এক খণ্ড কালো মেঘ পর্ব -৪০

#এক_খণ্ড-কালো_মেঘ
#পর্ব_৪০
#নিশাত_জাহান_নিশি

“শান্ত হও এবার। অয়ন্তী তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাচ্ছেনা। দেখবে আমরা খুব সুখী হব। কষ্টের পর স্বস্তি রয়েছে। এখন আমরা কষ্ট করছিনা? একটা সময় পর দেখবে সেই কষ্ট আমাদের সুখ হয়ে ঝড়বে।”

চোখের কিনারা বেয়ে আনন্দ অশ্রু গড়িয়ে পড়ল রাফায়াতের। শুষ্ক হয়ে আসা মলিন ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসির রেখা ফুটে উঠল। রাগ, ক্ষোভ, দুঃখ, বেদনা নিমিষেই ভুলে সে শান্তশিষ্ট,কোমল এবং নিরিবিলি হয়ে উঠল। দেখে যেন বুঝা-ই যাচ্ছিল না একটু আগেই এই ছেলেটি পাগলের ন্যায় সর্বত্র উন্মাদনা ছড়িয়ে রেখেছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠতেই রাফায়াতের কপাল থেকে ওষ্ঠদ্বয় তুলে নিলো অয়ন্তী। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। রাফায়াতের দিকে সরু দৃষ্টিতে তাকাতেই একদফা অবাক হলো সে। চোখের পলকেই যেন ঘুমিয়ে পড়ল রাফায়াত! তবে কী আজ এতটাই ক্লান্ত ছিল রাফায়াত? শরীর বুঝি তার এতটাই দুর্বল এবং অবসন্ন ছিল? যার দরুন প্রশান্তিতে চোখজোড়া বুজতেই হুরহুর করে চোখের পাতায় ঘুম নেমে এলো? ম্লান হাসল অয়ন্তী। ঘুমে সিক্ত স্নিগ্ধ রাফায়াতকে দু’চোখ ভরে দেখতে লাগল। শেষবারের মত রাফায়াতের কপালে অতি আদুরে হাত বুলিয়ে সে কেবিন থেকে বের হয়ে গেল। এক প্রকার জোর করেই সে এবার রাফায়াতের মা এবং বাবাকে তার বাড়িতে পাঠিয়ে দিলো। বয়স্ক মানুষ। তাদেরও বিশ্রাম প্রয়োজন। সময়মত খাবারদাবার এবং আরামের প্রয়োজন।

প্রায় তিনদিন পর রাফায়াতকে হসপিটাল থেকে রিলিজ করা হলো। আজ তার বাড়ি ফেরার পালা। সব বাঁধা পেরিয়ে তাদের নতুন ফ্লাটে উঠার পালা। অয়ন্তীর বাবার পরিচিত এক বন্ধুর ফ্লাটেই উঠবে তারা। ফ্লাটটাও অয়ন্তীদের বাসার পাশেই! মেইন গেইট থেকে বের হয়ে পাশের ফ্লাটটা। এই নিয়ে বেশ খুশি অয়ন্তী। যখন ইচ্ছে হবে তখন সে রাফায়াতের বাসায় যেতে পারবে। রাফায়াতকে দেখে আসতে পারবে। সময় কাটাতে পারবে। ঢাকায় স্যাটেল্ড হওয়ার বিষয়টায় যদিও রাফায়াত প্রথমে রাজি হতে চায়নি তবে পরে অয়ন্তীর চোখ গোঁড়ানোতে ঠিক-ই রাজি হতে বাধ্য হয়েছে! সাংঘাতিক ভয় পেতে শুরু করেছে সে অয়ন্তীকে। যাকে বলে হারানোর ভয়! প্রিয় মানুষকে হারিয়ে ফেলার ভয়।

চট্টগ্রাম থেকে ট্রাক ভর্তি আসবাপত্র ঢাকায় এনে নতুন ফ্লাটে শিফট করল রায়হান। আর ঐ বাড়িটা বিশ্বস্ত একজন মানুষের কাছে ভাড়ায় দিয়ে এলো। একটা রুম ফাঁকা রেখে এলো। চঞ্চল সহজে ছাড়তে পারলনা মির্জা ফখরুল হকের হয়ে চামচামি করা! কারণ, তার মধ্যে রাফায়াতের মত এতটাও হিম্মত ছিলনা যে ফখরুল হকের মুখের উপর কথা বলবে সে। কিংবা তাদের সাথে একা ল’ড়ে নিজের ভিটে বাড়ি ত্যাগ করে নতুন আবাসস্থল খুঁজবে! তাই চেয়েও সে রাফায়াতের মত নিজেকে মুক্ত করতে পারলনা এই পা’পী জীবন থেকে। শুধু রাফায়াতকেই সেদিন ঘটনাচক্র থেকে উ’দ্ধা’র করে আ*হত অবস্থায় ঢাকায় অয়ন্তীর কাছে পাঠিয়ে দিলো। রাফায়াতের সুস্থ, সুন্দর, নিরাপদ একটি ভবিষ্যতের জন্যে। যদিও আ’ক্রো’শ এখানেই শেষ নয়! তবে এখন ভবিষ্যতের কথা ভেবে তো বর্তমানও নষ্ট করা যায়না।

