#এক_চিলতে_রোদ- ২
#Writer_Nondini_Nila
(কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ)
৩০.
এদিকে ফারিয়া নিজের রুমের বারান্দায় থেকে ইহানকে বাগানে দেখতে পেয়ে দরজা খুলে বেরিয়ে আসে। এতো রাতে না ঘুমিয়ে বাগানে একা একা কি করছে দেখার জন্য। এগিয়ে এসেই দেখতে পায় ইহান হাঁটু গেড়ে বসে চোখ বন্ধ করে কি যে বলছে। কাউকে প্রপোজ করছে। আবেগ-অনুভূতি মিশানো বাক্য ছেড়ে যাচ্ছে। ফারিয়া শব্দ হীন পায়ে হেঁটে ইহানের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। এখন যে কেউ দেখলে বলবে ইহান ওকেই প্রপোজ করছে।
এই দৃশ্যটা দেখেই আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম।
ইহান চোখ ঝট করেই খুলে ফেলে কারো উদ্বিগ্ন গলার আওয়াজ শুনে। ঝট করেই তাকিয়ে উঠে দাঁড়ায়। সামনে ফারিয়াকে দেখে ওর কপাল কুঁচকে আসে। সাথে সাথে হাতে গোলাপ পকেটে ঢুকিয়ে নেয়। ফারিয়াকে কিছু জিজ্ঞেস করবে তখন অদূরে ঊষাকে একটা ছেলের কোলে দেখে মাথায় রক্ত উঠে যায়। দৌড়ে আমাদের দিকে এগিয়ে এসে ইহান শুভ্রকে বলে,
‘ এসব কি হচ্ছে? আপনি ওকে কোলে তুলছেন কোন সাহসে?’ রাগান্বিত স্বরে বলল ইহান।
বলতে বলতে কেড়ে নিলো শুভ্রর কোল থেকে। আমাকে অচেতন অবস্থায় দেখে ভাবলো হয়তো শুভ্রর জন্য আমি অচেতন হয়েছি। এটা ভেবে শুভ্রকে ধমক দিয়ে বললো,
‘ কি করেছেন ওর সাথে ও জ্ঞান হারিয়েছে কেন? ওর সাথে খারাপ কিছু করার চেষ্টা করে থাকেন আমি আপনাকে খুন করে ফেলবো। আগে ঊষাকে জাগাতে হবে। তারপর আপনাকে দেখে নিচ্ছি।’
বলেই ইহান বড় বড় পা ফেলে ভেতরে ঢুকে গেলো।নিজের রুমের বিছানায় ওকে শুইয়ে দিয়ে পানি এনে ছিটা দিতে লাগলো।
আমি চোখ মেলে ইহানকে খুব কাছে অনুভব করলাম। ইহান আমার হাত ধরে বসে আছে। আমি চোখ মেলতেই উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করতে লাগলো,
‘ ওই স্কাউন্ড্রেল তোমার সাথে কি করেছিলো। যার জন্য অজ্ঞান হয়ে গেলে। সব বলো আমাকে ওকে আমি খুন করে ফেলবো। ‘
আমি বোকা চোখে তাকিয়ে ভাবছি কার কথা বলছে। কার জন্য আমি অজ্ঞান হয়েছি। কি সব বলছে আমি তো উনার জন্য অজ্ঞান হলাম আর উনি আবার কার কথা বলছে? শুভ্র নামের সেই ছেলেটার কথা নয়তো?
‘কি এত ভাবছো? ওই ছেলেটা তোমাকে কি করেছিল ? আর তুমি এত রাতে বাগানে কেন গিয়েছিলে? কি এমন হয়েছিলো তুমি জ্ঞান হারালে? অ্যানসার মি!!’
তখনকার কথাটা মনে পরতেই আবার আমার শরীর নিস্তেজ হতে লাগল। ছলছল চোখে ইহানের চোখের দিকে তাকালাম। উনিত ফারিয়াকে প্রপোজ করে ভালোবাসি বলেই দিয়েছে। আমাকে উনি বোন ই ভাবতে পারেনা ভালো আবার কিভাবে বাসবে। কিন্তু তখন তাহলে পায়ে নূপুর পড়িয়ে দেওয়া এসব কি ছিলো?
আমি হঠাৎই হুহু করে কেদে উঠলাম। আমার না দেখে ইহান ব্যস্ত হয়ে গেল। ব্যস্ত গলায় জিজ্ঞেস করতে লাগলো,
‘হোয়াট হ্যাপেন্ড! কাঁদছো কেন?’
