একজোড়া পায়রা পর্ব -১২+১৩

#একজোড়া_পায়রা
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
#পার্ট১২

আমি উনার মুখ দেখার আশায় বসে আছি।কিন্তু উনার তাতে কোনো হেলদোল নেই।আমার সামনে পায়চারি করে যাচ্ছেন উনি।হঠাৎ আমার সামনে ভুতের মতো উদয় হয়ে বলেন,,

-তোমায় অনেক গুলা স্ক্রিনকেয়ার আর মেকাপ প্রোডাক্ট কিনে দেবো নি আচ্ছা?

উনার এমন ভুতের মতো উদয় হওয়াতে আমি ভয় পেয়ে যাই।লম্বা শ্বাস ছেড়ে বলি,,,,

-লোভ দেখাচ্ছেন?লড়াই করে চলছি।একটা কথা মনে রাখবেন।মধ্যবিত্ত ঘরের লড়াই করে চলা বাস্তববাদী মেয়েরা কখনো লোভী হয় না।তবে আমার লোভ আছে।আপনাকে দেখার লোভ।তাই হয়তো আপনার কাছে এমন আবদার করে বসলাম!
-রাখতেই হবে আবদার?
-রাখবেন নাকি রাখবেন না এটা আপনার সিদ্ধান্ত। আমার আবদার করার কথা আবদার করেছি।

উনি মাথা নিচু করেন।আস্তে করে মাস্কটা খুলেন।অনেকটা সিনেমার স্লো মোশনের মতো।তারপর আমার দিকে তার অমায়িক চোখ দুটো তাকায়।আমি তাজ্জব হয়ে যাই।ব্যাটার ঢং দেখলে বাঁচি না।খারাপ না তো দেখতে।রোদে পুড়া শ্যামলা মুখে হাল্কা খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি আর ঠোঁটের নিচে থুতনিতে একটা তিল।শরতের হিমেল বাতাসে তার অবাধ্য চুল গুলো উড়ছে।উফফ!আমি আবার লোকটার প্রেমে পরে গেলাম।ফেস কাটিং অনেকটা শিশিরেরই মতো।উনার মাস্ক পরা মুখ দেখেই মেয়েরা পাগল।না জানি এভাবে দেখলে মেয়েরা কি করবে!কিন্তু দেখতে অতটা আহামরি সুন্দর না।মোটামুটি চলে আর কী!ছেলেদের আবার বেশি সুন্দর মানায় না।আমার দিকে তাকিয়ে উনি একটা মুচকী হাসি দেন।সাথে সাথেই উনার দুই গালে ছোট করে টোল পরে।আমি ভেবাচেকা খেয়ে যাই।কিন্তু কিছু বুঝতে দেওয়া যাবে না এই লোকটাকে।তাই একটু ভাব নিয়ে বলি,,

-দেখতে তো খারাপ না!তাহলে এভাবে মাস্ক পরে থাকেন কেন?

উনি মাস্ক পরতে পরতে বলেন,,,

-নিজেকে আড়াল করে রাখতে ভাল্লাগে।
-আড়াল করবেন কিভাবে?আপনি সেলিব্রিটি মানুষ!আর আপনি কি চোর নাকি যে নিজেকে আড়াল করবেন।

আমার কথার উত্তর তিনি দেন না।মুচকী হাসেন আর শান্ত গলায় আমায় বাইকে উঠতে বলেন।আমিও কথা না বাড়িয়ে তার কথা মতো বাইকে উঠি। রাত তো আর কম হলো না!যেতে যেতে আমি উনাকে বলি আমার সামনে যেন সে মাস্ক পরে না থাকে।উত্তরে উনি বলেন,,,

-আচ্ছা।তবে পাব্লিক প্লেসে যেন আবার মাস্ক খুলার আবদার করে বসো না!দেখাতে চাই না মানুষকে আমার কুৎসিত চেহারা।
-আপনি মোটেও কুৎসিত নন।আপনি মাশাআল্লাহ।