সন্ধ্যার দিকেই রাফায়াতকে নিয়ে নতুন ফ্লাটে ওঠা হলো। অয়ন্তী এবং অয়ন্তীর পরিবারও সেখানে উপস্থিত ছিল। মোট তিনটি বড়ো রুম আছে ফ্লাটটিতে। দুইটি এডজাস্ট করা বাথরুম। ড্রইংরুম, কিচেন রুম, বিশাল ব্যালকনী মিলিয়ে বেশ ভালো এবং সুবিধাজনক একটি ফ্লাট-ই পেয়েছে তারা। বাড়িটির নিচতলার ফ্লাটটিতে উঠেছে তারা। দু’তলা এবং তিনতলাও ভাড়ায় দেওয়া। রায়হান আপাতত চট্টগ্রাম থেকে তার অফিসে যাওয়া আসা করবে! তাদের বাড়ির একটা রুম সে এই কারণেই ফাঁকা রেখে এসেছে। সেই রুমটিতে থাকবে সে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম প্রতিদিন জার্নি করাটা তার পক্ষে অসম্ভব। মাস দুয়েক বাদেই সে তার অফিস থেকে ট্রান্সফারের আবেদন করবে। ভাগ্যক্রমে যদি মওকুফ হয় তো সবার জন্যই মঙ্গল।

রাত প্রায় আটটা তখন। সময় স্বচ্ছ পানির ন্যায় গড়াচ্ছে। নতুন বাড়িতে ওঠে সবকিছু সাজিয়ে গুছিয়ে রাফায়াতকে সন্ধ্যার নাশতা দিতে অনেকটা-ই দেরি হয়ে গেল। রাফায়াতের মা এবং ভাবি এখনও ব্যস্ত তাদের ঘর গোছানোর কাজে। তাই অয়ন্তীই রাফায়াতের জন্য নাশতা নিয়ে গেল। নাশতার ট্রে-তে করে অয়ন্তী বড়ো গ্লাস ভর্তি খাঁটি গরুর দুধ, জুস, বিস্কিট এবং কেক নিয়ে এলো। এতক্ষণ যাবত রাফায়াত ঠিকই বিছানায় শুয়ে শুয়ে আরামচে ফোন ঘাটছিল। অয়ন্তীর হাতে ট্রে-ভর্তি নাশতা দেখেই সে চোরের মত কাঁথা টেনে ঘুমানোর ভান ধরল! মুখটা বাংলার পাঁচের মত করে নিলো। এই তিন/চারদিন ধরে অয়ন্তীর অতিরিক্ত সেবায় সে তিক্ত হয়ে উঠেছে! বিশেষ করে খাবারদাবারের বিষয়টা নিয়ে। রীতিমতো জোর করেই রাফায়াতের মুখে খাবার ঢুকিয়ে দিচ্ছে অয়ন্তী। এত এত খাবার রাফায়াত গিলবে নাকি উগলে দিবে সেই চিন্তাটাও করছেনা। ভাবছে হাড়ি হাড়ি খেতে পারলেই হয়ত রাফায়াতের শরীর দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবে! কপাল চাপড়ালো রাফায়াত। কাঁথার ভেতর মুখ ঢুকিয়ে আপন মনে বিড়বিড় করে বলল,,

“ওহ্ গড! আবার চলে এসেছে ডিশ ভর্তি খাবার নিয়ে। খাওয়াতে খাওয়াতে এই মেয়েটা আমাকে ঠিক মে*রেই ফেলবে! কোনো কথাই শুনবেনা। মনে করছে এত এত খাবার খেলেই হয়ত আমি সুস্থ হয়ে যাব। সার্জারির পরেও তো এত খাবার খাইনি বাপ। সামান্য কয়েকটা সেলাইয়ে এখন যত খাবার খেতে হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে তো মাসখানিক ও লাগবেনা এরমধ্যেই আমার ভুঁড়ি বের হয়ে যাবে!”

