলে শুন আমি কোনো কালেই তোর মামা ছিলাম না।

আদিবা চমকে তাকালো।

~তোর বাবার সব থেকে প্রিয় বন্ধু ছিলাম আমি। খুব বেশি বিশ্বাস করতো আমাকে। কিন্তু আমার লোভ ছিলো তোর বাবার সম্পত্তির উপর।তোর বাবার সব কিছুই আমার জানা ছিলো। যেহেতু তোর বাবা উকিলদের সব থেকে বড় উকিল ছিলো তাই ভাবলাম শা*লা কে উড়িয়ে দেই সব দোষ গিয়ে পরবে তার বিরোধী দলের উপর। তাই গাড়ির ব্রেক ফেইল করে রেখে ছিলো। আর ভাগ্য কমে সেই দিন তুই বাসায় রয়ে গেলি তাই বেঁচে গিয়েছিস। ওদের মৃত্যুর পর তোকে মেরে ফেলার প্লেন করি। পথের কাটা রাখতে নেই কিন্তু তার আগেই শুনতে পাই হারা**ম*জা*দা তোর নামে সব লেখে গেছে। তোর ২২বছর হলে তখন তোর বিয়ে দেওয়ার কথা লেখা আছে। তোর অর্ধেক সম্পত্তির মালিক হবে তোর স্বামী। টাকার লোভ আবার আমি সামলাতে পারি না। ছোটো থেকে ছেলেকে দূরে দূরে রেখেছি। এখানের সবাই জানে আমার কোনো ছেলে নেই, কিন্তু আমাদের একটা ছেলে আছে ও আমাদের সাথে থাকে না। ওকে লাগিয়ে দিলাম তোর পিছে। কিন্তু ওই হাদা*রাম তো তোর রূপ দেখে প্রেমে পড়ে গেলো। তাতে আমার কোনো সমস্যা ছিলো না। আমার কাজ আরো সহজ হয়ে গিয়ে ছিলো কিন্তু মাঝ খানে ওই চেংরা পুলা আইসা সব প্লেনে জল ঢেলে দিলো। গাছে পানি দিলাম, যত্ন করলাম আমি। আর ফল খাবে অন্য কেউ তাতো আমি বসে বসে দেখতে পারি না। এই নে এখানে সাইন কর.!

আদিবা ঘৃনায়, ক্ষো*ভে চোখ লাল করে তাকালো সামনের অমানুষ, সাইকো লোকটার দিকে। ওর মা বাবার খুনির দিকে। যদি পারতো এখন এই লোকের জীবন নিয়ে নিতো নিজের হাতে।

মামাঃ এভাবে তাকিয়ে কি দেখোস? কিছুই করতে পারবি না। কেউ আসবে না এখানে। তুই যদি তোর পিয়ারার স্বামীকে বাঁচাতে চাস তাহলে সাইন করে দে। তা না হলে তোর বাবা মা’র মতো বলেই বি*শ্রী হাসিতে ভাংচুর ঘর কেঁপে কেঁপে উঠল। সাথে আদিবার বুক টাও কেঁপে উঠল অজানা ভয়ে।
হাজার কষ্ট, রাগ,ক্ষো*ব মনে রেখে হাত বাড়িয়ে কলমটা নিলো। ও জানে সাইন করার পর ওকেও খুব যত্ন করে এই লোক ওর বাবা মা-র কাছে পাঠিয়ে দিবে। আবিরের মুখটা বেসে উঠলো চোখের সামনে।
কলম ধরে পেপারের দিকে তাকিয়ে মাথা ঘুরে উঠলো। চোখ ঝাপসা হয়ে উঠলো। পিছন থেকে কানে বেসে আসলো একটা সুর ” আব্বা বার বার কল দিয়ে ডেকে আনার কারন টা কি এমন জায়গায়??”

তারপর আর কিছুই কানে আসলো না। তার আগেই আদিবা জ্ঞান হারায়।

চোখের উপর জল পরতে পিটপিট করে চোখ খোলে আদিবা। সামনে পরিচিত একটা মুখ দেখে বুঝার চেষ্টা করে এই ছেলে এখানে কেনো??..

