#একদিন_কাঁদবে_তুমিও
#পর্ব_১৭
#Saji_Afroz
নাবীহা কে ডাক্তার দেখিয়ে তাকে নিয়ে তার বাসায় আসে মানতাশা। সাথে এজাজও ছিল। তাকে চলে যেতে বলে নাবীহা কে নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে মানতাশা। হঠাৎ নাবীহার শরীরে জ্বর এসেছে। মাথাটা ভার হয়ে আছে। ভাগ্যিস এজাজ ও মানতাশা সঠিক সময়ে গিয়েছিল। নাহলে একা বাড়ি ফেরার মতো শক্তি তার শরীরে ছিল না। পথিমধ্যে মানতাশার জোরাজোরিতে ডাক্তারও দেখিয়ে এসেছে। নাবীহার কাছে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় ডাক্তার খরচ ও মেডিসিনের বিল দিয়েছে মানতাশা। যদিও এজাজ জিজ্ঞাসা করেছিল। কিন্তু নাবীহা চায়নি ওসব এজাজ দিক। মানতাশা দেওয়াতে সে ধার হিসেবে নিতে রাজি হয়।
নায়লা খাতুন মেয়ের জন্য অস্থির হয়ে উঠলেন। তাকে শান্তনা দিয়ে নাবীহা বলল, আমি ঠিক আছি। কিছু টাকার প্রয়োজন। মানতাশা কে দিতে হবে।
একথা শুনে মানতাশা অভিমানী স্বরে বলল, ওসব আমি নেব না। বান্ধবীর জন্য এতটুক আমি করতে পারি না?
-করেছিস তো।
-ফেরত দিতে চাইছিস কেন এখন? রাগ করব বললাম।
নায়লা খাতুন কেও টাকার প্রয়োজন নেই জানালো সে। তিনি বললেন, ঠিক আছে। কিন্তু নাস্তার তো প্রয়োজন আছে। বসো আমি কিছু নিয়ে আসি।
এই বলে তিনি বেরুলেন। সাজিরের ফোন আসে মানতাশার কাছে। ফেরার সময় তাকে সব ফোনে জানিয়েছিল মানতাশা।
সে রিসিভ করতেই সাজির বলল, নাবীহার কী অবস্থা?
-বাসায় নিয়ে আসলাম। জ্বর শরীরে। ডাক্তার রেস্ট নিতে বলেছে।
-ভাগ্যিস তোমরা গিয়েছ। আমাকেও আর বেরুতে হলো না। একেবারে অফিস শেষে বেরুবো। নাবীহা কে জানিও, ওকে দেখে বাসায় যাব আমি।
-আচ্ছা।
ফোন রেখে মানতাশা বলল, আমাদের ভাগ্যটাই খারাপ।
-কেন?
-সাজির ভাই এর যদি নিজস্ব অফিস থাকতো তবে তুই কল করার সাথে সাথেই চলে আসতে পারতো। এখন অন্যের কোম্পানি তে জব করে বলে হুটহাট বেরুনোর সময় নেই।
-স্বাভাবিক। কর্মচারীরা নিয়মের বাইরে কিছু করতে পারে না।
-নিজের কপাল তো নিজেই পুড়ালি। ইনতিসার কে বিয়ে করলে এই দশা হত তোর?
বিরক্তির সুরে নাবীহা বলল, এখন অন্তত এসব বলিস না।
-তুই ভুল করেছিস। কিন্তু আমি করব না।
-মানে?
-আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি এজাজের সাথে সম্পর্ক শেষ করার।
নাবীহা অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে মানতাশার দিকে। মানতাশা বলল, তোদের দু’জনের লাইফ দেখে আমার কাছে আজরার লাইফটা কেই বেস্ট মনে হলো। এইরকম একটা জীবন আমিও চাই।
-এতদিনের সম্পর্ক এক নিমিষেই শেষ করবি?
-যেই সম্পর্কে খুশি হতে পারব না সেই সম্পর্কে নিজেকে জড়িয়ে কী লাভ?
