#এক_খণ্ড_কালো_মেঘ
#পর্ব_৩৯
#নিশাত_জাহান_নিশি
“ব্যথাগুলো সব দূরে সরে যাচ্ছে। এভাবেই কিছুক্ষণ জড়িয়ে থাকো আমাকে। ডক্টর ডাকার কোনো তাড়া নেই। এত সহজে আমার মৃ*ত্যু নেই।”
ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল অয়ন্তী। রাফায়াত কেমন তাকে সুশৃঙ্খলভাবে মিথ্যা বলে চলছে। শরীরের অকথিত যন্ত্রণা সে অনায়াসেই গোপন করছে। শারীরিক শান্তির বদলে মানসিক শান্তিকে এই মুহূর্তে বেশী প্রাধান্য দিচ্ছে। যা অয়ন্তীর সম্পূর্ণ ইচ্ছাশক্তির বাইরে। রাফায়াত কষ্ট পাওয়া মানেই তো হলো অয়ন্তীর কষ্ট পাওয়া। যোজন বিয়োজনে এভাবে কষ্ট না পেয়ে বরং কষ্টটা ভাগাভাগি করে নেওয়াই শ্রেয়। অনেকটা জোর-জবরদস্তি করেই অয়ন্তী রাফায়াতের বুকের পাঁজর থেকে ওঠে এলো। চোখে এক সাগর জল নিয়ে সে রাফায়াতের মুমূর্ষু মুখমণ্ডলে তাকালো। অশ্রসজল গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,
“কীভাবে এমন হলো আপনার বলুন না? কে মে’রে’ছে আপনাকে?”
চোখ-মুখ কেমন যেন উল্টে এলো রাফায়াতের! শরীরের ব্যথা এবার তার গভীর থেকে গভীরতর হতে লাগল। ফ্যাকাসে হয়ে উঠল মুখমণ্ডল। ক্রমশ রুদ্ধশ্বাস ফেলতে লাগল সে। দিন দুনিয়া অসহ্য ঠেঁকল। মনে হলো যেন তার জানটা ভেতর থেকে এক্ষণি বের হয়ে আসবে! অয়ন্তীকে বুঝি এবার দেখা থামিয়ে দিবে। ম’র’ণ প্রাণ অবস্থা তার। ভয়ে তাৎক্ষণিক আঁতকে উঠল অয়ন্তী। জানে পানি শুকিয়ে এলো তার। চিৎকার চ্যাঁচামেচি করে সে তার মা-বাবাকে ডেকে আনল। মৃগী রোগীর মত ছটফট করতে লাগল সে। দৌঁড়ে এসে অয়ন্তীর মা-বাবা রাফায়াতকে এই অবস্থায় দেখে প্রচুর ঘাবড়ে উঠলেন। আশেপাশের মানুষজনকে ডেকে এনে তারা রাফায়াতকে ধরাধরি করে হসপিটালে নিয়ে গেলেন। খবরটা রাফায়াতের পরিবারের কানে পৌঁছানো মাত্রই তারা মাঝরাতেই রওনা হলেন ঢাকার উদ্দেশ্যে। জীর্ণ শীর্ণ অবস্থা তাদের। কান্না কান্না মুখ সবার। বিপদ যেন কিছুতেই ছাড়ছেনা রাফায়াতকে। চতুর্পাশ থেকে ঘিরে ধরেছে। কবে মুক্ত পাবে রাফায়াত এসব ভ’য়’ঙ্কর বিপদ আপদ থেকে? এসব ভাবতে ভাবতেই রাফায়াতের মা মুখ চেপে কাঁদতে লাগলেন।