~আপনি ঠিক আছেন তো?? বলেই পিছনে ওর মামার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকায় ছেলেটা।

আদিবা এখনো ফ্যাঁল ফ্যাঁল করে তাকিয়ে আছে।

ছেলেটা আদিবার তাকানোর মানে বুঝে একটু হেসে বললো,’ আমি এই কু*লা*ঙ্গার, লোকের ছেলে।

আদিবার সাথে আজ কি হচ্ছে একের পর এক ঝটকা খাচ্ছে।

চলবে…
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।#এই_অবেলায়_তুমি
#পর্ব_৪১(শেষ পার্ট)
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

দে দে ইরিন ক্যামেরাটা আমার হাতে দে….

সবাই চমকে পিছন ফিরে তাকালো।

দোতলায় নূর আর ইরিন ক্যামেরা নিয়ে কেচ খেলছে।

ইরিনঃ ধরতে পারলে নিয়ে নে।
নূরঃ ভালো হচ্ছে না কিন্তু ইরিন।

আদিবার মামা ভয়ে কুঁকড়ে উঠলো। এই মেয়ে দুটোর হাতে ক্যামেরা কেনো??ওরা কি সব রেকর্ড বা ভিডিও করেছে?? ভাবতেই বিন্দু বিন্দু ঘাম ঝরছে।

নূর ইরিন পিছে দৌড়ে উনাদের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো,’ আরে মাহিন ভাইয়া আপনি।’

ইরিন নূরকে বললো,’ মাহিন ভাইয়া!! তুই চিনিস এই লোক কে??’

নূর উপর নিচ মাথা দুলালো।

ইরিনঃকিভাবে?

নূরঃ বাসায় গিয়ে বলবো।

মামাঃ এই মেয়ে তোমরা কে? এখানে কি করো?? আর আমার ছেলেকে চিনো কিভাবে??

নূরঃ আসতে আঙ্কেল না হলে পেসার বেড়ে যাবে। তাহলে আপনার সম্পত্তির কি হবে..?

মামা ধমে গেলেন। আসলেই উনার পেসায় অল্পতেই বেড়ে যায়।

নূর সেই দিকে তাকিয়ে একটা কুটিল হাসি দিয়ে এগিয়ে গেলো আদিবার দিকে। আদিবার চোখে বিস্ময় নূর আর ইরিন এখানে কিভাবে??

নূর এগিয়ে গিয়ে রাগে কিরকির করে বললো,’ মাহিন ভাই এই জা*নো*য়ার টা আপনার বাবা ছি! ভাবতেই ঘৃনা হচ্ছে।

মাহিন নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।

মামাঃ এই মেয়ে মুখ সামলে কথা বল! আমি কে জানিস? আমার রাজত্বে এসে আমার সাথে উঁচু গলায় কথা বলছো। তোমার সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি। আদিবার দিকে তাকিয়ে রেগে বললো তোকে বলেছিলাম না একা আসতে আর কেউ যেনো না জানে। এবার সব গুলা মরবি আমার হাতে বলে ঘর কাঁপিয়ে হাতসে শুরু করলো।

নূর এদিক ওদিকে তাকিয়ে বললো, ‘ আপনার রাজত্ব দেখি আপনার মতো..?’

হাসি থামিয়ে নূরের দিকে তাকালো। এই মেয়ে উনাকে শুষ্ক ভাবে অপমান করলো! খুবই চালু মেয়েটা।

মাহিন এতক্ষন চুপচাপ তাকিয়ে ছিলো আদিবার দিকে। আসতে করে হাতে বাঁধা রশিটা খুলতে গেলে ওর কু*লাঙ্গা*র বাপ পিস্তল তাক করে ইরিনের মাথায়।

আদিবা ওর মামার সামনে কেঁদে বলে উঠলো, ‘ বিশ্বাস করো মামা আমি কাউকে কিছু বলিনি। ওরা জানলো কিভাবে আমি জানি না৷ প্লিজ ইরিনের কিছু করো না। দরকার হলে আমাকে মেরে ফেলো।