উনি মুচকী হাসেন।


শুভ্রর সাথে রাত্রি বেলায় মেলায় ঘুরতে এসেছি।অনেকটা বাচ্চাদের মতো বায়না ধরেই উনাকে নিয়ে জোর করে নাগরদোলায় উঠেছি।কিছুতেই যাবেন না উনি আমার সাথে।উনার নাকি ভয় করে।একটু ওপরে উঠতেই চিৎকার চেঁচামেচি লাগিয়ে দেন।

-এই ভাই! নিচে নামান নাগরদোলা

মেলায় তখন মানুষের চোখের কেন্দ্রবিন্দু আমরা।এই লোকটাকে নিয়ে তো আচ্ছা বিপদে পরা গেলো।এত ভয় পেলে চলে?নাগরদোলা থামানোরও কোনো উপায় নেই।একেবারে ওপরে উঠে গেছে এখন।উনি ভয়ে চোখ বন্ধ করে আমার হাতটা শক্ত করে ধরেছে।এখনই মনে হয় হাতটা কটমট করে ভেঙে যাবে।মুখ ফুটে কিছু উনাকে বলতেও পারছি না!কি একটা অবস্থা।নামানোর সময় নাগরদোলা একটু হেলতেই উনি চিৎকার দিয়ে,,,

-আল্লাহ! পড়লাম।বাঁচাও খোদা।
-পরি নাই।আমরা বসেই আছি।আর আপনি পরলে আমায় নিয়েই পরবেন।এমন ভাবে ধরেছেন হাত!চুপ করেন।মানুষ জন তাকায় দেখছে আমাদের।

আমার কথা শুনে হাত উনি হাত ছেড়ে দেন।শুকনো গলায় বলেন,,,

-সরি।খেয়াল ছিলো না।

লোকটার জন্য আমি কিছুই ইঞ্জয় করতে পারলাম না।এমনেতে নাগরদোলায় উঠলে পুরো মেলার এরিয়াটা ভালোভাবে দেখা যেত কিন্তু ইনি তো নিজেও ভয় পেয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করেছেন।সাথে আমাকেও পেনিকে রেখেছেন।নাগরদোলা থেকে নেমেই আগে এক বোতল পানি কিনে এনে উনাকে দিই।বেচারা এখনো ভয়ে কাঁপছে।এত ভয় মানুষ পায়?মিনিট পনেরোর মতো উনার সাথে ধ্যান ধরেই বসে থাকি।মেলায় আসা তরুণীরা উনার কান্ডে মুখ টিপে হাসছে।ভয় কিছুটা কেটে গেলে উনি আমায় বলেন,,,

-আর যদি আমায় জোর করে নাগরদোলায় উঠিয়েছো!
-হুহ।তোকে রকেটে উঠিয়ে ফেলে দেবো।মেয়ে মানুষও এর কাছে হার মানবে।ছেলে হয়ে এত ভয় মানুষ পায়?

ভেংচি কেটে বলি আমি।উনি পানি দিয়ে শুকনো ভিজিয়ে বলেন,,,

-তুই তুকারি করলে যে!
-বেশ করেছি তুই তুকারি করেছি।তোর জন্য আমি মেলার রাত্রি বেলার সিনারিটা দেখতেই পারলাম না।
-আমার উঠবে?
-মাফও চাই দোয়াও চাই।
-এএএ ভয় পেয়েছে!
-চুপ!