অয়ন্তীর মা এবং বাবা কাগজপত্রে কিছু ফর্মালিটিস পূরণ করে দিলেন। তাৎক্ষণিক রাফায়াতকে ইর্মাজেন্সি রুমে ঢুকানো হলো। রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে অয়ন্তী এবং অয়ন্তীর পরিবার দুঃশ্চিন্তায় পায়চারী করতে লাগল। এই নিয়ে না আবার পুলিশ কে’ই’স হয়ে যায় সেই চিন্তায় তারা উদ্বিগ্ন হয়ে উঠল।
অয়ন্তীর অবস্থা প্রায় সূচনীয়। কাঁদতে কাঁদতে তার ম’র’ণ দশা। ঐসময়ের দেখা রাফায়াতের মু’মূ’র্ষু মুখমণ্ডলটি যেন কেবল তার দু’চোখে ভেসে উঠছে। ক্ষণে ক্ষণে অন্তরআত্তা কেঁপে উঠছে তার। রাফায়াতকে না হারিয়ে ফেলে সেই আশঙ্কায় সে কাতর। এই করতে করতে সে নিজেও এবার অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এই ভ’য়া’বহ পরিস্থিতি পেরিয়ে রাফায়াত যেন খুব দ্রুত তার কাছে ফিরে আসে সেই প্রার্থণা করতে করতেই তার সময় অতিবাহিত হচ্ছে। এক পর্যায়ে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যেতেই অয়ন্তী অবচেতন হয়ে পড়ল! ঢুলে পড়ল তার মায়ের বুকে।
সারারাত ইর্মা’জে’ন্সি রুমে থাকার পর ভোরের দিকে রাফায়াতকে মোটামুটি সুস্থ অবস্থায় কেবিনে শিফট করা হলো! রাফায়াতের পরিবারও এসে এই মুহূর্তে হাজির হলো। হসপিটালে সবার কান্নার ঢল পড়ে গেল। অয়ন্তীরও মাত্র জ্ঞান ফিরে এলো। আবারও তার কান্নাকাটি শুরু হয়ে গেল। কেবিনে এই মুহূর্তে কারো প্রবেশ নিষিদ্ধ। প্রায় ছয় ঘণ্টা অবজারভেশনে রাখা হলো রাফায়াতকে। এই দিকটা ঠিকঠাক হতেই অয়ন্তী এবার কঠিন এক সিদ্ধান্ত নিলো৷ রাফায়াতের বাবা-মায়ের মুখোমুখি বসে সে শক্ত গলায় বলল,,
“মা-বাবা। আপনাদের ছেলেকে নিয়ে আমার কিছু বলার ছিল।”
রাফায়াতের মা এবং বাবা তৎপর দৃষ্টিতে অয়ন্তীর দিকে তাকালেন। অয়ন্তীকে দেখে বেশ সিরিয়াস মনে হচ্ছে। তাই তারাও বেশ নিঃসংকোচে সম্মতি জানিয়ে বললেন,,
“বলো মা? কী বলতে চাও?”
নাক টেনে চোখের জল নিবারণ করল অয়ন্তী। নিজেকে শতরূপ ধাতস্থ করল বর্তমান পরিস্থতিতে। স্পষ্ট গলায় বলল,,
“আমি চাইনা আপনাদের ছেলে আর চট্টগ্রাম ফিরে যাক! ঢাকায় থেকেই কিছু একটা করুক!”
অয়ন্তীর সিদ্ধান্তে যদিও রাফায়াতের মা-বাবা বেশ অবাক হয়েছেন৷ তবুও যেন তারা স্বাভাবিক গলায় অয়ন্তীর দিকে প্রশ্ন ছুড়লেন,,
“হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত মা?”