আমি কিছু বললাম না। নিজের কান্না থামানোর চেষ্টা করতে লাগলাম। ইহান আমার দিকে সরু চোখে তাকিয়ে আছে। আমার হঠাৎ কান্না মানে খুঁজে পাচ্ছে না। এদিকে এত প্রশ্ন করছে। আমি উত্তর দিচ্ছি না। তাই খানিকটা রাগ ও হচ্ছে উনার। এবার উনি রেগে উঠলো আর আমার দু কাঁধে হাত রাখল শক্ত করে। আর ঝাকাতে ঝাকাতে জিজ্ঞেস করতে লাগলো।
উনার এমন করা দেখে এবার আমি রাগে দুঃখে চিৎকার করে বললাম, ‘বারবার কি বলছেন! খুন করে ফেলবো! খুন করে ফেলবো! নিজেকেই কি আপনি নিজে খুন করে ফেলবেন? ওই শুভ্র ছেলেটার জন্য আমার কিছু হয়নি। আমার যা হয়েছে সব আপনার জন্য হয়েছে!’
‘ হোয়াট? আমার জন্য হয়েছে আমি আবার কি করলাম?’ বিস্ময় হতবম্ভ হয়ে জিজ্ঞেস করল।
আমি নাক টানতে টানতে বললাম, ‘আপনি আপনার ফ্রেন্ড ফারিয়াকে প্রপোজ করেছেন। ‘আই লাভ ইউ’ বলেছেন আমি সব দেখে ফেলেছি। একদিন ওই ফারিয়ার হাত থেকে বাঁচার জন্য আপনি আমাকে মিথ্যে গার্লফ্রেন্ড সাজালেন। আর আজকে আপনি তাকে নিজের গার্লফ্রেন্ড বানানোর জন্য প্রপোজ করছেন।’
‘হ্যাভ ইউ লস্ট ইউর মাইন্ড? হোয়াট আর ইউ টকিং এবাউট! আমি ফারিয়াকে প্রপোজ কখন করলাম?’
‘ কি মিথ্যাবাদী মিথ্যুক।আমি নিজের চোখে দেখেছি আপনি ফারিয়ার সামনে হাঁটু গেড়ে গোলাপ হাতে আই লাভ ইউ বলছেন। আর এখন বলছেন আপনি ফারিয়াকে প্রপোজ করেনি। হাটে হাড়ি ভেঙে গেছে এখন আমাকে মিথ্যা কথা বলতে এসেছেন।’
‘হুয়ে সুড আই লাই টু ইউ ইউ? কে তুমি? গার্লফ্রেন্ড নাকি বউ? যে তোমাকে মিথ্যা কথা বলতে আসবো!’
আমি চুপ করে ইহানের কথা শুনছি আসলেই তো। ইহান আবার বলল,
‘ শুনো মেয়ে আমি কাউকে প্রপোজ করলে বা ভালোবাসি বললে এতো লুকিয়ে-চুরিয়ে করবো না সবার সামনে গলা ফাটিয়ে ভালোবাসি বলবো। আমি এত ভীতু না ওকে। কিন্তু আমার কথা হচ্ছে আমি যদি কাউকে আই লাভ ইউ বলে ও থাকি তাহলে সেটা দেখে তোমার এই অবস্থা কেন হলো? তুমি এমন রিএক্ট কেন করলা হোয়াই?’
আমি লজ্জায় চুপ করে মাথা নিচু করে আছি।এবার কি বলবো আমি ইহানকে?
‘অ্যাক্টিং করতে করতে কি সত্যি আমাকে নিজের বয়ফ্রেন্ড ভাবতে শুরু করলে নাকি?’
আমি কথা ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি তখন আমার পায়ে নুপুর পরিয়ে দিলেন কেন?
আমার কথা শুনে ইহান থতমত খেয়ে গেলো। আর আমতা আমতা করতে লাগলো। আমি ও চেপে ধরলাম তাকে জিজ্ঞেস করেই যাচ্ছি। কথার মাঝে তার কথাটা বাদ পড়ে গেল।
ইহান বেকায়দায় পড়ে আমাকে বললো, ‘ যাও নিজের রুমে যাও। আমি ঘুমাবো!’
‘না আমি কোথাও যাবে নাকি বলুন তখন কার ও সবকিছু কি ছিলো?’