কড়া গলায় বলি আমি।উনি চুপ হয়ে যান।আমি আবার ঝাড়ি দিয়ে বলি,,,

-মেলায় কি বসে থাকার জন্য এসেছি?চলেন একটু ঘুরি।

আমার ঝাড়ি খেয়ে লোকটা উঠে পড়ে।পাশেই একটা স্টল ছিলো।চুড়ি,গয়না গাটি,হেয়ার বেন্ড সুন্দর করে সাজানো।আমি গিয়ে সেগুলো দেখতে লাগি।ইশ! মন চাচ্ছে পুরো দোকান তুলে নিয়ে যাই।আমি বিড়ালের কানওয়ালা একটা হেয়ার বেন্ড শুভ্রকে পরিয়ে দিই।উনি বিরক্তি নিয়ে আমার দিকে তাকান।আমি দুষ্টুমি ভরা হাসি দিয়ে বলি,,

-মাশাআল্লাহ।
-আমি মেয়ে না।
-কিন্তু নাগরদোলায় চড়লে আপনি মেয়েদের থেকেও বেশি ভয় পান!

কথাটা বলেই আমি উনার সাথে একটা সেল্ফি তুলি।উনি আকাশ থেকে পরেন।তোতলাতে তোতলাতে বলেন,,,

-এটা কি হলো?
-সেল্ফি হলো।ইন্সটাগ্রামে আপ দেবো।হ্যাশট্যাগ মাই কিউট বয়ফ্রেন্ড।খারাপ লাগছে না।ভালোই লাগছে দেখতে।

উনি বেন্ডটা খুলে রেখে দিয়ে বলেন,,,

-আপ দিলে খবর আছে তোমার।
-কি করবেন?
-যা করবো তা তোমার ধারণার বাইরে।

উনার কথা শুনে আমার কেমন যেন লাগতে থাকে।অনেকটা ভয় আর অসস্থি বোধ করছি উনার এমন ত্যাড়া কথায়।ভয়ার্ত কন্ঠে বলি,,,

-উফফ বুঝলাম না।
-ছোট মানুষ।বুঝবেও না।

উনি আমার মাথায় হাত দিয়ে বলেন।এই ভাল্লাগে না আমার।উনি কথায় কথায় আমায় খাটো বলে ইনসাল্ট করেন।উফফ বিরক্তকর।আমি খাটো তো কি হয়েছে। আমি এক্সট্রা কিউট।কোন আক্কেলে যে এই লোকটার সাথে প্রেম করতে গিয়েছিলাম!সেলিব্রিটি মানুষ।মেয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে আসে এর সাথে পিক তুলতে কথা বলতে।মুখে কিছু না বললেও ভেতর ভেতর আমার খুব জ্বলে।একটা লম্বা মেয়ে এসে ঠোঁট কাকের মতো করে উনার সাথে সেল্ফি তুলতে লাগেন।তারপর যে চে কথা বলতে আসে।উফফফ অসহ্যকর।আর সহ্য হচ্ছে না।চলে যাই আমি সেখান থেকে।

শিশির সাজতে খুব ভালোবাসে।তাই ওর জন্য দুটো লিপস্টিক কিনি।মেকাপ আইটেম হিসাবে আমি শুধু কাজল,লিপস্টিক,আইলার,মাসকারাকেই চিনি।প্রায় ঘন্টা খানেক পর দেখি শুভ্র আমার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে।আমি দেখেও না দেখার ভান করে এড়িয়ে যাই।উনি আমার পথ আটকে বলেন,,

-কই যাও?

আমি উত্তর দিই না।উনি আবার বলেন,,,

-এমন করছো কেন?তুমি জানো আমি তোমায় পাগলের মতো খুঁজেছি।
-খুঁজলে খুঁজেন আমার কি?
-ভাল্লাগে না আমায় আর এখন?
-বল তোর আমায় ভাল্লাগে না।তাই লম্বা করে মেয়েটার সাথে ঢং করে হেসে হেসে কথা বলছিলি।

ঝাঁঝালো কন্ঠে বলি আমি।উনি চাপা হাসি দিয়ে বলেন,,,

-ও তাই বুঝি মহারানীর রাগ হয়েছে?
-Don’t call me মহারাণী।

তেড়ে গিয়ে বলি আমি।উনি লাজুক কন্ঠে বলেন,,,

-রাগ ভাঙাতে হবে?
-যা তুই। সর এখান থেকে।

কথাটা বলে আমি নিজেই সরে যাই।গয়নার দোকানে গিয়ে গয়না দেখছিলাম।হঠাৎ করেই লোকটা ডজন খানেক চুড়ি নিয়ে আমার সামনে হাজির হয়। আমি ভয় পেয়ে যাই।বিরক্তি নিয়ে বলি,,,