অয়ন্তী ঠিক বুঝতে পেরে গেছে রাফায়াত ভান ধরেছে! আদোতে ঘুমুচ্ছেনা সে। খাবার দেখে মুখ লুকিয়ে রেখেছে। নাশতার ট্রে-টা অয়ন্তী আওয়াজ করে ডেস্কের উপর রাখল। রাফায়াতের পাশে বসে হেঁতো হাসল। কাত হয়ে থাকা রাফায়াতকে দু’হাত দ্বারা ঝাকাতে লাগল। দ্রুত গলায় বলল,,

“এই শুনছেন? উঠুন? আমি জানি আপনি সজাগ আছেন। খাবার দেখে এখন ইচ্ছে করে নাটক করছেন। কী মনে করেছেন? আমি বুঝিনা আপনার ছলা কলা?”

এভাবে ধরা পড়ে যাওয়ার পরেও রাফায়াত শান্ত থাকার যথেষ্ট চেষ্টা করল! নড়াচড়া না করে মুখটা জোরপূর্বক বন্ধ রেখে মিছেমিছি চোখ বুজে রইল। খিঁচ খেয়ে পড়ে রইল। অয়ন্তী আবারও বুঝে গেল রাফায়াতের ট্রিক। দেঁতো হেসে সে ফট করে রাফায়াতের গাঁ থেকে কাঁথাটা তুলে নিলো। সঙ্গে সঙ্গেই রাফায়াত কাঁচা ঘুম থেকে জেগে ওঠার মত ভান ধরল! চমকে ওঠে কেমন যেন ভীরু গলায় বলল,,

“কে কে?”

রাফায়াতের নাটকীয় মুখে গরম দৃষ্টি নিক্ষেপ করল অয়ন্তী! কাঁথাটা হাত থেকে ছু’ড়ে ফেলে সে দাঁতে দাঁত চাপল। উড়নচণ্ডী গলায় বলল,,

“নাটক করছেন না? কী ভেবেছেন আমি কিছু বুঝব না? ঘুমের মানুষও বুঝা যায়। আবার ঘুমের ভান ধরা মানুষও বুঝা যায়। আপনার চোখ-মুখ দেখে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে আপনি ঘুমুননি।”

অসুস্থ শরীর নিয়ে তড়তড়িয়ে শোয়া থেকে ওঠে বসল রাফায়াত! নির্বোধের মত ভান ধরল সে। খাটের কার্ণিশে হেলান দিয়ে বসে অয়ন্তীর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। বাঁ পাশের ভ্রুটা উঁচু করে বলল,,

“আচ্ছা তোমার কী ভুড়িওয়ালা ছেলে পছন্দ?”

অবাক হলো অয়ন্তী। খরতরভাবে কপাল কুচকে সে রাফায়াতের দিকে তাকালো। নাক-মুখ খিঁচে বলল,,

“মানে? হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন?”

“যা জিজ্ঞেস করছি তার উত্তর দা। আসলেই কী তোমার ভুড়িওয়ালা ছেলে পছন্দ?”

“কই না তো! আপনার তো ভুঁড়ি নেই। তো পছন্দ হলো কীভাবে?”

“নেই। তবে হতে কতক্ষণ?”

“আরে আরে এসব কী বলছেন আপনি? আপনার কেন ভুঁড়ি হবে? আপনি তো বডি বিল্ডারদের মত ঠিক-ই আছেন। একদম পার্ফেক্ট!”

“কোথায় আর পার্ফেক্ট থাকলাম? দিন-রাত চব্বিশ ঘণ্টা তুমি যেভাবে আমাকে খাবারের উপর রাখছ! গাল চাপা সব ব্যথা হয়ে গেল আমার হাড়ি হাড়ি খাবার চিবুতে চিবুতে। দুধ, ডিম, ফলমূলও প্রতিবেলা জোর করে খাওয়াচ্ছ। এত ভিটামিন নিতে পারবে আমার শরীর?”

“কী আশ্চর্য! বোকা বোকা কথা বলছেন কেন? আপনি এখন অসুস্থ। আর অসুস্থ রোগীকে এসব ভিটামিন জাতীয় খাবার প্রচুর খেতে হয়। ফলমূল, দুধ, ডিম এসব তো প্রতিদিনকার রুটিন।”

“উফফ। তুমি বুঝতে পারছনা অয়ন্তী। আমার ওজন বেড়ে যাচ্ছে! নিশ্চয়ই তিন/চারদিনে আরও পাঁচ/ছয় কেজি ওজন বেড়ে যাবে। এভাবে ওজন বাড়তে থাকলে তো বিয়ের পর তোমারই কষ্ট হবে!”