‘ আমি বলতে বাধ্য না। যাও বের হও আমার রুম থেকে।’
বলে আমার হাত ধরে টেনে বিছানা থেকে নামালো। আমি বললাম, ‘আপনি আমাকে ভালোবাসেন তাই না?’
ইহান টেনে আমাকে রুম থেকে বের করতে নিচ্ছি ল হঠাৎ আমার কথা শুনে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে।
‘ কি সব আবোল তাবোল বকছো। এমন কিছুই না।’
‘ আপনি না বলে ভীতু না ভালবাসলে লুকিয়ে রাখেন না সত সাহসের সাথে বলতে জানেন তাহলে এখন কি করছেন? নিজের মনের কথা লুকিয়ে চোরের মতন ঘুরছেন। আবার নিজেকে সাহসী বলে গলা ফাটান ছিঃ। আপনি একটা ভীতুর ডিম। সৎ সাহস থাকলে স্বীকার করুন আপনি আমাকে ভালোবাসেন।”
ইহান আমার কথা শুনে চোখ বন্ধ করে নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে। আমি যে উনাকে রাগিয়ে তুলেছি আমি সেটা জানি। কিন্তু আমার কিছু করার নাই উনার মুখ থেকে ভালোবাসি কথাটা শুনার জন্যই আমি এমন করছি।
‘ তুমি কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করছো ঊষা। এতো সাহসী কিন্তু তুমি না তাই নিজেকে সাহসী প্রমাণ করতে যেও না।’
‘ আপনার কি মনে হয় আমি ভীতু আমি ভীতু হলে আপনার থেকে সাহসী। আপনি আমার থেকেও ভীতু।’
‘ আমি ভীতু না ওকে হ্যাঁ ‘ আমি তোমাকে ভালোবাসি ‘ এটা আমার মুখে বলার কি প্রয়োজন! সেটা অবশ্যই তুমি আমার তাকানো দেখেই বুঝে গেছো। একটা ছেলে একটা মেয়ে দিকে কি নজরে তাকায় সে মেয়েটা অবশ্যই তার চাহনী দেখি বুঝতে পারে। যে ছেলেটা তাকে ভালোবাসে। আর তুমি যদি না বুঝে থাকো অবশ্যই তুমি একটা গাধা। ভালোবাসলেই সেটা মুখে কেন বলতে হবে? আমার গভীর অনুভূতি মাখা দৃষ্টি দেখলেই তো তোমার তা এক ঝলকে বুঝে যাওয়া উচিত। আর তুমিও যে আমাকে ভালোবাসো সেটা ও আমি জানি। তাহলে তুমি কেন মুখে ভালবাসি না বলে লুকিয়ে গিয়েছো তাহলে তো তুমি আমার থেকেও ভীতু। ভালোবাসি শব্দ টা মুখে উচ্চারণ করলেই সৎ সাহসী হয়ে ওঠা যায়না। ভালোবাসার মানুষটির পাশে থেকে নিজের করার সৎ সাহস থাকা চাই। তাই আমার সৎ সাহস নিয়ে নেক্সট টাইম কথা বলতে আসবেনা। মাইন্ড ইট। নও গেট লস্ট। আই উইল স্লিপ নাও।’
বলেই ধাক্কা দিয়ে দরজার বাইরে বের করে দরজা আটকে দিলো। আমি থ মেরে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে রইলাম স্তব্ধ হয়ে।
ইহানের মুখে ভালোবাসি শুনে কি আমার খুশি হওয়া উচিত। না কি এভাবে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়ার জন্য অভিমান করা উচিত কিছু বুঝতে পারছিনা। আমি বিহ্বল হয়ে আর একবার বন্ধ দরজার দিকে তাকিয়ে নিজের রুমের দিকে হাটা দিলাম। অদ্ভুত আসলেই অদ্ভুত এই ইহান।অন্য সবার বয়ফ্রেন্ড কি সুন্দর ফুল দিয়ে হাটু গেড়ে আই লাভ ইউ বলে আর মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে আর উনি আমাকে ভালোবাসি বলল ধমকের স্বরে আর তারপর ধাক্কা দিয়ে দরজার বাইরে বের করে দিলো। হায় পোড়া কপাল আমার। সব কিছুই অদ্ভুতভাবে হয় আমার জীবনে।
পরদিন ইমা আপুর বিয়ে আজ। বর আসার তারা নাই কারণ বর তো এখানে আছে। তাই বরকে সামনে রাস্তায় দুই পাক ঘুরিয়ে আনা হবে তারপরে গেট ধরবো আমরা। শুভ্র নামের ছেলেটি কে আজকে জানতে পারলাম। সে হলো বরের বোনের দেওর। কালকে ইহানের কাছে ধমক খাওয়ার পর সকাল থেকে কথা বলতে আসেনি কিন্তু গেইট ধরার সময় লেগে গেল তার সাথে ঝগড়া। আমি দূরে ইহান কে দেখলাম আমাকে ইশারা করছে ওখান থেকে সরে আসার জন্য ওই ছেলেটার সাথে কথা বলতে দেখা একদমই সহ্য করতে পারে না ইহান।আমাকে সকালবেলা উঠে হাত ধরে টেনে নিয়ে গিয়ে বলেছে,
‘ ও শুভ্র নামের ছেলেটির সাথে যেনো তোমাকে আমি কথা বলতে না দেখি আর ওর আশেপাশেও যাবে না মনে থাকবে?’