ভরাট দৃষ্টিতে অয়ন্তীর তার হবু শ্বশুড়, শ্বাশুড়ীর দিকে তাকালো। নাক ফুলিয়ে কেঁদেকেটে আকুতি ভরা গলায় বলল,,
“চট্টগ্রাম ফিরে গেলেই আপনাদের ছেলে আবার ঐ পথে ফিরে যাবে। মা’রা’মা’রি, খু’না’খু’নি, র’ক্তা’র’ক্তি আমি এসব চাইনা আর। আমি চাই তার সুস্থ একটা জীবন। তার সুস্থ একটা ভবিষ্যৎ৷ আমাদের সুস্থ একটা সংসার। পৃথিবীর প্রতিটি মেয়েই তো এমনটি চায়। তার সুস্থ এবং নিরাপদ একটা সংসার জীবন। তাহলে আমি কেন তার ব্যতিক্রম হব বলুন? তার সাথে এখন আমার জীবন জড়িয়ে আছে। তার খারাপ কিছু একটা হয়ে যাওয়া মানেই হলো আমার জীবনটা তছনছ হয়ে যাওয়া। আমি আমার সুখকে এভাবে হারাতে দিতে পারিনা। আশা করি আপনারা আমার বিষয়টা বুঝবেন। আমার সিদ্ধান্তে সহমত পোষণ করবেন।”
রাফায়াতের মা এবং বাবা দুজন দুজনের মুখ দেখাদেখি করলেন। মিনিট পাঁচেক তারা কিছু একটা ভেবে সঠিক সিদ্ধান্তে এলেন। রাফায়াতের বাবা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অপেক্ষেয়মান অয়ন্তীর দিকে তাকালেন। স্বাভাবিক স্বরেই বললেন,,
“তোমার সিদ্ধান্তের উপর আমাদের আর কোনো সিদ্ধান্ত থাকতে পারেনা মা। রাফায়াতকে নিয়ে এখন তুমি যা ভাববে তাই হবে। কারণ, আমাদের ছেলের ভবিষ্যৎ এখন তোমার হাতেই। তুমি যা করবে নিশ্চয়ই আমাদের ছেলের ভালোর জন্যই করবে। সেই বিশ্বাস আমাদের আছে। তবে বিয়ের আগে তো এক বাড়িতে থাকার কোনো নিয়ম নেই মা। এই দিকটাও একটু ভেবে দেখো।”
“ভেবে দেখার তো কিছু নেই বাবা। আমরা আলাদা ফ্লাটেই থাকব। সেই ফ্লাটে শুধু রাফায়াত নয় বরং আপনারাও থাকবেন! আমি বলতে চাইছি বাবা চট্টগ্রামের বাড়িটা ছেড়ে দিয়ে আপনারা বরং ঢাকায় একটা ফ্লাটে ওঠে যান। ঐ বাড়ি থেকে যা ভাড়া পাবেন তা দিয়ে ঢাকায় ফ্লাটের ভাড়া চলে যাবে। বাকি সাংসারিক খরচ না হয় আমার বাবা দেখে নিবে! তবে এই বিষয়ে রাদিফকে কিছু জানাবেন না প্লিজ। বিষয়টা গোপন থাকবে। শুধু আপনাদের আর আমাদের মধ্যে থাকবে।”
“না না মা। এ কীভাবে হয়? আমার নিজেরও তো একটা আত্নসম্মানবোধ আছে। তাছাড়া আমি এখন অবসরে থাকলেও আমার বড়ো ছেলে তো আর বেকার নয়। সংসারের খরচ কোনো রকমে চলে যাবে আমাদের। ঢাকায় শিফট হওয়ার ব্যাপারটা আমি মন থেকেই মেনে নিলাম মা! আসলে সিদ্ধান্তটা আমার আরও পাঁচ ছয় বছর আগেই নেওয়ার উচিৎ ছিল। যা এখন তোমার মাধ্যমে সম্পন্ন হলো।”