নাবীহার শরীর খারাপ লাগার কারণে বেশি কিছু বলতে ইচ্ছে হলো না। শুধু বলল, টাকা পয়সাতেই সব সুখ হয় না রে।
-হয় হয়। আজরা কেই দেখ!
.
.
ওয়াশরুমের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আজরা। আজ হুট করে এমন কিছু হয়ে যাবে ভাবেনি সে। নিজেকে এখন পরিপূর্ণ মনে হচ্ছে তার। একটা নারীর জীবনে এটাই তো চাওয়া, স্বামীর ভালোবাসাটা পাওয়া। আর সেটা পেয়ে ধন্য আজরা।
মুচকি হেসে ফ্রেশ হয়ে নেয় আজরা। বাইরে বেরিয়ে দেখলো ইনতিসারও ফ্রেশ হয়ে এসেছে। চোখাচোখি হতেই লজ্জায় লাল হয়ে যায় আজরার মুখটা। ইনতিসার মৃদু হেসে বলল, রোমান্স করে মন ভরেছে কিন্তু পেট ভরানোরও প্রয়োজন আছে নাকি? চলো খেয়ে আসি কিছু।
আজরাও হেসে বলল, একটু বসুন। আমি তৈরী হয়ে নিচ্ছি।
এই বলে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে নিজেকে তৈরী করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে আজরা। তার দিকে তাকিয়ে থাকে ইনতিসার।
আজরার সাথে জীবনের নতুন ধাপে পা দিতে পেরে সেও আনন্দিত।
.
.
নাবীহার বাসা থেকে বেরুতেই এজাজের দেখা পায় মানতাশা। এজাজ নাবীহার বাসা থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তাকে দেখে ছুটে এসে মানতাশা বলল, তুমি যাওনি এখনো?
-তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।
-কিন্তু আমি তো তোমায় চলে যেতে বলেছিলাম। এতক্ষণ দাঁড়িয়ে রয়েছ কেন?
-তুমি কিছু বলতে চেয়েছিলে তা শোনার জন্য।
মানতাশা ভেবেছিল আজ আর এজাজ কে কিছু জানানো হবে না। কিন্তু প্রকৃতি ও হয়তো চায় না তারা একসাথে থাকুক। তাই আজই এজাজ সব জানতে চলেছে।
মানতাশা বলল, পাশের পার্কটি তে গিয়ে বসি?
-চলো।
দু’জনে একটি গাছের নিচের বেঞ্চের উপরে এসে বসে। মানতাশা কে চুপচাপ দেখে এজাজ বলল, কী হলো? বলো কী বলতে চেয়েছিলে?
মানতাশা আমতাআমতা করে বলল, আসলে তুমি কীভাবে নেবে বিষয়টা বুঝতে পারছি না।
-বিষয় যেমন হবে তেমনই নেব। বলো তুমি?
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মানতাশা বলল, আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাচ্ছি না।
মানতাশার মুখে এমনটা একটা কথা শোনার জন্য কিছুটা হলেও প্রস্তুত ছিল এজাজ। কারণ গত কয়েকদিনে তার ব্যবহারে এজাজ একটু হলেও ধারণা করতে পেরেছিল সে এই সম্পর্ক তে খুশি না। তাই দুই পরিবারের ঘনিষ্ঠতা তে সে খুশি হতে পারছিল না।
এজাজ উত্তেজিত হলো না। শুধু বলল, এর কারণ?
-তোমার প্রতি আগের মতো টান আমি অনুভব করি না।
-টান অনুভব না করার মতো কী করেছি আমি? বরং আমার সবটা দিয়ে তোমায় ভালোবেসেছি। নাকি অন্য কোনো কারণ রয়েছে?
-আমি আমাদের সম্পর্ক টাতে খুশি হতে পারছি না। অখুশি মন নিয়ে নতুন জীবন শুরু করব?
-তুমি কী সময় নিতে চাচ্ছ?