‘আপনি আমাকে এই সাত সকালে এসব কথা বলতে এসেছেন। কোথায় ভাবলাম এখন থেকে আপনি আমার রিয়েল বয়ফ্রেন্ড হয়ে গেলেন। একটু প্রেম-টেম করবো আপনি আমার সাথে মিষ্টি করে কথা বলবেন তা না কাল থেকে শুধু ধমকে যাচ্ছেন। প্রবলেম কি আপনার?’
‘ কোন প্রবলেম নাই। ওই ছেলের সাথে কথা বললেই
খবর আছে তোমার।’
আমি জেদ করেই আরো গেলাম না। পেয়েছে কি খালি আমাকে হুমকি দেবে আর আমি তা মেনে নেব ইম্পসিবল। একবার ইহানের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ও রক্তবর্ণ চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ঢোক গিলে আমতা আমতা করতে করতে গেইটে থেকে সরে দাঁড়ালাম। অজান্তে আমায় ভয় পেয়ে গেছি না জানি পরে আমাকে হাতের কাছে পেলে কি করে। সেই ভয়ে আর অমান্য করতে পারলাম না।
আমি বারবার দরজার দিকে তাকাচ্ছি আব্বু আম্মু আসছে না কেন? সবাই ব্যস্ত বরকে নিয়ে একটু আগেই বরকে ভেতরে স্টেজে বসানো হয়েছে আর এখন তাদের সামনে খাবার দেওয়া হয়েছে সেখানেই ইহান আছে। আমি ও খাইনি আব্বু আম্মু আসছে খাব তাই।
‘কি হয়েছে মুখটা এমন শুকনো লাগছে কেন? খাবার খেয়েছো?’
ইহানের আচমকা কন্ঠস্বর শুনে লাফিয়ে উঠলাম।
‘ না।’
‘কেন? চলো খাবে।
‘আব্বু আম্মু তো এলো না তারা কি আসবে না? ফোন দিলাম তখন তো বললো বের হচ্ছি এতো লেট হচ্ছে কেন?’