মাহিন শান্ত চোখে তাকিয়ে আছে আদিবার দিকে। মেয়েটাকে যত দেখে ততই মুগ্ধ হয়।

মামাঃ হাহাহা তোর কি মনে হয় আমি দুধের বাচ্চা তুই বলবি আমি বিশ্বাস করে নিবো।তুই না বললে ওরা জানলো কিভাবে?? আর তোকে মারলে তো আমার সব শেষ। তোকে মারা জাবে না। এক এক করে এই দুইজনের মাথা উড়িয়ে দিবো। তারাতারি সাইন কর তাহলে ছেড়ে দিবো।
আদিবা আবারো কলম হাতে নিতেই নূর বলে উঠলো,’ ভাবি কলটা জায়গায় রাখো। আর আমরা কিভাবে জানলাম? ওকে বলছি। বলেই মোবাইল বের করে দেখালো আদিবার মোবাইলের সাথে নূরের মোবাইল কানেক্টেড করা।
ভাবি কে আমি কয়দিন ধরে সারাক্ষণ কিছু নিয়ে চিন্তিত দেখছি। আর একদিন উনার রুমের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় শুনতে পাই কার সাথে যেনো মোবারক বলছে, ” প্লিজ উনার কিছু করবেন না। আমি আসবো, আপনারা যেখানে বলেন আমি সেখানেই যাবো। উনার কোনো ক্ষতি করবেন না আমি কাউকে কিছু বলবো না। ” ফোন রেখে ভাবি কান্নায় ভেঙে পরে। আমি বুঝতে পারি ভাবি কে কেউ ব্লেকমেইল করছে। তাই সুযোগ বুঝে ভাবির মোবাইলের সাথে আমার মোবাইল কানেক্টেড করে দেই।’

মামাঃ তারপর হিরোইন সেজে চলে আসলে আমার আস্তানায় কিন্তু এটা তো কোনো ফিল্ম নয় যে হিরো এসে তোমাদের বাচিয়ে নিবে। এখন তোমাদের বাঁচাবে কে??
নূর বাঁকা হেঁসে তাকিয়ে আছে দরজার দিকে।
দরজার মধ্যে কেউ বললো,’ ওদের বাঁচাতে কেউ আসবে না। তবে আপনাকে শশুর বাড়ি নিয়ে যেতে আমি চলে এসেছি মামা শশুর।
কন্ঠটা শুনেই মামার শরীর দিয়ে গরম ধুঁয়া বের হয়ে গেলো। খুব ভালো ভাবে ফেঁসেছেন উনি। অন্য দিকে ভয়ে দৌড় দিতে নিলে মাহিন নিজের বাবার কলার চেপে ধরে। এমন বাবা থাকার চেয়ে মরে যাওয়া খুব ভালো। এরা বেঁচে থাকা মানে সমাজ নষ্ট হওয়া।

সব সমস্যা সমাধান করে মামাকে ধরে নিয়ে যায় আবির। মাহিন সবার সাথে কিছু কথা বলে নিজের মতো চলে জায়। ওর কেউ নেই আর না কেউ ছিলো। বুঝ হওয়ার পর থেকে এটাই মনে করে সে।

এই ঘটনার পর অনেকদিন কেটে যায়। মামার সারাজীবনের কারাদণ্ড হয়।
আদিবা আগের মতো হতে চেয়েও হতে পারে না। নিজের মা বাবার খুনির সাথে এত বছর থেকেছে একি বাড়িতে। সেটা ভাবলেই নিজের প্রতি নিজের রাগ হয়। তবে আবির চেষ্টা করে আদিবাকে আগের মতো সহজ করে তুলতে।