স্বস্তি খুঁজে পেল অয়ন্তী। দুঃখের মাঝেও এক প্রকার সুখ খুঁজে পেল। দুই পরিবারের সবাই অয়ন্তীর সিদ্ধান্তকে মেনে নিলো। অয়ন্তীর বাবা অলরেডি ফ্লাট খুঁজতে শুরু করে দিয়েছেন! হসপিটাল থেকে রিলিজ পেয়েই যেন রাফায়াত ঢাকায় নতুন ফ্লাটে উঠতে পারে সেজন্যে। দুপুরের দিকে রাফায়াতের জ্ঞান ফিরে এলেও অয়ন্তী একটিবারের জন্যও রাফায়াতকে দেখতে গেলনা! অভিমান নিয়ে কেবিনের বাইরে জনাজীর্ণ অবস্থায় বসে রইল৷ রাফায়াত অনেকবার দেখতে চেয়েও অয়ন্তীকে দেখতে পারলনা। অসুস্থ শরীর নিয়ে রাফায়াত অয়ন্তীকে অনেকবার ডেকেও কেবিনের ভেতরে আনতে পারলনা। অভিমান বেড়ে যেন অয়ন্তীর আকাশ ছুঁতে চাইল।
রাতটা এভাবেই কোনোমতে পাড় হয়ে গেল। কেবিনের ভেতর রাফায়াতের সাথে রাফায়াতের মা-বাবা ছিল। কেবিনের বাইরে বসা ছিল অয়ন্তী! রাতে বাড়ি ফিরেনি সে। খাবারদাবারও খায়নি। হাজার জোর করেও কেউ তার মুখে খাবার তুলতে পারেনি। অদম্য জেদ চেপে বসেছে তার মস্তিষ্কে। তাই ঠায় চেয়ারে বসে নির্ঘুম রাত কাটিয়ে দিয়েছে। আর অনর্গল চোখের জল ফেলেছে।
সকাল হতেই রাফায়াত চিৎকার চ্যাঁচামেচি জুড়ে দিলো! অয়ন্তীর নাম ধরে সে গলা ছেড়ে ডাকতে লাগল। বেঁধে গেল হু’লু’স্থুল কাণ্ড। অন্যান্য রোগীদের এতে অসুবিধা হতে লাগল। রাফায়াতের নামে কমপ্লেইন আসতে লাগল। রাগান্বিত হয়ে অয়ন্তী কেবিনের ভেতরে আড়চোখে তাকালো। অমনি দেখতে পেল রাফায়াত তার হাতের ক্যানোলা খোলার চেষ্টা করছে! অসুস্থ শরীর নিয়ে বেড থেকে ওঠে আসার চেষ্টা করছে। এসব দেখে অয়ন্তী আর তার জেদ ধরে রাখতে পারলনা! চেয়ার ছেড়ে ওঠে দাঁড়ালো সে। দৌঁড়ে গেল কেবিনের ভেতরে। অয়ন্তীকে এক পলক দেখামাত্রই যেন রাফায়াত শান্ত হলো। গোঙাতে গোঙাতে অয়ন্তীর দিকে তাকালো। উচ্চশব্দে চিৎকার করে বলল,,
“কই ছিলা এতক্ষণ তুমি হ্যাঁ? শুনতে পারছিলে না? আমি তোমাকে ডাকছিলাম?”
অয়ন্তী ইশারায় রাফায়াতের বাবা-মাকে বলল কেবিন থেকে বের হয়ে যেতে। অয়ন্তীর ইশারা বুঝে তারাও কেবিন থেকে বের হয়ে গেলেন। কেবিনের দরজা আটকে অয়ন্তী দূরে থেকেই রাফায়াতের দিকে তেজী দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। চোয়াল উঁচিয়ে বলল,,
“কী হইছে? এটা একটা হসপিটাল জানেন না? এভাবে সিনক্রিয়েট করতেছেন কেন? আপনার জন্য অন্যান্য রোগীদের সমস্যা হচ্ছে। এটা কি আপনি আপনার বাড়ি পেয়েছেন? বা আপনার নিজের এলাকা পেয়েছেন? যে গলা তুলে গু*ন্ডাদের মত গু*ন্ডামি করবেন?”
“তুমি আবারও আমাকে গু*ন্ডা বললে?”