-আমি সবটা শেষ করতে চাচ্ছি।
এই বলে অন্যদিকে ঘুরে তাকালো মানতাশা।
এতদিনের সম্পর্ক হুট করে মানতাশা শেষ করতে চাইলেও এজাজ সে দূরে সরে যাবে এটা যেন ভাবতেই পারছে না।
শেষ চেষ্টাটুকু তো সে করতেই পারে! এই ভেবে এজাজ বলল, আমি এখনো জব পাইনি। এটা কী সমস্যা? পেয়ে যাব। এর আগে বিয়ে হবে না। এভাবে হুটহাট কোনো ডিসিশন নিও না প্লিজ। আরও কিছুদিন সময় নাও।
-আমি অনেক ভেবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আর বললামই তো, আমি খুশি হতে পারছি না এই সম্পর্কে।
-কিন্তু কেন? আমি তোমাকে ভালোবেসেছি, সামর্থ্য অনুযায়ী সবই করেছি তোমার জন্যে। তোমার খুশি কীসে আমায় বলো? আমি সব করব তোমার জন্য।
এইবার না বলতে চেয়েও মানতাশা বলতে বাধ্য হলো, ইনতিসারের মতো ধনী হয়ে দেখাতে পারবে?
এজাজের কাছে সবটা স্পষ্ট হয়ে গেল। মনে করে দেখলো, আজরার বিয়ের কথাবার্তা হওয়ার পর থেকেই মানতাশার মাঝে এই পরিবর্তন দেখা গেছে।
সে বলল, এটাই তাহলে তোমার অখুশির কারণ?
-আজরার মতো মেয়ে যদি ইনতিসারের মতো কাউকে পায়, তোমার মনে হয় না আমার জন্যেও ওমন কেউ যোগ্য?
মুখ থেকে কোনো কথা বের হলো না এজাজের। কিন্তু বুকের ভেতর থেকে আসা ভারী নিঃশ্বাসটা কোনো মতেই আটকাতে পারলো না সে।
তাকে নিশ্চুপ দেখে দাঁড়িয়ে পড়ে মানতাশা। ব্যাগ থেকে এজাজের মা এর দেওয়া চেইনটা বের করে তার পাশে রাখলো। এরপর বলল, আমাকে ভুল বুঝো না। তোমাকে অন্ধকারে রাখার চেয়েও সত্যি বলে মুক্তি করে দিলাম। ভালো কাউকে জীবনে পাবে তুমি। আমিও যে আমার জীবনে বেস্ট কাউকেই চাই!
এজাজ মাথা নিচু করে বসে রইলো। মানতাশা তার কাছ থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে হাঁটতে শুরু করে।
তার পথের দিকে তাকিয়ে এজাজ বলল, আমার যে তোমাকেই দরকার। একথাটা বলতে পারলাম না তোমায়। কারণ তোমার কাছে আমার সেই যোগ্যতাও যে নেই। তোমার কাছে আমি অতি নগন্য আর আমার এই চাওয়াটাও মূল্যহীন।
রিকশায় বসে প্রশান্তির এক নিঃশ্বাস ফেলে মানতাশা। বুকের ভেতর থেকে বড়ো একটা পাথর সরে গেছে তার।
এখন সে নিজের ইনতিসারের মতো কাউকে নিজের জীবনে চায়। যে কিনা তার সকল চাহিদা পূরণ করবে।
বাসায় এসে হাসনার দেখা পায় মানতাশা। তাকে নিয়ে রুমে আসে সে। হাসনা বলল, সবাই ওয়েট করছে রেজাল্ট জানার জন্যে।
-কীসের?
-বারেহ! ইনতিসার কে পটানোর কথা ছিল না তোর?
-সে তো আজরা কে নিয়ে হানিমুনে গেছে।
-আর তুই যেতে দিলি?
মানতাশা অবাক হয়ে বলল, আমি কে নিষেধ করার?
-কিছু করে আটকাবি না ওদের?