রাতে ইরিন বসে আছে নূরদের বাসার ছাঁদে।
নূর ছাঁদে উঠে ইরিন কে দেখে জিজ্ঞেস করলো, ‘ কিরে তুই হঠাৎ আমাদের বাসায় এই রাতে..?
ইরিনঃ হুম।
নূরঃ কি হুম। নিচে চল।
ইরিনঃ তোর সাথে কিছু কথা ছিলো।
নূরঃ হুম বলিস.. এখন আগে খেয়ে নে।
ইরিনঃ না আগে কথাটা বলে নেই।
নূর ইরিনের পাশে বসে বললো,’ হুম বল??..
ইরিনঃ আমার আর নীলের বিয়েটা তুই ইচ্ছে করে দিয়েছিস। আর ওই ছেলের সাথে তুই বিয়েটা ভেঙে ছিলি তাই না.??
নূরঃ এতদিন পরে এই কথা উঠছে কেনো??
ইরিনঃ একদিন তো উঠারি ছিলো তাই না?
নূরঃ আমার মনে হয় এটা আরো আগে উঠার দরকার ছিলো। কিন্তু এখন এতদিন পর কেনো??
ইরিনঃ নূর এত পেচ ভালো লাগছে না। সত্যি কথাটা আমার কাছে অন্তত বল..
নূরঃ আচ্ছা আগে বল এটা এতদিন পর জিজ্ঞেস করলি কেনো??
ইরিনঃ আজ ওই ছেলের সাথে আমার শপিং মলে দেখা হয়েছে। নতুন বউ নিয়ে এসেছিলো। আমাকে দেখে হাসি মুখে বললো,’ আরে আপনি স্বামী নিয়ে এসেছেন বুঝি?।
নূরঃ তুই কি বললি??
ইরিনঃ আমার তো ওই ছেলেকে দেখেই রাগ উঠে গেলো। তাই কিছু না বলে চলে এসেছি।
নূরঃ ওহহ।
ইরিনঃ নূর আমার মনে অনেক প্রশ্ন। আমি করার আগেই তুই বলে দে না?..
নূরঃ আচ্ছা শুন, তোর বিয়ের আগের দিন সকালে আমি তোর কাছ থেকে ছেলের নাম্বার নিয়ে ছিলাম মনে আছে তোর?..
ইরিনঃ হুম।
নূরঃ আমি কল দিয়ে ভাইয়াটার সাথে আমাদের কলেজের পাশের হোটেলে দেখা করি। উনাকে বলি তুই আর নীল রিলেশনশিপ এ আছিস৷ পরিবারের চাপে বিয়ে করতে চাস.. আরো অনেক কিছু কিন্তু ছেলেটা তাও বললো,’ বিয়ের আগে মানুষ কত কিছুই করে সমস্যা নেই বিয়ের পর সব ঠিক হয়ে যাবে। তাই আর কোনো কোল না পায়ে বললাম তুই নীলের বাচ্চার মা হতে যাচ্ছিস।

ইরিনঃ কিইই!!

নূরঃ আসতে চিৎকার দে। কি করবো আর কিছু খোঁজে পাচ্ছি লাম না। যাই হোক এবারের ডোসটা কাজে দিলো ছেলে আমাকে বললো সে সব ঠিক করে নিবে। আমি যেনো নীলকে নিয়ে ঠিক টাইমে উপস্থিত থাকি।ভাইয়াটাকে ধন্যবাদ দিয়ে আমি বাসায় চলে আসলাম।
প্লেন মুতাবেক বাসায় এসে আম্মু, ফুপিমণি সবাইকে রাজি করালাম। আসলে নীলের তো এখনো পড়াশোনা শেষ হয়নি তাই প্রথম রাজি না হতে চাইলেও পরে ছেলের দিকে তাকিয়ে ফুপিমণি মেনে নিলো। বাকিটা তো তুই নিজেই জানিস।
ইরিনঃ তার মানে সব তোর কারসাজি।
নূরঃ এখনো সময় আছে মনের কথা নীলকে বলে দে।
ইরিনঃ হুম।
নূরঃ হুম কি?? আজকেই বলবি তো??
ইরিনঃ হুম।
নূরঃ চল নিচে মনে হয় সবাই অপেক্ষা করছে। খাবারের জন্য।
ইরিন এক গাল হেসে উঠে দাঁড়ালো। নূর উঠতে নিয়ে মোবাইলে টুং করে মেসেজ আসলো।
নূরঃ তুই যা আমি আসছি।
ইরিনঃ আচ্ছা বলে ছাঁদ থেকে নেমে গেলো।