-তুই আবার এসেছিস?
-আমি আসবো না তো কে আসবে?
-শান্ত হইছে?
-ব্যাটায় এখন তোমার ব্লক লিস্টে।
-আননোওন নাম্বার থেকে প্রায়ই ফোন দেয়।

উনি ভেবাচেকা খেয়ে যান।অবাক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন।আমি তুড়ি মেরে বলি,,

-জ্বলে?
-আগে বলো নাই কেন?
-ব্যস্ত মানুষ। এই সামান্য বিষয় নিয়ে শুধু শুধু কেন আপনাকে ডিস্টার্ব করবো।
-পরে যদি ব্যাটায় তোমায় পটিয়ে ফেলে?

আমি নাকের নিচে আঙুল ঘষে একটু ভাব নিয়ে ওনাকে বলি,,,

-এতদিন যেমন পায় নি আর পাবেও না ইনশাআল্লাহ।
-শিউর?
-হু।আর আমার আন্দাজ ভুল হয় না।ইভেন কোনো মেয়ের আন্দাজই ভুল হয় না।বাই দ্যা রাস্তা সরি বলেন
-কেন?
-ঐ মেয়ের সাথে হেসে হেসে কথা বলার জন্য।নেক্সট টাইম কোনো মেয়ের সাথে হেসে হেসে কথা বললে দাঁত ভেঙে রেখে দেবো।

উনি সরি বলেন।আমিও ভাব নিয়ে বলি,,

-হইছে হইছে সরি বলা লাগবে না।

হাতে লিপস্টিক দুটো দিই। উনি অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বলেন,,

-লিপস্টিক দিয়ে কি হবে?
-তুই সেজে আমায় পিক দিবি।বুঝছিস?
-এমন করো কেন?
-তো কেমন করবো?তোকে আমি কোন আক্কেলে লিপস্টিক দিতে যাবো।ছাগল এটা শিশিরের জন্য।
#একজোড়া_পায়রা
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
#পার্ট১৩

ভাইয়া যেহেতু এখন খরচ দেয় তাই টিউশন ছেড়ে দিয়েছি।শিশিরকেই শুধু পড়াই।ওকেও ছেড়ে দিতে চেয়েছিলাম।কিন্তু আন্টির অনুরোধে পারিনি।ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত পড়াতে অনুরোধ করলেন আন্টি।আমিও আর না করতে পারিনি।কিন্তু আজকে শরীর চাচ্ছে না টিউশনে যেতে।বড্ড মেজমেজ করছে শরীরটা তারমধ্যে আবার পিরিয়ডস।প্রচন্ড পেইনে একেবারে নাজেহাল অবস্থা।এর কারণে আজ ক্লাসও করিনি।
বিছানার এক কোণে গুটিশুটি হয়ে পরে আছি।টেবিলের এক কর্ণারে ফোনটা পড়ে আছে।এই টুকুই আমার কাছে হাজার মাইলের মনে হচ্ছে।কোনো রকমে উঠে ফোনটা নিয়ে আবার বিছানায় ধপাস করে শুয়ে পড়ি।আন্টিকে ফোন দিই।শিশির ফোন রিসিভ করে,,,

-হ্যালো ম্যাম আজকে আসবেন না?
-নাহ বাবু!আন্টিকে ফোনটা দাও তো!