-তোর কী আমাকে সিরিয়ালের ভিলেন মনে হয়? দেখ ওসব মজার ছলে বাজি ধরেছি। এতটাও সিরিয়াস হওয়ার কিছু নেই।
-নাকি হার মেনে নিচ্ছিস? আমি হলে জাস্ট দুইদিন সময় লাগতো।
খানিকটা রেগেই মানতাশা বলল, হানিমুনে না গেলে আমার জন্যও এটা ব্যাপার ছিল না।
-এখন ব্যাপার হয়ে গেছে। হানিমুন থেকে এসে তোকে আর পাত্তাও দেবে না সে।
-একশোবার দেবে।
-তার মানে চ্যালেঞ্জ কমপ্লিট করবি তুই?
-ছেড়ে দিয়েছি তো বলিনি!
কাকে কী বলে উত্তেজিত করানো যায় ভালোই জানে হাসনা৷ সে শুধু চায় এই তিন বান্ধবীর বন্ধুত্ব নষ্ট হোক। আর এটা মানতাশা কে দিয়েই সম্ভব। সে জানে, মানতাশা বিষয়টা দুষ্টুমির ছলে এসব করলেও আজরা জানলে তা কখনোই মেনে নেবে না। আর এতেই দুরত্ব বাড়বে তাদের। তার চাওয়া পূরণ হওয়ার দিনের অপেক্ষায় রয়েছে সে।
.
আমার ৫ম বই #বান্ধবী পেয়ে যাবেন ২১০টাকায়। অর্ডার লিংক রয়েছে কমেন্ট বক্স এ।
.
চলবে#একদিন_কাঁদবে_তুমিও
#পর্ব_১৮
#Saji_Afroz
তিনদিন পর কক্সবাজার থেকে ফিরে আসলো ইনতিসার ও আজরা। ইলারা জামান ও ইলহাম শেখ তাদের সাদরে ভেতরে প্রবেশ করালেন। ড্রয়িংরুমে এসে বসলো সকলে। আজরা ও ইনতিসারের দিকে ভালোভাবে লক্ষ্য করলেন ইলারা জামান। বেশ বুঝতে পারলেন, তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে। এটাই তো তিনি চেয়েছিলেন! ইনতিসারের মনে আজরাকে নিয়ে কোনো দ্বিধা থাকুক এমনটা তিনি চাননি।
ইনতিসার ফ্রেশ হওয়ার কথা বলে রুমের দিকে এগিয়ে যায়। ইলারা জামানের ইশারায় ইলহাম শেখও নিজের রুমের দিকে পা বাড়ান।
তিনি আজরার কাছে এসে বললেন, কেমন করলে ঘুরাঘুরি?
-অনেক বেশি এনজয় করেছি আমি। কক্সবাজার আসলেই অনেক সুন্দর।
-শুধু সুন্দর জায়গা দেখেছ নাকি সুন্দর মুহুর্তও তৈরী করেছ?
শাশুড়ী মা এর কাছ থেকে এমন একটা কথা শুনে লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলল আজরা। তিনি একগাল হেসে আজরার হাত ধরে বললেন, কিছু চাপিয়ে দিতে চাই না। তোমাদের ইচ্ছেটা জানতে চাই। ফ্যামিলি প্লানিং নিয়ে কোনো কথা হলো দু’জনের মাঝে?
আজরা না সূচকভাবে মাথা নাড়লে তিনি বললেন, সবে বিয়ে হলো! ব্যাপার না। তবে এ নিয়ে কথা বলতে ক্ষতি কী? এতে করে দু’জনের মাঝে আগ্রহও টা বাড়বে সাথে বাড়বে ভালোবাসা।
আজরা মাথা নিচু করেই বসে রয়েছে। তার অবস্থা বুঝতে পেরে তিনি বললেন, যাও। ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি খাবার রুমে পাঠিয়ে দিচ্ছি।
আজরা রুমে প্রবেশ করতেই ইনতিসার কে ওয়াশরুম থেকে বেরুতে দেখলো। ইনতিসার বলল, তুমিও গোসল সেরে নাও। ভালো লাগবে।
আজরার মুখে দুষ্টু হাসি দেখে সে জিজ্ঞাসা করলো, হাসছ যে?