‘ হয়তো গাড়িতে আছে এজন্য ধরছে না। চলো খাবে।’
আমি আর মানা করতে পারলাম না ইহানের সাথেই চলে গেলাম। মনে মনে একটা কথাই ভাবছি আব্বু আসলে তাকে দেখে সবার রিয়াকশণ কেমন হবে? আল্লাহ আল্লাহ করছি চাচা জানের সাথে যেনো সম্পর্ক ঠিক হয়ে যায়। তাহলে সবার সাথে আমরা থাকতে পারবো ইশ কি আনন্দ হবে। ভাবতেই আনন্দ লাগছে। এখন বাকিটা সময়ের অপেক্ষা।
আজকে ভাইয়া সাদা শার্ট ইন করে পরেছে সাথে কালো কোর্ট পরেছে, কালো প্যান্ট, মানিয়েছে খুব। আমি তার দিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে
খাবার টেবিলে এসৈ বসলাম। আমি আজ অরেঞ্জ রঙের গাউন পরেছি এটা আমার জন্মদিন আব্বু দিয়েছিলো। খুব ফেভারিট এই পোশাক টা আমার কাছে। তাই এই আনন্দের দিনে এটাই পরেছি।
আমাকে বসিয়ে দিয়ে নিজেও আমার পাশে বসেছে ইহান। ইলা আপুকে দূরে দেখলাম। লেহেঙ্গা পরেছে জাম কালারের। ইমা আপু তার রুমে বিয়ে পরানোর পর তাকে বাইরে আনা হবে তার আগে বরকে একাই স্টেজে বসে থাকতে হবে। খাবার খেয়ে ইমা আপুর কাছে এসে বসলাম। আম্মু আব্বু এসেছে কিনা তার আর খোঁজ নিতে পারলাম না। আপু কাছে বসে ছিলাম। রেজিস্ট্রেশন কাগজ এনে দিলো সাইন করার সময় কাঁদতে কাঁদতেই আপু শেষ একটু পর হুজুর আসলে কবুল বলার হলো। কবুল বলতেই চারপাশে চিৎকার ভেসে এলো। মানুষ সব গিজগিজ করছে এখানে। এসবের মাঝে আমি আব্বু আম্মুর কথাটা ভুলেই গেলাম
এইসবে আনন্দ করতে লাগলাম ওইদিকে যে ঘুনি ঝড় বয়ে যাচ্ছে তার কোন কিছু আমি জানতে পারলাম না। আব্বু আম্মু হাসিখুশি মুখের ভিতরে প্রবেশ করেছিল কিন্তু তার পরেই যখন তাদের সাথে দেখা হলো চাচা জানের আর আবার ঝগড়া বেধে গেলো। আমার আব্বু তার সাথে মানিয়ে গুছিয়ে ভালো করে কথা বলতে চাইলেও চাচাজান তার কোন কথাই শুনতে নারাজ চিৎকার চেচামেচি করে তাকে বাসা থেকে বেরিয়ে যেতে বলল। আব্বু মলিন মুখে বেরিয়ে গেলো। অপমানে তার মুখটা একটু খানি হয়ে গেছে।ইহান ও এই মুহূর্তে এখানে উপস্থিত ছিলো না। ইহান আর আমার চোখের আড়ালে আবারো অপমাণিত হয়ে মুখ ছোট করে বেরিয়ে যেতে হলো।
রিফাত ভাইয়ার গ্রামের বাড়ি রাজশাহী তাই এখন সেখানে যাবে ইমা আপুকে নিয়ে। তাই সন্ধ্যার আগেই বিদায় নিয়ে বের হয়ে গেলো তারা। আমি ও ইহান সেখানেই ব্যস্ত। বিদায় মুহূর্তে সবার আনন্দের মুহূর্ত নীরবতা ছেয়ে গেলো। সবার চোখে পানি যাতে কাজল লেপ্টে সবারই সাজগোজের বারোটা বেজে গেছে। ইমা আপুকে গাড়িতে উঠিয়ে দিতে তারা চলে গেল।আমি এখনো দাঁড়িয়ে যে রাস্তা দিয়ে ইমা আপু চলে গেছে সে দিকে তাকিয়ে আছি। ইহান এসে আমার হাতের মুঠোয় নিজের হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরলো তারপর আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল ,
‘সবাই ভেতরে চলে গেছে তুমি এখন এইখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন?’
‘ এভাবেই।
‘ ওহ আচ্ছা ভেতরে চলো তাহলে।’
বলেই কমিউনিটি সেন্টারে ভেতরে নিয়ে এলো। সবাই প্যাকিং করছে একটু পরেই বেরিয়ে যাবে। ভেতরে আসতেই ইহান আমার হাত ছেড়ে চলে গেলো। আমি ভাবছি আম্মু আব্বু আসলো না কেন কল দিলাম রিসিভ করল আম্মু,
‘হ্যালো আম্মু তোমরা আসলে না কেন?’
‘তোর আব্বুর শরীরটা ভালো লাগছে না। এজন্য যায়নি তুই বাসায় আসবি কবে?
‘আজকে অথবা কালকে কেন? আর তোমার গলাটা এমন লাগছে কেন আব্বুর কাছে দাও। আমি আব্বুর সাথে কথা বলব আমাকে কথা দিয়েও কেন আসলো না। আমি জানতে চাই।’
আমার আহ্লাদী আর জেদি গলা শুনে আম্মু রেগে গেল।
‘বললাম না এখন কথা বলবে না বাসায় আয় তারপর যত খুশি কথা বলিস রাখি।’
বলেই খট করে কল কেটে দিলো। আমি হতবিহ্বল হয়ে ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে রইলাম। এমন রাগ দেখালো কেন?