নূর মেসেজটা দেখলো,

” ভালোবাসা কি আমার জানা নেই।তাই রাতের ঘুম কেঁড়ে নেওয়াকে আমি ভালোবাসা বলি, তাকে দেখার তৃষ্ণা কে আমি ভালোবাসা বলি,তাকে দেখে বুক অসম্ভব রকমে কেঁপে উঠাকে আমি ভালোবাসা বলি, সে ঠোঁট নাড়িয়ে কথা বললে মুগ্ধ হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকাকে ভালোবাসা বলি, সে অন্য কারো সেটা যেনেও বার বার তাকে পাওয়ার আকাঙ্খা কে আমি ভালোবাসা বলি। আমি জানি তুমি ভালো আছো, খুব ভালো আছো। আর চাইও তুমি ভালো থাকো।তুমি প্রথম নারী যার প্রতি এই পাথর মনে ফুল ফুটে ছিলো। তুমি প্রথম নারী যে আমার চোখে চোখ রেখে আমাকে ভয় দেখিয়ে ছিলো। আমি হয়তো সময়ের সাথে তোমাকে ভুলে যাবো। কারন মানুষ সারাজীবন একজনের স্মৃতি নিয়ে কাটিয়ে দিতে পারে না। জানিনা আমার জীবনে আবার নতুন কোনো বসন্ত আসবে কি-না তবে যদি আসে তাহলে সেই বসন্ত কে নিয়ে সেই প্রথম বার আবার তোমার সামনে দাঁড়াবো এর আগে আমাকে হাজার খোজলেও পাবে না। আমার বন্ধুটাকে ভালো রেখো।”

আজব মেসেজে নাম নেই কেনো? আর বন্ধু,বসন্ত, ভালোবাসা এই লোক কে??

বিশাল এক আলিশান প্রাসাদের মধ্যে বসে আছে শুভ চোখ মোবাইলে পাঠানো প্রিয় একজন নারীর কাছে ছোটো মেসেজ।

মনে মনে কয়েকবার প্রতিজ্ঞা করে নিলো আর তাকাবে না এই নারীর দিকে। আর ভালোবাসি বলবে না এই শেষ। নিজের প্রান প্রিয় বন্ধুর বউয়ের দিকে সে তাকাবে না। কখনো সামনেও জাবে না।
দু ঠোঁটের মাঝ খান থেকে সিগারেট বের করে উপরের দিকে ধুঁয়া উড়িয়ে দিলো।

ডোপ দিলো সেই দিন রাতের ঘটনার মধ্যে _____

রুদ্র নূরের মোবাইল নিয়ে বেড়িয়ে গিয়ে এই নাম্বারে মেসেজ পাঠায় দেখা করার জন্য।
শুভ খুব অবাক হয় এত রাতে নূর ওর সাথে দেখা করতে চায় মানে? তারা তারি বললো ঠিকানা বলো..?
আবারো মেসেজ যায়। খুশিতে শুভ রেডি হয়ে আগে আগে গিয়ে দাঁড়ায় কিন্তু ওর মনে হয় ও আশার আগেই কেউ এখানে আছে। নূর এত তারাতারি কিভাবে আসলো? না-কি এখানে এসে ওকে মেসেজ দিয়েছে? সামনে একটা অবয়ন দেখে এগিয়ে যায়। ল্যাম্পুস্টের আলোয় মুখটা দেখে কিছু সময় থমকে যায়। তারপর খুশিতে একজন আরেক জনকে জড়িয়ে ধরে। ওরা ভুলেয় যায় এখানে কেনো এসে ছিলো। আড্ডা দেওয়া শুরু হঠাৎ রুদ্র বললো,’ তুই এখানে??
শুভঃ একজনের সাথে দেখা করতে এসেছি। তুই কেনো এত রাতে?
রুদ্রঃ আমিও একজনের সাথে দেখা করতে এসেছি।
শুভঃ কাউকে তো দেখছি না।
রুদ্রঃ কল দেই বলে কল দিলো। সাথে সাথে শুভর ফোন বেজে উঠলো। শুভর ভয়ে ঘাম ছুটে গেলো। এতদিন পর বন্ধুর সাথে দেখা আর এখন কোনো কিছুই স্বাভাবিক লাগছে না। ফোন কানে দিতেই রুদ্র অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।
রুদ্রঃ তুই!!??
শুভঃ তুই!!?

তারপর কিছু সময় নিরবতায় ছেয়ে গেলো।
নিরবতা ভেঙে রুদ্র বলে উঠলো,’ প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত শুনতে চাই??’
শুভ ঠোঁট কামড়ে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সব বললো।
রুদ্রঃ সব বুঝলাম কিন্তু আমি এখন ওর স্বামী। আর তোর বুঝা উচিত ওর বিয়ে হয়ে গেছে।

“স্বামী ” শুনে চমকে উঠলো। কি করতে যাচ্ছিলো সে?? কাল নূরের স্বামীকে মারার জন্য গুন্ডা পাঠাতো সে।