-হানিমুনে যেতে না যেতেই মা অনেক বেশি এক্সাইটেড।
-কীসের জন্য?
-নাতী নাতনীর মুখ দেখার জন্যে।
ইনতিসার হেসে বলল, কিছু বলেছে?
-হু। আমরা এই বিষয়ে কী ভাবছি জিজ্ঞাসা করেছে।
এই বলে আজরা ওয়ারড্রব খুলে তার কাপড় নিতে থাকে। আচমকা ইনতিসার তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল, তুমি কী বললে?
-লজ্জায় একটা কথাও বলতে পারলাম না।
তাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে ইনতিসার বলল, মা এর আশা পূরণ করে দিই। কী বলো?
হাত দিয়ে আলতো করে ইনতিসারের বুকে মেরে আজরা বলল, আপনিও শুরু করলেন?
-এখনো কই করেছি? করব নাকি?
এই বলে আজরার মুখের দিকে নিজের মুখ এগিয়ে নেয় ইনতিসার। তাকে এক ঝাটকায় সরিয়ে ওয়াশরুমের দিকে ছুটে যায় আজরা। ইনতিসার হেসে বলল, মা এর সাথে সাথে কিন্তু আমিও এক্সাইটেড!
.
.
.
-এজাজের বাড়ি যাওয়া প্রয়োজন একবার। মেয়েকে যে বাড়িতে পাঠাব তা দেখে আসা ঠিক হবে না? এমনিতে আমি খোঁজ নিয়েছি, সবই ঠিক আছে। তবুও একবার যাওয়া প্রয়োজন। এতে করে সম্পর্কটাও গাঢ় হবে।
দিদার আলমের কথা শুনে মরিয়ম বেগম বললেন, নিজ থেকে যাওয়ার কথা বলব?
-হু। তারা তো এজাজ জব পায়নি বলে সংকোচে থাকে। আমি চাই এটা দূর হোক। জব পায়নি তাতে কী? পেয়ে যাবে!
-আচ্ছা আমি আপাকে ফোন দিচ্ছি।
মরিয়ম বেগমের কল পেয়ে রিসিভ করলেন আসমা আক্তার। সালাম জানিয়ে তিনি বললেন, কেমন আছেন আপা?
তিনি সালামের উত্তর জানিয়ে বললেন, আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি কেমন আছেন?
-ভালো। আমিও চাচ্ছিলাম একটা খবর নিতে আপনার।
-তাই!
-জি আপা। ভাইয়া, মানতাশা ভালো আছে?
-জি। আসলে আমরা আপনাদের বাসা থেকে ঘুরে আসতে চাচ্ছিলাম।
একথা শুনে মুখে হাসি ফোটে আসমা আক্তারের। তিনি বললেন, সত্যি বলছেন?
-জি। আসতে পারি আমরা?
-কী যে বলেন না আপা! আমার মনের কথা বলেছেন একদম। আপনারা যদি কিছু মনে করেন এই ভেবে বলিনি! একবার কেন! এখন থেকে আসা যাওয়া তো লেগে থাকাই উচিত।
-আপনিও কী যে ভাবেন না! কী মনে করব? বরং যেতে পারলে আনন্দিত হব।
-তবে দ্রুত চলে আসুন।
-কাল আসি?
-নিশ্চয়। সাথে মানতাশা কেও নিয়ে আসবেন।
-আচ্ছা।
কিছুক্ষণ কথা বলা শেষে ফোন রাখলেন তারা। এজাজ বাসায়ই আছে। আসমা আক্তার এজাজের কাছে এসে খুশিতে গদগদ হয়ে বললেন, বাজারে যেতে হবে। ভালো বাজার করে নিয়ে আয়।
-কেন?
-মানতাশার মা ফোন দিয়েছিল। তারা আসবেন জানালো।
-তারা আসবেন?