সন্ধ্যা হয়ে এলো ইহানদের বাসায় আসতে। আমি চলে যেতে চাইছিলাম। কিন্তু ইহান বলেছে আজ থেকে যেতে কাল দিয়ে আসবে।আমি ও রাজি হয়ে গেছি ইহানের কাছাকাছি থাকার জন্য।
কিন্তু খাবার টেবিলে যা শুনলাম তা শুনে আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। খাবার মুখে দিতে গিয়েও তা নামিয়ে ফেললাম। আমার চোখ দুটো জলে ভড়ে উঠলো। আমি ছলছল চোখে ইহানের দিকে তাকালাম। ইহান ও স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি খাবার রেখেই দৌড়ে উপরে চলে এলাম। #এক_চিলতে_রোদ- ২
#Writer_Nondini_Nila
(কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ)
৩১.
ইমা আপুর রুমে আমাকে থাকতে দিয়েছেন আমি বেলকুনিতে বসে ফ্যাচফ্যাচ করে কেঁদে যাচ্ছি।খাবার টেবিলে জানতে পারে আব্বু আম্মু এসে ছিল কিন্তু চাচাজান তাদের কে অপমান করে বের করে দিছে। এসব শুনে আর আমি খাবার গিলতে পারিনি। খাবার না খেয়েই চলে এসেছি আর নিচে যায় নি। সবাই হয়তো সন্দেহ করেছে আমার এমন রিয়েক্টে কিন্তু আমি তা পাত্তা দেয়নি। আমার খুব কষ্ট হয়েছে। আব্বু আম্মু আবার ও কষ্ট পেলো আর আমি সেখানে উপস্থিত ই ছিলাম না। যারা আমার আব্বুকে সহ্যই করতে পারেনা আমি সেই বাড়িতে খাচ্ছি দাচ্ছি ঘুরে বেড়াচ্ছি। এসব ভেবে খাওয়ার ইচ্ছা টা আরো মরে গেছে।
জেরিন কে আসতে দেখে চোখ মুছে স্বাভাবিক করলাম নিজেকে। জেরিন আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,
‘না খেয়ে ওমন করে চলে আসলে কেন?’
আমি বললাম, ‘ টায়ার্ড লাগছিল খুব। খেতে ভালো লাগছিলো না।’
‘ তোমার নাক মুখ লাল হয়ে আছে যেন কান্না করেছো?’
‘ মাথা ধরেছে তাই এমন লাগছে।’
‘ ওহ আমার আগের বিহেভিয়ার জন্য সরি। আমরা কি ফ্রেন্ড হতে পারি?’
‘ অবশ্যই!’
মুখে হাসি টেনে বললাম। জেরিন গল্প করলো কিছু সময়। ওর মা ডাকতেই ছুটে চলে গেল। আমি অবাক হয়ে ভাবছি এর আবার কি হলো এত ভালো বিহেভ করল আমার সাথে।
কিন্তু মন খারাপ কিছুটা কমেছে। আমি রুমে এসে বিছানায় শুয়ে পরলাম। মনটা আবার খারাপ লাগছে আমি ওইভাবে চলে আসলাম আর ইহান একবার আমার খোঁজ নিলোনা। একটু আমার জন্য চিন্তা করে না। এই উনার ভালোবাসা।
চোখ ভিজে উঠলো আবার। আমি উঠে দাঁড়ালাম। অনেকেই আগেই শুয়ে পরেছে কিন্তু কয়েকজন ড্রইংরুমে বসে আড্ডা দিচ্ছে। জেরিন আছে সেখানেই। আমি উঁকি মেরে ইহানকে খুঁজলাম নাই। আমি তার রুমের দিকে যাওয়া ধরালাম চোরের মত কেউ আবার দেখে নেবে না তো? কাছাকাছি আসতেই সেদিনের অপমানের কথা মনে পরলো। খুব কষ্ট পেয়েছিলাম আমি। আজ নিশ্চয়ই বকবে না। আজ আর সেদিন তো আলাদা ছিলো। আমি খুশিমনে ভেতরে চলে গেলাম।