তারপর আরো অনেক কথা বলে সারা রাত দুই বন্ধু সেই ব্রিজের উপর কাটিয়ে দিলো।

শুভ আর নূরের মুখোমুখি হয়নি। এখন সে অস্ট্রেলিয়া আছে। সে আর কখনো নূরের মুখোমুখি হতে চায় না। প্রথম ভালোলাগা ভালোবাসা ভুলে যাওয়া অতটাও সুজা নয়।

নূর দাঁড়িয়ে আছে ব্যালকনিতে বাসার সবাই ঘুম। রুদ্র এখনো হসপিটাল থেকে বাড়ি ফিরেনি। দরজা খোলার শব্দে বুঝলো রুদ্র রুমে এসেছে। কিন্তু ওর রুমে যেতে ইচ্ছে হলো না দাঁড়িয়ে আছে এখানেই।
রুদ্র ফ্রেশ হয়ে নূরকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।
রুদ্রঃ বাসায় আসলাম কই একটু খাতিরযত্ন করবে তা না এখানে দাঁড়িয়ে আছো।
নূরঃ চাঁদ দেখি।
রুদ্রঃ তুমি নিজেই তো একটা চাঁদ আর চাঁদ দেখার কি আছে। নিজেকে দেখো তাহলেই তো হয়।
নূরঃ আমাকে দেখার জন্য তো আমার বর আছে। তাই আমি ওই চাঁদের থেকে আলো কিভাবে চোরি করবো সেই চিন্তা করছি।
রুদ্রঃ তোমার আর আলো চোরি করতে হবে না। আমার ঘর তোমার রূপের আলোয় আলোকিত হয়ে আছে সাথে আমিও। এখন আমি তোমাকে চোরি করবো।
নূরঃ আমাকে চোরি করার কি আছে?
রুদ্র কিছু না বলে বউকে কোলে তুলে নিলো।

—-

আদিবা গুটিশুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে আবিরের বুকে। আবির মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে বিড়াল ছানার মতো চুপটি করে তার বুকে মুখ গুঁজে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন রমণীর দিকে।

****

এলোমেলো শাড়ি, বই মাথার কাছে। শাড়ি পেট থেকে সরে গেছে। ফর্সা মুখ। খুব আকর্ষণীয় লাগছে মাহি কে। ফায়াজ রুমে ঢুকে মাহির এমন ঘুম দেখে একটু অবাক হলো। মাহি তো কখনো এভাবে ঘুমায় না। আজ পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে গেলো।
ফায়াজ গিয়ে মাহির মাথার কাছ থেকে বইটা নেওয়ার সময় ওর দৃষ্টি আটকে গেলো মাহির ঘারের ছোটো তিলটার দিকে। নিজেকে সামলে ফায়াজ বই নিয়ে রেখে দিলো টেবিলে।
মাহির পাশে এসে শাড়িটা ঠিক করে দেওয়ার সময় গলা শুকিয়ে কাঠ। ফায়াজ ফিসফিস করে মাহির কানে বললো,’ ভালোবাসি প্রিয়তমা খুব বেশি ভালোবাসি কোনো দিন কি আপন করে নিবে না..? অপেক্ষা যে বড্ড কষ্ট কর।
ফায়াজ সরে যেতে নিলে মাহি কলার আঁকড়ে ধরে চোখ খোলে তাকায়।
ফায়াজ অপ্রস্তুত হয়ে পরে। সে কি বেশি শব্দ করে কথা বলে ফেলেছে??
মাহি ফায়াজের বুকে মাথা গুঁজে বললো,’ আমিও ভালোবাসা মাস্টারমশাই। ‘
ফায়াজ মনে হয় আকাশের চাঁদ টা হাতে পেয়েছে এত খুশি হয়েছে। না-কি বেশি খুশিতে ভুল শুনলো। আবার বললো,’ কি বললে..??’
মাহি মাথা গুঁজেই বললো,’ ভালোবাসি….আপনার এই অবেলায় নয় আরো আগে আশার দরকার ছিলো আমার জীবনে মাস্টারমশাই। ‘