“কী? আমার কষ্ট হবে মানে?”

“মানে। আমার এত ভার কী তুমি নিতে পারবে বলো? এমনিতেই তুমি পিচ্চি বাচ্চা!”

বলেই ক্রুর হাসল রাফায়াত! চাহনি তার দুষ্টুমিতে ভরা। ইশারা করছে নেগেটিভ দিকে! ফট করে রেগে গেল অয়ন্তী। রাফায়াতের গাঁয়ে দু/একটা চা’প’ড় মেরে সে বিরক্ত ভরা গলায় বলল,,

“খালি ইয়ার্কি না? খাবার না খাওয়ার জন্য এসব উল্টা পাল্টা বাহানা দিচ্ছেন আপনি? আর কোনো লজিক পাননি না? শেষ পর্যন্ত এসব লু’চ্চা”মি মার্কা লজিক?”

“আরে লু’চ্চা’মি করলাম কই? সত্যিই তো বললাম। কয়েকদিন পর সত্যিই আমার ভুঁড়ি টুড়ি বেড়ে একাকার হয়ে যাবে। তখন তুমি রাতেও শান্তি পাবানা! আর দিনেও রাস্তাঘাটে চলতে পারবা না! পাড়া প্রতিবেশীরা, বন্ধু-বান্ধীরা দেখলেই তোমাকে টিটকারি করে বলবে– “কী রে তোর জামাই নাকি ভুড়িওয়ালা?” তখন তুমি তাদের কাছে মুখ দেখাবা কীভাবে বলো? লজ্জা লাগবেনা?”

“রাদিফ বেশী বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু। খাবার দাবার নিয়ে কোনোরকম অনিয়ম করা চলবেনা। ইললজিক্যাল কোনো যুক্তি দেখানো যাবেনা। শরীর, স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে হবে। এতগুলো বছর ধরে তো অনেক অনিয়ম করে এসেছেন। এসব আর চলবেনা। আমি অন্তত তা চলতে দিবনা।”

রাফায়াতও নাছোড়বান্দা। কাত হয়ে সে পুনরায় শুয়ে পড়ল! সমস্ত শরীরে কাঁথা জড়িয়ে নিলো। কাঁথার তলা থেকেই ভাসা ভাসা গলায় বলল,,

“খাবনা আমি। নিয়ে যাও এসব। পারলে দুইটা সি’গা’রেট এনে দাও! অনেকদিন খাইনা। ভেতরটা হাসফাস করছে।”

“কী বললি তুই?”

রেগেমেগে অয়ন্তী দাঁতে দাঁত চাপল। কাঁথাটি পুনরায় রাফায়াতের গাঁ থেকে টেনে নেওয়ার পূর্বেই রাফায়াত তার রোগা শরীর নিয়ে প্যাঁচিয়ে ধরল অয়ন্তীকে! মুহূর্তেই অয়ন্তীকে কাঁথার মধ্যে ঢুকিয়ে নিলো সে। ঘটনার আকস্মিকতায় হকচকিয়ে উঠল অয়ন্তী। মিটমিটি অন্ধকারে সে কাঁথার নিচে তাকালো। কেমন যেন লাল রঙ ধারণ করেছে রাফায়াতের চোখ দুটি! অদ্ভুত এক নেশাধরা চাহনি। ঘন ঘন গরম শ্বাস পড়ছে রাফায়াতের। উষ্ণতা বিরাজ করছে সর্বত্র। বেসামাল হয়ে উঠল রাফায়াত। এক ধরণের উত্তেজনা কাজ করতে লাগল তার দেহজুড়ে। রাফায়াতের এহেন চরম উত্তেজনা বুঝতে পারল অয়ন্তী! আশকারা দিতে চাইল না রাফায়াতের উত্তেজনাকে। শুকনো ঢোক গিলে সে রাফায়াতের দিকে ভীরু দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। ততক্ষণে রাফায়াত একটু একটু করে অয়ন্তীর দিকে এগিয়ে আসতে লাগল। শঙ্কায় চোখ জোড়া আ’গুনের ফুলকির লাল ন্যায় করে অয়ন্তী দু’হাত দ্বারা রাফায়াতকে ঠেলে দিলো। খাপছাড়া গলায় বলল,,

“এই থামুন থামুন। এভাবে এগিয়ে আসছেন কেন আপনি?”