শিশির গিয়ে আন্টিকে ফোনটা দেয়।

-আন্টি আসসালামু আলাইকুম।
-ওয়ালাইকুম আস সালাম।আসবে না আজকে?সময় তো হয়ে গেছে!
-নাহ আন্টি।পিরিয়ডস হয়েছে।প্রচন্ড পেইন হচ্ছে।
-অহ।যত্ন নিও নিজের।
-জ্বী আন্টি।আল্লাহ হাফেজ
-আল্লাহ হাফেজ।

আমি ফোন কেটে দিই।পেইনটা দেখা যাচ্ছে এবার আমার সহ্য ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে।আর পারছি না।চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা করছে।এরই মধ্যে এশা আসে।আমায় এমন আধমরা অবস্থায় দেখে মেয়ে আমার দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে মারে।

-কি হয়েছে?
-জানিস না তুই?আর সহ্য হচ্ছে না রে।প্রচন্ড পেইন দিচ্ছে।
-দাঁড়া গরম পানি করে আনি।
-কিসের জন্য?
-তুই ছ্যাকা নিবি না?ছ্যাকা নিলে তো পেইন কমে।
-তুই আয়রন গরম করে দে আমায়।গরম পানি আবার রিস্কিও।বাই এনি চান্স পুড়ে গেলে!

আমার কথায় মেয়ে আয়রন গরম করতে দিয়ে ফ্রেশ হতে যায়।আয়রন কিছুটা গরম হয়ে এলে ছ্যাক নিই।সতর্কতার জন্য গামছা ভাজ করে তল পেটের ওপর রেখে হিট নিই।এশা ফ্রেশ হয়ে এসে স্যুপ বানিয়ে দেয় আমায়।স্যুপ খেয়েই আবার শুয়ে পড়ি।


-এই মেঘ।ওঠ।শুভ্র ভাইয়া ফোন দিয়েছে।

চোখটা কখন লেগে গিয়েছিলো বুঝতে পারিনি।এশার ডাকে ঘুমঘুম চোখ নিয়ে বালিশের নিচ থেকে ফোন বের করি।মেয়ে আমায় ঝাড়ি দিয়ে বলে,,,

-ছাগল!আমার ফোনে কল দিয়েছে।তোমায় ফোনে পাইনি তাই টেনশন হচ্ছে দেখো গিয়ে।

ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে এশার ফোন নিই।ক্লান্তি আর ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে সালাম দিই।উনি সালামের জবাব দিয়ে বলেন,,,

-বিয়ের দিনও ঘুমাচ্ছো নাকি?
-বিয়ের দিন মানে?
-আজকে শিশিরকে পড়াতে যাও নি।তুমি তো রেগুলার পড়াও।বাদ দাও না।আজকে যাওনি বলে আম্মুকে তোমার কথা জিজ্ঞাসা করেছিলাম।
-হু।উনি কি বললো?
-বললো তোমার বিয়ে।তাই তো আমি এতবার কল করলাম।রিসিভ করছো না দেখে এশাকে কল দিলাম।
-আমি তো ছোট মানুষ কে বিয়ে করবে আমায়?
-অনেকেই তোমায় বিয়ে করার জন্য একপায়ে রাজি।শান্তর কথা বললে তো কথাই নেই!
-জ্বলে আপনার?
-জ্বলবে না তো হবে?শুভ্র শুধু মেঘের আর মেঘ শুধু শুভ্রের।
-ওমাগো টুরু লাপ।
-তুমি আমার কোনো কথাই সিরিয়াসলি নেও না!বাই দ্যা ওয়ে আর ইউ ওকে?শরীর ঠিক আছে তোমার?
-ঐ পেটব্যথা আর কি
-পেটব্যথা?বাইরের জিনিস খেয়েই অসুখ বাঁ্ধিয়েছো না?কতবার না করছি।ঐগ্লা হার্মফুল।
-আরেহ না।
-তো কি?

কিভাবে বলি ওনাকে পিরিয়ডসের কথা?কেমন একটা সংকোচ কাজ করছে।যদিও এটা এখন স্বাভাবিক আর সাধারণ বিষয়।তাও কেমন কেমন লাগছে!