“গু*ন্ডাকে গু*ন্ডা বলব না তো কী বলব? গু*ন্ডামি করতে গিয়ে আ*হত হয়ে এসেছেন আবার বড়ো বড়ো কথা বলছেন।”
“গু*ন্ডামি করতে যাইনি আমি। তোমার কথা মত এই পথ ছেড়ে দিচ্ছি আমি। ইভেন ছেড়েও দিয়েছি।”
“ছেড়ে দেওয়ার এই নমুনা হ্যাঁ? এই নমুনা? আর একটু হলেই তো ম*রা দেহটা নিয়ে ফিরে আসতি! বাঁচাতে পারতাম না আমরা তোকে! এই? তোকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়ে কী আমি ভুল করেছি বল? আমার জীবনটাকে ন’রক করে তুলছি? আমার লাইফ ঝুঁ’কি’র মধ্যে ফেলে দিচ্ছি? হাতে ধরে নিজের জীবনটাকে নষ্ট করছি?”
অয়ন্তীর প্রতিটা কথা যেন রাফায়াতের গাঁয়ে সূচের মত বিঁধল। ভেতরে বাহিরে প্রচণ্ড আ’ঘাত পেল সে। রাগ ভুলে আ’হ’ত দৃষ্টিতে অয়ন্তীর দিকে তাকালো। কেমন যেন মিইয়ে আসা গলায় বলল,,
“কী বললে তুমি? আমার জন্য তোমার জীবন নষ্ট হচ্ছে?”
রাফায়াতের দিকে তেড়েফুঁড়ে এলো অয়ন্তী। চেয়ার টেনে রাফায়াতের পাশে বসল। রাগে গজগজ করে উঁচু গলায় রাফায়াতকে শাসিয়ে বলল,,
“নষ্ট হচ্ছে না তো কী হচ্ছে? তোর লাইফের কোনো গ্যারান্টি আছে? দেখা যাবে বিয়ের পরের দিনই আমি বি’ধ’বা হয়ে গেলাম! তখন কী হবে আমার হ্যাঁ? বল কী হবে আমার?”
ভরাট দৃষ্টিতে রাফায়াত অয়ন্তীর দিকে তাকালো। গভীর আ’ঘা’তে যেন কুঁকড়ে উঠল সে। অস্ফুটে গলায় বলল,,
“আরেকটা বিয়ে করে ফেলবে! আমার জন্য তো আর তোমার জীবন থেমে থাকবেনা! মাশাআল্লাহ্ রূপে গুনেও অপরূপা তুমি। অবিবাহিত ছেলেরাও তোমাকে বিয়ে করতে হুমড়ি খেয়ে পড়বে! তাছাড়া ফারহান তো আছেই! তোমাকে সুখে রাখবে।”
“তখন ফারহান ভাইও আমাকে বিয়ে করবেনা! বলবে অবিবাহিত ছেলে হয়ে আমি কেন একটা বি’ধ’বা মেয়েকে বিয়ে করব?”
“তাহলে বিয়েটা ভেঙে দাও!”
“মানে?”
এক টানে হাত থেকে ক্যানোলাটা খুলে ফেলল রাফায়াত! টলটলিয়ে র’ক্ত বইতে শুরু করল হাতের ফিনকি বেয়ে। বিক্ষুব্ধ হয়ে রাফায়াত অয়ন্তীর হাত থেকে জোর জবরদস্তি করে তাদের এনগেজমেন্ট রিংটা খুলে ফেলল! ঘাড়ের রগ টান টান করে চিৎকার করে বলল,,
“আজ থেকে তুমি মুক্ত! বিয়েটা ভেঙে দিলাম আমি। আমার এই অনিশ্চিত জীবনের সাথে তোমাকে জড়াতে হবেনা। আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে তোমার এবং ফারহানের বিয়েটা দিব। সুখে থাকবে তুমি।”
দিশা খুঁজে না পেয়ে অয়ন্তী ঠা’স করে রাফায়াতের গালে জোরে এক চ’ড় বসিয়ে দিলো! খারাপ ভাষা ব্যবহার করে বলল,,
“জা’নো’য়া’র! আমার হাত থেকে রিং খোলার সাহস তোকে কে দিলো? অন্যায় তো করবি করবি আবার রাগও দেখাবি? তোর একার-ই শুধু রাগ আছে না? আমার কোনো রাগ নেই? কোনো অভিমান নেই? আমি কী রাগের মাথায় তোকে দু’একটা কথা শুনাতে পারিনা? নাকি সেই অধিকারটাও আমার নেই? কিনে নিয়েছিস সব অধিকার তুই?”