-বারেহ! মেয়ে কোন ঘরে বিয়ে দিতে চায়ছেন দেখবেন না?
এজাজ বুঝতে পারলো, মানতাশা হয়তো তাদের কিছুই জানায়নি। কিন্তু এজাজ তার মাকেও আর অন্ধকারে রাখতে পারে না। সে ড্রয়ার টেনে মানতাশার ফেরত দেওয়া চেইনটা হাতে নিলো। এরপর তা মা এর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল- এসবের আর প্রয়োজন নেই। জিজ্ঞেস করো মানতাশা কিছু জানায়নি তাদের?
তিনি চেইনটা হাতে নিয়ে বললেন, এটা তো আমি মানতাশা কে দিয়েছিলাম।
-ফেরত দিয়েছে।
-কিন্তু কেন?
-সে আমায় বিয়ে করতে চায় না।
তিনি অবাক হয়ে বললেন, মানে কী?
একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে এজাজ বলল, কারণ তার মনে হচ্ছে আমার সাথে খুশি হতে পারবে না।
কী বলবেন খুঁজে পাচ্ছেন না আসমা আক্তার। শুধু অবাক হয়ে ছেলের দিকে তাকিয়ে রইলেন তিনি।
এজাজ বলল, আর কিছু আমায় জিজ্ঞাসা করো না মা। আর আমি ঠিক আছি। যেভাবে যা চলছে চলতে দাও।
এই বলে রুম থেকে বেরিয়ে যায় এজাজ। আসমা আক্তার ছেলের কষ্ট হচ্ছে তা বেশ বুঝতে পারলেন। সাথে সাথেই তিনি মরিয়ম বেগম কে ফোন করে বললেন, আপনাদের মেয়ে চেইন ফেরত দিচ্ছে আর আপনারা বাসায় আসতে চাচ্ছেন। কিছুই তো বুঝলাম না!
মরিয়ম বেগম অবাক হয়ে বললেন, কীসের চেইন?
– সম্পর্ক থাকাকালীন মানতাশা কে ভালোবেসে একটা চেইন পরিয়ে দিয়েছিলাম।
মরিয়ম বেগম যে তার গলায় একটি চেইন দেখেছিলেন স্পষ্ট মনে আছে। এটা কে দিয়েছে জিজ্ঞাসা করাতে মানতাশা মিথ্যে বলেছিল সেদিন।
তিনি বললেন, ফেরত দিয়েছে বলতে?
-সে নাকি এই বিয়েটা হোক তা চায়না।
-আমাদের কিছু তো বলেনি!
-জিজ্ঞাসা করুন আপনার মেয়েকে, আমার ছেলের সাথে এমনটা কেন করছে সে? একজনের মন ভেঙে কখনো সুখে থাকতে পারবে না মানতাশা। এটা এক মা এর বলা কথা। মনে রাখতে বলবেন তাকে।
এই বলে ফোনের লাইন কেটে কান্নায় ভেঙে পড়লেন আসমা আক্তার। এদিকে মরিয়ম বেগম রেগেমেগে সবটা জানালেন দিদার আলম কে। মানতাশা বাসায় নেই। তার বাসায় আসার অপেক্ষা করছেন তারা। তারাও জানতে চান, এই মেয়ের সমস্যা কোথায়!
.
.
.
নাবীহার সামনে বসে আছে সাজির। এক বাটি রসমালাই তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, খেয়ে নাও?
-রসমালাই! তুমি এনেছ?
-হু। সেদিন তুমি খেতে চেয়েছিলে। কিন্তু বেতন না পাওয়ার কারণে আনতে পারিনি। আজ বেতন পেয়েই তোমার জন্য নিয়ে এলাম।
নাবীহা হেসে খাওয়া শুরু করে। পাশেই মানতাশা রয়েছে। সবাই গল্প করছিল। হঠাৎ সাজিরের ফোন এলে সে বারান্দার দিকে যায়। এরমধ্যে আজরার ভিডিও কল আসলো মানতাশার ফোনে। সে রিসিভ করলে আজরা বলল, নাবীহা কোথায়? ওকে অনলাইনে পাচ্ছিলাম না। তাই তোকে ফোন দিলাম।
-কীভাবে পাবি? ওর না ফোন নিয়ে গেল?