-মেঘ!কি হয়েছে তোমার?বললে না
-আপনি বুঝবেন না।
-বুঝালেই বুঝবো।
-বুঝবেন না।
-হুদাই ঢং করতেছিস।ভাইয়া মেঘের পিরিয়ডস হইছে।আর এই সময় মেয়ে আধমরা হয়ে যায়।

চিলের মতো ছো মেরে ফোন নিয়ে বলে দেয় এশা।তারপর আবার আমার হাতে ফোন দিয়ে বলে,,

-কথা বল।
-কি কথা বলবো?এভাবে আমায় লজ্জায় না ফেললেও পারতি।

ফিসফিস করে ঝাড়ি দিয়ে বলি এশাকে।মেয়ে আমার কথা বাতাসে উড়িয়ে দিয়ে বিছানায় ধপাস করে শুয়ে পড়লো।আমি সংকুচিত আর লাজুক কন্ঠে শুভ্রকে বলি,,

-আর কিছু বলবেন?
-হুম।টেইক কেয়ার মাই কুইন।

এখন আর ঘুম আসছে না।দেয়ালের সাথে বালিশ দিয়ে হেলান দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুর ঘুর করতে লাগি।বাচ্চাদের মতো ফাইভ মিনিট হ্যাক্স দেখে অলস সময় কাটাতে লাগি।হঠাৎ কি মনে করে যেন শুভ্রের আইডিতে ঢুকি।সব গুলো পোস্ট মন দিয়ে দেখতে লাগি।কোন কোন মেয়ে রিয়াক্ট দিয়েছে কোনো মেয়ে কমেন্ট করেছে।একে একে সব গুলো মেয়ের আইডিতেই ঢুকে ঘুরে আসি।তিনচারটা মেয়ের মিউচুয়াল ফ্রেন্ডলিস্টে শুভ্রকে পাই।মেয়েগুলোর আইডি গোয়েন্দাদের মতো খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে লাগি।দেখি মেয়েগুলোর সব ছবিতে শুভ্র লাভ রিয়েক্ট দিয়েছে।আমার কোনো পোস্টে ব্যাটায় লাইক পর্যন্ত দেয় না।আর অন্যমেয়েদের পোস্টে লাভ রিয়েক্ট দেয়।বিষয়টা আমায় খুব হার্ট করে।ঝাপসা হয়ে আসছে চোখের চারপাশটা।গাল গড়িয়ে চোখের পানি ফোনের স্ক্রিনে পড়ে।আমি কোনো রকমে ওয়াইফাই অফ করে কাঁথা মুড়ি দিয়ে বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদতে লাগি।মিনিট পনেরো পর এশা এসে ডাকতে লাগে।

-কিরে তুই এই কুত্তা মরা গরমে কাঁথার নিচে কি করিস।দম বন্ধ হয়ে মরবি তো!

আমি কোনো প্রতিত্তোর দিই না।এশা আমায় আবার ধাক্কা দিয়ে বলে,,

-এই ফকিন্নি ওঠ।খাবি না?

আমি এইবারও চুপচাপ। এশা এইবার আমায় টেনে কাঁথার নিচ থেকে বের করে।বের করে আমার চোখ মুখ ফোলা দেখে বলে,,,

-কিরে?কাঁদছিস নাকি?

আমি কোনো কথা বলি না।জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিই।

-ব্যথা কমে নাই তোর?শুভ্র ভাই চকলেট খাবি?
-তুই খা ঐ বদের দেওয়া চকলেট। আর জীবনে যদি ঐ লোকটার ধারে কাছে গিয়েছি আমি!আর তুইও ওর নাম নিবি না।

হুংকার দিয়ে বলি আমি।এশার কপালে চিন্তার ভাঁজ।

-হঠাৎ কি হলো তোর উনার ওপর এত ক্ষেপলি?
-তুই বুঝবি না।

বলেই আবার জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিই।

-এই মেয়ে বল!