সম্পন্ন রুম ঘুরেও তাকে খুঁজে পেলাম না। তার মানে তিনি রুমে নাই। গেছেন কোথায়? মন খারাপ করে ছোট টেবিলের উপর ইহানের ছবির দিকে গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে রইলাম।কোথায় আমার কাছে আসবে আমার মন ভালো করার চেষ্টা করবে তা না আমি তাকে উল্টা খুজছি আর তিনি লাপাত্তা হয়ে আছেন। অভিমানী চোখে তাকে কিছুক্ষণ অভিযোগ করে উঠে দাড়াতেই,
জেরিনের আগমন ঘটলো, জেরিন ইহান ব্রো বলে ডাকতে ডাকতে এ ঘরে আসছে। আমি লাফিয়ে উঠে এদিকে ওদিকে তাকিচ্ছি কোথায় যাব জেরিন যদি আমাকে দেখে সন্দেহ করে। আমি এঘরে কি করছি? দৌড়ে আলমারির আড়ালে লুকিয়ে পরলাম। জেরিন খুঁজতে খুঁজতে বারান্দায় চলে গেল আমি দেখছি লুকিয়ে মাথা বের করে। জেনিন ভেতরে আসতে আবার লুকিয়ে পারলাম। জেরিন বেরিয়ে গেল ডাকতে ডাকতেই। আমিও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে তারাতাড়ি বেরিয়ে এলাম। তখনই দেখা হলো ইলা আপুর সাথে। ফোন হাতে এগিয়ে আসছে। আমাকে ইহানের রুম থেকে বের হতে তিনি দেখে নিয়েছেন মাথা তুলে। আমি এক পলক দেখে ইমা আপুর কথা ভেবে ফেলেছিলাম কিন্তু ইমা আপু তো শ্বশুর বাড়ি ভাবতেই মনে পড়লেই এটা ইলা আপু। উনি প্রশ্ন তোক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে দাঁড়িয়ে পড়ল,
আমি ইহানের রুমের দরজার সামনে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে হাতের তালু চুলকাচ্ছে। উনি কিছু জিজ্ঞেস করলে আমি কি উত্তর দেবো সেটাই ভেবে পাচ্ছি না। ভয়ে আমার বুক ধুকপুক করছে। ইলা আপু গলা উঁচিয়ে রুমের ভেতরে তাকিয়ে বলল ইহানকে রুমে আছে?
আমি তোতলানো গলায় বললাম, ‘না আপু!’
‘ ইহানকে দেখলে আমার সাথে দেখা করতে বলো।’
বলেই আমাকে ক্রস করে চলে গেল। আমি হাঁ করে তাকিয়ে আছি।এমনভাবে আমাকে কথাটা বলল যেন ইহানের সাথে আমি সব সময় থাকি তাই খবর পৌছানোর দায়িত্বটা আমার। কিন্তু উনি এই দায়িত্ব আমাকে কেন দিলো?
ভাবতে ভাবতে তাঁরাতারি চলে এলাম।
ইহানের দেখা মিলিছে রাত সাড়ে দশটায়। আমি তখন বিছানায় শুয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করছিলাম।
ইহান কোথা থেকে এলো জানিনা।এসেই আমাকে টেনে নিজের রুমে নিয়ে এলো। আর আমাকে এক প্লেট খাবার দিলো খাওয়ার জন্য।
‘ দুঘন্টা পর আসছে দরদ দেখাতে। লাগবে না এমন আদিখ্যেতা।’
ইহান জ্যাকেট খুলে আমার সামনেই শার্ট খুলে ফেলল আমি তা দেখে চিত্কার করে উঠলাম। আমার চিৎকার শুনে ইহান বিরক্তকর চাহনি দিয়ে বলল, ‘কি ব্যাপার মেন্টালের মত চিৎকার করলে কেন? তুমি যে আমার রুমে আছো তা সারা দুনিয়াকে না জানালে তোমার চলছে না?’
আমি তারাতাড়ি মুখ চেপে বললাম, ‘ আপনি নির্লজ্জের মত আমার সামনে শার্ট খুললেন কেন? লজ্জা করল না একটা মেয়ের সামনে শার্ট খুলতে!’