তবুও যেন ঘোর থেকে বের হতে পারলনা রাফায়াত! একটু আধটু ভুল করতে ইচ্ছে করল তার। মাথা ঘুরে গেল প্রায়। থামিয়ে দিলেই এই নেশা থেমে যাবেনা। যতক্ষণ অবধি না ভুল কিছু ঘটে যায়। হেঁচকা টানে অয়ন্তীকে কাছে টেনে নিলো রাফায়াত। অয়ন্তীর ভয়ে রঙিন হয়ে থাকা আবেদনময়ী মুখশ্রীতে সে নেশালো দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। বেপরোয়া হয়ে অয়ন্তীর নরম, কোমল, উষ্ণ ওষ্ঠের দিকে নির্ভয়ে এগিয়ে গেল! রসালো গলায় বলল,,

“আচ্ছা যাও সি’গা’রেট লাগবেনা। আপাতত যে নেশা মাথায় চড়েছে সে নেশায় ডুবে যেতে দাও।”

কিছু বুঝে ওঠার পূর্বেই অয়ন্তীর কম্পায়মান ওষ্ঠদ্বয় নির্দয়ভাবে দখল করে নিলো রাফায়াত! হকচকানো দৃষ্টি ফেলল অয়ন্তী রাফায়াতের ঘোরে নিমজ্জিত মুখশ্রীতে। প্রখর নেশায় মত্ত রাফায়াত। হিতাহিতজ্ঞান শূণ্য প্রায়। থামবার পর্যায়ে নেই সে। অয়ন্তী বুঝে উঠতে পারছেনা কী ঘটছে কী তার সাথে! এরম পরিস্থিতিতে লাইফে ফার্স্ট টাইম পড়ল সে। তাই তার বর্তমান অবস্থা অনুভূতিশূণ্য এক মানব মূর্তির ন্যায়! রাফায়াতের ভালোবাসা গভীর থেকে গভীরতর হতে লাগল। বুদ্ধি সুদ্ধি সব লোপ পেল। মাথা প্রায় খারাপ হয়ে গেল তার। অয়ন্তী এবার বোশ ক্ষেপে বসল। শরীরের সমস্ত শক্তি কাজে লাগিয়ে সে রাফায়াতকে সজোরে এক ধা’ক্কা দিলো। অমনি রাফায়াত এক ফুট দূরত্বে গিয়ে ছিটকে পড়ল। আচমকা সর্বনাশা ঘোর থেকে বের হয়ে এলো সে। অয়ন্তীর চোখের কোণে ঘৃণার জল! রাফায়াতের পাশে বসে সে চোখ টিপে কাঁদতে লাগল। আঙুল উঁচিয়ে শঙ্কিত রাফায়াতের দিকে তাকালো। শ্লেষাত্মক স্বরে বলল,,

“ছিঃ। এই ছিল আপনার মনে? পুরুষ মানুষের পরিচয় দিলেন এভাবে?”

ঘাবড়ে উঠল রাফায়াত। শোয়া থেকে ওঠে বসল সে। শরীরে ব্য’থা লাগা সত্ত্বেও পা দুটো ভাঁজ করে অয়ন্তীর মুখোমুখি বসল। মলিন দৃষ্টিতে অয়ন্তীর দিকে তাকালো। ঝেড়ে কেশে বলল,,

“কোথায় কী ছিল আমার মনে? এসব না করলেও তো আমি পুরুষ মানুষ-ই তাইনা? আলাদাভাবে প্রমাণ দেওয়ার কী আছে? তাছাড়া তুমি যা বুঝাতে চাইছ তা কিন্তু নয় অয়ন্তী। জানিনা হঠাৎ কী হয়ে গিয়েছিল আমার! কেন আমি এসব করলাম।”

“কিচ্ছু বুঝতে হবেনা আমার। আমি বুঝে গেছি আপনি কেমন! বিয়ের আগেই এসব! ছিঃ ছিঃ ছিঃ!!”

ধি’ক্কা’র জানিয়ে অয়ন্তী মুখ ঘুরিয়ে বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালো। রাগে রঙিন হয়ে তেড়েমেরে দরোজার দিকে পা বাড়ালো। অমনি রাফায়াত নাটকের আশ্রয় নিলো! বুকের ব্যান্ডেজ করে রাখা অংশগুলোতে সে হাত রেখে ব্যথায় কুঁকিয়ে ওঠা গলায় বলল,,

“ওমা! ব্য”থা! আর পারছিনা।”

#চলবে….?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here