চোখ লাল করে রাফায়াত অয়ন্তীর দিকে তাকিয়ে রইল। রাগ যেন কিছুতেই থামছেনা তার। বেগতিক বাড়ছে। হিংস্র বাঘের ন্যায় গ’র্জে উঠছে। হাতের ফিনকি বেয়েও র’ক্তের ধারা বইছে। চটে বসল অয়ন্তী। মাথা গরম হয়ে গেল তার। বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালো সে। একের পর এক রাফায়াতের গালে ঠা’স ঠা’স করে চ’ড় বসাতে লাগল। ক্ষোভে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,,
“কী করছস তুই এটা হ্যাঁ? কী করছস? হাত থেকে ক্যানোলা কেন খুললি? এখন এই র’ক্ত পড়া থামবে কীভাবে? আর কত র’ক্ত গাঁ থেকে ঝড়াবি? দয়ামায়া কী নেই তোর? ব্যথা বেদনা নেই তোর শরীরে? এত অ’মা’নুষ কেন তুই?”
একনাগাড়ে ছয় সাতটা চ’ড় দেওয়ার পর অয়ন্তী থামল। কাঁদতে কাঁদতে সে কেবিন থেকে বের হয়ে গেল। তাড়াহুড়ো করে ডক্টর ডেকে আনল। অয়ন্তীর উপর রেগে গেলেন ডক্টর! দু’একটা কটু কথা শুনিয়ে দিলেন। কেন রাফায়াতকে এই মুহূর্তে উত্তেজিত করল তাই। কিছু একটা করে ডক্টর র’ক্ত পড়া বন্ধ করলেন। পুনরায় ক্যানোলাটা হাতে লাগিয়ে দিলেন। এই মুহূর্তে কেবিনে কারো থাকাটা তিনি এলাউড করলেন না। এমনকি অয়ন্তীকেও না। কাঁদতে কাঁদতে অয়ন্তী কেবিন থেকে বের হতেই রাফায়াত অশ্রসিক্ত গলায় পেছন থেকে অয়ন্তীকে ডাকল। জড়িয়ে আসা গলায় বলল,,
“বললাম তো আমি ভালো হয়ে যাব অয়ন্তী। আর একটা সুযোগ দাও আমায় প্লিজ। তোমার সুখের জন্য আমি সবকিছু ছাড়তে রাজি। শুধু আরও একটু সহ্য করে তুমি আমার পাশে থেকে যাও। কথা দিলাম আমি, আর কখনও তোমার চোখের জলের কারণ হব না আমি।”
থমকে দাঁড়ালো অয়ন্তী। নিশ্চল দৃষ্টিতে পিছু ফিরে তাকালো। রাফায়াতের কাতর মুখশ্রী তাকে মায়ায় জড়িয়ে দিলো। ডক্টরের আপত্তি থাকা সত্ত্বেও সে পিছু ঘুরে দৌঁড়ে এলো রাফায়াতের কাছে। লাজ লজ্জা খুইয়ে সে রাফায়াতের কপালে দীর্ঘ এক চু’মু খেয়ে দিলো। ফুঁপিয়ে কেঁদে বলল,,
“শান্ত হও এবার। অয়ন্তী তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাচ্ছেনা। দেখবে আমরা খুব সুখী হব। কষ্টের পর স্বস্তি রয়েছে। এখন আমরা কষ্ট করছিনা? একটা সময় পর দেখবে সেই কষ্ট আমাদের সুখ হয়ে ঝড়বে।”
#চলবে…?