‘আশ্চার্য! শার্ট খুলেছি তো কি হয়েছে? আমি কি তোমার সামনে খালি গায়ে বসে থাকব নাকি। আমি চেঞ্জ করছি দেখো না ঘেমে একাকার হয়ে গেছি। আর নির্লজ্জের কি হলো এখানে আমি কি প্যান্ট খুলেছি যে তুমি এমন করে চিৎকার করলে অদ্ভুত।’
ইহান ওয়াশরুমে চলে গেল টি-শার্ট গায়ে জড়িয়ে। হাত মুখ ধুয়ে আমার অপর পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ল। আর আমার দিকে তাকিয়ে বলল খাবারটা খেয়ে প্লেট টেবিলের উপর রেখে চলে যেতে দরজা চাপিয়ে।
আমি বললাম, ‘ আপনি কোথায় গিয়েছিলেন সত্যি করে বলুন।’
‘শ্বশুর বাড়ি গিয়েছিলাম হ্যাপি এবার খাবারটা শেষ করো!’
আমি চেঁচিয়ে উঠলাম, ‘কিহ! শশুর বাড়ি গিয়েছিলেন মানে। আপনি বিয়ে করলেন কবে?’
‘ এতো কথা বলো কেন দেখছো না আমি ক্লান্ত তাও আমাকে ডিস্টার্ব না করলে তোমার শান্তি হচ্ছে না তাই না!’
‘ আপনি উত্তর দিচ্ছেন না কেন উত্তরটা দিলে তো আথ আমি জিজ্ঞেস করি না।’
‘খাবার শেষ করা ততক্ষণ আমি জিরিয়ে নেই তারপরে সব বলবো!’
আমি তারাতাড়ি খাওয়া শেষ করলাম।
‘ খাওয়া শেষ এবার বলুন সব।’
ইহানের কোন রেসপন্স পেলাম না। ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম মনে হচ্ছে গভীর ঘুম। ঘনঘন নিশ্বাস ফেলছে। আমি হাঁ করে তাকিয়ে রইলাম। ঘুমন্ত অবস্থায় অন্য রকম লাগছে আমি আলতো হাত বাড়িয়ে ইহানের নাক চেপে ধরলাম। সাথে সাথে ইহান ধরফরিয়ে উঠে বসলো। আর আমার দিকে রাগী চোখে তাকালো। আমি মুখ টিপে হাসছে।
‘ আর ইউ ম্যাড। তুমি আমার নাক চেপে ধরেছে কেন ইডিয়েট।’
‘ বেশ করেছি। এবার বলুন কোথায় গেছিলেন।’
‘ বললাম তো শশুর বাড়ি।’
‘ আবার মিথ্যা বলছেন সত্যি বলেন’
‘চাচুর সাথে দেখা করতে। আমি তাকে কায়দা করে আনলাম কিন্তু সঠিক সময় তার পাশে থাকতে পারলাম না। এবারও তিনি অপমানিত হয়ে গেছেন নিজেকে খুব অপরাধী লাগছিল তাই আমি গেছিলাম সেখানে আর চাচুর সাথে কিছুটা সময় কাটালাম।
আমি আর কিছু বললাম না। ইহান আমার দিকে তাকিয়ে বললো,’ তোমার মন খারাপ হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি বাবা চাচুকে মেনে নেবে আর বাড়িতে ফিরিয়ে আনবে।’
আমি বললাম, ‘ সত্যি?’
” হুম!’
‘তখন আমার খুব খারাপ লেগেছিল! চাচাজান আব্বু কে নিয়ে কতোটা খারাপ মন্তব্য করেছিল। আমি খাবার টেবিলে আর এক সেকেন্ড থাকলে কেঁদে দিতাম!’
ইহান আমার হাত আলতো করে ধরে বললো, ‘ গান শুনবে?’
আমি উত্তেজিত হয়ে বললাম, ‘ হুম। শুনাবেন?’
ইহান হাসলো কিছু বললো না। গিটার হাতে বেলকনিতে যেতে লাগলো। আমিও পেছনে গেলাম। ইহান বসে আমাকেও বসতে বললো। আমিও বসে পড়লাম।
ইহান গান ধরলো,
তোমার এলোমেলো চুলে আমার সাদা মনে,
হারিয়ে যেতে চাই কোন হুটতলা রিকশায়,
এক মুঠো প্রেমে নিয়ে আমার শূন্য পকেটে হারাতে দ্বিধা নাই অচেনা গলিতে, এক শহর ভালবাসা দিতে চাই….
গান শুনতে শুনতে আমি ইহানের কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরছি। ইহান তা দেখে গান থামিয়ে চাঁদের আলোয় আমার মুখের দিকে তাকিয়ে নিচু স্বরে বলল, ”খুব ভালোবাসি ঊষারানী”
#চলবে
#চলবে……