-ওহহো! আমার মনেই ছিল না। দে তো ওকে।
কথার ফাঁকে একজন বুয়া এসে আজরার জন্য তার প্রিয় একটি চকোলেট কেক রেখে গেল। তা দেখে মানতাশা বলল, কেক? কার জন্মদিন আজ?
-কারও না। ইনতিসার অফিস থেকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন কিছু খেতে ইচ্ছে করছে কিনা। আসার সময় কেক নিয়ে আসতে বলি। কিন্তু উনি পাউন্ড কেক পাঠিয়ে দিয়েছেন।
-বাহবা!
নাবীহা কে দেখে আজরা বলল, কেমন আছিস রে?
-এখন সুস্থ। তুই কেমন আছিস?
-আমিও ভালো আছি।
অল্প কিছুক্ষণ কথা বলেই শাশুড়ী আসাতে ফোন রাখে আজরা। সাজিরও বারান্দা থেকে আসে। সে পকেট থেকে একটি পুরাতন এন্ড্রয়েড ফোন বের করে নাবীহার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, এটা তুমি ইউজ করো। সেকেন্ড হ্যান্ড নিয়েছি। পরে একটা ভালো থেকে নিয়ে দেব।
-এসব করতে গেলে কেন আবার?
-আরে রাখো তো! আর আমি চললাম এখন। কাজ আছে। তোমরা গল্প করো।
বিদায় জানিয়ে সাজির চলে গেল। মানতাশা ফোনটা হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করে বলল, বেশি হলেও আড়াই থেকে তিন হাজার দিয়ে এটা নিয়েছে হবে।
-আমার ফোনের প্রয়োজন ছিল। আজকাল এন্ড্রয়েড ছাড়া চলা যায় না।
-আমি কী বলতে চাইছি তুই বিষয়টা বুঝতে পারিসনি।
-কী?
-তোর রসমালাই খেতে ইচ্ছে করেছিল আরও দু’দিন আগে। খেতে পারলি আজ। কিন্তু আজরা কে দেখ! বলার সাথে সাথেই কেক হাজির। তাও কত বড়ো কেক! ভাগ্য হতে হবে ওর মতন। সেকেন্ড হ্যান্ড ফোন ইউজ করার মতন নয়। তাই তো আমি সব সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছি এজাজের সাথে। তুইও বিষয়টা ভেবে দেখতে পারিস।
.
.
.
শাশুড়ী যেতেই ইনতিসার কে ফোন দিলো আজরা। কেকের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলল, আসার সময় নিয়ে আসলেও হত!
-আমার বউ এতক্ষণ অপেক্ষা করবে! এটা হয় না।
মুচকি হাসে আজরা। সে কী করছে জানতে চাইলে আজরা বলল, নাবীহার সাথে কথা বলছিলাম। আমি ভাবছিলাম কী ওকে একবার দেখতে যাব। আজকে ওকে ভিডিও কলে দেখে বোঝাই যাচ্ছে, অনেকটা শুকিয়ে গেছে মেয়েটা।
-হ্যাঁ যাও না।
একটু থেমে আজরা বলল, আমি ওকে একটা উপহার দিতে চাচ্ছিলাম। যদি নিয়ে আসতেন?
-কী?
-একটা ফোন। ওর ফোন ছিনতাই হয়েছে।
-বেশ তো। কোন মডেল দিতে চাও আমাকে জানাও। নিয়ে আসব।
-আপনার পছন্দ মতন নিয়ে আসবেন।
-আচ্ছা।
এই বলে ফোন রাখে আজরা। কালই নাবীহা কে দেখতে যাবে ঠিক করে সে।
.
চলবে