আমি ফোনে মেয়েগুলোর আইডি বের করে প্রত্যেকটা পোস্ট ওকে দেখাই যেগুলোতে শুভ্র লাভ রিয়েক্ট দিয়েছে!আমি কাঁদতে কাঁদতে বলি,,,

-দেখ।আমার পোস্টে রিয়াক্ট দেওয়ার খবর নাই।অন্য মেয়েদের পোস্টে লাভ রিয়েক্ট দেয়।

আমার কথা শুনে এশা হেসে দেয়।আমি অবাক চোখে ওর দিকে তাকিয়ে বলি,,

-হাসছিস যে?
-মনে আছে?আমিও সেইম কারণ নিয়ে নাবিলের সাথে ঝগড়া করেছিলাম।তুইও তখন হেসেছিলি।শুধু তাই নয়!তুই এই বিষয়টা নিয়ে আমায় অনেকদিন ক্ষেপিয়েও ছিলি।এখন তোর জ্বলে কেন?ওয়হয় জেলাসি জেলাসিই।আসলে প্রেমে পড়লে ওই কম বেশি জেলাসি সবাইই করে।
-আমায় ইগ্নোর করবে কেন?সোশ্যালমিডিয়ায় আমায় পাত্তাই দেয় না।আর যদি ঐ লোকটার ধারে কাছে গেছি!
-তোর বপ্পেন তুই যা মন চায় কর।আমি শুধু বিনোদন নেবো।ডাইনিংয়ে চল।খেয়ে নে।


-মেঘ!

শুভ্র ডাকছেন।কিন্তু আমি আমার মতো করে হেঁটেই যাচ্ছি।কে যায় ঐ লোকটার কাছে?হুদাই প্রেমে পড়েছিলাম।এইজন্যই হয়তো মানুষ বলে,,
“সখী তোমরা প্রেম করিওনা”
“পিরিত ভালা না!”

বেশ অনেকক্ষণ ধরেই লোকটা আমার পিছু ধরেছে।কিন্তু আমি পাত্তা দিচ্ছি না।পাত্তা দেবোও না।যাক না ঐ মেয়েগুলোর কাছে যাদের পোস্টে লাভ রিয়েক্ট দেয়।আমার কাছে কি?

-কি হয়েছে তোমার?এতক্ষণ ধরে ডাকছি কোনো সাড়া শব্দ করছো না।

আমি এইবারও চুপচাপ। উনি এসে এবার আমার হাত ধরেন।ঝটকা মেরে নিনের দিকে ঘুরিয়ে বলেন,,,

-সমস্যা কি?এতক্ষণ ধরে ডাকছি কোনো রেসপন্স করছো না।

আমি মুখ ফিরিয়ে নিই।কোনো কথা বলি না।

-মেঘ কি হয়েছে তোমার?

আমি এইবারও চুপচাপ। নিয়ত করেছি এই লোকটার সাথে আর কথা বলবো না।উনি জোর করে আমার মুখ তার দিকে ঘুরিয়ে বলেন,,,

-এই এত ঢং করছো কেন?

এইবার আর চুপ করে থাকতে পারি না।একে তো আমায় এভাবে শক্ত করে ধরে রেখেছে তারওপর আবার জোর করে আমায় তার চেহারা খানা দেখাচ্ছে।যেখানে আমি প্রতিজ্ঞা করেছি উনার চেহারা আমি দেখবো না।শান্ত কন্ঠে বলি,,

-ছাড়ুন আমায়।
-ছাড়লাম না।কি করবে?
-আমি আবার বলছি ছাড়ুন।
-এমন করছো কেন?
-তো কেমন করবো?আপনি ঢং করবেন আর আমি চুপ করে থাকবো?
-আমি ঢং করি মানে?
-জানেন না কিছু?
-না জানি না
– হবেও না জানতে।

কথাটা বলেই আমি তার হাতে কামড় দিয়ে দিই এক দৌড়।উনি পেছন থেকে আমায় ডাকতে লাগেন।কিন্তু আমি তা কর্ণপাত করি না।

চলবে,,,ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here