এই একটা কথা, একটা শব্দ থেকেই শুরু হলো ওদের এক নতুন জীবন।

******

নীল নিজের রুমে ঢুকে দেখলো লাইট বন্ধ। লাইট জ্বালানোর সাথে সাথে এক আকাশ সমান অবাক হলো। রুম খুব সুন্দর করে সাজানো আর সব থেকে সুন্দর জিনিসটা ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মাথা নিচু করা লজ্জায় গাল দুটো লাল হয়ে আছে।
নীল মাথা থেকে নিচ পর্যন্ত এক বার তাকালো।
রাণী গোলাপি পাতলা জর্জেট শাড়ি।সাথে বাহারী ধরনের হাত ভর্তি চুড়ি, চুল ছাড়া, কানে তাজা গোলাপ গোঁজা। এত স্নিগ্ধ লাগছে ইরিনের মুখটা।যেনো এখোনি ফোঁটা এক গোলাপ ওর সামনে দাঁড়িয়ে।
নীল এক পা দু পা করে এগিয়ে গেলো ইরিনের কাছে। ইরিন ভয়ে,লজ্জায় শাড়ির আঁচল খামচে ধরলো।
নীল গিয়ে ইরিনের সামনে দাঁড়ালো।
নীলঃ আজ হটাৎ এত আয়োজন।
ইরিন কিভাবে বলবে নূর শিখিয়ে দিয়েছে সব।
নীলঃ কে মাথায় এই ভূত ঢুকিয়েছে??
ইরিন তাও কিছু বলছে না।
নীলঃ এটা নিশ্চয়ই নূরের কাজ!
ইরিন এবার বললো,’ নূর তো ভুল কিছু করেনি…’
নীলঃ আচ্ছা….
ইরিনঃ হুম।
কিছু সময় চুপ থেকে ইরিন আবার বললো,’ নূর ঠিকি বলেছে…স্বামীকে ঘরে আটকে না রাখলে অন্য নারীতে আসক্ত হয়ে পরবে। ওর কথা-ই তো সত্যি হলো বলে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কান্না শুরু করে দিলো।
নীল অবাক হয়ে গেলো ইরিনের কথায় আর কাজে। এই মেয়ে এভাবে কান্না করছে কেনো আর কি সত্যি হয়েছে?
নীলঃ এই কান্না বন্ধ করো। আর কি সত্যি হয়েছে??
ইরিন ফুপিয়ে ফুপিয়ে বললো,’ আমি এত এত কষ্ট করে সাজলাম, ঘর সাজালাম আপনি একবার ও আমার প্রশংসা করেন নি তার মানে কি ধারায়..?
নীলঃ কি ধারায়.?
ইরিনঃ আপনি অন্য নারীতে আসক্ত হয়ে গেছেন।
নীল মনে মনে বললো,’ ওই বেয়াদব নূরের বাচ্চাকে খালি সামনে পাই। ওর জামাইর হসপিটালেই ওরে ভর্তি করামু৷ আমার বোকা শুকা বউ টার মাথায় এই সব ঢুকায় গেলো।’

নীল ইরিনের দিকে তাকিয়ে বললো,’ তুমি আমার দেখা সব থেকে সুন্দর নারী। আমি তোমাকে আর কিভাবে প্রশংসা করবো।
ইরিন লজ্জা পেয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। নীল ওকে সুন্দর বলেছে এর থেকে সুন্দর কথা আর কি হতে পারে। নূর সব সময় একটু বেশিই বলে।

নীলঃ একটা কথা বললে রাখবে..?
ইরিনঃ কি..?
নীলঃ আজ রাত আমার সাথে সারা শহর হাতে হাত রেখে ঘুরে বেড়াবে প্লিজ..?

ইরিন খুশিতে গদোগদো হয়ে নীলের হাত জড়িয়ে ধরে বললো চলেন।

নূর রুদ্রের বুকে মাথা রেখে বললো,’ আপনি এই অবেলায় না এসে আরো আগে আশার দরকার ছিলো আমার জীবনে। তাহলে আমার জীবনটা আরো সুখের হতো।
রুদ্রঃ কষ্টের পর সুখ আসে নূর। হয়তো আমি এই অবেলায় আসাতে তোমাকে পেয়েছি।

নূর কিছু বললো না।
রুদ্র আবার বললো,’ নূর’
নূরঃ হুম।
রুদ্রঃভালোবাসি,ভালোবাসি,ভালোবাসি। সারাজীবন বাসবো মৃত্যুর পরও তোমাকেই ভালোবাসবো।

সমাপ্ত

ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here